কবিতা

কবিতা

মুগ্ধতা.কম

২৫ মে, ২০২৩ , ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

আমার মা

মা আমার মা,

যার সমতুল্য পৃথিবীতে কোনো কিছুই না।

তিনি ডাকছেন তো-

কণ্ঠস্বরের জাদুতে মুগ্ধ আমি,

সাড়া দিতে ব্যতিব্যস্ত।।

আদর করছেন তো-

মনে হয় যেন ভালোবাসা বৃষ্টি হয়ে ঝরছে।

তার অভিমানে যেন-

মনের আকাশে মেঘ জমে,

পৃথিবীর সব আলো ম্লান হয়ে আসে।

শাসন করছেন তো-

অগ্নিঝরা কণ্ঠ তার

বিপদ অথবা বিপথ থেকে উদ্ধারে তৎপর।।

তিনি তাকালে যেন-

শান্তিধারা বর্ষিত হয়,

চোখের সে দৃষ্টিতে।। 

মা নেই – মন মানে না

মনে হয় আছেন তিনি

ভালোবাসার অক্সিজেন হয়ে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে।।

হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার নির্যাস যত,

সবই তার জন্য ;

তাও মন ভরে না,

প্রাণের চেয়ে প্রিয়

মা আমার মা-

সাধ মেটে না, মেটে না পিপাসা

কতটা তৃষ্ণার্ত আমি, 

জানেন সৃষ্টিকর্তা।। 

আমার মা - ডা. শাহীন আরা বেগম

ব্রজ গোপাল রায়

১১ মে, ২০২৩ , ১০:৪০ অপরাহ্ণ

ব্রজ গোপাল রায় এর কবিতাগুলো

মন নৈঝতে এক খণ্ড মেঘ

তুমি আমার মন নৈঝতে

এক খণ্ড মেঘ

ঘুর্ণি তোলা ঝড়

তুমি আমার বুকের ভিতর

উড়নি হাওয়া

ঝড় ভাঙা ঘর। 

তবুও আমি এই সকালে

সমুজ্জ্বলে

ভাবছি বসে তোমায়

তুমি শুধু তোমার সুখে

তোমার বুকে

মগ্ন আপন খেলায়। 

ভগ্ন হৃদয় এই যে আমি

আমার যতো

ভালোবাসার গান

এক খণ্ড মেঘ সেই তুমি 

তোমার মতো

কাড়ো সুখের ঘ্রাণ। 

কি সুখ পাও এই অসুখে

স্বপ্ন টিয়ে

ভেঙে মনের ঘর

মন নৈঝতে এক খণ্ড মেঘ

নিছক আবেগ

ভীষণ স্বার্থপর।

চন্দ্রকাব্য

চাঁদকে নিয়ে 

চন্দ্রকাব্য লিখবো না আর

ও বড় নষ্ট ভীষণ। 

অবাল-বৃদ্ধ-যুবা-শিশু

মাথাপিছু সবার মন নিয়ে লুকোচুরি খেলে

হৃদয় কাড়ে

দৃষ্টিচমক পলকে

প্রলোভনের টোপ ফেলে 

লোভ দেখায়-পরকিয়ায়।

এ ছাড়া আর কি আছে ওর

আপন সৌরভ? 

মেকি জোছনার বিভাহীন বৈভবে

যা কিছু চমৎকার 

নাবালক বালক যুবকের দল

বুঝে গেছে সব

ওরা এখন জোছনায় খেলে না

ভালোবাসা

নিয়নিক আলোয় 

ভালোবাসা কেনে নিলাম বাজারে।

একদা যতো গল্প-কবিতা-ছড়ার কারিগর  

চাঁদ উপমায় চন্দ্রকাব্য লিখেছেন বিস্তর

সে সব এখন ধুসর স্মৃতির ভাগারে শুধুই আবর্জনা।

শান্তির সৈনিক

তুমি যে বলো

আমিও শান্তির সৈনিক 

তবে বলো তো

শান্তির পথে হাঁটতে গিয়ে 

এ পথে ক’ কদম ফেলেছো তুমি 

কুটিল কৌশল ছাড়া।

জন্ম থেকে আজোবধি 

অনেক খেলেছো বিষাক্ত ছোবলের খেল

অনেক পুড়েছো তুমি 

খেটে খাওয়া মানুষের ঘামতেল

অবশেষে কাজের কাজ যা হলো 

অষ্টরম্ভায় তুমি এখন

খুঁজছো রথের হাউ।

ও হবে নাকো

জল গড়িয়েছে অনেক 

বেলা বেড়েছে বহু

তোমার কুহু ডাকের মায়াবী কান্নায়

কেউ আর ভুলবে না কভু।

কে তুমি কাঞ্চি কিশোরী  

না ফোটা ফুলের কলিতে তুমি তো 

ভ্রমর বিভোর সুবাস

বেতাল হাওয়া

মাত করে রেখেছো চারপাশ।

পথ ও পথচারী থমকে দাঁড়ায় 

হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে 

তোমার মুখোর মৌসুম 

অকাল বসন্তের উদগ্র নিঃশ্বাস।

কে তুমি কাঞ্চি কিশোরী 

বাশরী কানাই

সুরে ও সুবাসে মুগ্ধ মাতাল?

