হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান

২৪ মার্চ, ২০২৩ , ৯:২৬ অপরাহ্ণ

আমাদের রমজান ১ – রমাদানের ফযিলত

সবাইকে পবিত্র রমাদানের শুভেচ্ছা। শুরু হয়ে গেল তাকওয়া অর্জনের গোনাহ মাফের মাস। আসুন প্রথম দিনে জেনে নিই মহাপবিত্র এই মাসের ফজিলতসমূহ।

“হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাক্বওয়া (আল্লাহ ভীতি) অর্জন করো”(সূরা বাক্বারা- ১৮৩)

“যে কেউ রামাদ্বানের রোজা রাখে, ঈমান ও সওয়াবের আশায়, তার বিগত জীবনের সব পাপ মাফ করে দেওয়া হয়” (বুখারী-৩৮)

“রোজা হলো (পাপাচার থেকে) রক্ষার ঢাল স্বরূপ। তাই তোমাদের কেউ রোজা রাখলে অশ্লীল কথা বলবে না, চিৎকার ঝগড়াঝাঁটি করবে না। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে মারামারি করে, তাকে বলবে – আমি তো রোজাদার! আমি তো রোজাদার!” (বুখারী-১৮৯৪)

‘‘আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু রোজা শুধুমাত্র আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো।” (বুখারী-১৯০৪)

‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন- মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা রোজা শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দিবো।” (মুসলিম-১১৫১)

‘‘রোজা ঢাল স্বরূপ। এ দ্বারা বান্দা তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে।’’ (আহমাদ-১৫২৯৯)

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন রোজা পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন” (বুখারী-২৮৪০; মুসলিম-১১৫৩)

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও নেকির আশায় রামাদ্বান মাসে ক্বিয়াম করবে (তারাবীহ পড়বে) তার পূর্বেকার পাপ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে” (বুখারী-৩৫; মুসলিম-৭৬০)

“যে ব্যক্তি মিথ্যা পরিত্যাগ করলো না, আল্লাহ তা’য়ালা তার পানাহার ত্যাগ কবুল করেন না” (বুখারী-১৯০৩)

“রোজা পালনকারীর জন্য দু’টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে – একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়” (বুখারী-৭৪৯২)

“জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু রোজা পালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা” (বুখারী-১৮৯৬; মুসলিম-১১৫২)

আমাদের রমজান ১ - রমাদানের ফযিলত

রবীন জাকারিয়া

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

জুমার নামাজের সূচনা

সূচনা:

আমরা সাধারণ: সকলেই মনে করি জুম্মা বার আর শুক্রবার একই কথা৷ আসলে তা কিন্ত নয়৷ এই বিশ্লেষণের পূর্বে জানা প্রয়োজন বর্ষ কত প্রকারের৷ সাধারণভাবে এর উত্তর হলো দুই প্রকার৷ সৌর বর্ষ ও চন্দ্র বর্ষ৷ ইংরেজি ও বাংলা বর্ষপঞ্জি সৌর বর্ষের আর হিজরি সন হলো চন্দ্র বর্ষের উপর নির্ভরশীল৷ তাই বলা যায় বৃহষ্পতিবার মাগরিবের পর থেকে শুক্রবারের মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত জুম্মাবার৷

জুমার নামাজের সূচনা হল যেভাবে:

ইসলাম ধর্ম মতে মুসলমানদের সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিন। জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা আছে। ইসলাম ধর্ম মতে এইদিনে মহান আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন।

মুসলিম উম্মাহরা শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে মনে করেন। কারণ সারা সপ্তাহ ব্যস্ততার জন্য নিজেদের মতো করে নামাজ আদায় করলেও এ দিন মুসল্লিরা মসজিদে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করেন। এ কারণে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

হিজরতের পরে জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.)-এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।

জুমার নামাজের গুরুত্ব:

শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তাঁর খুতবায়।

হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালক বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি—এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ২৮৩)।

আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সবার আগে থাকবো। যদিও অন্য সব জাতিগুলোকে (ইহুদী ও খৃষ্টান) গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন।

তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃস্টানরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

জুমার নামাজের সূচনা জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

হিজরতের পরে জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.)-এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।

হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি—এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩)

জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)

জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)

উপসংহার:

মুসলমানদের কাছে জুম্মাবার হলো একটি অত্যন্ত পবিত্রতম দিন৷ অন্যভাবে এটাকে বলা হয়েছে গরীবদের হজ্ব৷ তাই আমরা সকলে এই পবিত্রতম দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আল্লাহ্কে রাজি-খুশি করি এবং ইহ-পারলৌকিক শান্তি অর্জন করতে পারি৷ আমীন৷

তথ্যসূত্র:
– আল কুরআন
– আল হাদিস
– সময় সংবাদ
– বাংলাদেশ জার্ণাল
– ফেসবুক পোস্ট
– উইকিপিডিয়া

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

জুমার নামাজের সূচনা-প্রবন্ধ রবীন জাকারিয়া

হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান

৮ এপ্রিল, ২০২২ , ৮:৪৫ অপরাহ্ণ

রমজান মাস কীভাবে কাটাব?

মূল: জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাক্বী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ 

এক.

রমজানে শুধু রোযা রাখা এবং তারাবিহ পড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকা অনুচিত। বরং রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল প্রকার গুনাহ থেকে গুরুত্ব সহকারে বেঁচে থাকা, তো ইনশাআল্লাহ এটা ব্যক্তি জীবনে বড় সুন্দর পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

দুই. 

এই রমজান মাসে আমরা এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই এ মাসে ইনশাআল্লাহ কোনো গুনাহ করব না। আপনি ভেবে দেখুন, রমজান মাসে আল্লাহর হুকুমের সম্মানার্থে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়, পান করে না সে। খাওয়া দাওয়া হালাল ছিল নাকি হারাম ছিল? হালাল ছিল, তবুও হালাল হওয়া সত্ত্বেও ছেড়ে দিয়েছে। পানি পান করা হালাল ছিল না হারাম? হালাল ছিল, কিন্তু আল্লাহর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তিন.

যে কাজ আগে থেকেই হারাম, যা রোযা আর রোযার বাইরে, সব সময়ই হারাম, সেটা যদি না ছাড়া হয় তাহলে রোযা কী কাজের? যেমন মিথ্যা কথা বলা হারাম, রমজানে মিথ্যা কথা বলা বাদ দেওয়া হলো না। গীবত করা হারাম ছিল, রমজানে গীবত করা বাদ দেওয়া হয়নি। না মাহরামের দিকে অবৈধ কামনার দৃষ্টি হারাম ছিল, সেটা ছাড়া হলো না।

চার.

কারো সাথে লড়াই ঝগড়া-ফাসাদ করা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া সবসময়ই হারাম ছিল, এ গুনাহ ছাড়া হলো না। তো ভাই! যেসব ব্যপারে হালাল ছিল, রমজানে তো সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেসব বিষয় আগে থেকেই হারাম ছিল, সেগুলো ছাড়া হয়নি।  তাহলে এটা কেমন রোযা হল? এর মাধ্যমে তাকওয়া কীভাবে হাসিল হবে?

পাঁচ. 

তাকওয়া তখনই অর্জন হবে, যখন হালাল বিষয়গুলোর পাশাপাশি আগে থেকেই হারাম বিষয়গুলোও ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও, যে কমপক্ষে এ রমজান মাস চোখ ভুল দিকে যাবে না। জিহ্বা কোনো ভুল কথা বলবে না, কান কোনো ভুল কথা শুনবে না। এবং মুখে কোনো হারাম লোকমা যাবে না।

ছয়.

এটা কেমন কথা হলো, সারাদিন তো রোযা রাখলাম আর ইফতার করলাম হারাম খাবার খেয়ে। এমন উপার্জন যা  হারাম ছিল, তা দিয়ে ইফতার করল। ধরা যাক, ধোঁকা দিয়ে উপার্জন করল, তা হারাম। জুয়া খেলে উপার্জন করল অথবা অন্য কোন শরীয়তে নিষিদ্ধ কাজ করে উপার্জন করল, সেটা হারাম।

সাত.

