কবিতা

একটি তর্জনী উচানো কবিতা

গল্পের শুরু— তারপরসময়টা সাতই মার্চ উনিশ শ একাত্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ(আজ যেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ)সেদিন সেখানে তর্জনী উচিয়ে পাঠ হয়েছিলো একটি শ্রেষ্ঠ কবিতাউচ্চারিত হয়েছিলোএকটি ভুবন কাঁপানো হৃদয়স্পর্শী ভাষণ।সে কবিতা যেনএকটি জাতির জীবনের সুখ-দুঃখের অভিধানসে কবিতা যেনএকটি জাতির হাসি-কান্নার অনাবিল ইতিহাস।সেদিন সে উদ্যানেসিংহের মতো গর্জে উঠেছিলোযে কণ্ঠদীপ্ত প্রত্যয়ে ধ্বনিত হয়েছিলো যে ভাষণপ্রকম্পিত করেছিলো মাঠ-ঘাট-প্রান্তর, আকাশ—বাতাস অমর অজর  সেই কবিতার মহান কারিগর ছিলেন—হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের মহান নেতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন সে কবিতা শোনার জন্যএ উদ্যানে এসেছিলোসারাদেশ থেকে অগনন মানুষ—যোগ দিয়েছিলোকামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কুলি-মুজুরছাত্র-জনতা অফুরান। কানায় কানায় ভরে উঠেছিলো এই মাঠনেমেছিলো জনতার ঢল।কি এক উত্তাল ব্যকুলতায়সে কবিতা শোনার জন্যকী এক গভীর উচ্ছাসময় আবেগে সেদিন সে ভাষণ শোনার জন্য অপেক্ষা অধীর জনতা প্রহর গুণছিলো পিনপতন নিরবতায়।অবশেষে  সকল অধীরতা ভেদ করে সকল নীরবতা ভঙ্গ করেবজ্র কণ্ঠেউচ্চারিত হয়েছিলোকাঙ্ক্ষিত সেই অমর কবিতাগর্জে উঠেছিলো কাঙ্ক্ষিত সেই অগ্নিশপথ ভাষণ—“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম “ এ যেন এক মাঠ জনতারলালিত স্বপ্নের অনিবার্য প্রত্যাশাকাঙ্ক্ষিত মুক্তির উম্মুক্ত স্মারক। দিকে দিকে চারিদিকে দিগন্তভেদী সে কবিতাসে কবিতার প্রতিটি শব্দঅবিনাশী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বিশ্বে—তারপর—অশেষ সে কবিতার প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি পঙক্তি আজও আমাদের নিত্য পাঠের  অনির্বাণ বর্ণমালা।

কবিতা

একটি তর্জনী উচানো কবিতা

গল্পের শুরু— তারপরসময়টা সাতই মার্চ উনিশ শ একাত্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ(আজ যেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ)সেদিন সেখানে তর্জনী উচিয়ে পাঠ হয়েছিলো একটি শ্রেষ্ঠ কবিতাউচ্চারিত হয়েছিলোএকটি ভুবন কাঁপানো হৃদয়স্পর্শী ভাষণ।সে কবিতা যেনএকটি জাতির জীবনের সুখ-দুঃখের অভিধানসে কবিতা যেনএকটি জাতির হাসি-কান্নার অনাবিল ইতিহাস।সেদিন সে উদ্যানেসিংহের মতো গর্জে উঠেছিলোযে কণ্ঠদীপ্ত প্রত্যয়ে ধ্বনিত হয়েছিলো যে ভাষণপ্রকম্পিত করেছিলো মাঠ-ঘাট-প্রান্তর, আকাশ—বাতাস অমর অজর  সেই কবিতার মহান কারিগর ছিলেন—হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের মহান নেতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন সে কবিতা শোনার জন্যএ উদ্যানে এসেছিলোসারাদেশ থেকে অগনন মানুষ—যোগ দিয়েছিলোকামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কুলি-মুজুরছাত্র-জনতা অফুরান। কানায় কানায় ভরে উঠেছিলো এই মাঠনেমেছিলো জনতার ঢল।কি এক উত্তাল ব্যকুলতায়সে কবিতা শোনার জন্যকী এক গভীর উচ্ছাসময় আবেগে সেদিন সে ভাষণ শোনার জন্য অপেক্ষা অধীর জনতা প্রহর গুণছিলো পিনপতন নিরবতায়।অবশেষে  সকল অধীরতা ভেদ করে সকল নীরবতা ভঙ্গ করেবজ্র কণ্ঠেউচ্চারিত হয়েছিলোকাঙ্ক্ষিত সেই অমর কবিতাগর্জে উঠেছিলো কাঙ্ক্ষিত সেই অগ্নিশপথ ভাষণ—“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম “ এ যেন এক মাঠ জনতারলালিত স্বপ্নের অনিবার্য প্রত্যাশাকাঙ্ক্ষিত মুক্তির উম্মুক্ত স্মারক। দিকে দিকে চারিদিকে দিগন্তভেদী সে কবিতাসে কবিতার প্রতিটি শব্দঅবিনাশী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বিশ্বে—তারপর—অশেষ সে কবিতার প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি পঙক্তি আজও আমাদের নিত্য পাঠের  অনির্বাণ বর্ণমালা।

মুগ্ধতা.কম

২৬ মার্চ, ২০২৩ , ৮:৪৩ অপরাহ্ণ

একটি তর্জনী উচানো কবিতা

গল্পের শুরু— তারপরসময়টা সাতই মার্চ উনিশ শ একাত্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ(আজ যেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ)সেদিন সেখানে তর্জনী উচিয়ে পাঠ হয়েছিলো একটি শ্রেষ্ঠ কবিতাউচ্চারিত হয়েছিলোএকটি ভুবন কাঁপানো হৃদয়স্পর্শী ভাষণ।সে কবিতা যেনএকটি জাতির জীবনের সুখ-দুঃখের অভিধানসে কবিতা যেনএকটি জাতির হাসি-কান্নার অনাবিল ইতিহাস।সেদিন সে উদ্যানেসিংহের মতো গর্জে উঠেছিলোযে কণ্ঠদীপ্ত প্রত্যয়ে ধ্বনিত হয়েছিলো যে ভাষণপ্রকম্পিত করেছিলো মাঠ-ঘাট-প্রান্তর, আকাশ—বাতাস অমর অজর  সেই কবিতার মহান কারিগর ছিলেন—হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের মহান নেতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন সে কবিতা শোনার জন্যএ উদ্যানে এসেছিলোসারাদেশ থেকে অগনন মানুষ—যোগ দিয়েছিলোকামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কুলি-মুজুরছাত্র-জনতা অফুরান। কানায় কানায় ভরে উঠেছিলো এই মাঠনেমেছিলো জনতার ঢল।কি এক উত্তাল ব্যকুলতায়সে কবিতা শোনার জন্যকী এক গভীর উচ্ছাসময় আবেগে সেদিন সে ভাষণ শোনার জন্য অপেক্ষা অধীর জনতা প্রহর গুণছিলো পিনপতন নিরবতায়।অবশেষে  সকল অধীরতা ভেদ করে সকল নীরবতা ভঙ্গ করেবজ্র কণ্ঠেউচ্চারিত হয়েছিলোকাঙ্ক্ষিত সেই অমর কবিতাগর্জে উঠেছিলো কাঙ্ক্ষিত সেই অগ্নিশপথ ভাষণ—“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম “ এ যেন এক মাঠ জনতারলালিত স্বপ্নের অনিবার্য প্রত্যাশাকাঙ্ক্ষিত মুক্তির উম্মুক্ত স্মারক। দিকে দিকে চারিদিকে দিগন্তভেদী সে কবিতাসে কবিতার প্রতিটি শব্দঅবিনাশী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বিশ্বে—তারপর—অশেষ সে কবিতার প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি পঙক্তি আজও আমাদের নিত্য পাঠের  অনির্বাণ বর্ণমালা।

মুগ্ধতা.কম

২৬ মার্চ, ২০২৩ , ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

সৈনিক

আচ্ছা তারা কি জানে আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক? তার চেয়েও বড় কথা তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা? জানলে নিশ্চয় এই আচরণ তারা আমার বৃদ্ধ বাবার সাথে করতে পারতেন না। আমি বাবার ছোট মেয়ে। ছোট বলতে সবার ছোট। মা কয়েকবছর আগে গত হয়েছেন। তিনি গত হয়ে ভালোই হয়েছে। বাবা এখন একজন রিটায়ার্ড স্কুল শিক্ষক। আগের মতো আয়-রোজগাড় তার নেই। আমাদের বাবা-মেয়ের চলতেই কত কষ্ট হয়। আমি জানি মা বেচে থাকলে মায়ের আরো কষ্ট হতো। তিনি আবার বেশি কষ্ট সইতে পারেন না। সইতে পারলে কি আর এতো তাড়াতাড়ি ওপারে যাওয়ার টিকেট কাটতেন? ভাবির সাথে সেদিন মায়ের একটু তর্ক লেগেছিল। মা-বাবার প্রেমের বিয়ে না তবুও মা বাবাকে খুব ভালোবাসতো। বাবা তার সারাটা জীবন পার করলেন মানুষকে শিক্ষা দিয়ে। সেই বাবাকে কেউ যদি লেখাপড়ার বিষয়ে জ্ঞান দেয় তা কি বাবার ভালো লাগবে নাকি মায়ের? বাবা ধৈর্যশীল মানুষ তাই তিনি সয়ে গেছেন কিন্তু মায়ের তো আর অত ধৈর্য নেই। তাই ভাবির সাথে তর্কটা লেগে যায়। ভাইয়া রাতে ফিরলে ভাবি ভাইয়াকে কী যে বলল, তা শুনেই ভাইয়া সেকি রাগ মায়ের উপর। মায়ের বড় ছেলে ভাইয়া। খুব আদর করত মা ভাইয়াকে। ভাইয়া নাকি বাবা-মার কত সাধনার ধন। বিয়ের সাত বছর পরও যখন সন্তান হচ্ছিল না তখন কত তাবিজ-কবজ করে নাকি ভাইয়াকে পায়। যাহোক ধান ভাঙতে আর শিবের গান না গাই। সেদিন ভাইয়া মাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল। ওই যে বললাম মায়ের আমার ধৈর্য কম ছিল। তাই ছেলের কথাগুলো বোধ হয় তার খুব লেগেছিল। কোথায় লেগেছিল কে জানে। মা রাতে ঘুমিয়ে পড়লেন কিন্তু পরদিন সকালে আর তার ঘুম ভাঙল না। চিরতরে ঘুমিয়ে গেলেন আমার মা। সেই থেকে আমার বাবার একমাত্র চিন্তাও আমি ভরসাও আমি। অন্য ভাই-বোনেরা যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার তো আর সংসার নেই তাই আমি সারাদিন বাবাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমার সংসার থাকবেই বা কি করে? কাকসুন্দরী মেয়েদের কি কেউ বিয়ে করতে চায়? কেউ চাইলেও তাদের বাড়তি চাওয়া পূরণ করার সাধ্য যে বাবার নেই।

বাবাকে  নিয়ে আমি এখন আমাদের জেলার সরকারি মেডিকেলে আছি। বাবার শ্বাসকষ্টটা অনেক বেড়ে গেছে। শীতে মেডিকেলে রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই বাবার স্থান হয়েছে ফ্লোরে। আমি কর্তব্যরত একজন নার্সকে বললাম একটা বেডের ব্যবস্থা করে দিতে। তিনি আমাকে বললেন-আপনারা কি এমন ভিআইপি লোক যে বেড না হলে আপনাদের চলবেই না। বেশি অসুবিধা হলে কেবিন ভাড়া নিন। অনেক আরামে থাকবেন।

আমি বলতে চাইলাম, আমার বাবা একজন………

কিন্তু বাবা আমাকে ইশারা করে নিষেধ করলেন। বাবার কথা -যুদ্ধ করেছি আমার দায়য়বদ্ধতা থেকে, দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে। এখানে সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলে সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য নয়।আর দশজন লোক যেভাবে বাঁচে আমিও সেভাবেই বাঁচতে চাই।

বাবা একটু সুস্থ হলে আমি বাবাকে নিয়ে গ্রামে যাওয়ার জন রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। কিন্তু কি এক কারনে পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের রিক্সাটা ছিল সবার সামনে। রিক্সাওয়ালা অহেতুক বেল বাজিয়ে চলেছেন। ডিউটিরত পুলিশটা এসে রিক্সাওয়ালাকে কষে একটা চড় দিলেন। ট্রাফিক পুলিশ না থানার পুলিশ। বাবা রিক্সাওয়ালার পক্ষ নিয়ে পুলিশকে বললেন, বাবা ধাপ্পড়টা না দিলেও পারতেন। পেশায় না হোক আপনার থেকে তো বয়সে বড়, তার গায়ে হাত তোলা কি ভালো কাজ?

পুলিশটার আত্মসম্মানবোধ হয় একটু বেশি। উনি আমার বাবার কলার টেনে ধরে রিক্সা থেকে নামালেন। “আমাকে আইন শেখাও বেটা, আমাকে আইন শেখাও? এবার দেখ কেমন লাগে।”

আমি বাবাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু উনি আমাকেও একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল। বাবা তার স্বভাব সূলভ উত্তর দিলেন- আমিতো আইন নিয়ে কিছু বলিনি। আপনি যে কাজটা করলেন সেটা না করলেও পারতেন তাই বলেছি। ক্ষমতা হাতে পেয়ে তো রীতিমতো তার অপব্যবহার করছেন আপনি। একজন রিক্সাওয়ালা বেল বাজালে তার গায়ে হাত তুলতে হবে এটা কোন আইনে আছে বলেন তো।

মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আমার বাবা তার উঁচু মাথা নিচু করে ফেললেন। অথচ জীবনে কখনো আমি বাবাকে মাথা নিচু করে হাঁটতেও দেখিনি। মাথা নিচু করে নাকি ভীতুরা হাটাচলা করে। অথচ আজ আমার সাহসী বাবা মাথা নিচু করে আছে আমার সামনে। চুপচাপ বাবা রিক্সায় উঠে এল। কিছুক্ষণ পর রাস্তা খুলে দেওয়া হলো। আমরা চলে এলাম। বাড়িতে এসে বাবা সবসময় চুপচাপই থাকত। মেয়ের সামনে থাপ্পড় খাওয়া কোনো কাপুরুষ বাবাও সহজে হজম করতে পারবে না। আর আমার বাবা তো সাহসী বাবা, একাত্তরের বীর সৈনিক। তিনি কীভাবে এই লজ্জা হজম করবেন। একসপ্তাহও কাটল না। এই লজ্জা নিয়ে আমার বাবার পক্ষে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা কতটা অসম্ভব ছিল তা একমাত্র আমি জানতাম। তাই তিনিও মায়ের পথ অনুসরণ করলেন। কাউকে কিছু বুঝতে দিলেন না। নিঃশব্দে চলে গেলেন। বাবা মারা যাওয়ার কথা শুনে সেনাবাহিনীর লোকজন এসেছিল আমার বাবাকে সম্মান জানাতে। আমি তাদের তা করতে দেইনি। এতে আমার অন্যান্য ভাইবোন এমনকি গ্রামবাসীও আমার উপর চরম ক্ষেপেছিল। কেন করতে দিব? যে সম্মান আমার বাবা বেঁচে থাকতে পায়নি মরে গিয়ে সেই সম্মান সে কী করবে? কী লাভ সেই সম্মান পেয়ে? সবাই জানে আমার বাবা বার্ধক্য কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মারা গেছে। কিন্তু আমি তো জানি বাবা কেন মারা গেছে। বাবার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস, উদাস চাহনি আমাকে বারবার শিহরিত করত, আমাকে ভাবাতো, আমাকে ভয় পাইয়ে দিত। একজন মানুষ কীভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যায় আমি আমার বাবাকে দেখে তা বুঝেছি।

একজন  সাহসী যোদ্ধা যিনি যুদ্ধ করে  দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন কিন্তু জীবন যুদ্ধে তিনি পরাজিত সৈনিকের মতো মাথা নত করে চলে গেলেন এই পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে।

সৈনিক
Comments Off
30 Views

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

২৬ মার্চ, ২০২৩ , ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

উপমহাদেশে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার শুরু যেভাবে

১৮৩৫ সালে উপমহাদেশে সর্ব প্রথম ‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস সমমান কোর্সে বাংলা ও বিহারের হাতে গোনা অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেত। পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব বাংলার কিছু কিছু জায়গায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রচলন শুরু হয়। সেই সাথে আস্তে আস্তে পূর্ব বাংলায় ‘অ্যালোপ্যাথিক’ চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতি হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক এম.বি.বি.এস ডিগ্রি, ১৯৬১ সালে দন্ত চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক বি.ডি.এস ডিগ্রি চালু হয়। এই স্নাতক ডিগ্রিগুলো পরিচালিত হচ্ছে এদেশের বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

