বর্ষাকাহন

বর্ষাকাহন

মুগ্ধতা.কম

১৪ জুলাই, ২০২০ , ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ

বৃষ্টি আমার বন্ধু ছিলো

বৃষ্টি, আষাঢ়-শ্রাবণে প্রায় প্রতিদিনই ঝরে পড়ে এই ধরণীতে। পথ-ঘাট তলিয়ে যায় আকাশ থেকে ঝরে পড়া ওই জলে, কাদায় বিরক্ত হয় পথচারী। তবুও বৃষ্টিকে আমরা সবাই খুব ভালোবাসি। বৃষ্টি এলে ভুলেই যাই সর্দি-জ্বরের কথা। যেভাবেই হোক ভিজতেই হবে, এই ইচ্ছেটা অপূর্ণ রাখা একদম চলবেই না।

বৃষ্টির মাঝেও আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা, মেঘের চিৎকার শোনা, এ যেন আমার আজন্ম অভ্যেস ছিলো। মাটির উপর শুয়ে থেকে বৃষ্টিকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখা, তাকে জানানো “বড্ড প্রিয় তুমি যে আমার হে বৃষ্টি”।

যখনই আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি আশার প্রস্তুতি নিতো, আমি তখনই ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে শুধু দেখতাম কালো মেঘের ভিতর কতটা কষ্ট জমেছে, কতটা পথ তারা এই কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে। মেঘের এই কালো কান্না আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতাম, আর অপেক্ষা করতাম কখন আমার উপর ঝরে পড়বে ওই কালো মেঘের অশ্রুবিন্দু। আমি তো বৃষ্টির বন্ধু। সে এলে আমি কি আর নিজেকে ঘরে বন্দি রাখতে পারি। তাইতো পরম ভালোলাগায় মিশে যাই পরম বৃষ্টির মাঝে।

একদিন সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘে ওই আকাশটা ঢেকে গেলো, আকাশে কেমন যেন একটা গুরু গম্ভীর ভাব। চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেলো‌ সবাই ঘরে আসো বৃষ্টি নামবে এখনি। মা তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিস বৃষ্টির থেকে বাঁচানোর জন্য সবকিছু তাড়াহুড়ো করে ঘরের ভিতর এনে রাখছে। সন্ধ্যার আকাশে এমন চিত্র দেখে আমার অদ্ভুত ভালো লাগলো, যেন শুধু আমার জন্যই এই বৃষ্টির আগমন হচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামলো, ঝুম বৃষ্টি, টিনে বৃষ্টি পড়ার শব্দ খুব সুন্দর লাগছিলো। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল বৃষ্টিতে ভিজতে, মন চাইছিল আজ সারারাত বৃষ্টির মাঝেই থাকবো। কিন্তু মায়ের কড়া শাসনে ঘর থেকে আর এক পা-ও বাইরে ফেলতে পারিনি।
ওইদিন রাতে একটি ইচ্ছে অপূর্ণ রেখেই বৃষ্টির অনিন্দ্য শব্দে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আজ বহুদিন পর তেমনিই একটি সন্ধ্যা। আমি চাইলেই আজ ভিজতে পারতাম কিন্তু আজ আর সেই ইচ্ছেটা আমার নেই। বৃষ্টির প্রতি আগের ভালোবাসাটা বোধহয় নেই। হারিয়ে গেছে!

আজ আমার শুধু মনে পড়ছে শৈশবের সেইসব স্মৃতি। গ্রামীণ জীবনে সেই হারানো দিনগুলির কথা, যা আজ আর নেই! তবুও তখনকার ভালোলাগা গুলো এখনো স্পষ্ট ভেসে উঠে চোখের কোনে। সেই বৃষ্টি বিশ্রিত প্রিয় পথ… বাতাসে গাছের গায়ে থেকে থেকে ঝরে পড়া জলে হঠাৎই ভিজে যাওয়ার মুহূর্ত।

