সজীবের ফোনটা বেজেই চলেছে। একটানা ৭২ বার। সজীব ফোন রিসিভ করছে না। ইনকামিং কল একজনের। তার নাম চৈতী।
চৈতীর ধৈর্য আছে বলা যায়। একটানা কেউ কল দেয়! অবশ্য সজীবের সহ্য ক্ষমতাও কম না। সে মোবাইল সাইলেন্ট করেনি। চুপচাপ রিংটোন শুনেছে। সজীবের মোবাইলের রিং টোনে চৈতীর কন্ঠ। চমৎকার কন্ঠ। মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয় সজীব। এতো সুন্দর কন্ঠ হয় কারো! কি মায়াবী কন্ঠ। তার কন্ঠ শুনলে যে কোন ছেলে পাগল হবে। সজীবও পাগল।
পুরুষ মানুষগুলো হয়তো এমনই। এটা সবাই বলে। কিন্তু আজকাল নারীগুলোও এমন। একঘেয়েমি কাটাতে ভিন্নতা খুঁজে। ভিন্নতা পেলে সময় দিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। অবশ্য এতে ভালোবাসার মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে না, বরং বাড়ে। কী হাস্যকর কথা।
আজ সজীব ও চৈতীর ঈদ শপিং করার কথা। সজীবের হাতে টাকা নেই। টাকা পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে পায়নি। অনেক চেষ্টা করে ফেল করেছে। চৈতীকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বললেও সে বুঝবে না। চৈতী বোঝে না। কিংবা বুঝতে চায় না। এই অবুঝ ভাবটাও সজীবের ভালো লাগে।
ভালোবাসার অত্যাচার। আসলে এটা অত্যাচার। সেহেরি খাওয়ার পর থেকেই সজীবের ফোন বাজছে। দুই দিন হলো সজীব রুমে একাই আছে। তার রুমমেট ঈদ করতে বাড়িতে চলে গেছে। সজীব যায়নি। তিনটা টিউশনি করায় সজীব। দুইটার টিউশন ফি এখনও দেয়নি। একটি ঈদের পূর্বে দেবে না, জানিয়ে দিয়েছে। গতকাল একটির টাকা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয়নি। আগামীকাল হয়তো দেবে।
দুপুর হবার অপেক্ষা। দুপুর ঠিক ২.০০ টায় সজীব টিউশনি করায়। রমজান মাসে এই সময় বেছে নিয়েছে। অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হলেও একসময় শেষ হয়। ২.০০ টা বাজার পূর্বেই সাহেদ হাজির হয় টিউশন বাড়িতে। লাল বোতামে চাপ দেয়। তার স্বভাব অনুযায়ী একবারের বেশি কলিং বেল বাজায় না। কিন্তু অপেক্ষা তার ভালো লাগছে না। পর পর দু বার কলিং বাজিয়ে অপেক্ষা করে। ১০ মিনিট। আবার কলিং বেলে টিপ দেয় সে। দরজা খোলে না। সজীব অবাক হয়।
কিছুক্ষণ পর পাশের ফ্লাটের দরজা খুলে এক মহিলা বের হয়। সজীবকে দেখে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয় আর বলে মমরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। সে খাম পেয়ে খুশি মনে হাত বাড়িয়ে নেয়। ভাবে- যাক গ্রামের বাড়ি গেলেও টাকাটা দিয়ে গেছে।
মহিলা দরজা বন্ধ করতেই সজীব রাস্তার দিকে পা বাড়ায়। খামটা হাতে নিয়ে সে বুঝতে পারে খামের ভিতরে টাকা নেই। কোনো চিঠি থাকতে পারে। সজীব খাম খোলে না। ভাঁজ করে পকেটে রেখে দেয়। চৈতীর সাথে আর দেখা করবে না। পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে থাকে। মাঝে মাঝে আকাশের তাকায়। বিশাল আকাশের নিচে নিজেকে একমাত্র অসহায় পুরুষ মনে করে। এই শহরে ঈদের পূর্বে চেনা মুখগুলো কয়েকদিনের জন্যে হারিয়ে যায়। আবার কিছু অচেনা মুখ যোগ হয়। সজীবের দৃষ্টিতে সবই অচেনা মুখ। আকাশের বিশালতা তাকে স্পর্শ করে না। কুয়োর অন্ধকার তাকে টানে। চেনা হাসির শব্দে রিকশার দিকে তাকায় সজীব।
চৈতীর হাসি। সেই হাসি। অসম্ভব চমৎকার কন্ঠের সুর মেশানো হাসি। বাতাসের বেগের চেয়েও তীব্রতার সাথে ছুটে চলছে রিকশা। চৈতীর পাশে অন্য কেউ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চৈতী আর সজীবের চোখে চোখ আটকে যায়। বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায় সব।