ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১

কবিতা - ভূ-খণ্ড

টুকরো টুকরো করো ভূখন্ড,

পাথর ছুঁড়ে বুকের পাটাতন শক্ত হতে দাও,

আলো ফোটার আগেই ঘুমিয়ে গেছে যে শিশু

সেখানে রেখে এসো মানবিক সাইরেন,

নিশাচর কোনো পথিক থেমে গেলে,

বেজে উঠুক শব্দ উল্লাস,

জেগে উঠুক আমাদের পাঠশালায় অ,আ, ক,খ।

এখন অনেক বাকি জেরুজালেম  থেকে মহানন্দা,

আমাদের ঠিকানা চেয়ে লজ্জা দেবেন না,

মৃত্যুই এখন ঠিকানা-

কবিতা - আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও বোমা হামলা বর্বর আক্রমণ

রক্তাক্ত আল আকসা গাজা

টুকরো টুকরো লাশ ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো

বুলেট বিদ্ধ অসহায় শিশুদের কথা বলি

বিধ্বস্ত ঘর জুড়ে ছড়িয়ে খাদ্যকণা, খেলনা পুতুল

আর নষ্ট হওয়া শিশুর দুধের কথা বলি।

এর আগে হামলা কি হয়নি কখনও?

আমরা কি ভুলে গেছি শাবরা আর শাতিলার কথা?

ভুলে গেছি হাসিমুখ অসম সাহসী নেতা ইয়াসির আরাফাত?

কথায় কথায় গুলি অবৈধ বসতি আর কী জঘন্য আগ্রাসন!

একদিকে সমরাস্ত্র আধুনিক

অন্যদিকে খালি হাত বড়জোর নুড়ি ও পাথর!

বছর বছর এই দৃশ্য চোখ বুঁজে দেখছে দুনিয়া

কোথায় জাতিসংঘ, বাঘা বাঘা মোড়লেরা সব?

আহা! বিশ্ব ব্যবস্থা

গণতন্ত্র, মানবাধিকার!

নির্লজ্জ্ব

কি করে তোমরা পারো করতে বড়াই সভ্যতার?

 

আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও বোমা হামলা বর্বর আক্রমণ

বলি

ওহে জাতিসংঘ

 

তুমি আর কবে হবে সামান্য মানবিক!

কবিতা - তোমার চোখের ভাষা

তোমার চোখের ভাষা হয়ে উঠেছে ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠ কবিতা;

সেই কবিতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে যুদ্ধ মৃত্যু লাশের নিষ্ঠুরতম সিদ্ধতা;

নিষ্পাপ চোখের পলকে রক্ত খচিত স্কেচ আঁকা কেন!

আমি আর কি লিখবো বলো!

তুমি হয়ে উঠেছো ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠ কবিতা,

বিপন্নতার অবিচ্ছেদ্য আখ্যান;

তোমার হৃদয় প্রবন্ধ পাঠে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেছি;

আগুনের লেলিহান আঁচড় চোখে মুখে,

হিমালয় ভেঙে পড়ে কুর্নিশ করছনা কেনো!

এ কেমন দেহসজ্জা এঁকে দিয়েছে মারণাস্ত্রের হিংস্র আততায়ী;

বুঝলো না অবুঝ সত্তার নির্জন আহাজারি!

তোমার অমন চাহনির স্রোতে পৃথিবীর সকল অন্ধকার রক্ত রাঙা রঙে বর্নীল হয়ে উঠেছে;

যে চোখ ওই অবুঝ চোখকে উদ্দেশ্য করে তাকিয়ে থাকবে সে চোখ হয়ে উঠবে বর্ষার অপ্রতিরোধ্য প্লাবন;

ওই অপোক্ত হৃদয়ের নির্জন ব্যথাতাড়িত শ্লোগান যাকে ছুঁয়ে দিবেনা সে হয়তো কণ্টক নিবন্ধিত পাথরপৃষ্ঠ;

কবিতা - অত্যাচারের অবসান

কি হচ্ছে?

আশ্রয়প্রার্থী রা নিজেদেরই মানচিত্র কেড়ে নিচ্ছে।

 

জ্বালিয়ে দিচ্ছে!

মসজিদ,মানুষ,শহর

তারা বর্বরতার শিখরে উঠেছে।

 

কতজনে বেঁচেছে? কপাল করে

রক্তে ধুয়ে গেছে রাজপথ

শিশুদেরও তারা মেরেছে।

 

যদি পাল্টা জবাব আসে?

আছে কি প্রতিরোধ?

কোনো কিছুই কাজে আসবে না সেদিন!

নির্যাতিত হিংস্র পশুর ন্যায় মানুষ কে

আটকাতে পারবেনা কোনোদিন!

 

যে হাসি আজ মুখে এনেছো,

মৃত্যুর সময় এলে রাখতে পারবে তো?

 

খুব কি দেরি সে সময়ের যেদিন

ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে।

জগতের যত অন্যায় ধ্বংস হয়ে

মানুষ ফিরে পাবে ন্যায় বিচার,শান্তি

অবসান হবে অরাজকতার ক্লান্তি।

 

মুছে যাবে অত্যাচার,

দেখে নিও দেরি নেই আর!

কবিতা - কাঁদে ফিলিস্তিন

এক হও মুসলিম এক হও

ফিলিস্তিনে কাঁদে আমার ভাই বোন,

নিজেদের পতাকা বাঁচাতে নিজভূমে

মার খায় তারা করে রক্ত ক্ষরণ।

 

যুগের পর যুগ শতাব্দী ধরে

পশ্চিম তীর গাযা হয় খুনে লাল,

আমাদের পবিত্র ভূমি আল আকসা

ইসরায়েল ইহুদিরা করে বেদখল।

 

জুলুমের সীমা তারা করেছে পার

সেদেশের আকাশে মজলুমের আর্তনাত,

স্বার্থবাদী জাতিসংঘ কোথায় আজ

বাড়ায় না কেন সাহায্যের কোন হাত।

 

মরে যায় বাবা-মা, সন্তান ভাই-বোন

ফিলিস্তিনের বাতাসে লাশের গন্ধ,

মুসলিম হয়ে আজ না লড়লে তাদের দুখে

তাদের অভিশাপ করবে আমাদের ধ্বংস।

 

কাঁদে ফিলিস্তিন বুক ভরা ব্যথা নিয়ে

চাই জালিমের থেকে চির মুক্তি,

আয় ছুটে আয় বিশ্ব মুসলিম যত

চেপে ধরি মানুষরূপী শয়তানের টুটি।

কবিতা - হিসেব হবে সবের 

সারা বিশ্বে মুসলিম নিধন, বাজছে উৎসবের ঢাক,

কোলের সন্তান হারাচ্ছে মা উইঘুরে, বিশ্ব হতবাক!

নাসারাদের চক্রান্তের শিকার, বৃদ্ধ-নারী-শিশুও,

তাদের কর্মে লজ্জিত যেন, খোদ ক্রাইস্ট যিশুও!

আন্তর্জাতিক আদালত নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয় তাদের আইন,

বিশ্ব মানবতা ডুকরে কাঁদে, ধ্বংসস্তূপ প্যালেস্টাইন।

 

কসম আকসার রবের,

যাররাহ পরিমাণ ছাড় পাবে না, হিসেব হবে সবের।

 

ওঠো হে ঘুমন্ত মুসলমান, শোন ওহে পাতিয়া কান,

মুসলিমের রক্তে বন্যা বইছে, প্লাবিত আজ আরাকান।

ভারতে পুড়ছে মুসলিম, কাশ্মিরের ঘরে ঘরে আগুন,

জালেমরা হাসছে অট্টহাসিতে, লেগেছে জুলমের ফাগুন।

মুসলিমেরা সজাগ হও, চক্ষু মেলো, দেখো ফিরিয়া,

অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাচ্ছে দিন, ধুঁকছে সিরিয়া।

 

কসম সালাহর রবের,

যতটা বিন্দু ঝরেছে তাজা রক্ত, হিসেব হবে সবের।

 

ভাবছিস তোরা অসীম ক্ষমতাধর, ফুরোবে না কভু রাত,

যত দিন যায়, প্রসারিত হয় তোদের, নির্যাতনের হাত।

জেনে রাখ তবে, রাতের গভীরতা নিকটে আনে ভোর,

রক্তের নেশায় মত্ত হয়ে আজ, খুঁড়ছিস নিজেদের গোর!

সোনালী সকালে উঠবে যখন, বিজয়ের রক্তিম রবি,

সেদিন কোথাও রইবে না আর, জুলুমের প্রতিচ্ছবি।

 

কসম কাবার রবের,

কতটা বুলেট করেছিস খরচ, হিসেব হবে সবের।

কবিতা - নির্বাসিত মানবতা

হৃদয়ঙ্গমে দাহন করেছি বিচ্ছেদের মানবাধিকার,

প্রলয়-ঝঞ্ঝাটে গ্রাস করেছে মুমিনের ধরণীর তীর্থে!

বাহু-বলয়ে উদ্দলিত হয়েছে নগ্ন বেওয়ারিশরা;

অভেদ্য কাপট্যে বিভোরতায় ধার্মিকের কর্ণধারের!অন্তরালে বিষাদের বক্ষে সহস্রাব্দ  মৌনতার বিভৎস ।

নৈঃশব্দের আঁধারে প্রার্থনায় আধিপত্যের আলয়ে;

হয়তবা,রহমের রশ্মিতে ফের প্রাণোচ্ছালতায় পূণ্যভূমি!!

ধিক্কারে কাটিবে নির্বাসিত মানবতার মসনদ;

নিপাত যাক জায়ান্টবাদীর বিভৎসতার চারণভূমি!

ফের মুমিনের প্রাণোচ্ছ্বাসের মেলা বসিবে ধরণীতলে!

কবিতা - মনুষ্যত্ব খুন

পৃথিবীর দুর্দিনে আজ

ইসলামের দুঃখ সময়ে!

 

আমরা যদি আজ মানুষ হয়েও

প্রতিবাদের কন্ঠ,হাত না তুলি

তবে ভিরু কাপরুষের খাতায়

নাম লিখিয়ে মনুষ্যত্বকে খুন করলাম।

ফিলিস্তিন সংখ্যা

সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি মুগ্ধতা ডট কমের বিশেষ ‘ফিলিস্তিন সংখ্যা’য়। আমাদের জানামতে বাংলা ভাষায় এর আগে ফিলিস্তিন সংক্রান্ত নানা বিষয় একত্রিত করে এ ধরণের কোনো বিশেষ সংখ্যা হয়নি। আমাদের এই চেষ্টার মূল কারণ, ফিলিস্তিন ও ইজরায়েল সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য একত্রিত করে রাখা। দ্বিতীয় কারণ, ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাভাষীদের ভালোবাসা প্রকাশ করা। এছাড়া ইজরায়েল সম্পর্কিত অনেক পোস্ট ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলে বলে এ ধরণের অনেক দরকারি লেখা ওয়েব সাইটে আপলোড করে রাখা প্রয়োজন। কাজেই আমাদের আহ্বান থাকবে, কেউ যদি এ ধরণের কোনো লেখা তৈরি করেন, তাহলে দয়া করে আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন। আপনার কষ্টসাধ্য লেখাটি সংরক্ষিত থাকবে। যারা এই বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখা দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করি, ভবিষ্যতেও সবাই আমাদের সাথে থাকবেন। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষদের জন্য আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও দোয়া রইলো।

উপদেষ্টা সম্পাদক: ফেরদৌস রহমান পলাশ

সম্পাদক: মজনুর রহমান

বিশেষ সংখ্যা সহযোগী: মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ

অলংকরণ: রেদওয়ান শুভ

ঘাতক স্বস্তিকায় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল - রবীন জাকারিয়া

(মুখবন্ধ: এটি লেখকের মৌলিক কোন লেখা নয় বরং বিভিন্ন সাক্ষাতকার, বিদেশি সংবাদ মাধ্যম, ইতিহাস, বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট, বিভিন্ন ব্লগ, বিভিন্ন বই, সংবাদ এবং আর্টিকেলের একটি সন্নিবেশিত রুপ মাত্র৷ সূত্রসহ উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি৷)

আমি হিটলার বলছি বইয়ে হিটলার বহুবার ব্যাখা করেছেন কেন তিনি ইহুদিদের ঘৃণা করতেন৷ সেসময় জার্মান সমাজ ব্যবস্থার সর্বত্র ইহুদিদের প্রভাব, ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি ছিল অপরিসীম৷ যদিও সেখানে তারা ছিল সংখ্যালঘু৷ ইহুদিদের দ্বারা জার্মান খৃস্টান তথা সেদেশের নাগরিক প্রতিনিয়ত কীভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে এবং যার কারনে হিটলার ভাল স্কুলে লেখাপড়া করতে পারেননি তা বইয়ে উল্লেখ করেছেন৷ অবশ্য নিজের পরিবারের ঔদাসিন্যতাকেও অস্বীকার করেননি৷ সমাজের এরুপ অনাচারে যখন বসবাসরত খৃষ্টান তথা সকল জনগণ নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন৷ তখন হিটলার সমস্ত জনগণকে এক নতুন ক্যারিসমা দিয়ে আকৃষ্ট করলেন এবং এক মহাশক্তিধর প্ল্যাটফরম নির্মাণ করলেন৷ আর সে প্ল্যাটফরমটি হলো আর্য বা Blue/Royal Blooded জাতি৷ ঘোষণা রাজকীয় জাতি হিসেবে আমরাই একমাত্র বিশ্ব শাসন করার যোগ্যতা রাখি৷ এ ধরণের উক্তিতে জার্মান জাতিকে অভূতপূর্ব নাড়া দিল৷ পরেরটুকু শুধুই ইতিহাস৷

এখন আসা যাক স্বস্তিকা কী:

স্বস্তিকা চিহ্নের ইতিহাস : স্বস্তিকা চিহ্নটি আসলে একটি জ্যামিতিক চিত্র, ইউরোপ – এশিয়ার প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এটি হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে দেবত্ব ও আত্মিকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পশ্চিমি বিশ্বে ১৯৩০ এর আগে পর্যন্ত এটিকে প্রকৃষ্টতা ও গুডলাক এর চিহ্ন হিসেবে দেখা হতো, তারপরে এটি নাৎসি বৈশিষ্ট্য ও আর্য জাতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

“স্বস্তিকা” শব্দটি সংস্কৃতের ” স্বস্তিক” শব্দের থেকে আসে। যার অর্থ “ভালোর সহায়ক বা মঙ্গলজনক”। হিন্দুধর্মে clockwise pointing চিহ্ন অর্থাৎ (卐) – এটাকে সূর্যের প্রতীক এবং সাফল্য, সৌভাগ্য ও শ্রীবৃদ্ধি এর চিহ্ন রূপে দেখা হয়। যেখানে anti clockwise অর্থাৎ (卍) – এটাকে মা কালীর তন্ত্র সাধনার প্রতীক হিসেবে মান্য করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন নাম ও কাজে এর উল্লেখ মেলে।

বিভিন্ন দেশে এর নামও বিভিন্ন। যেমন –

জার্মান – হাকেন্ক্রুজ।(Hakenkreuz)

ফ্রান্স – করিক্স গ্যামী।(croix gammée)

চীন – ওয়ানজি (萬字 (wànzì))।

জাপান – মানজি।(manji)।

কোরিয়া – মানজা।(manja)।

এই চিহ্নটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইউরোপে বহু প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। ২০-এর দশকের প্রথম দিকেই এটি পশ্চিমি দেশগুলোতে সৌভাগ্য সূচক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। তারপরে ১৯২০ তেই এটি নাৎসি পার্টির দ্বারা গৃহীত হয় এবং তারও পরে ১৯৩০ নাগাদ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এটি বিভিন্ন নাৎসি association দ্বারা ব্যবহৃত হতে থাকে। এটি নাৎসি পার্টি দ্বারা প্রধানতঃ ব্যাবহৃত হতো জার্মানির “স্বদেশমূলক গর্বের” চিহ্ন হিসেবে। নাৎসিদের শত্রুদের এবং ইহুদীদের জন্য এই চিহ্ন ধীরে ধীরে ইহুদিবিদ্বেষ ও ভয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। নাৎসিদের , ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের জন্য এই চিহ্নটিকে পশ্চিমি দেশগুলোতে জাতিগত বিদ্বেষ ও হুমকির চিহ্ন হিসেবেও দেখা হতে থাকে।

এই চিহ্নটি শুধু তাদের পার্টির পতাকাতেই ব্যাবহার হতো না, সাথে সাথে বিভিন্ন ডিভিশনের অফিসারদের ব্যাচ ও আর্মব্যান্ড হিসেবেও ব্যাবহৃত হতো।

এডলফ হিটলারের লেখা ” Mein Kampf ” বইতে এই লেখাটিরও উল্লেখ পাওয়া যায়।

In his 1925 work Mein Kampf, Adolf Hitler writes that: “I myself, meanwhile, after innumerable attempts, had laid down a final form; a flag with a red background, a white disk, and a black Hakenkreuz in the middle. After long trials I also found a definite proportion between the size of the flag and the size of the white disk, as well as the shape and thickness of the Hakenkreuz.”।

এর অর্থ অনেকটা এরকম – ” আমি বহুচেস্টার পরে , শেষ পর্যন্ত পতাকার একটা ডিজাইন পেয়েছি, যার পিছনটা হবে লাল, মাঝে সাদা চাকতি, এবং তার মাঝে একটি কালো স্বস্তিকা। অনেক চেষ্টার পরে আমি পতাকার সাইজ ও সাদা চাকতিটির মধ্যে সঠিক অনুপাত খুঁজে পেয়েছি এবং স্বস্তিকার সঠিক আকার ও বেধ ও পেয়েছি।

হিটলার যখন প্রথম নাৎসি পার্টির জন্য এই পতাকা তৈরি করেন, তখন তিনি স্বস্তিকা চিহ্ন এবং রং গুলোকে সংঘবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কারণ লাল, সাদা ও কালো রং ছিল পুরোনো জার্মান সাম্রাজ্যের পতাকার রং। তাই তিনি মনে করতেন, এটি তাদের পুরোনো সম্মান ফিরিয়ে আনবে। যেখানে লাল ছিল – তাদের সামাজিক ধারণা ও আন্দোলনের প্রতীক। সাদা – স্বদেশভক্ত ধারণার প্রতীক, আর স্বস্তিকা ছিল – আর্য জাতির সংগ্রাম ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে সফলতার প্রতীক। এছাড়া এটিকে উন্নত জীবনযাপন ও জার্মান জাতির অগ্রগতির প্রতীক হিসেবেও দেখা হত।

নাৎসি পার্টির পূর্বে এই স্বস্তিকা চিহ্নকে জার্মানের “ভোলকিসেচ বুওগুনগ (Völkische Bewegung) ” নামক জাতীয় গোষ্ঠীও ব্যবহার করতো। যার পতাকাটা ছিল এরকম দেখতে।

এই সম্পর্কে জোসে ম্যানুয়েল এরবেজ (José Manuel Erbez) বলেন :-

The first time the swastika was used with an “Aryan” meaning was on 25 December 1907, when the self-named Order of the New Templars, a secret society founded by Lanz von Liebenfels, hoisted at Werfenstein Castle (Austria) a yellow flag with a swastika and four fleurs-de-lys.

যার অর্থ অনেকটা এরকম :- ” সবপ্রথম স্বস্তিকা চিহ্নটি ব্যাবহৃত হয় ১৯০৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর “আর্য” অর্থরূপে। যখন “অর্ডার অফ দা নিউ টেম্পলার্স” নামের একটি গোপন সংগঠন তৈরি হয় “ল্যাঞ্জ ভন লিয়েবেনফেলস” এর দ্বারা অস্ট্রিয়ার ওয়েরফেনস্টাইন দুর্গে। যেটা ছিল একটি হলুদ পতাকা , স্বস্তিকা চিহ্ন ও চারটি fleurs-de-lys এর সাথে।

এরপরে ১৪ই মার্চ ,১৯৩৩ , হিটলারের জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পর পরই এই পতাকাটিকে জার্মানির জাতীয় রং হিসেবে উত্তোলন করা হয় এবং নুরেম্বর্গ এর আইন (Nuremberg Laws) অনুসারে, ১৯৩৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জার্মানির জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

হিটলারের হাতে স্বস্তিকা চিহ্নের কারণ :- তাহলে নিশ্চই বুঝতেই পারছেন হিটলারের হাতে/পতাকায় এই স্বস্তিকা চিহ্নের পিছনে যেমন ছিল পশ্চিমি দেশগুলির goodluck বা সৌভাগ্যমূলক ধারণা (যেটি পরে অনেকের জন্য ভয়ের এবং দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়), তেমনি ছিল সব জাতির চেয়ে নিজেদের শুদ্ধ রক্ত,শ্রেষ্ঠ জাতি বা আর্য জাতি প্রমান করার প্রচেষ্টা। এছাড়াও ওটি ছিল দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পদ্ধতি ও দেশপ্রেমের প্রতীক। এবং আমরা যেরকম দেখলাম এই চিহ্নটি শুধু হিটলারের হাতেই ছিল না, তাদের বিভিন্ন বিভাগের অফিসার/কর্মীদের ব্যাচ ও আর্মব্যান্ডেও ছিল।

সূত্র: Google/bn.quora.com

দেখা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – পটভূমি, ফলাফল ও অন্যান্য ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে শুনে নাই বা জানে না দুনিয়াতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইংরেজিতে বলা হয় World War II, Second World War, WWII, WW2) মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ পর্যন্ত সংগঠিত হওয়া সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে জার্মানির নাৎসী বাহিনী, ইতালির মুসোলিনী বাহিনী ও জাপানের সেনাদের বর্বোরোচিত নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল লোমহর্ষক। সেটা হিস্ট্রি চ্যানেলের ডকুমেন্টারি দেখেই হোক, কিংবা ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ মুভিতে ক্যাপ্টেন স্টিভ রজার্সের হাতে নাজিদের বেধড়ক মার খেতে দেখেই হোক কিংবা ইউটিউবে ডকুমেন্ট দেখেই হোক সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে অবগত।

১৯৩৯ সাল থেক ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছর সমকাল ২য় বিশ্ব যুদ্ধের বিস্তৃতি ধরা হয়। ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এ যুদ্ধ। সে সময়ের বিশ্বের সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ দেশই এই ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি নামে দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়। মিত্রপক্ষে ছিল বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ড। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষ শক্তি ছিল জার্মানি, ইটালি ও জাপান।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে ধরা হয়। এ যুদ্ধে ৩০ টি দেশের প্রায় ১০ কোটির বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যেখানে সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে। এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় এই হিংস্র যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

একদিন বা এক মাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় নাই। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সম্রাটের পতন ঘটে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় বদল হয়। মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসন্ন হয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগমনে সব মিলিয়ে নেতৃত্ব উঠে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের হাতে! উইলসন ছিলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, গণতন্ত্র এবং লিবেরালিজমের প্রবক্তা ও বাস্তবায়নের অন্যতম নায়ক। ওদিকে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ান রাজনীতি নতুন রুপ পায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে প্রচলিত গোপন সামরিক চুক্তি ও গোপন আন্তর্জাতিক রাজনীতি যুদ্ধের সহায়ক বলে বিবেচনা করে চলে আসে উন্মুক্ত কুটনীতির প্রচলন। এর ধারাবাহিকতায় সরকারব্যাবস্থায এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সচ্ছতার নিশ্চয়তা প্রদান করার উদ্দেশ্যে জন্ম হয় “লীগ অব নেশনস” ! এটি মূলত গঠন করা হয় বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ প্রতিরোধে একটি “মুরুব্বী” কাউন্সিল হিসেবে । পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে গঠিত হয়!

পটভূমি আলোচনায় প্রথমেই আসে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তি বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্থা। প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। এর পরে জার্মানীকে ২৬৯ বিলিয়ন “গোল্ড মার্ক” জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে ১৮৭২ এর যুদ্ধে জার্মান দখলকৃত “আলসাক-লরেন” এলাকা ফ্রান্স পুনরায় তাদের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। আবার, এ সময় জার্মানীকে অস্ত্রহীন করে ফেলা হয়। জার্মানীর মিত্র অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে একদম খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়।

ফ্রান্স, বেলজিয়াম , ইটালি ও গ্রিস নতুন নতুন এলাকার কতৃত্ব নেয়। আরেক মিত্র অটোমান সাম্রাজ্যে আন্ডারে থাকা উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য বেদখল হয়ে যায় এবং আবার দখল করার লক্ষ্যে ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইটালী-গ্রিস তুরস্কের ভুখন্ডের নানা অংশে ঢুকে যায়। যদিও কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক নিজেদের ভুমি রক্ষা করে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে , যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১ম বিশ্ব যুদ্ধ স্থগিতকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের সাথে । মার্কিন নেতৃত্বে পুরো দুনিয়া বদলে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপ থেকে দেশে ফেরার পর মার্কিন কংগ্রেস উইলসনের সমস্ত প্ল্যান খারিজ করে দেয়, এবং নিজেদের ইউরোপীয়ান ঝামেলা থেকে দুরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশাল দেশ জাতিসংঘের বাইরে ছিল । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে জাতিসংঘের দায়িত্ব থাকলেও আমেরিকার অনুপস্থিতিতে তারা বিশ্ব উত্তেজনা প্রশমনে ব্যর্থ হয় ।

এ ভাবে ১০ বছর কেটে যায়। মার্কিনিরা সরে থাকায় বিশ্ব জুড়ে ফ্রান্স আর যুক্তরাজ্য চালকের আসনে বসে থাকে। অন্যে দিকে নবগঠিত লিগ অফ নেশনস যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে কার্যত তেমন সুবিধা করতে পারে নি। রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করার নীতি এবং সামগ্রিক চিন্তার অভাবে ধীরে ধীরে এটা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায়, ব্রিটেন বা ফ্রান্স আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে অনাগ্রহী হয়ে নিজ নিজ স্বার্থ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফ্রান্সের চাচ্ছিল যে ভবিষ্যতে জার্মানির যুদ্ধ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ নির্লুপ্ত করে ফেলতে। অন্য দিকে চতুর ব্রিটেন হয়তো “নেপোলিয়ান” যুগের কথা স্বরন করে “ব্যালেন্স অব পাওয়ার” ঠিক রাখার জন্যই জার্মানীর সামরিক উপস্থিতির সমর্থন করে। এর মধ্য দিয়ে জার্মানী আবার নিজেদের সামরিক বাহিনী গঠনের অনুমুতি পায়। এই চিন্তা ধরে জার্মানী রাজনীতিতে পুনরায় প্রবেশের সুযোগ পেয়ে বসে।

ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় “অর্থনৈতিক মহামন্দা” । বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণস্বরূপ বিরাট ঋণের বোঝা জার্মানের গাড়ে চেপে ছিল। কিন্ত বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে ।সমগ্র জার্মানি ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে। এমতাবস্থায় জার্মানি কয়েক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থামিয়ে দেয় ।ফলে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামযুগ্মভাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল রুঢ় দখল করে নেয় ।এর ফলে ঐ অঞ্চলের জার্মানরা বিদ্রোহ শুরু করলে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ে ।

হিটলার মুসোলিনী

হিটলার-মুসোলিনী (looksfilm.tv)

২য় বিশ্ব যুদ্ধের পটভূমি আলোচনায় জার্মানির হিটলার ও মুসলোনীর উত্থান খুব গুরুত্ব পূর্ণ । তাই তাদের উত্থানের ঘটনা জানা যাক।

এবার দৃশ্য পটে আসে হিটলার। অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউয়ে ১৮৮৯ সালে জন্ম নেওয়া হিটলার ১৯০৭ সালে ভিয়েনা এসে চারু কলায় ভর্তি হয়।সেখানে কয়েক বছর কাটান। এ সময় তার মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষ ও সাম্যবাদ বিরোধী মনোভাব মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধের শেষে মিউনিখে ফেরত আসেন। ঘুরে ফিরে কেটে যায় ৫ বছর। জার্মানরা যুদ্ধের পরাজয় বরন করলে এই ঘটনা হিটলারকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলে। তখন তিনি স্বদেশের গৌরব পুনরুদ্ধার ও ভার্সাইয়ের অপমান জনক যুক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এ উদ্দেশ্যে ১৯২০ সালে হিটলার জার্মান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দল ঘটন করেন। যা নাৎসি দল হিসেবে পরিচিত।

নাৎসি দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং দলীয় প্রধান তথা ফ্যুয়েরার হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় তিনি একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করে। এই বাহিনী গঠিত হয় মূলত প্রাক্তন আধা সামরিক কর্মচারী ও বেকার যুবকদের নিয়ে। তখন এ বাহিনী AS নামে পরিচিত হয়। শীঘ্রই এই বাহিনীর সহায়তায় জার্মানির রাজনৈতিক সমাজে হিটলার বেশ প্রভবশালী হয়ে ওঠেন ।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সেনাধ্যক্ষ লুন্ডেনডর্ফ ও অন্যকয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের জন্যে একটি অভ্যুত্থান করে । একটি ক্ষুদ্র আন্দোলন ও কয়েকজনের মৃত্যর পর ‘বিয়ার হল অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত সেনা অভ্যুত্থান টি ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়।রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে হিটলারকে গ্রেফতার ও সাজা হিসেবে ৯ মাসের কারদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাগারে বসে হিটলার Mein Kampf নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন । বইটিতে হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, ইহুদী বিদ্বেষ, শ্রেষ্ঠ জাতিস্বত্ত্বার বিষয় সমূহ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও জার্মানির পূর্বাংশ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। অযোক্তিক আকাশকুসুম ও গাঁজাখুরি কল্পনা এবং ব্যকরনগত ভুল থাকার পরও ‘মাইন ক্যাম্ফ’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মান জাতির কাছে আশার আলোক বর্তিকা হিসেবে স্থান করে নেয়। এ বইটি তরুন জার্মানরা সাদরে গ্রহণ করে।

জার্মানী যখন চাদা প্রদানে অক্ষমতা প্রদান করে এবং বিদ্রোহ দেখা দেয় তখন ক্ষমতায় আসে স্ট্রেসম্যান।তিনি জার্মানির হাল ধরেন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রেসম্যানের অকস্মাৎ মৃত্যু হলে জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র রক্ষার আর কোনো উপর্যুক্ত কোনো লোকছিলো না ।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ভয়াবহ অর্থমন্দা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তাদের অর্থনীতি খুব বাজে অবস্থায় পতিত হয়। ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ঋণ স্বরুপ অর্থ সাহায্য দেওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করলে জার্মানীর অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। ফলে জার্মানির উপর ধার্য করা ক্ষতিপূরন তারা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ কারনে ১৯৩১ সালে তারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে এই সরকারের প্রতি জার্মান জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এর সুযোগে ১৯৩০ সালের নির্বাচনে নাৎসি ও কমিউনিস্ট দল জার্মান বহু আসনে জয়ী হয়।

১৯৩২খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জার্মানির রাইখস্ট্যাগে নাৎসি দল ৬০৮ টি আসনের মধ্যে ২৩০ টি আসন লাভ করে । ফলে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর করতে বাধ্য হন । ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে হিটলার জাতিপুঞ্জ থেকে জার্মানির সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ১৯৩৪ সালের ২ আগস্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে হিটলার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয় পদ একীভূত করে জার্মানিরসর্বময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির হৃৎ গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করে নিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে।

হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন। যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পোল্যান্ডের সরকার তার এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলার তার দেশ আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্য সব শক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে জার্মান বাহিনী পরাজিত হবে।

জার্মান এক নায়ক হিটলার। আদতে সীমাবদ্ধ চেতনার অধিকারী একজন মানুষ। অজস্র মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে আমৃত্যু ইনি জার্মান জনগনের উষ্ণ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা লাভ করতে চেয়েছিলেন। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল “লেবেনস্রাউম” (জীবন্ত অঞ্চল) দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়।

এ দিকে, উনবিংশ শতাব্ধির শেষ দিকে ইতালি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছিল অথাপি জাতীয়তাবোধের অভাবে তখন ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তেমন গুরুত্ব ছিল না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সেই সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব সব মিলিয়ে দারিদ্রতা যখন ইতালিতে স্থায়ী সমস্যা ঐ সময় ১ম বিশ্বযুদ্ধ হয়। এ সময় ইতালি জার্মানির সাথে মৈত্রী চুক্তি করলেও শেষপর্যন্ত ইতালি মিত্রপক্ষে যোগদান করে ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইটালির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইটালিতে দ্রব্যমূল্যের দাম প্রচুর বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধে ইটালির প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল এবং প্রায় ৭০০,০০০ সৈন্য নিহত হয়েছিল। বিজয়ী রাষ্ট্রের অন্যতম হলেও পরাজিত রাষ্ট্রগুলির মত ইটালি শান্তিচুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে ইতালি অসন্তুষ্ট হয়। প্রথমত, গোপন চুক্তি অনুযায়ী ইটালিকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে তাকে ট্রেনটিনো, দক্ষিণ টাইরল, ইস্ট্রিয়া, ট্রায়েস্ট, দালমাতিয়ার অংশবিশেষ, আদালিয়া, ঈজিয়ান দ্বীপের কিছু অংশ এবং আলবেনিয়ার ক্ষমতা দেয়া হবে। যদিও ইটালিকে এরমধ্যে চারটি স্টেট দেয়া হয় এবং বাকিগুলোর বেশিরভাগ পায় যুগোস্লাভিয়া। এরচেয়েও হতাশার ব্যাপার ছিল গ্রিক অধ্যুষিত ডোডেকানিজ দ্বীপপুঞ্জ যা ১৯১২ সালে ইটালি নিজের দখলে নিয়েছিল তা আবার গ্রিসের নিকট ফিরিয়ে দিতে হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । এ সময় জনগণ সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে। ঠিক সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত কয়েকশ কর্মচ্যুত সৈনিক ও সমাজতন্ত্রবিরোধী অতি উৎসাহী জাতীয়তাবাদি দের নিয়ে মুসোলিনী মিলানে ফ্যাসিস্ট সংগ্রামী দল গঠন করে। অভ্যন্তরীণ দুর্দশা, পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা ইটালির জনগণের মনে যে নৈরাশ্যের সৃষ্টি করেছিল তার ফলেই মূলত ফ্যাসিজমের জন্ম।

১৯২১ সালে ইতালিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এ সময় ফ্যাসিস্ট দল ভোটারদের ভয় প্রদশন করেও মাত্র ৩১ টি আসন দখল করতে সক্ষম হয়। ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতা পাওয়া অসম্ভব জেনে মুসোলিনী বলপ্রয়োগেরমাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্ত নেন । ১৯২১ সালের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট পার্টি সাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পেরে চরমপন্থা হাতে নেন। মুসোলিনি’র ফ্যাসিস্ট দল “march on Rome” নামে আন্দোলন শুরুত করে। তিনি ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্টদের এক বিরাট সম্মেলনে ঘোষনা দেন, “হয় সরকারি ক্ষমতা আমাদের হাতে ছেঁড়ে দিতে হবে নয়তো আমরা মার্চ করে রোমে গিয়ে তা বলপূর্বক দখল করব।” ফলে সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। ১৯২২ সালের ২৭ অক্টোবর ঐতিহাসিক রোম অভিযানের দিন ঠিক করা হয়। ইটালির বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিস্টরা রাজধানীর আশেপাশে জমা হতে শুরু করে।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মুসোলিনীর ডাকে হাজার হাজার সশস্ত্রফ্যাসিস্ট স্বেচ্ছাসেবক রাজধানী রোমে প্রবেশ করে। শেষ পর্যন্ত ১৯২২ সালের ৩০ অক্টোবরে রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল (Voctor Emmanuel) মুসোলিনিকে সরকার গঠন করতে বলেন এমতাবস্থায় ইতালির সম্রাট ভিক্টর তৃতীয় ইমানুয়েলমুসোলিনীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে বাধ্য হন । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মুসোলিনী ফ্যাসিস্টমন্ত্রিসভা গঠন করে ইতালির শাসনভার গ্রহণ করেন।

১৯২৪ সালের শেষ দিকে পার্লামেন্টের কাছ থেকে মুসোলিনি একচ্ছত্র ক্ষমতা লাভ করেন অন্যদিকে তিনি ছিলে ফ্যাসিস্ট দলে ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে। এভাবে মুসোলিনী ইতালিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। মুসোলিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে জার্মান একনায়ক এডল্‌ফ হিটলার- এর একান্ত বন্ধুতে পরিনত হন আর তাকে প্রভাবিত করেন। মুসোলিনি ১৯৪০ সালে অক্ষশক্তির পক্ষে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যোগদান করেন ।

অন্য দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম পক্ষ, তুর্কী এইবার নিজেদের বেশ কৌশলে যুদ্ধ থেকে দুরে রাখে। যদিও তুর্কি জনগণ জার্মানদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল, কিন্তু তুর্কি সরকার মিত্র বাহিনীর সাথে মিত্রতা রক্ষা করে চলে পুরো সময়জুড়ে!

অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। এভাবে জাপানও এক সময় চলে আসে সাম্রাজ্যবাদীদের দলে।

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বরে ইতালি কমিন্টার্নবিরোধী শিবিরে যোগদান করে।এর ফলে জার্মান, জাপান ও ইতালি‘র ত্রিদেশীয় জোট তৈরি হয়। পরে এই জোটঅক্ষশক্তিনামে পরিচিতি লাভ করে। জার্মানী-ইটালী ও জাপান ৩টি দেশ মিলে সারা বিশ্বে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থা বদলে “জাতিভিত্তিক” নতুন ব্যাবস্থা প্রণোয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করে।

এবার আসি ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বে কিছু অবাঞ্চিত ঘটনা প্রবাহ নিয়ে যেগুলো ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পথকে সুগম করেছিল।

ইথিওপিয়ার সাথে ইতালির যুদ্ধঃ ইতালি অক্টোর ১৯৩৫ সালে ইথিওপিয়া আক্রমণ করে যা শেষ হয় ১৯৩৬ সালের মে মাসে। ইতালিয়ান সশস্ত্র বাহিনী সোমালিয়ান্ড ও ইরিত্রিয়া থেকে এ যুদ্ধে পরিচালনা করে । এ যুদ্ধটি মুলত ইতালির কলোনিয়াল মনোভাবের কারনে শুরু হয়। এখানে লীগ অফ নেশনসের কোন ভূমিকা দেখা যায় নি। এ সময় জার্মানরা সরাসরি ইতালিকে সমর্থন করে।

স্পেনের গৃহযুদ্ধঃ স্পেনে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন হিটলার ও মোসলিনি জেনারেল ফান্সিসকো ফাঙ্কোর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের মিলিটারি সহায়তা প্রদান করে। রাশিয়া তখন সরকার পক্ষকে সহায়তা প্রদান করে। প্রায় ৩০০০০ এর মত ভ্লান্টিয়ার ইন্টারেশনাল বিগ্রেড নামে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এ যুদ্ধে জার্মানী ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র একই সাথে কৌশল পরিক্ষার করে। ১৯৩৯ সালে ফাঙ্কোর নেতৃত্বে বিদ্রোহিরা গৃহ যুদ্ধে জয় লাভ করে। যদিও ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ফ্রাঙ্কো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন অরে কিন্ত সে অক্ষ শক্তির সমর্থন করত। পরে তারা ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ারে জার্মানির পক্ষে ভলান্টিয়ার পাঠিয়েছিল।

স্পেনের গৃহ উদ্ধ

স্পেনের গৃহ উদ্ধ (thelocal.es)

চীন – জাপান যুদ্ধঃ ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে মার্কো পলো ব্রিজের ঘটনা‘র প্রেক্ষিতে চীনের সাবেক রাজধানী পিকিং দখল করে নেয়। সুভিয়েতরা খুব দ্রুত জাপানের সাথে একটি অ-আগ্রাশন যুক্তি করে তাদেরকে মিলিটারী সাপোর্ট প্রদান করে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের দিকে জাপান তাইওয়ান আক্রমণ করে। তিন মাস যুদ্ধ চালিয়ে যাবার পরে চিন তাদের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। জাপানী বাহিনী চিনকে পিছু হটতে বাধ্য করে। নাকিং দখল করে নেয়। নাকিং দখলের জাপানীরা হাজার হাজার চীনা নাগরিক ও নিরস্ত্র যুদ্ধাদের হত্যা করে।

১৯৩৮ সালের মার্চের দিকে চীনা বাহিনী তায়ারজুয়াং এ প্রথম বড় বিজয়ের দেখা পায় কিন্ত পর পরই মে মাসে জাপানিরা জুজু শহরটি দখল করে নেয়। জাপান সামরিক অর্জনের লক্ষ্যে জাপানকে চীনের প্রতিরোধের পতন ঘটায়নি; পরিবর্তে চীনা সরকার যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল।

সোভিয়েত জাপান সীমান্ত সংঘর্ষঃ

১৯৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে, মানচুকুরোতে জাপানী বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মঙ্গোলীয় জনগণের প্রজাতন্ত্রের সাথে বিক্ষিপ্ত সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু করে। জাপানি শাসনের হকশুনিয়ন-রন, যা জাপানের উত্তর দিকে সম্প্রসারণে জোর দিয়েছিল, এই সময়ে ইম্পেরিয়াল আর্মি দ্বারা অনুকূল ছিল। ১৯৩৯ সালে খোলকিন গোল এ জাপানের পরাজয়ে চলমান দ্বিতীয় চীন-জাপানী যুদ্ধ সময় সহযোগী নাৎসি জার্মানি সোভিয়েতের সঙ্গে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অবশেষে এপ্রিল ১৯৪১ সালে একটি নিরপেক্ষতা চুক্তির স্বাক্ষর করে।

মিউনিখ চুক্তিঃ ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিলি চেম্বারলেইন ইউরোপকে যুদ্ধ মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালান। ইউরোপে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আগ্রাসন রুখতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয় এবং চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে সুদাতেনল্যান্ড দাবি করে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মিউনিখ চুক্তি অনুসারে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদাতেন অঞ্চল জার্মানিকে হস্তান্তর করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তার বিনিময়ে হিটলার আর কোনো ভূমি দখল করবেন না বলে কথা দেন।কিন্তু মাত্র সাত মাস পরে ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ হিটলার সমগ্র চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করে দখল করেন।

এ রকম আরো কিছু ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পথ সুগম করে।

বেজে উঠে যুদ্ধের ঘন্টা

পোল্যান্ড যুদ্ধ

বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করল এবং এই দিনটি থেকেই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের সাথে সহায়তা চুক্তি করে। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড অভিযান শুরু করেছিল আর ৩রা সেপ্টেম্বর মিত্রবাহিনী জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

১৫ লাখ জার্মান সেনা সীমান্তে অবস্থান নেয় ও ১৩০০ যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে বোমা ফেলে পুরো দেশকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। ফরাসি ও ব্রিটিশ বাহিনী সাহায্য করবার সুযোগ পেল না। এটি পশ্চিমের বিশ্বাসভঙ্গতা হিসেবে পরিচিত।সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানী অনাক্রমণ চুক্তি করে। তৎক্ষণাৎ ফ্রান্স ও ব্রিটেন পোল্যান্ড থেকে জার্মান সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানায়। হিটলার জার্মানিতে ইহুদীদের চলাচলের উপর কার্ফ্যু জারি করে।

২ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন শেষবারের মতো হিটলারকে পোল্যান্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য আল্টিমেটাম দেন। ৩ সেপ্টেম্বর আটলান্টিক মহাসাগরে জার্মান ডুবোজাহাজ ইউ-৩০ টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দেয় ব্রিটেনের যাত্রীবাহী জাহাজ অ্যাথেনিয়াকে। এই ঘটনায় প্রায় ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া একযোগে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

পরের দিন ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনী পশ্চিম ও উত্তর জার্মানিতে ৬০ লক্ষ লিফলেট ছাড়ে। একইসাথে তাদের ত্রিশটি যুদ্ধবিমান জার্মানির ভিলহেলমশ্যাভেন ও কিয়েল ক্যানেলে অবস্থিত জার্মান নৌঘাঁটিতে আক্রমণ করে। তবে এই আক্রমণ তেমন কার্যকর ছিল না। জার্মানরা সাতটি বিমানকে ভূপাতিত করে।

৫ সেপ্টেম্বর জার্মান সেনাবাহিনী পোল্যান্ডের দীর্ঘতম ভিস্টুলা নদী অতিক্রম করে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মহাযুদ্ধে তাদের নিরপেক্ষতা ঘোষণা করে। জ্যান স্মুটস দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হবার পরের দিনই দক্ষিণ আফ্রিকা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এদিকে সপ্তাহখানেকের যুদ্ধ শেষে ৭ সেপ্টেম্বর ভেস্তারপ্লাতের যুদ্ধে জার্মানি জয়লাভ করে। তারা ওয়ারশ থেকে ৩০ মাইল উত্তরে পুলতুস্ক শহর পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং একইসাথে পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্র্যাকো দখল করে নেয়।

৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ পোল্যান্ডের বেডজিন শহরে জার্মান হানাদার বাহিনী প্রায় ২০০ ইহুদীকে তাদের উপাসনালয়ের (Synagogue) ভিতরে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে; সাথে ৩০ জনকে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওয়ারশ শহরতলীর কাছাকাছি পৌঁছে যায় জার্মান সৈন্যরা।

৯ সেপ্টেম্বর মধ্য পোল্যান্ডের জুরা নদী অতিক্রম করার সময় পোলিশদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে জার্মান প্যাঞ্জার ডিভিশন।

১০ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কানাডা। ফলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় আরেকটি মহাদেশ। ব্রিটেনের ডুবোজাহাজ ট্রিটন ভুলবশত টর্পেডোর আঘাতে ডুবিয়ে দেয় আরেক ব্রিটিশ ডুবোজাহাজ এইচএমএস অক্সলেকে। ওয়ারশতে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে জার্মান লুফট‌্ভাফে। মারা যেতে থাকে শ’য়ে শ’য়ে নিরীহ মানুষ; উদ্বাস্তু হয় অসংখ্য পরিবার।

১১ সেপ্টেম্বর ইরাক ও সৌদি আরব জার্মানির সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। জার্মানদের আক্রমণ দিনে দিনে আরো ক্ষুরধার হতে থাকে; বিশেষত ওয়ারশে। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করতে পারে এই আশংকায় ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব দিক থেকে পোল্যান্ডে হামলা করে রুশ বাহিনী। পরদিন জার্মান ও সোভিয়েত সৈন্যরা ব্রেস্ট শহরে মিলিত হয়। এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জার্মানিতে খাদ্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়।

অতপর দু’সপ্তাহের যুদ্ধ শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর জার্মানদের কাছে পতন ঘটে ওয়ারশ শহরের। জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের দখলকৃত অংশ নিজেদের ভেতর ভাগ করে নেয়। তারপর শুরু হলো জার্মান বাহিনীর অগ্র যাত্রা।

সোভিয়েত-ফিন শীতকালীন যুদ্ধ

জার্মানি ও মিত্রপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে শীতকালীন যুদ্ধের সূচনা করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সৈন্যরা লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ায় প্রবেশ করার পর ফিনল্যান্ড দখলের উদ্যোগ নিলে ফিনল্যান্ড প্রচণ্ডভাবে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করার ভেতর দিয়ে এ বিশ্বযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। ফিনদের লোকবল খুবই কম হলেও তাদের দেশরক্ষার ইচ্ছা ছিল প্রবল। স্টালিন ঝটিকা যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত প্রতিটি ফ্রন্টে তার বাহিনী প্রতিহত হয়।

১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সোভিয়েত বিমান, ট্যাঙ্ক ও স্লেজবাহিত সেনাবাহিনী একযোগে ফিনদের প্রতিরক্ষা বুহ্যে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ১৫ দিন পর অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি ফাঁক তৈরি করতে সক্ষম হয়। ফলে যুদ্ধের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে গেল। ১৯৪০ সালের ৬ মার্চ ফিরল্যান্ড শান্তির জন্য আবেদন করল। সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের আগের দাবি অনুযায়ী লেনিনগ্রাদের কাছাকাছি বেশকিছু এলাকা ফিনল্যান্ড থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে নেয়। এ যুদ্ধে ২ লক্ষ ফিন সৈন্যের মধ্যে ৭০ হাজার সৈন্য মারা যায়। যুদ্ধ থেকে স্তালিনের সেনাদল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শিক্ষা লাভ করলো।

নরওয়ে ও ডেনমার্ক

নরওয়ে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য। সুইডেনের কিরুনা খনি থেকে গরমকালে বাল্টিক সাগর দিয়ে এবং শীতকালে নরওয়ের বরফমুক্ত নারভিক বন্দর ও নরওয়ের রেলপথ দিয়ে লোহা চালান যেত জার্মানীতে। প্রথমে হিটলার নরওয়েকে নিরপেক্ষ থাকতে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওদিকে মিত্রপক্ষ নারভিকের ঠিক বাইরের সমুদ্রে মাইন পেতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়ে গেলে হিটলার ফ্রান্স আক্রমণের ইচ্ছা স্থগিত রেখে নরওয়ে অভিযানের নির্দেশ দিল। ১৯৪০ সালের ৯ই এপ্রিল সুইডেনের সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে একই সাথে নরওয়ে ও ডেনমার্কে আগ্রাসন শুরু করে।

ছবিঃ SlidePlayer

একদিকে নারভিকসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি দখল করে নিল জার্মান বাহিনী। অন্যদিকে বিমানবন্দরগুলিতে অবতরণ করলো প্যারাশ্যুট বাহিনী। এরপর বিমানবন্দর দখল করে সেখান থেকে অতর্কিতে শহরে প্রবেশ করলো জার্মান সেনা। ডেনমার্ক বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করলেও নরওয়ে লড়াই করতে লাগলো।

১৪ই এপ্রিল মিত্রবাহিনী নামলো নরওয়েতে। কিন্ত মে মাসেই পিছু হটলো তারা। নারভিকে জার্মানরা পাঁচগুণ বেশি শত্রুর সাথে লড়াই চালিযে যাচ্ছিল ২৭শে মে পর্যন্ত। কিন্ত ততদিনে ফ্রান্সের পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় মিত্র বাহিনী নরওয়ে থেকে তাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়। নরওয়ে বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো এবং রাজা সপ্তম হাকোন ব্রিটেনে আশ্রয় নিলেন। জার্মানীর জন্য নরওয়ে আর্কটিক সাগর এবং ব্রিটেনের নিকটবর্তী একটি দরকারী নৌ ও বিমান ঘাঁটি হিসেবে কাজে দিল।

ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ

১৯৪০ সালের ১০ মে এক সাথে চারটি দেশ আক্রমণ করে জার্মানী। ফরাসিরা ভেবেছিল আক্রমণ আসবে ফ্রান্স জার্মানী সীমান্তের রণরেখা ম্যাগিনোট লাইনের ওপর। অথবা বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে আরদেন হয়ে। তারা ভেবেছিল জার্মানীর প্যানজার বাহিনী আরদেনের জঙ্গল ভেদ করে আসতে পারবে না।

১৪ই মে নেদারল্যান্ডের পতন ঘটলো। ১৪ই মে আরদেন থেকে জার্মান বাহিনী বেরিয়ে এসে দিশেহারা মিত্র সেনাদের ছিন্নবিছিন্ন করে প্রবল বেগে এগোতে থাকল। ডানকার্ক বন্দর দিয়ে তড়িঘড়ি ফরাসি ও ব্রিটিশ অভিযানবাহিনীর সেনা পশ্চাদপসরণ শুরু হলো। ২৬শে মে থেকে ৪ঠা জুন ইতিহাসের বৃহত্তম সেনা অপসারণের কাজ শেষ হলো। তবে ফেলে আসতে হলো বেশীরভাগ যন্ত্রাদি। এরমাঝে ২৭শে মে বেলজিয়ামের পতন হলো।

ফরাসিদের এই বিপর্যয়ের সুবিধা নেয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানদের মিত্রপক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দিল। সমস্ত ইউরোপ-আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন। ১০ই জুন ইতালিও যুদ্ধ ঘোষণা করল। তবে তারা আক্রমণ শুরু করে ২০শে জুন থেকে। ফরাসি সরকার প্রথমে তুর ও পরে বোর্দোতে সরে গেল। ১৪ই জুন প্যারিসের পতন ঘটল। ১৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী রেনো পদত্যাগ করলেন ও তার বদলে এলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পেত্যাঁ। ২২শে জুন জার্মান-ফরাসি এবং ২৪শে জুন জার্মান-ইতালীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফ্রান্সের বেশিরভাগ এলাকা জার্মানী নিয়ে নেয়। অল্প কিছু জায়গা জুড়ে পেঁত্যা একটি নিরপেক্ষ কিন্তু জার্মানীর প্রভাবাধীন সরকার গঠন করেন। এটি ভিশি ফ্রান্স নামে পরিচিত হয়।

বলকান অঞ্চল

পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের জন্য রুমানিয়ার প্লোইস্তি তেলের খনি হিটলারের প্রয়োজন ছিল। ১৯৪০ সালে জার্মানি-রুমানিয়া তেল-অস্ত্র চুক্তি হল। হাঙ্গেরি ও রুমানিয়ার মতবিরোধ ঘটায় জার্মানি মধ্যস্থতা করে। রুমানিয়ার জনগণ এতে আন্দোলন শুরু করায় রাজা দ্বিতীয় ক্যারল ছেলে মাইকেলের কাছে মুকুট হস্তান্তর করলেন ও সেনাপ্রধান আন্তনেস্কু জার্মান সেনা আহ্বান করলেন।

১২ই অক্টোবর ১৯৪০ বুখারেস্টে জার্মান সৈন্য অবতরণ করে। এতে কুটনৈতিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিরক্ত মুসোলিনি ১৯৪০ সালের ২৮ অক্টোবর আলবেনিয়া থেকে গ্রিস আক্রমণ করলেন। কিন্তু গ্রিকরা যে শুধু আক্রমণ প্রতিহত করল তাই না, উল্টো ডিসেম্বরের মধ্যে আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ দখল করে ফেলল। উপরন্তু ক্রীটে ব্রিটিশ সৈন্য নামল।তুরষ্কও সৈন্যসমাবেশ করে রাখল ।আপাত-নিরপেক্ষ বুলগেরিয়া এবং যুগোস্লাভিয়াও বেঁকে বসল।

রাশিয়া আক্রমণ

ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করল। এই দিন এডলফ হিটলারের নির্দেশে জার্মান আর্মির এক বিশাল বহর সোভিয়েত ইউনিয়ন জয় করার উদ্দেশ্যে পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন বারবারোসা। তিনটি বড় বড় সেনা দলে বিভক্ত জার্মান বাহিনীর সংখ্যা কম করে হলেও ত্রিশ লক্ষের কম ছিল না। মোট দেড়শটি বিভিন্ন ডিভিশনের সাথে ছিল তিন হাজার ট্যাংক এবং অজস্র আর্টিলারি পিস। ধরা হয় বিংশ শতাব্দীর সেরা আর্মি ছিল রাশিয়া দখল করতে যাওয়া হিটলারের জার্মান বাহিনী।

হিটলার ভেবেছিলেন রাশিয়া অধিকার করতে পারলে সমগ্র ইউরোপ তার পদানত হবে। নেপোলিয়ানের মতো রাশিয়া আক্রমণ হিটলারের জীবনের সবচেয় বড় ভ্রান্তি। রুশ বাহিনী এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। যুদ্ধের শুরুতে ফায়ার পাওয়ার কিংবা টেকিনিক্যাল দিক বিবেচনায় জার্মান আর্মি সোভিয়েত রেড আর্মির চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল। ফলে রাশান বিভিন্ন ফ্রন্টে পিছু হটতে শুরু করল রেড আর্মি। দুর্বার বেগে একে একে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়ার ইউরোপ অংশের অনেকটা দখল করে ফেলল জার্মান সেনারা।

জার্মানরা প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলে মস্কোর দিকে। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করলেও শীত আসতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জার্মানরা। তারা পিছু হটতে আরম্ভ করল। এই সুযোগে রুশ গেরিলা বাহিনী আঘাত হানতে থাকে। শীত শেষ হতেই জার্মানরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলে। কিন্ত জ্বালানীর সংকট দেখা দিলে হিটলার পরিকল্পনা করে চেচনিয়ার তেলের খনিগুলো দখল করবে। এ উদ্দেশ্যে চেচনিয়ার দিকে একটি সেনাদল পাঠায়। রাশান যখন বুঝতে পারল যে চেচনিয়া তারা দখলে রাখতে পারবে না তখন চেচনিয়া অবস্থিত তেলের খনিগুলোতে তারা আগুন লাগিয়ে দিল !

১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি যুদ্ধ ব্যাটেল অব স্ট্যালিনগ্রাড শুরু হয়। জার্মানদের সেরা সৈনিক দল সিক্সথ আর্মি শহরের বাইরে অবস্থান নেয়। সিক্সথ আর্মির পদাতিক সৈন্যরা আক্রমণের পূর্বে জার্মান বিমান বাহিনী ক্রমাগত এক সপ্তাহ ধরে বোমাবর্ষণ করতে থাকে স্ট্যালিনগ্রাডে। দুর্ধর্ষ জার্মান জঙ্গি বিমানগুলোর মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্ট্যালিনগ্রাড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় । এই অবস্থায় জার্মান পদাতিক সৈন্যরা প্রবেশ করতে শুরু করে স্ট্যালিনগ্রাডে।

স্টালিনগ্রাডে আক্রমণ (pictureshistory.blogspot.com)

এত দিনের বিমান হামলার পরে জার্মানরা মনে করেছিল খুব সহজেই স্ট্যালিনগ্রাডের পতন হয়ে পড়বে। যোসেফ স্ট্যালিনের নিজের নামে রাখা নগর রক্ষায় তখন স্ট্যালিন সর্বশক্তি নিয়োগ করে। জার্মানরা যখন শহরে হেলে দোলে প্রবেশ করতে পারবে ভেবেছিল শহরে প্রবেশের মুখে রাশানদের প্রবল বাধার মুখে পতিত হয়। ধ্বংসস্থুপ হয়ে যাওয়া স্ট্যালিনগ্রাডের একেকটা বিল্ডিং তখন একেক্টা দূর্গ হয়ে উঠে। দেখা যেত যে এলাকাগুলো জার্মানরা দিনের বেলায় দখল করত সে এলাকাগুলোই রাতে আবার পুনর্দখল করে নিত রাশিয়ানরা। এ সময় জার্মানদের বয়ে নিয়ে আসা আর্টিলারীগুলো রাশিয়ান চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলার কাছে অসহায় হয় পড়ে।

খুব সহজে দখল করতে পারবে ভাবা স্ট্যালিনগ্রাড পরিণত হল জার্মান বাহিনীর কাছে দুঃস্বপ্নপুরীতে। তাই গেরিলা যুদ্ধে বিরক্ত জার্মানরা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল র‍্যাটেনক্রিয়েগ বা ইঁদুরের যুদ্ধ। যুদ্ধের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে স্ট্যালিনগ্রাডের উপকণ্ঠে মামায়েভ কুরগান নামক পাহাড়টির মোট ১৪ বার দখল ও পাল্টা দখল হয়েছিল দুই শিবিরের মধ্যে। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও সেবার এই পাহাড়টিতে তুষারের আচ্ছাদন পড়েনি কারণ এতবেশি শেলিং করা হয়েছিল যে পাহাড়ের সমস্ত বরফ গলে গিয়েছিল। তবে এত কিছুর পরেও জার্মান সৈন্যরা শহরের প্রায় ৯০% নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি

এ দিকে রেড সিক্সথ আর্মি ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মির সাহায্যের অপেক্ষায় ছিল। তেল সংকটে পড়ায় প্যাঞ্জার আর্মি দেরি করে স্ট্যালিনগ্রাডের উপকন্ঠে পৌছে। রেড আর্মির নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। এর পূর্বে রুমানিয়, ইতালিয় ও হাঙ্গেরীয়দের সম্মিলিত বাহিনী থেকে সিক্সথ আর্মি সাহায্য পাচ্ছিল। রেড আর্মির নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। এর সময় জার্মান ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মি তখন মাত্র তিন দিনের দূরত্বে ছিল স্ট্যালিনগ্রাড থেকে। কিন্ত রেড আর্মির অবরোধে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। অবরোধ করতে গিয়ে উল্টো অবরোধের শিকার হল জার্মানরা। রাশিয়ান অবরোধের শুরুর দিকে জার্মানরা চাইলেই অবরোধ ভেঙে পিছু হটে আসত পারত। অন্তত জার্মান সিক্সথ আর্মির প্রধান জেনারেল ফ্রেডরিখ পাউলাস সেটাই চাচ্ছিলেন।

কিন্ত একরোখা হিটলার তখন জার্মান সৈনিকদের ভিতর থেকেই শহর দখল রাখতে আদেশ দেয়। ১৯৪৩ এর জানুয়ারিতে হিটলার জেনারেল পাউলাসকে প্রমোশন দিয়ে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করলেন উৎসাহ দিতে। ধীরে ধীরে জার্মানদের গোলাবারুদ এবং রসদ ফুরিয়ে আসে। হিটলার আকাশ পথে সৈনিকদের রসদ পৌছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে সময় স্ট্যালিনগ্রাডে থাকা জার্মান সৈন্যদের প্রতিদিন দরকার ছিল ৮০০ টন রসদের অথচ বিমানযোগে সাপ্লাই ছিল মাত্র ১৪০ টন। শেষ দিকে সৈনিকদের পিছু হটার নির্দেশ দিলেও তত দিনে অস্ত্র ও খাদ্যের অভাবে জার্মান বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলার পর, ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করল জার্মান বাহিনী। এর আগেই ৩০ জানুয়ারি বন্দী করা হয়েছিল ফিল্ডমার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাসকে। স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান সৈন্য মারা পড়েছিল আর বন্দী হয়েছিল আরও ৯৫ হাজার যার মধ্যে মাত্র ৫-৬ হাজার জার্মানকে জীবিত ফেরত দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।

জাপানের ভূমিকা ও পার্ল হারবার আক্রমণ

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জাপান নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করে এবং মালয়েশিয়া ওসিঙ্গাপুর দখল করে । সিঙ্গাপুর দখলের পর জাপান ডাচ উপনিবেশ সুমাত্রা, জাভা, বালি প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে । জাপানি সেনাদলের অপর শাখা মালয়েশিয়া থেকে ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ মায়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন দখল করে।

অন্যদিকে, আমেরিকার পার্ল হারবারে জাপানের আক্রমণ করে বসে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে আক্রমণ ছিলো আমেরিকার জন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট।

ইউরোপজুড়ে যখন যুদ্ধ চলছে, এশিয়ার জাপান জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল। অক্ষশক্তি যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে, তখনো আমেরিকার চুপ চাপ ছিল । অক্ষশক্তি যখন ফ্রান্সকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয়, তখনো আমেরিকার নিরব ভুমিকা পালন করে। অক্ষশক্তি যখন ইউরোপের সাথে সাথে এশিয়াও দখলে নিতে শুরু করলো, তখনো আমেরিকার চুপ চাপ ছিল। জাপানিরা ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরের ওপর বোমা বর্ষণ করে বিধ্বস্ত করে ফেলল। এই ঘটনায় আমেরিকাও প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল।

পার্ল হারবার আক্রমণটিতে অনেকগুলো প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে জড়িত করেছিল জাপান। ওয়াহো দ্বীপের পার্ল হারবারে ১৯০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করে। জাপানের নৌবাহিনীর চোখে তখন থেকেই এটি ভীতির অনেক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পার্ল হার্ববারে আক্রমন করে এক ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় জার্মানদের উলটা রথ। পার্ল হারবার নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক অনেক বই, তৈরি করা হয়েছে কয়েক ডজনখানেক ছবি।

পার্ল হারবারে আক্রমণ

পার্ল হারবারে আক্রমণ (উইকিপিডিয়া)

মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় পার্ল হার্বারের নৌ-বহরের উপর হামলার সময় ছিল হাওয়াইয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট থেকে ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। মাত্র দেড় ঘন্টার আক্রমনে হার্ল হার্বার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ৭টা বেজে ২মিনিটে ওপানা রাডার স্টেশনের দুই অফিসার জর্জ এবং জোসেফের চোখ আটকে গেল রাডারের পর্দায়। তারা দেখছেন ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান উড়ে আসছে পার্ল হারবারের দিকে। এ বিষয়টি তাৎক্ষনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করে। তারা জানালেন ““ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কয়েক স্কোয়াড্রন আমেরিকান বিমান পার্ল হারবারে আসার কথা। সেগুলোই ওই বিমানগুলো। চিন্তার কোন কারণ নেই”।

তাদের অজ্ঞাতস্বরে ঠিক ভোর ছয়টার সময় পার্ল হারবার থেকে ২৩০ মাইল দূরের এক জাপানিজ ফ্লিট থেকে ওই ফাইটারগুলো টেক অফ করেছে যে গুলো পার্ল হার্বারের ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আসছে। সকাল ৭টা বেজে ৫৫ মিনিট। ১৮৩টি জাপানি জঙ্গি বিমান ঘিরে ফেলেছে পার্ল হারবারের ভোরের আকাশ। শুরু হয়ে গেলো একতরফা ধ্বংসযজ্ঞ। মুহমুহ আক্রমণ চলে ঘন্টাখানেক।

এবার দ্বিতীয় দফায় আরো ১৬৭টি জঙ্গি বিমান উড়ে এলো পার্ল হারবারের আকাশে। টর্পেডো বোমারু বিমান, সাধারণ বোমারু ও জঙ্গি বিমান মিলিয়ে জাপান তৈরি করেছিল তাদের এই যুদ্ধের রণকৌশল। ওই সময় আমেরিকার ব্যাটলশিপ, বিমানবাহী জাহাজ, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, মাইনলেয়ার মিলে মার্কিন নৌ-বাহিনীর একটি বৃহৎ অংশ পার্ল হারবারে অবস্থান করছিল। ধ্বংস হয়ে যায় পার্ল হার্বার। আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

জেনে রাখা ভাল, পার্ল হারবারে আক্রমণ আসলে আমেরিকাকে একবারে না জানিয়ে করা হয় নি। । রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই আক্রমণ করেছিলো জাপান। জাপানি অ্যাডমিরাল ‘ইয়ামামোতো’ চাননি কোনো ঘোষণা ছাড়াই কাপুরুষের মতো আমেরিকায় হামলা করে বসতে। ইয়ামামোতো আক্রমণ শুরুর আগেই আমেরিকাকে একটা মেসেজ দেন যে, মেসেজ তাদের হাতে পড়ার ঠিক আধাঘণ্টা হতে একঘণ্টার মধ্যে জাপান পার্ল হারবারে বোমা ফেলবে।

মেসেজ তৈরি করে টোকিও হতে সেটা পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। কিন্তু সমস্যা হল সেই মেসেজের পাঠোদ্ধার নিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওয়াশিংটনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সময়মতো পাঠোদ্ধার করতে পারেননি যে, টোকিও হতে আসা এই মেসেজ কি আসলে জাপানের ‘লাভ লেটার’ নাকি ‘হেইট লেটার’! কিন্তু সেটা বুঝা তো আর জাপানের বিষয় নয়।

অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো তাই তার প্ল্যান অনুযায়ী আমেরিকা মেসেজটা হাতে পাবার আধাঘণ্টা হতে পৌনে একঘণ্টা পরেই পার্ল হারবারে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, জাপান আক্রমণে যাবার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় তাদের জাতীয় সব দৈনিকে “আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণা” সংক্রান্ত এই মেসেজটা খোলাখুলি ছাপিয়েছিলো। কিন্তু আমেরিকার কেউ জাপানি পেপারগুলো আক্রমণের আগে-আগে হাতে পায়নি।

মেসেজটা ইতিহাসে ‘৫০০০ শব্দের নোটিফিকেশন’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। আরো বেশী বিখ্যাত ‘১৪-পার্ট মেসেজ’ নামে। বুঝাই যাচ্ছে, মেসেজে ৫০০০ শব্দ ছিলো আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে। জাপান ইচ্ছা করেই এতো বড় মেসেজ পাঠিয়েছিলো কিনা, সে ব্যাপারে ইতিহাসের পাতায় কিছু বলা নেই অবশ্য।

আমেরিকা আধাঘণ্টার মধ্যে ১৪ পার্টে ৫০০০ শব্দের মেসেজ পাঠোদ্ধার করতে পারেনি। ফলে পার্ল হারবারে আক্রমণে তারা হারিয়েছিলো ২৪০৩ জন আমেরিকান নাগরিক, দুটো ব্যাটলশিপ, তিনটা ক্রুজার, তিনটা ডেস্ট্রয়ার আর একশো আটাশিটা যুদ্ধ বিমান। জাপান সৈন্যদলের সামরিক সরঞ্জাম লোকসান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছিল খুবই হালকা প্রকৃতির। তাদের ২৯টি যুদ্ধ বিমান ভূ-পাতিত হয় এবং ৫টি খর্বাকৃতি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তলিয়ে যায়। জাপানি হামলাকারীদের মধ্য থেকে ৬৫ জন নিহত কিংবা আহত হয়।

পার্ল হারবারে এমন আক্রমণের পর এবার আমেরিকা আঁটসাট বেঁধে নামে যুদ্ধে। অনেকেই মনে করেন আমেরিকার উর্ধতন কর্মকর্তারা জাপানের এহেন আক্রমণের কথা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু তাও তারা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেননি। কারণ আমেরিকা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল যুদ্ধ যোগদান করার। এবং জাপানের এই আক্রমণ তাদের এই সুযোগটা খুব ভালো ভাবেই এনে দেয়।

প্রথম দিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ আরম্ভ করল, হিটলারের বাহিনী পিছু হটতে আরম্ভ করল। আফ্রিকায় ইংরেজ সেনাপতি মন্ট গোমারি রোমেলকে পরাজিত করলেন। এক বছরের মধ্যেই আফ্রিকা থেকে জার্মান বাহিনীকে বিতাড়িত করা হলো।

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিসিলি দ্বীপ অধিকার করে। এ সময় সিসিলি থেকে মিত্র শক্তি সম্মিলিতভাবে ইতালির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে । মুসোলিনীর মিত্র হিটলার এ সময় ইতালি রক্ষার্থে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। অক্ষ শক্তি ও মিত্র শক্তির মধ্যে প্রছন্ড সংঘর্ষ হয়। মিত্র বাহিনী জার্মান সেনাদের বাধা ভেঙ্গে ১৯৪৪ সালের ১১ মে রোম দখল করে নেয়। ইতালিতে মুসোলিনিকে বন্দি করা হলো। যদি জার্মান সেনাবাহিনী হঠাত আক্রমন করে মুসোলিনীকে মুক্ত করে। যদিও ১৯৪৫ সালে মুসোলিনী ও তার উপপত্নী ক্লারা পেত্রাচ্চিকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণ জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

১৯৪৪ সালে দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে ডেনমার্ক এলাকায় জার্মান বাহিনীকে বিস্মিত করে আতর্কিত হামলা চালায় ব্রিটেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথবাহিনী। এর মাধ্যমে ফ্রান্সকে পুনরায় স্বাধীন করা হয়। পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া,হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া মুক্ত করতে করতে জার্মান ভূখণ্ডে এসে প্রবেশ করে। অন্যদিকে ইংরেজি আর আমেরিকান সৈন্যরাও জার্মানির অভিমুখে এগিয়ে চলে।

ব্যাটল অব বার্লিন

জার্মানীর রাজধানী বার্লিনের পতনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। এখানকার লড়াই ছিল মূলতঃ নৎসীবাদী ও কমিউনিজমের মধ্যকার মর্যাদার লড়াই। ১৯৪৫-এর প্রথমার্ধে দুটি ফ্রন্ট থেকে জার্মান সৈন্যরা ক্রমাগত পিছু হটছিল। পিছাতে পিছাতে এক সময় তারা নিজেদের ভূখন্ডে এসে ঠেকে। একদিকে, সোভিয়েত লাল ফৌজ বা রেড আর্মি এবং অন্যদিকে, পশ্চিমা মিত্র জোট উভয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করছিল। তবে এক্ষেত্রে রেড আর্মি ছিল অগ্রগামী।

পশ্চিমা জোট বার্লিনে ছত্রী সেনা অবতরণের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সে পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট হিসেব করে দেখেছিলেন যে, পশ্চিমা মিত্রবাহিনীর ছত্রী সেনারা বর্লিন অবতরণ করলে কমিউনিস্ট পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য। এ পরিস্থিতিতে জার্মানীর পতন ঘটার পরিবর্তে পতন ঘটবে পশ্চিমা মিত্র জোটের। তাই তিনি বৃথা রক্তক্ষয়ের ঝুঁকি নেন নি।

অসাধারণ সংগঠন শক্তি, বুদ্ধি, প্রবল ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও হিটলারের ধ্বংসের কারণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার অহমিকা, রক্তপিপাসু দানবের মতো মানবজাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা। ১৯৪৪ সালে লাল ফৌজ স্বদেশভূমি থেকে জার্মান বাহিনীকে সম্পূর্ণ উৎখাত করে একের পর এক অধিকৃত

যতই চারদিক থেকে পরাজয়ের সংবাদ আসতে থাকে হিটলার উন্মত্তের মতো হয়ে ওঠেন। ১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা তার স্টেইনের সৈন্যবাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তার অধিকাংশ সঙ্গীই তাকে পরিত্যাগ করে মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠায়। এসময় মিত্রবাহিনীরআক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব দেখে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে

সর্বত্রই যখন পরাজয়, নিজের অহমিকায় খুব উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন হিটলার, মিত্রশক্তিকে সামান্যতম গুরুত্ব দিতেন না। নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তার অনেক সেনাপতিই তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। দুর্ভাগ্যবশত তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। হিটলার বুঝতে পারেন তার সব স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে গেছে। বার্লিনের প্রান্তে রুশ বাহিনীর কামানের গর্জন শোনা যাচ্ছে।

হিটলার ক্রমশই সঙ্গীসাথীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকেন। সকলের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ সময়ই বাঙ্কারে থাকতেন। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এসময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রেমিকা ইভা ব্রাউন। হিটলার তার বারো বছরের সঙ্গিনী ইভাকে বার্লিন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হিটলারকে পরিত্যাগ করেননি। সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের দখল নিয়েছিল ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসেই। যুদ্ধের ফলাফল বুঝতে পেরেই হিটলার আত্মহত্যা করেন ৩০ এপ্রিল।

হিটলার ইভা

হিটলার ইভা (ইউটিউব)

৩০ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সাথে শেষবারের মত দেখা করে আসেন। এসময় তিনি তার সহযোগীদের বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের অংশের কোন চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষন পরেই গুলির শব্দ শোনা যায়। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার সদ্য বিবাহিতা বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

চারদিক থেকে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে যান এবং এ অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। গোটা বিশ্বধ্বংসের খেলা শেষ করে নিজেই শেষ হয়ে যান অ্যাডলফ হিটলার।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলা ও জাপানের আত্মসমর্পন

জার্মানির পতনের পর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে । ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস ইউরোপে তখন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপান তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৪৫ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া জাপানকে আত্মসমর্পন করতে বলে। জাপান পাত্তা দেয় নি।

হিরোশিমা শহরটি জাপানের রাজধানী টোকিও শহর থেকে ৫০০ মাইল দূরে। ৬ আগষ্ট সকাল বেলা তখনো হিরোশিমা জনপথ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেনি, জীবিকার সন্ধ্যানে কিছু মানুষ ছুটে চলছিল। সকাল ৮.১৫ । হঠাৎ হিরোশিমা শহরের আকাশে দেখা দিলো দৈত্য বিমান বি-২৯ ইনোলো গে । যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী বিমান বি-২৯ ইনোলো গে জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে।

হিরোশিমায় বোমা বিস্ফোরনের স্থানটি ছিল বানিজ্যিক ও অফিস আদালতের স্থান। বিষ্ফোরনের সাথে সাথে ৫০০ মিটার বৃত্তের মাঝে আলীশান দালান চোখের পলকে নেতিয়ে পড়ে। ৫ বর্গমাইল এলাকা ছাই ও ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়। বিস্ফোরনের সময় নগরীতে লোকসংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৫০ হাজার।১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোকজন মারা যায় বলে ধারনা করা হয়।

লিটল বয়

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: ইউরেনিয়াম -২৩৫

ওজন: চার হাজার কেজি, দৈর্ঘ্য: ৯.৮৪ ফুট, পরিধি: ২৮ ইঞ্চি

বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ সুপারফোর্টেস

পাইলট এর নাম : কর্নেল পল টিবেটস

বোমা পতনে সময় লাগে : ৫৭ সেকেন্ড

মূল আঘাত: শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক

বিস্ফোরণের মাত্রা: ১৩ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য

আবার জাপানকে আত্মসমর্থনের জন্যে আহবান করা হয়। এবারও জাপান পাত্তা না দিলে জাপানের আরেকটি ব্যস্ত শহর নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট পুনরায় ফ্যাটম্যান নামের আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। বোমা বহনকারী বিমানটি ছিল বোয়িং বি-29 Superfortress Enola গে , আর সেই বিমানের পাইলট ছিলেন কর্নেল পল । আর হামলা পরিচালনা করেন Tibbets এর 393rd বমবার্ডমেন্ট স্কোয়াড্রন, ভারি অফ, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বিমান বাহিনী । এটি ছিল প্রথম আণবিক বোমা যা অস্ত্র হিসাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪৭মিনিট। নগরীর সবাই তখন গভীর ঘুমে বিভোর। সেই ঘুম থেকে অনেকেই চিরনিদ্রায় চলে গিয়েছে। হিরোশিমার পুনরাবৃত্তি হলো নাগাসাকিতে। নিক্ষিপ্ত হলো আনবিক বোমা” ফ্যাটম্যান”। নিমিশেই ঘুমন্ত নগরীকে পরিনত করলো মৃত্যু নগরীতে। এ হামলাতেও প্রায় ৭৪০০০ লোজ মারা যায়। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট জাপান মিত্র শক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হয়।

ফ্যাট ম্যান

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: প্লুটোনিয়াম-২৩৯

ওজন: চার হাজার ৬৩০ কেজি, দৈর্ঘয: ১০.৬ ফুট, পরিধি: পঁাচ ফুট

বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ বক্সকার

পাইলট এর নাম : মেজর চার্লস ডব্লু সুইনি

বোমা পতনে সময় লাগে : ৪৩ সেকেন্ড

মূল আঘাত: মিতসুবিশি স্টিল ও অস্ত্র কারখানা এবং মিতসুবিশি-উরাকামি সমরাস্ত্র কারখানার মাঝে

বিস্ফোরণের মাত্রা: ২১ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য

পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন। জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক জনসাধারণ।

নিরীহ লক্ষ মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করবার শক্তিমত্তা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আসলে যা করতে চেয়েছে সেটা হল প্রথমত, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে নিজের নেতৃত্ব নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়নকে সরাসরি হুমকি প্রদর্শন; তৃতীয়ত, জাপানের উপর পূর্ণ দখল নিশ্চিত করা। ১৯৪৫ সালের পারমাণবিক বোমাবর্ষণের পক্ষে খুনীরা অনেক সময় সাফাই গায় এই বলে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবার জন্যই এই ধ্বংসলীলা করতে হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। কারণ আসলে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মে মাসেই। ১৯৪৫ এর আগস্ট মাসে বোমা ফেলে বস্তুত আমেরিকা হরর ছবি তৈরির প্র্যাকটিস করেছে।

অবশেষে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৪৫ সালের ২রা সেপ্টেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের তারিখ ধরা হয়।

হিটলার কেন পরাজয় বরণ করতে হয় ?