শহর জীবনে এসে এখন হারিয়ে ফেলেছি অনেক কিছুই, হারিয়েছি আমার প্রিয় বৃষ্টি বন্ধুকেও। এখানেও বৃষ্টি হয়, আসে। মেঘের কান্নায় এই শহরও মাঝে মাঝে ভেসে যায়। তবে আমাকে আর ভালোবাসে না আগেরমতো করে এখানকার বৃষ্টি, আমিও ভালোবাসি না হয়তো, তাই এতোটা অভিমানে সে আমাকে আর ডাকে না কাছে। শুধু ভিজতে বলে তার কষ্টের অশ্রুতে।

জীবনের পালাবদলে আমি ভুলেই গিয়েছি আমি যে বৃষ্টিতে ভিজতে বড়োই ভালোবাসি, বৃষ্টির দিনে আমাকে কেউ আটকে রাখতে পারতো না ঘরে। আকাশ কালো হতে দেখলেই আমি হারিয়ে যেতাম মেঘের কান্নার মায়ায়। সেই আমি আজ বৃষ্টি দেখলে অন্য সবার মতোই লুকিয়ে পড়ি, নিজেকে বাঁচাতে চাই বৃষ্টি থেতে। অথচ এই আমিই কিনা একদিন এই বৃষ্টির জন্য কতটা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে বসে থাকতাম।

আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো আমি যদি পাখি হতে পারতাম, বৃষ্টির মাঝেও তবে সারাদিন উড়ে বেড়াতে পারতাম। কি মজাই না হতো! কেউ আমাকে বাঁধা দিতে পারতো না। স্বাধীনতা নিয়ে একা ও-ই আকাশে বৃষ্টির জলে শুধুই ভিজতাম। কিংবা আমার একটি পাখির দল থাকতো যারা শুধু বৃষ্টি দেখলেই আমার মতো আকাশে উড়াল দিতো…

পাখি আর আমি হতে পারিনি, হয়েছি এক ভীরু যান্ত্রিক পথিক। যার সারাদিন বদ্ধ দেয়ালের মাঝেই কেটে যায়। টানাপোড়েনে আজ হারিয়ে গেছে বৃষ্টির মতো কতোশত প্রিয়বন্ধু, কতশত প্রিয় ইচ্ছে আমার….।

বৃষ্টি আমার বন্ধু ছিলো

তাজনিন মেরিন লোপা

১৪ জুলাই, ২০২০ , ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

বর্ষায় বৃষ্টি

যখন লিখছি বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । এখানে শীতকাল; ঠান্ডা আর বৃষ্টির সখ্যতা আমাদের পছন্দ হওয়ার কথা না অবশ্য । বর্ষা মানেই আমাদের কাছে সাদা হলুদ কদম ফুল, ভুনা খিচুরি, গরম চা আর রবীন্দ্র সংগীত । পাশে রোমান্টিক বউ-স্বামী-বন্ধু থাকলে তো সাথে গরম চা-কফির মজাই আলাদা । মজার বিষয় হলো, খুব শখ করে একটু খিচুরি খাওয়া আর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির গান শোনা ছাড়া আর কিছুই আমার জন্য না । ঠান্ডা এলার্জির কারণে বৃষ্টিতে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকেন একমাত্র বন্ধু আমার হাঁচি-কাশি । আর আমার সুজন বৃষ্টি নিয়ে আমার পাগলামির কারণেই এর মাঝে রোমান্টিকতা খুঁজে। তা না হলে বৃষ্টি মানে হয়তো তার কাছে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা, বৃষ্টি মানে রিকসাচালক দিনমজুরদের মতো বাধ্য হয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালানোর নিষ্ঠুরতা, রাস্তার পাশে, বস্তির মানুষের, গ্রামের গরীব মানুষের ভাঙ্গা চাল, ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে বৃষ্টির পানির সাথে বাধিত সখ্যতা । বন্যা তো আছেই এর সাথে এক পানির দৈত্য হয়ে । সত্যিই তাই এইসব দিক থেকে বৃষ্টি আসলেই নিষ্ঠুর ।