পরবর্তীতে এদেশে চিকিৎসাবিদ্যায় ও দন্ত চিকিৎসাবিদ্যায়  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু হয়। সেই সাথে ১৯৫৭ সালের দিকে ব্রিটিশ- পাকিস্তান পিরিয়ডের এদেশের মধ্যম মানের এল.এম.এফ, এম.এম.এফ চিকিৎসকের কোর্স দু’টি তৎকালীন সরকার বন্ধ করে দেয়। তবে, ঐ কোর্স বন্ধ করার পূর্বে তৎকালিন পূ্র্ব পাকিস্তান- বাংলাদেশ সরকার ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজে ( প্রাক্তন ঢাকা মেডিকেল স্কুল) ব্রিটিশ-পাকিস্তান পিরিয়ডের চিকিৎসাবিদ্যায় লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এল. এম. এফ; এম. এম. এফ) সার্টিফিকেট কোর্সধারী ডিপ্লোমা সমমান চিকিৎসকদের ২ বছর মেয়াদে কনডেন্সে এমবিবিএস কোর্স করিয়ে প্রশাসন, জেলা ও মহুকুমা হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন। পরবর্তীতে এই চিকিৎসকরা অনেকেই মেডিকেল অধ্যাপকও হয়েছেন।

[চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস: আদি থেকে আঞ্চলিক’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি থেকে]

উপমহাদেশে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার শুরু যেভাবে - ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
27 Views

মজনুর রহমান

২৬ মার্চ, ২০২৩ , ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক: রক্তের মতো দামি

হঠাৎ মস্তিষ্কপ্রসূত কিছু আইডিয়া বড়ো কিছু হয়ে ধরা দিতে পারে। ‘মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক’ আমাদের এমনই হঠাৎ জন্ম নেওয়া এক স্বপ্নের নাম। আমরা হঠাৎ করে ভাবতে শুরু করে করলাম, সামাজিকভাবে এদেশের মানুষ এখন রক্তদানে অনেক সচেতন হলেও রক্তের প্রাপ্যতা এখনও শতভাগ হয়ে উঠতে অনেক দেরি। সেক্ষেত্রে এমন কোনো প্লাটফর্ম যদি হাতের কাছে থাকে যেখানে চাইলেই কেউ একজন রক্তদাতা খুঁজে নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন, তাহলে কেমন হয়। এই চিন্তা থেকেই মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা।

এখন আমাদের এই পোর্টালে অনেকেই নিজেদের রক্তের গ্রুপ নিবন্ধন করছেন। আবার অনেক মানুষ রক্ত খুঁজে পাচ্ছেন- সেটিও আমরা জানতে পারছি।

খুব সম্প্রতি শুরু হওয়া এই উদ্যোগে যে সাড়া আমরা পাচ্ছি তাতে আমাদের তৃপ্তি অনেক গুণ বেড়ে গেছে। গত মাসখানেক সময়ের মধ্যে এই পোর্টালে প্রায় দুইশো মানুষ নিজেদের রক্তদাতা হিসেবে নিবন্ধন করেছেন।
এখন আমরা পরিকল্পনা করছি তরুণদের নিয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক ছোটো ছোটো কমিটি করে দেবার, যাতে করে অনলাইন ছাড়াও রক্তদাতাদের মধ্যে মোটামুটি সহজ পন্থায় যোগাযোগ করা যায়।

সম্পূর্ণ মানবিক এই উদ্যোগে আপনিও সঙ্গী হতে পারেন শুধু রক্তদাতাদের তথ্য নিবন্ধন করে। যে কেউ এখানে তথ্য নিবন্ধন করতে পারবেন নিজের এবং অন্যের।

আসুন নিজে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হই অন্যকে উদ্বুদ্ধ করি। নিজের অজান্তেই হয়তো আপনি বাঁচিয়ে দিতে পারেন অসংখ্য প্রাণ।

যে রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে, সেই রক্তেরই আরেকটি অনন্য উদ্যোগ সফলতা পাবে সবার আন্তরিক সহযোগিতায়।

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক

মজনুর রহমান
সম্পাদক, মুগ্ধতা ডট কম।

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক - রক্তের মতো দামি
25 Views

মুগ্ধতা.কম

২৬ মার্চ, ২০২৩ , ৮:৪৩ অপরাহ্ণ

একটি তর্জনী উচানো কবিতা

গল্পের শুরু— তারপর
সময়টা সাতই মার্চ উনিশ শ একাত্তর 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ
(আজ যেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ)
সেদিন সেখানে তর্জনী উচিয়ে 
পাঠ হয়েছিলো একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা
উচ্চারিত হয়েছিলো
একটি ভুবন কাঁপানো হৃদয়স্পর্শী ভাষণ।
সে কবিতা যেন
একটি জাতির জীবনের সুখ-দুঃখের অভিধান
সে কবিতা যেন
একটি জাতির হাসি-কান্নার অনাবিল ইতিহাস।
সেদিন সে উদ্যানে
সিংহের মতো গর্জে উঠেছিলো
যে কণ্ঠ
দীপ্ত প্রত্যয়ে ধ্বনিত হয়েছিলো যে ভাষণ
প্রকম্পিত করেছিলো মাঠ-ঘাট-প্রান্তর, আকাশ—বাতাস 
অমর অজর  সেই কবিতার 
মহান কারিগর ছিলেন—
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি 
আমাদের মহান নেতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 
সেদিন সে কবিতা শোনার জন্য
এ উদ্যানে এসেছিলো
সারাদেশ থেকে অগনন মানুষ—
যোগ দিয়েছিলো
কামার-কুমার, 
জেলে-তাঁতি, কুলি-মুজুর
ছাত্র-জনতা অফুরান। 
কানায় কানায় ভরে উঠেছিলো এই মাঠ
নেমেছিলো জনতার ঢল।
কি এক উত্তাল ব্যকুলতায়
সে কবিতা শোনার জন্য
কী এক গভীর উচ্ছাসময় আবেগে 
সেদিন সে ভাষণ শোনার জন্য 
অপেক্ষা অধীর জনতা 
প্রহর গুণছিলো পিনপতন নিরবতায়।
অবশেষে  
সকল অধীরতা ভেদ করে 
সকল নীরবতা ভঙ্গ করে
বজ্র কণ্ঠে
উচ্চারিত হয়েছিলো
কাঙ্ক্ষিত সেই অমর কবিতা
গর্জে উঠেছিলো 
কাঙ্ক্ষিত সেই অগ্নিশপথ ভাষণ—
“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম 
এবারের সংগ্রাম 
আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম “

এ যেন এক মাঠ জনতার
লালিত স্বপ্নের অনিবার্য প্রত্যাশা
কাঙ্ক্ষিত মুক্তির উম্মুক্ত স্মারক। 
দিকে দিকে চারিদিকে দিগন্তভেদী সে কবিতা
সে কবিতার প্রতিটি শব্দ
অবিনাশী হয়ে 
ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বিশ্বে—
তারপর—
অশেষ সে কবিতার 
প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি পঙক্তি 
আজও আমাদের নিত্য পাঠের  
অনির্বাণ বর্ণমালা।

কবিতা
25 Views

মুগ্ধতা.কম

২৫ মার্চ, ২০২৩ , ২:৩৬ অপরাহ্ণ

পরিবৃত

তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসের বুকে কি এঁকে চলেছো চিত্রকর! নিদ্রামগ্ন কবির বিক্ষত হৃদয়, বিখন্ড নৈশ প্রহরে

মাকড়শা খামারে যে শুধু আবাদ করে খন্ড প্রেমের তন্দ্রা আর হিসেব কষে বিপন্ন কবিতার খাতায়। নিঃসঙ্গ

জ্যোৎস্নায় সময় জল ভেঙে সর্বাঙ্গে মাখে যৌবন কাঁদা আর হৃদয় সুড়ঙ্গে অনাবাদী প্রেম নিয়ে অপেক্ষারত

সঙ্গম প্রার্থনায়। চিত্রকর ক্যানভাসটি ফ্রেমহীন! মেঘরাঙা হস্তে ফুটালে কি খন্ডিত ব্যথার সম্মিলিত স্বাক্ষর,

নাকি সেই নিঃসঙ্গ পথ যা্ হাঁটছে কেবলি সূর্যাস্ত বরাবর! অবশেষে শোনো ঐ জড় ক্যানভাসটির রঙসকলই

কেবল পারে ঢেকে দিতে গোধূলির ক্ষয়ে যাওয়া যৌবন আর শূন্য দেয়ালের অসারতা।

পরিবৃত
32 Views

রবীন জাকারিয়া

২৫ মার্চ, ২০২৩ , ২:৩৫ অপরাহ্ণ

শুধু তোমারই নাম

সেই কবে কিংবা কোন কৌতুহলে 

এক ডায়েরি লিখেছিলাম আমি

মনে পড়েনা একদম৷

ডায়েরির প্রতিটি পাতায়

শৈশব-কৈশোর-যৌবনের স্মৃতিচারণ,

ইনা-মিনা-টিনা আরো কত

প্রেয়সীর নাম৷

প্রতিটি প্রেমে কত শর্তের কসম৷

এটা থাকলে ওকে আর 

সেটা থাকলে তাকে পাওয়া যায়!

এখন প্রেমে চলছে বানিজ্যিকিকরণ, 

লেনা-দেনার পারস্পরিক চুক্তি যেন!

হাতে হাত, অধরে অধর 

কিংবা শরীরে শরীর রাখার মূল্যগুলোও

মেটানো যায় “গিফট’ নামক এক অদ্ভুত মূল্যে!

যেমন করে ঘুষের নাম হয়েছে ‘মিষ্টির টাকা’!

পতিতাপল্লি ভেঙ্গে বাড়িয়েছি ভাসমান পতিতা

আর লম্পটের লঙ্গরখানা৷

সহজে এখন প্রেমিক হওয়া যায় 

কিন্ত জীবনসঙ্গী নয়৷

কোনো শর্তই পূরণ করতে পারিনি জীবনে

তাই পাওয়া হয়নি ইনা-মিনা-টিনাদের৷

তোমাকে যেদিন বিয়ে করলাম

পরিবারের চাপে৷

মনে হতো মেরে ফেলি কোনো এক রাতে৷

কত অযত্ন আর অবহেলা করেছি তোমায়৷

কিচ্ছুটি না বলে 

শুধু সয়ে গেছো নিরালায়৷

আজ এই মধ্যরাতে 

আমার হাতে সেই ডায়েরিখানা৷

নস্ট্রালজিক না হয়ে বরং ক্ষিপ্ত হাতে

ছিঁড়ে ফেলি ডায়েরির কত শত পাতা৷

আগুনে পুড়িয়ে ফেলি ছেঁড়া কাগজের সাথে

ইনা-মিনা-টিনাদের নাম চিরতরে৷

‘নিউ লুক’ প্রাপ্ত ডায়েরির 

অবশিষ্ট একটি পাতায় লিখে রাখলাম 

শুধু তোমারই নাম৷

শুধু তোমারই নাম
Comments Off
67 Views

এস এম আনোয়ার আজাদ

২৫ মার্চ, ২০২৩ , ২:২৬ অপরাহ্ণ

মুক্তি নেব

আমি পাগল হবো, মাতাল হবো, একদিন স্বাধীন হবো—ই হবো।

পারবেনা কেহ আপন হতে, চাইবে না আর কাছে পেতে

আমি পাখি হবো, উড়াল দেব ঐ আকাশ ফুড়ে

জরাজীর্ণ এ পৃথিবীকে দেখবনা আর আপন করে।

গাইব আমি স্বার্থের গান, আমি বাউল হবো।

থাকবেনা কো পিছুটান, সন্ন্যাসী জিবন বেছে নেব।

হবোই আমি! ঘর ছাড়া এক পথিক হবো।

যাযাবরের জীবন মত হাসি মুখে মেনে নেব।

আমার আমিকে খুন করে, জীবন থেকে পলাতক হবো।

আমি খুনি হবো। আমার জন্য আমি ভীতি হবো।

শৃঙ্খলার বেড়ি ছিড়ে আমি উচ্ছৃঙ্খল হবো।

আমি মন খুলে হাসব।

হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দেব।

দৃষ্টির সীমানায় চলে যাব। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেব।

পিছুটান, মান-অভিমান সব ঝেড়ে ফেলে,

আমি বন্য হবো, আমি অনন্য হবো।

নিত্য নিয়ম থেকে মুক্তি নেব, আমি এক অন্য আমি হবো।

মুক্তি নেব
38 Views

মুগ্ধতা.কম

২৫ মার্চ, ২০২৩ , ২:২১ অপরাহ্ণ

এস এম খলিল বাবুর তিনটি ছড়া

‌১.

তোমার ঘ‌রে আ‌লোর নাচন

এখন চে‌য়ে দে‌খি

‌চোখ মে‌লি‌য়ে ফ্যাল‌ফে‌লি‌য়ে

শুধুই চে‌য়ে থা‌কি!

আমারও‌তো ই‌চ্ছে ক‌রে 

‌তোমার কা‌ছে বস‌তে

আমারও‌তো ই‌চ্ছে ক‌রে

একটু খা‌নি হাস‌তে।

আমার ম‌নের স্বপ্নগু‌লো

‌কে ক‌রে‌ছে পণ্ড

প্রশ্ন জা‌গে ভালবাসায়

আজ কে বে‌শি ভণ্ড।

(২)

ভালোবাসি তাকে

কত কথা মনে পড়ে 

মনে পড়ে যাকে

ভালোবাসি ভালোবাসি

ভালোবাসি তাকে ॥ 

তাকে ছাড়া বাঁচি না 

তার হাসি  দেখি না 

তাকে নিয়ে হৃদয়টা করে হইচই

আজ তাকে হারানোর ব্যথাগুলো সই ॥

আজ থাকি দু’জনে দুই দি‌কে মুখ

আমি নেই ব্যথাগুলো সে খোঁজে সুখ।

(৩)

ভাষার লড়াই চলে

বায়ান্নতে ভাষার লড়াই

একাত্তরে যুদ্ধ

স্বাধীনতা পেলাম বলে

পাকবাহিনী ক্ষুব্ধ।

লড়াই চলে প্র‌তি‌দি‌নেই

লড়াই চলে মুক্তির

লড়াই চলে বানান নি‌য়ে

লড়াই চলে যুক্তির॥

এস এম খলিল বাবুর তিনটি ছড়া
28 Views

মুগ্ধতা.কম

২৫ মার্চ, ২০২৩ , ১:০৪ অপরাহ্ণ

বনলতার বিয়ে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে নিয়মিত চাকরি প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইন। বনলতার গা শিউড়ে ওঠে এই লাইন দেখে। এক বছর আগেও সে এই লাইনে নিয়মিত দাঁড়াত। অন্য কোথাও এত ইন্টারভিউ দেয়নি। ব্যাংকেই সবচে বেশি দিয়েছে। তার ধারণা এখানেই সবচেয়ে নিরাপদ চাকরি পাওয়া যায়। সেটা সত্যিও হয়েছে। সে একটা সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আজ।

অনেক লড়াই করতে হয়েছে তার। সফলতার খবর গ্রামের চারদিকে এখনও উড়ছে। বয়সও অনেক হলো। এখন বিয়ে দরকার। বনলতার পাত্র মেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতে নমশুদ্র হওয়ায় যোগ্য পাত্র মিলছে না। বনলতার বেশ তাড়াও আছে বিয়ের। সে গভীরভাবে দীর্ঘশ^াস নিতে পারে- চাকরিটার জন্য। তার বিশ^াস বিয়ে থা হবে এক সময়। সুখে দিন কাটাবে। কিন্তু পাত্রের তীব্র আকালে তার অনেক কলিগ বলে, দেশে পাত্র না পেলে ভারতে যান, ওখানকার ছেলেকে বিয়ে করুন। সরকার অনুমতি দেবে নিশ্চয়।

বনলতার কেমন যেন লাগে। দেশের ছেলে ছাড়া মন কোথাও সায় দেয় না। নিজ জাতে তার সমমর্যাদার ছেলে নাই-এটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। এই কারণে যাকে তাকে বিয়েও করতে পারছে না। মহাবিপদে সে। মেয়ে কলিগরা টিপ্পনি কাটতে কাটতে তাদেরই বিরক্ত লেগে গেছে। ছেলে কলিগরা মজা নেয় শুধু। একবার তো বনলতা বিরক্ত হয়ে এক মেয়েকে বলেই ফেলেছে, আপনিও তো যাকে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না। আমাকে কেন জোর করেন?

মেয়ে কলিগটা প্রতি উত্তরে বলে, দেখুন, প্রচুর অফার পাচ্ছি তাই যাচাই-বাচাই করতে সময় লাগছে।

বনলতা সমবয়সী সেই কলিগকে বলে, আপনার প্রচুর অফার তাই যাচাই বাচাই করতে সময় লাগছে আর আমার তো কোনো পাত্রই খুঁজে পাচ্ছি না তাই সময় লাগছে। ব্যাপারটা দু’জনের একই-সময় লাগছে কোনো না কোনো কারণে। এটা নিয়ে প্যাঁচ লাগানোর কি আছে?

এই কথা শোনার পর কোনো কলিগই আর এ নিয়ে কথা বলতে আসেনি বনলতার সাথে।

২ ॥

বাবা অসুস্থ হওয়ায় বনলতা বাড়িতে । বাংলা সিনেমায় মুমূর্ষু বাবা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যেমন মরতে চান বনলতার বাবারও আকুতি তেমন। আশ-পাশের লোকজন মুসলিম, বাদবাকি বামন আর হ্মত্রিয়। বনলতার বাবা দ্রুত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেন। ফলে বিয়ের করুণ চাপটা কমে গেলো আপাতত। বনলতা আবার ঢাকায় চলে এল- বাবাকে পাত্র দেখার জোর তাগদা দিয়ে। কিন্তু বাবা তো মনে হয় মেয়ের পাত্র খুঁজতে খুঁজতে আবারও অসুস্থ হয়ে যাবে…

অফিসে লাঞ্চ বিরতির সময় বনলতার এক বিবাহিত সিনিয়র কলিগ ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে বলতে তাকে প্রেমের অফার দিয়ে বসল। সে হেসে উড়িয়ে দিলো। অফিস শেষে বাসা আসার পথে সেই কলিগের সাথে আবার দেখা। দুজনে চা খেতে বসল। বনলতা সিনিয়র কলিগকে বুঝিয়ে বলল, এটা অসম্ভব।

– কেন?

