উপভাষা, ভালোবাসা

বিলীনপ্রায় উপভাষা ও কয়েকটি কবিতা

আদিল ফকির

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ , ৭:০৩ অপরাহ্ণ ; 399 Views

হারে গেতিচে হামার গেরামের দিনগুল্যা। হামার গ্রামের দিনগুল্যা- হারে যাওয়া মানে এই দেশোত গেরাম নিপ্যাত হয় য়্যা যাইবে। আরে হামরা যখন ছাওয়া- হামার এনায়েত পুর গেরাম থাকি নানার বাড়িত গেচনো- গরুর গাড়িত করি- সেই পীরগাছা তালুক ইসাদ গেরামে।আস্তার মাজোত ফির ঘাগোট নোদি পার হওয়া নাগচিল। এখন তো গরুর গাড়ি দুরের কতা- নদী বিলিন হতিচে। ইস! কি এক নাল দিনগুল্যা আচিলো- ভাইবোইনেরা আর মা সুদদ্যায় যখন গরুর গাড়িত ওঠনো- গাড়িত একখ্যান টাববোর। ফির টাববোর ঘিরি কাপড় প্যাচে দেচনো- যাতে আস্তার নোকজন না দ্যাখে। নানার বাড়িত থাকি ফির ফেরার সময় দুইট্যা পাকা কাটোল নেচনো। বাপরে বাপ- আস্তার নোকজন কাবরে কাবরে কইচিলো- বাহে কাটালটার সাদ আচে। মুই ফির চিলল্যায় কচনু- আইসেন বাহে খাবার। কতই ন্যা কতা মনোত পরে- গরমের দিন। আচিলো-ন্যা কারেন। আস্তার গাচের নিচোত শুতি- বাতাসের অপেককায় আচনো। হামার পারা পতিবেশি সবাই মিলি- কেউ পাটিত সুতি,  কেউ আস্তার দুগল্যা ঘাসের ওপোর। আর গল্প  কেচ্চা চলছে। আইত  হইলে চাননি রাইতোত আলোমোক ডাক দেচনো। আলোম দোতরা বাজায় ছিলো- আর মিল দিয়্যা দিয়্যা কতো কতা কইছিলো- কতা গুল্যা একেবারে সাদামাটা। হামরা কি হাসাহাসি। এদিকে ফির কাওয়ালি শুনি অনেকে চোখের পানি ফ্যালাইছিলো। কারো মরি যাওয়া ভাতারের কতা মনে পরছিলো, হায়রে সেই কাহিনি- ইলিজ্যার বাপ ফির এমন মনোযোগ দিয়্যা কাওয়ালি শুনছিলো- বিড়ি টানতে টানতে মোচোত নাগিল আগুন- ওই আসোরোত চিল্লায় উঠচিলো।

আইজক্যা দিন গুল্যা আর নাই। মাইস্যা এমন ব্যাস্ত হইছে- গেরামের সেই গাচগাচালি জংগল কিচু নাই। আরে সাগাই বাড়িত আসলে- হামরা সবাই মিলি ডেকি মুরগি দাবরে ধোরচে নো। মা এদিক পিয়্যাজ মরিচ কাটি নিচিল- হামরা গেরামের চেংরা মিলি ঢেকি মুরগি দাবারা-। মুরগি নাই ধরতে সাগাই সাইক্যালোত ক্রিং ক্রিং- হামরাও চায়য়্যা- সাতে একটা সাদা পলিথ্যানে গ্লুকোজ বিস্কুট। আজ এই বিস্কুট পানিত ভিজি ভিজি খাচনো – কি শান্তি। এখোন হামার গেরামো শোক কিচু হারি যাইয়্যা শহরের মতো হইচে। গেরামোত যায়য়্যা আগের মতো আর তিপ্তি পাওয়া যায় না। আরে যখন মুই ছোটো- পাটা  বারিত টু টু খ্যালচো নো। এদিকে অন্যদল খ্যালা শ্যাস করি চলি গেইচে- হামরা আচি পাটবারিত নুকি। আজোব ব্যাপার- সোইদ্যার সময় বাড়িত আসি- ঘরের কানচি দিয়া ঢুকি- যাতে মা টের না পায়। বারিত আসি- কোনোমোতে হাত মুখ ধুইয়্যা- সপোত বসি – পড়া শুরু- বাইরোত বসলে কুপ্যার আলোত পড়ব্যার বসচে নো।সোইনদ্যার পর পরেই ঘুমোত টুপি টুপি পরি গ্যাচনো।পিচোন থাকি মা আসি সেই পিটোন। একোন নাকি সোইলপোলোক পিট্যা যাবো-নায়।  একোন হামার গেরামোত যাইয়্যা দ্যাখো- থ্রি জি, ফোর জি নিয়্যা ব্যস্ত। একোন কার গেরাম গোনজোত থ্রিজির পিরিত চলে। আগে হামার পেরেম পিরিতির এমন টান আচিল- বাপরে বাপরে খেরি ঘরের মোকার থুরি খুলি-ঢুকচিলো। থাক নিয়্যা ফির পরের দিন বিচ্যার শাল্লিস। বাপরে বাপ- সেই বিচ্যার শাল্ললিসের কিততি দেখলে- সুনলে-এলাও মোর হাসি পায়। আহারে- সেই রাকোয়ালের পেরেম- আইল দিয়্যা গরুক ঘাস খাওইছিলো- আর এদিকে গেরামের  চেংরি- আস্তা হাটছিলো। আখাল হালুয়্যা পেন্টি দিয়্যা- সংকেত দিচিল্প- চিঠিক্যান হটে আঠিয়্যা কলা গাচের থোপোত থুইস।

আদিল ফকিরের কয়েকটি কবিতা

১. জেয়াপত

আইসো বাহে সাগাই, বইসো হামার বাড়িত

হাত পাংকার বাতাসে, গাইমো এ্যাকনা গিত

 

কুনদিন থাকি দেখিন্যা, মোনোত ভাসে পিরিত

গোসা হইছেন ক্যান বাহে, হামরা তোমার পিত?

