ইমাম
দশ বারো জন হিংস্র ও হাস্যোজ্জল যুবক ঘিরে আছে এক ইমামকে। ইমাম সাহেব আসরের নামাজে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। যুবকদের বড়ো ভাই বিরক্ত। জিজ্ঞাসা করলেন, পলাইয়া যাবেন না তো?
বিব্রত ও অপমানিত ইমাম সাহেব দৃঢ় কন্ঠে বললেন, না। নামাজ শেষে আসছি। এক প্রকার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ইমাম সাহেব মিনিট দশেক হাঁটা দূরত্বের মসজিদের দিকে চললেন। আসরের নামাজ শেষে পুলিশকে ফোনে জানালেন তার বিপদের কথা। ইমাম সাহেব যুবকদের কাছে আসতে আসতে বাইকে দুজন পুলিশ চলে এল। পুলিশ দেখে যুবকেরা মৃদু হাসল। পুলিশ অফিসার ইমাম সাহেবকে বললেন, বিয়া করায় দেন।
ইমাম সাহেব বললেন, আপনারাও এই কথা বলেন! মেয়েটার সম্মান কোথায়? ধর্ষকের সাথে বিয়েতে বসতে রাজি নয় মেয়েটা। জোর করে বিয়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে ইমামকে। পুলিশও ইমামকে সাহায্য করছে না। এলাকার আলেম সমাজের নীরব সম্মতি আছে যুবকদের প্রতি। কিন্তু আপত্তি শুধু এই ইমাম সাহেবের। পুলিশ চলে গেল। যুবকরা এটা জানত। পুলিশ তাদের দখলে। নানা রকম যুক্তি-তর্ক হচ্ছে কিন্তু ইমাম সাহেব বেয়াদব। কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। ধীরে ধীরে লোকজন বেশি হতে লাগল। শিশু, নারী, কিশোর, বৃদ্ধ, স্থানীয় আলেম-ওলামাগণ এলেন। স্থানীয় একজন আলেম সাহেব বললেন, বিয়াশাদি আল্লার ইচ্ছায় হয়। আপনি বাধা দেবার কে?
এলাকাবাসী রাজী আছে, তাদের ইজ্জতের দাম আছে না? একটা মেয়ের জন্য সারাজীবন কেন আমাদের বদনাম বয়ে বেড়াতে হবে?
তবুও ইমাম সাহেব অনড়। বললেন, একজন অপরাধীর সাথে বিয়ে হতে পারে না। তার থাকা উচিত ফাঁসির কাষ্টে। যুবকেরা ক্ষেপে গেল এই কথায়। তারা মারমুখী হয়ে বলল, এই এলাকায় না হলে অন্য এলাকা থেকে হুজুর আনতে হবে। যত টাকা লাগুক। এলাকায় একজন হুজুর হইলে এই সমস্যা। ভাব বেশি।
যুবকদের কথা শুনে ইমাম সাহেব ঘাবড়ে গেলেন। যুবকদের বড়ো ভাই বলল, হুজুর আপনি আমাদের ইমাম। আমরা আপনারে সম্মান করি। আপনি আমাদের সম্মান রক্ষা
করবেন এটাই তো নিয়ম। দশগ্রামে আপনার মতো কেউ নাই। আপনি যদি আমাদের বিপদে এগিয়ে না আসেন কে আসবে?
ইমাম বললেন, আরে ভাই অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তার পক্ষে যাচ্ছেন কেন? ‘পোলাপান মানুষ আকাম না হয় একটা করছে। মুরুব্বিরা যদি ক্ষমা না করে তাইলে কি হইল?’
‘আপনারা শুধু অপরাধীর কথা ভাবছেন, ভুক্তভোগী মেয়েটার কথা তো ভাবছেন না।’
সেই বড়ো ভাই আরও রেগে গেল। তুই তোকারি করে কথা বলতে লাগল ইমামকে। সে ঘোষণা দিলো, যে করেই হোক এই মেয়ের সাথে আজ রাতেই বিয়ে হবে ধর্ষকের।
আর ধুমধাম করেই হবে বিয়েটা। সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের বাসর সাজাতে নির্দেশ দিলো।
এলাকাবাসী বিয়ের দাওয়াত পাবে এতেই তারা খুশি। ন্যায়-অন্যায় তাদের কাছে কোনো বিষয়ই নয়। তারা বিয়ে নিয়ে উল্লসিত।
ইমাম সাহেব উঠে চলে যেতে চাইলেন। যুবকদের বিস্ময় বাড়ল। ইমাম সাহেব বললেন, কাজটা ঠিক হচ্ছে না। এটা অন্যায়।
যুবকেরা এবং এলাকার ময়মুরুব্বিরা কোনো কথা বলল না।
হঠাৎ যুবকদের বড়ো ভাইয়ের মনে হলো, ইমাম যদি আবার নতুন কোনো প্যাঁচ লাগায়? তাই ইমামকে ডেকে হুমকি দিলো, আমরা অন্য হুজুর আনতেছি। আপনার দরকার নাই। এই বিষয়টা নিয়া আর কোনো কথা বলবেন না। কোনো বাড়াবাড়ি করবেন না।
ইমাম সাহেব শুধু বললেন, এই কাজে টাকা ছাড়াও বহু হুজুর, ইমাম পাবেন। অনেক মুফতি, মওলানাও আপনাদের সাথে থাকবে। কিন্তু একটা কথা বলি। এটাই শেষ কথা-এটা কিন্তু অন্যায়।
কথাটা শেষ করা মাত্র ইমাম সাহেবকে একটা চড় মেরে বসল বড়ো ভাই। এরপর শুরু হলো এলপাথাড়ি মার। এলাকাবাসী দর্শকের ভূমিকায়। কিছুক্ষণ আগেও যারা তার পেছনে নামাজ পড়েছে তারাও নীরব। কিছু করছে না কিছু বলছেও না।
ঠিক সেই মুহূর্তে ঝড়োগতিতে ঘর থেকে বিধ্বস্ত একটা মেয়ে বেরিয়ে আসে। তার হাতে একটা দোধারি তলোয়ার। তলোয়ার দিয়ে সে আক্রমণকারী যুবকদের এলপাথারি কোপাতে লাগল। তার ক্ষিপ্র আঘাতে দিশেহারা যুবকেরা দিগি¦দিক পালিয়ে গেল।
রণবিজয়ী মেয়েটি দেখতে পেল, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন ইমাম সাহেব-যার পেছনে কোনোদিন সে নামাজ পড়ার সুযোগ পায়নি।
জাকির সোহান
সিংগীমারী
হাতীবান্ধা,
লালমনিরহাট।
মোবাইল-০১৭৬৩০৮৮৬১১