অ্যাডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের জন্য দ্রুত কিছু অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়েছিলেন। সেই হিটলারের কিছু সিদ্ধান্তের কারণেই জার্মানির শেষ যুদ্ধে পরাজয় হয়েছিল। হিটলার বাস্তব তো মেনে নিতেনই না, পাশাপাশি জেনারেলদের উপদেশ না শুনে নিজেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতেন অহরহ। এ কারণেই নাজি জার্মানদের হার দ্রুত নিশ্চিত হয়ে যায়। চলুন ওয়ার হিস্টোরি অনলাইনের সৌজন্যে জেনে আসি হিটলারের যুদ্ধে পরাজয়ের ১০টি কারণ।

হিটলারের মিত্ররা ছিল নখদর্পহীন

হিটলার ইংল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানায় জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু ইংল্যান্ড তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে হিটলার খর্ব শক্তির দেশ নিয়ে তৎকালীন বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে বসেন। ইতালি এমনিতেই হিটলারের প্রথম পছন্দ ছিল, কারণ দুই দেশ একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। তবে তাদের যুদ্ধ সামগ্রী ছিল বড্ড সেকেলে। রুমানিয়া ও হাঙ্গেরি জার্মানদের সঙ্গে যুক্ত হলেও কেউ হিটলারকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি।

পিছু না হটার নীতি

১৯৪১-১৯৪২ সালে হিটলার জার্মান বাহিনীকে বাঁচিয়েছিলেন পিছু হটতে বলে, যখন এই বাহিনী মস্কো দখলে ব্যর্থ হয়। তবে এরপর হিটলার গ্রহণ করেন পিছু না হটার নীতি। তাঁর এই নীতির কারণেই তিনি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে পরজয় বরণ করেন।

সঠিক প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার

তৎকালীন সেরা যুদ্ধ প্রযুক্তি ছিল জার্মানদের কাছেই। সেরা প্রযুক্তির যুদ্ধসামগ্রীর কারণে জার্মানদের সমীহ করতে বাধ্য হতো অন্য রাষ্ট্রগুলো। তাদের বিশালাকার ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের সঠিক ব্যবহার হলে যেকোনো যুদ্ধেই তারা জয়লাভ করতে পারত। কিন্তু এসব ব্যবহারের পরিবর্তে তারা জোর দিয়েছিল যুদ্ধ কৌশল, সৈন্য ও তাদের ছোট ছোট প্যানথার ট্যাংকের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

১৯৪১ সালের ১১ ডিসেম্বর হিটলার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৭ ডিসেম্বর জাপানের পার্ল হারবারের আক্রমণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিটলার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ঘোষণা দেন। এর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ ছিল। এটি ছিল হিটলারের এক বিশাল ভুল।

কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব গ্রহণ

ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে হিটলারের মস্কো আক্রমণ কিছুটা স্থগিত হয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর জার্মানদের বিরুদ্ধে দারুণ পাল্টা আক্রমণ গড়ে তোলে। দখলকৃত জায়গা ছাড়তে আর বা সত্য স্বীকারে হিটলার ছিলেন নারাজ। ফলে হিটলার নিজেকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই যুদ্ধের কৌশল সাজাতেন এবং জেনারেলদের তাঁর কথামত চলতে হতো।

জেনারেলদের কথা না শোনা

প্রথম দিকে নিজের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু জয়ের ফলে হিটলার নিজেকে মিলিটারি জিনিয়াস ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু যুদ্ধের দিক যখন পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন হিটলার তাঁদের জেনারেলদের দায়ী করেন। যুদ্ধে হারার কারণ হিসেবে তাঁর জেনারেলরা তার আদেশ মোতাবেক কেন কাজ করলেন না, এ নিয়ে দোষারোপ করেন। ১৯৪৪ সালে বুলগের যুদ্ধে তাঁর আদেশ মোতাবেক কাজ করতে গিয়েই জার্মানরা হেরে বসে। ফলে জার্মান ও তাদের মিত্রদের হার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার শীত

রাশিয়া দখলের জন্য হিটলার ছিলেন বদ্ধপরিকর। তিনি তাঁর জেনারেলদের বলেন, ‘আমাদের শুধু রাশিয়ার দরজায় লাথি মারা বাকি, তা হলেই রাশিয়া পচা কাঠের মতো ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাদের জয়ের আগে রাশিয়ায় শীতের আগমন ঘটে। কিন্তু হিটলার বাহিনী রাশিয়ার শীতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। গরমের পোশাকে রাশিয়ার প্রবল শীতে যুদ্ধ করতে গিয়ে মস্কো দখলে ব্যর্থ হয় জার্মানরা।

গ্রিস আক্রমণ

রাশিয়া আক্রমণের আগে জার্মানরা গ্রিস আক্রমণ করে বসে। এর ফলে রাশিয়া আক্রমণে ছয় সপ্তাহ দেরি হয়ে যায় জার্মানদের। এই দেরির কারণে শরৎকাল শেষ হয়ে রাশিয়ায় শুরু হয়ে যায় শীত। ফলে অপারেশন বারবোসা রাশিয়া ধ্বংস শেষ করার আগেই রাশিয়ার রাস্তায় শীত নেমে আসে, যা বিপাকে ফেলে জার্মান বাহিনীকে।

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল লড়াই এটি। স্তালিনগ্রাদেরর যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। ককেশাসের তেল ক্ষেত্রের জন্য জার্মানদের সিক্সথ আর্মি পুরো শহর ঘিরে ফেলতে পারত। কিন্তু হিটলার তাদের আদেশ দেন শহরের প্রতি গলি, ঘর এবং আনাচে কানাচে যুদ্ধের জন্য। উলটা সোভিয়েত বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। হিটলার তাদের পিছু হটতে বারণ করেন। ফলে তাঁদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে।

দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ

হিটলারের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাশিয়া কব্জা করা। কিন্তু জার্মানির পশ্চিম সীমান্ত রক্ষায় জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্স ও ব্রিটেন আক্রমণ করার। ফ্রান্স জয় ছিল এক সপ্তাহের ব্যাপার এবং ব্রিটেনের বিপক্ষে জয় হিটলারকে পশ্চিম সীমান্তে সুরক্ষা দিয়েছিল। এরপর হিটলার যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে বসেন। ফলে হিটলারকে যুদ্ধ করতে হয় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর আমেরিকা ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। হিটলার প্রতিবারই তাঁর সেনাবাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে ভাগ করতেন। নিজের শক্তির পরিমাণ না জেনে আক্রমণ করতে থাকলে যে সব জায়গাতেই জয়ী হওয়া সম্ভব নয়, এটা হিটলার হয়তো বুঝতে চাননি। তাই তাঁকে শেষে হার স্বীকার করে নিতে হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটনা । এর ফল হয়েছিল মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী । এই যুদ্ধের ফলে আমেরিকা ও রাশিয়া পৃথিবীর মধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হয় । ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে । ইতালিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের জায়গায় প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । জার্মানি দ্বিখন্ডিত হয়ে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি দুইটি দেশে বিভক্ত হয় ।

২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী আদর্শ পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে । সর্বপ্রথম রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শ জয়যুক্ত হয় । পরে চিন, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ইত্যাদি দেশ সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় । এ যুদ্ধের প্রভাবে সমাজতান্ত্রিক প্রবক্তা রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট দল আত্মপ্রকাশ করে । পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় ।

একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি এবং তাঁদের মিত্র দেশগুলি, আর অন্যদিকে রাশিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ । এর মধ্যে আবার কয়েকটি দেশ নিরপেক্ষ থেকে যায় । ভারত তার অন্যতম । এভাবে দুটি শিবিরে বিভক্ত দেশগুলির মধ্যে এক ধরণের স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়, যার নাম ঠান্ডা যুদ্ধ ।

৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পরাধীন দেশগুলিতে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই । বিশেষত কলোনিয়াল অঞ্চলগুলো তাদের স্বাধীনতার জন্যে সুচ্চার হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পরে যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটতে আর দেরি নেই । দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তারা নিজ নিজ উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দানে তৎপর হয় । ফলে অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে । একই ধারায় ভারত, পাকিস্থানের কতৃত্ব ব্রিটেন ছেড়ে দিতে হয়।

(৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা হয় । আজ পর্যন্ত এই বিশ্ব সংস্থা পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে ও মানুষের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।

৫। লিটল বয় এর ধ্বংসজজ্ঞ এতটাই ছিল যে, ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কাঠের যত স্থাপনা ছিল সবই মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। চোখের নিমিশে পুরে ছাই হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ স্থান। ৬৬ বছর পরেও হিরোশিমা নাগাসাকি শহরের মানুষেরা তেজস্ক্রিয়তার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনো দেখা যায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গসহ নানা প্রকার রোগব্যাধী।

৬। সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে এ সময়ে অগণিতসংখ্যক লোক শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নেরও অধিক লোক শরণার্থী ছিল। বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন জার্মান বেসামরিক নাগরিক পূর্ব প্রুশিয়া, পোমারানিয়া এবং সিলেসিয়া রাজ্য থেকে রেড আর্মির প্রচণ্ড আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ম্যাকলেনবার্গ, ব্রান্ডেনবার্গ এবং স্যাক্সনিতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।

৭। পটসড্যাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মিত্রশক্তি অনুমোদন না করায় যুগোস্লাভিয়া এবং রোমানিয়ায় অবস্থানরত হাজার হাজার জাতিগত জার্মানদেরকে সোভিয়েত ইউনিয়নে দাস শ্রমের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশী শরণার্থী স্থানান্তর প্রক্রিয়া। ১৫ মিলিয়ন জার্মানদের সবাই এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এছাড়াও, দুই মিলিয়নেরও অধিক জার্মান বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বিতাড়িত হয়ে প্রাণ হারান !

শেষ কথা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে বহু কারন হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে , এটা নাহলে ওটা হলে ভালো হতো – এরকম । কিন্তু কয়েককোটি মানুষের প্রান নেওয়া , চরম ধ্বংসের এই মহাযুদ্ধের শেষে মানবজাতির প্রাপ্তির ভাঁড়ার দেখলে মনে হতে বাধ্য – প্রধান ভুলের কথাতো এখানে বলাই নেই ! আগ্রাসনের ভুল , একনায়কতন্ত্রের ভুল , বর্ণবিদ্বেষের ভুল , সর্বোপরি –যুদ্ধ্বচিন্তার ভুল … যে ভুলগুলি মানবজাতি আজও বহন করে চলেছে ।

বিজয়ী শক্তি যেমন তাদের গৌরবগাঁথার বর্ণনা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তেমনি পরাজিত শক্তি তাদের ইতিহাস লেপ-কাঁথার নিচে লুকিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ফলাফল হয়, এক সময় মূল ঘটনার বিকৃতি ঘটে ।

ছয় বছর ধরে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের বর্ণনা হাজার কয়েক শব্দের সীমাবদ্ধতায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ওয়েবসাইটে যেতে হয়েছে। সবার বর্ণিত বর্ণনা থেকে নির্যাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমিও অন্যের বর্ণিত তথ্যই প্রদর্শন করতে হয়েছে আমারও ভুল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবান রইল।

তথ্য সূত্রঃ

পিপীলিকা বাংলা ব্লগ

১। https://wikipedia.org

২। http://egiye-cholo.com

৩। https://roar.media

৪। http://www.jugantor.com

৫। ntvbd.com

৬। আরো সংখ্য ওয়েব পোর্টাল।

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল।

ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।

সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।

কিন্তু ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনী বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরে আসতে পারবে।

কিন্তু ইসরায়েল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।

Skip YouTube post, 1

ভিডিওর ক্যাপশান:সতর্কবাণী: তৃতীয়পক্ষের কন্টেন্টে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে

End of YouTube post, 1

ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

মি: পেরেজ বলেন, “অধিকাংশ জমি ফিলিস্তিনদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোন ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?”

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চেয়েছিলেন নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।

১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন।

তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে।

ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে।

বিবিসি বাংলার আরো খবর:

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা: কার জন্য কী?

চীনের ভাইরাস আক্রান্ত উহানের একাত্মতার গল্প

ধর্মান্তরিত পরিবারকে ভারতে ফেরত পাঠানোর নেপথ্যে

আড়ং কর্মীর মোবাইলে চেঞ্জিং রুমের শতাধিক ভিডিও

অতি উজ্জ্বল একটি তারা কি বিস্ফোরিত হবে?

জেরুজালেম

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

১৯৬৫ সালে জেরুজালেম শহর

তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’ হিসেবে পরিচিত।

ইহুদীদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দিবে।

যদিও রোমান সময় থেকে ইহুদিদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সে জায়গায় বসবাস করতো।

ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরো তরান্বিত করেছে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন।

ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে।

তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

ফিলিস্তিনী আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা।

কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

ফিলিস্তিনদের উপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতো কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল।

ইহুদীরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল।

১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে।

সেজন্য আরব এবং ইহুদী- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন।

তথ্যসূত্র: BBC/bbc website

প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। এর পেছনে কী যুক্তি আছে? অবশ্যই ইসরায়েল অবৈধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের দক্ষিণ সিরিয়া অংশ থেকে আলাদা করা ফিলিস্তিন ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত একটি ভৌগোলিক অঞ্চল ছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ বেসামরিক প্রশাসন ফিলিস্তিন পরিচালনা করে। ব্রিটিশরা ১৯২২ সালের জুন মাসে বিলুপ্ত লীগ অব নেশনস থেকে ফিলিস্তিনের জন্য কর্তৃত্ব লাভ করে। স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে অভ্যুদয়ের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ফিলিস্তিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ব্রিটিশ সরকারের অভিবাবকত্বের অধীন করা হয়। লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্রিটেনকে এই কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। সাবেক উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিকৃত অঞ্চলগুলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত পরিচালনার জন্য কর্তৃত্ব প্রদান প্রথা চালু করা হয়েছিল লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “To those colonies and territories which as a consequence of the late war have ceased to be under the sovereignty of the States which formerly governed them and which are inhabited by peoples not yet able to stand by themselves under the strenuous conditions of the modern world, there should be applied the principle that the well-being and development of such peoples form a sacred trust of civilisation and that securities for the performance of this trust should be embodied in this Covenant. The best method of giving practical effect to this principle is that the tutelage of such peoples should be entrusted to advanced nations who by reason of their resources, their experience or their geographical position can best undertake this responsibility, and who are willing to accept it, and that this tutelage should be exercised by them as Mandatories on behalf of the League. The character of the mandate must differ according to the stage of the development of the people, the geographical situation of the territory, its economic conditions and other similar circumstances.

Certain communities formerly belonging to the Turkish Empire have reached a stage of development where their existence as independent nations can be provisionally recognized subject to the rendering of administrative advice and assistance by a Mandatory until such time as they are able to stand alone. The wishes of these communities must be a principal consideration in the selection of the Mandatory………..”

লীগ অব নেশনস কর্তৃক ব্রিটেনকে কর্তৃত্ব প্রদত্ত দুটি অঞ্চল ছিল। একটি জর্ডান নদীর পশ্চিম অংশ যা ফিলিস্তিন বলে পরিচিত ছিল। এই অংশ ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আরেকটি অংশ ছিল পূর্ব তীরের ট্রান্সজর্ডান যা আধা স্বায়ত্তশাসিত হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল। ট্রান্সজর্ডান ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৮ সালে নাম বদলে জর্ডান রাখা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটেন। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকরা ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। সেই সময়ের ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর-এর নাম অনুসারে এটি বেলফোর ঘোষণা হিসেবে খ্যাত। ইহুদি রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে ব্রিটিশ শাসকরা বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এনে জড়ো করতে থাকে। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদিদের এই সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদিদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। ১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদি সন্ত্রাসী বাহিনী ‘হাগানাহ’ গঠিত হয়। এ বাহিনী ইহুদিবাদীদের রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাগানাহ-র পাশাপাশি ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনদের বাধ্য করে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে। ফিলিস্তিনিদের জমিজমা ইহুদিরা দখল করে নেয়। ১৯২২ সালে ইসরায়েলে ইহুদি ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, ১৯৩১ সালে তা হয় ২৩ শতাংশ, আর ১৯৪৭ এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ শতাংশে। ব্রিটিশদের পর ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ। ফিলিস্তিন বিষয়ে লীগ অব নেশনস কর্তৃক ব্রিটিশ সরকারকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের শর্ত ও বিলুপ্ত লীগ অব নেশনসের গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে জাতিসংঘ। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিবাদীদের দিয়ে মুসলমান ও ইহুদিদের জন্য দু’টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। আরব রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বলে যে, কেবল ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপান্তরই ম্যান্ডেটের উদ্দেশ্যের যৌক্তিক পরিণতি লাভ করবে ও জাতিপুঞ্জের সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আরব রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান ব্যতীত সাধারণ পরিষদের আর কোনও সুপারিশ করার এখতিয়ার নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালার পরিপন্থী এবং নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই। সাধারণ পরিষদ কোনও বৈশ্বিক সরকার নয়, কোনও রাষ্ট্রের জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে ওই রাষ্ট্রকে ভাগ করার, বিধিবিধান তৈরি করার, কোনও চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার সাধারণ পরিষদের নেই। এদিকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা Arab Higher Committee ১৯৪৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে এক লিখিত আবেদনে জানায় যে, ফিলিস্তিন বিভাজনের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। জাতিসংঘ সনদের কোথাও সাধারণ পরিষদকে কোনও রাষ্ট্র বিভাজন করে নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টির ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। ফলে সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত আইন ও ক্ষমতা-বহির্ভূত বিধায় বাতিল। Arab Higher Committee ফিলিস্তিন বিষয়ে আইনগত মতামতের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রেরণেরও দাবি জানায়। কিন্তু সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক আদালতের মতামত গ্রহণের বিষয়টি কখনোই পরিষদের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এমতাবস্থায় Arab Higher Committee জাতিসংঘকে জানিয়ে দেয় ফিলিস্তিনি জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে জবরদস্তিমূলক বিভাজন করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলে Committee তাকে আগ্রাসন বলে বিবেচনা করবে এবং আত্মরক্ষার্থে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রতিহত করবে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি চীনের প্রতিনিধি মত দেন যে, নিরাপত্তা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার জন্য। এটি খুবই দুঃখজনক হবে, রাষ্ট্রভাগের নাম করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে জাতিসংঘ নিজেই যদি যুদ্ধের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৫ মে ১৯৪৮ তারিখে ফিলিস্তিনের ওপর লীগ অব নেশনস কর্তৃক প্রদত্ত তাদের কর্তৃত্বের (ম্যান্ডেট) অবসানের ঘোষণা দেয়। ব্রিটিশ সরকারের ম্যান্ডেট অবসানের সময়সীমার মধ্যে প্যালেস্টাইন বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হলে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হয়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ওয়ারেন অস্টিন প্রস্তাব করে –

এক. ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অবসানের পর প্যালেস্টাইনের বিষয়ে তদারকি করার জন্য একটি ট্রাস্টিশিপ গঠন করা হোক যাতে আরব ও ইহুদিরা আরও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছার সুযোগ পায়।

দুই. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে সমাধানের নতুন উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তিন. বিশেষ অধিবেশনের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রভাগের পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে U.N. Palestine Commission কে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, কানাডার প্রতিনিধি আরও বিকল্প খোঁজার আহ্বান জানান। এমনকি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে এক রাষ্ট্র সমাধানকেও কানাডা সমর্থন করে বলে কানাডার প্রতিনিধি নিরাপত্তা পরিষদের সভায় মত দেন।

এমন পরিস্থিতিতে ইহুদিদের সংগঠন Jewish Agency for Palestine-এর পক্ষ থেকে প্যালেস্টাইনের তদারকির জন্য কোন ট্রাস্টিশিপ গঠনকে সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয় এ মর্মে যে, এটি ইহুদিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা। উদ্বেগাকুল এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা একতরফা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তাদের ঘোষণার ভিত্তি হিসেবে সাধারণ পরিষদের ১৮১নং সিদ্ধান্তকে উল্লেখ করে যেখানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদের যে ১৮১ নং সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে তা নিরাপত্তা পরিষতে অনুমোদিত হয়নি। তদুপরি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল জাতিসংঘ। আমাদের বাংলাদেশে ভূমিদস্যু বা ভূমিখেকোরা যেমন অন্যের জমি জোর করে দখল করে নিয়ে নিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে আবাসিক, বাণিজ্যিক প্লট, ভবন তৈরি করে মালিক বনে যায়, আন্তর্জাতিক ভূমিদস্যু ইসরায়েলও তেমনই ফিলিস্তিনিদের জমি-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করে নিয়ে নাম দিয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ন্যূনতম চারটি উপাদানের উপস্থিতি আবশ্যক। এগুলো হলো- একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, একটি কার্যকর সরকার ও সার্বভৌমত্ব। ইহুদিদের একটি জনগোষ্ঠী থাকলেও অন্য তিনটি উপাদান অনুপস্থিত ছিল। যে ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়েছে তা ছিল ফিলিস্তিনিদের। ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হলেও সেই রাষ্ট্রের তখনও কোনও সরকার ছিল না।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ৩ দিন পর (১৭ মে ১৯৪৮) ড্যাভিড বেন গুরিয়ন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। সরকারবিহীন ও অন্যের মালিকানাধীন ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন অবান্তর। আশপাশের আরব দেশগুলো ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে হামলা চালালে ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের পুরোটাই দখল করে নেয় (শুধু গাজা মিসরের দখলে, এবং পশ্চিম তীর জর্ডানের দখলে ছিল)। আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমাগত তিক্ততা এবং সীমান্তে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ১৯৬৭ সালে আবার আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। পাঁচ দিনের যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া এবং জর্ডানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের কাছে পরাস্ত হয়। ইসরায়েল গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেম দখল করে। অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইসরাইল জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ৫৬ শতাংশ ভূমির বাইরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রর জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ শুরু করে। ইতোমধ্যে সাবেক ফিলিস্তিনের ৮০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদি বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে। ছয় লাখের বেশি ইহুদি এখন এসব এলাকায় থাকে। ফিলিস্তিনিরা বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো অবৈধ বসতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না। পূর্ব জেরুজালেম, গাজা এবং পশ্চিম তীরে যে ফিলিস্তিনিরা থাকেন, তাদের সঙ্গে ইসরায়েলিদের উত্তেজনা প্রায়শই চরমে ওঠে। সম্প্রতি পূর্ব জেরুসালেম থেকে কিছু ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি ফিলিস্তিনিদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। রমজানের শুরু থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তখন প্রায় প্রতি রাতেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এরই পরিণতি চলমান ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী আগ্রাসন।

বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হলো দখলদার ইসরাইলকে মেনে নেওয়া। তবে শর্ত হলো, জাতিসংঘের ১৮১নং প্রস্তাব অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ ভূমিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মেনে নিতে হবে ইসরাইলকে। ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে এই সমাধান সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয় না। এর ফলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ঘরবাড়ি ফেরত দিতে হবে; পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতি সরিয়ে নিতে হবে; জেরুসালেম নগরী কারও ভাগে না দিয়ে আন্তর্জাতিক তদারকিতে ছেড়ে দিতে হবে কিংবা উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি করতে হবে; সর্বোপরি ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গত ২৫ বছর ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে থেমে থেমে। কিন্তু সংঘাতের কোনও সমাধান এখনও মেলেনি। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসরায়েলকে ১৮১নং প্রস্তাব মানতে হবে যার সম্ভাবনা একবারেই ক্ষীণ। ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ভারতও। তাই ইসরায়েল কোনও কিছুই পরোয়া করে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের দুর্বৃত্তপনা বন্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিলেও মুসলমানদের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রহারা ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শরণার্থী হিসেবে অন্য রাষ্ট্রের অনুকম্পায় বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করা। এ বিষয়ে তাদের জবাবদিহি রয়েছে স্বয়ং স্রষ্টার কাছে। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য সংগ্রাম করবে না? যারা বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর থেকে আমাদের বাহির করে অন্যত্র নিয়ে যাও এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের অভিভাবক করো এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় নিযুক্ত করো।” (সুরা নিসা: ৭৫)। যারা ফিলিস্তিনিদের কয়েক দশকের ভয়ংকর দুর্দশা থেকে মুক্তি দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারতেন সেসব মুসলিম শাসকদের মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর অনৈক্য ও অবিশ্বাস। আর অধিকাংশই ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়নকারী, নির্যাতনকারী, এমনকি মুসলিমদের প্রথম কিবলা পবিত্র আল আকসা মসজিদে আক্রমণকারী ইসরাইল ও তাদের দোসরদের বন্ধু বানিয়েছেন নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। তাই ইসরাইলের ভয়ংকর আগ্রাসনে অসহায়, বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নিরাপদে সাইডলাইনে বসে নীরবতা পালন করছেন।

তথ্যসূত্র:

লেখক: মো. জাকির হোসেন

অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

উপসংহার: গত শতকের চল্লিশের দশকে আর্য কিংবা নীল রক্ত কিংবা রাজকীয় রক্ত অথবা স্বস্তিকার শক্তির ক্ষমতার বলে ইহুদিরা নিজভূমে যেখানে কচুকাটা হচ্ছিল৷ হচ্ছিল ধর্ষণ আর পাশবিক অত্যাচারের শিকার৷ তখন তথাকথিত বিশ্বমানবতা ভেজা গামছা দিয়ে বুক মোছানো ছাড়া করেনি কিছুই৷ অথচ বিশ্ব মুসলিম শুধু তাদের পাশে দাঁড়ায়নি অফুরন্ত জাত ভাই ভেবে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে৷ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ দিয়েছে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা৷ ভাগাভাগি করেছে সুখ-দুঃখ৷ প্রতিদান কী পেল ফিলিস্তিনিরা? আশ্রয় দেয়ার জন্য তারাই দেশছাড়া৷ খাবার দিয়েছে বলে পেতে হচ্ছে বোমার আঘাত৷ তবে কি নাৎসি বাহিনী কিংবা সেই স্বস্তিকা পরিহিত হিটলারই ঠিক ছিল? তা নাহলে আজ ইসরাইলকে কেন পরম বন্ধু হিসেবে খুঁজে নিতে হয় আর এক আর্য তথা স্বস্তিকা তথা নীল রক্তের ধারক-বাহককে? অথচ ক”টা দিন আগেও ভারত যখন করোনায় বিপর্যস্ত তখন সবচেয়ে আগে চির শত্রু পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরব অক্সিজেন আর এম্বুলেন্স নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল৷ আর এটাই প্রকৃত মানবতা৷ যাকে বাংলায় বলে শান্তি৷ ইংরেজিতে Peach. আর আরবিতে বলে “ইসলাম”৷

বনি ইসরাঈলদের তাবুতে সাকিনা

নবী ইব্রাহীম  (আঃ) এর দুজন পুত্র ছিলো। তারা যথাক্রমে বিবি সারার গর্ভে ইসহাক (আঃ) ও বিবি হাজেরার গর্ভে ইসমাইল(আঃ) । আল্লাহর আদেশে  ইসমাইলকে রেখে আসলেন নজদে (মক্কায়) ও ইসহাক (আঃ)কে রেখে এলেন ফিলিস্তিনে। ইসমাইল (আঃ) এর বংশ হতেই আমাদে শেষ নবী রাসুল (সঃ)। আর ইসহাক (আঃ) এর বংশে এসেছে অনেক নবী পয়গম্বর। ইসহাক (আঃ) এর দুই পুত্র যথাক্রমে ইসমাইল ও ইয়াকুব (আঃ)।

ইয়াকুব  (আঃ) ই সেই নবী যাঁর আর এক নাম ছিলো  “ইসরাঈল”, এবং তারই এগারোজন পুত্র ছিলো দুই স্ত্রীর গর্ভে। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে দুজন, একজন ইয়ুসুফ (আঃ) অপরজন বনি আমিন। ইয়ুসুফ  (আঃ) যখন মিশরের বাদশাহ হলেন তখন পারস্যের ফারানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি তাঁর ভাইদেরকে মিশরে আশ্রয় দান করেন। সেখানেই তারা বংশ বিস্তার করে বনি ইসরাঈল নামে। এরাই বর্তমানে ইজরায়েল নামে পরিচিত। এদেরই নবী দাউদ(আঃ) (কিং ডেভিড) তদ্বীয় পুত্র কিং সোলায়মান (আঃ)। এদেরই রাসুল হয়ে এসেছিলেন মুসা (আঃ)। মুসা  (আঃ) এদেরকেই ফেরাউনের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে বাঁচিয়ে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তুর পাহাড়ের পাদদেশে এনে পুনর্বাসন করেছিলেন।

যাক এসব অনেক ঘটনা। বলে শেষ করা যাবে না। তবে এদের মূল শিকড় একই, তার মধ্য হতে দুটি শাখা বেরিয়েছে। ঐ এগারো ভাইয়ের মধ্যে একজনের নাম ছিলো  “ইয়াহুদা” তার সন্তানাদিরাই ইহুদি নাম ধারণ করেছে। পরবর্তীতে ঈসা  (আঃ)কে মেরে ফেলেছে ভেবে এই শাখাটিই উল্লাস করছিলো এবং যাবুর কিতাব, যা দাউদ (আঃ)  এর উপর অতীর্ণ হয়েছিলো সেটাকে বদলে ফেলে নিজেদের মতো করে লিখে নিয়েছিলো। যাক সেসব কথা, আজকের মূল আলোচ্য বিষয়ে  ফিরে আসি।

কোরআনে সূরা বাকারার ২৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বনি ইসরাঈলদের বলেন-

“তোমাদের নিকট শিঘ্রই একটি সিন্দুক আসবে। যে সিন্দুকের সাথে জড়িয়ে আছে কমছেকম ১০০ এর অধিক নবীদের ইতিহাস। তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হিসেবে এসেছে এই সিন্দুক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।”

এ সিন্দুকের ভিতরে ছিলো আদম ও মুসা (আঃ) এর হাতের আসা পাগড়ি, হারুন ও ইব্রাহীম (আঃ) এর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ইত্যাদি। এই সিন্দুকটি একজনের পর একজনের হাতে এসেছিল, তারপর বনি ইসরাঈলের নিকট চলে আসে। এই সিন্দুকের বরকতে ওরা প্রাণশক্তি ও হৃদয়ে প্রশান্তি পেত। ওরা সব রকম যুদ্ধে উৎসবে সবরকম বিপদে আপদে এই সিন্দুকটিকে সসম্মানে সামনে এনে রাখতো।

বনি ঈসরাঈলরা এই সম্মানিত সিন্দুক রক্ষা করার জন্য একদল স্পেশাল সৈন্যও নিয়োগ করেছিলো। আল্লাহপাকের এতো নাজ নেয়ামত এ সিন্দুকের মাধ্যমে পেয়েও তারা আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও নাফরমানীতে লিপ্ত ছিলো। বনি ঈসরাঈলদের মধ্যে একদল ছিলো মুশরিক, তাদের নাম ছিলো আমালিকা। তারা ফিলিস্তিনে থাকতো। হকপন্থি ইসরাঈলদের সাথে আমালিকরা একযুদ্ধে এই সিন্দুকটি কেড়ে নেয়।

পরবর্তীতে মুশরিকরা তাদের শহরে এ সিন্দুক রাখতে রাখতে তাদের শহরে মহামারী দেখা দিলো। এই সেই মারাত্বক মহামারীর সূচনা হোলো  যাকে আমরা প্লেগ বলে জানি। সেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা গেলো। অবশেষে মুশরিক আমালিকরা সিন্দুকটিকে পর পর পাঁচটি শহরে পাঠালো, ঐ পাঁচ শহরও  মহামারীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

বনি ইসরাঈলরা বহু বছর এই সিন্দুকের জন্য বহু কান্নাকাটি করেছিল। সেই সময় নবী সালাম (আঃ) নামে একজন তাদের নবী ছিলেন। তিনি ইসরাঈলদের কান্নাকাটি দেখে তাদের ডেকে বললেন,  তোমাদের মধ্য থেকে “তালুত “কে তোমাদের নেতা  নির্বাচিত কর। তালুত ছিলো একজন ধর্মপ্রাণ ও ন্যায় পরায়ন লোক।

অতপর মুশরিকদের নিকট প্রস্তাব পাঠাও তারা যেন তোমাদের “তাবুতে সাকিনা” আবার তোমাদেরকে ফেরত দেয়। তারা নবীর এ হেন সরল কথা শুনে খুব জোর বিদ্রুপ করল।

নবীকে বললো সমস্বরে, পাগল নাকি। শত্রুপক্ষ কখনও এভাবে সিন্দুক ফেরত দেবে?