সারাদিন রোযা রেখে ইফতার করল হারাম দিয়ে। এটা  কেমন রোযা হবে? এ রোযা দিয়ে কীভাবে তাকওয়া হাসিল হবে? এজন্য বলছি এদিকে মনোযোগ দাও। রমজান মাস এভাবে কাটাব যে, কোন গুনাহ হবে না। এজন্য দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে। যেভাবে প্রবল তৃষ্ণার্ত হওয়ার পরও পানি পান থেকে বেঁচে থাক। একইরকম গুনাহ করা থেকেও বেঁচে থেকে দেখ, তাহলে এ রমজান মাস আল্লাহর তা’আলার সাথে সম্পর্ক মজবুত করার উত্তম উপায় হবে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে নিজ অনুগ্রহে তাওফিক দিয়ে দিন।

রমজান মাস কীভাবে কাটাব

হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান

৫ এপ্রিল, ২০২২ , ২:৩২ অপরাহ্ণ

রোজার আধুনিক মাসআলা

মূল: আল্লামা জাস্টিস ত্বাকি উসমানী (দা:বা:)

আধুনিক সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় নানা পরিবর্তন এসেছে। সেগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। আবার চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে সেসব রোগের নানা প্রতিষেধক ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এসময়ে মানুষের মনে এক বড় প্রশ্ন হলো রোজা রাখা অবস্থায় এগুলোর ব্যবহারে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কি না।

এসব বিষয়ে মাসআলা দিয়েছেন শায়খুল ইসলাম খ্যাত পাকিস্তানের জগদ্বিখ্যাত আলেম আল্লামা জাস্টিস ত্বাকি উসমানী (দা:বা:)। আসুন আজ জেনে নিই সেই বিষয়গুলো।

১. ইনজেকশন (Injection):

ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)

২. ইনহেলার (Inhaler):

শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)

৩. এনজিওগ্রাম (Angio Gram):

হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তারপরেও রোজা ভাঙবে না।

৪. এন্ডোসকপি (Endos Copy):

চিকন একটি পাইপ, যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগির পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এই নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৫. নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin):

এরোসল জাতীয় ওষুধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোঁটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ওষুধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব এতে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৬. লেপারোসকপি (Laparoscopy):

শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোনো অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ওষুধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে অন্যস্থায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৭. অক্সিজেন (Oxzgen):

রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৮. মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation):

রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৯. রক্ত নেওয়া বা দেওয়া:

রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। (আহসানুল ফতওয়া)

১০. সিস্টোসকপি (cystoscop):

প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)

১১. প্রক্টোসকপি (proctoscopy):

পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগি যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতওয়া শামী)

১২. কপার-টি (Coper-T):

কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোজা ভেঙে যাবে। কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।

১৩. সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation):

সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ বা বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌঁছে না তাই এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না।

১৪. ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage):

ডি এন্ড সি হল গর্ভধারণের আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে ঔষধের মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোজা ভেঙে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)

১৫. এম আর (M.R):

এম আর হল গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম আর সিরিঞ্জ প্রবেশ করিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যার পর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)

১৬. আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram):

আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)

১৭. স্যালাইন (Saline):

স্যালাইন নেওয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম)

১৮. টিকা নেওয়া (Vaccine):

টিকা নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়েল)

১৯. ঢুস (Douche):

ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান । (ফতওয়ায়ে শামী)

২০. ইনসুলিন গ্রহণ করা: (Insulin):

ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

২১. দাঁত তোলা:

রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)

২২. পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা:

রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

২৩. মিসওয়াক করা:

শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। চাই যখনই করা হোক না কেন। (ফতওয়ায়ে শামী)

২৪. মুখে ওষুধ ব্যবহার করা:

মুখে ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ওষুধের অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙবে না। (ফতওয়ায়ে শামী)

২৫. রক্ত পরীক্ষা:

রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেওয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।

২৬. ডায়াবেটিস পরীক্ষা:

ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুঁচ ঢুকিয়ে যে একফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

২৭. নাকে ওষুধ দেওয়া:

নাকে পানি বা ওষুধ দিলে যদি তা খাদ্যনালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়ায়ে রাহমানিয়া)

২৮. চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা:

চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)

২৯. কানে ওষুধ প্রদান করা:

কানে ওষুধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোজা ভেঙে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢোকে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় না চলে যায়। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৩০. নকল দাঁত মুখে রাখা:

রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (ইমদাদুল ফতওয়া)

হে আল্লাহ সবাইকেই আমল করার তৌফিক দিন।আমিন।

রমাদান প্রতিদিন ০৩ - রোজার আধুনিক মাসআলা

হাফেজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান

৪ এপ্রিল, ২০২২ , ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

রমাদানের গুরুত্ব ও অফুরান ফজিলত 

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর রোজা ফরজ করেছেন।

রমজানের রোজা কেউ অস্বীকার করলে— সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এছাড়াও শরিয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী— মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য। নবীজি (সা.) বলেন, ‘’যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে— সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)

রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রমজান মাস সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ

নবীজি (সা.) বলেন, ‘’আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের

উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘’হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।’’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘’যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে— হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন।” (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

রমজান বরকতময় মাস

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন…।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৪৮)

রমজানের রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার রোজার বিনিময়ে অনেক বড় পুরস্কারেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা বলেন- ‘রোজা আমারই জন্য। আমি নিজে এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্য পানাহার ছেড়ে দেয়, কামনা-বাসনা ছেড়ে দেয়। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়। আরেকটি খুশি আমার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট  মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম।” (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)

এ মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ, রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)

রোজাদারদের জন্য বিশেষ দরজা

জান্নাতে একটি ফটক আছে। তার নাম রাইয়্যান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে- ‘রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা উঠবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ যাবে না। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন রাইয়্যান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সুতরাং আর কেউ এ ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬; মুসলিম, হাদিস: ১১৫২)

আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি, যিনি উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার— রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়— যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৮৯৬৬)

দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি

এ মাসে অসংখ্য মানুষের দোয়া কবুল করা হয়। আবেদন মঞ্জুর করা হয়। জাহান্নামির নাম জাহান্নামের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়, দোখজ থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে হবে। যাবতীয় দরখাস্ত দয়াময় আল্লাহর দরবারে পেশ করতে হবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪৫০)

হাদিসে আছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না : রোজাদারের দোয়া, ইফতার পর্যন্ত। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। মজলুমের দোয়া।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪২৮)

রমজান পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমআ এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

রমজানে দান-খায়রাত বেশি করা

নবী কারিম (সা.) এমনিতেই প্রচুর দান করতেন। আর এ মাসে দানের পরিমাণ আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলে আকরাম (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তার দানশীলতা অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমজান মাসে; যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল। (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানে বেশি থেকে বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রমাদানের গুরুত্ব ও অফুরান ফজিলত

মুগ্ধতা.কম

১৫ মে, ২০২০ , ৬:৩২ অপরাহ্ণ

সাতাশে রমযানই শবে কদর: এটি প্রচলিত ভুল, চরম অজ্ঞতা

‘লাইলাতুল কদর’ অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ বরকতময় রাত। আল্লাহ তা’আলা ‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন’ এ রাতই নাজিল করেন। ঘোষণা করেন এ রাত হাজার মাস হতে উত্তম।

হাদিসে শরীফে আছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী সা.  বলেছেন: যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদ্‌রে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদাত করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০১)

এমন ফজিলতের প্রত্যাশী কে না হতে চায়। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে এই মহামান্বিত রাতের ফজিলত থেকে আমরা অনেকে বঞ্চিত।

প্রথমত: নির্দিষ্টভাবে সাতাশের রাতকে শবে কদর বলা প্রচিলিত ভুল বা চরম অজ্ঞতা।

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ ‏”‏‏.‏

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল সা.বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্‌রের অনুসন্ধান কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৭)

কোন কোন হাদিসে বেজোড় উল্লেখ নেই , রমযানের শেষ দশকে লাইলাতূ্ল কদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। তাই শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদাত করা শ্রেয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এতে শবে কদর সহজেই আপনার ভাগ্যে জুটবে।

সুতরাং সাতাশ তারিখই লাইলাতুল কদর, শুধু এ রাতেই ইবাদত করা, অন্য নয় দিন নফল ইবাদতে ব্রতী না থাকাটা বড়ই অজ্ঞতা।