– ধর্ম।

– কেউ জানবে না। এটা জাস্ট প্রেম। আর কিছু না।

– এ নিয়ে আর কথা নয়, বনলতা বাই বলে চলে গেল।

বৃহস্পতিবার অফিস শেষে এক সমবয়সী কলিগ চান্স পেয়ে চায়ের অফার দিলো বনলতাকে। সেদিনও থ্যাংকস বলে বাসার দিকে চলছে। এই কলিগ তার ডিভিশনের নয়- অন্য  একটা ডিভিশনের। নাম-আদিল। আদিল পিছু নিয়ে কাছে এসে বলল, কথা আছে।

বনলতা বললো, কী কথা?

– জরুরি কথা।

– ফোনে জানান।

ফোন নম্বর নেই জানালে আদিলকে ফোন নম্বর দিলো বনলতা।

 রাতে আদিল ফোন দিয়ে বললো, কাল তো শুক্রবার। আসুন রমনায় কথা বলি।

– কখন?

– সকালে আসুন। সারাদিন ঘুরব।

– সকালে যেতে পারব না। বিকেলে ফ্রি থাকব।

– তাহলে বিকেলে আসুন।

– ওকে।

পরের দিন রমনাতে আদিল আর বনলতার দেখা। এই কথা সেই কথার শেষে বিয়ের কথা। আদিল জানাল, আপনাকে আমার ভালো লাগে।

বনলতা জানাল, আমারও একটু একটু আপনাকে ভালো লাগে।

আদিল খুশি হলো, আগে জানাননি কেন?

– এই সম্পর্ক ঠিক নয়।

– কেন?

– আমি হিন্দু আপনি মুসলিম।

– তাতে কী?

– সমাজের পরতে পরতে সমস্যায় পড়তে হবে।

– কোনো সমস্যা হবে না যদি আপনি রাজি থাকেন।

– কীভাবে?

– আপনি মুসলিম হয়ে যান।

অনেক আশায় অনেক সংকোচ নিয়ে আদিল বললেও এই প্রস্তাবে বনলতার কোনো ভাবান্তর নেই। বরং এতে আদিলই বিচলিত হয়ে গেল।  আর এ ধরনের প্রস্তাব তো বনলতার কাছে নতুন নয়।

সে হেসে বলল, আপনাকে আমার ভালো লাগে তা আগে জানাতে পারিনি, অথচ আপনি কত সহজভাবে ভালো লাগার কথাটা জানালেন। আবার ধর্ম পাল্টানোর কথাও বললেন। আমি কিন্তু আপনাকে কখনও ধর্ম পাল্টানোর কথা বলছি না। ভালো লাগার কারণে আমি ধর্ম পাল্টালে আপনি কি পাল্টাবেন? আপনি কি হিন্দু হতে পারবেন?

আদিল নানান যুক্তি দিতে লাগল তার ধর্মের পক্ষে। শ্রেষ্ঠত্বের ইতিহাস আবৃত্তি করতে করতে বললো, মানুষ অন্য ধর্ম থেকে মুসলিম হয়, মুসলিম থেকে অন্য ধর্মে যায় না।

এক পর্যায়ে প্রেম-প্রণয়ের চেয়ে ধর্মপ্রচারটাই মুখ্য হয়ে উঠল রমনায়। সন্ধ্যা হয়ে এলে দুজন দুদিকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

৩ ॥

জীবনের তাগিদে সাপে-নেউলে এক হতে পারে। ঠিক তেমনি এক তাগিদে বনলতার বিয়ে পাক্কা বামনের ছেলের সাথে। জাত-পাতের অনেক ব্যাপার থাকলেও একটা বিশেষ কোটায় তা এখানে কার্যকর হচ্ছে না। শতসহস্র সাধনার বিশ্বাস সুযোগ পেলে গোপনে একটু দম নেয়। ছেলে তো বেকার,  জাত-পাতের খরচা বহন করার সামর্থ্য নেই। তার দরকার এমন একজন যে তার বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে। মেয়ে চাকরি করে- অনেক টাকা ইনকাম করে। আর কী চাই? কারণ ছেলের জাত বামন হলেও বলার মতো কোনো সম্পত্তি নেই। ছেলের বাবার যা ছিল তা কীভাবে যে খরচ হয়েছে সে খবর নতুন প্রজন্মের কেউ জানে না। চাকরিজীবী বনলতার মাধ্যমে যদি বামনের হারানো গৌরব ফিরে আসে এই গোপন আশায় বিয়েতে এক পায়ে রাজি ছেলেপক্ষ। আর অপরদিকে জীবন যৌবন উপভোগ করতে শুদ্র পরিচয় মগজ থেকে শুকাতে সময় লাগেনি বনলতার।

বনলতার বিয়ে
42 Views

মুগ্ধতা.কম

১১ মার্চ, ২০২৩ , ১০:১৩ অপরাহ্ণ

বিধবা বিবাহের এক লুপ্ত ইতিহাস পুনরুদ্ধার

আমার বাবা সেই ব্রিটিশ আমলে বিদ্যাসাগর এর অনুপ্রেরণায় আমাদের এলাকায় বিধবা বিবাহ চালু করেছিলেন। বাবা এক এক করে মোট চারটি বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন মর্মে ছোটবেলায় জেনেছিলাম কিন্তু তিনটি বিধবা বিবাহের তথ্য সংগ্রহ করতে পারলেও আর একটি বিধবা বিবাহের তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। সেই চতুর্থ বিধবা বিবাহের তথ্যটি পেলাম আজকে আমার পারিবারিক দুর্গাপূজায় দায়িত্ব পালনকারী দেউরির কাছ থেকে।

দেউড়ি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি পুজোর সমস্ত রকম সরঞ্জাম বা উপাচার সাজিয়ে নিয়ে পুজোর সময় পুরোহিতের কাছে উপস্থাপন করেন। তার বাড়ি বড়বাড়ির দিকে। আজ বিভিন্ন রকম আলো আলাপ-আলোচনার সময়ে তিনি কথায় কথায় বাবার সেই আমলে দেয়া আর একটি বিধবা বিবাহের খবর দিলেন।

এই লালমনিরহাট জেলারই মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস মৌজার ডারারপার গ্রামের তৎকালীন নিবাসী ঢেপড়া চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন বাবা। বিধবা বিবাহকারি এই পাত্র ঢেপড়া চন্দ্রের পিতার নাম ছিল আন্ধারু চন্দ্র। বিধবা পাত্রির নাম ছিল পন্তেবালা। বিধবা হওয়ায় বিধবা-বিবাহের পরেও সেই নববধূকে বরের গ্রামের সবাই ডাকতেন পন্তে আড়ি বলে। রংপুরিয়া ভাষায় ‘আড়ি’ শব্দের অর্থ হলো বিধবা, যার শুদ্ধ ভাষা রাঢ়ী।

এই বিধবা দম্পতির সন্তানের নাম ছিল ‘বাঘ-ধরা’। যুবা বয়সে তাকে বাঘে ধরে বলেই তার নাম হয়ে যায় ‘বাঘধরা’। বাঘে ধরার পরে তার আসল নাম হারিয়ে যায় এবং এলাকায় সে পরিচিত হয়ে যায় বা ধরা নামে। কত যুগ আগের কথা। দ্বিতীয় প্রজন্মের সেই লোকটি কবেই হারিয়ে গেছেন, তার সময়েই তার প্রকৃত নামটিও হারিয়ে গিয়ে তার নাম হয়েছিল বাঘ ধরা, কিন্তু প্রকৃত নাম হারিয়ে গিয়ে এলাকায় বাঘ ধরা নামে পরিচিত এই লোকটির নাম এবং তাকে বাঘে ধরার ইতিহাস এখন এলাকার বয়স্কদের স্মৃতিতে বেঁচে আছে এবং এখনও বয়স্ক দের মুখে মুখে মুখে ফেরে তার নাম এবং সেই কাহিনি।

 হিমালয় সংলগ্ন এই এলাকায় আগে- সেই ব্রিটিশ আমলে বাঘের অত্যাচার এবং উৎপাত ছিল। এলাকায় একটা স্থানের নাম আছে খেদাবাঘ, স্থানীয় উচ্চারণে যা খেদাবাগ নামে পরিচিত। শীতকালে এলাকায় বাঘের আবির্ভাব হলে লোকজন সংগঠিত হয়ে সেই বাঘকে  তাড়িয়ে দিত আর সেই বাঘ ধরলা নদীর অববাহিকার একটি জঙ্গলপূর্ণ এলাকায় আশ্রয় নিত। তাড়িয়ে দেয়া সেই বাঘ জনমানবহীন ওই জায়গার জঙ্গলে আশ্রয় নিত বলে ওই এলাকার নাম ছিল খেদাবাগ। 

