মহান মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের রয়েছে বিশেষ বীরত্বপূর্ণ গৌরবগাথা। মুক্তিযুদ্ধে রংপুর এবং রংপুরের মানুষ এক বিস্তৃত ইতিহাস। ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল অধ্যায়। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে মহান মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের গৌরবগাথা সংকলিত করা দুঃসাধ্য। তবুও সম্পাদনা পরিষদ এর কলেবরের সীমাবদ্ধতার কারণে সংক্ষিপ্তকরণ করা হচ্ছে। ফলে অনেক ঘটনা বিস্তারিত চিত্র, চরিত্র তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না বলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এক অর্থে এভাবে বললে ভুল হবে না যে রংপুরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পূর্বেই। আবার একথাকে এভাবেও বলা যায় যে, মহান স্বাধীনতার আন্দোলন সংগ্রামের গর্বিত সূচনার এক অংশের ইতিহাস রংপুর।
পহেলা মার্চ ইয়াহিয়ার ভাষণে যখন ১৯৭১ সালের ৩ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য গণপরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় তখন সারাদেশে শুরু হয় বাঙালির প্রতিবাদ। বিক্ষুব্ধ মানুষ নেমে আসে রাজপথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানের হরতাল আহŸান করেন। এবং পরবর্তী ঘোষণা ৭ মার্চ,১৯৭১ রেসকোর্সের মাঠের দেবেন বলে জানিয়ে দিলেন(১)।
৩ মার্চ হরতালের পক্ষে রংপুর শহরের কাচারি বাজার থেকে ছাত্র–জনতার একটি মিছিল বের করা হয় যা পরবর্তীতে বিশাল রূপ লাভ করে। গগনবিদারী শ্লোগানে মিছিলটি শহর অতিক্রম করে আলমনগর এলাকায় গেলে মিছিলের মধ্যভাগে গুলির শব্দ শোনা যায়। দেখা যায় ১২ বছর বয়সী এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। তিনি হলেন শংকু সমজদার। সেসময় মকবুল নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। অবাঙালিদের নেতা সরফরাজের বাড়ি থেকে মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়। শংকুর মৃত্যুর খবরে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। সারা শহর তখন বিক্ষুব্ধ, ইতোমধ্যে শহরে অবাঙালিদের হাতে আরো দুজন প্রাণ হারায়। তারা হলেন রংপুর কলেজের ছাত্র আবুল কালাম আজাদ ও সরকারি চাকুরে ওমর আলী। শরিফুল আলম মকবুল ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজন ছাত্র আহত হন।(২)
‘কিশোর শংকুর দেহ থেকে নিঃসৃত রক্ত রংপুরের মাটিতে স্বাধীনতার অঙ্কুর, মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ অনিবার্য করে তুলেছিল।’(৩)
‘৩ মার্চের রংপুরে গণঅভ্যুত্থানের সাহসী চেতনায় তৎকালীন বৃহত্তর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় সংগ্রামের মূল ¯্রােতধারার সাথে ১৯৭১ এর ৩ মার্চ শহিদ শংকু, ওমর আলী, আজাদ এবং মকবুলের রক্ত মিশে যায়।’(৪)
‘৩ মার্চ রংপুরের মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রথম প্রতিরোধ আরম্ভ করে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের রংপুরের প্রথম শহিদ শংকু সমজদার (১২)। প্রথম প্রাণদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ।(৫) ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে এ কথা উঠে এসেছে।
‘১৭ মার্চ রংপুরে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক রফিকুল ইসলাম গোলাপ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রেরিত স্বাধীন বাংলার পতাকা নমুনাসহ স্বাধীনতার ইশতেহার গ্রহণ করেন। ২৩ মার্চ রফিকুল ইসলাম গোলাপ ডিসির বাসভবনে এবং ইলিয়াস আহমেদ ডিসি অফিসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। একই দিনে শহরের নবাবগঞ্জ বাজারের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ন্যাপ (ভাসানী) নেতা মাহফুজ আলী (জররেজ) (৬)। রংপুরে পতাকা উত্তোলন নিয়ে আরও ঘটনা আছে। শহিদ রণী রহমানসহ আরও কয়েকজন তৎকালীন রংপুর প্রেসক্লাব ভবনে (বর্তমান পায়রা চত্বর) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হুলিয়ার শিকার হয়ে রংপুর থেকে আত্মগোপনে যান এবং রণী রহমান কুষ্টিয়ায় নিহত হন। অন্যদিকে ৩ মার্চ শহরে মিছিলের সময় অথবা আগে কোনো একটা সময়ে শেখ শাহী নামক তৎকালীন এক ছাত্রনেতা রংপুর প্রেসক্লাবের ছাদে উঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ান। তবে এ দুটি ঘটনা কোনো আনুষ্ঠানিকভাবে নয়।(৭)
‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতোই রংপুরের সব জায়গায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে উঠতে থাকে। শুরু হয় পাড়ায়–পাড়ায় গ্রামে গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। রংপুরে শুরু হয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন।’
‘২৬ মার্চ শুক্রবার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে রংপুর জেলার মানুষ জঙ্গী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগ নেতারা রংপুর জেলার প্রত্যেক থানায় প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।’(৮)
‘রংপুর শহরের বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকে আলোচনার কথা বলে ক্যান্টনমেন্টে ডেকে নেওয়া হয়। যারা ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন তারা হলেন অ্যাডভোকেট নুরুল হক এম এন এ, অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান এম এন এ, সোলাইমান মÐল এম এন এ সহ আরো কয়েকজন। পরবর্তীতে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।(৯)
‘২৭ মার্চ সকাল ১১ টায় মুন্সিপাড়ার বাসা থেকে হানাদার মিলিটারিরা মাহফুজ আলী জররেজ মিয়াকে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ধরে নিয়ে যায়।’(১০)
‘২৮ মার্চ রোববার, ১৯৭১। রংপুর তথা দেশের ইতিহাসে ঘটল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সেদিন রংপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও ভারী অস্ত্রে পরিপূর্ণ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট দখল করার অভিযানে ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকে। সেদিন পাকিস্তানি জল্লাদদের নির্বিচার গুলিতে অসংখ্য নিরীহ বাঙালি শহিদ হন। বীর রংপুরবাসীর বীরত্বের শোকের স্মৃতি বহন করছে শহরের অদূরে নিশবেতগঞ্জ এলাকা। এর আগে ২৩ মার্চ আব্বাসী নামের এক অবাঙালি সেনা অফিসার নিশবেতগঞ্জ এলাকায় জনতার হামলার শিকার হয়ে আহত এবং পরদিন মারা যান। সেনাবাহিনীর প্রতি ক্রোধ ছিল মূলত দেশ স্বাধীনের প্রত্যয়ে। ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ বা ঘেরাও অভিযানে আপামর ছাত্র–জনতা, রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি উপজাতি সাঁওতাল ও ওঁরাও স¤প্রদায়ের বীর নারী ও পুরুষরা অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সকলের বীরত্বগাথা ও আত্মত্যাগ স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে।(১১)
‘১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার কাউনিয়ার তিস্তা সেতুতে পাকিস্তানি সেনা বহনকারী একটি ট্রেনে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। তুমুল সে সংঘর্ষে পাকিস্তানি মেজর এজাজ ও কাউনিয়া থানার ওসিসহ পাকিস্তানপন্থী ১৫ জন সেপাই নিহত হয়। অবশিষ্ট পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। এই অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এটাই ছিল প্রথম দিককার সম্মুখযুদ্ধ। এ যুদ্ধে বাঙালিরা তথা রংপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন আহমদের বাহিনীর সাথে তিস্তা বাজারের অ্যাপোলো ক্লাবের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।(১২)
‘পরদিন দুই দফায় সংঘর্ষের পর ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী তিস্তা রেল সেতুর দখল নিতে ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিকামী দুইজন ইপিআর সদস্য শহিদ এবং বেশকিছু পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।’(১৩)
‘৩ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনার রাত। সেদিন ছিল শনিবার, মধ্যরাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং প্রিয় মানুষ মাহফুজ আলী জররেজসহ ১১ জন বন্দি বাঙালিকে শহরের মাহিগঞ্জ রোডের শ্মশানে নিয়ে গিয়ে গুলি করে ১০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সৌভাগ্যক্রমে গুলিবিদ্ধ তাজহাটের দীনেশ ভৌমিক (মন্টু ডাক্তার) প্রাণে বেঁচে যান।’(১৪) এ ঘটনার পর মূলত রংপুরের মানুষ পরিষ্কার বুঝতে পারেন পাকিস্তানি হায়েনাদের নাগালে থাকা নিরাপদ নয়। একটা বড় সংখ্যক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় যেতে শুরু করেন। ভারত সরকারের সহায়তায় গড়ে ওঠে শরণার্থী শিবির। চালু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির। ‘মার্চের প্রথম থেকেই রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন একদল মুক্তিকামী মানুষ। এই দলে গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, নাট্যশিল্পী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক মানুষ ও সংগঠন যুক্ত ছিল।’(১৫)