দ্বিতীয়ত: এই মহামান্বিত রাতে মনগড়া পন্থায় রাত জাগা। বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে : এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা।
এবং এ রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়া অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করা এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়া। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করা।

শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯)

সুতরাং শুধু সাতাশ রমযান নয়, রমযানের শেষ দশকেই এই মহামান্বিত রাত প্রাপ্তির আশায় সঠিক পন্থায় ইবাদতে মশগুল থাকি। আল্লাহ তাআলা সবাই কে কবুল করুন।

 

সাতাশে রমযানই শবে কদর: এটি প্রচলিত ভুল, চরম অজ্ঞতা

মুগ্ধতা.কম

৩ মে, ২০২০ , ১০:২৮ অপরাহ্ণ

তারাবিহ: তাড়াহুড়া নয় ধীরস্থিরতাই কাম্য 

প্রতিটি জিনিসের একটি সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় দিক থাকে যে কারণে জিনিসটি সমাদৃত হয় । ইবাদতের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয়  দিক হলো, একমাত্র আল্লাহ তুষ্টি  এবং রাসুল সা. এর তরিকা থাকতে হবে।  যে কোন একটির অনুপস্থিতি  ইবাদত তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। তা আল্লাহর কাছে গৃহিত হয়না

তাই আল্লাহ তা’আলা আমলের  পরিমান দেখেন না। মান দেখেন, সৌন্দর্য দেখেন ।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

الَّذِیۡ  خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ  اَیُّکُمۡ  اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ  الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾

‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে সুন্দর ও উত্তম আমলকারী। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।’  (সূরা মুলক, আয়াত ২ )

উক্ত আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তাআলা বলেন: আমি দেখতে চাই তোমাদের মধ্যে কার আমল ভালো, কার আমল সুন্দর। কার আমল বেশী তা বলেননি । কর্মের পরিমাণ বেশী হওয়া এটি কোন আকর্ষণীয় বিষয় নয়, কর্মটি ভালো নির্ভুল ভাবে গৃহিত হওয়াটাই ধর্তব্য । এজন্য কিয়ামতে মানুষের কর্ম গণনা করা হবে না, বরং ওজন করা হবে। আর কর্ম ওজনদার হয় আল্লাহর তুষ্টি ও রাসূল সা. এর তরিকা দ্বারা ।

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم كَلِمَتَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেনঃ দু’টি কলিমা দয়াময়  আল্লাহ্‌র কাছে অতি প্রিয়, উচ্চারনে খুবই সহজ (আমলের) পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। কালিমা দুটি হচ্ছে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহান্নাল্লাহিল আযীম’—(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫৬৩)

উক্ত হাদীস থেকেও প্রতিভাত হয় আমল ওজন করা হবে, গণনা নয়।

আপনি কত লক্ষ টাকা দান করলেন, কত রাকাত নামায পড়লেন  তা  তখনই আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে যখন মানসম্মত হবে । আপনার তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, ইশরাক, তারাবিহ তখনই গৃহিত হবে যখন লৌকিকতা মুক্ত এবং সঠিক ভাবে আদায় করবেন।

আর ইবাদতে সৌন্দর্য, উত্তমতা কখন আসে ? ইবাদতে এমন একটা ভাব তৈরি করা যেন আপনি আল্লাহকে দেখছেন, অথবা আল্লাহ আপনাকে দেখছেন যেমন হাদিসে আছে-

فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»

উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

জিবরাইল বললেন: ইহসান কী? রাসূল সা. বললেন: এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহ্‌কে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখতে পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন । (বুখারী )

প্রত্যেকে আমরা আমাদের ইবাদতগুলোর প্রতি লক্ষ করলে বুঝা যাবে যে, আমাদের ইবাদত গুলোর কী অবস্থা । বিশেষ করে রমাযানে তারাবিহ । নামাযে যে গুলো সুন্নাত, মুস্তাহাব এগুলোর তো খোঁজই নেই । ওয়াজিবগুলো নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে । যেমন নামাযে কওমা তথা রুকু হতে একদম সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং জলসা তথা দুই সিজদাহর মাঝখানে স্থির ভাবে বসা, এ দুটি ওয়াজিব । কেউ ছেড়ে দিলে নামায হবেনা অথচ কতেক মসজিদে নামাযের গতি এত দ্রুত এই দুটো ওয়াজিব আমলের সুযোগই হয়না।

রাসূল সা. বলেন:

عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُجْزِئُ صَلَاةٌ لَا يُقِيمُ الرَّجُلُ فِيهَا صُلْبَهُ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ»

আবু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূ এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না তার সালাত পূর্ণ হয় না। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০২৭)

নামাযে দরুদ শরীফ হানাফি মাযহাবে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ সুন্নাত । শাফেয়ি মাযহাবে ফরজ । কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেয় গুনাহগার হবে। নামায ত্রুটিযুক্ত হবে। প্রয়োজনে তাড়াহুড়ার সময় ছোট দরুদ শরীফ হলেও পড়া যেমন:  اللهم صل على محمد  আল্লাহুম্মা ছল্লি আ’লা মুহাম্মদ।

(ফতোয়ায়ে শামী: ২/৭৪.   ১/৫১২, ৫১৮)

(قوله: وسنة في الصلاة) أي في قعود أخير مطلقاً، وكذا في قعود أول في النوافل غير الرواتب، تأمل”.

” ویکتفي باللّٰهم صلّ علی محمد؛ لأنه الفرض عند الشافعي (و یترك الدعوات) و یجتنب المنکرات: هذرمة القراءة، و ترك تعوذ و تسمیة، و طمأنينة، وتسبيح، و استراحة”. (الدر المختار، باب الوتر و النوافل، (2/47) ط: سعید) فقط والله أعلم

কোন ব্যক্তি যদি এভাবে বিশ রাকাত কেন চল্লিশ রাকাতও নামাজ পড়ে তার নামায কোন কাজে আসবেনা ।

আর কোন ব্যক্তি যদি নামাযের  ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব সবগুলো প্রতি খেয়াল রেখে আল্লাহ তুষ্টির জন্য দুই রাকাত নামায পড়ে ওই বিশ রাকাত থেকে অনেক দামি।

তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ অন্যন্য ইবাদতের সাথে  রমাযানের রোযা তারাবিহ যথাযথ ভাবে পালন করা।

 

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

তারাবিহ-তাড়াহুড়া নয় ধীরস্থিরতাই কাম্য

মুগ্ধতা.কম

৩০ এপ্রিল, ২০২০ , ৬:২৭ অপরাহ্ণ

মাহে রমাযান তাক্বওয়ার মাস: ঘরোয়া কাজে স্ত্রীকে  সহায়তা করুন 

এবারের রমাযান অন্যান্য রমাযান হতে ভিন্ন। অলস সময় কাটতে কাটতে কেমন যেন খুঁতখুঁতে ভাব চলে আসছে। অনেকে কর্ম জীবনের ব্যস্ততার কথা বলে আগে কখনো পরিবারকে সহযোগিতা করার ফুরসত পায়নি। বাসায় যখন আসতো অভিব্যক্তি দেখে মনে হতো সারাটা দিন কতইনা ব্যস্ততায় বেচারা সময়টা পার করেছে। ভাবে মনে হতো বাইরে কাজ না থাকলে বাসায় তিন ঘন্টার কাজ এক ঘন্টায় সামাল দিবে । ঘরের লোকও এবার বড্ড খুশি। এবার করোনা- লক ডাউনের অসিলায় কিছুটা সহায়তা পাব।

কিন্তু বাস্তবতার মুখ দর্শন সব আশার কি আর তকদিরে জুটে! লক ডাউনের সুবাদে এবার হাঁড়ির ঢাকনা খুলে গেছে। সব লাপাত্তা। উল্টা এক বিছানা বেচারি স্ত্রীকে  কয়েক বার ঠিক করতে হয়!

