তরুণ তুর্কি: শ্যামলী বিনতে আমজাদ
শ্যামলী বিনতে আমজাদ। এই প্রতিভাবান তরুণ তুর্কির জন্ম আগস্টের ২৭ তারিখে রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের জয়দেব মধ্যপাড়া গ্রামে। বাবা মো. আমজাদ হোসেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মা মোছা: মোসলেমা বেগম। যিনি পুরো পরিবারকে আগলে রেখেছেন পরম যত্নে।
প্রথম লেখা প্রকাশ হয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্কুল পাঠাগারের দেয়ালিকায়। ২০১২ সালে রংপুরের জনপ্রিয় এবং শীর্ষ পত্রিকা দৈনিক যুগের আলোতে একটি কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে লেখালেখিতে গতি আসে। নিজের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তার।
সংগঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন-
সংগঠন ব্যাক্তিকে সংগঠিত করে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আমার বেড়ে উঠা অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ এবং বিভাগীয় লেখক পরিষদের সাথে। লেখালেখির জন্য সংগঠন যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাপারটি সেরকম নয়। ভালো লেখার জন্য আগে ভালো পাঠক হতে হবে এবং কল্পনাশক্তির বিকল্প কিছু নেই।
‘তরুণ তুর্কি’ তে আজ প্রকাশিত হচ্ছে শ্যামলী বিনতে আমজাদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো।
প্রিয় বই:
প্রিয় শব্দটি বইয়ের ক্ষেত্রে কন্সট্যান্ট নয়। কারণ পঠিত বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে প্রিয় বইয়ের সংখ্যা। ব্রাজিলীয় ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহোর দ্য এলকেমিস্ট, আহমদ ছফার গাভী বৃত্তান্ত প্রিয় তালিকার শীর্ষ দুটি বই।
প্রিয় লেখক:
নির্দিষ্ট করে একজন লেখক কখনও প্রিয় হতে পারে না। অনেক লেখকের লেখাই আমার ভালো লাগে।
আহমদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্য, আল-মাহমুদ, শামসুর রাহমান এবং পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতা ভীষণ প্রিয়।
প্রিয় খাবার:
ভর্তা জাতীয় যেমন টাকি মাছের ভর্তা, আলু ভর্তা, শুটকি এবং সিদল ভর্তা সাথে পাট শাকের শোল্কা জাতীয় খাবার ও মোটা চালের ভাত।
প্রিয় মানুষ:
মা-বাবা, যারা নিঃস্বার্থে আমাকে লালন পালন করে চলেছেন।
আদর্শ মানুষ:
হযরত মুহাম্মদ(স:), পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের কাছে যিনি আদর্শ।
প্রিয় স্থান:
কদমের তল। শৈশবের একটি প্রিয় জায়গা। খেয়ে না খেয়ে দিনের অধিকাংশ সময় যেখানে কাটিয়েছি, খেলেছি- মার্বেল, বৌচি, গোল্লাছুট, ফুটবল, চ্যাংটুপেন্টি, ক্রিকেট, ঘুড়ি ওড়ানো, কানামাছি, গাদম, লুকোচুরি, কানামাছি এবং গাছধরা।
প্রিয় মুহূর্ত:
মা-বাবাকে উপহার দেবার মুহূর্তটি ভীষণ প্রিয়। এই মুহূর্ত বারবার যেন ফিরে আসে।
প্রিয় কবিতা:
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। উফ, এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়া বেশ কঠিন। আমারতো অনেক কবিতাই প্রিয়। যেমন: রবীন্দ্রনাথের -প্রাক্তন, নজরুলের-বিদ্রোহী, জীবনানন্দের বনলতা সেন আরো অনেক।
প্রিয় বাক্য/উক্তি:
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য- ভুপেন হাজারিকা।
যেমন মানুষ হতে চাই:
একজন মানবিক মানুষ হতে চাই।
যে বিষয়টি পীড়া দেয়:
কিশোর- তরুণদের মাদকাসক্তি। গতকালই দেখলাম ১২-১৩ বছর বয়সী এক কিশোর প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে সিগারেট খেয়ে বেড়াচ্ছে, চোখজোড়া টকটকে লাল। কয়েকজন যুবক গোল হয়ে বসে আগুন জ্বালিয়ে গাঁজা টানছে।
মাদকতা হ্রাস করতে না পারলে এ জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
আগামীর পরিকল্পনা:
গ্রামে বাবার নামে একটি পাঠাগার (আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন জ্ঞানদ্বীপ পাঠাগার) প্রতিষ্ঠা করেছি ২০১৯ সালে। সেটিকে আরও বড় এবং আরও সমৃদ্ধ করবার স্বপ্ন দেখি। বর্তমান পাঠক সংখ্যা ২৬০ জনের মত। হাজার হাজার পাঠক তৈরি এবং বই পড়ার আন্দোলনে কাজ করছি এবং করতে চাই। সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনার বাইরে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বই পড়ার সুযোগ পায় এবং আলোকিত মানবিক মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে। তাদের চিন্তার জগৎকে যেন আরো বিস্তৃত করতে পারে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। কখনও সামর্থ্য হয়ে গেলে বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ।
নিজের লেখা বাছাইকৃত একটি ছড়া:
মজুর ছেলে
শ্যামলী বিনতে আমজাদ
শিমুল তুলোর বালিশ ছাড়া
ঘুম আসে না তোর?
ইটের বালিশ মাথায় দিয়ে
রাত করিতো ভোর!
নরম তোশক, ন্যাপথালিনের
গন্ধ মাখা কাঁথা,
দু’চোখ তবু নিদ্রাহীন আর
মন ভাবে তোর যা তা?
শয্যা ইটের, লজ্জা ফেলে
একটু আজার পেলে,
ঘুমাই সুখে দুঃখ ভুলে
আমরা মজুর ছেলে।