তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হবো
আমাকে কী মাল্য দেবে দাও।
এই নাও আমার যৌতুক, এক বুক রক্তের প্রতিজ্ঞা
ধুয়েছি অস্থির আত্মা শ্রাবণের জলে, আমিও প্লাবন হবো
শুধু চন্দনচর্চিত হাত একবার বুলাও কপালে
আমি জলে স্থলে
অন্তরীক্ষে উড়াবো গাণ্ডীব,
তোমার পায়ের কাছে নামাবো পাহাড়
আমিও অমর হবো, আমাকে কী মাল্য দেবে দাও।
পায়ের আঙ্গুল হয়ে সারাক্ষণ লেগে আছি পায়ে
চন্দনের ঘ্রাণ হয়ে বেঁচে আছি কাঠের ভিতরে
আমার কিসের ভয়?
কবরের পাশে থেকে হয়ে গেছি নিজেই কবর
শহীদের পাশে থেকে হয়ে গেছি নিজেই শহীদ
আমার আঙ্গুল যেন শহীদের অজস্র মিনার হয়ে
জনতার হাতে হাতে গিয়েছে ছড়িয়ে
আমার কিসের ভয়?
আমিও অমর হবো, আমাকে কী মাল্য দেবে দাও।
এই দেখো অন্তরাত্মা মৃত্যুর গর্বে ভরপুর
ভোরের শেফালি হয়ে পড়ে আছে ঘাসে
আকন্দ ধুন্দুল নয় রফিক বরকত আমি
আমারই আত্মার প্রতিভাসে
এই দেখো আগ্নেয়াস্ত্র, কোমরে কার্তুজ
অস্থি ও মজ্জার মধ্যে আমার বিদ্রোহ
আমাকে কী মাল্য দেবে দাও।
উদ্ধত কপাল জুড়ে যুদ্ধের রক্তজয়টিকা
আমার কিসের ভয়?
তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হবো
আমাকে কী মাল্য দেবে দাও।
[নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী (জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫, ৭ আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ), যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি।]