সম্ভবত ৫–১২ এপ্রিলের মধ্যেই তিস্তা ব্রিজের দখল পাকিস্তানিদের হাতে চলে যায়। ‘৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বদরগঞ্জে বাঙালি ইপিআর বাহিনীর ডিফেন্সের উপর আক্রমণ করে। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত চলে। হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা (ইপিআর) পিছু হটতে থাকেন। ১৫ ট্রাক পাকিস্তানি সৈন্য রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে গিয়ে এই হামলা চালায়।’(১৬) ‘১২ এপ্রিল ‘৭১ তিন ট্রাকভর্তি চোখ মুখ, হাত বাঁধা মানুষকে ধরে এনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রংপুর শহরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার দক্ষিণ চন্দনপাট ইউনিয়নের বালারখাইল নামক স্থানে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।’(১৭)
‘১৫ এপ্রিল পীরগঞ্জের আংরার ব্রিজের উত্তর পাশের সংযোগ কেটে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরদিন ১৬ এপ্রিল বিকেল ৫ টায় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঢাকাগামী ৭টি গাড়ির একটি বহর সেখানে আটকা পড়লে ওঁত পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালায়। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মুখোমুখি সংঘর্ষ চলে। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি জিপ গাড়ি পুড়ে যায় এবং অগণিত সেনা মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে হানাদার বাহিনীর একটি সাঁজোয়া বহর এসে আহত ও নিহতদের নিয়ে রংপুর ফিরে যায়। পরদিন ১৭ এপ্রিল সকাল ৭টায় পাকিস্তানিরা উক্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। চলে বৃষ্টির মতো গুলি। মুক্তিযোদ্ধারা সটকে পড়লে হানাদার বাহিনী উজিরপুর, মাঝিপাড়া, তুলারাম ও মহাজিদপুরের কিছু অংশ পেট্রোল দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।’’(১৮)
‘রংপুর অঞ্চল প্রাকৃতিক দিক থেকে সম্মুখ সমরের উপযুক্ত না হবার কারণে সে সময় এ অঞ্চলে অধিক সংখ্যক গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসময় গেরিলারা রংপুর শহরাঞ্চলে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। এতে করে দখলদার বাহিনীর সদস্য ও সহযোগীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃতিও বাঙালি জাতির সহযোদ্ধা হয়ে ওঠে। ঘনঘন বৃষ্টিতে হানাদার বাহিনী শহর ছাড়া অন্যত্র যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে জুলাই থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সুসংগঠিত হয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাতে থাকে। এসময় বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচÐ গেরিলা হামলা শুরু হয়।’(১৯) ‘রংপুর ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন। কোচবিহারের দিনহাটায় স্থাপন করা হয়েছিল মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে বিএলএফ ক্যাম্প। এদিকে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, ইপি ক্যাম্প মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং অবাঙালিদের সমন্বয়ে গঠন করে দখলদার বাহিনী।
‘রংপুর শহরের অভ্যন্তরে কোনো প্রত্যক্ষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে কিংবা শহরে সঙ্ঘবদ্ধ গেরিলা আক্রমণ হয়েছে এরকম খবর এই সময়কালে পাওয়া যায়নি। তবে রংপুর জেলা শহরের চতুর্দিককার থানা সদরগুলো এবং ইউনিয়নগুলোতে বেশকিছু যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রংপুর শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ করতে না দেওয়ার সুযোগে পাকিস্তানি হানাদাররা তাদের দোসরদের সহযোগিতায় গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট ও অত্যাচার চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এ সময় রংপুর টাউন হল, রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরি ও রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ এবং তদসংলগ্ন সংগ্রহশালা পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।(২০)