 

তোমরা হামার এ্যাকনা সাগাই, আসমেন বেশি নায়োর

মনের কতা খুলি কমো, হামরা থাকমো তোইয়োর

 

আণ্ডা আনমো ডুগি আনমো, খামো এ্যাক সাতে

আরে তোমার হাত -হামার হাত, থাকবে এ্যাক পাতে

 

তোরা ক্যামা টেমকি থাকেন, বোজোনা কিছু

আরে  ফকির তোমার কি করিলো,উলট্যা নাগেন পিছু?

 

মুই হবার চাও সাদা মাইস্যা, থাকপ্যানায় সুদঘুস

তোরা ক্যান ফাস্কা কতা কয়য়া,করেন ফুসফুস

 

আরে এইতো আছি এইতো নাই, হামরা ভাই ভাই

হিংস্যাবিদেস সব ভুলি, আইসো এ্যাক সাতে খাই।

২. এনায়েতপুর

এইকন্যা মোর সোনার গেরাম

সোনা ঝকমক করে-

ধানের গায়োত ফোকলা হাসি

মণি মুকত্যা ঝড়ে।

 

এই গেরামের মরদ হামার

টিটুল নামে চেনে-

আইত দুপুরে ভ্যানের ওপোর

বউ-বধূ টানে।

 

দিন হইলে কাটে ধান

মোন উদ্যার ছাওয়া

কামের ঘোরে মাঠের টানে

যায়না যে পাওয়া।

 

মাইষ্যার জালায় চুপচাপ

সামসুম করি চলে

কতা কয় হিস্যাব করি

খোঁজে পান্তার জলে।

 

আর একন্যা কতা শোনো

বিয়্যা করচে গোরোত

সেইকন্যা সুইদ-ধ্যা কাম করে

মানায় ক্যামা সোগোত।

 

ধান মারে- ধান কাটে

টিটুল গায় গান

কামকন্নি কুল্যা ধরে

পিচকি খায় পান।

 

হায়রে টিটুল, নাইরে রুব্যাল

যদি থাকিল বাচি-

আইজ হামার সোনার গেরাম

করতো নাচানাচি।

৩. হামার গ্রাম

ছোটদের ধ্বনিতত্ত্ব

দাদু হামার পুরাতোন নোক, এ্যাকশো বচর বাচি

কততো গপপো শুনাইচেন, দুই এ্যাকটা কইম জাচি।

 

গপপো শুনি তোরা অবাক হইমেন, কি আর কইম ভাই

স্যারে স্যারে হইচিলো দুধ- আচিল নাকি তার গাই।

 

বস্তায় বস্তায় পাকা আম, পরি আচিল বাড়িত

দলে দলে সাগাই সোদোর, আসচিলো গরু গাড়িত।

 

এ্যাকসাতে গপপো গুজুব, কততো হাসাহাসি

রাইত হইলে কেচ্চা গপপো, সুতছিলো ঠাসাঠাসি।

 

আরে দাদার কতা কি আর কইম- মোরে চোখে দ্যাখা

সাপ খ্যালা দেখিয়া -নাকচিলো ভ্যাকাচ্যাকা।

 

সোইনধ্যা হইলে কাওয়ালি, আরো কতো গান

রাইত দুপুরে খেঁকশিয়ালি, দ্যাখে আকাশ চান।

 

এ্যালাও যদি দ্যাখপের চান, আইসো হামার গ্রামোত

হাসতে হাসতে হাপসি যাইমেন,মরি যাইমেন সরমোত।

 

এ্যালাউ হামার বউঝিরা, দীঘিত কাটে সাতার

মাঠোত হামরা কাম করি, যারা যারা ভাতার।

৪. উপভাষা

ক্যা বাহে তোরা ক্যামা সোগোত

আগা পাচা গোরোত

কিছুই তোমার বোঝো না

সোকটে বাজান খঞ্জনা।

 

বাতুল অ্যাকনা বাচাই করো

ছোয়াচ ওগ খারাপ বড়ো।

 

দ্যাখেন না গনেশের ব্যাটা

শোকটে নাগায় শুধু আটা

আরে হামার করি হামরা খাই

সুড়সুড়ি ক্যান তোমার ভাই।

 

তোমরা অ্যাকনা ন্যাকেন বেশি

তাই তো তোমার ফুসফুসি

দ্যাখেন না আতুসির মাও

এক্কেবারে ঊনিশ ছাও

তাও করে না ড্যাপড্যাপ

তোমার নাই ন্যাকতে পরে ছ্যাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *