পেছনের লাল ভবনটা উঁচু হতে হতে শতবর্ষীকে ছেড়ে যায়,
শতবর্ষীর দেহ জুড়ে বুড়ো চামড়ায় দগদগে ঘা
এসব ছাড়িয়ে এক অনন্য উচ্চতায় তার আসন।
স্যাতস্যাতে শ্যাওলা জমা দেয়ালের পলেস্তারা জুড়ে
আঁকি বুকি কাটা গর্বিত ইতিহাসের উজ্জ্বল মানচিত্র আজ ম্লান!
শতবর্ষীর চাল টুটে গেছে যেমনটা আমাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়,
টুটে যাওয়া চালের নিচে বিশাল জ্ঞান সমুদ্রের আধার
উই পোকারাও আছে,আছে কিছু ধেড়ে ইঁদুর,বিচ্ছু
মাটি কাটে, শাল কাঠের প্রাচীন আসবার কাটে
আর কাটে বই- পাণ্ডুলিপির শুষ্ক কাগজের বুক।
শতবর্ষীর দুঃখের জলে দেয়ালের ফাঁটল গভীর হয়
বিদীর্ণ বুকের পাঁজর উন্মুক্ত দেয়ালের লাল ইটে;
শতবর্ষীর দেহজুড়ে বুড়ো চামড়ায় অযত্নের দগদগে ঘা।
এখানে এখনও নবীন-প্রবীণ কবিদের আসর বসে,
এখানে এখনও চশমার কাঁচ মুছে নড়বড়ে চেয়ারে পাঠক বসে।
শতবর্ষীর এক মেয়ে আছে তার মতোই অবহেলায় সঙ্গিন;
আঠারোশ’ চুয়ান্ন আর উনিশশো পাঁচ এক স্বর্গীয় মেলবন্ধন
কতো ঝড়-ঝঞ্ঝা, ব্রিটিশ পাকিস্তান অর্থাৎ লুটেরা সকল,
বায়ান্ন কি একাত্তর কালের স্বাক্ষী বহমান পরতে পরতে ।
কবিরা আসে নিয়মিত প্রতিনিয়ত ফেলে দীর্ঘশ্বাস;
একজন তরুণ কবির উপার্জন প্রেমিকার প্রশংসিত কবিতা,
একজন প্রবীণ লেখকের উপার্জন তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি,
সংগঠকেরা ভাবে এমাসে কিছু রক্ত বিক্রি করা যাবে তার,
আর সেই গৃহিনী স্বামী-সন্তানের ডাল- ভাত রেঁধে
মধ্যবিত্ত ঘরের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে লেখে কবিতা,
এদিকে রানা ও শুভ বিক্রি করে ইতিহাস লেখার কলম,
ওরা কেনে সকলের মিলিত সঞ্চয় দিয়ে পুষ্পমাল্য এক;
খালিদ অথবা জীবন, জাহিদ অথবা সাঈদুল
জাকির অথবা সাথী, বাদল অথবা তপন
সাকিল অথবা তাসনীম, বশীর অথবা মজনুর
এরকম অনেক কবি শহিদ মিনার পাশ কেটে এগোয়,
শতবর্ষীর সিঁড়িতে পুষ্পমাল্য রেখে তারা ডুকরে কেঁদে ওঠে
‘ক্ষমা করো শতবর্ষী আমরা রক্ষা করতে পারছি না তোমাদের’।
কিছুটা দূরে এই শহরের আলোকিত কিছু শ্রদ্ধেয় অগ্রজ
নিরবে চোখ মুছে বলেন,” আর রক্ষা করতে পারলাম না বুঝি”!