শ্বশুরের আদুরে মেয়েটাকে বশে আনার জন্যে  বিয়ের আগে কতইনা মুখরোচক বুলি আওড়াতো। হবু বউ কোন এক মূহুর্তে বাবার আদুরে সেজে বলত: ‘আমি কিন্তু রান্না- বান্না পারিনা’। আর তিনি বলতেন: ‘কোন সমস্যা নেই আমি সব পারি অথবা দুজনে মিলে করব।’ এখন বাস্তব জীবনে আসার পরে অতীতের মেকাপ করা কথার বিশ্বাসী, বোকা মেয়েটি পিয়াজের ঝাঁজে নাক আর চোখের পানিতে ঝাঁজড়া হয়ে নিরুপায় হয়ে বলে: ‘একটু খাবারটা ডাইনিংয়ে নিয়ে আসোতো’।

তৎক্ষণাত ওই জীবন-সংগী( ! )নামের  ফেবুপাগল কঠিন পদার্থ থেকে যে আওয়াজটি ধ্বনিত হয় : ‘কমন সেন্স্ বলতে কিছুই নেই, সবেমাত্র অফিস থেকে আসলাম’। আরো কত কী । বেচারি কি আর করবে, এই অভিজ্ঞতা তো আর কাজে লাগানো যায় না । নির্জনে নিভৃতে বোবা কান্নায়  চোখের পানি শুকিয়ে ফেলে । এদিকে আল্লাহর আরশ থরথর করে কাঁপতে থাকে । এভাবেই পরিবারে নিমে আসে আসমানি মুসিবত। কারণ জুলুম আল্লাহ সহ্য করতে পারেন না।

ইসলামে রান্নার দায়িত্বটা কিন্তু স্বামীরই। স্ত্রী থাকতে পারেন সহায়তার ভুমিকায় । স্ত্রীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে, পান থেকে চুন খসলেই রাগ। উল্লেখিত অবস্থা  ৯৫% পারিবারিক চিত্র ।

বর্তমান সমাজে কৌশলে নারীদের উপর অধিকারের নামে চাকরি, বাজার রান্না-বান্নার দায়িত্বের বোঝাগুলো চাপিয়ে দিয়েছে, সরলা নারীরা জানেও না দায়িত্ব কী আর অধিকার কী। অপরিচিত পুরুষের খাবার পরিবেশন, তাদের রুম ঝাড়ু দেয়া, হোটেল আর বিমানে তাদের আপ্যায়ন করা, মার্কেটে মুচকি হাসিতে গ্রাহক আকর্ষণ, অফিসে মিষ্টি হাসির মাধ্যমে অফিসার কে মুগ্ধ করা এগুলো নাকি তাদের অধিকার আর স্বাধীনতা!  বোকারা আবার এটি নিয়ে আন্দোলনও করে।

যাই হোক ইসলাম বলে স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক। উভয়েরই রয়েছে উভয়ের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ও করণীয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করিমে স্বামী- স্ত্রী  সম্পর্কের তুলনা করতে গিয়ে বলেন :

 ؕ هنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّہُنّ ؕ

তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

প্রত্যেকে চায় তার পোশাকটাকে সযত্নে রাখতে। খাওয়া দাওয়ায়, চলা- ফেরায় আগলে রাখতে যাতে কোন দাগ না পরে। কখোনো দাগ পরলেও সাথে সাথে ধুয়ে ফেলে। বা লুকিয়ে রাখে।

শরিয়াতে বিয়ের পর স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর প্রয়োজন মতো খাদ্য সরবরাহ করা। চাল ডাল মাছ মুরগী কিনে দিলে হবেনা প্রস্তুত করে খাবারের উপযোগী করে দিতে হবে । থ্রি পিসটা শুধু কিনে দিলে হয়না প্রস্তুত করে ব্যবহারের উপযোগী করে দিতে হয় । অর্থাৎ খাবার সরবরাহ করা যেহেতু স্বামীর দায়িত্বে; সুতরাং খাবার প্রস্তুত করা স্ত্রীর দায়িত্ব নয়। এবং শ্বশুর- শ্বাশুরি, স্বামী বা তার আত্মীয়- স্বজনদের খাবার তৈরি শরিয়া কর্তৃক বাধ্য না ।

বাদায়েয়ুস সানায়ের গ্রন্থকার আল্লামা কাসানী এমনটাই বলেন:

ﻭَﻟَﻮْ ﺟَﺎءَ اﻟﺰَّﻭْﺝُ ﺑِﻄَﻌَﺎﻡٍ ﻳَﺤْﺘَﺎﺝُ ﺇﻟَﻰ اﻟﻄَّﺒْﺦِ ﻭَاﻟْﺨَﺒْﺰِ ﻓَﺄَﺑَﺖْ اﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ اﻟﻄَّﺒْﺦَ ﻭَاﻟْﺨَﺒْﺰَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺑِﺄَﻥْ ﺗَﻄْﺒُﺦَ ﻭَﺗَﺨْﺒِﺰَ ———-(باب النفقة)

যে মেয়েটি বাবা মা সব কিছু ছেড়ে আপনার কাছে এসেছে ,বাবার বাসায় কখোনো রান্নাও করেনি । সে যদি বলে আমার খাবারটা আপনি রান্না করে দিন বা হোটেল হতে এনে দিন ইসলামি শরিয়া মতে আপনি বাধ্য।

অবশ্যই স্বামীর  সংসারে স্ত্রী কাজকর্ম করলে নফল ইবাদতের সওয়াব পাবেন। অস্বচ্ছল ও অভাবী স্বামীর সংসারে স্ত্রী কাজকর্ম করলে স্বামীর উপার্জনে সহায়তা এবং সন্তানদের প্রতি সহযোগিতা করা হবে। এটা তাদের দায়িত্ব নয় করলে সোয়াব পাবেন । হযরত আলী রা. এবং ফাতিমা র. মাঝে রাসূলুল্লাহ সা. বাসার বাহির এবং ভিতরের কাজে বন্টন করে দিয়েছিলেন ।  সংসারে উন্নতির জন্য স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে সহযোগিতা করা উচিত।

যা আপনার দায়িত্বে ছিল আপনার স্ত্রী ভালবেসে নফল হিসেবে করতে গিয়ে কোন ত্রুটি হলে তার উপর চড়াও হওয়া, কটু কথা বলা জুলুম নয় কি ?

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطّ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নবী সা. কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ( বুখারী, হাদিস নং ৫৪০৯)

সুতরাং আপনার ডিউটি আপনি পালন করুন নতুবা বাবা- মা, স্বজন, এলাকাবাসী কে আজীবনের জন্যে ছেড়ে আসা সরলা নারীটির প্রতি সদয় হোন, সহযোগী হোন। তার কষ্টগুলো কে স্বীকার করুন। তার গুণগুলো কে মূল্যায়ন করুন।

হযরত আলী রা. স্ত্রী কে কিভাবে মুল্যায়ন করেছেন:-

وَكَانَتْ أَحَبَّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ وَكَانَتْ عِنْدِي فَجَرَّتْ بِالرَّحَى حَتَّى أَثَّرَتْ بِيَدِهَا وَاسْتَقَتْ بِالْقِرْبَةِ حَتَّى أَثَّرَتْ فِي نَحْرِهَا وَقَمَّتِ الْبَيْتَ حَتَّى اغْبَرَّتْ ثِيَابُهَا وَأَوْقَدَتِ الْقِدْرَ حَتَّى دَكِنَتْ ثِيَابُهَا وَأَصَابَهَا مِنْ ذَلِكَ ضُرٌّ

আলী রা. বলেন: ফাতিমা রা. ছিলেন রাসূলের নিকট তাঁর পরিবারের সর্বাধিক প্রিয় এবং আমি তাকে বিয়ে করেছি। যাতা ঘুরাতে ঘুরাতে তার হাতে, পানির মশক বহন করায় তার কাঁধে দাগ পড়ে যায়; ঘর ঝাড়ু দেয়ায় ও রান্নাঘর পরিষ্কার করায় তার কাপড়ে ময়লা লেগে যায়; এতে ফাতিমাহ্‌র খুব কষ্ট হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৬৩)

আল্লাহ তা’আলা সবাই কে বুঝার তৌফিক দান করুন।

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

মাহে রমাযান তাক্বওয়ার মাস ঘরোয়া কাজে স্ত্রীকে  সহায়তা করুন 

মুগ্ধতা.কম

২৮ এপ্রিল, ২০২০ , ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

রমাযান কীভাবে কাটাব?

আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে আমাদের রমাযান দান করেছেন। এই মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য বা ফজিলত আমরা অনেকেই কমবেশি জানি। এ মাসের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ করা হলো যাতে সহজেই আমরা মনে রাখতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন।

করণীয়:

এক. রোযা রাখা ।

দুই. তারাবিহ নামাজ পড়া ।

তিন. কোরআন তেলাওয়াত করা ।

চার. সাহরি খাওয়া ।

পাঁচ. ইফতার করা ।

ছয়. রোযাদারকে ইফতার করানো ।

সাত. তাওবা-ইস্তিগফার করা ।

আট. দুআ করা ।

বর্জনীয় :

এক. অশ্লীল কথা না বলা ।

দুই. মিথ্যা কথা না বলা ।

তিন. অনর্থক কথা বা কাজ না করা ।

চার. গীবত না করা ।

 

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

 

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

রমাযান কীভাবে কাটাব

মুগ্ধতা.কম

২৮ এপ্রিল, ২০২০ , ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

মাঝ রাতে সাইরেন, লাউডস্পিকারের ব্যবহার: ইসলাম কী বলে?

حامدا و مصليا

ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বলে । অপরের ক্ষতি না করা , কথায়, কাজে-কর্মে কাউকে কষ্ট না দেয়া, মুসলিম- অমুসলিমের পার্থক্য নির্ণয়ের আগে মানুষ কে মানুষ হিসেবে বিচার করা, এটাই ইসলামের শিক্ষা ।

قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ.

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সা. বলেছেনঃ প্রকৃত মুসলিম যার যবান ও হাত থেকে মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির সেই, আল্লাহ্‌ যা নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ করে।  (বুখারী)

، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ، أَنَّهُ وَصَفَ حُسْنَ الْخُلُقِ فَقَالَ هُوَ بَسْطُ الْوَجْهِ وَبَذْلُ الْمَعْرُوفِ وَكَفُّ الأَذَى ‏.‏

সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা। [তিরমিজি, হাদিস নং ২০০৫]

প্রত্যেকে যদি একটু উপলব্ধি করি, হাদিসে ‘মুসলিম’ শব্দটির  সজ্ঞায়িত করা হয়েছে আমরা এতে আছি কি না। আমরা অনেকে ইসলাম কে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছি। শিষ্টাচার সামাজিকতা ইসলামের একটি বড় অধ্যায়। নামায পড়তে গিয়েও অন্যকে কষ্ট দেই। অথচ আল্লাহর রাসুল সা. যখন তাহাজ্জুদে উঠতেন নিজের স্ত্রীও যেন ঘুমের বিঘ্নতায় কষ্ট না পান, যথেষ্ট খেয়াল রাখতেন।
আয়িশা রা. বলেন :

رَقَدْتُ، ثُمَّ انْتَعَلَ رُوَيْدًا، وَأَخَذَ رِدَاءَهُ رُوَيْدًا، ثُمَّ فَتَحَ الْبَابَ رُوَيْدًا، وَخَرَجَ وَأَجَافَهُ رُوَيْدًا، :ظِ

‘যখন তাঁর ধারণা হল আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর আস্তে করে জুতা পড়লেন, আস্তে চাদর নিলেন, তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং আস্তে করে বের হলেন এবং আস্তে করে দরজা বন্ধ করলেন। [আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩৯৬৪]

হাজরে আসওয়াদ একটি গুরুত্ববহ পাথর। এখানে চুমু দেয়া মানে আল্লাহর সাথে মুসাফাহা করা। গুনাগুলো ঝরে ঝরে পড়ে যায়। রাসূল্লাহ সা. চুমু দিয়েছেন। সাহাবা কেরাম চুমু দিয়ছেন। কিন্তু  চুমু দিতে গিয়ে যদি ধাক্কাধাক্কি করে অন্যের কষ্ট হয়, তাহলে ছোয়াব তো দূরের কথা সে গুনাগার হবে।সুতরাং ইবাদত করতে গিয়ে ইসলামী শিষ্টাচার অবশ্য খেয়াল করতে হবে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মাসজিদে মধ্যরাতে সাইরেন অথবা লাউড স্পিকারের অপরিমিত অপব্যবহার যথেষ্ট হয়। অনেক মসজিদে দীর্ঘ সময় ইসলামি গান-গজল, কুরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ- নসিহাত, টেপ রেকর্ডার, মোবাইল উঁচু আওয়াজে বাজানো হয়। অজান্তেই গোনাহ করছে, দেখার কেউ নেই ! জেলা শহরগুলোতে মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে।

অথচ শেষ রাত দুআ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় যে কেউ দুআ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এ সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত করেন, গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করেন। এরুপ মূল্যবান সময়ে ইবাদাতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা নিঃসন্দেহে গুনাহের কাজ।
এ ছাড়া রোগী, শিশু, অমুসলিম, যাদের উপর রোযা ফরজ হয়নি তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। শব্দ দূষণ একটি নীরব ঘাতক। অতএব, সমস্যাটিকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ‘দংশেনি যারে বুঝিবে সে কিসে’ শব্দ দূষণের কারণে উচ্চরক্তচাপ, মাথা ধরা, অজীর্ণ, অনিদ্রা ও ফুসফুসে ক্ষতিসহ নানারকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :

عَنْ عَمْرِو بْنِ يَحْيَى الْمَازِنِيِّ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ.

‘নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করবে না, তদ্রুপ পরস্পর কারো ক্ষতি করবে না। [ইমাম ইবনু মাজাহ ২৩৪০]

দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায়: মাঝ রাতে লাউড স্পিকারের অপব্যবহার কে গর্হিত কাজ এবং অন্যের উপর জুলুম আখ্যায়িত করেছে।

سحری کے وقت دو، ڈھائی بجے سے اعلانات کا سلسلہ شروع کردینا اور بآواز بلند کوئی وعظ وغیرہ سنانا امر منکر ہے اور یہ لاوٴڈ اسپیکر کا ظالمانہ استعمال ہے، اس سے برادران وطن ، وغیرہ سنانا امر منکر ہے اور یہ لاوٴڈ اسپیکر کا ظالمانہ استعمال ہے، اس سے برادران وطن ، بچے            بوڑھے اور بیمار و معذور۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔واللہ تعالیٰ اعلم

(دارالافتاء،دارالعلوم دیوبند ) 

তাছাড়া বর্তমান সময়ে এটি অপ্রয়োজনীয়। নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ঘড়ি, মোবাইলে এলার্ম দিয়েই রাখে। তারপরেও যদি আপনি ছোয়াবের জন্যে কোন ভাইয়ের ইকরাম করার প্রবল আগ্রহ রাখেন,  তাহলে যাদের প্রয়োজন তাদের নম্বর সংগ্রহে রাখতে পারেন। যথা সময়ে কল দিবেন ইনশা আল্লাহ ছোয়াবের আশা করা যায়। নচেৎ যাদের প্রয়োজন নেই তাদের ক্ষতি করে বরকতময় মাসে রমযানের ত্রিশটি দিনই কষ্ট দিলেন। অজান্তেই গুনাহের বোঝাটা বহন করতে হলো। আল্লাহ মাফ করবেন না, যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি মাফ না করেন। যেহেতু এটি বান্দার হক। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

 

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

 

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

মাঝ রাতে সাইরেন, লাউডস্পিকারের ব্যবহার ইসলাম কী বলে

মুগ্ধতা.কম

২৬ এপ্রিল, ২০২০ , ৬:০২ অপরাহ্ণ

সালাতুত তারাবিহ এবং আমাদের সীমালঙ্ঘন

حامدا و مصليا

রমযান মাসের গুরুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত অজানা কিছু নয়। যে যত বেশী ইবাদতে ব্রতী হবে, সে তত বেশি ভাগ্যবান। অন্য মাসের তুলনায় রমযানে আমলের প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় । তাইতো রাসূল সা. দুমাস আগে থেকেই রমযান নাগালের দোয়া করতেন । অথচ কিছু মানুষ এই মহিমান্বিত মাস পেয়েও প্রান্তিকতার শিকার। যে কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি যেন আমাদের নিয়তি। কথিত আহলে হাদিস নামের একটি মহল তারাবিহর অস্তিত্ব মানতে নারাজ। তাদের আবার অনেকে জনরোষ এড়ানোর জন্য তাহাজ্জুদের আট রাকাত কে তারাবিহ বলে চালিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

সাহাবা কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, চার ইমাম, আওলিয়া কেরাম কেউ হাদিস বুঝেনি, চৌদ্দশ বছর পর এসে তারাই যেন হাদিস বুঝলো ! তাহাজ্জুদ আর তারাবিহ কে গুলিয়ে ফেললো । অথচ দুটির অস্তিত্ব ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তাহাজ্জুদের বিধান হিজরতের আগে সূরায়ে মুযযাম্মিলে অবতীর্ণ হয়, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার অনেক আগে। আর রমযানের রোযা ফরয হয়েছে হিজরতের পর। আর তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

كتب الله عليكم صيامه وسننت لكم فيه قيامه

‘আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং এই মাসে রাত জেগে নামায পড়াকে সুন্নত করেছি।-নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ।

এবং তাহাজ্জুদের বিধান বার মাসেই, রোযা ফরয হওয়ার আগ থেকেই । রাসূলে করীম সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রোযা ফরয এবং তারাবিহ সুন্নাত হওয়ার আগেও তাহাজ্জুদ পড়তেন ।

তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যে ভিন্ন ভিন্ন নামায তা আরো অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। বিস্তারিত জানার জন্য ফকীহুন নফস হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া পৃ. ৩০৬-৩২৩ দেখা যেতে পারে ।

তারাবিহ বিশ রাকাত। এটি সুবিদিত মিমাংসিত বিষয় । এটির পারম্পরিকতা এতটাই ব্যাপক যা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে তারাবিহতে আমাদের কিছু বাড়াবাড়ি আছে। বিশেষ করে চার রাকাত পরপর প্রচলিত দোয়া আর মুনাজাতে। অনেকে এটা অপরিহার্য মনে করি । মনে হয় যেন না জানলে নামাযেই হবে না। অথচ দোয়া কুনুত, তাশাহ্হুদ অপরিহার্য বিষয় এ গুলোর খবরই নেই।

অথচ চার রাকাত পর পর নির্দিষ্ট কোন দুআ দরূদ পড়া বিশুদ্ধ সূত্রে হাদীসে বর্ণিত হয়নি। হাঁ, চার রাকাত পর এতটুকু সময় বসা মুস্তাহাব, যতক্ষণ সময় চার রাকাত নামায পড়তে সময় লাগে। সেই সময় নফল নামায পড়া, তাসবীহ পড়া, দরূদ পড়া, জিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, কিংবা চুপ করে বসে থাকা, মক্কায় হলে তওয়াফ করা সবই বৈধ ।-

واما سننها: وَمِنْهَا أَنَّ الْإِمَامَ كُلَّمَا صَلَّى تَرْوِيحَةً قَعَدَ بَيْنَ التَّرْوِيحَتَيْنِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ يُسَبِّحُ، وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ، وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَيَدْعُو وَيَنْتَظِرُ أَيْضًا بَعْدَ الْخَامِسَةِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ؛ لِأَنَّهُ مُتَوَارَثٌ مِنْ السَّلَفِ (بدائع الصنائع، كتاب الصلاة، فصل فى سننها والتراويح-1/648

মক্কাবাসী চার রাকাত পর পর বিরতিকালীন তাওয়াফ করতেন, মদিনাবাসী বিশ রাকাত তারাবিহতে চারটা বিরতিতে চার রাকাত করে ষোল রাকাত নামায পড়তেন।

যেহেতু যেকোন দুআ ও দরূদ এ সময়ে পড়া যায় ,তাই অনেকে প্রচলিত দোয়াটি পড়েন ।

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ ——–:(رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل

কিন্তু সুন্নত-মুস্তাহাব বা জরুরী মনে করলে ছেড়ে দেয়াটাই যৌক্তিক । তাইতো ফকীহুন নফস আল্লামা রশিদ আহমাদ গাঙ্গুগী রহ. উল্লেখিত দোয়াটি না পড়ে এই দোয়াটি পড়তেন ।

(سبحان اللہ والحمد للہ ولا الہ الا اللہ واللہ اکبر)

সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার । (۔[فتاوی دار العلوم دیوبند4/24

হাকিমুল উম্মাত আল্লামা আশরাফ আলী থানবী রহ. কে কেউ জিজ্ঞেস করলে , উত্তরে বলেন: আসলেই তো এ সময়ে নির্দিষ্ট কোন দোয়া শরিয়াতে উল্লেখ নেই ,তবে আমি পঁচিশ বার দরুদ পড়ি । تحفئ رمضان) 111)

এবং তারাবিহ নামাযের নির্দিষ্ট কোন মুনাজাতও শরিয়াতে পাওয়া যায়না। অবশ্য গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যে কোনো দোয়া দিয়ে তা করা যেতে পারে। মনের একান্ত কথাগুলো যেভাবে ইচ্ছা আল্লাহর কাছে তুলে ধরাটাই দোয়ার উদ্দেশ্য। তবে তারাবিহর ব্যাপক প্রচলিত দোয়াটিও পড়া যায়। এটি শরিয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত এমন ধারণা পোষণ না করা। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

 

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

সালাতুত তারাবীহ এবং আমাদের সীমালঙ্ঘন

মুগ্ধতা.কম

২৫ এপ্রিল, ২০২০ , ৩:২৯ অপরাহ্ণ

রোযা এবং প্রচলিত ভুল সংশোধন 

রোযার নিয়ত নিয়ে সমাজে একটা ভুল  প্রচলন আছে। রোযার নিয়ত মুখে, প্রচলিত আরবি নিয়ত বলতে হবে অন্যথায় নাকি রোযা হবে না। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অবশ্য রোযার নিয়ত করা ফরয, তবে মুখে বলা ফরয নয়। নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে, অন্তরে রোযার সংকল্প করাই যথেষ্ট ,যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবেন, আমি আল্লাহর সন্তু’ষ্টির জন্যই আগামীকালের রোযা রাখছি।  হাদীস শরীফে আছে, ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল”। সাহারি খেলেই তো স্বাভাবিক নিয়াত হয়ে যায়।

অনেকে আবার সাহারি না খাওয়ার অজুহাতে রোযা রাখেন না। যদি বলা হয় ভাই আজ রোযা নেই কেন ? : সাহারি খেতে পারিনি তাই। অবশ্যই রোযার সাথে সাহারির সম্পর্ক আছে। তবে রোযা হওয়ার জন্য সাহারি খাওয়া শর্ত নয়। সাহারি খাওয়া সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

تسحروا فإن في السحور بركة

‘তোমরা সাহারি খাও। কেননা, সাহারিতে বরকত রয়েছে।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৫০

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, ‘সাহারি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি  হলেও খেয়ে নাও । কারণ যারা সাহারি খায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন।’ -মুসনাদে আহমদ ৩/১২; )

সুতরাং সাহারি না খাওয়ার অজুহাতে রোযা না করলে গোনাহগার হবে।

কিছু লোকের ভুল ধারণা, নিজ মুখের লালা বা থুথু গলাধঃকরণ করলে রোযা নষ্ট হয়। শরিয়াতে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙবে না, বিধায় যত্রতত্র থুথু ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। বেশি থুথু আসলে আপনি মেসওয়াক করতে পারেন। এতে থুথু কম আসবে।

গাছের কাঁচা ডাল দ্বারা বা পানিতে ভেজানো ডাল দ্বারাও মিসওয়াক করা জায়েয।-(মুসান্নাফে আ:রা:৪/২০২ )

অনেক রোযাদার বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে ইফতার করতে বিলম্ব করেন বা আযানের অপেক্ষা করে থাকেন যা শরিয়তে অপছন্দনীয়। ইফতার করতে শরিয়াহ সূর্যাস্তের সাথে সাথে নির্দেশ দিয়েছেন। আযান হোক বা না হোক। সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন এবং  সাহারি বিলম্বে খেতেন ।

বিধায় দেরী না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে আছে,

لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر.

যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
অনেকের মধ্যে আরেকটি বিযয় দেখা য়ায়, সর্ব প্রথম ইফতারটা লবন বা পানি দিয়ে করেন। এখানেও একটা শরিয়াতের পছন্দ- অপছন্দের ব্যাপার রয়েছে ।

খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করবেন।

من وجد تمرا فليفطر عليه ومن لا يفطر على ماء فإن الماء طهور

আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হল পবিত্র।’ -সুনানে তিরমিযী হাদীস : ৬৯০)

অনেকে মনে করে রক্ত,পুঁজ-পানি বের হলে বা বমি আসলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়।  এটাও একটি ভুল প্রচলন। শরিয়তের মূলনীতি হলো ,শরীর থেকে কোনো কিছু বের হলে অযু করতে হয় এবং শরীরের স্বাভাবিক রাস্তা দিয়ে পেটে কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা নষ্ট হয়। তবে বীর্যপাতের প্রসঙ্গটি ভিন্ন।-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/২৬১)

তাই রক্ত, পূঁজ, পানি বের হলে বা রক্ত দানে অযু নষ্ট হবে, রোযা নষ্ট হবে না। অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (এমনকি মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙবে না।-জামে তিরমিযী ১/১৫৩,

ইনজিক্শনে অযু নষ্ট হয় না এবং স্বাভাবিক রাস্তা দিয়ে পেটে কোন কিছু প্রবেশ না হওয়ার কারণে রোযারও সমস্যা নেই ।

অনেক কে দেখা যায়, রোযা স্মরণ না থাকায় ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেলে এবং পরে রোযাটা নষ্ট করে । এমনটা কখনো করবেন না। এতে কোন সমস্যা নেই। এমনকি কেউ যদি ভুলে পেট ভরেও খায়। তবে রোযা স্মরণ হওয়ামাত্রই পানাহার ছেড়ে দিতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে-

من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه، فإنما أطعمه الله وسقاه

যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।-সহীহ মুসলিম ১/২০২
আল্লাহ তাআলা কবুল করুন ।

আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।

প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে

 

রোযা এবং প্রচলিত ভুল সংশোধন 

মুগ্ধতা.কম

২১ এপ্রিল, ২০২০ , ৫:৪১ অপরাহ্ণ

ইসরা [১] মি’রাজে কীভাবে সালাত ফরয হলো?

ইব্‌ন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন : আমার কাছে আবূ সুফিয়ান ইবনে হারব (রাঃ) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হ’ল। অতঃপর জিব্‌রীল (‘আঃ) অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর হিকমাত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম জিব্‌রীল (‘আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। আসমানের রক্ষক বললেনঃ কে আপনি? জিব্‌রীল (‘আঃ) বললেনঃ আমি জিব্‌রীল (‘আঃ)। (আকাশের রক্ষক) বললেনঃ আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? জিব্‌রীল বললেনঃ হাঁ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রয়েছেন। অতঃপর রক্ষক বললেনঃ তাকে কি ডাকা হয়েছে? জিব্‌রীল বললেনঃ হাঁ। অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমানকে খুলে দেয়া হল আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখি সেখানে এমন এক ব্যক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন যার ডান পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে আর বাম পাশে রয়েছে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ স্বাগতম ওহে সৎ নবী ও সৎ সন্তান। আমি (রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) জিব্‌রীল (‘আঃ)-কে বললামঃ কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেনঃ ইনি হচ্ছেন আদম (‘আঃ)। আর তাঁর ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রূহ। তার মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর জিব্‌রীল (‘আঃ) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। অতঃপর তার রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেয়া হল। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেন যে, তিনি [রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আসমানসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইব্‌রাহীম (‘আলাইহিমুস সালাম)-কে পান। কিন্তু আবূ যার (রাঃ) তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আদম (‘আঃ)-কে দুনিয়ার আকাশে এবং ইব্‌রাহীম (‘আঃ)-কে ষষ্ঠ আসমানে পান।

আনাস (রাঃ) বলেনঃ জিব্‌রীল (‘আঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নিয়ে ইদরীস (‘আঃ) নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তখন ইদরীস (‘আঃ) বলেনঃ মারহাবা ওহে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবী। আমি (রসূলুল্লাহ্‌) বললামঃ ইনি কে? জিব্‌রীল বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ইদরীস (‘আঃ)। অতঃপর আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিব্‌রীল বললেনঃ ইনি মূসা (‘আঃ)। অতঃপর আমি ‘ঈসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করাকালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিব্‌রীল বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ‘ঈসা (‘আঃ)। অতঃপর আমি ইব্‌রাহীম (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি বললামঃ ইনি কে? জিব্‌রীল (‘আঃ) বললেনঃ ইনি হচ্ছেন ইব্‌রাহীম (‘আঃ)। ইব্‌নু শিহাব বলেনঃ ইব্‌নু হায্‌ম (রহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ইব্‌নু ‘আব্বাস ও আবূ হাব্বা আল-আনসারী উভয়ে বলতেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হই যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই। ইব্‌নু হায্‌ম ও আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মাতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দেন। অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন মূসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করি তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা আপনার উম্মাতের উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা পালন করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মাত এটিও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেয়া হল। আবারো মূসা (‘আঃ)-এর নিকট গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোন রদবদল হয় না। আমি পুনরায় মূসা (‘আঃ)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে আবারও বললেনঃ আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। আমি বললামঃ পুনরায় আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিব্‌রীল (‘আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা [১] পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখতে পেলাম যে, তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছে কস্তুরী।

(১৬৩৬, ৩৩৪২; মুসলিম ১/৭৪, হাঃ ১৬৩, আহমাদ ২১১৯৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২)

পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ

মুগ্ধতা.কম

২২ মার্চ, ২০২০ , ৫:২১ অপরাহ্ণ

পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ আজ

পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ বা শব-ই মিরাজ আজ। ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ’ বা মেরাজের রাতে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর ইচ্ছায় ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায , মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক ( ফরজ ) করা হয় এবং এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ(সা:)।

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মুহাম্মাদের (সা:) নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহ’র সাক্ষাৎ লাভ করেন।

এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।

কুরআন শরিফের সুরা বনি ইসরাঈল এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে : “পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [ কুরআন ১৭:১ ] শব্দগত ব্যুৎপত্তি যদিও ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরআন -এ “মেরাজ” শব্দটির উল্লেখ দেখা যায় না, কিন্তু যখন অবিশ্বাসীগণ মুহাম্মদের নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণকরত প্রমাণ আনতে বলে, তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল তারকা ফিস সামা-য়ী : স্বর্গে আরোহণ করো।

কেউ কেউ বলে, তারকা মানে আরোহণ করো, আর শব্দটি রাকিয়া থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “সে আরোহণ করেছিল”। আরবি মেরাজ শব্দটি আরাজা থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। তারা আরও বলে এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো রাকিয়া দ্বারা দৈহিক আরোহণ বোঝায়, আর আরাজা দ্বারা আত্মিক আরোহণ বোঝায়। তাই তাদের মতে মিরাজ হল “আত্মিক আরোহণ”।

কিন্তু আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের এটিই বিশ্বাস করতেন। বিবরণ মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ-এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী প্রাপ্তির দশম বছরে। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিল: ১. আল-ইসরা বা জেরুজালেমে নৈশ-ভ্রমণ ২. মেরাজ বা ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় : নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস; ২৭ রজব তারিখে মুহাম্মাদ (স.), আবু তালিবের মেয়ে হিন্দার (উম্মে হানী) বাড়িতে ছিলেন। আবার অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ (স.) কাবা শরিফে ঘুমান, এবং তিনি কাবা’র ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না ( হাতিম )।

হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ রাতে, মুহাম্মদ (সা:), রাতের প্রার্থনা সেরে ঘুমাতে যান। খুব ভোরে মুহাম্মদ(সা:) উঠে সবাইকে জাগালেন এবং নামাজ আদায় করলেন। হিন্দাও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মুহাম্মদ(সা.) জানালেন, “ ও উম্মেহানি (হিন্দার ডাক নাম), এই ঘরে আমি তোমাদের সাথে প্রার্থনা করেছি। যেমন তোমরা দেখেছ। তারপর আমি পবিত্র স্থানে গিয়েছি এবং সেখানে প্রার্থনা সেরেছি। এবং তারপর তোমাদের সাথে ভোরের প্রার্থনা সারলাম, যেমন তোমরা দেখছা।”

