রাশি : যুদ্ধ
আমি যীশু। আমার জন্ম ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৬৷ আমার জন্ম বিজয় দিবসে হলেও আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আমার নাম বিজয় না রেখে যীশু কেন রেখেছেন, তা বুঝেছি অনেক পরে। আমি ধনু রাশির জাতক। এ জন্যই হয়তোবা তীর ধনুকের প্রতি আমার দূর্বলতা। বাল্যকাল থেকেই তীর ধনুক আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। আমার তীরের লক্ষ্য এত অভেদ্য ছিলো যে, কোনো পাখি উড়ে বাঁচতো, এরকম ঘটনা খুব কম ঘটেছে। আমার বাবা এসব বুঝতে পেরে আমাকে একদিন ডেকে কাছে বসালেন। বললেন, ‘পাখিরা স্বাধীন মুক্ত। আমরাও স্বাধীন মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানিরা তোমার মতো করে বাঙালিদের মেরে ফেলতো।’ আমি কষ্ট পেলাম এবং অনুতপ্ত হলাম। বাবা আমাকে বুঝিয়ে বললেন, ‘তুমি ধনুর্বিদ্যায় যে দক্ষতা অর্জন করেছ, তাতে ভবিষ্যতে আর্চার হতে পারবে। আর্চার হয়ে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিজয় ছিনিয়ে আনবে।’ বাবা স্বপ্ন দেখালেন। বাবার দেখানো স্বপ্নের পথে আমি এগুতে লাগলাম।
আর্চারিতে আমি অনেক দূর এগিয়েছিলাম। ২০০৬ সালে সাফ গেমসেও অংশগ্রহণ করেছিলাম। তার পরের বছর আর্চারিতে পথ চলা আমার চিরদিনের জন্য থেমে যায়। ঐ বছরে বাবা গরুর খামার শুরু করেন। আমি একদিন শখ করে খামারের গরুর জন্য খড় কাটি। হঠাৎ করে কাচিতে আমার ডানহাতের বুড়ো আঙুল লেগে কেটে মাটিতে পড়ে যায়। সেলাই দেয়ার পরেও আর যুক্ত হয়নি। পরে পুরো হাত কেটে ফেলতে হয়। হাত কাটার সাথে সাথে আমার ধনুর্বিদ্যাও হারিয়ে যায়। হাহাকারে আমার হৃদয় খানখান হয়ে যায়। তখনই বুঝতে পেরেছি, আমার বাবা হয়তোবা অবচেতন মনে বঝতে পেরেছিলেন আমি এ পৃথিবীতে যীশুর মতো কষ্ট বয়ে বেড়াবো। পনেরো বছর যাবত আমি ক্রুশের মতো করে কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সহজে হাল ছাড়ি না। আমি আমার দশ বছরের ছেলে বিজয়কে ধনুর্বিদ্যায় দক্ষ করে তুলছি। আমার বাবা আমার নাম বিজয় রাখেননি। আমি আমার ছেলের নাম রেখেছি।
আমার বিজয় একদিন নিশ্চয় বিশ্বের বুক থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনে আমার কাটা হাতে ধরিয়ে দিবে। হয়তোবা আমি সে স্বপ্ন হাত দিয়ে ছুঁতে পারবো না; কিন্তু হৃদয়ে মর্মে মর্মে গেঁথে রাখবো।