আমরা তো বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করি।
তার সব কি বৈধ?
সব কি হালাল?
হারাম কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে হালাল হবে কি?
বিসমিল্লাহ বলে
ধুমপান
মদ্যপান
তাসখেলাসহ যেকোন জুয়াখেলা,
মানুষের ঘরে আগুন দেয়া, সংসার ভেঙ্গে দেয়া, ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষতি করা, কোন কিছু ধ্বংস করে দেয়া, হাত-পায়ের রগকেটে দেয়া, খুন করা, সর্বোপরি দেশের ক্ষতি করা এসব কোন কাজই নিশ্চয় বৈধতা পায় না।
দেখবেন যাদের জোর আছে। যেমন মামা-চাচার জোর, খুঁটির জোর, নেতার জোর, পুলিশের জোর, টাকা-পয়সার জোর কিংবা গোষ্ঠিজ্ঞাতির জোর তারা কেউ কেউ পা পাড়িয়ে-মাড়িয়ে ঝগড়া করি।
মারামারি করি।
ছোটবড় বুঝি না, মানি না। সম্মান-অসম্মান বুঝি না। অন্যের সামনে হাত-পা ছোড়াছুড়িটা ঠিক মনে করি।
এসব কি খুব ভাল কাজ? মানুষ কি আপনার সেসব কাজের প্রশংসা করে?
কেউ কেউ প্রচুর মিথ্যে কথা বলি।
আবার কথায় কথায় কসম কাটি।
দরকারে বা অদরকারে বলি। আনন্দে বা নিরানন্দে বলি৷ যেন কোন ব্যাপার না মিথ্যা বলা।
কোন বিকার নেই। পাপবোধ নেই। খারাপ লাগা নেই।
খুব সহজে, অনায়াসে মিথ্যা বলি।
কখনও নিজের লাভের জন্য বলি। কখনও অন্যের মন যোগাতে বলি।
আবার বাঁচতে গিয়ে বাবা-মার নামে কসম কাটি। সন্তানসন্ততি নিয়ে কসম করি।
অন্যকে বিশ্বাস করাতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ টানি। ধর্মগ্রন্থের নাম তুলে, সৃষ্টিকর্তার নাম তুলে কসম করি।
অহরহ এটা। সব সমাজে বিদ্যমান এসব।
সবটাই স্বার্থের জন্য। বেশিরভাগ মানুষ নিজের লাভ ছাড়া কিছু বুঝি না।
আমরা অন্যকে ঠকাতে চাই। অন্যকে ঠকিয়ে জিততে চাই।
ওজনে কম দিই।
ভাগে কম দেই।
কাজে কম করি।
নিজের বেশিটা চাই, বড়টা চাই।
চাই চাই চাই করতে
মাকে ঠকাই, বাপকে ঠকাই। বোন-ভাইকে ঠকাই।
আত্মীয়, সহকর্মী, গোত্রের, দলের সবাইকে ঠকাতে ব্যস্ত থাকি।
কোন দায়বদ্ধতা নাই।
সহযোগিতা, সহমর্মিতা নাই।
নিজের স্বার্থচিন্তা করে শুধু খাই খাই করি বেশিরভাগ মানুষ। অধিকাংশ মানুষই এমন।
আবার আমরাই অনেকে গলাবাজি করি। লোকশোনানো কথা বলি। লোক দেখানো কাজ করি। সবসময় নিজেকে জাহির করার চেষ্ট করি।
সত্যি কি মানুষ এসব পছন্দ করে?
গলাবাজি করে কেউ কেউ টেকার চেষ্টা করলেও ঠিক একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমরা অনেকেই অনেক অনেক নীতিকথা বলি।
পরামর্শ দিই,
উপদেশ দিই।
তার অনেকটা আমরা নিজেরাই পালন করি না। দিব্বি চলছি এভাবে। লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই অনেকের। কতশত বড় বড় কথা বলি এখানে-সেখানে, জনসমুখে। তার ইয়ত্তা নেই।
ধর্ম পালনের ভাল ভাল দিক তুলে ধরি। ধর্ম পালনের কথা বলি। আবার নিজেরাই অনেক অন্যায় কাজ করি কিংবা অন্যায় কাজে সমর্থন করি।
সুবিধা আদায় করি।
সুবিধা পাইয়ে দেই।
নিজের প্রচুর দোষ না দেখে
বা ঢেকে রেখে অন্যের দোষ খুঁজি।
নিজেরটা এড়িয়ে যাই। সংশোধন হই না।
আমরা মানুষ হয়ে গেছি চটকদারি। লেবাস ঠিক আছে, মুখটাও ঠিক আছে কিন্তু কাজের বেলায় বৈপরিত্যে বসবাস। বিসমিল্লাহ বলে নিজের সুখটাই হাতড়াই। আর তাতে হারাম-হালালের বালাই ষাট! খারাপ কাজের মানুষগুলো একসময় আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। মানুষ ঠিকই তাদের চেনে। তাদের ঘৃনা করে।
আসুন ভাল মানুষ হই।
ভাল কাজ করি।
মানবিক হই।
সবার বোধোদয় হোক- সে প্রত্যাশা করি।
আসুন, সবাই বদলাই, বদলে দিই।
মাসুম মোরশেদ
শিক্ষক, সাহিত্যকর্মী।