খুব- ই হিয়াল ৷ ওশ, ঠাণ্ডা বাতাস ৷ পাঁচ হাত দূরের ঘাটায় দেখা না যায় ৷ সূয্যের মুখ কয়দিনে দেখা যাইবে কাঁয় জানে ৷ অমিজল কেংকা করি গাড়ি ধরি যাইবে এলা ৷ মমতাক ওমরা রাইতোতে কয়া থুইচে , ‘ সকালে গরম ভাত আন্ধিবু মমতা ৷ খায়া গাড়ি ধরি অমপুর যাইম ৷ মহাজনের মাল আনা নাইগবে ৷ ‘
ওমাক ফির মানা করাও যাবার নয় ৷ কতা একবার দিলে হয় , হাকিম নইড়বে আর ওমাক নড়ায় কাঁই ৷ কোনো কূলকিনারা করবার পায় না মমতা ৷ ঘুম থাকি উঠিয়া ওমরা কলের পাড়ত গাঁও ধুয়ায় তো কইবে মমতা হইচে তোর আন্ধাবাড়ি ৷ এই ঠাণ্ডাত সাবান দিয়া ঘষিঘষি মজিমজি গাঁও ধুইবে ৷ মোকো কইবে গাঁও গোসল করি আন্ধাবাড়ি চড়াচিস নাকি ছুয়া গায়ে চুলার পাড়ত নটরঘটর করিস ৷ হুকুমমতো না চললে মুখখান থাকি ভালো কতা বাড়ায়ে না ওমার ৷
বিয়ার পর থাকি ওমার এইদোন ব্যবহার দেখি আইসে মমতা ৷ বিয়া হইচে বছরখানিক হইল ৷ সংসারত অমিজল, ওমার মাও আর ছোটো একনা বইন ৷ খুবে আদর করে বইনকোনাক ৷ কোনো জায়গা থাকি আসি বাড়িত ঢুকলে হয় বইন কোনার জন্যে কিছু ধরি আইসায় চাই ৷ অমিজল উয়াক
অহনা , কোনসমায় ছোট ‘ বু করি ডাকায় ৷
অহনা উয়ার মাও শুদ্ধায় এক ঘরত আর মমতা ,অমিজল আর এক ঘরত ৷ বিয়ার পর পর অমিজল উয়ার ঘরকোনা ডিমডাম করি একনা খাট, আলনা , আয়না নাগা আলমারী বানেয়া কোনোমতে ঘরকোনা সাজাইছে ৷ মনোত ভর্তি আশা ৷ মাথায় ঘনচুলে সিঁথি করা , চ্যাপ্টা শরীরে শ্বশুরের দেওয়া নাল শার্টকোনা অমিজলক খুবেই মানায় ৷ কোনোঠাই যাবার হইলে জামা, প্যান্ট কোনা পিন্দিয়া আয়নার বগলোত যায় আর ঘুরি ঘুরি দ্যাখে ৷ একসময় মমতাক কয় ,
‘ মমতা তুই মোক পায়া খুসি তো ? ‘
‘ তোমার শরম নাই ! ‘তোমরা মোর স্বামী ৷ আল্লাহর দোয়ায় তোমাক নিয়া মুই খুবেই খুসি ৷ আল্লাহ দিলে হামারো বালবাচ্চা হইবে ৷ সংসার বড় হইবে ৷ ‘ আর কবার পায় না মমতা ৷ শরমে নাল হয়া গেল একেবারে ৷
‘ শরম পালু মমতা ? -ঠিকই তো কচিস ৷
কয়দিন থাকি তোমাক একটা কতা কবার চাঁও ৷ মনে কিছু করবার নন তো ৷
ঐযে তোমার বলে কিসের বাল্য বন্ধু হেকমত উয়ার আও বোঝেন তোমরা ? উয়ার ভাবভাষা ভালো নোয়ায় ৷ সেদিন মোক কয় ‘ ভাবি , হাঁটো পুকুর পাড় থাকি আসি ৷ ‘
