উপভাষা, ভালোবাসা

ভাতের জন্য

শা ম সু জ্জা মা ন   সো হা গ

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ , ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ ; 442 Views

– মা ভাত দে।

– ভাত নাইযে বাবা। বাড়িত বসি থাকি কি খাবার আসপে বাবা। আল্লাহ আল্লাহ কর। আইতোত বলে ত্রাণ দেবে। তারপর খাইস।

– মা এলা তো ঝড় বৃষ্টি নাই ত্রাণ কেনে দেবে?

– বাবারে দেশোত মহামারি নাগছে, ভাইরাস বেরাইছে। সবার কাম কাজ বন্ধ, কী খাইবে মানুষ? তারবাদে সরকার থাকি ঘরে ঘরে খাবার দেওছে বাবা। দেখিস না মুইও তো মেলা দিন হতে কামোত যাও না। মোক আম্মা কামোত যাবার মানা করছে।

-মা এই মহামারি কোনদিন শেষ হইবে? আব্বাও তো বাড়িত আইসে না কেমন আছে খবরো তো নেন না? আইজ আব্বার খোঁজ নেন তো।

– আচ্ছা বাবা ফোন দিম এলা।

সন্ধা গড়িয়ে রাত্রি হতে লাগলো। নিলুফা ত্রাণ নেয়ার জন্য  বাসা হতে  ছেলেকে আদর করে বের হলো পথিমধ্যে একজনের মোবাইল হতে স্বামী সুরুজ মিয়ার সাথে শেষ কথাটা বলে নিল নিলুফা।

আবার এগুতে লাগলো স্কুলের দিকে ত্রাণ নিতে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করে দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত খাবার বস্তা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, হাজারো মানুষের  প্রচণ্ড ভিড়ে নিলুফা অন্যের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে পৃথিবী হতে চলে যান। কেউ জানে না কে এই নিলুফা  কী বা তার পরিচয়। সবাই চলে যাওয়ার পরে স্হানীয় মেম্বার কিছু লোক ডাকিয়ে তাকে সনাক্ত করে তার বাসায় নিয়ে আসে।

হাবাগোবা ছেলে মায়ের লাশ দেখে পাগলের মতো কান্না করে  আর চিৎকার করে

মা মাগো কি হইছে তোর।

কথা কও মা

মোক যে খু্ব ভোক নাগছে। কায় দেবে মোক ভাত। মা তুই মোক ছারি গেলু কেন

তার কান্নায় ভেঙে পরে পাশের বাড়ির আলেয়া, ফুলবানুরা তারাও মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যু। সন্ধায় যে মানুষটি ছিল তাদের সাথে এখন সে ওপারের বাসিন্দা।

 

লেখক: লেখক ও সংগঠক, রংপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *