আজকে ছেলের অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে৷ স্ত্রী মোবাইল করে জানাল দেড়টা-দুটার সময় অতি পরিচিত ও একটু অভিজাত সেই হোটেলের সামনে থাকি৷ ছেলেকে নিয়ে ও এখানে চলে আসবে৷ বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলে যে হুট হাট চলে আসা যায় না সেটা কখনো বুঝতেই চায় না৷ তবুও অফিসে ম্যানেজ করে চলে এলাম৷ অপেক্ষায় আছি! সময় গড়াচ্ছে কিন্ত ওদের দেখা নেই৷ প্রচন্ড রাগটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা সিগারেট ধরালাম৷
কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা আসলো৷ সাথে করে নিয়ে হোটেলের ভেতরে একটা ফাঁকা টেবিলে বসলাম৷
ওরা গ্রিল আর কাচ্চি বিরানী খাবে৷ ব্যাপারটা কী? এ সময়তো বাড়িতে লাঞ্চ করার কথা৷ মাথায় খেলছে না৷ ওদের দুজনের মুখে হাসি দেখে বললাম, রেজাল্ট কী? বললো “ত্রিভূজ”৷ ওর প্রত্যাশিত রেজাল্টে আমি খুব খুশি হলাম৷ খাবারের অর্ডার করলাম৷
হঠাৎ পাশের টেবিলে দেখলাম আমার এক প্রিয় কলিগ কাম বন্ধু৷ আমাদের টেবিলে আসতে বললাম কিন্ত না এসে বরং আমাকেই ওর টেবিলে ডাকল৷ আমি ওর মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসব এমন সময় দেখি আমার ছেলে এসে তাকে সালাম দিলো৷ বললো সে পরীক্ষায় ‘ত্রিভূজ’ পেয়েছে৷ অনুভূতিহীনভাবে সে বললো বেশ করেছ৷
আমার ছেলে চলে যাবার পর বন্ধুটি জিজ্ঞেস করল ‘ত্রিভূজ’ কী? বুঝলাম না৷ তখন তাকে বললাম নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী বর্তমানে যারা সিক্স-সেভেনে পড়ে তাদের রেজাল্টের প্রতিকী অর্থ ত্রিভূজ, বৃত্ত এবং চতুর্ভূজ৷ সব জ্যামিতি৷
সে বলল তাহলে ১ম, ২য়, ৩য় তাইতো? আমি বললাম, একদম৷
– তাহলে গ্রেডিং সিস্টেমটা তুলে দিলো কেন?
– গ্রেডিং সিস্টেমটাকে সকলে বিকৃত করছে বলে!
– বুঝলাম না৷
– শোন গ্রেডিং সিস্টেমে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ আছে৷ কিন্ত অনেকে এটাকে গোল্ডেন বলে অভিহিত করছে৷
– তাতে কী হয়েছে?
– বোকা গোল্ড অর্থ কী?
– সোনা৷
– তাহলে বোঝ! সংশ্লিষ্ট সোনা বহনকারীরা মনে করেছে এভাবে সোনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এবং বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমানোর এই হীন চক্রান্ত রুখতে হলে এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
– তাহলে পূর্বের সেই ১ম, ২য়, ৩য় করতে পারত!
– আমার কাছে নতুন পদ্ধতিটাই পছন্দ হয়েছে৷ আবার অর্থটা ঠিকই থাকছে৷
– বন্ধুটি ক্ষেপে গিয়ে বলল আমি হলে আরেকটি পদ্ধতি চালু করতাম৷
– সেটা কী?
– চুল৷
– মানে?
– চুল, ভ্রু, চোখের পাতা৷ সব চুল৷ তবে জ্যামিতি নয়৷
– দাড়ি-গোঁফ নয় কেন?
– জেন্ডার বায়াস হবে বলে৷
– যদি কেউ ফেল করে?
– সেটাও অবশ্যই চুল হবে৷ তবে নিচে নামতে হবে৷
কথা চলমান অবস্থায় বয় অর্ডার চাইল৷ পাশের টেবিলে আমার স্ত্রী-সন্তান কাচ্চি খাচ্ছে৷ বন্ধুকে অনুরোধ করার পরেও সে কাচ্চি খাবে না বলছে৷ সে হালকা নাস্তা করবে৷ এমন অবস্থায় ওকে একাকী ছেড়ে যাওয়াটায় মন টানছে না৷ তাই ওকে বললাম কী খাবি? ও কাচুমাচু করতে করতে বললো সমুচা কি এখানে পাওয়া যায়? আমরা জানি সমুচা ওর প্রিয় খাবার৷ বয়কে সমুচার অর্ডার করলাম৷
হঠাৎ মনে হলো ওর মেয়েওতো একই ক্লাশে পড়ে! বললাম তোর মেয়ের রেজাল্ট কী?
– জানি না৷ দাঁড়া বউকে ফোন করি৷ একটা কথা বলে রাখি আমার বউ কম শিক্ষিত মেয়ে৷ ওর কথায় মাইন্ড করিস না৷ রিং হচ্ছে৷ এমন সময় সে স্পিকারটা লাউড মুডে দিলো৷
– হ্যালো! কী খবর! ফোন দিছো ক্যান?
– সোহানার খবর কী?
– ভালো৷
– স্কুল থেকে ফিরেছে?
– আজব কথা! আসল কথা কও৷
– ওরতো আজ রেজাল্ট দিয়েছে৷ কী পেয়েছে?
– কী পেয়েছে মানে?
– ‘ত্রিভূজ’ পেয়েছে?
– এই তোমার মাথা খারাপ হইছে? কী সব কথা বলতেছো৷ ওতো অনেক আগেই ‘ত্রিভূজ’ পেয়েছে৷ লাইনটা কেটে গেল৷
অপ্রস্তত ও একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো৷ ইতিমধ্যে বয় খাবার দিয়ে গেছে৷ বিষয়টাকে স্বাভাবিক করবার জন্য বললাম নে তোর প্রিয় সমুচা এসে গেছে৷ খাওয়া শুরু কর৷ ও সমুচাটা হাতে নিলো৷ তারপর আবার প্লেটে রেখে দিয়ে বললো না রে রুচি লাগছে না৷ এদিকে আমার স্ত্রী-পুত্র খাওয়া শেষ করে আমাদের টেবিলে বসল৷ বললাম আমাদের উঠতে হবে বন্ধু৷ বিল পেইড৷ তুই খেয়ে আয়৷ সে কিছু না খেয়েই আমাদের সাথে উঠে পড়ল৷ কিছুদূর গিয়ে পেছন ফিরে দেখি সাদা টিস্যুর উপর সমুচা নামক এক ত্রিভূজ আকৃতির উপাদেয় খাদ্য পড়ে আছে যার এক মাথায় রক্তিম সসে সিক্ত৷ বেশ বাহারী, নেই আহারী৷