মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

এক টুকরো অস্থিমজ্জা এবং হারানো স্বপ্ন

প্রমথ রায়

২ মে, ২০২২ , ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

ঈদ সংখ্যা - ২০২২

পুরো আকাশ চাঁদের আলোয় ছেয়ে গেছে। পুরো আকাশ শুধু নয়, পুরো পৃথিবীও আলোকিত হয়েছে। ডেকোরেশনের রঙিন আলোও চাঁদের আলোয় ক্ষীয়মান। এ আলোয় জোনাকির মতো নেচে বেড়াচ্ছে ডা. আভার আনন্দে মাতাল মন । আজ তার  বিয়ে। দীর্ঘদিন পর ‘ব্রাইডাল প্যালেস’ কমিউনিটি সেন্টার পেয়েছে নতুন মাত্রা। করোনার পর এত বর্ণাঢ্যভাবে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। আভা সবেমাত্র জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন শেষ করে। তাঁর বিয়ে হচ্ছে  ডা. ফয়সাল দস্তগির নামক একজন চিকিৎসকের সাথে। তিনি আভার বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটলোজী বিভাগের একজন প্রভাষকও। তাঁদের পরিচয় কিন্তু পড়াশুনা করতে গিয়ে নয়; বরং চিকিৎসা করাতে গিয়ে।

২০১৯ সালের শেষের দিক। একদিন হঠাৎ করে আভা রক্তবমি করে। পরে তার রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায় তার রক্তে ক্যান্সারের জীবাণু লিউকেমিয়া বাস করছে। সাথে সাথে দুজন জাপানি ডাক্তারসহ ডা. ফয়সালের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। তার অসুস্থতা বাড়তে থাকে। সে প্রায় ফাইনাল স্টেজের কাছাকাছি। তার শরীরে আর রক্ত তৈরি হয় না। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হবে। নাহলে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। এ চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু অস্থিমজ্জা পাওয়া এত সহজ না। অনেক ঝামেলা। সারা বিশ্বের নামী হাসপাতালগুলোতে খোঁজ করা হলো। কিন্তু তবুও কোনো হদিস  মিললো না। যদিও একটা দুটা মিলে, শতভাগ ম্যাচ করে না। অবশেষে একজন ভারতীয় ডোনার পাওয়া গেল। নাম সুনীল বাজপেয়ী।  কিন্তু তার একটি শর্ত, আভাকে সারাজীবন এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে। আভা কথা দিলো সে এ রোগেরই চিকিৎসক হবে হবে বিনামূল্যে চিকিৎসা করবে। শুধু আভা নয়; ডা. ফয়সালও কথা দিলো , সেও একজন রক্তরোগের চিকিৎসক হিসেবে এ সেচ্ছাসেবী মহৎ কাজের দায়িত্ব নিবে। তখন সুনীলই প্রস্তাব দিয়েছিল তাঁরা  বিয়ে করলেই তো একসাথে তার স্বপ্ন সহজে পূরণ করতে পারবে। জীর্ণ মুখেও আভা হাসবার চেষ্টা করেছিল।

তারপর ধীরে ধীরে আভা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে। সুস্থ হয়ে ওঠে। গ্রাজুয়েশনও শেষ হয়। তারপর জাপানেই থেকে যায়। ফয়সালের সাথে সুন্দর দিন কাটতে থাকে, বেমালুম ভুলে যায় সুনীলের কথা। এবছর তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আভার বাবার ইচ্ছে তাদের বিয়েটা বাংলাদেশেই হবে।

কাকতালীয়ভাবে আজই আভার মোবাইলে একটি ইমেল আসার শব্দ হয়। শারদ বাজপেয়ী নামে একজন ভদ্রলোক পাঠিয়েছেন। তাঁর মেইলের সারকথা হলো সুনীল বাজপেয়ী তাঁর বাবা এবং তিনি গতকালই মারা গেছেন। সম্ভবত আভাকে অস্থিমজ্জা দেয়ার কারণেই তিনি এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন। তার অনেক ইচ্ছে ছিলো তাঁর অস্থিমজ্জায় বেঁচে যাওয়া আভা তাঁর স্বপ্ন পূরণ করবেন। তাই জনাব শারদের অনুরোধ, আভা যেন তার বাবাকে দেওয়া কথা রাখার চেষ্টা করেন।

এক টুকরো মেঘ এসে চাঁদকে ঢেকে ফেলে। আভার মুখের হাসিও বিবর্ণ হয়ে যায়। একটু পর সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে রাতে আর বিয়ে হলো না। পরের দিন হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলে আভা সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আর বিয়ে করবে না। সে সুনীল বাজপেয়ীর স্বপ্নকে আমৃত্যু বাঁচিয়ে রাখবে।

প্রমথ রায়
Latest posts by প্রমথ রায় (see all)