‘৩ সেপ্টেম্বর ‘৭১ ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা বাহিনী রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার শংকরদহের তালতলায় হানাদার বাহিনীর একটি কনভয়ের উপর আক্রমণ চালায়। এতে ২ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য এবং ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। পরদিন এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য তালতলার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। হানাদারেরা এক পর্যায়ে তালতলা মসজিদে ঢুকে ১৭ মুসল্লিকে মসজিদের ভেতর গুলি চালিয়ে হত্যা করে।’(২১)
‘‘১৪ অক্টোবর ‘৭১ ৬ নম্বর সাব–সেক্টর কমান্ডার মেজর নওয়াজেশ উদ্দিনের কমান্ডে ভূরুঙ্গামারী ও জয়মনিরহাট মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে দখল করে নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে এতে করে বিজয়ের আনন্দ দানা বাঁধতে শুরু করে।(২২)
‘‘৮ নভেম্বর ‘৭১ মুখতার ইলাহী একটি দলসহ টাউন হল মুক্ত করার অভিপ্রায়ে ভারতের সাহেবগঞ্জ থেকে লালমনিরহাট হয়ে রংপুরের পথে রওয়ানা দেন। পথে লালমনিরহাটের আইড় খামার গ্রামে রাত্রিযাপনের জন্য থামলে গ্রামের পাকিস্তানি দালালেরা তাদের অবস্থানের খবর দেয়। ৯ নভেম্বর ভোরে প্রায় ৪০০ পাকিস্তানি হানাদার গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এখানে পাকিস্তানি হানাদাররা মুখতার ইলাহী, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এবং এক বালক যোদ্ধাসহ ১১৯ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।’(২৩)
একই সময়ে পরবর্তীতে মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দল হারাগাছ এলাকায় সাদা মসজিদের কাছে হানাদার বাহিনীর একটি মিলিশিয়া ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় ও হারাগাছ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অবস্থানরত মিলিশিয়াদের ব্যাপক ক্ষতি করে।(২৪)
‘২৮ নভেম্বর ‘৭১ তুমুল লড়াইয়ের পর নাগেশ্বরীর পতন ঘটে। নাগেশ্বরীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওঠে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটে ধরলা পার হয়ে কুড়িগ্রাম এসে অবস্থান গ্রহণ করে। মুক্ত হয়ে যায় সমস্ত উত্তর ধরলা অঞ্চল।’(২৫) নভেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ডিমলায় অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর উপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। যুদ্ধে পরাজিত হানাদার বাহিনী ডিমলা ছেড়ে নীলফামারী শহরে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা নীলফামারী শহরের দিকে এগুতে থাকে। এ সময় ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে এসে সশস্ত্র সমর্থন দিতে থাকে। আরো সাহসী হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। দেওয়ানগঞ্জ, চিলাহাটি, ডোমার, ডিমলায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা দলগুলো বিভিন্ন কোম্পানি কমান্ডারের নেতৃত্বে নীলফামারী ও সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের লক্ষে বিপুল উদ্যমের সাথে এগুতে থাকে।’(২৬)
‘৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে ইতিহাস শুরু হয়। সারাদেশে পদে পদে মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে ভারতীয় পূর্বাঞ্চল কমান্ডের লে.জে. জগজিৎ সিং অরোরার অধিনায়কত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশ–ভারত যৌথ কমান্ড। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় মিত্রবাহিনী।’(২৭) ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী কুড়িগ্রামে অবস্থিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর স্থল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে। এ হামলায় হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে লালমনিরহাট ও রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে ফিরে আসে। ৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেন। ৮ ডিসেম্বর ৬ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এম.কে বাশার কুড়িগ্রামের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বেসামরিক প্রশাসন চালু করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে লালমনিরহাট আক্রমণ করে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এই সময়ে নীলফামারী শহরকেও মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেন। হানাদার বাহিনী আশ্রয় নেয় সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে একমাত্র রংপুর এবং সৈয়দপুর সেনানিবাস ছাড়া সম্পূর্ণ ৬ নম্বর সেক্টরের পুরোটাই মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’(২৮)
