মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: প্রথম প্রতিবাদী কবিতা ও সংকলন

আনওয়ারুল ইসলাম রাজু

১৯ আগস্ট, ২০২৩ , ১:১৫ অপরাহ্ণ

‘‘ তেরোশ’ বিরাশি সন, মেঘার্ত শ্রাবণ, শেষ রাত।

অকস্মাৎ ! বৃষ্টি নয়, ঘটে গেলো রাষ্ট্র স্বপ্ন থেকে রক্তপাত।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের মতো ব্যাপ্ত ছিল যার বুক

জাতির পিতার বুকে বিদ্ধ হল উত্তপ্ত বুলেটে।

দেহ শধু দেহ নয়, ইতিহাস, মূল্যবোধ, আশ্রয়

ভেসে গেলো বাংলাদেশ রক্তের প্লাবনে- অন্তিম শ্রাবণে।’’

(আমি সাক্ষী/সৈয়দ শামসুল হক)

১৩৮২ বঙ্গাব্দ, অন্তিম শ্রাবণের (১৫ই আগস্ট,১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) মেঘার্ত কালরাতে জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই রাতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ঘৃণ্য চক্রান্তে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড। ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে থমকে গিয়েছিল সমগ্র জাতি। পিতাকে হারাবার শোকে-বেদনায় মূহ্যমান জাতি গুমরে গুমরে কেঁদে মরলেও ইতিহাসের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিকভাবে সেই শোক প্রকাশের বা এই হত্যাকাণ্ডের প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানানোর সাহস কেউ পায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর শাসকগোষ্ঠী সচেতনভাবে ইতিহাসের পাতা থেকে, এমনকি শিল্প-সাহিত্য থেকেও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে চেয়েছিল। ফলে এ সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখাও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু তবু নিঃশ্চুপ থাকতে পারেননি এদেশের কবি-সাহিত্যিকরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নিদারুণ বৈরী পরিবেশে প্রথম প্রতিবাদ ও শোকগাথা উচ্চারিত হয়েছিল বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের কবিতার শব্দ-ছন্দেই ।

এ প্রসঙ্গে প্রথম যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন, বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু আরবি শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল হালিম। নৃসংশভাবে হত্যা করার পর কড়া সামরিক প্রহরায় বঙ্গবন্ধুর লাশ অত্যন্ত দীনহীনভাবে টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে সমাধিস্থ করার মর্মবেদনা ও ক্ষোভ থেকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আরবি ভাষায় একটি কবিতা রচনা করেন। পরে তিনি নিজেই এটি বাংলায় অনুবাদ করেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণের পর এটিই প্রথম কবিতা বলে মনে করা হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৭জুন ২০১১ সংখ্যায় “শহীদ বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত প্রথম আরবি কবিতা” শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধের লেখক মাওলানা এম. এ রহমান ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার দলিল’-এর বরাত দিয়ে কবিতাটির সেই বাংলা অনুবাদ উদ্ধৃত করেন –

“হে মহান, যার অস্থি-মজ্জা, চর্বি ও মাংস এই কবরে প্রোথিত

যাঁর আলোতে সারা হিন্দুস্থান, বিশেষ করে বাংলাদেশ আলোকিত হয়েছিল

আমি আমার নিজেকে তোমার কবরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করিতেছি, যে তুমি কবরে শায়িত

আমি তোমার মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ দেখেছি, ক্ষমা, দয়া ও দানশীলতা-

নিশ্চয়ই তুমি জগতে বিশ্বের উৎপীড়িত এবং নিপীড়িতদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলে

সেহেতু অত্যাচারীরা তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে-

আমি, আমরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বিচারের প্রার্থনা জানাই,

যারা তোমাকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে।”

দৈনিক যুগান্তর, ০৩ আগস্ট ২০২১ সংখ্যায় “শব্দে ছন্দে পিতার মুখ” শিরোনামে লেখক ইকবাল খোরশেদ রচিত প্রবন্ধে এই কবিতাটির বাংলা অনুবাদে কিছুটা পাঠান্তর লক্ষ্য করা যায়। সেখানে কবিতাটির ‘সেহেতু অত্যাচারীরা তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে-’ চরণটির পর নিচের এই চরণ দুটি যুক্ত করা হয়েছে-

“আমরা মহান আল্লাহর নিকট তোমার আখিরাতের মঙ্গল কামনা করি।

বিদায়! বিদায়! বিদায়! হে মহান জাতির জনক।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতাও রচিত হয়েছিল উর্দুতে। দুটি কবিতাই রচনা করেন বাংলাদেশের উর্দুভাষার শীর্ষস্থানীয় কবি নওশাদ নূরী। ‘উত্থান-উৎস’ শীর্ষক তার প্রথম কবিতায় তিনি লেখেন-

‘সে আছে, সে আছে-

সর্বদা হাজির সে যে, অফুরান শক্তি হয়ে সে আছে,

সে আছে সে অমর, মৃত্যুঞ্জয়ী, মৃত্যুনেই তার।’

(অনুবাদ: কবি আসাদ চৌধুরী)
১৯৭৫-এর ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দাফনের পর তিনি ‘নজম টুঙ্গিপাড়া’ (জন্ম টুঙ্গিপাড়া) শীর্ষক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার দ্বিতীয় কবিতাটি লেখেন। এ কবিতায় তিনি বলেন-

‘তোমরা কি জানো? তোমরা কী জানো?

পথের শুরুটা হয়েছিল এইখানে,

পথ খোয়া গেল, হায়, সেও এইখানে।’

(অনুবাদ: কবি আসাদ চৌধুরী)
জাতিরপিতাকে হারাবার মর্মবেদনায় রচিত চতুর্থ কবিতা তথা বাংলায় প্রথম কবিতাটি লেখেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-কবি সন্তোষ গুপ্ত। ‘রক্তাক্ত প্রচ্ছদের কাহিনী’ শিরোণামে এই কবিতাটি ১৯৭৫ সালেই রচিত হয়। এই কবিতায় তিনি লেখেন-

‘একটি নামের মধ্যে উঠে আসে বাংলাদেশ

স্বপ্নের পাখির সুর, নিসর্গের কোমল গান্ধার

মৃদৃকন্ঠে ভালোবাসা সাজানো বাগান;

আবার ককনো সেই নাম থেকে পেয়ে গেছি

মাটির ঠিকানা, দেখেছি পদ্মার বেগ

ভাঙনের উত্তাল মিয়রে থরোথরো

গ্রামগ-বন্দরের সুখ-দুঃখ ব্রথার ণিঃমম্বাস

শস্যের হরিৎ ক্ষেত বুকে নিয়ে কৃষকের ঘাম

জেগে থাকে আরও সাথে নক্ষত্রের বিশাল আকাশ।

এক রাতে সবই নিহত হলো সপরিবারে

নিসর্গ পাখি ফুল ভালোবাসা নদীর নারীর গান।’

কিন্তু এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পরেও নিশ্চুপ নির্বিকার জাতিকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন-

‘এই বৃহন্নলা বেশ খুলে ফেরো বীর্যবান

পিতার সন্তান। অজ্ঞাতবাসের কাল শেষ হোক

মৃত্যুর সারথি যারা পদে পদে সুকৌশলে ফাঁদ পাতে

কেবলি তাদের কাছে হাত পাতো, এ কেমন পিতৃভক্তি তব

বিদ্রোহী কবির কাছে দীক্ষা আছে, তবু অগ্নিবীণা রেখে

খহ্জনী বাজিয়ে কেন দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি;

রক্তে নাহি বাজে ধিক্ ধিক্

শহীদ হয়েছে যারা সেই সব উজ্জ্বল প্রেমিক

রক্তের সম্পর্ক যদি রেখে থাকে তোমার শরীরে।’

তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ১৯৭৭ সালে সেনাশাসিত বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করে কবিতা লেখেন কবি নির্মলেন্দু গুণ- ‘আজ আমি কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ । এই কবিতায় তিনি বলেন-

‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,

রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ

গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।

আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

শহীদ মিনার থেকে খসেপড়া একটি রক্তাক্ত ইট

গতকাল আমাকে বলেছে,

আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।

আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো স্বাক্ষী থাককু,

না-ফোটা কৃষ্ণচ‚ড়ার শুস্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জুরিগুলো

কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;

আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে

আমি আজ সেই গোলাপের কথা রাখলাম

আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম

আমি আজ সেই স্বপ্নের কথা রাখলাম।

আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি,

আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রকাশ্যে পঠিত কবিতাও এটি। এই কবিতাটি তিনি ১৯৭৭ সালে একুশের সকালে বাংলা একাডেমির কবিতা পাঠের আসরে পাঠ করেন অসীম সাহস নিয়ে।

নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই ভালবাসার কথা, দায়বদ্ধতার কথা তাঁর আরও অনেক কবিতায় তুলে ধরেছেন। বস্তুত: নির্মলেন্দু গুণের কবিতাতেই সবচেয়ে বেশিবার বঙ্গবন্ধু এসেছেন ঘুরেফিরে নানা মাত্রিকতায়। কবির ২০১২ সালে প্রকাশিত কবির ‘মুজিবমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ত্রিশটির মতো কবিতা।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম প্রতিবাদী কবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে ‘এ লাশ আমরা রাখব কোথায়’ শিরোণামে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অজ্ঞাত সংগঠন ‘সূর্য তরুণ গোষ্ঠী’র নামে এই কবিতা-সংকলনটি প্রকাশিত হয় কয়েকজন প্রতিবাদী তরুণের উদ্যোগে । এ দুঃসাহসিক সংকলনের পরিকল্পনা করেছিলেন ছড়াকার আলতাফ আলী হাসু। সংকলনে মোট ত্রিশটি কবিতা ছাপা হয়েছিল এবং সম্পাদক হিসাবে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলনটি যখন প্রকাশিত হয়, তখন ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার মতো মানুষ ছিল হাতেগোনা। এই সংকলনে তরুণ কবি কামাল চৌধুরী ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ শিরোনামে অনন্যসাধারণ এক কবিতা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য তিনি ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতার একটি বই প্রকাশ করেন। ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ কবিতায় তিনি বলেন-

‘কবরের নির্জন প্রবাসে

তোমার আত্মার মাগফেরাতের জন্য

যেসব বৃদ্ধেরা কাঁদে

আমাদের যে-সব বোনেরা

পিতা, ভাই, সন্তানের মতো

তোমার পবিত্র নাম

ভালোবেসে হৃদয়ে রেখেছে

যে-সব সাহসী লোক

বঙ্গোপসাগরের সব দুরন্ত মাঝির মতো

শোষিতের বৈঠা ধরে আছে

হে আমার স্বাধীনতার মহান স্থপতি

মহান প্রভুর নামে আমার শপথ

সেইসব বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথ

সেইসব ভাই-বোন লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আমার শপথ

আমি প্রতিশোধ নেব

আমার রক্ত ও শ্রম দিয়ে

এই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখা

সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেব।’

‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলনটির সাম্প্রতিক সংস্করণের ভূমিকায় আমিনুল ইসলাম বেদু জানান, ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি মতো একটি তরুণ এসে আমাকে বাসস অফিসে বলল আপনি আমাকে চিনেন না, আমি আইনশাস্ত্রে লেখাপড়া করি। আমরা কয়জন ঠিক করেছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর উপর একটি ছোট্ট কবিতার সংকলন বের করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করবো।’ তাঁরই উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্লাস কক্ষে বেশ কয়েকজন কবি বসেন। সেদিন বৈঠকে আমিনুল ইসলাম বেদু ও আলতাফ আলী হাসুসহ উপস্থিত ছিলেন, দিলওয়ার, হায়াৎ মামুদ, রাহাত খান, মাশুক চৌধুরী, ফরিদুর রহমান বাবুল, সুকুমার বড়ুয়া, মোহাম্মদ মোস্তফা, মাহমুদুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, তুষার কর, মোহাম্মদ রফিক, আবদুল আজিজ, শান্তিময় বিশ্বাস, আখতার হুসেন, ভীষ্মদেব চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন আহমদ, জাহিদুল হক, ইউসুফ আলী এটম, সিরাজুল ফরিদ, ফজলুল হক সরকার, মহাদেব সাহা, জাফর ওয়াজেদ, লুৎফর রহমান রিটন, নূর উদদীন শেখ, ওয়াহিদ রেজা, কামাল চৌধুরী ও খালেক বিন জয়েনউদ্দিন। এঁরা সকলে একটি করে কবিতা তিন দিনের ভেতর আলতাফ আলী হাসুর কাছে জমা দেন। এঁদের কবিতা নিয়ে সংকলনটি প্রকাশিত হয়। লক্ষ্য করার বিষয়, সংকলনে স্থান পাওয়া লেখকদের অনেকে আজ খ্যাতনামা কবি, কেউ কেউ কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক, অনেকে আর কবিতা লেখেননি। যেমন আমিনুল ইসলাম বেদুর এটিই প্রথম এবং শেষ কবিতা। কিন্তু সেসময় আমাদের সাহিত্যে অনেক অগ্রগণ্য কবি ছিলেন, যারা তখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখার সাহস দেখাতে পারেননি। যাঁরা লিখেছেন তাঁদের পাশেও কোনো কোনো কবি দাঁড়াননি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে নিয়ে কবিতা লেখার কারণে রমনা থানা হাজতে নির্মলেন্দু গুণ সাতদিন ছিলেন। তখন অন্য লেখকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গুণ বলছেন, ‘মহাদেব (সাহা) গেছিল আমার ছোটভাইকে নিয়ে দৈনিক বাংলায়, তখন শামসুর রাহমান, আহসান হাবীব, হাসান হাফিজুর রহমান তখন দৈনিক বাংলার সাথে যারা যুক্ত, তারা মহাদেবকে ডিসকারেজ করলো যে নির্মলকে নিয়ে তুমিও প্রবলেমে পড়বা। বিবৃতি দেয়াতো দূরের কথা, তারা মহাদেবকে নিবৃত করেছিল আমার ইস্যুটা নিয়ে মুভ না করার জন্য। আমার মুক্তির জন্য কেউ দাবী জানায় নাই।’ (রাজু আলাউদ্দিন গৃহীত নির্মলেন্দু গুণের সাক্ষাৎকার, বিডিআর্টস, ১৫ আগস্ট, ২০১৫)। কিন্তু আমরা জানি, তাঁদের অনেকে পরে রাজনৈতিক অবস্থা অনুকূলে এলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব কবিই অসংখ্য কবিতা লিখেছেন কবিতা লিখেছেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের কলম থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কালোত্তীর্ণ কবিতার জন্ম হয়েছে । পাঠকনন্দিতও হয়েছে সেসব কবিতা। । কিন্তু কবিতার মান বিবেচনায় নয়, রচনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলন এবং এর কবিরা অবশ্যই ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার দাবিদার।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাঁরা কবিতা লিখেছেন এই তালিকায় কবি শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল, রোকনুজ্জামান খান, শওকত ওসমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সিকান্দার আবু জাফর, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কায়সুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, আসাদ চৌধুরী, সিকদার আমিনুল হক, রফিক আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবদুল গাফফার চৌধুরী, আবুবকর সিদ্দিক, বেলাল চৌধুরী, শহীদ কাদরী, অসীম সাহা, রবিউল হুসাইন, হেলাল হাফিজ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মোহাম্মদ সাদিক, আসলাম সানী, আনিসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হক, তিতাশ চৌধুরী, নাসির আহমেদ, রবীন্দ্র গোপ, হুমায়ুন আজাদসহ বাংলা ভাষার প্রবীন-নবীন আরও অনেক কবির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের রচিত কবিতার তালিকাও হাজার ছাড়িয়ে যাবে। মূলত: বঙ্গবন্ধু সবার জন্য এক অনন্ত প্রেরণার অফুরন্ত উৎস। তাঁকে নিয়ে কবিরা প্রতিনিয়ত কবিতা লিখছেন এবং আগামী দিনেও লিখবেন। তাঁদের কবিতা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করার আশা রইলো। #

তথ্যসূত্র :

১. প্রবন্ধ- শহীদ বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত প্রথম আরবি কবিতা, মাওলানা এম এ রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৭জুন ২০১১ ।

২. প্রবন্ধ- শব্দে ও ছন্দে পিতার মুখ : ইকবাল খোরশেদ , দৈনিক যুগান্তর, ০৩ আগস্ট ২০২১।