আনাছ (রা.) মালেক ইবনে সা’সাআ’হ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, নবীকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) যেই রাত্রে আল্লাহ তাআলা পরিভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলেছেন, যখন আমি কা’বা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপনীত হলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) আমার নিকট আসলেন (এবং আমাকে নিকটবর্তী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়ে আসলেন)। অতঃপর আমার বক্ষে ঊধর্ব সীমা থেকে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরে ফেললেন এবং আমার হৃৎপিণ্ড বা কল্বটাকে বের করলেন। অতঃপর একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হল, যা পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞানবর্ধক বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল ।

আমার কল্বটাকে ( জমজমের পানিতে) ধৌত করে তার ভিতরে ঐ বস্তু ভরে দেয়া হল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রেখে আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করে দেয়া হল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হতে একটু ছোট, গাধা হতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হল তার নাম “বোরাক”, যার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে সওয়ার করা হল।

ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়ে জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। ভিতর হতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হল, জিবরাইল স্বীয় পরিচয় প্রদান করলেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিবরাইল বললেন, মুহাম্মদ (সা.) আছেন। বলা হল, (তাঁকে নিয়ে আসার জন্যই তো আপনাকে) তাঁর নিকট পাঠান হয়েছিল? জিবরাইল বললেন হাঁ।

তারপর আমাদের প্রতি মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। গেটের ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে আদম (আ.)-কে দেখতে পেলাম । জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় করে বললেন, তিনি আপনার আদি পিতা আদম (আ.), তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। আমার সালামের উত্তরদানে আমাকে “সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য নবী” আখ্যায়িত করলেন এবং খোশ আমদেদ জানালেন ।

অতপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হল এবং শুভেচ্ছা মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে তথায় ইয়াহইয়া (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম; তাঁদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন। জিবরাইল আমাকে তাঁদের পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন, আমি তাঁদেরকে সালাম করলাম। তাঁরা আমার সালামের উত্তর প্রদান করত “সুযোগ্য ভ্রাতা সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন। অতঃপর জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের

আসমানের দ্বারে পৌঁছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। তথায়ও পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল। ভিতরে প্রবেশ করে ইউসুফ (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম ।

জিবরাইল (আ.) আমাকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন; আমি তাঁকে সালাম করলাম তিনি সালামের উত্তর দান করত আমাকে “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে মোবারকবাদ জানালেন । অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাইল চতুর্থ আসমানের নিকটে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানিয়ে দরজা খোলা হল । ভিতরে প্রবেশ করে আমরা তথায় ইদ্রিস (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম। জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় করিয়ে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম।

তিনি সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মারহাবা জানালেন। অতঃপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে পৌঁছিলেন এবং দরজা খুলতে বললেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর শুভেচ্ছ ও মোবারকবাদ দানের সাথে দরজা খোলা হল। আমি ভিতরে পৌঁছিয়া হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম জিবরাইল আমাকে তাঁর পরিচয় দানে সালাম করতে বললেন। আমি সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে খোশ আমদেদ জানালেন।

তারপর জিবরাইল আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দরজায় পৌঁছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন । এস্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল স্বীয় পরিচয় দান করলেন, অতঃপর সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাস করা হল। তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সা.); বলা হল, তাঁকে তো নিয়ে আসার জন্য আপনাকে পাঠান হয়েছিল? জিব্রাঈল বললেন, হাঁ। তৎক্ষণাৎ শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে দরজা খোলা হল। তথায় প্রবেশ করে মুসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেলাম । জিবরাইল(আ:) আমাকে তাঁর পরিচয় জ্ঞাত করে সালাম করতে বললেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম।

তিনি সালামের উত্তর প্রদান করলেন এবং “সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবী” বলে আমাকে মোবারকবাদ জানালেন। যখন আমি এই এলাকা ত্যাগ করে যেতে লাগলাম তখন মুসা (আ.) কাঁদছিলেন । তাঁকে কাঁদবার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি কাঁদছি এই কারণে যে, আমার উম্মতে বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর উম্মতের বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা অপেক্ষা কম হবে অথচ তিনি বয়সের দিক দিয়ে যুবক এবং দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছেন আমার পরে। তারপর জিবরাইল(আ:) আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের প্রতি আরোহণ করলেন এবং তার দ্বারে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন । এস্থানেও পূর্বের ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হল এবং দরজা খুলে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান হল।

আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। তথায় ইবরাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ হল। জিবরাইল আমাকে বললেন, তিনি আপনার (বংশের আদি) পিতা, তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং “সুযোগ্য পুত্র, সুযোগ্য নবী” বলে মারহাবা ও মোবারকবাদ জানালেন । অতঃপর আমি সিদরাতুল মুনতাহার নিকট উপনীত হলাম। (তা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ) তার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারি (বড় বড়) মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতীর কানের ন্যায়। জিবরাইল আমাকে বললেন, এই বৃক্ষটির নাম “ সিদরাতুল মুনতাহা”। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখতে পেলাম– দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে।

নদীগুলির নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ভিতরের দুইটি বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান দুইটি হল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত ( নদী বা তাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে “ বায়তুল মা’মুর ” পরিদর্শন করান হল। সেখানে প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ প্রাপ্ত হয় না)। অতঃপর (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করে দেখাইবার উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য) আমার সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হল।

একটিতে ছিল সুরা বা মদ,অপরটিতে ছিল দুগ্ধ, আরেকটিতে মধু আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল(আ:) বললেন, দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করে এটাই প্রমাণ করেছেন যে,) আপনি সত্যও স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং আপনার উসিলায় আপনার উম্মতও তার উপর থাকবে।

তারপর আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হল। আমি ফেরার পথে মুসা (আ.) এর নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বিশেষ আদেশ কী লাভ করেছেন ? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মুসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নমায আদায় করে যাইতে সক্ষম হবেনা।

আমি, সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করেছি; সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত (স.) বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে ফিরে গেলাম। পরওয়ারদেগার (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করে)দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার নিকট পৌছালাম, তিনি পূর্বের ন্যায় পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি,পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এইবারও (ঐরূপ) দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌঁছালে তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন।

আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত কম করে দিলেন । এইবারও মূসা (আ:)-র নিকট পৌঁছালে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে গেলাম, এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল । এইবারও মূসার নিকট পৌঁছালে পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি আদেশ লাভ করেছেন? আমি বললাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। মূসা বললেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করতে পারবে না।

আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি এবং বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক পরীক্ষা করেছি। আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরে আরও কম করার আবেদন জানান। হযরত(স.) বলেন, আমি মুসাকে বললাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছি; এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়, আর যাব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট থাকলাম এবং তা বরণ করে নিলাম।

হযরত বলেন, অতপর যখন আমি ফেরার পথে অগ্রসর হলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ হতে একটি ঘোষণা জারি করা হল-(বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়ে) “আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম, (আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ ও কম করে দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত থাকল, কিন্তু সওয়াবের দিক দিয়ে পাঁচই পঞ্চাশ গণ্য হবে।)

প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান করব।” মেরাজের ঘটনা প্রকাশ ফলাফল মেরাজের ফলে মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচবার পাঁচটি নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা ফরজ হয়। [৪] ইব্রাহিমীয় মেরাজ ইসলাম ধর্মমতে, ঐশ্বিক সান্নিধ্যের ঘটনা ঘটেছিল ইব্রাহিম (আ:) এবং মুসার (আ:) ক্ষেত্রেও। ভিন্ন মত কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, এটা দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ— মুহাম্মদের স্ত্রী আয়েশা (রা:)এবং আবু সুফিয়ান (রা:)এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলা হয়।

অনেক আলেমগণের মতে, হযরত আয়েশা রা.-এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা সত্য নয়। বর্ণনাটির সনদ অনির্ভরযোগ্য। যদিও মেরাজের ঘটনা ইসলামে যথেষ্ট অর্থবহ তবুও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উৎযাপনের নিয়মকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ গ্রহণ করেন না; কেননা ঠিক কত তারিখে মেরাজ ঘটেছিল তার কোনো নির্ধারিত বিবরণ পাওয়া যায় না, এ ব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধুমাত্র এতটুকু সঠিক করে বলা যায় যে, নবুয়্যতের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

 

পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