কিছু মানুষ নাকি বৃষ্টি কপালি হয় । প্রায় বাইশ বছর আগে এই জুলাইয়ের এক বিকেলে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান । বৃষ্টি পড়ছিল সারাটাক্ষণ ধরে । তার জন্মও নাকি হয়েছিল বৃষ্টির গান শুনে । বাবার সাথে বসে বৃষ্টির গান শোনা হয়নি কখনোও, ঝাল মুড়ির সাথে চায়ের গরম ধোয়ায় ফুঁ দিয়ে নানান আকারের দৈত্য বানানো হয়ে উঠেনি । আরও একটু সময় পেলে বুঝি ভালো হতো, অতো কম বয়সে অনুভুতিগুলো আসলে প্রখর হয় না । তাই এখন ওসব ভাবলে শুধু চোখেই বৃষ্টি আসে ।

আমার ছেলে জন্মের সময় শুধু বৃষ্টি না, ঝড়-তুফানও তান্ডব দেখালো । ব্যাথা, চিৎকার আর অস্থিরতায় যেভাবে হাসপাতাল ভরিয়ে তুলেছিলাম, তাতে বাইরের ঝড়ের কথা জানতেই পারিনি । পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুরা খুব ঝামেলায় পড়েছিল । তবে মজার ব্যাপার হলো, ছেলেকে ডাক্তার দেখানো, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, যতো পরিকল্পনাই করি না কেন, বৃষ্টি বা ঝড় এরাসব সাথী হয়েই থাকে । গত বছর আমরা বাংলাদেশ থেকে এলাম, তখন এখানে গ্রীষ্মকাল । অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বৃষ্টি খুব কম হয় । নতুন বাসায় উঠলাম, পরের দিনই বৃষ্টি এসে হাজির । আমার ছেলে আনন্দে আত্মহারা, বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ তার । ভীষণ রোমান্টিকতা ভর করে ওনাকে ।

ভেজার খুব ইচ্ছে; কিন্তু ক্যানবেরার বৃষ্টিতে কিছু উপাদান থাকে যা এডিস এর মতো, খুব ক্ষতিকর । তাই মা-ছেলে লিকার চা হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে হালকা একটু ছুঁয়ে দিতাম হয়তো । বছর শেষে আমাদেরকে নিউ সাউথ ওয়েলস, আরমিডেল, আমার বোনের বাসায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয় । এখানে বৃষ্টি কম হয়; যেটুকু হয় শীতকালে । তাই ’দাবানল’ এর তান্ডব বেশ ভয়ঙ্কর রুপেই আসে । তারপরও ছেলে যেহেতু প্রিস্কুল শুরু করবে তাই রেইনকোট কিনলাম । তা দেখে আমার বোন খুব আক্ষেপ করে বললো, এখানে বৃষ্টিরই দেখা নেই ! খুব মজার বিষয় হলো জানুয়ারিতে স্কুল শুরু হওয়ার কিছুদিন পর ঠিকই বৃষ্টি শুরু হলো ।

আমার ছেলের প্রিয় বৃষ্টি; না এসে কি আর পারে ! অস্ট্রেলিয়া তখন ‘দাবানলে’ জলছে চারিদিক । এই এড়িয়ায় মাঝে মাঝে আগুন আর ধোয়ায় শ্বাস কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল । আর গরমও খুব বেড়ে গেছিল । কিছু কিছু এড়িয়োতে মানুষজন পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছিল । এই সময়ই বেশি অনুভব করেছি, বৃষ্টি আল্লাহর এক বিশেষ রহমত । চারদিকের এতো উন্নত প্রযুক্তি, এতো চেষ্টা কোনকিছুই ‘দাবানল’ শুনছিল না । সবাই প্রার্থনা করছিল বৃষ্টির । এইদিকে বৃষ্টি হলো; দাবানল এড়িয়াগুলো চোখে পড়লো তখন’ কালো ছাই শুধু মাইলের পর মাইল জুরে । অদ্ভুত শক্তি প্রকৃতির, এক দুইদিনের মধ্যে ঘাস আর গাছের পাতা বের হতে থাকলো সেই কালো ছাইয়ের মাঝ থেকেই ।

