এই ষড়যন্ত্র তো আজকের নয়, এর সূত্রপাত আজ থেকে দশ বছর আগে, যখন রহিমা সদ্য পোয়াতি। অন্যসব গুণবতী, রূপবতী ছেলের বউদের পাশে অল্প শিক্ষিত রহিমাকে মানতে পারেননি রহিমার শাশুড়ি। তাই যখন ছেলে বউকে মা বাবার কাছে রেখে বিদেশ পাড়ি দেয়, তার পরপরই চলে জাল বোনা। নানা মানসিক যন্ত্রণার পরও যখন রহিমা ফারুককে ছাড়ার কথা চিন্তা করে না, তখন একদিন শাশুড়ি বলেই ফেলেন,”ছেলে দেশে ফিরলে দেনমোহরের টাকা ফেরত দিয়া আমি আমার ছেলে ফেরত নিমু।” সে যাত্রায় শ্বশুর শাশুড়ির পা ধরে রক্ষা পায় রহিমা। কিন্তু ষড়যন্ত্র তো আর বন্ধ থাকে না।
দশ বছর পর রহিম দেশে ফেরে। একমাত্র সন্তানকে দেখে আনন্দে তার মন ভরে ওঠে। রহিমার চোখ চকচক করে, এই বুঝি তার সব কষ্ট ঘুচলো,তার সুখের দিন শুরু হলো বলে। এখন আর সবার বাঁকা কথা শুনতে হবে না। তার কথা শোনার মতোও এখন কেউ আছে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। বাসায় ফেরার পর থেকেই সবাই রহিমাকে নিয়ে ফারুকের কানে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। ফারুক কিছু বিশ্বাস করে না। রহিমাও ফারুককে তার এতদিনের জমানো কথাগুলো বলার চেষ্টা করে। কিন্তু দিন শেষে ঘরের গরু গোয়ালেই যায়। ফারুক কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। বউ, সন্তান তার আর ভালো লাগে না, সব দায়িত্ব থেকে সে সরে আসতে থাকে। রহিমা এর ওর বাসায় টুকটাক কাজ করে সংসারের ঘানি টানতে থাকে। ফারুক তার টাকা পয়সা তার বাপ মা ভাই বোনের পিছনে খরচ করলেও রহিমা কিছু চাইলেই কেমন খ্যাক খ্যাক করে ওঠে। পরিশ্রম আর নানা দেনায় শারীরিক ও মানসিকভাবে রহিমা কেমন খিটখিটে হয়ে পড়ে। ফারুক যায় আসে, রহিমাকে যেন তার চোখে পড়ে না। রহিমা এখন সবার চক্ষুশূল। অনাদরে অবহেলায় একটু একটু করে মানসিক বিকৃতি, শারীরিক অবনতি হতে থাকে রহিমার। একদিন গাঙের জলে দেহ ভাসিয়ে দেয় রহিমা। সমাজের চোখে তা আত্নহনন হলেও আসলে তা একটি অতি সুক্ষ্ম ও পরিকল্পিত মার্ডার। তার এই আত্মহত্যার পিছনে সমাজ ফারুককে দায়ী করলেও মৃত্যুর আগে রহিমা কাউকে দায়ী ভাবেনি। তার জন্য যদি কারও দায় থাকতো তবে তো তাকে আজ আত্নহত্যা করতে হতো না।