আর তালুতকেও নেতা নির্বাচিত করতে চাইলো না।

কিন্তু নবী সালাম আঃ তাদেরকে বুঝালেন যে তালুতকে তোমাদের নেতা বানালে তোমরা উপকৃত হবে। তখন আবার তাদেরই মধ্যে কতিপয় বিচক্ষণ লোক নবী সালাম আঃ কে বললো যে ঠিক আছে তোমার কথাই মেনে নিব যদি তুমি আগামীকাল সকালে আমাদের সিন্দুক ফেরত এনে দিতে পারো।
নবী আঃ বললেন, ঠিক আছে তোমাদের কথামতোই সিন্দুক এনে দেয়া হবে।

তারপর দিন সালাম আঃ এর আবেদনে আল্লাহপাক চারজন ফেরেশতার দ্বারা গরুর গাড়িতে করে সিন্দুক “তাবুতে সাকিনা”  পুনরায় বনি ইসরাঈলের হাতে পৌঁছে দিলেন। কিন্তু তারা এ সিন্দুক ফিরে পাবার পর আবার আগের চরিত্রে ফিরে গিয়েছিলো। আবার যখন বনি ইসরাঈলরা অনাচারে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হলো তখন ইরাকের পাশে বাবেল নগরীর, মতান্তরে সিরিয়ার বাদশাহ “বখতে নসর” আক্রমণ চালিয়ে বহু বহু ইহুদি ইসরাঈলীদের হত্যা করে অল্পকিছু সংখ্যক ইসরাঈলকে দায় বানিয়ে নিজের দেশে নিয়ে রাখল। তখন এই  “তাবুতে সাকিনা” নামক রহমতপূর্ণ সিন্দুকটি বাদশাহ বখতে নসরের হস্তগত হয়।

তারপর থেকে এই সিন্দুকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া য়ায় নি আজ অব্দি। এখনও ইহুদিরা সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় তাদের সেই তাবুতে সাকিনা।

তাদের প্রার্থনায় এখনও তারা বলে এবং আশা রাখে একদিন তারা সেটা খুঁজে পাবে, আর পাওয়া হলেই আবার তারা সারা পৃথিবী শাসন করবে। এ জন্য তদের বিশ্বাস মাসিহুদদাজ্জালই তাদের মসিহ, তার হাতে নতুন করে বায়েত হবে আর পবিত্র হবে  “রেড হেইফার” অর্থাত লাল বাছুর পুড়িয়ে সে ছাই দিয়ে গোসল কোরে পবিত্র হবে।

প্রিয় তারুণ্য,

ইসলামের ইতিহাস চর্চা করতে হবে, জানতে হবে এ বনি ইসরাঈলদের আর কী কী ঐতিহাসিক অপরাধ আছে?  যা তারা করেছিল ও এখনও করছে।
কেনই বা মহান রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে তারা কেয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।

কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক - হেলেন আরা সিডনী

নির্মম-নিষ্ঠুর পাষাণী জাতি ভিক্ষের ঝুলি হাতে নিয়ে একদিন পালিয়ে এসে, আজ রাজত্ব চালাচ্ছে ফিলিস্তিনের বুকে। জোড় যার মুল্লুক তার ইসরায়েলেরা দেখিয়ে দিল বাস্তবের মাটিতে। স্বয়ং আল্লাহতালার একবিন্দু ভয় তাদের বুকে নেই। যে মাটি একদিন তাদের মানুষ মনে করে আশ্রয় দিয়েছিল সেই মাটিতে গোপনে গোপনে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে যথেচ্ছারিত ভাবে দাউ দাউ আগুনের শিখা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে তুলছে ফিলিস্তিনের বুক। হে মনুষ্য বিবেক একটু থামো, জেগে তোলো তোমাদের মানবতা । হই না কেনো আমি ফিলিস্তিনি, ইসরায়েল, গাজা, জাতে হই হিন্দু- মুসলিম-খৃষ্টান-বৌদ্ধ। সবশেষে তোমার – আমার রক্তের রং লাল, আমরা মানুষ এই সত্যকে উপলদ্ধি করা ভুলে যেও না, ভুলে যেও না আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ। জাগ্রত বিবেকবোধে জেগে ওঠো, নেভাও এই আগুন, বাঁচাও জীবন আর রক্তাত মাটি যে মাটি তোমাদের একদিন বুকে তুলে নিয়েছিল।

অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র যন্ত্রের অবসান ঘটাও, নয় কথায় কথায় জীবন নেওয়া, নয় বোমা, রকেট আর চারদিকে বিকট বিষ্ফোরণের অগ্নিকুন্ড।গাজা -ফিলিস্তিনির সদ্য নবাগত শিশু জন্মের আগেই যেনো হয়ে যাচ্ছে ভয়ে জডসড়, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে মৃত্যুভয়ে প্রতি মুহুর্ত আতংকিত , একটু বাঁচবার আশায় সর্বত্র ছুটছে কিন্তু চারদিকে আঁধারের কুন্ডলী, আর্তচিৎকার, হাহাকার কি করুন মানসিক অবস্হা। অন্ধ বিবেকে জ্ঞানহীন মানুষ – ভুলে যাচ্ছে মানবতা – “ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”

কোথায় যাবে এই বাস্তুচ্যুত মা – বাবা আমাদের সন্তানেরা। আমরা চাই না সাহায্য – সহায়তা…চাই শান্তি, জীবনের নিরাপত্তা…বাঁচবার নিশ্চয়তা।

দাও মুক্তি চলমান জীবন – মৃত্যুর সংঘাত থেকে।

আমরা বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে হাত জোড় করে মিনতি করছি – ছোট্ট সোনামনিদের জীবনের আয়ুটুকু কেড়ে নিও না। জাতিবিদ্বেষ কোনো বিচারের আওতায় নয়, মানবিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করো সুস্থ মানবিকতায়। বর্তমান যে সংকটে ফিলিস্তিনি তা নিরসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের ক্ষমতা নেই লড়াই করার, সামর্থ্য নেই ছুটে যাবার….. কিন্তু আমরা বাংলাদেশের বাসিন্দা কলম যোদ্ধা। কলমের আক্ষরিক শব্দের ঝংকারে প্রতিবাদ করছি.. সেই সঙ্গে করছি মিনতি। বিশ্বপ্রগতির ভার্চুয়্যাল যুগ সব কিছুর উন্নতি ঘটেছে, ঘটে নি সুস্থ মানসিকতার, মনুষ্য জন্মের সার্থকতায় আলোকিত হয় নি আজো অত্যাধুনিক উন্নত দেশের মনুষ্যজন্ম।  সারা বিশ্বে উন্নত নেটের মাধ্যমে সমস্ত সংবাদ দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বলেই আমরা জানতে পারছি তাই খুব শীঘ্র আর্ন্তজাতিক সুরক্ষাব্যবস্হা গ্রহণ করা জরুরী বিষয় বলে মনে করি।  দিনে দিনে ইসরায়েল – জেরুজালেম যে নির্মম – নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা অবর্ণনীয়। সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে আজ নিন্দা ।

তাদের ঘৃণ্যতম কার্যকলাপ যাতে বাহিরে প্রচার না হয় তার জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা করে যে বাঁধা প্রদান করেছে তা অতি নিন্দনীয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যিনি মালিক মহান আল্লাহ তালা তার পবিত্র আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে দফায় দফায় যে সংঘর্ষ তা যে কতোটা জঘন্যতম এবং পাপময় ভাষায় প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্হান নিয়েছিল ফিলিস্তিনির মানবিক মানুষেরা। স্বাধীনতার যুদ্ধে যে দেশ বাংলাদেশের পাশে আপন মনে করে একাত্ম হয়ে ছিল আজ তারাই ৫০ বছর ধরে ধুকে ধুকে মরছে স্বাধীনতার লড়াইতে। নেই তাদের দেশে একটি বিমান ঘাঁটি। তাদের উপর দিনের পর দিন হত্যা- নজিরবিহীন জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ থেকে বিতারিত ইসরায়েলের বিশ্বাসঘাতক মানুষরূপী নরপশু। অথচ এই ফিলিস্তিনিরা তাদের বুকে টেনে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে ছিল। ভাগ্যের নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার আজ ফিলিস্তিনির সমস্ত মানুষ। লাশের মিছিলে এই দেশ থরথর কাঁপছে অবিরত। আমরা দূর থেকেই আমাদের কলমকে জাগিয়ে তুলেছি । অবাক হতে হয় ফিলিস্তিনির শিশুরা জন্মেই যেনো তৈরি হয় লড়াইর জন্য। মনে পড়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রণ সঙ্গীত “ নব নবীনের গাহিয়া গান / সজীব করিব মহাশশ্মান / আমরা দানিব নতুন প্রাণ / বাহুতে নবীন বল….”। এই লেখনীর শক্তি – সাহস যুগে যুগে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

কবির কলম তাই তলোয়ারের চেয়েও শক্তিশালী। জাগো…..বাহে….জাগো….কলমকে করে তোলো যুদ্ধজয়ী  বীর সৈনিক। আসো সবে মিলে ঈমানের শক্তিতে বলি – আল্লাহু আকবর…আল্লাহু আকবর…।

 

ছড়া - মানবতা

মানবতার মানে

জানে

কারা?

মারছে মানুষ- যারা!

 

মানবতা পাগল

ছাগল

বোঝে?

কে রেখেছে খোঁজে!

 

মানবতা হারুক

মারুক

মানুষ,

মানব এখন ফানুস!

 

মানবতা থাকে

ফাঁকে

পাছার,

এটাই এখন আচার!

 

এমন নীতি বন্ধ চাই,

মানবতায় ছন্দ চাই।

ছড়া - গাজায় আগুন

আগুন পুড়ে গাজা জুড়ে

ইসরাইলিরা শয়তান

তাদের গলায় রশি দিয়ে

আসুন মারি একটান ॥

 

ইহুদিরা এখন বেশি

বাড় বেড়েছে বাড়

মানবতার মূল্য দিতে

ধার ধারে না ধার ॥

 

বিশ্বজুড়ে আজ উঠেছে

সোচ্চার প্রতিবাদ

মানুষ থেকে দিইে হবে

তাদের এবার বাদ ॥

ছড়া - একচোখা এই জাতিসংঘ 

গাজা আজ ভাজা ভাজা

তাজা তাজা লাশ যে ভাই

এত নিষেধাজ্ঞা শুনি

এখন কারো কাশ যে নাই ।

এমন গেছে একাত্তরে

এই দেশে এই জমিনে

নেতানিয়াহু ইয়াহিয়া

সব শালারাই কামিনে ।

নারী পুরুষ শিশুর লাশ

হাজার গেছে ছাড়িয়ে

বর্বরতার সব ইতিহাস

সোৎসাহে যায় মাড়িয়ে ।

কোথায় গেল বিশ্ব বিবেক

জাতিসংঘের গাই কি গুণ!

চায় কি ফিলিস্তিনের মাটি?

নয়তো কি চায় শিশুর খুন!

একচোখা এই জাতিসংঘ

বিশ্ববিবেক এক চোখা

বৈষম্যের চোখ দিয়ে কি

প্রতিবাদ কে যায় রোখা!

ছড়া - চির সংগ্রামী 

জলে ভাসা শ্যাওলা তো নই স্রোতে যাবো ভেসে

রক্ত দিয়ে খেলবে হলি জালিমরা কি  হেসে?

ইতিহাস কি ভুলে গেছে?  বদরের সেই গর্জন

রক্তসাগড় পাড়ি দিয়ে  বিজয়টাকে অর্জন।

আমরা তো সেই বীরের জাতী নবী রাসুলের ফলোয়ার!

ইসলাম রক্ষায় তুলে নিতে পারিও হাতে তলোয়ার।  রক্তচক্ষু ভয় করি না বুকে  ঈমানি তীর

মুসলিম আমি চির সংগ্রামী নারায়ে তাকবীর।

ফিলিস্তিনি কবিতা অনুবাদ হিজল জোবায়ের

পদচ্ছাপ

মুইন বাসিসু

ভাই আমার!

আমার ঘাড়েও যদি ওরা তরবারি শান দেয়,

হাঁটু মুড়ে বসবো না আমি;

আমার রক্তাক্ত মুখের ওপর

ওদের চাবুকের আঘাতেও না,

ভোর যদি এতোটাই নিকটবর্তী

পিছু হটবো না আমি;

আমাদের প্রচণ্ড ঝড়গুলোকে

পরিপুষ্ট করে যে ভূমি

জেগে উঠবো সেখান থেকে।

 

ভাই আমার!

তোমাকে হাঁটু মুড়ে বসাবে বলে

জল্লাদ যদি তোমার চোখের সামনেও

আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় কসাইখানায়,

যাতে তুমি করুণা ভিক্ষা চাও;

আমি আবারো বলছি, দাঁড়াও মাথা উঁচু করে

আর দেখো আমাকে কতলের দৃশ্য!

দেখো জল্লাদকে,

আর আমারই রক্তে ভেজা তরবারি!

 

আমাদের নির্দোষ রক্ত ছাড়া

কী আর দেখাবে সেই খুনী?

 

রাত্রিবেলা বন্দুকের মুখে

ওর পরিখা থেকে

ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ওরা,

তারপর কারাপ্রকোষ্ঠের অন্ধকারে

নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেই নায়ককে,

সেখানে শেকল ছাড়িয়ে

উড্ডীন এক পতাকার মতো ছিল সে।

 

শেকল হয়ে উঠছিল জ্বলন্ত মশাল,

আর জ্বালিয়ে দিয়ছিল

যা কিছু ঢেকে রেখেছিল আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে।

আর আজও বেঁচে আছে সেই নায়ক,

আজও কয়েদখানার রুদ্ধ প্রকোষ্ঠের দেয়ালে দেয়ালে

শোনা যায় তার বিজয়ী পদধ্বনি।

 

[মুইন বাসিসু ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত গাজায় থেকেই পড়াশোনা করেন। পরে তিনি মিশরে থিতু হন। অনেকগুলো কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে তিনি লন্ডনে মারা যান ]

———————————————

বদলা

তাহা মুহাম্মদ আলী

 

সময় সময়

মনে হয়

যে মানুষটি হত্যা করেছে আমার বাবাকে,

আর গুড়িয়ে দিয়েছে আমাদের বসতি-ভিটা,

খণ্ডিত এক ভূ-খণ্ডের দিকে ঠেলে দিয়েছে আমাকে,

তার সাথে যদি লড়াইয়ে নামতে পারতাম।

 

যদি সে হত্যা করতো আমাকে,

শেষমেশ বিশ্রামে যেতে পারতাম আমি,

আর যদি সুযোগ আসতো আমার,

আমি বদলা নিতাম!

 

কিন্তু সেই শত্রু লড়াইয়ে নামার কালে

যদি জানা যেতো-

তার একজন মা রয়েছে,

যে কিনা অপেক্ষা করছে তার জন্য,

বা একজন বাবা,

ছেলের আসতে

কিছুটা দেরির কারণে

বুকের বাম পাশটায় চেপে ধরে যে,

তাহলে তাকে হত্যা করতাম না আমি,

সুযোগ থাকলেও না।

 

একইভাবে…

তাকে হত্যা করতাম না আমি

যদি জানতাম কোনো ভাই বা বোন আছে তার

যারা তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে,

আর অপেক্ষা করে সারাটা সময়

তাকে একনজর দেখবার জন্য,

কিংবা যদি থাকে স্ত্রী

তাকে স্বাগত জানাতে,

বা সন্তান,

যারা এক মুহূর্তও সইতে পারে না তার অনুপস্থিতি,

বাবার আনা খেলনা পেলেই লাফিয়ে ওঠে আনন্দে,

অথবা যদি তার বন্ধু কিংবা সঙ্গী থাকে,

চেনাজানা প্রতিবেশী,

কারাগার বা হাসপাতালের ইয়ার-দোস্ত

বা স্কুলের সহপাঠী…

যারা তার কুশল জানতে চায়,

তাকে পাঠায় সম্ভাষণ।

 

কিন্তু যদি দেখা যায় নিঃসঙ্গ সে,

গাছ থেকে ছেঁটে ফেলা বিচ্ছিন্ন একটা ডালের মতো,

যার না আছে মা, না আছে বাবা,

না আছে ভাই কিংবা বোন,

নেই স্ত্রী, নেই সন্তান,

আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব কিছুই নেই,

তাহলে তার সেই নিঃসঙ্গতায়

নতুন করে আর কোনো যন্ত্রণাই

ঢালতাম না আমি,

মৃত্যুযন্ত্রণাও না।

 

বরং পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়

তার দিকে ফিরেও না তাকানোতে

সন্তুষ্টি খুঁজে নিতাম;

কেননা আমি জানি,

তার প্রতি বিন্দুমাত্র মনোযোগ না দেয়াই

এক কঠিনতম প্রতিশোধ।

 

[ফিলিস্তিনি কবি ও গল্পকার তাহা মুহাম্মদ আলী ১৯৪৮ সালের আরব- ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ১৭ বছর বয়সে পরিবারের সাথে লেবানন চলে যান। সেখানেই থিতু হন। ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তার অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা যান ]

———————————–

কোনো সমস্যা নেই আমার

মুরিদ বারগুতি

 

তাকালাম নিজের দিকে:

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

একদম ঠিকঠাক আছি,

আমার ধূসর চুল আকর্ষণীয়ই মনে হবে

কিছু কিছু মেয়ের কাছে;

সুন্দর করে বানানো আমার চশমা,

শরীরের তাপমাত্রা একদম ৩৭,

ইস্ত্রী করা শার্ট

আর জুতাজোড়াও আরামদায়ক।

 

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

হাতে নেই হাতকড়া,

এখনও জবান বন্ধ করে দেয়া হয়নি,

এমনকি কারাগারেও যেতে হয়নি আমাকে,

ছাটাই করা হয়নি কাজ থেকে,

কয়েদখানায় আত্মীয়-স্বজনদেরও দেখতে যেতে পারি,

নানান দেশে তাদের কবর জিয়ারতেও

যেতে দেয়া হয় আমাকে।

 

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

বন্ধুর মাথায় শিঙ গজিয়েছে

তা নিয়ে মোটেও বিচলিত নই আমি,

পোশাকের তলায়

লেজ লুকিয়ে রাখায় তার চাতুরি পছন্দ আমার,

পছন্দ তার শান্ত থাবাও,

আমাকে খুনও করতে পারে সে,

কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে

তাকে ক্ষমা করে দেবো আমি;

যে কোনো সময়

আমাকে আঘাত করতে পারে সে।

 

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

টিভিতে উপস্থাপকের হাসিতে

মোটেও আর অসুস্থ বোধ করি না আমি,

খাঁকি’রা আমার স্বপ্ন, রাত আর দিন রুদ্ধ করে দেয়

তাও সয়ে গেছে।

সে কারণেই সবসময় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখি,

এমনকি সুইমিং পুলেও।

 

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

গতকাল রাতের ট্রেনে চড়ে বসে আমার স্বপ্নেরা

আর আমি বুঝেই উঠিনি

কী করে তাদের বিদায় জানাতে হয়।

 

শুনলাম, এক ঊষর উপত্যকায়

বিধ্বস্ত হয়েছে সে ট্রেন

(কেবলমাত্র ট্রেনের চালক বেঁচে গেছে)।

খোদাকে শুকরিয়া জানালাম আমি,

আর ব্যাপারটাকে সহজ করে নিলাম,

যেহেতু ছোটখাটো দুঃস্বপ্ন হয় আমার,

আশা করি এগুলোই একদিন

দুর্দান্ত এক স্বপ্নের জন্ম দেবে।

 

কোনোই সমস্যা নেই আমার।

 

জন্মের প্রথম দিন থেকে আজ অব্দি

নিজের দিকে তাকিয়ে আছি আমি,

নিরাশার কালে শুধু মনে রাখি-

মৃত্যুর পরেও এক জীবন আছে;

ফলে কোনোই সমস্যা নেই আমার।

কিন্তু প্রশ্ন রাখি:

হে খোদা,

মৃত্যুর আগে কী কোনোই জীবন নেই?

 

[মুরিদ বারগুতি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের রামাল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের যুদ্ধের  সময়ে তিনি মিশরের কায়রো চলে যান। পরবর্তী ৩০ বছর তিনি আর ফিলিস্তিনে ফিরে আসেননি। কিন্তু তাঁর কবিতায় শেকড়হীনতার সুর ফুটে উঠেছে বারবার। তাঁর ১২ টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মারা যান ]

 

মধ্যপ্রাচ্যের গল্প - রেজাউল ইসলাম হাসু

—আমি যে ঘরে থাকি সেখানে কোনো দরজা নেই, জানালা নেই। আপনার ঘরের দরজা, জানালাগুলো আমার অনেকদিন মনে থাকবে। বিশ্বাস করেন, এভাবে জানালা ভেঙে আমি আসতে চাই নি। দরজাটা খোলা পেলে অবশ্যই এই নাটকীয়তার কোনো দরকার পড়তো না।

তখন সন্ধ্যাটা বুড়ো হয়ে রাত্রির কোলে ঢলে পড়ছিল অর্থবের মতো। আমি ‘মধ্যপ্রাচ্যের নির্বাচিত গল্প’ এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক পেরিয়ে ফিলিস্তিনে এসেছি। জিয়াদ খাদাশের ‘সেনা নির্দেশ অমান্যকারী এক গল্পকার’-এ অনিদ্রিত চোখের নুড়ি ছুঁড়েছি সবে। অমনি এমন একটা ঘটনা ঘটবে আমি পূর্বানুমানই করিনি। যাইহোক, জিয়াদ খাদাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে বিষ্ময়ভরে লোকটার কথা শুনি আমি।

লোকটা আমার দিকে খুব অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে। আমিও তাকাই। যেন আমরা একে-অপরকে হাজার বছর আগে থেকে চিনি। যেন অনেকদিন পর আমাদের দৈবক্রমে দেখা হয়ে গেছে। আমি তাকে অপ্রস্তুতভাবেই স্বাগত বলে আরামকেদারাটা এগিয়ে দিই। ‘মধ্যপ্রাচ্যের নির্বাচিত গল্প’টা সেলফের সেই জায়গায় পৌঁছে দিই, ঠিক যেই জায়গায় তার থাকবার কথা ছিল। তারপর আরেকটা আরামকেদারা ডাইনিঙ থেকে টান দিয়ে আমিও বসে পড়ি।

আমরা মুখোমুখি বসে। নীরব ও নির্বিকার। কীভাবে শুরু করব সেই যথার্থ শব্দবন্ধ যেন আমরা হাতড়ে ফিরছি। সমুদ্রডুবুরির ন্যায় হাতড়ে হাতড়াতে না-পেয়ে আমরা যেন যখন টেবিলের উপর ভেসে উঠছি, তখন আমাদের মুখগুলো যেন হতাশ্বাসের একেকটা প্রতিমূর্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটে উঠছে।

—আমার এই অনাকাঙ্খিত আগমনে আপনি বিব্রত হলে চলে যাই।

লোকটাই নীরবতা ভেদ করে এগিয়ে এলেন।

—যাই বলতে নেই। এত রাতে কোথায় যাবেন? দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলি। ঘড়ির পেণ্ডুলামগুলো যেন একেকটি যুদ্ধের দামামা হয়ে দোদুল্যমান।

—কোথায় যাব মনে করতে পারছি না। সত্যি কথা বলতে কী, আমার যাওয়ার মতো পৃথিবীতে কোনো জায়গাই নেই। পৃথিবীটা যেন কাঁটাতারের উদ্যান। আর আমরা যেন সেখানে রক্ত চিড়ে ফুটে ওঠা থোকা থোকা লাল গোলাপ।

যখন লিখতে বসে কলমে কোনো গল্প আসে না তখন আমি এরমকম মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যেতে ভালোবসি। সেখানে তখন না থাকে সীমানা, না থাকে কাঁটাতার। পৃথিবীর সমূহ ঠিকানা ভুলে ওদের চোখে চোখ রাখি। ওদের হৃদয় পড়ি। চোখ পড়ি। ওদের রক্তের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে ওরা তখন আমার কাছে হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের একেকটি মহৎ গল্প। আর এরকম বিষ্ময়ভরে ওদের কথা শুনি। যেভাবে শুনছি লোকটার।

—কথা শোনাটাও একটা আর্ট।

কালো বর্ণের কাপে কফি ঢালতে ঢালতে বলি। শূন্য কাপগুলো কফিতে উপচে কেমন যেন ধোঁয়াশাময় হয়ে উঠল। তারপর কুন্ডুলি পাকিয়ে জানালার রেলিঙ বেয়ে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলো। দৃশ্যটা দেখবার মতোই ছিল। অবর্ণনীয়!

—কথাটি কি আপনার?

—কোন কথাটা? ইতোমধ্যে আমরা অনেক কথার সিঁড়ি ভেঙে গল্পছাদে উঠে এসেছি। সেহেতু আমি ভদ্রভাবেই লোকটাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম-কোন কথাটা?

—ওই যে ওই কথাটা। কথা শোনাও একটা আর্ট।

—এরকম কথা কবে যে আমার কলম থেকে বেরুবে জানি না। কথাটা ফরাসিদের। রুশ ফুকোর। বেশির ভাগ মানুষ যদি ফুকোর কথাটা শুনতো তবে দুনিয়ার দুঃখটা কিছুটা হলেও হালকা হতো।

—ফরাসিরা অনেক নরম মনের অধিকারী হয়ে থাকে। তাই না?

—আপনি একদম ঠিক বলেছেন। ওদের শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস অনেক গৌরবের। পৃথিবীতে রোমান্টিসিজমের জন্ম তো ওরাই দিয়েছে। কফি?

—আপনার আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ। এই মূহুর্তে আমি কফি কেন, পৃথিবীর কোনো কিছুরই স্বাদ গ্রহণ করতে পারব না। আমার এই অক্ষমতার জন্য আমি দুঃখিত। দয়া করে এটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

—আপনি তাহলে যাওয়া-আসা করেন কীভাবে?

—প্রশ্নটার পেছনের কথাটা বলুন। ইদানীং আমার স্মরণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ আগে কী বলেছি কিছুক্ষণ পর তাই মনে থাকে না।

—আপনি যে ঘরে থাকেন, সেখানে না কি কোনো দরজা নেই, জানালা নেই।

—নেই না। আসলে আমার লাগে না। তাই মিস্ত্রিরাও হয়তো নির্মাণের সময় আমার প্রয়োজন বুঝে রাখেনি। হয়তো ওদেরও তাড়াহুড়ো ছিল। কারোরই হাতে ফালতু সময় নষ্ট করবার ফুরসত নেই। সামান্য গোর খোদক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সামরিক, বেসামরিক সকলেই খুব ব্যস্ত ওখানে। আপনি একা কেন? আপনার বউ, ছেলেমেয়ে-ওরা সব কোথায়?

—ঈদের ছুটিতে বেরোতে গেছে।

—আপনি গেলেন না…

—বেরোতে আমার ভালো লাগে সত্যি কিন্তু ওভাবে না। সবখানে যাওয়া আমার পছন্দ নয়। লাতিন আমেরিকার কিছু হাইকু অনুবাদ করেছিলাম গত লকডাউনে। ওগুলো ড্রয়ারে জমে আছে অনেকদিন থেকে। ওদের একটা গতি দান করতেই আমার বেরোতে না-যাওয়া। কিন্তু ভ্রমণ করতে আমি কখনো ক্লান্ত হই না। এ মূহুর্তে আমি হয়তো আপনাকে বোঝাতে পারব না সেটা। সামনে বৃষ্টির ছুটি আছে। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আপনাকে পেলে আমি খুশি হতাম।

—আমি তো একটা ভ্রমণের ভেতরেই আছি। আপনাকে নিশ্চিত কথা দিতে পারছি না বলে আমি দুঃখিত। তবে কোনো একদিন আমি না হলেও আপনি আমাদের ভ্রমণসঙ্গী হবেই হবেন। আচ্ছা, ম্যানহাটনে আজকে একটা প্রতিবাদ সমাবেশ হবার কথা ছিল। ওটা কি ওরা করতে দিয়েছে?

—না। বাইডেন প্রশাসন সেখানে বাধ সেধেছে। সমাবেশকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে। কেউ কেউ লাঠিচার্জের শিকার হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। বার্লিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অনেকের বিশ্বাস ছিল জার্মানদের উপর। কিন্তু তারা সে বিশ্বাস কাঁচের মতো ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো করে দিয়েছে।

—অন্যান্য জায়গায় কী খবর?

—ওদিকে ডরমিটরি, সিডনি, লন্ডন, কেপটাউন, ইস্তাম্বুল, লাহোরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবাজদের পতাকা পুড়িয়ে প্রবল প্রতিবাদ জানানোও হয়েছে। বলা যায়, যুদ্ধের বিরুদ্ধে মানুষের ঢল নেমেছে পৃথিবীর পথে পথে।

লোকটার উপস্থিতিতে নির্দয় নিঃসঙ্গতা কেটে উঠছি ভেতরে ভেতরে টের পেলাম। চাঁদের আলোক ছটায় ছাদটা যেন আরো গল্পময় হয়ে উঠছে। কিন্তু লোকটা যেন তাকে গোপন করবার চেষ্টা করছে। আমি তার কথাবার্তার ধরন থেকে আন্দাজ করি।

—ঢাকার আকাশটা অনেক অনিন্দ্য, তাই না?

—আমাদের আকাশে কতোদিন এরকম চাঁদ দেখিনি। আমাদের আকাশ থাকে মেঘ ও মৃত্যুতে আচ্ছন্ন। সত্যিই ঢাকার আকাশটা কী অনিন্দ্য! পৃথিবীর সব আকাশ যদি এরকম হতো…

যেন না পাওয়ার দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস লোকটাকে ঘূণপোকার মতো একটু একটু করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। তার দীর্ঘশ্বাসের মতো রাতটাও ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। দূরে কমলাপুর রেল স্টেশনটা মিটমিটিয়ে জ¦লছে। আধো আলো আধো ছায়ায় পুরনো ট্রেনের ভাঙাচোরা বগির ভেতর শান্তি লেপ্টে থাকা কয়েকটা নিদ্রাময় মুখচ্ছবি ঝলমল করছে। ছয় নম্বর সেক্টর থেকে সিকিউরিটি শফিকের বাঁশির বিপুল হুইসেল রক্ষাকবচের মতো অ্যাভিনিউ থেকে অ্যাভিনিউয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

—ডিনার করেছেন?

লোকটাকে দেখে খুব ক্ষুধার্ত মনে হলে ভদ্রতাসুলভ প্রশ্নটা করে বসি।

—আমি খুব ক্ষুধার্ত। কোনো এক ক্ষুরধার ক্ষুধা আমাদের তাড়িয়ে বেরোচ্ছে। আমরা সেই ক্ষুধা নিবারণের শৌর্য ও সঙ্গী খুঁজছি।

—ছাদের কার্নিশে একটা হাজার ওয়াটের এনার্জি লাইট আছে। আপনি চাইলে সেটা আমরা জ¦ালাতে পারি।

—না, আপনার ভদ্রতার জন্য ধন্যবাদ। সেটার প্রয়োজন হবে না। চাঁদের আলোক মেশানো ফিনফিনে অন্ধকারই আমার বেশ লাগছে। হাওয়াই স্পর্শটাও লা-জবাব। ছেলেবেলায় কতোদিন এরকম একটা দৃশ্য দেখার জন্য ভাঙা আস্তাবল থেকে পালিয়ে বোহেমিয়ান হয়েছি।

—আপনার ছেলেমেয়ে?

—এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেটার পাঁচ। মেয়েটার আট।

—ওরা এখন কোথায়?

—ঘরে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি।

—ওদের মা?

—শাদাবা গতকাল সকালে ক্লাস নিতে গিয়ে আর ফিরেনি। শুনেছি ওদের স্কুলটা উড়ে গেছে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় ওদের ধ্বসে যাওয়া স্কুলের চিত্রটা ছাপা হয়েছে।

—আমিও বিবিসির খবরে দেখেছি।

ঘরে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হলে আমরা সাময়িক গল্প-বিরতি দিয়ে একে-অপর থেকে আলাদা হই। ঘরে এসে দেখি সেলফ থেকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের নির্বাচিত গল্প’টা উবু হয়ে অনাথের ন্যায় পড়ে আছে ফ্লোরে। আর তার উপর দিয়ে হেঁটে বেরোচ্ছে কয়েকটা ইঁদুর শাবক। আমার হন্তদন্ত ছুটে আসার ক্ষিপ্ততা আন্দাজ করতে পেরে শাবকগুলো লেজ গুটিয়ে পুরনো জিনিপত্র রাখা ঘরটার দিকে দৌড়ে লা-পাত্তা হয়ে গেলো। আমি তাকে ফ্লোর থেকে আমার নরম হাতে তুলে নিই। খুব যত্ন করে মুছেটুছে তার আগের জায়গা তাকে ফিরিয়ে দিই। ছাদে এসে দেখি লোকটা নিরুদ্দেশ। ইতিউতি তাকাই। কোথাও তার ছায়া দেখা গেলো না। এ যেন রোহের জাদুবাস্তব পৃথিবী। আস্তে আস্তে কালো রেখাবলি মুছে মুছে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো প্রতিভাত হচ্ছে। ভাঙা জানালার রেলিঙ ছুঁয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে তারই ঘ্রান ঢাকার স্ট্রিট জুড়ে।

হয়তো দূরে কোথাও খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই বৃষ্টির ভেতর ছাতাহীন একটা লোক হেঁটে যাচ্ছে। যার থাকবার ঘরে কোনো দরজা নেই, কোনো জানালা নেই। সেই ঘরের দিকেই সে হেঁটে যাচ্ছে, নগ্ন পায়ে…কাল থেকে অনাদিকাল…

রেজাউল ইসলাম হাসু
জন্ম রংপরে, ১৯৮৭ সালে। হিসাববিজ্ঞানে সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা থেকে স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন। পেশাজীবন শুরু করেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। বর্তমানে একটা বেসরকারি সংস্থায় উন্নয়ন-কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বাংলা ভাষার সৃজনে অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা বেলাভূমি সম্পাদনা করেন।
ৎবলধঁষরংষধসযধংযঁ১৯৮৭@মসধরষ.পড়স
প্রকাশিত বই তিনটা।

এক. একটি ছুরি অথবা কুড়িটা ঘুমের পিল [২০২১-–গল্পগ্রন্থ, বেহুলাবাংলা]
এক. ওকাবোকা তেলাপোকা [২০১৬-শিশুতোষ, প্রিয়মুখ]
দুই. এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে [২০১৭-শিশুতোষ, প্রিয়মুখ]

 

 

কবিতা - ফুটনোট

অনেক পিপাসা আছে বোধের অতীত

বরফের গায়ে তবু লেখা থাকে শীত

 

শীতকাল এলে দেখি ঝরে পড়ে পাতা

এঘরে বালিশ পোড়ে ঐঘরে কাঁথা

 

যার কিছু পোড়ে নারে তারও পোড়ে মন

বাসে বসে ভুলে গেছি কে যে কার বোন

 

কে কাহার বোন হয় কে যে কার ভাই

এই শীতে দল বেঁধে এসো ভুলে যাই

 

ভুলে যেতে যেতে গিয়ে ভুল করে দেখি

পিপাসা মেটাতে আসে ভিনদেশী পাখি

 

পাখি এসে ফল খায় পোকা খায় ফুল

কে আর শোধাতে পারে কবেকার ভুল

 

ভুল তার কবেকার অন্ধকার ঘেঁষা

মরণের গান গাওয়া শিশুটির নেশা

 

শিশু একা গান গায় বাবা গেছে চাঁদে

শান্তি ইয়াহওয়েহ, দেখো শান্তি কাঁদে

 

যে কাঁদে কাঁদুক তবু লিখি ফুটনোট

ফুল তুই তেলাবিবে বোমা হয়ে ফোট!

কবিতা - ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন

আল আকসার আজানের ধ্বনি শুনে

যে শিশুরা জন্ম নেয় ফিলিস্তিন ভূ-খণ্ডে

তাদের জন্মক্ষণ শুরু হয় শূন্য থেকে।

 

মা মা বলে ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা জানতে পারে-

তারা নিজ ভূমে অবরুদ্ধ জন্ম থেকে।

 

যুদ্ধে তারাও অংশ নেয় মাতৃভূমি উদ্ধারে  স্বপ্নবাজ শিশুরা স্বপ্ন বুনে স্বাধীনতার।

 

নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে –

ইসরাইলি আগ্রাসীরা একদিন যুদ্ধ নয়,

শান্তির কাছে নতজানু হবে।

 

আরও নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে –

ফিলিস্তিন শিশুদের জন্মক্ষণ শুরু হবে না শূন্য থেকে।

 

একদিন ফিলিস্তিন শিশুরা

জলপাইয়ের ছোট ছোট ডাল-পাতা হাতে নিয়ে পশ্চিমতীরে উল্লাসে নাচবে…

গাইবে গান।

তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে – ইয়াসির, ইয়াসির, ইয়াসির …

তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে –

ইবনে মাজেদ, ইবনে মাজেদ, ইবনে মাজেদ…

তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে-

দারবিশ দারবিশ, দারবিশ…

আমরা জয়তু।

 

জর্দানের কুলকুল ধ্বনিতে মিশে যাবে জলপাইয়ের সুঘ্রাণ।

কবিতা - মেহমুদের অপেক্ষা

মেহমুদের বাবা গেছেন আল আকসায় নামাজে

একাকী বসে আছে শরনার্থী ক্যাম্পে মেহমুদ

চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে মরুর নিচে ওর মা জননী;

মেহমুদের বাবা গেছেন আল আকসায় নামাজে।

 

মেহমুদের বোনটা ছিল প্রতিবাদী মিছিলে

মাত্র দশ বছর বয়সেই স্লোগান শিখেছিল সে

ও জানে শুধু ঘরটাই নয় দেশটাও নিয়েছে ছিনিয়ে;

মেহমুদের বাবা গেছেন আল আকসায় নামাজে।

 

মেহমুদের বড় ভাইটা বড়ই হলোনা দুনিয়ায়

ফিলিস্তিন যে তাদের তা শুধু শুনেই আসছে

পশ্চিম তীর নিয়ে ন্যায্য দ্রোহ করতে উচ্চারণ

ইসরাইলী বুট উঠে আসে তার কন্ঠায়।

মেহমুদের বাবা গেছেন আল আকসায় নামাজে।

 

আল আকসা একটা পবিত্র মসজিদ মেহমুদ জানে,

শুকনো চাপাতি আর খেজুর দিয়ে করে সাহারি

মেহমুদের বাবা গেছেন আল আকসায় নামাজে

যখন ধ্বনিত হচ্ছিল ‘আসসালাতো খায়রুন মিনান নাওম’

ও বোঝেনা কেন পবিত্র মসজিদে ইসরাইলি হামলা হলো?