‘ মুই ক্যান সাঁনজোত পুকুর পাড়োত যাও অবিয়া চেংরাটার সাথে ! কিসের বা ঐ গায়োত ট্যাংলে ট্যাংলে কতা কয় ৷ ক্যা এমনি আও কইরলে মুই বোঝোম তো ৷ ভোটের সমায় ঐ পত্তায় এবেলা ওবেলা ৷ আর কইবে ভাবি, এককাপ চা হইবে ৷ না থাইকলে চা চিনি আনি দ্যাও ৷ ‘
‘ ভাত একটা টিপলে খবর হয় ৷ উয়ার নজর সুবিধার নোয়ায় ৷ ‘
‘ আরে নোয়ায় ৷ ‘ কথাটা উড়ি দিলেও অমিজল আন্দাজ কইরবার পাইছে ৷ হেকমত অমিজলের সংসারের সুখ সবার পায়না ৷ মোকো তো ঘুরি ঘুরি কয় , ‘ মমতাক পায়া তোর তো দিন ভালোয় যায় ৷ মুই কানা শুকানোত পড়নু রে অমিজল ৷ ‘
‘ শীতের সমায় বউ ভালো ৷ ‘ অমিজল শুনতে শুনতে একবার ধমক দেয় ৷ তোর আর কতা নাই রে হেকমত ৷
হ কামের কতাত আসি , ভোটটা কােনটই দিবু ? চাচী , তোর ভোট জলিল মাষ্টারক দেইস নাকি অন্য কোনো চিন্তা করি থুছিস ? না , না তুই য্যাটে , মুইও স্যাটে ৷ অমিজল জানে হেকমতের সাথে উল্টাপাল্টা কয়া লাভ নাই ৷
গাড়ির শব্দ শুনি বাইর হয় মমতা ৷ ওমরা বুঝি আসিল ৷ আছরের আযান হইলো মসজিদে ৷ গামছা, লুঙ্গিখান আউগি দিয়া কয় ‘ হাতমুখ ভালো করি ধুয়া আসিয়া আগে খাও ৷ ‘ ঠাণ্ডাত আর এবেলায় গাও ধুবার না নাগে ৷ তোমরা যাও মুই খাবার দ্যাও ৷
‘ হইবে এলা ৷ মমতা অনেকক্ষন তোক দেখোনা ৷ আইজক্যা কি বার , কয় তারিখ মনে আছে ? ক্যা কি হইছে ৷ আজকার দিনে তোক মুই বিয়া করি ঘরত তুলছোম ৷ তুই কানা কিছুই মনে থুবার না পাইস ৷ বিয়ার বছরকি জন্য তোর জন্য এই শাড়িটা ‘ উপহার ‘ আনছম ৷ পিন্দি আয়তো দেখম৷ হইবে এ্যালা তো ৷
ভাইয়া মোর ? অহনা দৌড়ে ভাইয়াক পাঞ্জা করি ধরে ৷ মোর জন্যে কি আনছিস ভাইয়া ৷ এইয়ে – সোন্দর ড্রেরেস ৷ পড়ি আয়তো বু ৷
অমিজল কি ব্যাপার রে ? সারাদিন তোর দেখা নাই ৷ ইতি কত কি ঘটি গেল ৷ অমিজল অবাক – টাস্কি লাগি গেল হেকমতের কথাত ৷ আব্বা – চাচা সবাই যায়া উজানটারির আবুল মন্ডলের বেটি বিউটির সাথে মোর বিয়ার নিশ্যান দিয়া আসিল ৷ সামনের সোমবার বিয়া ৷
কি সুসংবাদ ৷ তুই হামরা আইজ একসাথে এটে খাম ৷ আইজ অমিজল মমতার বিয়ার একবছর হইলো ৷ তাহলে তো মোকো কিছু দিবার নাগে ৷ মুই বাজার যাইম আর আসিম ৷ দৌড়ে বাইর হইলো হেকমত ৷ অমিজল মমতা ওর কাজে তাজ্জব হয়া গেল ৷ নির্মল শান্তির পরশে পরম আলিঙ্গনে মমতাকে বুকে জড়িয়ে আদর করে অমিজল ৷
লেখক: সাহিত্যিক ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, রংপুর