আমি পলকবিহীন চোখে অপলক 

তোমাতেই চেয়ে থাকি

বাক হারা নির্বাক বুকে আমি

প্রণয় পাগল বালক

হৃদয় ব্যাকুল বিবাগী 

ছুটি তোমাতেই।

এ বৈশাখে

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক সৃষ্টি সুখে 

সবার বুকে বুকে

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক মাঠে ঘাটে

বৃক্ষ সবুজ শাখে।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক চৈত্র পোড়া 

পথের ধুলায়

সবুজ তৃণ লতায়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক জলে-স্থলে

বাড়ির উঠোন দাওয়ায়।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক মুশল ধারে

সবার চাওয়া-পাওয়ায়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক বিশ্বজুড়ে 

শান্তি নামের হাওয়ায়।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

থামুক অকাল ঝড়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

নামুক, শান্তি পরস্পর।

বৈশাখ আমার চিরচেনা 

চির আপন জন

এ বৈশাখেই বাঙালিরা

সবাই সবার আপন।

বৈশাখ আমার নতুন দিনের

নতুন ভোর

একটি নতুন সকাল

বৈশাখ আমার আশার বুকে

ভালোবাসার

সুখ উথাল-পাতাল। 

আবহমান এই বাংলার

বাঙালিদের 

এ বৈশাখ চেনা

এ বৈশাখেই বাঙালিরা

মিলায় তাদের

সকল লেনা-দেনা।

ব্রজ গোপাল রায় এর কবিতাগুলো-1

মুগ্ধতা.কম

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:৫০ অপরাহ্ণ

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

ব্যবচ্ছেদ

আপনাকে একটু  দুঃখ দেখালে আপনি নির্দ্বিধায়  ঢুকে যাবেন আমার অন্দরমহলে

যেন আমার অন্দরমহলের সদর দরজায় নেই কোনো প্রহরী

দরজা খোলা

প্রবেশাধিকার রয়েছে সকলের

তারপর

তারপর আপনি ব্যবচ্ছেদ করবেন আমার সংসার

আমার যাপিত জীবন

আমার দাম্পত্য 

খুঁটে খুঁটে ব্যবচ্ছেদ করবেন সংসারের খুঁটিনাটি 

আমার চাল ডাল নুন আর তরকারির নিত্য বাজারদর

আপনি বড় বড় অক্ষরে লিখে ঘোষণা করবেন

এই মেয়েটি অসুখী

দাম্পত্য কলহে মেয়েটির জীবন অতিষ্ঠ 

তারপর 

তারপর আপনি একটা বাঁকা হাসিসমেত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবেন-

‘সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে’

হায়, আমি তখন গুণহীন মানহীন রমন অযোগ্য এক রমনী

আমার চোখের ভাষা থেকে আপনি নোনাজলের গল্প বুনবেন

আমার বিষন্ন মুখ দেখে লিখবেন ঘোর অমাবস্যার গল্প

আমার দীর্ঘশ্বাস শুনে গাঢ় শীতের

কোনো কঙ্কালসার আমলকি বন থেকে তুলে আনবেন পাতা ঝরার গল্প

অথচ

আমি যদি আমার এক টুকরো আনন্দ দেখাই

আপনি নিশ্চিত কলম থামিয়ে দেবেন

আপনার বোধ হয়ে পড়বে দ্বিধান্বিত 

আপনি কূল খুঁজে পাবেন না তার

কী করে পাবেন

আমি তো আনন্দ কুড়োই সামান্য একটা ফুলের শরীর থেকে

পাখিদের ভাষা থেকে

নদীর কলতান থেকে তুলে আনি আনন্দ 

একটা প্রজাপতির নাচন থেকে তুলে আনি আনন্দ 

শনশন করে বয়ে যাওয়া বাতাস থেকে আমি জোগাড় করি তুমুল আনন্দ 

এত ছোট ছোট মুহূর্ত থেকে আমি আনন্দ কুড়াই 

আপনি তল খুঁজে পাবেন না তার

দুঃখকে ব্যবচ্ছেদ করে জানা যায় অনেককিছু 

আনন্দকে ব্যবচ্ছেদ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়…

_____________________________

আশাভঙ্গ

ঘাস হয়ে জন্মাবো জেনে 

কি আনন্দ পেয়েছিল সে

পায়ে পায়ে দলে যাবে বলে

আহা!