আমাদের দেশে বর্ষাকালের সময় পাল্টে যাচ্ছে ; আর এই দেশে বর্ষাকাল বলতে কোন কালই নেই । তবে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা সব জায়গায় প্রায় অনেক বেশি । এখানেও ফসলের জন্য বৃষ্টিই বড় আশীবাদ হয়ে আসে । তবে আমরা বৃষ্টিকে যে রোমান্টিক জায়গায় বসিয়ে প্রিয়র সঙ্গ আর প্রিয়ার চোখে খুঁজি, এখানে সে বিষয়টা খুব অচেনা।

অনিরুদ্ধ সরকার প্রথম

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

স্কুলে একদিন

হিন্দুধর্মে বর্ষাকে বলা হয় ইন্দ্রদেবের আশীর্বাদ।আবার এই আশীর্বাদ অনেকক্ষেত্রে অভিশাপও বটে।

কারো কারো কাছে বর্ষা মানে আকাশের কান্না,কারো কারো কাছে বর্ষা মানে কবিগুরুর বাদল দিনের প্রথম কদমফুল অথবা শ্রাবণের গান, কারো কারো কাছে বর্ষা মানেই বিরহ, অঞ্জনের আমি বৃষ্টি দেখেছি, কারো কারো কাছে বর্ষা মানে, মাটিতে মাদুর পেতে চুলা থেকে নামিয়ে কব্জি ডুবিয়ে গরম গরম খিঁচুড়ি গোগ্রাসে গিলে উদরপূর্তি করা।

আমার কাছে বর্ষার সংজ্ঞা একেক বয়সে একেক রকম ছিলো। যখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়তাম, আমার কাছে আষাঢ় আর শ্রাবণ মাস ছিলো ঘুমানোর মাস। আমি বজ্রপাত বা এর শব্দ প্রচণ্ড ভয় পাই। সেক্ষেত্রে এটা একটা সুবিধা ছিলো, বাসা থেকে স্কুল যাওয়ার জন্য জোর করতো না আমাকে। আমি সারাদিন ঘুমাতাম, নয়তো দাদুর সাথে লুডু খেলতাম।

আবার যখন হাইস্কুলে উঠলাম, তখন বর্ষা আমার কাছে প্রথম প্রেম। আমি বৃষ্টির গানের প্রেমে পরলাম। বৃষ্টি নিয়ে দুই এক লাইন কবিতা লিখতাম খাতায়। পরে নিজেই পড়তাম আর হাসতাম। সে কবিতা অবশ্য কাউকে দ্যাখানোর মতো ছিলো না।ওই কবিতা লেখা খাতাগুলো কাগজ বিক্রেতার ট্যাঁকে ঢুকতো পরবর্তীতে।

যদি আমাকে বর্ষা নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে একটা ঘটনাই মাথায় আসে আমার।

আমার স্কুলজীবনের মজার বলবো নাকি বাজে বলবো,এ নিয়ে নিজের সাথেই তর্ক করেছি বহুবার। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারিনি আজও। অবশ্য একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আজকের দিনে ঘরে বসে যতই আমি বর্ষা নিয়ে স্মৃতিচারণা করছি, ঠিক ততই নস্টালজিক হয়ে পড়ছি।

তো যাইহোক স্মৃতিচারণে ফিরি, আড়াইবছর আগের শ্রাবণ মাস। আমি তখন সদ্য দশম শ্রেণিতে ওঠা ছাত্র। ওই যা হয় আরকি, সবে ক্লাস টেনে উঠেছি। আমরাই স্কুলে সিনিয়র। দাপটটাই আলাদা। যাইহোক, সেদিন কী বার ছিলো তা মনে নাই। তবে জোর বৃষ্টি নামছিলো এইটা বলতে পারি।

মায়ের জোরাজুরিতে অনিচ্ছা সত্তেও স্কুলে পা দিলাম ওইদিন গা ভিজিয়ে। স্বাভাবিকভাবে ক্লাস শুরু হয়নি। আমাদের দশম শ্রেণিতে, আমার শাখা ছিলো মেঘনা।

সবাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি।

হুট করে আমরা মেঘনা শাখার সব ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে মাঠে ফুটবল খেলবো। এই বৃষ্টিতেই। ক্লাস হচ্ছেনা, প্রিন্সিপাল তেমন কিছু বলবে না।

এক বন্ধুকে বলা হলো, অফিস থেকে ফুটবল নিয়ে আয়। ও দৌড়ে ফুটবল আনলো। প্রথমে সবাই উৎসাহ নিয়ে ফুটবল খেলতে চাইলেও আমরা হাতেগোনা কয়েকজন ফুটবল খেলতে নামলাম।বোঝাই যায়, বাকিরা গা ভেজাতে চায় না। মা বাপের বাধ্য সন্তান। যাইহোক ক্লাসের বারান্দা থেকে দিলাম ঝাঁপ মাঠে। যেই ঝাঁপ দিলাম, ওমা!পড়াৎ করে একটা শব্দ হলো। খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলাম, আমার স্কুল ড্রেসের প্যান্টের পিছনের অংশের ব্যবচ্ছেদ হয়ে গ্যাছে। আমি সেই যে মাটিতে বসে পরলাম। আর উঠিনা! ওইযে প্রবাদ আছে না?

যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। হঠাৎ ক্লাসের বেল পরলো। মানে ক্লাস শুরু হবে। বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আমি মাঠেই বসে আছি।একটা সুবিধা ছিলো, জুনিয়ররা প্রায় বাঘের মতোই ভয় পেতো আমাকে। সেক্ষেত্রে হাসাহাসির সাহসটা অন্তত তারা করে নাই। কিন্তু আমার হারামজাদা বন্ধুর দল, সে সুযোগ ছাড়বে ক্যানো?ওদের মুখে হাসি আর থামে না।

এদিকে আমাদের শ্রেণিশিক্ষক ও রসায়নের শিক্ষক ফেরদাউস স্যার মেয়েদেরকে কমনরুম থেকে নিয়ে ক্লাসে আসছে। মহা মুসিবত। আমি স্কুল ড্রেসের শার্ট দিয়ে, পিছনটা ঢেকে কোনোমতে ভোঁ দৌড়  দিলাম ক্লাসে। একেবারে পিছনের বেঞ্চে। সাথে আদনান নামে আমার এক বন্ধু ছিলো। ওরও প্যান্টের অবস্থা যাচ্ছেতাই হয়ে গ্যাছে। স্যার ক্লাসে ঢুকলো। সবাই চুপ। ফেরদৌস স্যার ক্লাসে ঢোকা মানেই, একটা চুল পরলেও তার শব্দ শোনা যাবে।

স্যার ক্লাস আসলো, ডেস্কে হাজিরা খাতা খুলে

রোল ডাকা শুরু করলো।

রোল ডাকার সময় কোনোমতে দাঁড়াইতে পারছি।একটু পর আবার সেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা।

হুট করে স্যারের তলব,”অনিরুদ্ধ সামনে আয়,আদনাদ তুইও আয়!”

একটা ইঁদুড় যখন ফাঁদে পড়ে, কিংবা একটা অপরাধী যখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে ঠিক তখন তাদের অনুভূতিটা যেমন হয়, আমারও নিজেকে একটা ইঁদুড় আর অপরাধী থেকে কম কিছু মনে হচ্ছিলোনা সেসময়।

স্যারকে বললাম,”স্যার যাইতে পারবোনা। প্যান্টে সমস্যা।”

কথাটা বলা শেষও হয়নি, ক্লাসের সব মেয়ে দেখি মুখে হাত চেপে ধরলো। আমি আড়চোখে খেয়াল করলাম। স্যারও দেখি হাসে। কী এক জ্বালা!