ব্রিটিশ আমলের সেইসব দিনগুলোতে জনগণকে বাঘের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য বন্দুক দিয়ে বাঘ মেরে বেড়াতেন কোলাঘাটের এক গোঁসাই, যার নাম এখনো তিন পুরুষ ধরে এলাকায় পরিচিত ‘বাঘমারা-গোসাই’ নামে। ওই সময়ে একদিন এলাকায় বাঘের আবির্ভাব হলে সেই বাঘমারা গোঁসাইকে খবর দেয়া হয়। বাঘমারা গোসাই বন্দুক নিয়ে বাঘ মারার  উদ্দেশ্যে এলাকায় এসে সেই বাঘকে আর খুঁজে পান না। বাঘ খুঁজে না পাওয়ায় তিনি ভাবলেন যে তাকে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে আনা হয়েছে। মিথ্যা সংবাদ দিয়ে তাকে ডেকে আনার জন্য তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং  যে তাকে সংবাদ দিয়ে ডেকে নিয়ে এসেছে- তাকে গুলি করে মারার জন্য খুঁজতে থাকেন। 

প্রকৃতপক্ষে বাঘ আবির্ভাবের সংবাদটি মিথ্যা ছিল না। বাঘটি লোকজনের ধাওয়া খেয়ে একটি জঙ্গলপূর্ণ বড় খালে লুকিয়ে পড়েছিল। সেই খালের উপর পাশের বাঁশঝাড় থেকে একটি বাঁশ হেলে পড়েছিল। বাঘ খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে সেই বিধবা দম্পতির সেই সন্তান সেই বাঁশ ধরে ধরে ওই জঙ্গলময় খালে বাঘ খুঁজতে নেমে যায় আর তখনই আচমকা বাঘটি তাকে আক্রমণ করে তার হাতের কনুইয়ের উপর কামড় দিয়ে ধরে। এরপর বাঘমারা গোঁসাই গুলি করে বাঘটি হত্যা করে যুবককে রক্ষা করেন। 

সেইদিন যুবকটিকে বাঘে ধরার এই ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় তোলে এবং কাহিনিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই সেই বাঘে ধরা যুবকটি এলাকায় ‘বাঘ-ধরা ছেলে’ নামে পরিচিতি পেতে থাকে এবং একসময় তার পিতৃপ্রদত্ত আসল নাম হারিয়ে গিয়ে  ‘বাঘ-ধরা’ নামটি স্থায়ী হয়ে যায়। প্রায় তিন প্রজন্ম আগে ঘটে যাওয়া সেই কাহিনি এলাকার বর্তমান প্রজন্ম এখনো মনে রেখেছে।

কত যুগ আগে ঘটে যাওয়া সেদিনের সেই কাহিনি এবং সেই লোকটি হারিয়ে গেলেও এখনো এই প্রজন্মের মানুষ তাকে ‘বাঘধরা’ হিসেবেই মনে রেখেছে এবং তাকে বাঘে ধরার সেই কাহিনি এখনো এলাকায় কিংবদন্তী হয়ে আছে।

বিধবা-বিবাহকারী দম্পতি ঢ্যাপড়া-চন্দ্র এবং পন্তে আড়ির একমাত্র সন্তান সেই :বাঘধরা’র বংশে এখন আর কেউ নেই। সেই বিধবা-বিবাহকারী  ঢ্যাপড়া-চন্দ্র, সেই বিধবা পন্তে আড়ি এবং তাদের একমাত্র সন্তান ‘বাঘধরা’ পৃথিবী থেকে অনেক আগে বিদায় নিলেও এবং তাদের কোন বংশধর না থাকলেও এখনো বয়স্কদের মুখে তাদের বিধবা বিবাহের কাহিনি, তার সন্তানকে বাঘে আক্রমন করার লোমহর্ষক কাহিনী এবং বাঘে আক্রমণ করার পরে বাপদাদার দেয়া নাম হারানো সেই ‘বাঘধরা’ লোকটির কাহিনি এখনো সেই এলাকায় জনশ্রুতি হয়ে আছে।

আজ আলাপে আলাপে ওই এলাকার বয়স্ক দেউড়ির কাছে তথ্যগুলি পেলাম। এ পর্যন্ত আমি খোঁজখবর নিয়ে তিনটি বিধবা বিবাহের তথ্য এবং বিবাহকারীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে পেলেও বাকি একটির নাম ঠিকানা তো দূরের কথা, এ সম্পর্কিত কোন রকম তথ্যই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সৌভাগ্যক্রমে আজ বাবার উদ্যোগে দেয়া সেই চতুর্থ বিধবা বিবাহের তথ্যটি তাদের নাম-ঠিকানাসহ পেলাম।

ফলে বাবার দেওয়া চারটি বিধবা বিবাহের শোনা তথ্যের মধ্যে এতদিন তিনটি পেলেও অন্যটির তথ্য না পাবার মানসিক যাতনা থেকে আজ মুক্তি পেলাম।

উল্লেখ্য যে, সম্ভবত বাবার দেওয়া এইসব বিধবাবিবাহই পূর্ববঙ্গের ইতিহাসে প্রথম এবং শেষ বিধবাবিবাহ। কারণ পূর্ববঙ্গে বিধবাবিবাহের আর কোনো তথ্য নেই।

**

মুকুল রায়

কবি ও কথাসাহিত্যিক 

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

বিধবা বিবাহের এক লুপ্ত ইতিহাস পুনরুদ্ধার - মুকুল রায়
38 Views

মজনুর রহমান

১১ মার্চ, ২০২৩ , ১০:১২ অপরাহ্ণ

নদীর জল দেখে 

ভোরবেলা শান্তি লিখতে চেয়েছিলাম 

কখন যেন রোদ উঠে গেল, এমন কড়া রোদ,

শান্ত নদীর জল বিরক্ত হতে শুরু করেছে, 

জাবর কাটতে থাকা গরুর গা চিড়বিড় করছে

বিরসমুখে মাছি তাড়াতে গিয়ে নিজেকে পেটাচ্ছে

গরুর মালিক রাগী মুখে গরুর লেজ ধরে টানছে 

ছোট্ট মেয়েটি মালিককে ডেকে ডেকে ত্যক্ত করছে

মেয়েটির জামা ধরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে তার মা

মায়ের ভেতরেও চুলা জ্বলছে, কখন হবে ভাত?

এইসব দৃশ্য দেখে নদী গা ছেড়ে দিলো ভাটিতে

যাবার সময় দুয়েকটা জানালার দিকে দৃষ্টি দিয়ে-

একটা জানালার পাশে বসে আছি একটা আমি

ক্লান্ত নদীর দিকে তাকিয়ে শান্তি লিখতে ইচ্ছে করে না।

এর বদলে কী লেখা যায় ভাবছি,

তখন দুপুর এসে উঁকি দেয় বাতাবিলেবুর গাছে

পুকুরের পাশে সুপারির ছায়ায় কিছু হাঁস শুয়ে আছে

হাঁসের দিকে তাকিয়ে মা ভাবছে কে কটা ডিম দেবে,

আব্বা এসে ডিমের টাকা আগাম চেয়ে নিয়ে গেল,

টাকা ফুরিয়ে যাবার ব্যথাসহ গরুর গায়ে হাত বোলাচ্ছে মা-

এই গরু এখন দুপুরবেলা গম্ভীর মুখে ঘাস চিবাচ্ছে 

যাকে দেখে বিরক্ত হয়েছিল শান্ত নদীর জল,

নদীর জল দেখে এখন কেবল দুঃখ লিখতে ভালো লাগে। 

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

নদীর জল দেখে
42 Views

মুগ্ধতা.কম

১১ মার্চ, ২০২৩ , ১০:০৩ অপরাহ্ণ

মাসুম মোরশেদ

১১ মার্চ, ২০২৩ , ৯:৫৩ অপরাহ্ণ

আসুন বদলে যাই

১.

আমরা তো বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করি।
তার সব কি বৈধ?
সব কি হালাল?
হারাম কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে হালাল হবে কি?
বিসমিল্লাহ বলে
ধুমপান
মদ্যপান
তাসখেলাসহ যেকোন জুয়াখেলা,
মানুষের ঘরে আগুন দেয়া, সংসার ভেঙ্গে দেয়া, ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষতি করা, কোন কিছু ধ্বংস করে দেয়া, হাত-পায়ের রগকেটে দেয়া, খুন করা, সর্বোপরি দেশের ক্ষতি করা এসব কোন কাজই নিশ্চয় বৈধতা পায় না।

২.