‘ভারতীয় ৭১ মাউন্টেন ব্রিগেডের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সৈয়দপুরের মুখে পৌঁছায়। পাকিস্তান বাহিনীও নিজেদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রংপুর ও সৈয়দপুর সেনানিবাসের দিকে পিছু হটতে থাকে।’(২৯)
‘রংপুরের মাটিতে মিত্রবাহিনীর প্রবেশ ঘটে ডিসেম্বরের ৬–৮ তারিখের মধ্যে। জেলার পীরগঞ্জ থানায় ৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে। এরপর পীরগঞ্জের উত্তরে রংপুর যাওয়ার রাস্তায় দ্রæত ‘রোড বøক’ স্থাপন করে যৌথবাহিনী। এর কিছু সময় পরেই রংপুর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কনভয় যৌথবাহিনীর ‘রোড বøক’ এর সামনে এসে পৌঁছলে তারা ভারতীয় ট্যাংকের আক্রমণের মুখে পড়ে।(৩০)
‘৯ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জও আসে যৌথবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এরপর লচমন সিং রংপুর দখলের লক্ষ্যে ৬৬ মাউন্টেন ব্রিগেডের আক্রমণ নিশানা (শলাকা) উত্তরে ঘুরিয়ে দেন। প্রথমে মিঠাপুকুর দখলে এনে ৬৬ ব্রিগেড রংপুরের দিকে অগ্রসর হবে।(৩১) ‘১৫ ডিসেম্বর সৈয়দপুর এবং তিস্তায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী তিস্তা ব্রিজের একটি গার্ডার উড়িয়ে দিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালিয়ে আসা রংপুর এবং সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্র বাহিনীর কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।(৩২) ‘১৬ ডিসেম্বর দুপুরে সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ও ভারতীয় ব্রিগেডের এক আলোচনা সৈয়দপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে দারোয়ানিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে ব্রিগেডসহ অন্যরা সৈয়দপুরের জামজামা বিমানবন্দরে আত্মসমর্পণ করবে। ১৭ ডিসেম্বর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।(৩৩)
‘১৬ ডিসেম্বর রংপুর শহর এবং শহরতলীতে লড়াই চলতে থাকে। মুক্তিবাহিনী দমদমা ব্রিজের বাংকারে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রচÐ আক্রমণ চালায়। এতে বহুসংখ্যক হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত এবং অনেকে প্রাণভয়ে ট্যাংক ছেড়ে পালিয়ে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়।(৩৪)। ১৫ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর দুটি ব্রিগেড রংপুর শহরে প্রবেশ করে এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ও সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট অবরুদ্ধ করে রাখে। ‘১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার রংপুর সেনানিবাসে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক ঐদিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করেন মিত্রবাহিনীর ৬৬ মাউন্টেন ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জে এস শর্মা।(৩৫)
‘১৭ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে রংপুরে দেখা যেতে থাকে আনন্দ ও বিজয়ের খÐ খÐ চিত্র। রাস্তায় স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে মানুষের পদচারণা। ‘১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর শহরে আসতে শুরু করে। বিকেলে রংপুরের ডেপুটি কমিশনার সৈয়দ শামীম আহসান ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজরদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের কাছে উপস্থিত হন এবং বলেন, রংপুর শহরে মুক্তিপাগল মানুষ আনন্দ উল্লাসে রাস্তায় নেমে পড়েছে এবং চারিদিকে থেকে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা দলে দলে স্বাধীন বাংলাদেশের রংপুর শহরে প্রবেশ করছে।’(৩৬)