আর এদিকে অপরুপ ঘাসফুল হয়ে ফুটে আছি

তার চোখে পড়ার আগে

_______________________________

ভিনদেশী দুই পাখি

ধরো, আমাদের কোনো পরিচয় নেই

আমরা দু’জন অনেক দূরের কেউ

কোনদিন কেউ শ্বাস ছুঁইনি কারোর

চোখের ভেতর কেউ পুষিনি কারোর অভিমান

আঙুল ভাঁজে কেউ লিখিনি অন্যকারোর নাম

কেউ চিনি না কারোর পায়ের আওয়াজ

পাঁজর খুলে কেউ দেখিনি দুঃখ সেথায় কেমন

কেউ জানি না হস্তরেখায় কার কী লেখা আছে!

ঠিক দু’জনের ভাগ্যরেখা কোন দিকে যে গেছে

তবু চলো একটা সকাল আমরা দু’জন একই সাথে হাঁটি

হাঁটতে হাঁটতে সকাল গড়াক, দুপুর গড়াক

গড়িয়ে বিকেল সন্ধ্যা নামুক

সন্ধ্যাটুকু মিলিয়ে গেলে রাতের কাছে থামি

আমরা দু’জন আকাশঢাকা তারার সাথে জাগি

তারার কাছে গড়িয়ে আসা সকাল নিয়ে বলি

দুপুর নিয়ে বলি,

মিলিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নিয়ে বলি

তারার কাছে গোপন ব্যথার সবক’টা দোর খুলি

জানুক তারা আমরা নাহয় খুব অচেনা, ভিনদেশী দুই পাখি

আমরা তবু আজ এখানে একইসাথে আছি

এই এতটা এসেছি হেঁটে সঙ্গে করে বিশ্বাসী দুই আঁখি…

____________________________

একটুখানি বদলে যেতে ইচ্ছে করে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে গুছিয়ে নিতে খুব নিজেকে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় 

 যদি এই আমিটা বিপুলরকম  বদলে যাই

যদি হাসতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই

কথা মাপি ফিতের দাগে

পাঁজর ভাঙার শব্দ লুকোই অট্টহাসে

যদি কারুর দুঃখ ছুঁতে আঙুল বাধে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় এসব নিয়ে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

খুব সামান্যই বদলে যেতে ইচ্ছে করে

এই যে ধরুন

ইচ্ছে করে অগোছালো চুলগুলোকে গুছিয়ে রাখি চুলের ফিতেয়

ভয় হয় 

চুলের ফাঁকে বুলিয়ে দেয়া আঙুলগুলো

এবার যদি হারিয়ে ফেলি 

খুব ভয় হয়

ইচ্ছে করে একটুখানি বদলে নিতে খুব নিজেকে

ইচ্ছে করে  ঘর সংসার গুছিয়ে রাখি

কিন্তু যদি লকারভরে গুছিয়ে ফেলি 

মান অভিমান, খুনসুটি আর অট্টহাসি…

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

আবু হানিফ জাকারিয়া

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১০:১১ অপরাহ্ণ

বিভ্রান্ত পথিক

ক্লান্তিহীন চলছি পথ থেকে পথে,

ছুটছি প্রান্তর থেকে প্রান্তর।

খুঁজে পাইনি আজো গন্তব্য।

নগর থেকে নগর, স্টেশন থেকে স্টেশন,

পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল, নদী ও সমুদ্র,

কোন বন্দর ঘুরে আবার এক বন্দর,

তবুও কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি আজো।

অলি-গলি, সড়ক-মহাসড়ক,লেন বাইলেন

কত নাম কত আকৃতি কত বিচিত্র রকমফের,

কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা; আমি চলছি ক্লান্তিহীন।

আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি, লেলিহান শিখা

জ্বলছে অবিরাম, কিন্তু সারাক্ষণ জ্বলে না,

নিভে একসময়; নেভে না আমার মনের আগুন।

রংবেরঙ এর মানুষ দেখি, দেখি নানা রকমের

খেলা খেলে চলছে যারা এই সময়ের খেলারাম।

বিভ্রান্তি ভর করে আমার মগজ বিকল করে দেয়, আমি ভুলে যাই আমার গন্তব্য, আমার শেষ ঠিকানা। আমি লোভী হয়ে যাই, থেমে যাই;

খেলা দেখে আনন্দ পাই, অপার আনন্দ আমার।

গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনা আমি বিভ্রান্ত পথিক।

বিভ্রান্ত পথিক