আমার সোনামায়ের জীবনের প্রথম ঈদে নতুন পোশাক পেয়েছিলো ৪৮টা! অথচ আমার এই জীবনের সব ঈদের নতুন পোশাক মিলে এখনও ৪৮ টা হবে না! এখন ঈদে প্রতিবছরই সবাই নতুন জামা পরে। সে গরীব হোক কিংবা ধনী। শুধু পার্থক্য থাকে নতুন জামার কোয়ালিটি ও সংখ্যার। ধনীরা নতুন জামা নিজেরাই কিনতে পারেন, তারপরও তাদের বিভিন্ন স্বজনদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পায় অনেক অনেক নতুন জামা। শুধু যে ধনীদের অনেক নতুন পোশাক হয় তা কিন্তু নয়, আমার মতো মধ্যবিত্তের ঘরেও কয়েক সেট করে নতুন পোশাক চলে আসে ঈদ উপলক্ষে। গরীবের ঘরেও এখন ঈদে নতুন পোশাক আসে। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখি বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি গরীবদের মাঝে ঈদের পোশাক বিতরণ করেন। গরীবরা শুধু যে অন্যের কাছ থেকেই নতুন পোশাক পায় এমনটিও না, নতুন পোশাকের সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই নিজেরাও কিনে থাকেন।
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও ঈদের নতুন পোশাকের এমন প্রচলন ছিল না। ধনীরা ঈদে নতুন পোশাক পরতেন ঠিকই তবে এখনকার মতো এতো বেশি না। এখন যেমন, একজনের জন্যই ঈদের দিন সকালের জন্য আলাদা, বিকালের জন্য আলাদা, ঈদের দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিনের জন্য আলাদা আলাদা পোশাক কেনেন, আগে তেমন ছিল না। এখন যেমন পরিবারের সদস্যদের বাইরেও বিভিন্ন স্বজনদের নতুন পোশাক উপহার দেওয়া হয় আগে তেমনটাও ছিল না। সাধারণত নতুন জামাইয়ের জন্য ঈদের নতুন পোশাক উপহার হিসেবে দেওয়া হতো-অন্য কাউকে না।
এখন যেমন আমার সোনামায়ের ঈদের নতুন পোশাক মানেই-বাবা দিবে, মা দিবে, মামা দিবে, নানুমা দিবে, বড়বাবা দিবে, মেজো বাবা দিবে, খালামনি দিবে, ফুপি দিবে অথচ আমার ছেলেবেলার ঈদের নতুন পোশাক মানেই ছিলো কুদ্দুস খান চাচার দোকানের থানকাপড়ের পাজামা-পাঞ্জাবি, তাও কমপক্ষে দুইতিন বছর পর পর। বাবার ঈদের নতুন পোশাক আরো বেশি সময় পর পর কিনতেন। আরো আগে আমার দাদা বা তার বাবাদের সময় হয়তো ঈদের নতুন পোশাকের এমন ব্যবহারও ছিল না।