পরে অবশ্য পিছনের দরজা দিয়ে আবাসিকে যেয়ে, প্যান্ট চেঞ্জ করতে পারছিলাম। এক জুনিয়রের অতিরিক্ত একটা প্যান্ট ছিলো। ওই ঘটনার পর আমি পাঁচদিন স্কুল যাই নাই। ভাগ্য ভালো ধীরে ধীরে এই ব্যাপারটা নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামায়নি।

প্রেমিকাকে নিয়ে যদি বৃষ্টি দেখতে পারতাম, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি তাহলে হয়তো নিজের এই লজ্জার কথা স্মৃতিচারণ হিসেবে চালায় দিতাম না।

আমার স্কুলজীবনে প্রায়ই প্যান্ট ফাটতো। আর এর ওর প্যান্ট দিয়ে চালায় দিতাম। এখনও বাসায় ৩টা স্কুল ড্রেসের প্যান্ট আছে আমার। যার কোনোটাই আমার না।

এখন অবশ্য এই ঘটনা মনে পরলে আমিও হাসি, স্কুলে থাকলে হয়তো লজ্জা পেতাম। অন্তত এটা বলতে পারি, যতদিন স্কুলের মাঠে বৃষ্টির সাথে একাকার হয়ে ক্লাস টেনের টগবগে কিশোরের দল ফুটবল খেলবে, ততদিন আমার এই সোনালি বিব্রতকর সুন্দর স্মৃতি আমাকে নাড়া দিতে থাকবে।

প্রমথ রায়

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

বাবা এবং বর্ষাকাল   

আমাদের বর্ষাকাল বলতে কদমফুল বোঝায় না। বরং আমরা বুঝি কচি ধানের আগা, মানপাতা কিংবা কলাপাতা। যদিও এই তিন বস্তুই এখন বর্ষাকালের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়; কিন্তু বর্ষাকাল বলতে আমার সামনে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাই ভেসে ওঠে। তখনও এখনকার মতো সারাদিন বৃষ্টি হতো। অভাবি সংসারে মানুষ, পশু কারোরই খাবার থাকতো না। আমার পরিবারও সেরকম হওয়ায় আমার মা ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকোতে না পারায় সে ধান আবার ভেজে চাল করে ভাত খেতাম। পশু বলতে গরু ছাগল; টানা বৃষ্টির কারনে তারাও গৃহবন্দি। এখনকার মতো তখন এতো ফিড বের হয়নি। আমার পরিবারে ছাগল ছিলো। আমার বাবা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দোগাছি ধানের কচি ডগাগুলো কেটে নিয়ে আসতো। বর্ষার কথা আসলেই এই দৃশ্যপটটি সবসময় চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

এক বর্ষায় বাবাসহ আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। তখন সবার হাতে ছাতা থাকতো না। আমাদের হাতেও ছিলো না। হঠাৎ করে ঝুম বৃষ্টি এসে গেলো। তখন বাবা নিজে ভিজে একটি মানকচুর পাতা দিয়ে আমাকে ভেজা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছিলো। বাবার অনেক স্নেহ আমাকে আবর্তিত করে রাখলেও এই স্নেহের ঘটনাটি আমার জীবনে বিশেষ কিছু। তারপর বাবা আমাকে একটি বাঁশের ছাতা বানিয়ে দিলো। তারপর কিনে দিলো কাঠের হাতলওয়াল, টিনের হাতলওয়াল অতঃপর ফোল্ডিং ছাতা। পরে আমি নিজেও অনেক ফোল্ডিং ছাতা কিনেছি। বর্তমানে আমি রেইনকোট ব্যবহার করি। বর্ষা উপভোগ করার জন্য আমার একটি শখের গোলাপি রঙের ডাবল ফোল্ডিং ছাতা আছে। চীন হতে আমদানিকৃত। আমি আগে যে স্কুলে চাকরি করতাম, সে স্কুলের মালিক গিফট করেছে। এতদিন ছাতাটির যত্ন নিইনি; এ লেখা লিখতে গিয়ে মনে হলো ছাতাটির যত্ন নেয়া দরকার।

কলাপাতার বিষয়টিও মানকচু পাতার মতো। আমরা কলাপাতা কিংবা প্লাস্টিকের বস্তা উল্টে ভাজ করে স্কুলে যেতাম। এটার মধ্যেও মুগ্ধতা থাকতো।

