ঈদ মুবারাক। প্রতিবারের মতো এবারও রংপুর ফুল বাজার থেকে ফুল কিনলাম। চারদিকে কি আনন্দ ! কি উল্লাস ! বাজারে আসার পথে দেখলাম শিশুদের হাতে বেলুন আর ফটকা। মনে হচ্ছে আজ শিশুরা সারারাত ফটকা ফুটাবে। তাদের আনন্দিত মুখ আমাদের সব দু:খ ভুলিয়ে দেয়। ফুলের বাজারে দেখলাম প্রেমিকরা গোলাপ ফুল কিনে প্রেমিকাকে বলছে – আস, তোমার খোপায় ফুলটা গুজে দেই। মেয়েদের মুখভর্তি হাসি। সেজেগুজে তারা বাইরে বের হয়েছে। দেখতে ভাল লাগছে। একটা মেয়েকে দেখলাম হাতে মেহেদি দিয়ে প্রেমিকের সাথে রিকসায় করে যাচ্ছে। মেয়েটির হাতের মেহেদি এখনও শুকায়নি। দুই হাত বন্ধ। প্রেমিক ছেলেটি তাকে কি সুন্দর করে বেবি বেবি বলে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে। বেশীরভাগ ছেলেকে দেখলাম আমার মতো বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে সিগারেট টানছে। আমার মনে হলো আজ রাতে বাংলাদেশের কোথাও কোন দুঃখ নেই। আজ কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা ঝগড়া করবে না। স্ত্রীরা বেছে বেছে তাদের স্বামীদের পছন্দের খাবারগুলো রান্না করবে। চাকরিসূত্রে যারা বাড়ির বাইরে দেশে অথবা বিদেশে থাকেন তারা ইতিমধ্যে নিজেদের বাড়িতে চলে এসেছেন। বাড়িভর্তি মানুষ। চলছে জম্পেশ আড্ডা। মায়েরা যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। বাবারা ছেলে / মেয়ের কাছ থেকে গিফট পেয়ে বেজায় খুশি। সেই খুশি মনের মধ্যে চেপে রেখে যথাসম্ভব গাম্ভীর্য ধরে রেখে মুখে বলছেন- কী দরকার ছিল। তোরা এতদূর থেকে কষ্ট করে এসেছিস। আমি তাতেই খুশি। চারদিকে মাইকিং শুরু হয়েছে। ঈদের জামাত কোথায় কয়টায় শুরু হবে সেটা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোথায় সবচেয়ে দেরিতে নামাজ শুরু হবে সেদিকে মনোযোগ দিলাম। কারণ গত কয়েকদিন ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছি। অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। ঈদ উদযাপনের এসব প্রস্তুতি দেখে হঠাৎ কেন জানি আমার মনটা খুব ভালো হয়ে গেল। একটা বিশেষ সমস্যাকে ঘিরে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিল। এখন মনে হচ্ছে সবকিছুই ভালো, সব সমস্যার সমাধান আছে এবং বেঁচে থাকার একটা বিস্ময় আছে যার সঙ্গে পৃথিবীর কোনো বিস্ময়ের তুলনা হয় না।
ঈদ নিয়ে একটি গল্প বলে আজকের লেখাটি শেষ করব। আবারও আপনাদের জানাই ঈদ মুবারাক।
গরিব পুত্র তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করল- বাজান ঈদ জিনিসটা কী?
বাবা উত্তর দিল-বড়লোকের আনন্দ-ফুর্তির দিন।
ছেলে বলল-আমাদের তাইলে কী?
আমাদের জন্যও দিনটা ভালো রে ব্যাটা। এই দিনে ধনীর সাথে কোলাকুলি করণ জায়েজ আছে।
কামাল পারভেজ পাভেল
লেখক, রংপুর