মেহমুদ অপেক্ষায় কখন বাবা ফিরবেন নামাজ থেকে।

কবিতা - ঈদের সন্ধ্যায়

এই সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদটাকে দেখছি,

গতকালকেই যে ভূমিষ্ট হয়েছে বাংলার আকাশে।

ফলত আজ ঈদ এই ঢাকায় তথা গোটা বাংলায়।

ঢাকার আকাশ পরিষ্কার, হয়ত ময়মনসিংহেরও

রংপুর, সিলেট, খুলনা বরিশাল, চট্টলারও কি নয়!

 

যেখানেই যাই না চলে আজ, আকাশে স্পষ্ট চাঁদ।

এমনই কি স্পষ্ট তেলাবিব, জেরুজালেম, গাজায়?

ফিলিস্তিনেও কি ঈদ আজ অথবা ছিল গতকাল

নাকি গুলির ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে সমস্ত আকাশ!

শিশুর হাসি হেসে কেউ বলে নাই ‘ঈদ মোবারক’?

কবিতা - যুদ্ধ

সব যুদ্ধই থেমে যায় একদিন

সব যুদ্ধকেই থেমে যেতে হয়

আমরা সবাই কোন না কোন যুদ্ধের সপক্ষে

আমি শুধু তোমার জন্য যুদ্ধ করি

যুদ্ধ করি  স্বাধীনতা নয় , অধীনতার জন্য

যুদ্ধ করি একনিমিষের ভালোবাসার জন্য।

কবিতা - চুপ

বাচ্চারা সবাই চুপ

টু শব্দটুকু করবে না।

শুনতে পাচ্ছ যুদ্ধ বিমানের শব্দ

আর সাইরেনের হায়নার মতো চিৎকার?

সেদিন পাশের বাসা, মাটিতে মিশে গেল।

তোমাদের সাথে যে খেলতো আবদুল্লাহ

সে কি আর খেলতে আসে বলো?

চুপ, একদম চুপ-

কী বললে? খিদে পেয়েছে?

আর একথা বলো না,কাউকেই না

আমাদের কথা কেউ শুনবে না

শুধু আমরাই জীবিত এ পৃথিবীতে

মরে গেছে বিশ্ব মানবতা।

কবিতা - ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন

নৈসর্গিক সন্তরনের ভেতর থেকে দেখতে চাই না ফিলিস্তিনে পুড়ে যাচ্ছে অগুনতি দরজা, জানালা, নরম বালিশের খোল – পুড়ে যাচ্ছে রান্নাঘর, ভাতের থালা, টেবুনের রুটি, সতেজ সব্জি, ঝোলের তরকারি-

লকলক করে বেড়ে ওঠা আগুনের হল্কায় দামামা বাজায় তুমুল যুদ্ধ – মেশিন গান -রকেটের বিবৃতি-

গুলির ছররা’র ভীষণ বিভাস –

উন্মত্ত ক্ষুধার নিবৃত্তি সন্ধানে অনাম্নী ঈগলের দৃষ্টি ঘুরপাক খেয়ে অর্থহীন বাঁচার আকুলতা কে নিমিষেই বানিয়ে দিচ্ছে পোড়ানো ছাই-

করজোড়ে বলছি দেখতে চাই না শিশুদের গাল বেয়ে তৈরি হচ্ছে শুকনো খটখটে  ধুলোজলে মেশানো কালো ধারা-

ক্রমাগত তাঁদের মুখে নেমে আসা ভীতসন্ত্রস্ত শূন্য চোখের আর্তি-

দেখতে চাই না ছিন্নভিন্ন দেহ পরে আছে বালিতে গড়াগড়ি করে –

দেখতে চাই না বেহায়া ধর্ষণের শিকারে ছেঁড়া বোরখার তলদেশ দিয়ে বেয়ে পড়া কালচে রক্তের উঁচু টিলা-

দেখতে চাই না কোন উষ্ণতা ছাড়াই পিতামাতার কাঁধে নিথর সন্তানের দেহভার-

 

তারপরেও দেখতে হচ্ছে খেজুর বৃক্ষের শিকড়ের ওপারেই শাদা কঙ্কাল মেখে আছে রুক্ষ বালি-

দেখতে থাকি, সফটওয়ারের ফোকাসে মনিটরের অহংকারে  মুহূর্মুহু প্রতিবন্ধী হচ্ছে, অক্ষম হচ্ছে শিশুর আশ্রয়, মায়ের আদরের রুপান্তর পাথরের অবয়বে –

এবং জীবিত প্রাণেই বরণ করে নিচ্ছে মৃত্যুর বিষন্ন পরমায়ু

অগুনতি মানুষ-

দেখতে হচ্ছে স্বজন হারানোর আর্তনাদে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছে লোটাকম্বল আর বেদনার তিক্ততা ভরে প্রাণ ভিক্ষের ঝুলি-

 

কেন যে আল- জাজিরা, সি,এন,এন,আর্টি,সি,এন,বি,সি আর বিবিসি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় এইসব না চাওয়া দিন রাত্রির ভয়ংকর ছবি –

নিষেধ আসে না জাতিসংঘের বিভিন্ন  নথিপত্র থেকে –

রুদ্ধ হোক নারকীয় ঘটনা, রুদ্ধ হোক যুদ্ধ বিভীষিকা –

 

ওখানে নেই তো ঋকবানীর কাহিনিবিস্তার –

নেই রহমতের বৃষ্টি বিলাসের স্তুতি –

বরং আকাশের বিশালতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে নৈরাজ্যের ক্যারাভানে বসে থাকা আরবীয় ইতিহাসের পতাকা-

 

হে মহাবিশ্বের সৃষ্টি কর্তা-পরমকরুণাময় খোদাতায়ালা, মহানুভব আল্লাহ্, ঈশ্বরের মঙ্গল বার্তা,চারশূল বিদগ্ধ যিশুর শুদ্ধ পত্র –

 

এখনো ক্যানো গুড়ো গুড়ো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে না বর্বরোচিত হামলার অস্ত্র সম্ভার-?

এখনো ক্যানো রোদ্দুরের তেজে কারফিউ দিচ্ছে না হিংস্র মগজে বিষের জ্বালা অধিকতর?

এখনো ক্যানো ধোঁয়াশায় নিরন্ন ফটক ক্রমাগত শকুনের  ঠোকরে জাহিলিয়াত যুগ থেকে ফিরে আসা ক্রুর থেকে আরও ক্রুর করে সুরমা আঁখি?

এখনো ক্যানো ওগো মাবুদ, এখনো ক্যানো বিস্ফারিত ভীরু চোখ কাপুরুষের গর্তে হচ্ছে রোজ বলি…?

ওগো আয়ুর পয়গামের খোদা, তুমি কি কানে বর্ম পড়ে আছো?

তুমি কি সপ্তম আসমানের উপরে শ্বেতাভ্র কূপে ডুবে দেখছো  মানবতার  খুঁটিনাটি ?

তুমি কি ফিলিস্তিনের পথে ঘাটে ঘরের কুলুঙ্গিতে আর্তচিৎকার গুলোর রক্তের মর্মরধ্বনি তুলে রাখছো মহাকাশের বুকে –

তারায় তারায় লিখে রাখছো জান্তব আক্রোশ -পাখির পালকের ওপরে গগনচুম্বী নিষ্ঠুর পদ্ধতি –

ওগো পরওয়ারদেগার – ফিলিস্তিনি কবি নজওয়ান দারবিশের মতে সব কবিরাই কি চাচীদের ভরে রাখবেন দড়িবদ্ধ থলেতে-

আপনি দেখবেন পরওয়ারদেগার, বারবার দেখবেন  থলের কোণা বেয়ে ঝরে পড়ে তাদের উষ্ণ রক্তেরা গন্তব্যহীন হয় তপ্ত শিরা উপশিরা থেকে -?

ওগো ঈশ্বরের পয়গাম – আপনারা এইসব জ্বলনশীল মনন চিন্তাকে প্রভাবিত করুন শান্ত জলের বরফখণ্ড তে-

 

জানিনা খোদা আল- আকসা মসজিদে প্রতিদিন নামাজ হয় কিনা ধ্যানগ্রস্থ ফসফরাসে –

জানিনা আজ কতোটা পথ ভিজে গেলো রক্তাক্ত আমলে –

জানিনা খোদা,কোন কোন মায়ের গর্ভে আজও কি ব্যথার সমুদ্র উথলে উঠেছে নিখোঁজ সন্তানের পবিত্র মুখ  অজর কল্পনার অরণ্যে?

কোন কোন পিতা কুজো হতে হতে রুক্ষ মরুভূমির যাবতীয় তথ্যাদি নিয়েছেন মুখে –

আজও কোন বোনের ডালিম বুকের সপ্তসুর ঢাকতে বেছে নিয়েছে আত্মবলি?

আজও কোন ভাই দায়িত্বের বাঁশীধ্বনিতে জোস্ন্যার মোলায়েম মাখতে না পেরে আকণ্ঠ  মেখেছে কার্তুজের আলখেল্লা?

ওগো মাবুদ, আপনি বলুন সাধারণ মানুষের কি রুপ বদলেছে?  ফিরে এসেছে কি হোমো সেপিয়েন্সের দুই হাজার সিসির স্তরের বন্য মেধা?

ওগো খোদাতায়ালা, আপনি কি হুকুম দেবেন কবি মাহমুদ দারবিশ কে… তিনি মায়ের কঙ্কাল কেটে কলম তৈরি করুন লিখতে থাকুন এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে -লিখতে থাকুন আর যুদ্ধ নয় নেমে আসুক শান্তির কবিতা-

আপনি সাধারণ মানুষের  মজ্জায় মজ্জায়  কবি “ঘাসমান  জাকতান” এর মতো লিখতে বলুন “ছাব্বিল আনা আরবী” –

আমি আরবীয়, পরিচয় পত্রের নম্বর “পঞ্চাশ হাজার” আট ছেলেমেয়ে – আমি দোরগোড়ায় নত হতে জানিনা পাথরের ফলকে-

তাহলে অন্তত অসুস্থ পশু’র মতো মুখ থুবড়ে পড়তে হবে না মানুষকে বালুর স্তবকে –

ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে পুরো পৃথিবী জুড়ে চলছে অকল্পনীয় প্রার্থনা,

নামাজের পূর্বে ওজুর জোরদার,

খোদা,

দোয়া ইউনুসের মাতম চলছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে –

আর একবার কিংবা একাধিক বার আপনি রক্ষা করুন হযরত ইউনুস (সাঃ) এর মতো হাজার হাজার অথবা লক্ষ লক্ষ  অথবা কোটি কোটি মানুষ কে- এইসব বর্বরোচিত হামলা থেকে-

নেমে আসুন খোদা এই ভূখণ্ডের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে-

এক তুড়িতে জেরুজালেমের রাস্তায় ভরিয়ে দিন ফুলের সমারোহ

আল আকসা মসজিদে আজ কি আযান হয়েছিলো মুয়াজ্জিনের সুমিষ্ট স্বরে?

যদি না হয়, আপনার কাছেই শুধু আবেদন করছি মহান সৃষ্টি কর্তা –

হযরত বেলাল ( আঃ) এর আযান ধ্বনি, যাতে মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে-

মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে যায় অপশক্তি –

মানুষ যেনো এই অস্থির নৈরাজ্যের মধ্য থেকে বেরিয়ে পড়ে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের অক্ষরেখায়- আপন হাতে মাটি ফাঁক করে রাখে ভুল ভ্রান্তির অশুদ্ধ স্পর্ধা –

 

সব অমানবিকতা কে আপনি ভাসিয়ে দিন ধর্মান্ধতার অন্ধত্বের সাথে জর্ডান নদীর জোয়ার দিয়ে ভূমধ্যসাগরের গভীর তলদেশে-

মানুষ বেঁচে থাক কবিতার অমৃত শ্লোকে একে অপরের পাশে হাতে হাত ধরে শস্য ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত খাদ্যে,লোনা চন্দ্রের অববাহিকায় প্রযুক্তির সুস্থ সঠিক তত্ত্বে –

মানুষ বেঁচে থাক খোদা, বেঁচে থাক পৃথিবীর বুকে আলোর হাওয়ায়,ফুলের সৌরভে, সবুজের মোহে শান্ত জলের ঝর্ণার স্নানে …

মানুষ বেঁচে থাক খোদা, সপ্তর্ষি মন্ডলের অপার্থিব রুপ রেখা টানে…

কবিতা - মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক

হৃদয় সমুদ্রে আজ

তাজা রক্তের প্রবাহ।

সুপেয় জলধারা

গুমরে কাঁদে অহর্নিশ।

লাল স্রোতে সাঁতার কাটে

মানবতার প্রেতাত্মা!

জলসাঘরে নেশায় বুঁদ

উন্মত্ত সভ্যতা।

নগ্ন চোখে খেলা করে

অন্য এক পৃথিবী।

 

তুমি আমি নির্বাক।

মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক।

নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা'

১. নেতানিয়াহুর প্রতিঃ

নেতানিয়াহু, আমি নিশ্চিত- আপনার পরিবার পরিজন রয়েছে,

যেমন একএকটি পরিবার ছিলো ফিলিস্তিনের ধ্বসে পড়া ভবনগুলোর প্রতিটি এ্যাপার্টমেন্টে।

নেতানিয়াহু,

অফিস ছেড়ে বাসায় ফেরার পর আপনার পুত্র-কণ্যা বা স্বজনের সন্তানদের গোলাপী গালে যখন আদর করে দেন- দুষ্টুমী করে

আপনার চোখে নিশ্চয়ই ভাসে না তখন

ফিলিস্তিনের ধ্বসেপড়া ভবনের নিচে

গোলাপ ফুলের মত শিশুটির মুখ- রক্তাক্ত মুখ-

আপনার দেশ থেকে উড়ে এসে ধ্বসিয়ে দেয়া

মিশাইলের আঘাতে বিক্ষত শিশুগুলোর মুখ।

নেতানিয়াহু,

ধরুন, আপনি পরিবারের সকলকে নিয়ে-

আপনার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ,

আপনার তুলতুলে সোনালী রং চুলের নাতি-নাতনীদের নিয়ে

রাতের ডিনার সেরে ঘুমিয়েছেন রাজকীয় নীল আলোয়,

আপনার কণ্যা- জামাতা এসেছে বেড়াতে আপনার রাজবাসভবনে-

আপনার কণ্যার কোলে হলুদ পুতুলের মত নাতনী

আর মধ্যরাতে তুমুল বোমার আঘাতে

সব ছিন্নভিন্ন আপনার চারপাশে- নরক-

আপনার পরিস্থিতি কেমন হবে, নেতানিয়াহু?

নিজেকে কল্পনা করুন, নেতানিয়াহু,

ফিলিস্তিনের ধ্বংসস্তুপের নিচে পরা কেউ-

ফিলিস্তিনের স্বজন হারানো আপনি ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে-

কল্পনা করুন ইজরায়েলি আপনাকে- নেতানিয়াহু,

এমন জানোয়ার আর দানব পৃথিবীতে

কাউকে খুঁজে পাবেন না- তুলনা করবার।

জানি, আপনারা চিরকাল এসবের নাগালের

বাইরের পৃথিবীর বাসিন্দা।

তবু নেতানিয়াহু,

জেনে রাখুন- মানুষের ঘৃণার মিশাইল কেবল ঘুমের ভেতরই নয়-

ইতিহাসের পাতায়ও তাড়িয়ে বেড়াবে আপনাদের মত রক্তখেকোদের?

২. জো বাইডেনের প্রতিঃ

জো বাইডেন,

আপনার কণ্যাকে, স্ত্রীকে আপনি হারিয়েছেন সড়ক দূর্ঘটনায়

পুত্র-স্বজন-পরিজন হারানোর বেদনা

আপনার চেয়ে কে আর জানে- কতটা গভীর।

অথচ নির্বিকার আপনার চোখেমুখে

নেতানিয়াহুকে পৃষ্ঠপোষকতার ঈঙ্গিত।

চক্ষুলজ্জায় আপনি কেবল আমতা আমতা করে-

একচক্ষু পাদ্রীর মত বলেন- আমরা যুদ্ধ চাইনা,

যুদ্ধ বন্ধ করা আশু দরকার।

অথচ ইসরায়েলকে যুদ্ধরসদ ঠিকই যুগিয়ে যাচ্ছেন আপনি,

জো বাইডেন,

আপনাকে সত্যিই আমরা একজন বিবেচক মানুষ ঠাউরেছিলাম

অথচ আপনিও কফির টেবিলে ধর্মের ধোঁয়া তুলে রক্তের পেয়ালা ঠোঁটে লাগিয়ে গুনগুন গান ধরেন জন লেনন-

”Imagine there’s no countries

It isn’t hard to do

Nothing to kill or die for

And no religion, too

 

Imagine all the people

Livin’ life in peace”

 

জো বাইডেন,

অথচ, সারা পৃথিবী আপনাকে বিবেচক মানবিক

জেন্টলম্যান ভেবেছিলো।

৩. রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক মন্তব্যঃ

রাষ্ট্রসংঘ, এক কলের পুতুল-

চাবি মেরে ছেড়ে দেয়া এক পাপেট-

রাষ্ট্রসংঘ, নির্বোধ এক বোকা মাছ-

যার কলিজায় বরশি গেঁথে ছিপ নিয়ে

পারমানবিক বোমার মালিকেরা খেলাখেলি করে।

রাষ্ট্রসংঘ, এক ‘উদ্বেগ-বিবৃতি’ দাতাদের আস্তানা-

যেন গ্রাম্য মোড়লদের বেতনভোগী নিমকখোর চামচাদের গুলতানিখানা

রাষ্টসংঘ, কেবল ধনী ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ‘দুঃখ পাওয়া চিজ-পনিরচাটা’ মেধাবী মেরুদন্ডহীনদের ক্লাব।

কবিতা - হামাসের রকেট

ওরে ও দুনিয়াবাসি

আমরা যারা ফিলিস্তিনি

কোথায় আছি কেমন আছি

কেমনে কাঁদি কেমনে হাসি

কেমন করে বেঁচে আছি দেখনা গো আসি

ওরে ও দুনিয়াবাসি

 

মুক্ত আকাশ মুক্ত বাতাস মুক্ত বাড়ি ঘর

কিছুই আমার নয় যে আপন সবই যেন পর

নদীর পানি মাঠের ফসল

সবই তারা করছে দখল

কোন সে দোষে নিজের ঘরে আমরা পরবাসি

 

বালির কণা পথের নুড়ি রক্তে ভিজে লাল

অফিস বাড়ি শিক্ষাভবন সবের একই হাল

করছে আঘাত মায়ের বুকে

কান্না সবার চোখে মুখে

শিশু কিশোর বৃদ্ধ যুবা নেই যে কারো হাসি

 

লেখা পড়ার স্বপ্ন এখন নেই শিশুদের বুকে

ইসরাইলি বুলেট বোমার চিহ্ন দেহ মুখে

যুদ্ধ দেখা তাদের খেলা

কেঁদেই কাটে সারাবেলা

ধ্বংস বাড়ি লাশের সারি কেমনে বলো বাঁচি

 

বিশ্ব বিবেক বিশ্ব মোড়ল আজকে কি নেই কেউ

কেউ দেখেনা ফিলিস্তিনে রক্ত নদীর ঢেউ

তুমিই প্রভু সকল আশা

বেঁচে থাকার শেষ ভরসা

মাফ করে দাও ফিরে তাকাও দাও বিজয়ের হাসি।

কবিতা - হামাসের রকেট

ঘোর অসহায় যুগে

নত শিরের উদ্ধত কাননে

সীমারীয় খুনে কনসার্টের ফোয়ারায়

খামোশ বলে ওঠে হামাসের একেকটি রকেট।

 

পরকাল পূজারীদের জাবরকাটা অন্তহীন

ইতিহাস কচলিয়ে মাথায় পড়ে তাজ,

চাটার মত কখনো একটা পা-ও জোটানোর ব্যর্থতায়

খুনীবাদের পরিত্যক্ত মদের বোতলে খোঁজে

কয়েক ফোঁটা  রহমত,

তখন ঝলসে ওঠে হামাসের একেকটি রকেট।

 

ফিলিস্তিনকে বানিয়ে এক টুকরো নরক

ডেড সি-তে প্রমোদে ভাসে সকল চুক্তি,

মজলুমের দুনয়ন হয়ে উঠলে দজলা ফোরাত দীর্ঘশ্বাসগুলো হয়ে যায় হামাসের একেকটি রকেট।

 

এপার ওপার- যে পাড়েই হোক

ইনসাফের চেয়ে লাশ শ্রেয়,

খুনের প্রবক্তাদের  উচ্ছল দীর্ঘজীবিতায়

লাশের পাহাড়ে নবজাতক আত্মরক্ষার পতাকা উড়ালেও

তাকে ক্রশবিদ্ধ করে কুড়ায় প্রশংসা

তখন গর্জে ওঠে হামাসের একেকটি রকেট।

 

প্রজাপতি  ফুল আর ফুল ভুলে গৌরব

বেদনার নহরে ছটফটায় শাহিন

বারুদের দাপটে এবরশনে বিধ্বস্ত জমিন

সহস্র বিশ্বাসঘাতকতার নিঃশ্বাসে ক্রমশঃ ঢাকলে আকাশ

ধ্রুবতারা হয়ে চমকায় হামাসের একেকটি রকেট।

কবিতা - মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম

রক্তের ঋণ রক্ত করবে শোধ,

আর নয় প্রতিবাদ, এই বার প্রতিশোধ।

 

আল আকসার মেঝেতে বেঁধেছে জমাট লহু-

আজানের সুরে বিলাপ করে কাঁদছে মুয়াজ্জিন,

এসো,কাতারে কাতারে দাঁড়াও হে মুমিন।

 

সিজদায় হোক শাহাদাৎ,সে তো ভাগ্য এ জন্মের,

চলুক গুলি, দাগুক কামান পাষন্ড পশুদের।

 

খোদা ছাড়া কেউ নেই আর পরোয়ার-

ছাড়বো না অধিকার, আল্লাহর আকসার।

কোটি কন্ঠে উঠবে শ্লোগান- আল্লাহু আকবার।

 

বোনের নেকাব লুটায় ধূলিতে, বাতাসে আর্তনাদ

মৃত্যুপুরীতে খোদার স্মরণে বাঁধ সাধে জল্লাদ!

 

হায়, হায়েনার দল!

 

শক্তিতে যায় ক্ষণিক জেতা,মহাকালে তুই খল।

 

যুগ যুগ ধরে রক্তস্নাত জেরুজালেম বড় উর্বর,

জন্মাবে ফের নতুন দূর্বা শুনে রেখো হে বর্বর।

 

রক্ত নহর উছলে উঠছে, রক্ত স্রোতে সদ্য,

মৃত্যুপরীর পুকুরে ফুটেছে আজাদীর লাল পদ্ম।

সূচিপত্র

প্রবন্ধ

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার  ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

কবিতা

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

গল্প

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

ফিলিস্তিনি কবিতা

ভূ-খণ্ড আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি তোমার চোখের ভাষা অত্যাচারের অবসান কাঁদে ফিলিস্তিন হিসেব হবে সবের  নির্বাসিত মানবতা মনুষ্যত্ব খুন ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক মানবতা গাজায় আগুন একচোখা এই জাতিসংঘ  চির সংগ্রামী  অনুবাদ: হিজল জোবায়ের মধ্যপ্রাচ্যের গল্প ফুটনোট ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন মেহমুদের অপেক্ষা ঈদের সন্ধ্যায় যুদ্ধ চুপ ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ ফিলিস্তিনের গান হামাসের রকেট মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম

ছড়া

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

নিবন্ধ

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

কবিতা

ভূ-খণ্ড || কামরুন নাহার রেনু আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি || মেহেদী ইকবাল তোমার চোখের ভাষা || মাসুদ চয়ন অত্যাচারের অবসান || রাইয়্যান হোসেন কাঁদে ফিলিস্তিন || বায়েজিদ বোস্তামী  হিসেব হবে সবের  || খাদিমুল মুরছালীন রিয়াদ  নির্বাসিত মানবতা || শহিদুল ইসলাম মনুষ্যত্ব খুন || নজির রায়হান ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১ || ঘাতক ‘স্বস্তিকা’য় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল || রবীন জাকারিয়া বনি ইসরাঈলদের ‘তাবুতে সাকিনা’ (আর্ক অব কভিনেন্ট) || সালমা সেতারা কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক || হেলেন আরা সিডনী মানবতা || সাঈদ সাহেদুল ইসলাম গাজায় আগুন || এসএম খলিল বাবু একচোখা এই জাতিসংঘ  || খলিল ইমতিয়াজ  চির সংগ্রামী  || এম এস মুরছালিন আয়াস অনুবাদ: হিজল জোবায়ের || মধ্যপ্রাচ্যের গল্প || রেজাউল ইসলাম হাসু ফুটনোট || ইমতিয়াজ মাহমুদ  ফিলিস্তিন শিশুরা একদিন || বাদল রহমান মেহমুদের অপেক্ষা || রানা মাসুদ  ঈদের সন্ধ্যায় || জহির রিপন যুদ্ধ || মাহবুবুল ইমলাম চুপ || ফেরদৌস রহমান পলাশ  ক্ষমা করো আমাকে নিভৃত মন || তাসমিন আফরোজ মনুষ্যত্ব মুক্তি পাক || হাই হাফিজ ‘নেতানিয়াহু, জো বাইডেন এবং রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক অসংলগ্ন পঙক্তিমালা’ || মারুফ হোসেন মাহাবুব ফিলিস্তিনের গান || মাহফুজুর রহমান আখন্দ হামাসের রকেট || জাকির সোহান  মৃত্যুপুরীতে লাল পদ্ম || রনো আনোয়ার 

ফিলিস্তিন সংখ্যা ২০২১

কবিতা - ভূ-খণ্ড

টুকরো টুকরো করো ভূখন্ড,

পাথর ছুঁড়ে বুকের পাটাতন শক্ত হতে দাও,

আলো ফোটার আগেই ঘুমিয়ে গেছে যে শিশু

সেখানে রেখে এসো মানবিক সাইরেন,

নিশাচর কোনো পথিক থেমে গেলে,

বেজে উঠুক শব্দ উল্লাস,

জেগে উঠুক আমাদের পাঠশালায় অ,আ, ক,খ।

এখন অনেক বাকি জেরুজালেম  থেকে মহানন্দা,

আমাদের ঠিকানা চেয়ে লজ্জা দেবেন না,

মৃত্যুই এখন ঠিকানা-

কবিতা - আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও বোমা হামলা বর্বর আক্রমণ

রক্তাক্ত আল আকসা গাজা

টুকরো টুকরো লাশ ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো

বুলেট বিদ্ধ অসহায় শিশুদের কথা বলি

বিধ্বস্ত ঘর জুড়ে ছড়িয়ে খাদ্যকণা, খেলনা পুতুল

আর নষ্ট হওয়া শিশুর দুধের কথা বলি।

এর আগে হামলা কি হয়নি কখনও?

আমরা কি ভুলে গেছি শাবরা আর শাতিলার কথা?

ভুলে গেছি হাসিমুখ অসম সাহসী নেতা ইয়াসির আরাফাত?

কথায় কথায় গুলি অবৈধ বসতি আর কী জঘন্য আগ্রাসন!

একদিকে সমরাস্ত্র আধুনিক

অন্যদিকে খালি হাত বড়জোর নুড়ি ও পাথর!

বছর বছর এই দৃশ্য চোখ বুঁজে দেখছে দুনিয়া

কোথায় জাতিসংঘ, বাঘা বাঘা মোড়লেরা সব?

আহা! বিশ্ব ব্যবস্থা

গণতন্ত্র, মানবাধিকার!

নির্লজ্জ্ব

কি করে তোমরা পারো করতে বড়াই সভ্যতার?

 

আবারও ফিলিস্তিনের কথা বলি

আবারও বোমা হামলা বর্বর আক্রমণ

বলি

ওহে জাতিসংঘ

 

তুমি আর কবে হবে সামান্য মানবিক!

কবিতা - তোমার চোখের ভাষা

তোমার চোখের ভাষা হয়ে উঠেছে ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠ কবিতা;

সেই কবিতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে যুদ্ধ মৃত্যু লাশের নিষ্ঠুরতম সিদ্ধতা;

নিষ্পাপ চোখের পলকে রক্ত খচিত স্কেচ আঁকা কেন!

আমি আর কি লিখবো বলো!

তুমি হয়ে উঠেছো ট্রাজেডির শ্রেষ্ঠ কবিতা,

বিপন্নতার অবিচ্ছেদ্য আখ্যান;

তোমার হৃদয় প্রবন্ধ পাঠে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেছি;

আগুনের লেলিহান আঁচড় চোখে মুখে,

হিমালয় ভেঙে পড়ে কুর্নিশ করছনা কেনো!

এ কেমন দেহসজ্জা এঁকে দিয়েছে মারণাস্ত্রের হিংস্র আততায়ী;

বুঝলো না অবুঝ সত্তার নির্জন আহাজারি!

তোমার অমন চাহনির স্রোতে পৃথিবীর সকল অন্ধকার রক্ত রাঙা রঙে বর্নীল হয়ে উঠেছে;

যে চোখ ওই অবুঝ চোখকে উদ্দেশ্য করে তাকিয়ে থাকবে সে চোখ হয়ে উঠবে বর্ষার অপ্রতিরোধ্য প্লাবন;

ওই অপোক্ত হৃদয়ের নির্জন ব্যথাতাড়িত শ্লোগান যাকে ছুঁয়ে দিবেনা সে হয়তো কণ্টক নিবন্ধিত পাথরপৃষ্ঠ;

কবিতা - অত্যাচারের অবসান

কি হচ্ছে?

আশ্রয়প্রার্থী রা নিজেদেরই মানচিত্র কেড়ে নিচ্ছে।

 

জ্বালিয়ে দিচ্ছে!

মসজিদ,মানুষ,শহর

তারা বর্বরতার শিখরে উঠেছে।

 

কতজনে বেঁচেছে? কপাল করে

রক্তে ধুয়ে গেছে রাজপথ

শিশুদেরও তারা মেরেছে।

 

যদি পাল্টা জবাব আসে?

আছে কি প্রতিরোধ?

কোনো কিছুই কাজে আসবে না সেদিন!

নির্যাতিত হিংস্র পশুর ন্যায় মানুষ কে

আটকাতে পারবেনা কোনোদিন!

 

যে হাসি আজ মুখে এনেছো,

মৃত্যুর সময় এলে রাখতে পারবে তো?

 

খুব কি দেরি সে সময়ের যেদিন

ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে।

জগতের যত অন্যায় ধ্বংস হয়ে

মানুষ ফিরে পাবে ন্যায় বিচার,শান্তি

অবসান হবে অরাজকতার ক্লান্তি।

 

মুছে যাবে অত্যাচার,

দেখে নিও দেরি নেই আর!

কবিতা - কাঁদে ফিলিস্তিন

এক হও মুসলিম এক হও

ফিলিস্তিনে কাঁদে আমার ভাই বোন,

নিজেদের পতাকা বাঁচাতে নিজভূমে

মার খায় তারা করে রক্ত ক্ষরণ।

 

যুগের পর যুগ শতাব্দী ধরে

পশ্চিম তীর গাযা হয় খুনে লাল,

আমাদের পবিত্র ভূমি আল আকসা

ইসরায়েল ইহুদিরা করে বেদখল।

 

জুলুমের সীমা তারা করেছে পার

সেদেশের আকাশে মজলুমের আর্তনাত,

স্বার্থবাদী জাতিসংঘ কোথায় আজ

বাড়ায় না কেন সাহায্যের কোন হাত।

 

মরে যায় বাবা-মা, সন্তান ভাই-বোন

ফিলিস্তিনের বাতাসে লাশের গন্ধ,

মুসলিম হয়ে আজ না লড়লে তাদের দুখে

তাদের অভিশাপ করবে আমাদের ধ্বংস।

 

কাঁদে ফিলিস্তিন বুক ভরা ব্যথা নিয়ে

চাই জালিমের থেকে চির মুক্তি,

আয় ছুটে আয় বিশ্ব মুসলিম যত

চেপে ধরি মানুষরূপী শয়তানের টুটি।

কবিতা - হিসেব হবে সবের 

সারা বিশ্বে মুসলিম নিধন, বাজছে উৎসবের ঢাক,

কোলের সন্তান হারাচ্ছে মা উইঘুরে, বিশ্ব হতবাক!

নাসারাদের চক্রান্তের শিকার, বৃদ্ধ-নারী-শিশুও,

তাদের কর্মে লজ্জিত যেন, খোদ ক্রাইস্ট যিশুও!

আন্তর্জাতিক আদালত নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয় তাদের আইন,

বিশ্ব মানবতা ডুকরে কাঁদে, ধ্বংসস্তূপ প্যালেস্টাইন।

 

কসম আকসার রবের,

যাররাহ পরিমাণ ছাড় পাবে না, হিসেব হবে সবের।

 

ওঠো হে ঘুমন্ত মুসলমান, শোন ওহে পাতিয়া কান,

মুসলিমের রক্তে বন্যা বইছে, প্লাবিত আজ আরাকান।

ভারতে পুড়ছে মুসলিম, কাশ্মিরের ঘরে ঘরে আগুন,

জালেমরা হাসছে অট্টহাসিতে, লেগেছে জুলমের ফাগুন।

মুসলিমেরা সজাগ হও, চক্ষু মেলো, দেখো ফিরিয়া,

অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাচ্ছে দিন, ধুঁকছে সিরিয়া।

 

কসম সালাহর রবের,

যতটা বিন্দু ঝরেছে তাজা রক্ত, হিসেব হবে সবের।

 

ভাবছিস তোরা অসীম ক্ষমতাধর, ফুরোবে না কভু রাত,

যত দিন যায়, প্রসারিত হয় তোদের, নির্যাতনের হাত।

জেনে রাখ তবে, রাতের গভীরতা নিকটে আনে ভোর,

রক্তের নেশায় মত্ত হয়ে আজ, খুঁড়ছিস নিজেদের গোর!

সোনালী সকালে উঠবে যখন, বিজয়ের রক্তিম রবি,

সেদিন কোথাও রইবে না আর, জুলুমের প্রতিচ্ছবি।

 

কসম কাবার রবের,

কতটা বুলেট করেছিস খরচ, হিসেব হবে সবের।

কবিতা - নির্বাসিত মানবতা

হৃদয়ঙ্গমে দাহন করেছি বিচ্ছেদের মানবাধিকার,

প্রলয়-ঝঞ্ঝাটে গ্রাস করেছে মুমিনের ধরণীর তীর্থে!

বাহু-বলয়ে উদ্দলিত হয়েছে নগ্ন বেওয়ারিশরা;

অভেদ্য কাপট্যে বিভোরতায় ধার্মিকের কর্ণধারের!অন্তরালে বিষাদের বক্ষে সহস্রাব্দ  মৌনতার বিভৎস ।

নৈঃশব্দের আঁধারে প্রার্থনায় আধিপত্যের আলয়ে;

হয়তবা,রহমের রশ্মিতে ফের প্রাণোচ্ছালতায় পূণ্যভূমি!!

ধিক্কারে কাটিবে নির্বাসিত মানবতার মসনদ;

নিপাত যাক জায়ান্টবাদীর বিভৎসতার চারণভূমি!

ফের মুমিনের প্রাণোচ্ছ্বাসের মেলা বসিবে ধরণীতলে!

কবিতা - মনুষ্যত্ব খুন

পৃথিবীর দুর্দিনে আজ

ইসলামের দুঃখ সময়ে!