এই লেখায় সংক্ষিপ্ত পরিসরের কারণে রংপুরের বধ্যভূমি ও গণহত্যার অংশটি উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি এ সংক্রান্ত পৃথক একটি লেখা পরবর্তীতে সংকলিত হবে।
তথ্যসূত্র:
১) ‘বিজয়ের ৪০ বছর’, পৃষ্ঠা–১৫৫।
২) মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের ইতিহাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থ।
৩) রফিকুল ইসলাম গোলাপ: আন্দোলন–সংগ্রাম– অপূর্ব শর্মা সম্পাদিত। আইডিয়া প্রকাশন, পৃষ্ঠা–৩৪,৩৫।
৪) মোস্তফা তোফায়েল হোসেন: বৃহত্তর রংপুরের ইতিহাস, পৃষ্ঠা–২০২, ২০৩।
৫) মুকুল মুস্তাফিজ: মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, গতিধারা প্রকাশ, পৃষ্ঠা–২৮,২৯
৬) রানা মাসুদ: একাত্তরের উত্তাল মার্চ: রংপুরের দিনগুলো, পৃষ্ঠা–৫০
৭) মেজর নাসির উদ্দিন: যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা–১০০। দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুল ইসলাম হক্কানীর প্রবন্ধ এবং ‘ মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর’ রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃষ্ঠা–২৮।
৮) মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর: রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃষ্ঠা–৩২, ৩৩।
৯) মুকুল মুস্তাফিজ: মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, গতিধারা প্রকাশ, পৃষ্ঠা–৩৩
১০) পূর্বোক্ত
১১) মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের ইতিহাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থ।
১২) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৫৩।
১৩) মো. আবুল কাশেম: কাউনিয়া উপজেলার ইতিহাস, পৃষ্ঠা–১৪৬।
১৪) রংপুরের ইতিহাস (জেলা প্রশাসন), পৃষ্ঠা–২২১ ও একাত্তরের উত্তাল মার্চ: রংপুরের দিনগুলো, পৃষ্ঠা– ২২৩।
১৫) রফিকুল ইসলাম গোলাপ: আন্দোলন–সংগ্রাম– অপূর্ব শর্মা সম্পাদিত। আইডিয়া প্রকাশন, পৃষ্ঠা–২১,২২,২৩।
১৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (নবম খÐ), পৃষ্ঠা–৩৯৬।
১৭) মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর: রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃষ্ঠা–৫৭
১৮) মোস্তফা তোফায়েল হোসেন: বৃহত্তর রংপুরের ইতিহাস, পৃষ্ঠা–২৫২, ২৫৩।
১৯) মুকুল মুস্তাফিজ: মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, গতিধারা প্রকাশ, পৃষ্ঠা–৪৩।
২০) মোস্তফা তোফায়েল হোসেন: বৃহত্তর রংপুরের ইতিহাস, পৃষ্ঠা–৪৪।
২১) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৪৪।
২২) মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর: রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃষ্ঠা–৮৫।
২৩) কে, মওদুদ ইলাহী সম্পাদিত ‘শহিদ কে, মুখতার ইলাহী এবং রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ’ পৃষ্ঠা–৬৫।
২৪) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৪৬ ও রংপুর জেলার ইতিহাস, পৃষ্ঠা–২৩১।
২৫) মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর: রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃষ্ঠা–৮৬।
২৬) রংপুর জেলার ইতিহাস (জে.প্র), পৃষ্ঠা–২৩২।
২৭) বিবিসি বাংলা, ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর ২০২০, জনাব আকবর হোসেন এবং গোলাম শামদানী, ঝধৎধনধহমষধ.হবঃ, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০।
২৮) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৪৬, ৪৭ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস: রংপুর’ এস,এম আব্রাহাম লিংকন, পৃষ্ঠা–১৮৭, ১৮৮।
২৯) মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস: রংপুর, পৃষ্ঠা–১৮৯, ১৯০।
৩০) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা–৩৯৬।
৩১) মেজর নাসির উদ্দিন: মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা–২৮৮।
৩২) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৪৭।
৩৩) মোস্তফা তোফায়েল: মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস, পৃষ্ঠা–১১৭।
৩৪) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, পৃষ্ঠা–৪৭।
৩৫) পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা–৮৯,৯০।
৩৬) ‘স্মৃতিতে রণাঙ্গন’ জেলা প্রশাসন, পৃষ্ঠা–১২