দেখবেন যাদের জোর আছে। যেমন মামা-চাচার জোর, খুঁটির জোর, নেতার জোর, পুলিশের জোর, টাকা-পয়সার জোর কিংবা গোষ্ঠিজ্ঞাতির জোর তারা কেউ কেউ পা পাড়িয়ে-মাড়িয়ে ঝগড়া করি।
মারামারি করি।

ছোটবড় বুঝি না, মানি না। সম্মান-অসম্মান বুঝি না। অন্যের সামনে হাত-পা ছোড়াছুড়িটা ঠিক মনে করি।
এসব কি খুব ভাল কাজ? মানুষ কি আপনার সেসব কাজের প্রশংসা করে?

৩.

কেউ কেউ প্রচুর মিথ্যে কথা বলি।
আবার কথায় কথায় কসম কাটি।
দরকারে বা অদরকারে বলি। আনন্দে বা নিরানন্দে বলি৷ যেন কোন ব্যাপার না মিথ্যা বলা।
কোন বিকার নেই। পাপবোধ নেই। খারাপ লাগা নেই।
খুব সহজে, অনায়াসে মিথ্যা বলি।
কখনও নিজের লাভের জন্য বলি। কখনও অন্যের মন যোগাতে বলি।
আবার বাঁচতে গিয়ে বাবা-মার নামে কসম কাটি। সন্তানসন্ততি নিয়ে কসম করি।
অন্যকে বিশ্বাস করাতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ টানি। ধর্মগ্রন্থের নাম তুলে, সৃষ্টিকর্তার নাম তুলে কসম করি।
অহরহ এটা। সব সমাজে বিদ্যমান এসব।
সবটাই স্বার্থের জন্য। বেশিরভাগ মানুষ নিজের লাভ ছাড়া কিছু বুঝি না।

৪.

আমরা অন্যকে ঠকাতে চাই। অন্যকে ঠকিয়ে জিততে চাই।
ওজনে কম দিই।
ভাগে কম দেই।
কাজে কম করি।
নিজের বেশিটা চাই, বড়টা চাই।
চাই চাই চাই করতে
মাকে ঠকাই, বাপকে ঠকাই। বোন-ভাইকে ঠকাই।
আত্মীয়, সহকর্মী, গোত্রের, দলের সবাইকে ঠকাতে ব্যস্ত থাকি।
কোন দায়বদ্ধতা নাই।
সহযোগিতা, সহমর্মিতা নাই।
নিজের স্বার্থচিন্তা করে শুধু খাই খাই করি বেশিরভাগ মানুষ। অধিকাংশ মানুষই এমন।

৫.

আবার আমরাই অনেকে গলাবাজি করি। লোকশোনানো কথা বলি। লোক দেখানো কাজ করি। সবসময় নিজেকে জাহির করার চেষ্ট করি।
সত্যি কি মানুষ এসব পছন্দ করে?
গলাবাজি করে কেউ কেউ টেকার চেষ্টা করলেও ঠিক একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়ে।

৬.

আমরা অনেকেই অনেক অনেক নীতিকথা বলি।
পরামর্শ দিই,
উপদেশ দিই।
তার অনেকটা আমরা নিজেরাই পালন করি না। দিব্বি চলছি এভাবে। লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই অনেকের। কতশত বড় বড় কথা বলি এখানে-সেখানে, জনসমুখে। তার ইয়ত্তা নেই।

৭.

ধর্ম পালনের ভাল ভাল দিক তুলে ধরি। ধর্ম পালনের কথা বলি। আবার নিজেরাই অনেক অন্যায় কাজ করি কিংবা অন্যায় কাজে সমর্থন করি।
সুবিধা আদায় করি।
সুবিধা পাইয়ে দেই।
নিজের প্রচুর দোষ না দেখে
বা ঢেকে রেখে অন্যের দোষ খুঁজি।
নিজেরটা এড়িয়ে যাই। সংশোধন হই না।

আমরা মানুষ হয়ে গেছি চটকদারি। লেবাস ঠিক আছে, মুখটাও ঠিক আছে কিন্তু কাজের বেলায় বৈপরিত্যে বসবাস। বিসমিল্লাহ বলে নিজের সুখটাই হাতড়াই। আর তাতে হারাম-হালালের বালাই ষাট! খারাপ কাজের মানুষগুলো একসময় আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। মানুষ ঠিকই তাদের চেনে। তাদের ঘৃনা করে।
আসুন ভাল মানুষ হই।
ভাল কাজ করি।
মানবিক হই।

সবার বোধোদয় হোক- সে প্রত্যাশা করি।
আসুন, সবাই বদলাই, বদলে দিই।

মাসুম মোরশেদ
শিক্ষক, সাহিত্যকর্মী।

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

আসুন বদলে যাই - মাসুম মোরশেদ
75 Views

রবীন জাকারিয়া

১১ মার্চ, ২০২৩ , ৯:৪৭ অপরাহ্ণ

ক্ষুধা

বাবা বিখ্যাত কেউ না থাকলেও একটা বিশেষ কাজের জন্য তাকে সবাই চেনে৷ বৃটিশ বেনিয়াদের কাছ থেকে যখন এদেশ স্বাধীন হলো৷ সেদিন নিজের দোকানের ছাদে বাবাই এ শহরে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে৷ সেটা দেখতে কতো যে লোক এসেছিলো! স্যালুট দিয়েছিলো! এখনো অনেকে সে গল্প করে৷ ভালো লাগে৷

কোনো অসুখ-বিসুখ ছিল না৷ কিংবা খুব বয়স হয়েছে তা-ও নয়৷ হঠাৎ করে বাবা মারা গেলেন৷  পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চলে যাওয়ায় আমরা অতল সাগরে পতিত হলাম৷ 

আমরা চার ভাই-বোন৷ দুই ভাই৷ দুই বোন৷ সবচেয়ে বড়বোনের বিয়ে হয়েছে৷ এখানেই থাকে৷ তবে ঘরজামাই বলা যায়না৷ শশুরের একখন্ড জমিতে নিজে বাড়ি বানিয়েছে৷ আয় রোজগার ভালো৷ উপরন্ত বাবার দোকানটা ভাড়ার নাম করে দখলে নিয়েছেন৷ এমন দুর্দিনে ভাড়াও দিচ্ছেন না আবার অন্যকে ভাড়া দিতেও দিচ্ছেননা৷ তাই আমাদের খোঁজ নেয় না৷ দূরত্ব রেখে চলে৷

আমাদের আত্মীয়-স্বজনরাও এখন এমুখো হয়না৷ 

বড় ভাই ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে৷ সে এখন আমাদের এ “জীবন-সংসার” নামক জাহাজের একমাত্র সারেং৷ আমরা বুঝি সংসার চালাতে তার কী প্রাণান্তকর সংগ্রাম৷ কলেজপড়ুয়া এক মেধাবী ছাত্রকে আজ দিন হাজিরাসহ এমন কোন কাজ নেই করতে হচ্ছেনা৷ একদিকে নিজের লেখাপড়া৷ অন্যদিকে আমাদের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ৷ পেরে উঠছেনা৷ তবুও অদ্ভুত প্রাণশক্তি তার৷ হার না মানার জেদ৷

প্রায়দিন আমাদেরকে দিনের বেলা উপোস করতে হয়৷ আমি এইটে আর আমার ছোটবোন সিক্সে পড়ে৷ সেই সকালে একমুঠো মুড়ি-চিড়া খেয়ে সারাদিন স্কুল শেষে খালি পেটে থাকা কী কষ্ট তা সবাই বুঝবেনা৷ আমার আর ছোটবোনের ক্ষুধা সহ্য হয়না৷ মাকে জ্বালাতন করি৷ খাবার দিতে বলি৷ এটা-ওটায় লাথি মেরে রাগ আর ক্ষুধার কষ্ট প্রকাশ করি৷ মা রাগ না করে বরং শুধু কাঁদে৷ বলতে থাকে তোরাতো শুধু নিজের কথা ভাবছিস অথচ তোদের বড়ভাই জাকির এই ঝড়-বৃষ্টি-রোদের ভেতর কী কষ্ট করে যাচ্ছে সংসারের জন্য! ও কি কিছু খেয়েছে কী-না সেটা কেন বলিসনারে তোরা৷ বলতে বলতেই কাঁদতে থাকে৷ জাকিররে কতো স্বপ্ন ছিলো তোর৷ পড়াশুনা শেষ করে মস্ত বড় চাকরি করবি তুই! আর এখন তুই লেবারি করছিস ব্যাটা! মা গীত গাওয়ার মতো সুর তুলে কাঁদে আর বলে আল্লাহ্ কেন আমাকে তুলে নিলোনা গো আল্লাহ্৷

মা’র কান্না শুনতে ভাল্লাগছেনা৷ ক্ষুধায় মেজাজ ঠিক নেই৷ এমন সময় আমাদের আদরের ছোট বোনটা এসে আমার হাত ধরে টানতে থাকে৷ ওকে সাথে নিয়ে গিয়ে বলি কী হয়েছে বলতো? ও নিজের পেটটাতে হাত দিয়ে ঘঁষতে ঘঁষতে বললো ছোটভাই খুব ক্ষুধা লেগেছে৷ আমাকে কিছু খেতে দাওনা! বলেই কান্না জুড়ে দিলো৷ ওর কান্না যেন আমার বুকের ভেতর তীরের মতো বিঁধছিলো৷ নিজেও কেঁদে ফেললাম অঝোরে৷ এটা কি শুধু বোনের ব্যথায় নাকি ক্ষুধার সেটা আজো রহস্যাবৃত৷ ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম চুপ কর৷ একটা ব্যবস্থা করছি৷ ওর হাত ধরে হাঁটছি আর ভাবছি কী করা যায়! এমন সময় মাথায় আইডিয়াটা এসে গেলো৷ 

আমাদের বাড়ি থেকে আধাঘন্টা পথ দূরে বড়খালার বাড়ি৷ ওনারা অনেক বড়লোক৷ খালাতো ভাই-বোনেরা সকলে উচ্চশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত৷ এজন্য অবশ্য বড়খালা কম অহংকার করেননা! যার ফলে ওনারা আমাদের সাথে তেমন সম্পর্ক রাখেননি৷ 

ছোটবোনটা বুড়ির মতো পাকা পাকা কথা বলে আর সবাই ভালোবাসি তাই আমরা ওকে বুড়ি বলে ডাকি৷ আমি বললাম বুড়ি চল বড়খালার বাড়িতে যাই৷ ওখানে খেলতেও পারবো আর দুপুরে ভাত খেয়ে চলে আসবো৷ কেউ টেরই পাবেনা৷

দুপুর অবধি আমরা ক্ষুধার্ত দুই ভাই বোন খালার বাড়িতে থাকলাম৷ আঙ্গিনার অনেক গাছ৷ সেখানে কত পাখি! দু’একটা গাছে পাখির বাসা৷ বুড়ি পাখির ছানা চাচ্ছে৷ এ গাছ থেকে ও গাছে চড়ছি-নামছি৷ গাছের কোঁটরে হাত ঢুকে দেই৷ কিন্ত নাহ্৷ কোন ছানা পেলাম না৷ ভেতরে ভেতরে আনন্দ৷ কিছুক্ষণ পরেতো খালা খেতে দেবে৷ পেট ভরে খেয়ে বাড়ি যাবো৷ একটা প্রত্যাশা আর দারুণ ভালোলাগা যেনো ক্ষুধার কথাটাকে ভুলিয়ে রাখলো৷

ঠিক খাবারের সময় বড়খালা আমাদের ডাকলেন৷ বাঁধভাঙ্গা আনন্দে ছুটলাম৷ যে ডাকটার অপেক্ষায় এতো কসরত, এতো আয়োজন৷ বললাম কী বলবেন বলেন খালা? তিনি যা বললেন তার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলামনা৷ এমনকি কল্পনাও করিনি৷ খালা বললেন এখন খাবার সময় হয়েছে৷ খেলাধুলা বন্ধ করে বাড়ি চলে যাও৷ 

অনেক ছোট হলেও খালার কথাগুলো মনে দাগ কাঁটলো৷ প্রচন্ড ব্যথা পেলাম৷ তবে এবার আর আবেগপ্রবন হলাম না৷ বুড়ির হাতটা ধরে অনেকটা জোর করে টেনে আনলাম ঐ “মৃত্যুপুরী” থেকে৷ যেখানে আর কখনোই যাইনি আমি৷

আজ রোদের তীব্রতা বেশ৷ এটাকেই কি সানি ডে বলে? আচ্ছা সানি ডে’র বিশেষত্ব কী! 

ক্ষুধা নিবারণের ছলে বেশি ছোটাছুটির কসরত দু’ভাই-বোনের ক্ষুধার জ্বালাকে করেছে আরো তীব্র৷ বুড়ি কাঁদতে থাকে৷ ওকে আশ্বস্ত করি৷ এখান থেকে আমাদের বাড়ির পথে একটা বড় কবরস্থান আছে৷ সেখানে অনেক ফুল-ফলের গাছ৷ বিশাল ফলগাছগুলোতে প্রচুর ফল ধরে৷ ওখানেই পড়ে যায়৷ পাখি ছাড়া ফল খাওয়ার লোক নেই৷ কবরস্থানের গাছের ফল কেউ খায়না৷ কী জানি ভয়ে নাকি ধর্মে নিষেধ আছে জানিনা! বুড়িকে রাস্তার একপাশে ছায়ায় বসিয়ে রেখে আমি একটা আতা গাছে উঠে পরলাম৷ বড় আর পাকা দেখে বেশ কিছু আতা নিয়ে বুড়িকে বললাম৷ খেয়ে নে বুড়ি! পেটভরে খা৷ মনে মনে বলতে থাকি কবরে শায়িত লোকের নয় জীবিত মানুষের জন্য খাবার প্রয়োজন৷ কেননা তাদের ক্ষুধা আছে৷

খাওয়া শেষ করে যখন দু’জনে বাড়ি ফিরলাম তখনো হাতে ছিলো কিছু আতা৷ হয়তো আর কারো ক্ষুধা মেটাবে৷

মেঘে মেঘে অনেক বেলা৷ কিংবা বলা যায় মিনিট, ঘন্টা, দিন, বছর পেড়িয়ে যায়৷ সময়ের সাথে সাথে মানুষ সার্ভাইভ করে৷ নতুন করে গড়ে তোলে জীবন৷ আর জীবনও থেমে থাকে না কখনো৷

বড়ভাই সরকারী চাকুরে থেকে অবসরে গেছেন৷ আর বুড়ি এবং ওর স্বামী দুজনে সরকারি চাকুরি করে৷ বাহিরে থাকে৷ আমরা হয়তো কেউই বড়খালার সন্তানদের মতো মস্ত বড় মানুষ হতে পারিনি৷ তবে এখন আর আমাদের ক্ষুধা নেই৷

এখন আমি প্রতিষ্ঠিত৷ রং শিল্পি৷ সকলে আর্টিস্ট বলে৷ শিল্পচর্চার জন্য কত যে পুরুষ্কার আর সম্মাননা পেয়েছি তার হিসেব নেই৷ এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানী ভাতা পাই৷ 

কী অদ্ভুত জেনারেশন গ্যাপ৷ বাবা প্রচন্ড ভালোবাসায় পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে খ্যাতি পেয়েছিল৷ অথচ ঠিক চব্বিশ বছর পরে তার সন্তানরা সেই পতাকা ছুড়ে ফেলে স্বাধীন বাংলার পতাকার জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে৷ এনেছে এক নতুন পতাকা৷ নতুন দেশ৷ আর সীমাহীন স্বপ্ন৷ 

আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের দুই সন্তান ও নাতি-নাতনী ছাড়াও আমার বাড়িতে এখন আরো একজন থাকে৷ মা মারা যাবার পর তাকে মায়ের মতো যত্ন  করি৷ যেখানে শ্রদ্ধার চেয়ে করুণা কাজ করে বেশি৷

আমার বড়খালার তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত সন্তানরা সম্পদের মালিকানার পর কেউই তাকে নিজের কাছে না রেখে অবহেলা করতে থাকে৷ তখনতো বৃদ্ধাশ্রম বলে কিছু ছিলো না৷ খালার থাকার জায়গা নেই৷ খাবার নেই৷ বেশ কিছুদিন আশেপাশের বাড়িতে ভিক্ষুকের মতো খাবার চেয়ে খেয়েছে৷ এসব মানিয়ে নিতে না পারায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন৷ একদিন আটপৌঢ়ে কাপড় পরিহিত অসহায় আর মলীন চেহারার এক বৃদ্ধাকে বাড়ির গেটে দেখে জিজ্ঞেস করলাম কী চাই? তাঁর পরিচয় পেয়ে একবার মনে করেছিলাম দূর করে দেই৷ কিন্ত পরে ভাবলাম একজন অধম হবে বলে আমি উত্তম হবোনা কেন? সেই থেকে আজো তিনি এখানে আছেন৷ হয়তো থাকবেন আমৃত্যু! 

একজন ক্ষুধার্তের মুখমন্ডল দেখতে কেমন হয়? আচ্ছা বহুদিন আগে ক্ষুধার্ত দুই ভাই-বোনের মুখচ্ছবি কেমন ছিল? জানতে ইচ্ছে করে৷ 

এখন ক্ষুধার জ্বালা নেই৷ তবে খাবার সময় বড়খালা যেভাবে চোখ বড় বড় করে এক মুঠো ভাত মুখে ঢুকিয়ে পরবর্তি মুঠোর জন্য তাকিয়ে থাকেন৷ সেই দৃশ্য দেখার ক্ষুধাটা হয়তো থেকে যাবে অনন্তকাল৷

মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

ক্ষুধা - রবীন জাকারিয়া
88 Views