 

আমরা যদি আজ মানুষ হয়েও

প্রতিবাদের কন্ঠ,হাত না তুলি

তবে ভিরু কাপরুষের খাতায়

নাম লিখিয়ে মনুষ্যত্বকে খুন করলাম।

ফিলিস্তিন সংখ্যা

সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি মুগ্ধতা ডট কমের বিশেষ ‘ফিলিস্তিন সংখ্যা’য়। আমাদের জানামতে বাংলা ভাষায় এর আগে ফিলিস্তিন সংক্রান্ত নানা বিষয় একত্রিত করে এ ধরণের কোনো বিশেষ সংখ্যা হয়নি। আমাদের এই চেষ্টার মূল কারণ, ফিলিস্তিন ও ইজরায়েল সম্পর্কিত খুঁটিনাটি তথ্য একত্রিত করে রাখা। দ্বিতীয় কারণ, ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাভাষীদের ভালোবাসা প্রকাশ করা। এছাড়া ইজরায়েল সম্পর্কিত অনেক পোস্ট ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলে বলে এ ধরণের অনেক দরকারি লেখা ওয়েব সাইটে আপলোড করে রাখা প্রয়োজন। কাজেই আমাদের আহ্বান থাকবে, কেউ যদি এ ধরণের কোনো লেখা তৈরি করেন, তাহলে দয়া করে আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন। আপনার কষ্টসাধ্য লেখাটি সংরক্ষিত থাকবে। যারা এই বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখা দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করি, ভবিষ্যতেও সবাই আমাদের সাথে থাকবেন। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষদের জন্য আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও দোয়া রইলো।

উপদেষ্টা সম্পাদক: ফেরদৌস রহমান পলাশ

সম্পাদক: মজনুর রহমান

বিশেষ সংখ্যা সহযোগী: মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ

অলংকরণ: রেদওয়ান শুভ

ঘাতক স্বস্তিকায় স্বস্তি পাচ্ছে ইসরাইল - রবীন জাকারিয়া

(মুখবন্ধ: এটি লেখকের মৌলিক কোন লেখা নয় বরং বিভিন্ন সাক্ষাতকার, বিদেশি সংবাদ মাধ্যম, ইতিহাস, বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট, বিভিন্ন ব্লগ, বিভিন্ন বই, সংবাদ এবং আর্টিকেলের একটি সন্নিবেশিত রুপ মাত্র৷ সূত্রসহ উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি৷)

আমি হিটলার বলছি বইয়ে হিটলার বহুবার ব্যাখা করেছেন কেন তিনি ইহুদিদের ঘৃণা করতেন৷ সেসময় জার্মান সমাজ ব্যবস্থার সর্বত্র ইহুদিদের প্রভাব, ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি ছিল অপরিসীম৷ যদিও সেখানে তারা ছিল সংখ্যালঘু৷ ইহুদিদের দ্বারা জার্মান খৃস্টান তথা সেদেশের নাগরিক প্রতিনিয়ত কীভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে এবং যার কারনে হিটলার ভাল স্কুলে লেখাপড়া করতে পারেননি তা বইয়ে উল্লেখ করেছেন৷ অবশ্য নিজের পরিবারের ঔদাসিন্যতাকেও অস্বীকার করেননি৷ সমাজের এরুপ অনাচারে যখন বসবাসরত খৃষ্টান তথা সকল জনগণ নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন৷ তখন হিটলার সমস্ত জনগণকে এক নতুন ক্যারিসমা দিয়ে আকৃষ্ট করলেন এবং এক মহাশক্তিধর প্ল্যাটফরম নির্মাণ করলেন৷ আর সে প্ল্যাটফরমটি হলো আর্য বা Blue/Royal Blooded জাতি৷ ঘোষণা রাজকীয় জাতি হিসেবে আমরাই একমাত্র বিশ্ব শাসন করার যোগ্যতা রাখি৷ এ ধরণের উক্তিতে জার্মান জাতিকে অভূতপূর্ব নাড়া দিল৷ পরেরটুকু শুধুই ইতিহাস৷

এখন আসা যাক স্বস্তিকা কী:

স্বস্তিকা চিহ্নের ইতিহাস : স্বস্তিকা চিহ্নটি আসলে একটি জ্যামিতিক চিত্র, ইউরোপ – এশিয়ার প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এটি হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে দেবত্ব ও আত্মিকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পশ্চিমি বিশ্বে ১৯৩০ এর আগে পর্যন্ত এটিকে প্রকৃষ্টতা ও গুডলাক এর চিহ্ন হিসেবে দেখা হতো, তারপরে এটি নাৎসি বৈশিষ্ট্য ও আর্য জাতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

“স্বস্তিকা” শব্দটি সংস্কৃতের ” স্বস্তিক” শব্দের থেকে আসে। যার অর্থ “ভালোর সহায়ক বা মঙ্গলজনক”। হিন্দুধর্মে clockwise pointing চিহ্ন অর্থাৎ (卐) – এটাকে সূর্যের প্রতীক এবং সাফল্য, সৌভাগ্য ও শ্রীবৃদ্ধি এর চিহ্ন রূপে দেখা হয়। যেখানে anti clockwise অর্থাৎ (卍) – এটাকে মা কালীর তন্ত্র সাধনার প্রতীক হিসেবে মান্য করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন নাম ও কাজে এর উল্লেখ মেলে।

বিভিন্ন দেশে এর নামও বিভিন্ন। যেমন –

জার্মান – হাকেন্ক্রুজ।(Hakenkreuz)

ফ্রান্স – করিক্স গ্যামী।(croix gammée)

চীন – ওয়ানজি (萬字 (wànzì))।

জাপান – মানজি।(manji)।

কোরিয়া – মানজা।(manja)।

এই চিহ্নটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইউরোপে বহু প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। ২০-এর দশকের প্রথম দিকেই এটি পশ্চিমি দেশগুলোতে সৌভাগ্য সূচক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। তারপরে ১৯২০ তেই এটি নাৎসি পার্টির দ্বারা গৃহীত হয় এবং তারও পরে ১৯৩০ নাগাদ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এটি বিভিন্ন নাৎসি association দ্বারা ব্যবহৃত হতে থাকে। এটি নাৎসি পার্টি দ্বারা প্রধানতঃ ব্যাবহৃত হতো জার্মানির “স্বদেশমূলক গর্বের” চিহ্ন হিসেবে। নাৎসিদের শত্রুদের এবং ইহুদীদের জন্য এই চিহ্ন ধীরে ধীরে ইহুদিবিদ্বেষ ও ভয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। নাৎসিদের , ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের জন্য এই চিহ্নটিকে পশ্চিমি দেশগুলোতে জাতিগত বিদ্বেষ ও হুমকির চিহ্ন হিসেবেও দেখা হতে থাকে।

এই চিহ্নটি শুধু তাদের পার্টির পতাকাতেই ব্যাবহার হতো না, সাথে সাথে বিভিন্ন ডিভিশনের অফিসারদের ব্যাচ ও আর্মব্যান্ড হিসেবেও ব্যাবহৃত হতো।

এডলফ হিটলারের লেখা ” Mein Kampf ” বইতে এই লেখাটিরও উল্লেখ পাওয়া যায়।

In his 1925 work Mein Kampf, Adolf Hitler writes that: “I myself, meanwhile, after innumerable attempts, had laid down a final form; a flag with a red background, a white disk, and a black Hakenkreuz in the middle. After long trials I also found a definite proportion between the size of the flag and the size of the white disk, as well as the shape and thickness of the Hakenkreuz.”।

এর অর্থ অনেকটা এরকম – ” আমি বহুচেস্টার পরে , শেষ পর্যন্ত পতাকার একটা ডিজাইন পেয়েছি, যার পিছনটা হবে লাল, মাঝে সাদা চাকতি, এবং তার মাঝে একটি কালো স্বস্তিকা। অনেক চেষ্টার পরে আমি পতাকার সাইজ ও সাদা চাকতিটির মধ্যে সঠিক অনুপাত খুঁজে পেয়েছি এবং স্বস্তিকার সঠিক আকার ও বেধ ও পেয়েছি।

হিটলার যখন প্রথম নাৎসি পার্টির জন্য এই পতাকা তৈরি করেন, তখন তিনি স্বস্তিকা চিহ্ন এবং রং গুলোকে সংঘবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কারণ লাল, সাদা ও কালো রং ছিল পুরোনো জার্মান সাম্রাজ্যের পতাকার রং। তাই তিনি মনে করতেন, এটি তাদের পুরোনো সম্মান ফিরিয়ে আনবে। যেখানে লাল ছিল – তাদের সামাজিক ধারণা ও আন্দোলনের প্রতীক। সাদা – স্বদেশভক্ত ধারণার প্রতীক, আর স্বস্তিকা ছিল – আর্য জাতির সংগ্রাম ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে সফলতার প্রতীক। এছাড়া এটিকে উন্নত জীবনযাপন ও জার্মান জাতির অগ্রগতির প্রতীক হিসেবেও দেখা হত।

নাৎসি পার্টির পূর্বে এই স্বস্তিকা চিহ্নকে জার্মানের “ভোলকিসেচ বুওগুনগ (Völkische Bewegung) ” নামক জাতীয় গোষ্ঠীও ব্যবহার করতো। যার পতাকাটা ছিল এরকম দেখতে।

এই সম্পর্কে জোসে ম্যানুয়েল এরবেজ (José Manuel Erbez) বলেন :-

The first time the swastika was used with an “Aryan” meaning was on 25 December 1907, when the self-named Order of the New Templars, a secret society founded by Lanz von Liebenfels, hoisted at Werfenstein Castle (Austria) a yellow flag with a swastika and four fleurs-de-lys.

যার অর্থ অনেকটা এরকম :- ” সবপ্রথম স্বস্তিকা চিহ্নটি ব্যাবহৃত হয় ১৯০৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর “আর্য” অর্থরূপে। যখন “অর্ডার অফ দা নিউ টেম্পলার্স” নামের একটি গোপন সংগঠন তৈরি হয় “ল্যাঞ্জ ভন লিয়েবেনফেলস” এর দ্বারা অস্ট্রিয়ার ওয়েরফেনস্টাইন দুর্গে। যেটা ছিল একটি হলুদ পতাকা , স্বস্তিকা চিহ্ন ও চারটি fleurs-de-lys এর সাথে।

এরপরে ১৪ই মার্চ ,১৯৩৩ , হিটলারের জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পর পরই এই পতাকাটিকে জার্মানির জাতীয় রং হিসেবে উত্তোলন করা হয় এবং নুরেম্বর্গ এর আইন (Nuremberg Laws) অনুসারে, ১৯৩৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জার্মানির জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

হিটলারের হাতে স্বস্তিকা চিহ্নের কারণ :- তাহলে নিশ্চই বুঝতেই পারছেন হিটলারের হাতে/পতাকায় এই স্বস্তিকা চিহ্নের পিছনে যেমন ছিল পশ্চিমি দেশগুলির goodluck বা সৌভাগ্যমূলক ধারণা (যেটি পরে অনেকের জন্য ভয়ের এবং দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়), তেমনি ছিল সব জাতির চেয়ে নিজেদের শুদ্ধ রক্ত,শ্রেষ্ঠ জাতি বা আর্য জাতি প্রমান করার প্রচেষ্টা। এছাড়াও ওটি ছিল দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পদ্ধতি ও দেশপ্রেমের প্রতীক। এবং আমরা যেরকম দেখলাম এই চিহ্নটি শুধু হিটলারের হাতেই ছিল না, তাদের বিভিন্ন বিভাগের অফিসার/কর্মীদের ব্যাচ ও আর্মব্যান্ডেও ছিল।

সূত্র: Google/bn.quora.com

দেখা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – পটভূমি, ফলাফল ও অন্যান্য ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে শুনে নাই বা জানে না দুনিয়াতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইংরেজিতে বলা হয় World War II, Second World War, WWII, WW2) মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ পর্যন্ত সংগঠিত হওয়া সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে জার্মানির নাৎসী বাহিনী, ইতালির মুসোলিনী বাহিনী ও জাপানের সেনাদের বর্বোরোচিত নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল লোমহর্ষক। সেটা হিস্ট্রি চ্যানেলের ডকুমেন্টারি দেখেই হোক, কিংবা ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ মুভিতে ক্যাপ্টেন স্টিভ রজার্সের হাতে নাজিদের বেধড়ক মার খেতে দেখেই হোক কিংবা ইউটিউবে ডকুমেন্ট দেখেই হোক সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে অবগত।

১৯৩৯ সাল থেক ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছর সমকাল ২য় বিশ্ব যুদ্ধের বিস্তৃতি ধরা হয়। ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এ যুদ্ধ। সে সময়ের বিশ্বের সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ দেশই এই ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি নামে দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়। মিত্রপক্ষে ছিল বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ড। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষ শক্তি ছিল জার্মানি, ইটালি ও জাপান।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে ধরা হয়। এ যুদ্ধে ৩০ টি দেশের প্রায় ১০ কোটির বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যেখানে সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে। এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় এই হিংস্র যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

একদিন বা এক মাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় নাই। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সম্রাটের পতন ঘটে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় বদল হয়। মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসন্ন হয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগমনে সব মিলিয়ে নেতৃত্ব উঠে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের হাতে! উইলসন ছিলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, গণতন্ত্র এবং লিবেরালিজমের প্রবক্তা ও বাস্তবায়নের অন্যতম নায়ক। ওদিকে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ান রাজনীতি নতুন রুপ পায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে প্রচলিত গোপন সামরিক চুক্তি ও গোপন আন্তর্জাতিক রাজনীতি যুদ্ধের সহায়ক বলে বিবেচনা করে চলে আসে উন্মুক্ত কুটনীতির প্রচলন। এর ধারাবাহিকতায় সরকারব্যাবস্থায এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সচ্ছতার নিশ্চয়তা প্রদান করার উদ্দেশ্যে জন্ম হয় “লীগ অব নেশনস” ! এটি মূলত গঠন করা হয় বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ প্রতিরোধে একটি “মুরুব্বী” কাউন্সিল হিসেবে । পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে গঠিত হয়!

পটভূমি আলোচনায় প্রথমেই আসে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তি বিশ্ব রাজনৈতিক অবস্থা। প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। এর পরে জার্মানীকে ২৬৯ বিলিয়ন “গোল্ড মার্ক” জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে ১৮৭২ এর যুদ্ধে জার্মান দখলকৃত “আলসাক-লরেন” এলাকা ফ্রান্স পুনরায় তাদের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। আবার, এ সময় জার্মানীকে অস্ত্রহীন করে ফেলা হয়। জার্মানীর মিত্র অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে একদম খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়।

ফ্রান্স, বেলজিয়াম , ইটালি ও গ্রিস নতুন নতুন এলাকার কতৃত্ব নেয়। আরেক মিত্র অটোমান সাম্রাজ্যে আন্ডারে থাকা উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য বেদখল হয়ে যায় এবং আবার দখল করার লক্ষ্যে ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইটালী-গ্রিস তুরস্কের ভুখন্ডের নানা অংশে ঢুকে যায়। যদিও কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক নিজেদের ভুমি রক্ষা করে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে , যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১ম বিশ্ব যুদ্ধ স্থগিতকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের সাথে । মার্কিন নেতৃত্বে পুরো দুনিয়া বদলে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপ থেকে দেশে ফেরার পর মার্কিন কংগ্রেস উইলসনের সমস্ত প্ল্যান খারিজ করে দেয়, এবং নিজেদের ইউরোপীয়ান ঝামেলা থেকে দুরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশাল দেশ জাতিসংঘের বাইরে ছিল । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে জাতিসংঘের দায়িত্ব থাকলেও আমেরিকার অনুপস্থিতিতে তারা বিশ্ব উত্তেজনা প্রশমনে ব্যর্থ হয় ।

এ ভাবে ১০ বছর কেটে যায়। মার্কিনিরা সরে থাকায় বিশ্ব জুড়ে ফ্রান্স আর যুক্তরাজ্য চালকের আসনে বসে থাকে। অন্যে দিকে নবগঠিত লিগ অফ নেশনস যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে কার্যত তেমন সুবিধা করতে পারে নি। রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করার নীতি এবং সামগ্রিক চিন্তার অভাবে ধীরে ধীরে এটা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায়, ব্রিটেন বা ফ্রান্স আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে অনাগ্রহী হয়ে নিজ নিজ স্বার্থ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফ্রান্সের চাচ্ছিল যে ভবিষ্যতে জার্মানির যুদ্ধ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ নির্লুপ্ত করে ফেলতে। অন্য দিকে চতুর ব্রিটেন হয়তো “নেপোলিয়ান” যুগের কথা স্বরন করে “ব্যালেন্স অব পাওয়ার” ঠিক রাখার জন্যই জার্মানীর সামরিক উপস্থিতির সমর্থন করে। এর মধ্য দিয়ে জার্মানী আবার নিজেদের সামরিক বাহিনী গঠনের অনুমুতি পায়। এই চিন্তা ধরে জার্মানী রাজনীতিতে পুনরায় প্রবেশের সুযোগ পেয়ে বসে।

ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় “অর্থনৈতিক মহামন্দা” । বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণস্বরূপ বিরাট ঋণের বোঝা জার্মানের গাড়ে চেপে ছিল। কিন্ত বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে ।সমগ্র জার্মানি ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে। এমতাবস্থায় জার্মানি কয়েক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থামিয়ে দেয় ।ফলে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামযুগ্মভাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল রুঢ় দখল করে নেয় ।এর ফলে ঐ অঞ্চলের জার্মানরা বিদ্রোহ শুরু করলে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ে ।

হিটলার মুসোলিনী

হিটলার-মুসোলিনী (looksfilm.tv)

২য় বিশ্ব যুদ্ধের পটভূমি আলোচনায় জার্মানির হিটলার ও মুসলোনীর উত্থান খুব গুরুত্ব পূর্ণ । তাই তাদের উত্থানের ঘটনা জানা যাক।

এবার দৃশ্য পটে আসে হিটলার। অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউয়ে ১৮৮৯ সালে জন্ম নেওয়া হিটলার ১৯০৭ সালে ভিয়েনা এসে চারু কলায় ভর্তি হয়।সেখানে কয়েক বছর কাটান। এ সময় তার মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষ ও সাম্যবাদ বিরোধী মনোভাব মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধের শেষে মিউনিখে ফেরত আসেন। ঘুরে ফিরে কেটে যায় ৫ বছর। জার্মানরা যুদ্ধের পরাজয় বরন করলে এই ঘটনা হিটলারকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলে। তখন তিনি স্বদেশের গৌরব পুনরুদ্ধার ও ভার্সাইয়ের অপমান জনক যুক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এ উদ্দেশ্যে ১৯২০ সালে হিটলার জার্মান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দল ঘটন করেন। যা নাৎসি দল হিসেবে পরিচিত।

নাৎসি দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং দলীয় প্রধান তথা ফ্যুয়েরার হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় তিনি একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করে। এই বাহিনী গঠিত হয় মূলত প্রাক্তন আধা সামরিক কর্মচারী ও বেকার যুবকদের নিয়ে। তখন এ বাহিনী AS নামে পরিচিত হয়। শীঘ্রই এই বাহিনীর সহায়তায় জার্মানির রাজনৈতিক সমাজে হিটলার বেশ প্রভবশালী হয়ে ওঠেন ।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সেনাধ্যক্ষ লুন্ডেনডর্ফ ও অন্যকয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের জন্যে একটি অভ্যুত্থান করে । একটি ক্ষুদ্র আন্দোলন ও কয়েকজনের মৃত্যর পর ‘বিয়ার হল অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত সেনা অভ্যুত্থান টি ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়।রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে হিটলারকে গ্রেফতার ও সাজা হিসেবে ৯ মাসের কারদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাগারে বসে হিটলার Mein Kampf নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন । বইটিতে হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, ইহুদী বিদ্বেষ, শ্রেষ্ঠ জাতিস্বত্ত্বার বিষয় সমূহ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও জার্মানির পূর্বাংশ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। অযোক্তিক আকাশকুসুম ও গাঁজাখুরি কল্পনা এবং ব্যকরনগত ভুল থাকার পরও ‘মাইন ক্যাম্ফ’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মান জাতির কাছে আশার আলোক বর্তিকা হিসেবে স্থান করে নেয়। এ বইটি তরুন জার্মানরা সাদরে গ্রহণ করে।

জার্মানী যখন চাদা প্রদানে অক্ষমতা প্রদান করে এবং বিদ্রোহ দেখা দেয় তখন ক্ষমতায় আসে স্ট্রেসম্যান।তিনি জার্মানির হাল ধরেন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রেসম্যানের অকস্মাৎ মৃত্যু হলে জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র রক্ষার আর কোনো উপর্যুক্ত কোনো লোকছিলো না ।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ভয়াবহ অর্থমন্দা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তাদের অর্থনীতি খুব বাজে অবস্থায় পতিত হয়। ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ঋণ স্বরুপ অর্থ সাহায্য দেওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করলে জার্মানীর অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। ফলে জার্মানির উপর ধার্য করা ক্ষতিপূরন তারা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ কারনে ১৯৩১ সালে তারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে এই সরকারের প্রতি জার্মান জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এর সুযোগে ১৯৩০ সালের নির্বাচনে নাৎসি ও কমিউনিস্ট দল জার্মান বহু আসনে জয়ী হয়।

১৯৩২খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জার্মানির রাইখস্ট্যাগে নাৎসি দল ৬০৮ টি আসনের মধ্যে ২৩০ টি আসন লাভ করে । ফলে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর করতে বাধ্য হন । ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে হিটলার জাতিপুঞ্জ থেকে জার্মানির সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ১৯৩৪ সালের ২ আগস্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে হিটলার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয় পদ একীভূত করে জার্মানিরসর্বময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির হৃৎ গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করে নিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে।

হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন। যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পোল্যান্ডের সরকার তার এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলার তার দেশ আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্য সব শক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে জার্মান বাহিনী পরাজিত হবে।

জার্মান এক নায়ক হিটলার। আদতে সীমাবদ্ধ চেতনার অধিকারী একজন মানুষ। অজস্র মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে আমৃত্যু ইনি জার্মান জনগনের উষ্ণ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা লাভ করতে চেয়েছিলেন। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল “লেবেনস্রাউম” (জীবন্ত অঞ্চল) দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়।

এ দিকে, উনবিংশ শতাব্ধির শেষ দিকে ইতালি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছিল অথাপি জাতীয়তাবোধের অভাবে তখন ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তেমন গুরুত্ব ছিল না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সেই সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব সব মিলিয়ে দারিদ্রতা যখন ইতালিতে স্থায়ী সমস্যা ঐ সময় ১ম বিশ্বযুদ্ধ হয়। এ সময় ইতালি জার্মানির সাথে মৈত্রী চুক্তি করলেও শেষপর্যন্ত ইতালি মিত্রপক্ষে যোগদান করে ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইটালির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইটালিতে দ্রব্যমূল্যের দাম প্রচুর বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধে ইটালির প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল এবং প্রায় ৭০০,০০০ সৈন্য নিহত হয়েছিল। বিজয়ী রাষ্ট্রের অন্যতম হলেও পরাজিত রাষ্ট্রগুলির মত ইটালি শান্তিচুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে ইতালি অসন্তুষ্ট হয়। প্রথমত, গোপন চুক্তি অনুযায়ী ইটালিকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে তাকে ট্রেনটিনো, দক্ষিণ টাইরল, ইস্ট্রিয়া, ট্রায়েস্ট, দালমাতিয়ার অংশবিশেষ, আদালিয়া, ঈজিয়ান দ্বীপের কিছু অংশ এবং আলবেনিয়ার ক্ষমতা দেয়া হবে। যদিও ইটালিকে এরমধ্যে চারটি স্টেট দেয়া হয় এবং বাকিগুলোর বেশিরভাগ পায় যুগোস্লাভিয়া। এরচেয়েও হতাশার ব্যাপার ছিল গ্রিক অধ্যুষিত ডোডেকানিজ দ্বীপপুঞ্জ যা ১৯১২ সালে ইটালি নিজের দখলে নিয়েছিল তা আবার গ্রিসের নিকট ফিরিয়ে দিতে হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । এ সময় জনগণ সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে। ঠিক সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত কয়েকশ কর্মচ্যুত সৈনিক ও সমাজতন্ত্রবিরোধী অতি উৎসাহী জাতীয়তাবাদি দের নিয়ে মুসোলিনী মিলানে ফ্যাসিস্ট সংগ্রামী দল গঠন করে। অভ্যন্তরীণ দুর্দশা, পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা ইটালির জনগণের মনে যে নৈরাশ্যের সৃষ্টি করেছিল তার ফলেই মূলত ফ্যাসিজমের জন্ম।

১৯২১ সালে ইতালিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এ সময় ফ্যাসিস্ট দল ভোটারদের ভয় প্রদশন করেও মাত্র ৩১ টি আসন দখল করতে সক্ষম হয়। ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতা পাওয়া অসম্ভব জেনে মুসোলিনী বলপ্রয়োগেরমাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্ত নেন । ১৯২১ সালের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট পার্টি সাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পেরে চরমপন্থা হাতে নেন। মুসোলিনি’র ফ্যাসিস্ট দল “march on Rome” নামে আন্দোলন শুরুত করে। তিনি ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্টদের এক বিরাট সম্মেলনে ঘোষনা দেন, “হয় সরকারি ক্ষমতা আমাদের হাতে ছেঁড়ে দিতে হবে নয়তো আমরা মার্চ করে রোমে গিয়ে তা বলপূর্বক দখল করব।” ফলে সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। ১৯২২ সালের ২৭ অক্টোবর ঐতিহাসিক রোম অভিযানের দিন ঠিক করা হয়। ইটালির বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিস্টরা রাজধানীর আশেপাশে জমা হতে শুরু করে।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মুসোলিনীর ডাকে হাজার হাজার সশস্ত্রফ্যাসিস্ট স্বেচ্ছাসেবক রাজধানী রোমে প্রবেশ করে। শেষ পর্যন্ত ১৯২২ সালের ৩০ অক্টোবরে রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল (Voctor Emmanuel) মুসোলিনিকে সরকার গঠন করতে বলেন এমতাবস্থায় ইতালির সম্রাট ভিক্টর তৃতীয় ইমানুয়েলমুসোলিনীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে বাধ্য হন । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মুসোলিনী ফ্যাসিস্টমন্ত্রিসভা গঠন করে ইতালির শাসনভার গ্রহণ করেন।

১৯২৪ সালের শেষ দিকে পার্লামেন্টের কাছ থেকে মুসোলিনি একচ্ছত্র ক্ষমতা লাভ করেন অন্যদিকে তিনি ছিলে ফ্যাসিস্ট দলে ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে। এভাবে মুসোলিনী ইতালিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। মুসোলিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে জার্মান একনায়ক এডল্‌ফ হিটলার- এর একান্ত বন্ধুতে পরিনত হন আর তাকে প্রভাবিত করেন। মুসোলিনি ১৯৪০ সালে অক্ষশক্তির পক্ষে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যোগদান করেন ।

অন্য দিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম পক্ষ, তুর্কী এইবার নিজেদের বেশ কৌশলে যুদ্ধ থেকে দুরে রাখে। যদিও তুর্কি জনগণ জার্মানদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল, কিন্তু তুর্কি সরকার মিত্র বাহিনীর সাথে মিত্রতা রক্ষা করে চলে পুরো সময়জুড়ে!

অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। এভাবে জাপানও এক সময় চলে আসে সাম্রাজ্যবাদীদের দলে।

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বরে ইতালি কমিন্টার্নবিরোধী শিবিরে যোগদান করে।এর ফলে জার্মান, জাপান ও ইতালি‘র ত্রিদেশীয় জোট তৈরি হয়। পরে এই জোটঅক্ষশক্তিনামে পরিচিতি লাভ করে। জার্মানী-ইটালী ও জাপান ৩টি দেশ মিলে সারা বিশ্বে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থা বদলে “জাতিভিত্তিক” নতুন ব্যাবস্থা প্রণোয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করে।

এবার আসি ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বে কিছু অবাঞ্চিত ঘটনা প্রবাহ নিয়ে যেগুলো ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পথকে সুগম করেছিল।

ইথিওপিয়ার সাথে ইতালির যুদ্ধঃ ইতালি অক্টোর ১৯৩৫ সালে ইথিওপিয়া আক্রমণ করে যা শেষ হয় ১৯৩৬ সালের মে মাসে। ইতালিয়ান সশস্ত্র বাহিনী সোমালিয়ান্ড ও ইরিত্রিয়া থেকে এ যুদ্ধে পরিচালনা করে । এ যুদ্ধটি মুলত ইতালির কলোনিয়াল মনোভাবের কারনে শুরু হয়। এখানে লীগ অফ নেশনসের কোন ভূমিকা দেখা যায় নি। এ সময় জার্মানরা সরাসরি ইতালিকে সমর্থন করে।

স্পেনের গৃহযুদ্ধঃ স্পেনে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন হিটলার ও মোসলিনি জেনারেল ফান্সিসকো ফাঙ্কোর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের মিলিটারি সহায়তা প্রদান করে। রাশিয়া তখন সরকার পক্ষকে সহায়তা প্রদান করে। প্রায় ৩০০০০ এর মত ভ্লান্টিয়ার ইন্টারেশনাল বিগ্রেড নামে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এ যুদ্ধে জার্মানী ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র একই সাথে কৌশল পরিক্ষার করে। ১৯৩৯ সালে ফাঙ্কোর নেতৃত্বে বিদ্রোহিরা গৃহ যুদ্ধে জয় লাভ করে। যদিও ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ফ্রাঙ্কো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন অরে কিন্ত সে অক্ষ শক্তির সমর্থন করত। পরে তারা ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ারে জার্মানির পক্ষে ভলান্টিয়ার পাঠিয়েছিল।

স্পেনের গৃহ উদ্ধ

স্পেনের গৃহ উদ্ধ (thelocal.es)

চীন – জাপান যুদ্ধঃ ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে মার্কো পলো ব্রিজের ঘটনা‘র প্রেক্ষিতে চীনের সাবেক রাজধানী পিকিং দখল করে নেয়। সুভিয়েতরা খুব দ্রুত জাপানের সাথে একটি অ-আগ্রাশন যুক্তি করে তাদেরকে মিলিটারী সাপোর্ট প্রদান করে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের দিকে জাপান তাইওয়ান আক্রমণ করে। তিন মাস যুদ্ধ চালিয়ে যাবার পরে চিন তাদের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। জাপানী বাহিনী চিনকে পিছু হটতে বাধ্য করে। নাকিং দখল করে নেয়। নাকিং দখলের জাপানীরা হাজার হাজার চীনা নাগরিক ও নিরস্ত্র যুদ্ধাদের হত্যা করে।

১৯৩৮ সালের মার্চের দিকে চীনা বাহিনী তায়ারজুয়াং এ প্রথম বড় বিজয়ের দেখা পায় কিন্ত পর পরই মে মাসে জাপানিরা জুজু শহরটি দখল করে নেয়। জাপান সামরিক অর্জনের লক্ষ্যে জাপানকে চীনের প্রতিরোধের পতন ঘটায়নি; পরিবর্তে চীনা সরকার যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল।

সোভিয়েত জাপান সীমান্ত সংঘর্ষঃ

১৯৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে, মানচুকুরোতে জাপানী বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মঙ্গোলীয় জনগণের প্রজাতন্ত্রের সাথে বিক্ষিপ্ত সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু করে। জাপানি শাসনের হকশুনিয়ন-রন, যা জাপানের উত্তর দিকে সম্প্রসারণে জোর দিয়েছিল, এই সময়ে ইম্পেরিয়াল আর্মি দ্বারা অনুকূল ছিল। ১৯৩৯ সালে খোলকিন গোল এ জাপানের পরাজয়ে চলমান দ্বিতীয় চীন-জাপানী যুদ্ধ সময় সহযোগী নাৎসি জার্মানি সোভিয়েতের সঙ্গে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অবশেষে এপ্রিল ১৯৪১ সালে একটি নিরপেক্ষতা চুক্তির স্বাক্ষর করে।

মিউনিখ চুক্তিঃ ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিলি চেম্বারলেইন ইউরোপকে যুদ্ধ মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালান। ইউরোপে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আগ্রাসন রুখতে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয় এবং চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে সুদাতেনল্যান্ড দাবি করে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মিউনিখ চুক্তি অনুসারে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদাতেন অঞ্চল জার্মানিকে হস্তান্তর করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তার বিনিময়ে হিটলার আর কোনো ভূমি দখল করবেন না বলে কথা দেন।কিন্তু মাত্র সাত মাস পরে ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ হিটলার সমগ্র চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করে দখল করেন।

এ রকম আরো কিছু ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পথ সুগম করে।

বেজে উঠে যুদ্ধের ঘন্টা

পোল্যান্ড যুদ্ধ

বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করল এবং এই দিনটি থেকেই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের সাথে সহায়তা চুক্তি করে। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড অভিযান শুরু করেছিল আর ৩রা সেপ্টেম্বর মিত্রবাহিনী জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

১৫ লাখ জার্মান সেনা সীমান্তে অবস্থান নেয় ও ১৩০০ যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে বোমা ফেলে পুরো দেশকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। ফরাসি ও ব্রিটিশ বাহিনী সাহায্য করবার সুযোগ পেল না। এটি পশ্চিমের বিশ্বাসভঙ্গতা হিসেবে পরিচিত।সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানী অনাক্রমণ চুক্তি করে। তৎক্ষণাৎ ফ্রান্স ও ব্রিটেন পোল্যান্ড থেকে জার্মান সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানায়। হিটলার জার্মানিতে ইহুদীদের চলাচলের উপর কার্ফ্যু জারি করে।

২ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন শেষবারের মতো হিটলারকে পোল্যান্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য আল্টিমেটাম দেন। ৩ সেপ্টেম্বর আটলান্টিক মহাসাগরে জার্মান ডুবোজাহাজ ইউ-৩০ টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দেয় ব্রিটেনের যাত্রীবাহী জাহাজ অ্যাথেনিয়াকে। এই ঘটনায় প্রায় ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া একযোগে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

পরের দিন ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনী পশ্চিম ও উত্তর জার্মানিতে ৬০ লক্ষ লিফলেট ছাড়ে। একইসাথে তাদের ত্রিশটি যুদ্ধবিমান জার্মানির ভিলহেলমশ্যাভেন ও কিয়েল ক্যানেলে অবস্থিত জার্মান নৌঘাঁটিতে আক্রমণ করে। তবে এই আক্রমণ তেমন কার্যকর ছিল না। জার্মানরা সাতটি বিমানকে ভূপাতিত করে।

৫ সেপ্টেম্বর জার্মান সেনাবাহিনী পোল্যান্ডের দীর্ঘতম ভিস্টুলা নদী অতিক্রম করে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মহাযুদ্ধে তাদের নিরপেক্ষতা ঘোষণা করে। জ্যান স্মুটস দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হবার পরের দিনই দক্ষিণ আফ্রিকা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এদিকে সপ্তাহখানেকের যুদ্ধ শেষে ৭ সেপ্টেম্বর ভেস্তারপ্লাতের যুদ্ধে জার্মানি জয়লাভ করে। তারা ওয়ারশ থেকে ৩০ মাইল উত্তরে পুলতুস্ক শহর পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং একইসাথে পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্র্যাকো দখল করে নেয়।

৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ পোল্যান্ডের বেডজিন শহরে জার্মান হানাদার বাহিনী প্রায় ২০০ ইহুদীকে তাদের উপাসনালয়ের (Synagogue) ভিতরে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে; সাথে ৩০ জনকে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওয়ারশ শহরতলীর কাছাকাছি পৌঁছে যায় জার্মান সৈন্যরা।

৯ সেপ্টেম্বর মধ্য পোল্যান্ডের জুরা নদী অতিক্রম করার সময় পোলিশদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে জার্মান প্যাঞ্জার ডিভিশন।

১০ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কানাডা। ফলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় আরেকটি মহাদেশ। ব্রিটেনের ডুবোজাহাজ ট্রিটন ভুলবশত টর্পেডোর আঘাতে ডুবিয়ে দেয় আরেক ব্রিটিশ ডুবোজাহাজ এইচএমএস অক্সলেকে। ওয়ারশতে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে জার্মান লুফট‌্ভাফে। মারা যেতে থাকে শ’য়ে শ’য়ে নিরীহ মানুষ; উদ্বাস্তু হয় অসংখ্য পরিবার।

১১ সেপ্টেম্বর ইরাক ও সৌদি আরব জার্মানির সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। জার্মানদের আক্রমণ দিনে দিনে আরো ক্ষুরধার হতে থাকে; বিশেষত ওয়ারশে। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করতে পারে এই আশংকায় ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব দিক থেকে পোল্যান্ডে হামলা করে রুশ বাহিনী। পরদিন জার্মান ও সোভিয়েত সৈন্যরা ব্রেস্ট শহরে মিলিত হয়। এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জার্মানিতে খাদ্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়।

অতপর দু’সপ্তাহের যুদ্ধ শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর জার্মানদের কাছে পতন ঘটে ওয়ারশ শহরের। জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের দখলকৃত অংশ নিজেদের ভেতর ভাগ করে নেয়। তারপর শুরু হলো জার্মান বাহিনীর অগ্র যাত্রা।

সোভিয়েত-ফিন শীতকালীন যুদ্ধ

জার্মানি ও মিত্রপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে শীতকালীন যুদ্ধের সূচনা করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সৈন্যরা লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ায় প্রবেশ করার পর ফিনল্যান্ড দখলের উদ্যোগ নিলে ফিনল্যান্ড প্রচণ্ডভাবে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করার ভেতর দিয়ে এ বিশ্বযুদ্ধ নতুন মোড় নেয়। ফিনদের লোকবল খুবই কম হলেও তাদের দেশরক্ষার ইচ্ছা ছিল প্রবল। স্টালিন ঝটিকা যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত প্রতিটি ফ্রন্টে তার বাহিনী প্রতিহত হয়।

