নিখিল আমি কি বেঁচে আছি না কি!
এই যে বসুদা’র লেটার প্রেসে চাকুরি, ভোর রাতে ঘরে ফেরা
প্রিন্টারের কালিতে ভেজা মধ্যবিত্ত আত্মা,
এটাকে কি ঠিক বেঁচে থাকা বলে!
জীবন থেকে ছুটি নিয়েও ক্রমাগত জীবনের ঘানি টেনে চলা,
বুকের গভীরে লেগে থাকা পৌরাণিক স্পর্শের অনুভূতিগুলো-
সিনেমার আলো আঁধারীতে বাদামের খোসা ছাড়ানোর মতো
নিজেকে মেলে ধরা নিজের সুপ্ত বাসনার কাছে,
কখনো মুচির সুতোয় প্রাণ খুঁজে পাওয়া
চামড়ার পুরনো স্যান্ডেল পায়ে, দিনের ব্যস্ততার শেষে
অজস্র দেনা আর খেরোখাতার নিরেট হিসেব মেলানো,
কর্মে-অবসরের প্রতিটি মুহুর্তে জীবনের ঋণ শুধে চলা-
এটাকে ঠিক কী রকম জীবনের সংজ্ঞায় ফেলবি তুই!
ভবঘুরে জীবনটা তো হতে পারতো অন্যরকম,
অন্য ধরনের একটা কিছু,
কিন্তু সেটা যে ঠিক কী রকম তা বুঝে উঠতে পারিনি আজও,
যেমন বুঝিনি বা বুঝতে পারিনি ইতির চাওয়াগুলো-
আমি কখনো হয়তো বোঝাতে চেয়েছি অন্য একটা কিছু,
অথচ ঠোঁটের প্রান্ত ছুঁয়ে মোমের মতো যে শব্দগুলো ঝরে পড়েছে
তা হয়তো বলেছে অন্য স্বপ্নের কথা, যা আমার ছিল না, কখনও ছিল না।
বুকের যবন ভাষাগুলো তাড়িয়ে ফেরে অনুক্ষণ টুংটাং চুড়ির শব্দে-
না বলা কথাগুলো আড়ালেই থেকে যায়
জীবনের আর সব অপূর্ণ চাহিদার মতো।
নিখিল, বন্ধু আমার,
তুইই বরং বেশ আছিস, যে আকাশেই থাকিস না কেন,
তারাদের মাঝে তারা হয়ে আছিস আমার নিয়তি দেখবি বলে।
তোর তো সকাল সন্ধ্যের অফিস নেই,দায়-দায়িত্ব নেই,কর্তব্য নেই,
বসের পাকানো চোখ কিংবা অজস্র ফাইলের নিচে
ক্রমাগত পিষ্ট হতে থাকা সুক্ষ অনুভূতিগুলোও নেই,
নেই অফিস শেষে রংচটা বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে
ঘরে ফেরার অদম্য বাসনা আর কাঁটায় বিদ্ধ ভালোবাসা,
নিয়ম রক্ষার সঙ্গম, কিংবা জীর্ণ বন্ধনটুকুর জন্য-
নেই কর্তব্য কাঁধে বিপন্ন বায়সের মতো ভরদুপুরের ছোটাছুটি,
হ্যাঙ্গারে স্বপ্ন ঝুলিয়ে রাখা আরেকটি সম্ভাবনার প্রত্যাশায়।
এসব কিছুই নেই, সবচেয়ে বড় কি জানিস!
তোর মাঝে প্রতিটি মুহুর্তে বেঁচে থাকবার তাড়না নেই,
ঠোঁটের কোণে তাই বিদ্রুপ ঝুলিয়ে হয়তো আছিস বেশ
মৃতের নগরীতে অজস্র মৃতদের মতো। আসলে-
ফেরত টিকেট হাতে আমার এমন একটা মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই-
যে মৃত্যুর পরে একবার হলেও ফিরে আসা যায়
ফেলে যাওয়া শরীরের মাঝে, প্রিয় রমণীর মাঝে,
নিজের ঝাঁঝালো ঘ্রাণের মাঝে ফিরে ফিরে আসা যায়
ঠিকানা খুঁজে পাওয়া ঘুড়ির মতোন, ভালোবাসার লাটাইয়ের কাছে।
নিখিল, তুই পারিস কি পাঠাতে একটা ফেরত টিকেট
জীবনের ওপার থেকে জীবনটাকে দেখব বলে!