ইসলাম Archives - মুগ্ধতা.কম

হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান

২ মে, ২০২২ , ৫:২১ অপরাহ্ণ

ঈদ-উল-ফিতর ও আমাদের করণীয়

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন- তখন থেকে মুসলিমদের সংঘবদ্ধ সামাজিক জীবন শুরু হয়। মূলত সেখান থেকেই ইসলামে ঈদের সূচনা হয়।

ঈদ-উল ফিতর রমাযান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের এক তারিখে এবং ঈদ-উল আযহা জিলহজ মাসের দশ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। মদীনাবাসীরা বছরে দুটি নির্দিষ্ট দিনে আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠত।

তারা বসন্ত এবং হেমন্তের পূর্ণিমায় মিহিরজান এবং নওরোজ নামে দুটি উৎসব পালন করত। এ উৎসব দুটিতে যে আচার-অনুষ্ঠান হতো- তা ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত ছিল না।

ফলে মদীনায় এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এটা দেখতে পেলেন- তখন তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন-এ বিশেষ দিনে তোমাদের আনন্দ-উল্লাসের কারণ কী? মদীনার নবমুসলিমগণ বললেন- আমরা জাহেলি যুগে এ দুটো দিনকে এভাবেই উদযাপন করতাম। (যা আজ পর্যন্ত প্রচলিত)

তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’আলা তোমাদের এই উৎসবের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একটি ঈদ-উল ফিতর, অন্যটি ঈদ-উল আযহা। এভাবেই ইসলামে ঈদের সূচনা হয়।

ঈদ শব্দের অর্থ

‘ঈদ’ হচ্ছে আরবি শব্দ। এর অর্থ- উৎসব, পুনরাগমন, পুনরাবৃত্তি। আরবি ভাষাবিদগণ বলেন- আরবি عيد শব্দটি আরবি হরফ ع و د সমৃদ্ধ عود ধাতু হতে গঠিত। এর অর্থ পুনরাগমন। প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে এই ঈদের পুনরাগমন হয় বলেই একে ঈদ বলে।

ঈদ সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঘরে-ঘরে বয়ে আনে আনন্দের পবিত্র সওগাত। এ বিশ্ব চরাচরে মানুষ যে কত রকমের রয়েছে, তার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। কেউ কালো, কেউ সাদা, কেউ তামাটে, কেউ বেঁটে, কেউ লম্বা, কেউ সরু, কেউ মোটা, কারও চুল কোঁকড়ানো, কারও সরু-মসৃণ এছাড়াও আছে কেউ মহিলা কেউ পুরুষ, কেউ শিক্ষিত, কেউ অশিক্ষিত, কেউ ধনী, কেউ গরিব, কেউ শহরবাসী, কেউ গ্রামবাসী, কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক, কেউ চাকুরে, কেউ ব্যবসায়ী- কিন্তু ঈদ এলে সব ভেদাভেদ ভুলে সব মুসলিমই আনন্দিত হয়। সকলেই ঈদের আনন্দে অংশ নেয়। কেউ হয়তো জাকাত দিতে পারে না, কিন্তু ঈদ করেনি বা ঈদের আগমনে আনন্দিত হয়নি- এমন মুসলমান বোধ হয় কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ঈদ সারা বিশ্বের মুসলমানদের সার্বজনীন উৎসব। ‘ঈদ’ শব্দ উৎসব অর্থে কুরআনেও ব্যবহৃত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

قال عيسي بن مريم اللهم ربنا أنزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لأولنا وآخرنا و آية منك- وارزقنا وأنت خير الرازقين-

অর্থ: মরিয়মের পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন- হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্যে আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ ঝুড়ি পাঠাও। যা আমাদের, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হবে আনন্দ-উৎসবস্বরূপ এবং তোমার কাছ থেকে নিদর্শন। এবং আমাদের জীবিকা দান করো, আর তুমিই শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা। (সূরা মায়েদাহঃ আ-৭)

হাদীসের বর্ণনায় ঈদ-উল ফিতরের কথা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ঈদ-উল ফিতরের দিন যখন আসে, আল্লাহ তায়ালা রোজাদার লোকদের ব্যাপারে গর্ব করে ফেরেশতাদের বলেন- হে আমার ফেরেশতাগণ! তোমরাই বলো, কী বদলা হতে পারে সে শ্রমিকের, যে নিজের দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছে। ফেরেশতাগণ আরজ করেন- হে মা’বুদ! উপযুক্ত বদলা হলো যথাযথ মজুরী (পারিশ্রমিক) প্রদান করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আমার বান্দারা আমার দেয়া কর্তব্য আদায় করে তাকবির ধ্বনির সাথে নামায আদায় করার জন্য ঈদগাহের দিকে বের হয়েছে। আমার ইজ্জত ও বুযুর্গীর কসম, আমার দয়া, দান ও মহত্তের কসম, আমি তাদের দুআ অবশ্যই কবুল করবো। তারপর বান্দাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন- যাও। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের মন্দগুলো পূণ্যে পরিণত করলাম। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- এভাবে তারা ক্ষমার ওয়াদা পেয়ে (ঘরে) প্রত্যাবর্তন করে। (বাইহাকী)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত ইবাদতের মধ্যে কাটায়- তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। ৮ই জিলহজ্জের রাত, আরাফাতের রাত, ঈদুল আজহার রাত, ঈদ-উল ফিতরের রাত এবং ১৫ই শাবানের রাত, (১৪ তারিখ দিবাগত রাত)  (তারগীব ও তারহীবঃ ২৫৫)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ঈদের রাতে(চান্দ রাতে) সওয়াবের নিয়তে ইবাদত করে, তার অন্তর সেদিনও মরবে না, যেদিন অন্য লোকদের অন্তর মরে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। (তারগীব-তারহীব)

ঈদের দিনের সুন্নাতসমূহ

১. শরীয়তসম্মত সাজ-সজ্জা অবলম্বন করা।
২. গোসল করা।
৩. মিসওয়াক করা।
৪. উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৫. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৬. খুব ভোরে জাগ্রত হওয়া।
৭. সকালে ঈদগাহে গমন করা।
৮. ঈদগাহে যাওয়ার আগে (ঈদ-উল ফিতরে)  মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া।
৯. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।
১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা। ( মসজিদে না পড়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হলে ভিন্নকথা)
১১. ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে এক পথে যাওয়া আর অন্য পথে ফিরে আসা।
১২. পায়ে হেটে ঈদগাহে গমণ করা। (যানবাহন ব্যতীত)
১৩. মৃদুস্বরে নিম্নলিখিত তাকবীর বলতে বলতে চলা-

الله أكبر الله أكبر- لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد-

আল্লাহ পাক আমাদের সবার ঈদকে বরকতময় করুন। আমাদের এ আনন্দকে কবুল করুন।

হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান 
খতিব, সদর জামে মসজিদ, জুম্মাপাড়া, রংপুর

ঈদ সংখ্যা - ২০২২
279 Views