১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সোভিয়েত বিমান, ট্যাঙ্ক ও স্লেজবাহিত সেনাবাহিনী একযোগে ফিনদের প্রতিরক্ষা বুহ্যে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ১৫ দিন পর অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি ফাঁক তৈরি করতে সক্ষম হয়। ফলে যুদ্ধের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে গেল। ১৯৪০ সালের ৬ মার্চ ফিরল্যান্ড শান্তির জন্য আবেদন করল। সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের আগের দাবি অনুযায়ী লেনিনগ্রাদের কাছাকাছি বেশকিছু এলাকা ফিনল্যান্ড থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে নেয়। এ যুদ্ধে ২ লক্ষ ফিন সৈন্যের মধ্যে ৭০ হাজার সৈন্য মারা যায়। যুদ্ধ থেকে স্তালিনের সেনাদল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শিক্ষা লাভ করলো।

নরওয়ে ও ডেনমার্ক

নরওয়ে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য। সুইডেনের কিরুনা খনি থেকে গরমকালে বাল্টিক সাগর দিয়ে এবং শীতকালে নরওয়ের বরফমুক্ত নারভিক বন্দর ও নরওয়ের রেলপথ দিয়ে লোহা চালান যেত জার্মানীতে। প্রথমে হিটলার নরওয়েকে নিরপেক্ষ থাকতে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওদিকে মিত্রপক্ষ নারভিকের ঠিক বাইরের সমুদ্রে মাইন পেতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়ে গেলে হিটলার ফ্রান্স আক্রমণের ইচ্ছা স্থগিত রেখে নরওয়ে অভিযানের নির্দেশ দিল। ১৯৪০ সালের ৯ই এপ্রিল সুইডেনের সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে একই সাথে নরওয়ে ও ডেনমার্কে আগ্রাসন শুরু করে।

ছবিঃ SlidePlayer

একদিকে নারভিকসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি দখল করে নিল জার্মান বাহিনী। অন্যদিকে বিমানবন্দরগুলিতে অবতরণ করলো প্যারাশ্যুট বাহিনী। এরপর বিমানবন্দর দখল করে সেখান থেকে অতর্কিতে শহরে প্রবেশ করলো জার্মান সেনা। ডেনমার্ক বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করলেও নরওয়ে লড়াই করতে লাগলো।

১৪ই এপ্রিল মিত্রবাহিনী নামলো নরওয়েতে। কিন্ত মে মাসেই পিছু হটলো তারা। নারভিকে জার্মানরা পাঁচগুণ বেশি শত্রুর সাথে লড়াই চালিযে যাচ্ছিল ২৭শে মে পর্যন্ত। কিন্ত ততদিনে ফ্রান্সের পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় মিত্র বাহিনী নরওয়ে থেকে তাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়। নরওয়ে বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো এবং রাজা সপ্তম হাকোন ব্রিটেনে আশ্রয় নিলেন। জার্মানীর জন্য নরওয়ে আর্কটিক সাগর এবং ব্রিটেনের নিকটবর্তী একটি দরকারী নৌ ও বিমান ঘাঁটি হিসেবে কাজে দিল।

ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ

১৯৪০ সালের ১০ মে এক সাথে চারটি দেশ আক্রমণ করে জার্মানী। ফরাসিরা ভেবেছিল আক্রমণ আসবে ফ্রান্স জার্মানী সীমান্তের রণরেখা ম্যাগিনোট লাইনের ওপর। অথবা বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে আরদেন হয়ে। তারা ভেবেছিল জার্মানীর প্যানজার বাহিনী আরদেনের জঙ্গল ভেদ করে আসতে পারবে না।

১৪ই মে নেদারল্যান্ডের পতন ঘটলো। ১৪ই মে আরদেন থেকে জার্মান বাহিনী বেরিয়ে এসে দিশেহারা মিত্র সেনাদের ছিন্নবিছিন্ন করে প্রবল বেগে এগোতে থাকল। ডানকার্ক বন্দর দিয়ে তড়িঘড়ি ফরাসি ও ব্রিটিশ অভিযানবাহিনীর সেনা পশ্চাদপসরণ শুরু হলো। ২৬শে মে থেকে ৪ঠা জুন ইতিহাসের বৃহত্তম সেনা অপসারণের কাজ শেষ হলো। তবে ফেলে আসতে হলো বেশীরভাগ যন্ত্রাদি। এরমাঝে ২৭শে মে বেলজিয়ামের পতন হলো।

ফরাসিদের এই বিপর্যয়ের সুবিধা নেয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানদের মিত্রপক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দিল। সমস্ত ইউরোপ-আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন। ১০ই জুন ইতালিও যুদ্ধ ঘোষণা করল। তবে তারা আক্রমণ শুরু করে ২০শে জুন থেকে। ফরাসি সরকার প্রথমে তুর ও পরে বোর্দোতে সরে গেল। ১৪ই জুন প্যারিসের পতন ঘটল। ১৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী রেনো পদত্যাগ করলেন ও তার বদলে এলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নায়ক পেত্যাঁ। ২২শে জুন জার্মান-ফরাসি এবং ২৪শে জুন জার্মান-ইতালীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফ্রান্সের বেশিরভাগ এলাকা জার্মানী নিয়ে নেয়। অল্প কিছু জায়গা জুড়ে পেঁত্যা একটি নিরপেক্ষ কিন্তু জার্মানীর প্রভাবাধীন সরকার গঠন করেন। এটি ভিশি ফ্রান্স নামে পরিচিত হয়।

বলকান অঞ্চল

পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের জন্য রুমানিয়ার প্লোইস্তি তেলের খনি হিটলারের প্রয়োজন ছিল। ১৯৪০ সালে জার্মানি-রুমানিয়া তেল-অস্ত্র চুক্তি হল। হাঙ্গেরি ও রুমানিয়ার মতবিরোধ ঘটায় জার্মানি মধ্যস্থতা করে। রুমানিয়ার জনগণ এতে আন্দোলন শুরু করায় রাজা দ্বিতীয় ক্যারল ছেলে মাইকেলের কাছে মুকুট হস্তান্তর করলেন ও সেনাপ্রধান আন্তনেস্কু জার্মান সেনা আহ্বান করলেন।

১২ই অক্টোবর ১৯৪০ বুখারেস্টে জার্মান সৈন্য অবতরণ করে। এতে কুটনৈতিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিরক্ত মুসোলিনি ১৯৪০ সালের ২৮ অক্টোবর আলবেনিয়া থেকে গ্রিস আক্রমণ করলেন। কিন্তু গ্রিকরা যে শুধু আক্রমণ প্রতিহত করল তাই না, উল্টো ডিসেম্বরের মধ্যে আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ দখল করে ফেলল। উপরন্তু ক্রীটে ব্রিটিশ সৈন্য নামল।তুরষ্কও সৈন্যসমাবেশ করে রাখল ।আপাত-নিরপেক্ষ বুলগেরিয়া এবং যুগোস্লাভিয়াও বেঁকে বসল।

রাশিয়া আক্রমণ

ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করল। এই দিন এডলফ হিটলারের নির্দেশে জার্মান আর্মির এক বিশাল বহর সোভিয়েত ইউনিয়ন জয় করার উদ্দেশ্যে পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন বারবারোসা। তিনটি বড় বড় সেনা দলে বিভক্ত জার্মান বাহিনীর সংখ্যা কম করে হলেও ত্রিশ লক্ষের কম ছিল না। মোট দেড়শটি বিভিন্ন ডিভিশনের সাথে ছিল তিন হাজার ট্যাংক এবং অজস্র আর্টিলারি পিস। ধরা হয় বিংশ শতাব্দীর সেরা আর্মি ছিল রাশিয়া দখল করতে যাওয়া হিটলারের জার্মান বাহিনী।

হিটলার ভেবেছিলেন রাশিয়া অধিকার করতে পারলে সমগ্র ইউরোপ তার পদানত হবে। নেপোলিয়ানের মতো রাশিয়া আক্রমণ হিটলারের জীবনের সবচেয় বড় ভ্রান্তি। রুশ বাহিনী এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। যুদ্ধের শুরুতে ফায়ার পাওয়ার কিংবা টেকিনিক্যাল দিক বিবেচনায় জার্মান আর্মি সোভিয়েত রেড আর্মির চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল। ফলে রাশান বিভিন্ন ফ্রন্টে পিছু হটতে শুরু করল রেড আর্মি। দুর্বার বেগে একে একে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়ার ইউরোপ অংশের অনেকটা দখল করে ফেলল জার্মান সেনারা।

জার্মানরা প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলে মস্কোর দিকে। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করলেও শীত আসতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জার্মানরা। তারা পিছু হটতে আরম্ভ করল। এই সুযোগে রুশ গেরিলা বাহিনী আঘাত হানতে থাকে। শীত শেষ হতেই জার্মানরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলে। কিন্ত জ্বালানীর সংকট দেখা দিলে হিটলার পরিকল্পনা করে চেচনিয়ার তেলের খনিগুলো দখল করবে। এ উদ্দেশ্যে চেচনিয়ার দিকে একটি সেনাদল পাঠায়। রাশান যখন বুঝতে পারল যে চেচনিয়া তারা দখলে রাখতে পারবে না তখন চেচনিয়া অবস্থিত তেলের খনিগুলোতে তারা আগুন লাগিয়ে দিল !

১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি যুদ্ধ ব্যাটেল অব স্ট্যালিনগ্রাড শুরু হয়। জার্মানদের সেরা সৈনিক দল সিক্সথ আর্মি শহরের বাইরে অবস্থান নেয়। সিক্সথ আর্মির পদাতিক সৈন্যরা আক্রমণের পূর্বে জার্মান বিমান বাহিনী ক্রমাগত এক সপ্তাহ ধরে বোমাবর্ষণ করতে থাকে স্ট্যালিনগ্রাডে। দুর্ধর্ষ জার্মান জঙ্গি বিমানগুলোর মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্ট্যালিনগ্রাড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় । এই অবস্থায় জার্মান পদাতিক সৈন্যরা প্রবেশ করতে শুরু করে স্ট্যালিনগ্রাডে।

স্টালিনগ্রাডে আক্রমণ (pictureshistory.blogspot.com)

এত দিনের বিমান হামলার পরে জার্মানরা মনে করেছিল খুব সহজেই স্ট্যালিনগ্রাডের পতন হয়ে পড়বে। যোসেফ স্ট্যালিনের নিজের নামে রাখা নগর রক্ষায় তখন স্ট্যালিন সর্বশক্তি নিয়োগ করে। জার্মানরা যখন শহরে হেলে দোলে প্রবেশ করতে পারবে ভেবেছিল শহরে প্রবেশের মুখে রাশানদের প্রবল বাধার মুখে পতিত হয়। ধ্বংসস্থুপ হয়ে যাওয়া স্ট্যালিনগ্রাডের একেকটা বিল্ডিং তখন একেক্টা দূর্গ হয়ে উঠে। দেখা যেত যে এলাকাগুলো জার্মানরা দিনের বেলায় দখল করত সে এলাকাগুলোই রাতে আবার পুনর্দখল করে নিত রাশিয়ানরা। এ সময় জার্মানদের বয়ে নিয়ে আসা আর্টিলারীগুলো রাশিয়ান চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলার কাছে অসহায় হয় পড়ে।

খুব সহজে দখল করতে পারবে ভাবা স্ট্যালিনগ্রাড পরিণত হল জার্মান বাহিনীর কাছে দুঃস্বপ্নপুরীতে। তাই গেরিলা যুদ্ধে বিরক্ত জার্মানরা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল র‍্যাটেনক্রিয়েগ বা ইঁদুরের যুদ্ধ। যুদ্ধের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে স্ট্যালিনগ্রাডের উপকণ্ঠে মামায়েভ কুরগান নামক পাহাড়টির মোট ১৪ বার দখল ও পাল্টা দখল হয়েছিল দুই শিবিরের মধ্যে। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও সেবার এই পাহাড়টিতে তুষারের আচ্ছাদন পড়েনি কারণ এতবেশি শেলিং করা হয়েছিল যে পাহাড়ের সমস্ত বরফ গলে গিয়েছিল। তবে এত কিছুর পরেও জার্মান সৈন্যরা শহরের প্রায় ৯০% নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি

এ দিকে রেড সিক্সথ আর্মি ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মির সাহায্যের অপেক্ষায় ছিল। তেল সংকটে পড়ায় প্যাঞ্জার আর্মি দেরি করে স্ট্যালিনগ্রাডের উপকন্ঠে পৌছে। রেড আর্মির নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। এর পূর্বে রুমানিয়, ইতালিয় ও হাঙ্গেরীয়দের সম্মিলিত বাহিনী থেকে সিক্সথ আর্মি সাহায্য পাচ্ছিল। রেড আর্মির নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। এর সময় জার্মান ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মি তখন মাত্র তিন দিনের দূরত্বে ছিল স্ট্যালিনগ্রাড থেকে। কিন্ত রেড আর্মির অবরোধে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। অবরোধ করতে গিয়ে উল্টো অবরোধের শিকার হল জার্মানরা। রাশিয়ান অবরোধের শুরুর দিকে জার্মানরা চাইলেই অবরোধ ভেঙে পিছু হটে আসত পারত। অন্তত জার্মান সিক্সথ আর্মির প্রধান জেনারেল ফ্রেডরিখ পাউলাস সেটাই চাচ্ছিলেন।

কিন্ত একরোখা হিটলার তখন জার্মান সৈনিকদের ভিতর থেকেই শহর দখল রাখতে আদেশ দেয়। ১৯৪৩ এর জানুয়ারিতে হিটলার জেনারেল পাউলাসকে প্রমোশন দিয়ে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করলেন উৎসাহ দিতে। ধীরে ধীরে জার্মানদের গোলাবারুদ এবং রসদ ফুরিয়ে আসে। হিটলার আকাশ পথে সৈনিকদের রসদ পৌছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে সময় স্ট্যালিনগ্রাডে থাকা জার্মান সৈন্যদের প্রতিদিন দরকার ছিল ৮০০ টন রসদের অথচ বিমানযোগে সাপ্লাই ছিল মাত্র ১৪০ টন। শেষ দিকে সৈনিকদের পিছু হটার নির্দেশ দিলেও তত দিনে অস্ত্র ও খাদ্যের অভাবে জার্মান বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলার পর, ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করল জার্মান বাহিনী। এর আগেই ৩০ জানুয়ারি বন্দী করা হয়েছিল ফিল্ডমার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাসকে। স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান সৈন্য মারা পড়েছিল আর বন্দী হয়েছিল আরও ৯৫ হাজার যার মধ্যে মাত্র ৫-৬ হাজার জার্মানকে জীবিত ফেরত দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।

জাপানের ভূমিকা ও পার্ল হারবার আক্রমণ

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জাপান নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করে এবং মালয়েশিয়া ওসিঙ্গাপুর দখল করে । সিঙ্গাপুর দখলের পর জাপান ডাচ উপনিবেশ সুমাত্রা, জাভা, বালি প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে । জাপানি সেনাদলের অপর শাখা মালয়েশিয়া থেকে ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ মায়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন দখল করে।

অন্যদিকে, আমেরিকার পার্ল হারবারে জাপানের আক্রমণ করে বসে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে আক্রমণ ছিলো আমেরিকার জন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট।

ইউরোপজুড়ে যখন যুদ্ধ চলছে, এশিয়ার জাপান জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল। অক্ষশক্তি যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে, তখনো আমেরিকার চুপ চাপ ছিল । অক্ষশক্তি যখন ফ্রান্সকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয়, তখনো আমেরিকার নিরব ভুমিকা পালন করে। অক্ষশক্তি যখন ইউরোপের সাথে সাথে এশিয়াও দখলে নিতে শুরু করলো, তখনো আমেরিকার চুপ চাপ ছিল। জাপানিরা ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরের ওপর বোমা বর্ষণ করে বিধ্বস্ত করে ফেলল। এই ঘটনায় আমেরিকাও প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল।

পার্ল হারবার আক্রমণটিতে অনেকগুলো প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে জড়িত করেছিল জাপান। ওয়াহো দ্বীপের পার্ল হারবারে ১৯০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করে। জাপানের নৌবাহিনীর চোখে তখন থেকেই এটি ভীতির অনেক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পার্ল হার্ববারে আক্রমন করে এক ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় জার্মানদের উলটা রথ। পার্ল হারবার নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক অনেক বই, তৈরি করা হয়েছে কয়েক ডজনখানেক ছবি।

পার্ল হারবারে আক্রমণ

পার্ল হারবারে আক্রমণ (উইকিপিডিয়া)

মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় পার্ল হার্বারের নৌ-বহরের উপর হামলার সময় ছিল হাওয়াইয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট থেকে ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। মাত্র দেড় ঘন্টার আক্রমনে হার্ল হার্বার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ৭টা বেজে ২মিনিটে ওপানা রাডার স্টেশনের দুই অফিসার জর্জ এবং জোসেফের চোখ আটকে গেল রাডারের পর্দায়। তারা দেখছেন ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান উড়ে আসছে পার্ল হারবারের দিকে। এ বিষয়টি তাৎক্ষনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করে। তারা জানালেন ““ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কয়েক স্কোয়াড্রন আমেরিকান বিমান পার্ল হারবারে আসার কথা। সেগুলোই ওই বিমানগুলো। চিন্তার কোন কারণ নেই”।

তাদের অজ্ঞাতস্বরে ঠিক ভোর ছয়টার সময় পার্ল হারবার থেকে ২৩০ মাইল দূরের এক জাপানিজ ফ্লিট থেকে ওই ফাইটারগুলো টেক অফ করেছে যে গুলো পার্ল হার্বারের ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আসছে। সকাল ৭টা বেজে ৫৫ মিনিট। ১৮৩টি জাপানি জঙ্গি বিমান ঘিরে ফেলেছে পার্ল হারবারের ভোরের আকাশ। শুরু হয়ে গেলো একতরফা ধ্বংসযজ্ঞ। মুহমুহ আক্রমণ চলে ঘন্টাখানেক।

এবার দ্বিতীয় দফায় আরো ১৬৭টি জঙ্গি বিমান উড়ে এলো পার্ল হারবারের আকাশে। টর্পেডো বোমারু বিমান, সাধারণ বোমারু ও জঙ্গি বিমান মিলিয়ে জাপান তৈরি করেছিল তাদের এই যুদ্ধের রণকৌশল। ওই সময় আমেরিকার ব্যাটলশিপ, বিমানবাহী জাহাজ, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, মাইনলেয়ার মিলে মার্কিন নৌ-বাহিনীর একটি বৃহৎ অংশ পার্ল হারবারে অবস্থান করছিল। ধ্বংস হয়ে যায় পার্ল হার্বার। আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

জেনে রাখা ভাল, পার্ল হারবারে আক্রমণ আসলে আমেরিকাকে একবারে না জানিয়ে করা হয় নি। । রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই আক্রমণ করেছিলো জাপান। জাপানি অ্যাডমিরাল ‘ইয়ামামোতো’ চাননি কোনো ঘোষণা ছাড়াই কাপুরুষের মতো আমেরিকায় হামলা করে বসতে। ইয়ামামোতো আক্রমণ শুরুর আগেই আমেরিকাকে একটা মেসেজ দেন যে, মেসেজ তাদের হাতে পড়ার ঠিক আধাঘণ্টা হতে একঘণ্টার মধ্যে জাপান পার্ল হারবারে বোমা ফেলবে।

মেসেজ তৈরি করে টোকিও হতে সেটা পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। কিন্তু সমস্যা হল সেই মেসেজের পাঠোদ্ধার নিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওয়াশিংটনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সময়মতো পাঠোদ্ধার করতে পারেননি যে, টোকিও হতে আসা এই মেসেজ কি আসলে জাপানের ‘লাভ লেটার’ নাকি ‘হেইট লেটার’! কিন্তু সেটা বুঝা তো আর জাপানের বিষয় নয়।

অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো তাই তার প্ল্যান অনুযায়ী আমেরিকা মেসেজটা হাতে পাবার আধাঘণ্টা হতে পৌনে একঘণ্টা পরেই পার্ল হারবারে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, জাপান আক্রমণে যাবার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় তাদের জাতীয় সব দৈনিকে “আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণা” সংক্রান্ত এই মেসেজটা খোলাখুলি ছাপিয়েছিলো। কিন্তু আমেরিকার কেউ জাপানি পেপারগুলো আক্রমণের আগে-আগে হাতে পায়নি।

মেসেজটা ইতিহাসে ‘৫০০০ শব্দের নোটিফিকেশন’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। আরো বেশী বিখ্যাত ‘১৪-পার্ট মেসেজ’ নামে। বুঝাই যাচ্ছে, মেসেজে ৫০০০ শব্দ ছিলো আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে। জাপান ইচ্ছা করেই এতো বড় মেসেজ পাঠিয়েছিলো কিনা, সে ব্যাপারে ইতিহাসের পাতায় কিছু বলা নেই অবশ্য।

আমেরিকা আধাঘণ্টার মধ্যে ১৪ পার্টে ৫০০০ শব্দের মেসেজ পাঠোদ্ধার করতে পারেনি। ফলে পার্ল হারবারে আক্রমণে তারা হারিয়েছিলো ২৪০৩ জন আমেরিকান নাগরিক, দুটো ব্যাটলশিপ, তিনটা ক্রুজার, তিনটা ডেস্ট্রয়ার আর একশো আটাশিটা যুদ্ধ বিমান। জাপান সৈন্যদলের সামরিক সরঞ্জাম লোকসান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছিল খুবই হালকা প্রকৃতির। তাদের ২৯টি যুদ্ধ বিমান ভূ-পাতিত হয় এবং ৫টি খর্বাকৃতি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তলিয়ে যায়। জাপানি হামলাকারীদের মধ্য থেকে ৬৫ জন নিহত কিংবা আহত হয়।

পার্ল হারবারে এমন আক্রমণের পর এবার আমেরিকা আঁটসাট বেঁধে নামে যুদ্ধে। অনেকেই মনে করেন আমেরিকার উর্ধতন কর্মকর্তারা জাপানের এহেন আক্রমণের কথা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু তাও তারা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেননি। কারণ আমেরিকা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল যুদ্ধ যোগদান করার। এবং জাপানের এই আক্রমণ তাদের এই সুযোগটা খুব ভালো ভাবেই এনে দেয়।

প্রথম দিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ আরম্ভ করল, হিটলারের বাহিনী পিছু হটতে আরম্ভ করল। আফ্রিকায় ইংরেজ সেনাপতি মন্ট গোমারি রোমেলকে পরাজিত করলেন। এক বছরের মধ্যেই আফ্রিকা থেকে জার্মান বাহিনীকে বিতাড়িত করা হলো।

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিসিলি দ্বীপ অধিকার করে। এ সময় সিসিলি থেকে মিত্র শক্তি সম্মিলিতভাবে ইতালির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে । মুসোলিনীর মিত্র হিটলার এ সময় ইতালি রক্ষার্থে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। অক্ষ শক্তি ও মিত্র শক্তির মধ্যে প্রছন্ড সংঘর্ষ হয়। মিত্র বাহিনী জার্মান সেনাদের বাধা ভেঙ্গে ১৯৪৪ সালের ১১ মে রোম দখল করে নেয়। ইতালিতে মুসোলিনিকে বন্দি করা হলো। যদি জার্মান সেনাবাহিনী হঠাত আক্রমন করে মুসোলিনীকে মুক্ত করে। যদিও ১৯৪৫ সালে মুসোলিনী ও তার উপপত্নী ক্লারা পেত্রাচ্চিকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণ জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

১৯৪৪ সালে দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে ডেনমার্ক এলাকায় জার্মান বাহিনীকে বিস্মিত করে আতর্কিত হামলা চালায় ব্রিটেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথবাহিনী। এর মাধ্যমে ফ্রান্সকে পুনরায় স্বাধীন করা হয়। পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া,হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া মুক্ত করতে করতে জার্মান ভূখণ্ডে এসে প্রবেশ করে। অন্যদিকে ইংরেজি আর আমেরিকান সৈন্যরাও জার্মানির অভিমুখে এগিয়ে চলে।

ব্যাটল অব বার্লিন

জার্মানীর রাজধানী বার্লিনের পতনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়। এখানকার লড়াই ছিল মূলতঃ নৎসীবাদী ও কমিউনিজমের মধ্যকার মর্যাদার লড়াই। ১৯৪৫-এর প্রথমার্ধে দুটি ফ্রন্ট থেকে জার্মান সৈন্যরা ক্রমাগত পিছু হটছিল। পিছাতে পিছাতে এক সময় তারা নিজেদের ভূখন্ডে এসে ঠেকে। একদিকে, সোভিয়েত লাল ফৌজ বা রেড আর্মি এবং অন্যদিকে, পশ্চিমা মিত্র জোট উভয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করছিল। তবে এক্ষেত্রে রেড আর্মি ছিল অগ্রগামী।

পশ্চিমা জোট বার্লিনে ছত্রী সেনা অবতরণের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সে পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট হিসেব করে দেখেছিলেন যে, পশ্চিমা মিত্রবাহিনীর ছত্রী সেনারা বর্লিন অবতরণ করলে কমিউনিস্ট পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য। এ পরিস্থিতিতে জার্মানীর পতন ঘটার পরিবর্তে পতন ঘটবে পশ্চিমা মিত্র জোটের। তাই তিনি বৃথা রক্তক্ষয়ের ঝুঁকি নেন নি।

অসাধারণ সংগঠন শক্তি, বুদ্ধি, প্রবল ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও হিটলারের ধ্বংসের কারণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার অহমিকা, রক্তপিপাসু দানবের মতো মানবজাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা। ১৯৪৪ সালে লাল ফৌজ স্বদেশভূমি থেকে জার্মান বাহিনীকে সম্পূর্ণ উৎখাত করে একের পর এক অধিকৃত

যতই চারদিক থেকে পরাজয়ের সংবাদ আসতে থাকে হিটলার উন্মত্তের মতো হয়ে ওঠেন। ১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা তার স্টেইনের সৈন্যবাহিনী বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তার অধিকাংশ সঙ্গীই তাকে পরিত্যাগ করে মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠায়। এসময় মিত্রবাহিনীরআক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব দেখে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে

সর্বত্রই যখন পরাজয়, নিজের অহমিকায় খুব উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন হিটলার, মিত্রশক্তিকে সামান্যতম গুরুত্ব দিতেন না। নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তার অনেক সেনাপতিই তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। দুর্ভাগ্যবশত তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। হিটলার বুঝতে পারেন তার সব স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে গেছে। বার্লিনের প্রান্তে রুশ বাহিনীর কামানের গর্জন শোনা যাচ্ছে।

হিটলার ক্রমশই সঙ্গীসাথীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকেন। সকলের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ সময়ই বাঙ্কারে থাকতেন। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এসময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রেমিকা ইভা ব্রাউন। হিটলার তার বারো বছরের সঙ্গিনী ইভাকে বার্লিন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হিটলারকে পরিত্যাগ করেননি। সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের দখল নিয়েছিল ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসেই। যুদ্ধের ফলাফল বুঝতে পেরেই হিটলার আত্মহত্যা করেন ৩০ এপ্রিল।

হিটলার ইভা

হিটলার ইভা (ইউটিউব)

৩০ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সাথে শেষবারের মত দেখা করে আসেন। এসময় তিনি তার সহযোগীদের বলেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ান হয় যাতে তার দেহের অংশের কোন চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষন পরেই গুলির শব্দ শোনা যায়। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করেন। এর আগে তার সদ্য বিবাহিতা বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

চারদিক থেকে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে যান এবং এ অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। গোটা বিশ্বধ্বংসের খেলা শেষ করে নিজেই শেষ হয়ে যান অ্যাডলফ হিটলার।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলা ও জাপানের আত্মসমর্পন

জার্মানির পতনের পর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে । ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস ইউরোপে তখন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপান তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৪৫ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া জাপানকে আত্মসমর্পন করতে বলে। জাপান পাত্তা দেয় নি।

হিরোশিমা শহরটি জাপানের রাজধানী টোকিও শহর থেকে ৫০০ মাইল দূরে। ৬ আগষ্ট সকাল বেলা তখনো হিরোশিমা জনপথ কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেনি, জীবিকার সন্ধ্যানে কিছু মানুষ ছুটে চলছিল। সকাল ৮.১৫ । হঠাৎ হিরোশিমা শহরের আকাশে দেখা দিলো দৈত্য বিমান বি-২৯ ইনোলো গে । যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী বিমান বি-২৯ ইনোলো গে জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে।

হিরোশিমায় বোমা বিস্ফোরনের স্থানটি ছিল বানিজ্যিক ও অফিস আদালতের স্থান। বিষ্ফোরনের সাথে সাথে ৫০০ মিটার বৃত্তের মাঝে আলীশান দালান চোখের পলকে নেতিয়ে পড়ে। ৫ বর্গমাইল এলাকা ছাই ও ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়। বিস্ফোরনের সময় নগরীতে লোকসংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৫০ হাজার।১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোকজন মারা যায় বলে ধারনা করা হয়।

লিটল বয়

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: ইউরেনিয়াম -২৩৫

ওজন: চার হাজার কেজি, দৈর্ঘ্য: ৯.৮৪ ফুট, পরিধি: ২৮ ইঞ্চি

বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ সুপারফোর্টেস

পাইলট এর নাম : কর্নেল পল টিবেটস

বোমা পতনে সময় লাগে : ৫৭ সেকেন্ড

মূল আঘাত: শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিক

বিস্ফোরণের মাত্রা: ১৩ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য

আবার জাপানকে আত্মসমর্থনের জন্যে আহবান করা হয়। এবারও জাপান পাত্তা না দিলে জাপানের আরেকটি ব্যস্ত শহর নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট পুনরায় ফ্যাটম্যান নামের আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। বোমা বহনকারী বিমানটি ছিল বোয়িং বি-29 Superfortress Enola গে , আর সেই বিমানের পাইলট ছিলেন কর্নেল পল । আর হামলা পরিচালনা করেন Tibbets এর 393rd বমবার্ডমেন্ট স্কোয়াড্রন, ভারি অফ, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বিমান বাহিনী । এটি ছিল প্রথম আণবিক বোমা যা অস্ত্র হিসাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪৭মিনিট। নগরীর সবাই তখন গভীর ঘুমে বিভোর। সেই ঘুম থেকে অনেকেই চিরনিদ্রায় চলে গিয়েছে। হিরোশিমার পুনরাবৃত্তি হলো নাগাসাকিতে। নিক্ষিপ্ত হলো আনবিক বোমা” ফ্যাটম্যান”। নিমিশেই ঘুমন্ত নগরীকে পরিনত করলো মৃত্যু নগরীতে। এ হামলাতেও প্রায় ৭৪০০০ লোজ মারা যায়। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট জাপান মিত্র শক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হয়।

ফ্যাট ম্যান

তেজস্ক্রিয় পরমাণু: প্লুটোনিয়াম-২৩৯

ওজন: চার হাজার ৬৩০ কেজি, দৈর্ঘয: ১০.৬ ফুট, পরিধি: পঁাচ ফুট

বহনকারী বিমান এর নাম : বি-২৯ বক্সকার

পাইলট এর নাম : মেজর চার্লস ডব্লু সুইনি

বোমা পতনে সময় লাগে : ৪৩ সেকেন্ড

মূল আঘাত: মিতসুবিশি স্টিল ও অস্ত্র কারখানা এবং মিতসুবিশি-উরাকামি সমরাস্ত্র কারখানার মাঝে

বিস্ফোরণের মাত্রা: ২১ কিলোটন টিএনটির সমতুল্য

পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন। জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক জনসাধারণ।

নিরীহ লক্ষ মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করবার শক্তিমত্তা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আসলে যা করতে চেয়েছে সেটা হল প্রথমত, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে নিজের নেতৃত্ব নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়নকে সরাসরি হুমকি প্রদর্শন; তৃতীয়ত, জাপানের উপর পূর্ণ দখল নিশ্চিত করা। ১৯৪৫ সালের পারমাণবিক বোমাবর্ষণের পক্ষে খুনীরা অনেক সময় সাফাই গায় এই বলে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবার জন্যই এই ধ্বংসলীলা করতে হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার। কারণ আসলে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মে মাসেই। ১৯৪৫ এর আগস্ট মাসে বোমা ফেলে বস্তুত আমেরিকা হরর ছবি তৈরির প্র্যাকটিস করেছে।

অবশেষে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৪৫ সালের ২রা সেপ্টেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের তারিখ ধরা হয়।

হিটলার কেন পরাজয় বরণ করতে হয় ?

অ্যাডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের জন্য দ্রুত কিছু অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়েছিলেন। সেই হিটলারের কিছু সিদ্ধান্তের কারণেই জার্মানির শেষ যুদ্ধে পরাজয় হয়েছিল। হিটলার বাস্তব তো মেনে নিতেনই না, পাশাপাশি জেনারেলদের উপদেশ না শুনে নিজেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতেন অহরহ। এ কারণেই নাজি জার্মানদের হার দ্রুত নিশ্চিত হয়ে যায়। চলুন ওয়ার হিস্টোরি অনলাইনের সৌজন্যে জেনে আসি হিটলারের যুদ্ধে পরাজয়ের ১০টি কারণ।

হিটলারের মিত্ররা ছিল নখদর্পহীন

হিটলার ইংল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানায় জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু ইংল্যান্ড তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে হিটলার খর্ব শক্তির দেশ নিয়ে তৎকালীন বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে বসেন। ইতালি এমনিতেই হিটলারের প্রথম পছন্দ ছিল, কারণ দুই দেশ একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। তবে তাদের যুদ্ধ সামগ্রী ছিল বড্ড সেকেলে। রুমানিয়া ও হাঙ্গেরি জার্মানদের সঙ্গে যুক্ত হলেও কেউ হিটলারকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি।

পিছু না হটার নীতি

১৯৪১-১৯৪২ সালে হিটলার জার্মান বাহিনীকে বাঁচিয়েছিলেন পিছু হটতে বলে, যখন এই বাহিনী মস্কো দখলে ব্যর্থ হয়। তবে এরপর হিটলার গ্রহণ করেন পিছু না হটার নীতি। তাঁর এই নীতির কারণেই তিনি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে পরজয় বরণ করেন।

সঠিক প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার

তৎকালীন সেরা যুদ্ধ প্রযুক্তি ছিল জার্মানদের কাছেই। সেরা প্রযুক্তির যুদ্ধসামগ্রীর কারণে জার্মানদের সমীহ করতে বাধ্য হতো অন্য রাষ্ট্রগুলো। তাদের বিশালাকার ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের সঠিক ব্যবহার হলে যেকোনো যুদ্ধেই তারা জয়লাভ করতে পারত। কিন্তু এসব ব্যবহারের পরিবর্তে তারা জোর দিয়েছিল যুদ্ধ কৌশল, সৈন্য ও তাদের ছোট ছোট প্যানথার ট্যাংকের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

১৯৪১ সালের ১১ ডিসেম্বর হিটলার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৭ ডিসেম্বর জাপানের পার্ল হারবারের আক্রমণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিটলার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ঘোষণা দেন। এর আগ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ ছিল। এটি ছিল হিটলারের এক বিশাল ভুল।

কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব গ্রহণ

ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে হিটলারের মস্কো আক্রমণ কিছুটা স্থগিত হয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর জার্মানদের বিরুদ্ধে দারুণ পাল্টা আক্রমণ গড়ে তোলে। দখলকৃত জায়গা ছাড়তে আর বা সত্য স্বীকারে হিটলার ছিলেন নারাজ। ফলে হিটলার নিজেকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই যুদ্ধের কৌশল সাজাতেন এবং জেনারেলদের তাঁর কথামত চলতে হতো।

জেনারেলদের কথা না শোনা

প্রথম দিকে নিজের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু জয়ের ফলে হিটলার নিজেকে মিলিটারি জিনিয়াস ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু যুদ্ধের দিক যখন পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন হিটলার তাঁদের জেনারেলদের দায়ী করেন। যুদ্ধে হারার কারণ হিসেবে তাঁর জেনারেলরা তার আদেশ মোতাবেক কেন কাজ করলেন না, এ নিয়ে দোষারোপ করেন। ১৯৪৪ সালে বুলগের যুদ্ধে তাঁর আদেশ মোতাবেক কাজ করতে গিয়েই জার্মানরা হেরে বসে। ফলে জার্মান ও তাদের মিত্রদের হার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার শীত

রাশিয়া দখলের জন্য হিটলার ছিলেন বদ্ধপরিকর। তিনি তাঁর জেনারেলদের বলেন, ‘আমাদের শুধু রাশিয়ার দরজায় লাথি মারা বাকি, তা হলেই রাশিয়া পচা কাঠের মতো ভেঙে পড়বে। কিন্তু তাদের জয়ের আগে রাশিয়ায় শীতের আগমন ঘটে। কিন্তু হিটলার বাহিনী রাশিয়ার শীতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। গরমের পোশাকে রাশিয়ার প্রবল শীতে যুদ্ধ করতে গিয়ে মস্কো দখলে ব্যর্থ হয় জার্মানরা।

গ্রিস আক্রমণ

রাশিয়া আক্রমণের আগে জার্মানরা গ্রিস আক্রমণ করে বসে। এর ফলে রাশিয়া আক্রমণে ছয় সপ্তাহ দেরি হয়ে যায় জার্মানদের। এই দেরির কারণে শরৎকাল শেষ হয়ে রাশিয়ায় শুরু হয়ে যায় শীত। ফলে অপারেশন বারবোসা রাশিয়া ধ্বংস শেষ করার আগেই রাশিয়ার রাস্তায় শীত নেমে আসে, যা বিপাকে ফেলে জার্মান বাহিনীকে।

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ

ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল লড়াই এটি। স্তালিনগ্রাদেরর যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। ককেশাসের তেল ক্ষেত্রের জন্য জার্মানদের সিক্সথ আর্মি পুরো শহর ঘিরে ফেলতে পারত। কিন্তু হিটলার তাদের আদেশ দেন শহরের প্রতি গলি, ঘর এবং আনাচে কানাচে যুদ্ধের জন্য। উলটা সোভিয়েত বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। হিটলার তাদের পিছু হটতে বারণ করেন। ফলে তাঁদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে।

দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ

হিটলারের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাশিয়া কব্জা করা। কিন্তু জার্মানির পশ্চিম সীমান্ত রক্ষায় জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্স ও ব্রিটেন আক্রমণ করার। ফ্রান্স জয় ছিল এক সপ্তাহের ব্যাপার এবং ব্রিটেনের বিপক্ষে জয় হিটলারকে পশ্চিম সীমান্তে সুরক্ষা দিয়েছিল। এরপর হিটলার যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে বসেন। ফলে হিটলারকে যুদ্ধ করতে হয় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর আমেরিকা ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। হিটলার প্রতিবারই তাঁর সেনাবাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে ভাগ করতেন। নিজের শক্তির পরিমাণ না জেনে আক্রমণ করতে থাকলে যে সব জায়গাতেই জয়ী হওয়া সম্ভব নয়, এটা হিটলার হয়তো বুঝতে চাননি। তাই তাঁকে শেষে হার স্বীকার করে নিতে হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটনা । এর ফল হয়েছিল মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী । এই যুদ্ধের ফলে আমেরিকা ও রাশিয়া পৃথিবীর মধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হয় । ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে । ইতালিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের জায়গায় প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । জার্মানি দ্বিখন্ডিত হয়ে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি দুইটি দেশে বিভক্ত হয় ।

২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী আদর্শ পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে । সর্বপ্রথম রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শ জয়যুক্ত হয় । পরে চিন, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ইত্যাদি দেশ সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় । এ যুদ্ধের প্রভাবে সমাজতান্ত্রিক প্রবক্তা রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট দল আত্মপ্রকাশ করে । পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় ।

একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি এবং তাঁদের মিত্র দেশগুলি, আর অন্যদিকে রাশিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ । এর মধ্যে আবার কয়েকটি দেশ নিরপেক্ষ থেকে যায় । ভারত তার অন্যতম । এভাবে দুটি শিবিরে বিভক্ত দেশগুলির মধ্যে এক ধরণের স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়, যার নাম ঠান্ডা যুদ্ধ ।

৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পরাধীন দেশগুলিতে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই । বিশেষত কলোনিয়াল অঞ্চলগুলো তাদের স্বাধীনতার জন্যে সুচ্চার হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পরে যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটতে আর দেরি নেই । দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তারা নিজ নিজ উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দানে তৎপর হয় । ফলে অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে । একই ধারায় ভারত, পাকিস্থানের কতৃত্ব ব্রিটেন ছেড়ে দিতে হয়।

(৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা হয় । আজ পর্যন্ত এই বিশ্ব সংস্থা পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে ও মানুষের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।

৫। লিটল বয় এর ধ্বংসজজ্ঞ এতটাই ছিল যে, ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কাঠের যত স্থাপনা ছিল সবই মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। চোখের নিমিশে পুরে ছাই হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ স্থান। ৬৬ বছর পরেও হিরোশিমা নাগাসাকি শহরের মানুষেরা তেজস্ক্রিয়তার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনো দেখা যায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গসহ নানা প্রকার রোগব্যাধী।

৬। সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে এ সময়ে অগণিতসংখ্যক লোক শরণার্থী হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে একমাত্র ইউরোপেই ৪০ মিলিয়নেরও অধিক লোক শরণার্থী ছিল। বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন জার্মান বেসামরিক নাগরিক পূর্ব প্রুশিয়া, পোমারানিয়া এবং সিলেসিয়া রাজ্য থেকে রেড আর্মির প্রচণ্ড আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ম্যাকলেনবার্গ, ব্রান্ডেনবার্গ এবং স্যাক্সনিতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।

৭। পটসড্যাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মিত্রশক্তি অনুমোদন না করায় যুগোস্লাভিয়া এবং রোমানিয়ায় অবস্থানরত হাজার হাজার জাতিগত জার্মানদেরকে সোভিয়েত ইউনিয়নে দাস শ্রমের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশী শরণার্থী স্থানান্তর প্রক্রিয়া। ১৫ মিলিয়ন জার্মানদের সবাই এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এছাড়াও, দুই মিলিয়নেরও অধিক জার্মান বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে বিতাড়িত হয়ে প্রাণ হারান !

শেষ কথা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে বহু কারন হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে , এটা নাহলে ওটা হলে ভালো হতো – এরকম । কিন্তু কয়েককোটি মানুষের প্রান নেওয়া , চরম ধ্বংসের এই মহাযুদ্ধের শেষে মানবজাতির প্রাপ্তির ভাঁড়ার দেখলে মনে হতে বাধ্য – প্রধান ভুলের কথাতো এখানে বলাই নেই ! আগ্রাসনের ভুল , একনায়কতন্ত্রের ভুল , বর্ণবিদ্বেষের ভুল , সর্বোপরি –যুদ্ধ্বচিন্তার ভুল … যে ভুলগুলি মানবজাতি আজও বহন করে চলেছে ।

বিজয়ী শক্তি যেমন তাদের গৌরবগাঁথার বর্ণনা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তেমনি পরাজিত শক্তি তাদের ইতিহাস লেপ-কাঁথার নিচে লুকিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। ফলাফল হয়, এক সময় মূল ঘটনার বিকৃতি ঘটে ।

ছয় বছর ধরে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের বর্ণনা হাজার কয়েক শব্দের সীমাবদ্ধতায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ওয়েবসাইটে যেতে হয়েছে। সবার বর্ণিত বর্ণনা থেকে নির্যাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমিও অন্যের বর্ণিত তথ্যই প্রদর্শন করতে হয়েছে আমারও ভুল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবান রইল।

তথ্য সূত্রঃ

পিপীলিকা বাংলা ব্লগ

১। https://wikipedia.org

২। http://egiye-cholo.com

৩। https://roar.media

৪। http://www.jugantor.com

৫। ntvbd.com

৬। আরো সংখ্য ওয়েব পোর্টাল।

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল।

ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।

সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।

কিন্তু ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনী বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরে আসতে পারবে।

কিন্তু ইসরায়েল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।

Skip YouTube post, 1

ভিডিওর ক্যাপশান:সতর্কবাণী: তৃতীয়পক্ষের কন্টেন্টে বিজ্ঞাপন থাকতে পারে

End of YouTube post, 1

ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

মি: পেরেজ বলেন, “অধিকাংশ জমি ফিলিস্তিনদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোন ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?”

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চেয়েছিলেন নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।

১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন।

তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে।

ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে।

বিবিসি বাংলার আরো খবর:

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা: কার জন্য কী?

চীনের ভাইরাস আক্রান্ত উহানের একাত্মতার গল্প

ধর্মান্তরিত পরিবারকে ভারতে ফেরত পাঠানোর নেপথ্যে

আড়ং কর্মীর মোবাইলে চেঞ্জিং রুমের শতাধিক ভিডিও

অতি উজ্জ্বল একটি তারা কি বিস্ফোরিত হবে?

জেরুজালেম

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

১৯৬৫ সালে জেরুজালেম শহর

তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’ হিসেবে পরিচিত।

ইহুদীদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দিবে।

যদিও রোমান সময় থেকে ইহুদিদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সে জায়গায় বসবাস করতো।

ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরো তরান্বিত করেছে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন।

ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে।

তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

ফিলিস্তিনী আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা।

কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

ফিলিস্তিনদের উপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতো কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল।

ইহুদীরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল।

১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে।

সেজন্য আরব এবং ইহুদী- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন।

তথ্যসূত্র: BBC/bbc website

প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। এর পেছনে কী যুক্তি আছে? অবশ্যই ইসরায়েল অবৈধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের দক্ষিণ সিরিয়া অংশ থেকে আলাদা করা ফিলিস্তিন ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত একটি ভৌগোলিক অঞ্চল ছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ বেসামরিক প্রশাসন ফিলিস্তিন পরিচালনা করে। ব্রিটিশরা ১৯২২ সালের জুন মাসে বিলুপ্ত লীগ অব নেশনস থেকে ফিলিস্তিনের জন্য কর্তৃত্ব লাভ করে। স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে অভ্যুদয়ের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ফিলিস্তিনের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ব্রিটিশ সরকারের অভিবাবকত্বের অধীন করা হয়। লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্রিটেনকে এই কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। সাবেক উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিকৃত অঞ্চলগুলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত পরিচালনার জন্য কর্তৃত্ব প্রদান প্রথা চালু করা হয়েছিল লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। লীগ অব নেশনস-এর গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “To those colonies and territories which as a consequence of the late war have ceased to be under the sovereignty of the States which formerly governed them and which are inhabited by peoples not yet able to stand by themselves under the strenuous conditions of the modern world, there should be applied the principle that the well-being and development of such peoples form a sacred trust of civilisation and that securities for the performance of this trust should be embodied in this Covenant. The best method of giving practical effect to this principle is that the tutelage of such peoples should be entrusted to advanced nations who by reason of their resources, their experience or their geographical position can best undertake this responsibility, and who are willing to accept it, and that this tutelage should be exercised by them as Mandatories on behalf of the League. The character of the mandate must differ according to the stage of the development of the people, the geographical situation of the territory, its economic conditions and other similar circumstances.

Certain communities formerly belonging to the Turkish Empire have reached a stage of development where their existence as independent nations can be provisionally recognized subject to the rendering of administrative advice and assistance by a Mandatory until such time as they are able to stand alone. The wishes of these communities must be a principal consideration in the selection of the Mandatory………..”

লীগ অব নেশনস কর্তৃক ব্রিটেনকে কর্তৃত্ব প্রদত্ত দুটি অঞ্চল ছিল। একটি জর্ডান নদীর পশ্চিম অংশ যা ফিলিস্তিন বলে পরিচিত ছিল। এই অংশ ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আরেকটি অংশ ছিল পূর্ব তীরের ট্রান্সজর্ডান যা আধা স্বায়ত্তশাসিত হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল। ট্রান্সজর্ডান ১৯৪৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৮ সালে নাম বদলে জর্ডান রাখা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটেন। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকরা ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। সেই সময়ের ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর-এর নাম অনুসারে এটি বেলফোর ঘোষণা হিসেবে খ্যাত। ইহুদি রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে ব্রিটিশ শাসকরা বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এনে জড়ো করতে থাকে। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। কিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ১৯৩১ সালে ইহুদিদের এই সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদিদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। ১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদি সন্ত্রাসী বাহিনী ‘হাগানাহ’ গঠিত হয়। এ বাহিনী ইহুদিবাদীদের রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাগানাহ-র পাশাপাশি ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং হত্যা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনদের বাধ্য করে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে। ফিলিস্তিনিদের জমিজমা ইহুদিরা দখল করে নেয়। ১৯২২ সালে ইসরায়েলে ইহুদি ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, ১৯৩১ সালে তা হয় ২৩ শতাংশ, আর ১৯৪৭ এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ শতাংশে। ব্রিটিশদের পর ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ। ফিলিস্তিন বিষয়ে লীগ অব নেশনস কর্তৃক ব্রিটিশ সরকারকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের শর্ত ও বিলুপ্ত লীগ অব নেশনসের গঠনতন্ত্রের ২২নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে জাতিসংঘ। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিবাদীদের দিয়ে মুসলমান ও ইহুদিদের জন্য দু’টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। আরব রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বলে যে, কেবল ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপান্তরই ম্যান্ডেটের উদ্দেশ্যের যৌক্তিক পরিণতি লাভ করবে ও জাতিপুঞ্জের সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আরব রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান ব্যতীত সাধারণ পরিষদের আর কোনও সুপারিশ করার এখতিয়ার নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালার পরিপন্থী এবং নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই। সাধারণ পরিষদ কোনও বৈশ্বিক সরকার নয়, কোনও রাষ্ট্রের জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে ওই রাষ্ট্রকে ভাগ করার, বিধিবিধান তৈরি করার, কোনও চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার সাধারণ পরিষদের নেই। এদিকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা Arab Higher Committee ১৯৪৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে এক লিখিত আবেদনে জানায় যে, ফিলিস্তিন বিভাজনের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। জাতিসংঘ সনদের কোথাও সাধারণ পরিষদকে কোনও রাষ্ট্র বিভাজন করে নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টির ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। ফলে সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত আইন ও ক্ষমতা-বহির্ভূত বিধায় বাতিল। Arab Higher Committee ফিলিস্তিন বিষয়ে আইনগত মতামতের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রেরণেরও দাবি জানায়। কিন্তু সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক আদালতের মতামত গ্রহণের বিষয়টি কখনোই পরিষদের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এমতাবস্থায় Arab Higher Committee জাতিসংঘকে জানিয়ে দেয় ফিলিস্তিনি জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে জবরদস্তিমূলক বিভাজন করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলে Committee তাকে আগ্রাসন বলে বিবেচনা করবে এবং আত্মরক্ষার্থে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রতিহত করবে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি চীনের প্রতিনিধি মত দেন যে, নিরাপত্তা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার জন্য। এটি খুবই দুঃখজনক হবে, রাষ্ট্রভাগের নাম করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে জাতিসংঘ নিজেই যদি যুদ্ধের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৫ মে ১৯৪৮ তারিখে ফিলিস্তিনের ওপর লীগ অব নেশনস কর্তৃক প্রদত্ত তাদের কর্তৃত্বের (ম্যান্ডেট) অবসানের ঘোষণা দেয়। ব্রিটিশ সরকারের ম্যান্ডেট অবসানের সময়সীমার মধ্যে প্যালেস্টাইন বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হলে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হয়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ওয়ারেন অস্টিন প্রস্তাব করে –

এক. ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অবসানের পর প্যালেস্টাইনের বিষয়ে তদারকি করার জন্য একটি ট্রাস্টিশিপ গঠন করা হোক যাতে আরব ও ইহুদিরা আরও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছার সুযোগ পায়।

দুই. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে সমাধানের নতুন উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তিন. বিশেষ অধিবেশনের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রভাগের পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে U.N. Palestine Commission কে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।

অন্যদিকে, কানাডার প্রতিনিধি আরও বিকল্প খোঁজার আহ্বান জানান। এমনকি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে এক রাষ্ট্র সমাধানকেও কানাডা সমর্থন করে বলে কানাডার প্রতিনিধি নিরাপত্তা পরিষদের সভায় মত দেন।

এমন পরিস্থিতিতে ইহুদিদের সংগঠন Jewish Agency for Palestine-এর পক্ষ থেকে প্যালেস্টাইনের তদারকির জন্য কোন ট্রাস্টিশিপ গঠনকে সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয় এ মর্মে যে, এটি ইহুদিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা। উদ্বেগাকুল এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা একতরফা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তাদের ঘোষণার ভিত্তি হিসেবে সাধারণ পরিষদের ১৮১নং সিদ্ধান্তকে উল্লেখ করে যেখানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদের যে ১৮১ নং সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে তা নিরাপত্তা পরিষতে অনুমোদিত হয়নি। তদুপরি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল জাতিসংঘ। আমাদের বাংলাদেশে ভূমিদস্যু বা ভূমিখেকোরা যেমন অন্যের জমি জোর করে দখল করে নিয়ে নিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে আবাসিক, বাণিজ্যিক প্লট, ভবন তৈরি করে মালিক বনে যায়, আন্তর্জাতিক ভূমিদস্যু ইসরায়েলও তেমনই ফিলিস্তিনিদের জমি-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করে নিয়ে নাম দিয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ন্যূনতম চারটি উপাদানের উপস্থিতি আবশ্যক। এগুলো হলো- একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, একটি কার্যকর সরকার ও সার্বভৌমত্ব। ইহুদিদের একটি জনগোষ্ঠী থাকলেও অন্য তিনটি উপাদান অনুপস্থিত ছিল। যে ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়েছে তা ছিল ফিলিস্তিনিদের। ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হলেও সেই রাষ্ট্রের তখনও কোনও সরকার ছিল না।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ৩ দিন পর (১৭ মে ১৯৪৮) ড্যাভিড বেন গুরিয়ন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। সরকারবিহীন ও অন্যের মালিকানাধীন ভূখণ্ডে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন অবান্তর। আশপাশের আরব দেশগুলো ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে হামলা চালালে ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের পুরোটাই দখল করে নেয় (শুধু গাজা মিসরের দখলে, এবং পশ্চিম তীর জর্ডানের দখলে ছিল)। আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমাগত তিক্ততা এবং সীমান্তে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ১৯৬৭ সালে আবার আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। পাঁচ দিনের যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া এবং জর্ডানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের কাছে পরাস্ত হয়। ইসরায়েল গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেম দখল করে। অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইসরাইল জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ৫৬ শতাংশ ভূমির বাইরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রর জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ শুরু করে। ইতোমধ্যে সাবেক ফিলিস্তিনের ৮০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদি বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে। ছয় লাখের বেশি ইহুদি এখন এসব এলাকায় থাকে। ফিলিস্তিনিরা বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো অবৈধ বসতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না। পূর্ব জেরুজালেম, গাজা এবং পশ্চিম তীরে যে ফিলিস্তিনিরা থাকেন, তাদের সঙ্গে ইসরায়েলিদের উত্তেজনা প্রায়শই চরমে ওঠে। সম্প্রতি পূর্ব জেরুসালেম থেকে কিছু ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি ফিলিস্তিনিদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। রমজানের শুরু থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তখন প্রায় প্রতি রাতেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এরই পরিণতি চলমান ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী আগ্রাসন।

বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হলো দখলদার ইসরাইলকে মেনে নেওয়া। তবে শর্ত হলো, জাতিসংঘের ১৮১নং প্রস্তাব অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ ভূমিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মেনে নিতে হবে ইসরাইলকে। ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে এই সমাধান সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয় না। এর ফলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ঘরবাড়ি ফেরত দিতে হবে; পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতি সরিয়ে নিতে হবে; জেরুসালেম নগরী কারও ভাগে না দিয়ে আন্তর্জাতিক তদারকিতে ছেড়ে দিতে হবে কিংবা উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি করতে হবে; সর্বোপরি ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গত ২৫ বছর ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে থেমে থেমে। কিন্তু সংঘাতের কোনও সমাধান এখনও মেলেনি। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসরায়েলকে ১৮১নং প্রস্তাব মানতে হবে যার সম্ভাবনা একবারেই ক্ষীণ। ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি ভারতও। তাই ইসরায়েল কোনও কিছুই পরোয়া করে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের দুর্বৃত্তপনা বন্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিলেও মুসলমানদের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রহারা ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শরণার্থী হিসেবে অন্য রাষ্ট্রের অনুকম্পায় বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করা। এ বিষয়ে তাদের জবাবদিহি রয়েছে স্বয়ং স্রষ্টার কাছে। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য সংগ্রাম করবে না? যারা বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর থেকে আমাদের বাহির করে অন্যত্র নিয়ে যাও এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের অভিভাবক করো এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় নিযুক্ত করো।” (সুরা নিসা: ৭৫)। যারা ফিলিস্তিনিদের কয়েক দশকের ভয়ংকর দুর্দশা থেকে মুক্তি দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারতেন সেসব মুসলিম শাসকদের মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর অনৈক্য ও অবিশ্বাস। আর অধিকাংশই ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়নকারী, নির্যাতনকারী, এমনকি মুসলিমদের প্রথম কিবলা পবিত্র আল আকসা মসজিদে আক্রমণকারী ইসরাইল ও তাদের দোসরদের বন্ধু বানিয়েছেন নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। তাই ইসরাইলের ভয়ংকর আগ্রাসনে অসহায়, বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নিরাপদে সাইডলাইনে বসে নীরবতা পালন করছেন।

তথ্যসূত্র:

লেখক: মো. জাকির হোসেন

অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

উপসংহার: গত শতকের চল্লিশের দশকে আর্য কিংবা নীল রক্ত কিংবা রাজকীয় রক্ত অথবা স্বস্তিকার শক্তির ক্ষমতার বলে ইহুদিরা নিজভূমে যেখানে কচুকাটা হচ্ছিল৷ হচ্ছিল ধর্ষণ আর পাশবিক অত্যাচারের শিকার৷ তখন তথাকথিত বিশ্বমানবতা ভেজা গামছা দিয়ে বুক মোছানো ছাড়া করেনি কিছুই৷ অথচ বিশ্ব মুসলিম শুধু তাদের পাশে দাঁড়ায়নি অফুরন্ত জাত ভাই ভেবে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে৷ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ দিয়েছে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা৷ ভাগাভাগি করেছে সুখ-দুঃখ৷ প্রতিদান কী পেল ফিলিস্তিনিরা? আশ্রয় দেয়ার জন্য তারাই দেশছাড়া৷ খাবার দিয়েছে বলে পেতে হচ্ছে বোমার আঘাত৷ তবে কি নাৎসি বাহিনী কিংবা সেই স্বস্তিকা পরিহিত হিটলারই ঠিক ছিল? তা নাহলে আজ ইসরাইলকে কেন পরম বন্ধু হিসেবে খুঁজে নিতে হয় আর এক আর্য তথা স্বস্তিকা তথা নীল রক্তের ধারক-বাহককে? অথচ ক”টা দিন আগেও ভারত যখন করোনায় বিপর্যস্ত তখন সবচেয়ে আগে চির শত্রু পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরব অক্সিজেন আর এম্বুলেন্স নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল৷ আর এটাই প্রকৃত মানবতা৷ যাকে বাংলায় বলে শান্তি৷ ইংরেজিতে Peach. আর আরবিতে বলে “ইসলাম”৷

বনি ইসরাঈলদের তাবুতে সাকিনা

নবী ইব্রাহীম  (আঃ) এর দুজন পুত্র ছিলো। তারা যথাক্রমে বিবি সারার গর্ভে ইসহাক (আঃ) ও বিবি হাজেরার গর্ভে ইসমাইল(আঃ) । আল্লাহর আদেশে  ইসমাইলকে রেখে আসলেন নজদে (মক্কায়) ও ইসহাক (আঃ)কে রেখে এলেন ফিলিস্তিনে। ইসমাইল (আঃ) এর বংশ হতেই আমাদে শেষ নবী রাসুল (সঃ)। আর ইসহাক (আঃ) এর বংশে এসেছে অনেক নবী পয়গম্বর। ইসহাক (আঃ) এর দুই পুত্র যথাক্রমে ইসমাইল ও ইয়াকুব (আঃ)।

ইয়াকুব  (আঃ) ই সেই নবী যাঁর আর এক নাম ছিলো  “ইসরাঈল”, এবং তারই এগারোজন পুত্র ছিলো দুই স্ত্রীর গর্ভে। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে দুজন, একজন ইয়ুসুফ (আঃ) অপরজন বনি আমিন। ইয়ুসুফ  (আঃ) যখন মিশরের বাদশাহ হলেন তখন পারস্যের ফারানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি তাঁর ভাইদেরকে মিশরে আশ্রয় দান করেন। সেখানেই তারা বংশ বিস্তার করে বনি ইসরাঈল নামে। এরাই বর্তমানে ইজরায়েল নামে পরিচিত। এদেরই নবী দাউদ(আঃ) (কিং ডেভিড) তদ্বীয় পুত্র কিং সোলায়মান (আঃ)। এদেরই রাসুল হয়ে এসেছিলেন মুসা (আঃ)। মুসা  (আঃ) এদেরকেই ফেরাউনের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে বাঁচিয়ে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তুর পাহাড়ের পাদদেশে এনে পুনর্বাসন করেছিলেন।

যাক এসব অনেক ঘটনা। বলে শেষ করা যাবে না। তবে এদের মূল শিকড় একই, তার মধ্য হতে দুটি শাখা বেরিয়েছে। ঐ এগারো ভাইয়ের মধ্যে একজনের নাম ছিলো  “ইয়াহুদা” তার সন্তানাদিরাই ইহুদি নাম ধারণ করেছে। পরবর্তীতে ঈসা  (আঃ)কে মেরে ফেলেছে ভেবে এই শাখাটিই উল্লাস করছিলো এবং যাবুর কিতাব, যা দাউদ (আঃ)  এর উপর অতীর্ণ হয়েছিলো সেটাকে বদলে ফেলে নিজেদের মতো করে লিখে নিয়েছিলো। যাক সেসব কথা, আজকের মূল আলোচ্য বিষয়ে  ফিরে আসি।

কোরআনে সূরা বাকারার ২৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বনি ইসরাঈলদের বলেন-

“তোমাদের নিকট শিঘ্রই একটি সিন্দুক আসবে। যে সিন্দুকের সাথে জড়িয়ে আছে কমছেকম ১০০ এর অধিক নবীদের ইতিহাস। তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হিসেবে এসেছে এই সিন্দুক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।”

এ সিন্দুকের ভিতরে ছিলো আদম ও মুসা (আঃ) এর হাতের আসা পাগড়ি, হারুন ও ইব্রাহীম (আঃ) এর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ইত্যাদি। এই সিন্দুকটি একজনের পর একজনের হাতে এসেছিল, তারপর বনি ইসরাঈলের নিকট চলে আসে। এই সিন্দুকের বরকতে ওরা প্রাণশক্তি ও হৃদয়ে প্রশান্তি পেত। ওরা সব রকম যুদ্ধে উৎসবে সবরকম বিপদে আপদে এই সিন্দুকটিকে সসম্মানে সামনে এনে রাখতো।

বনি ঈসরাঈলরা এই সম্মানিত সিন্দুক রক্ষা করার জন্য একদল স্পেশাল সৈন্যও নিয়োগ করেছিলো। আল্লাহপাকের এতো নাজ নেয়ামত এ সিন্দুকের মাধ্যমে পেয়েও তারা আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও নাফরমানীতে লিপ্ত ছিলো। বনি ঈসরাঈলদের মধ্যে একদল ছিলো মুশরিক, তাদের নাম ছিলো আমালিকা। তারা ফিলিস্তিনে থাকতো। হকপন্থি ইসরাঈলদের সাথে আমালিকরা একযুদ্ধে এই সিন্দুকটি কেড়ে নেয়।

পরবর্তীতে মুশরিকরা তাদের শহরে এ সিন্দুক রাখতে রাখতে তাদের শহরে মহামারী দেখা দিলো। এই সেই মারাত্বক মহামারীর সূচনা হোলো  যাকে আমরা প্লেগ বলে জানি। সেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা গেলো। অবশেষে মুশরিক আমালিকরা সিন্দুকটিকে পর পর পাঁচটি শহরে পাঠালো, ঐ পাঁচ শহরও  মহামারীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

বনি ইসরাঈলরা বহু বছর এই সিন্দুকের জন্য বহু কান্নাকাটি করেছিল। সেই সময় নবী সালাম (আঃ) নামে একজন তাদের নবী ছিলেন। তিনি ইসরাঈলদের কান্নাকাটি দেখে তাদের ডেকে বললেন,  তোমাদের মধ্য থেকে “তালুত “কে তোমাদের নেতা  নির্বাচিত কর। তালুত ছিলো একজন ধর্মপ্রাণ ও ন্যায় পরায়ন লোক।

অতপর মুশরিকদের নিকট প্রস্তাব পাঠাও তারা যেন তোমাদের “তাবুতে সাকিনা” আবার তোমাদেরকে ফেরত দেয়। তারা নবীর এ হেন সরল কথা শুনে খুব জোর বিদ্রুপ করল।

নবীকে বললো সমস্বরে, পাগল নাকি। শত্রুপক্ষ কখনও এভাবে সিন্দুক ফেরত দেবে?

আর তালুতকেও নেতা নির্বাচিত করতে চাইলো না।

কিন্তু নবী সালাম আঃ তাদেরকে বুঝালেন যে তালুতকে তোমাদের নেতা বানালে তোমরা উপকৃত হবে। তখন আবার তাদেরই মধ্যে কতিপয় বিচক্ষণ লোক নবী সালাম আঃ কে বললো যে ঠিক আছে তোমার কথাই মেনে নিব যদি তুমি আগামীকাল সকালে আমাদের সিন্দুক ফেরত এনে দিতে পারো।
নবী আঃ বললেন, ঠিক আছে তোমাদের কথামতোই সিন্দুক এনে দেয়া হবে।

তারপর দিন সালাম আঃ এর আবেদনে আল্লাহপাক চারজন ফেরেশতার দ্বারা গরুর গাড়িতে করে সিন্দুক “তাবুতে সাকিনা”  পুনরায় বনি ইসরাঈলের হাতে পৌঁছে দিলেন। কিন্তু তারা এ সিন্দুক ফিরে পাবার পর আবার আগের চরিত্রে ফিরে গিয়েছিলো। আবার যখন বনি ইসরাঈলরা অনাচারে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হলো তখন ইরাকের পাশে বাবেল নগরীর, মতান্তরে সিরিয়ার বাদশাহ “বখতে নসর” আক্রমণ চালিয়ে বহু বহু ইহুদি ইসরাঈলীদের হত্যা করে অল্পকিছু সংখ্যক ইসরাঈলকে দায় বানিয়ে নিজের দেশে নিয়ে রাখল। তখন এই  “তাবুতে সাকিনা” নামক রহমতপূর্ণ সিন্দুকটি বাদশাহ বখতে নসরের হস্তগত হয়।

তারপর থেকে এই সিন্দুকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া য়ায় নি আজ অব্দি। এখনও ইহুদিরা সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় তাদের সেই তাবুতে সাকিনা।

তাদের প্রার্থনায় এখনও তারা বলে এবং আশা রাখে একদিন তারা সেটা খুঁজে পাবে, আর পাওয়া হলেই আবার তারা সারা পৃথিবী শাসন করবে। এ জন্য তদের বিশ্বাস মাসিহুদদাজ্জালই তাদের মসিহ, তার হাতে নতুন করে বায়েত হবে আর পবিত্র হবে  “রেড হেইফার” অর্থাত লাল বাছুর পুড়িয়ে সে ছাই দিয়ে গোসল কোরে পবিত্র হবে।

প্রিয় তারুণ্য,

ইসলামের ইতিহাস চর্চা করতে হবে, জানতে হবে এ বনি ইসরাঈলদের আর কী কী ঐতিহাসিক অপরাধ আছে?  যা তারা করেছিল ও এখনও করছে।
কেনই বা মহান রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে তারা কেয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।

কলম হোক যুদ্ধজয়ী সৈনিক - হেলেন আরা সিডনী

নির্মম-নিষ্ঠুর পাষাণী জাতি ভিক্ষের ঝুলি হাতে নিয়ে একদিন পালিয়ে এসে, আজ রাজত্ব চালাচ্ছে ফিলিস্তিনের বুকে। জোড় যার মুল্লুক তার ইসরায়েলেরা দেখিয়ে দিল বাস্তবের মাটিতে। স্বয়ং আল্লাহতালার একবিন্দু ভয় তাদের বুকে নেই। যে মাটি একদিন তাদের মানুষ মনে করে আশ্রয় দিয়েছিল সেই মাটিতে গোপনে গোপনে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে যথেচ্ছারিত ভাবে দাউ দাউ আগুনের শিখা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে তুলছে ফিলিস্তিনের বুক। হে মনুষ্য বিবেক একটু থামো, জেগে তোলো তোমাদের মানবতা । হই না কেনো আমি ফিলিস্তিনি, ইসরায়েল, গাজা, জাতে হই হিন্দু- মুসলিম-খৃষ্টান-বৌদ্ধ। সবশেষে তোমার – আমার রক্তের রং লাল, আমরা মানুষ এই সত্যকে উপলদ্ধি করা ভুলে যেও না, ভুলে যেও না আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ। জাগ্রত বিবেকবোধে জেগে ওঠো, নেভাও এই আগুন, বাঁচাও জীবন আর রক্তাত মাটি যে মাটি তোমাদের একদিন বুকে তুলে নিয়েছিল।

অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র যন্ত্রের অবসান ঘটাও, নয় কথায় কথায় জীবন নেওয়া, নয় বোমা, রকেট আর চারদিকে বিকট বিষ্ফোরণের অগ্নিকুন্ড।গাজা -ফিলিস্তিনির সদ্য নবাগত শিশু জন্মের আগেই যেনো হয়ে যাচ্ছে ভয়ে জডসড়, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে মৃত্যুভয়ে প্রতি মুহুর্ত আতংকিত , একটু বাঁচবার আশায় সর্বত্র ছুটছে কিন্তু চারদিকে আঁধারের কুন্ডলী, আর্তচিৎকার, হাহাকার কি করুন মানসিক অবস্হা। অন্ধ বিবেকে জ্ঞানহীন মানুষ – ভুলে যাচ্ছে মানবতা – “ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”

কোথায় যাবে এই বাস্তুচ্যুত মা – বাবা আমাদের সন্তানেরা। আমরা চাই না সাহায্য – সহায়তা…চাই শান্তি, জীবনের নিরাপত্তা…বাঁচবার নিশ্চয়তা।

দাও মুক্তি চলমান জীবন – মৃত্যুর সংঘাত থেকে।

আমরা বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে হাত জোড় করে মিনতি করছি – ছোট্ট সোনামনিদের জীবনের আয়ুটুকু কেড়ে নিও না। জাতিবিদ্বেষ কোনো বিচারের আওতায় নয়, মানবিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করো সুস্থ মানবিকতায়। বর্তমান যে সংকটে ফিলিস্তিনি তা নিরসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের ক্ষমতা নেই লড়াই করার, সামর্থ্য নেই ছুটে যাবার….. কিন্তু আমরা বাংলাদেশের বাসিন্দা কলম যোদ্ধা। কলমের আক্ষরিক শব্দের ঝংকারে প্রতিবাদ করছি.. সেই সঙ্গে করছি মিনতি। বিশ্বপ্রগতির ভার্চুয়্যাল যুগ সব কিছুর উন্নতি ঘটেছে, ঘটে নি সুস্থ মানসিকতার, মনুষ্য জন্মের সার্থকতায় আলোকিত হয় নি আজো অত্যাধুনিক উন্নত দেশের মনুষ্যজন্ম।  সারা বিশ্বে উন্নত নেটের মাধ্যমে সমস্ত সংবাদ দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বলেই আমরা জানতে পারছি তাই খুব শীঘ্র আর্ন্তজাতিক সুরক্ষাব্যবস্হা গ্রহণ করা জরুরী বিষয় বলে মনে করি।  দিনে দিনে ইসরায়েল – জেরুজালেম যে নির্মম – নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা অবর্ণনীয়। সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে আজ নিন্দা ।

তাদের ঘৃণ্যতম কার্যকলাপ যাতে বাহিরে প্রচার না হয় তার জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা করে যে বাঁধা প্রদান করেছে তা অতি নিন্দনীয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যিনি মালিক মহান আল্লাহ তালা তার পবিত্র আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে দফায় দফায় যে সংঘর্ষ তা যে কতোটা জঘন্যতম এবং পাপময় ভাষায় প্রকাশ করার মতো ভাষা নেই।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্হান নিয়েছিল ফিলিস্তিনির মানবিক মানুষেরা। স্বাধীনতার যুদ্ধে যে দেশ বাংলাদেশের পাশে আপন মনে করে একাত্ম হয়ে ছিল আজ তারাই ৫০ বছর ধরে ধুকে ধুকে মরছে স্বাধীনতার লড়াইতে। নেই তাদের দেশে একটি বিমান ঘাঁটি। তাদের উপর দিনের পর দিন হত্যা- নজিরবিহীন জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ থেকে বিতারিত ইসরায়েলের বিশ্বাসঘাতক মানুষরূপী নরপশু। অথচ এই ফিলিস্তিনিরা তাদের বুকে টেনে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে ছিল। ভাগ্যের নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার আজ ফিলিস্তিনির সমস্ত মানুষ। লাশের মিছিলে এই দেশ থরথর কাঁপছে অবিরত। আমরা দূর থেকেই আমাদের কলমকে জাগিয়ে তুলেছি । অবাক হতে হয় ফিলিস্তিনির শিশুরা জন্মেই যেনো তৈরি হয় লড়াইর জন্য। মনে পড়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রণ সঙ্গীত “ নব নবীনের গাহিয়া গান / সজীব করিব মহাশশ্মান / আমরা দানিব নতুন প্রাণ / বাহুতে নবীন বল….”। এই লেখনীর শক্তি – সাহস যুগে যুগে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

কবির কলম তাই তলোয়ারের চেয়েও শক্তিশালী। জাগো…..বাহে….জাগো….কলমকে করে তোলো যুদ্ধজয়ী  বীর সৈনিক। আসো সবে মিলে ঈমানের শক্তিতে বলি – আল্লাহু আকবর…আল্লাহু আকবর…।

 

ছড়া - মানবতা

মানবতার মানে

জানে

কারা?

মারছে মানুষ- যারা!

 

মানবতা পাগল

ছাগল

বোঝে?

কে রেখেছে খোঁজে!

 

মানবতা হারুক

মারুক

মানুষ,

মানব এখন ফানুস!

 

মানবতা থাকে

ফাঁকে

পাছার,

এটাই এখন আচার!

 

এমন নীতি বন্ধ চাই,

মানবতায় ছন্দ চাই।

ছড়া - গাজায় আগুন

আগুন পুড়ে গাজা জুড়ে

ইসরাইলিরা শয়তান

তাদের গলায় রশি দিয়ে

আসুন মারি একটান ॥

 

ইহুদিরা এখন বেশি

বাড় বেড়েছে বাড়

মানবতার মূল্য দিতে

ধার ধারে না ধার ॥

 

বিশ্বজুড়ে আজ উঠে