অবশেষে আমার সাঁতার কাটতে পারার অর্জনটিও এই বর্ষাকালেই। যদিও এসময় পুকুরে অনেক জল থাকতো, তবুও অন্যান্য জলপাগল বাচ্চাদের মতো আমিও বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পুকুরে চলে যেতাম। দু ঢোক ঘোলা পানি গেলার পরে আমার এই অমিয় সাধনটি সফল হয়েছে। অন্যান্য মায়ের মতো আমার মাও আমার সফলতাকে গুরুত্ব না দিয়ে,পানি খেলাম কেন, সেটাকে ইস্যু করে দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রহার করেছিলো। যাহোক বর্ষা সবসময় আমার কাছে একটি আবেগের ঋতু। যদিও এটা অনেক কিছুর জন্য বিরক্তিকর; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এটাই আমার প্রিয় ঋতু। যখন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনি, তখন এমনি এমনি আমার মাথায় কবিতার লাইন চলে আসে।

হে বৃষ্টি, তুমি আমার শিরায় উপশিরায় রও

হে বৃষ্টি, তুমি আমার নক্ষত্র জমিন হও।

 

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১০:৫৬ অপরাহ্ণ

বর্ষাদিনে

লাল পুকুরে পদ্ম নাই। মাটির রং রক্ত লাল। পুকুরে পদ্ম থাকলে তাকে পদ্মপুকুর বলা যেত। তা সম্ভব হচ্ছে না। তাহমিদের দাদাবাড়ির পুকুরের তাই কোন নাম নাই। পুকুরটি গ্রামের বাড়ির পিছনে বাঁশঝাড়ের পাশে। শখে নয়, কাজে এ পুকুরের জন্ম। মাটি খুঁড়ে ঘর বানানো হয়েছিল। যেখানকার মাটি খোঁড়া হয়েছিল তা এখন পুকুর হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের দাবদাহে পানি শুকিয়ে খাঁ খাঁ।

বর্ষায় ভরে ওঠে কানায়-কানায়। বৃষ্টিতে পুকুরে গোসল করতো গ্রামের ছেলেমেয়েরা। টুপটাপ বৃষ্টি পড়তো পুকুরে, শরীরে। সবার সাথে ডুব দিতো তাহমিদ,পানির উপর বৃষ্টির শব্দ। কোন শব্দ শোনা যেত না পানির নীচে। উপরের পানি কেমন হিমশীতল,শরীর কাঁপন ধরে।পানির নীচে গরম।

চাচাতো ভাই কলাগাছ কেটে এনে চোখ বুজে ভেসে থাকতো, যেন ধ্যানমগ্ন ঋষি । তেমনি এক বর্ষাদিন, দুপুরবেলা। তাহমিদ পুকুরপাড়ে। এসেছে বৃষ্টি দেখবে বলে। কেউ নেই সাথিরা। শুধু পুকুরে সাঁতার কাটছে এক মেয়ে।

যে পুকুরে কোনদিন পদ্ম ফোটেনি, আজ সেই পুকুরে মেয়েটি যেন ফুটে আছে পদ্ম হয়ে। পাশের হিন্দুপাড়ার মেয়ে। ইশারায় ডাকলো। একটু ইতস্তত করে পানিতে লাফিয়ে পড়ে তাহমিদ। সাঁতার কাটে এপাড় থেকে ওপাড়। তারপর একটা কলাগাছ ধরে ভেসে থাকা ক্লান্ত হয়ে। ঘরে ফেরার সময় হয়ে যায়। কালো মেয়ে কাজল কালো চোখ তুলে বলে, আজ তবে আসি।

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশের গল্প - বর্ষাদিনে

মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১০:৪১ অপরাহ্ণ

বাবা

বাইরে তুমুল বৃষ্টি। বাবা এখনো বাসায় ফেরেননি। বাড়িওয়ালা দুইবার এসে ঘুরে গেছে। তিনমাসের ভাড়া এখনো বাকি। এদিকে ভাত নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে মা-ও খেয়ে নিয়েছেন। অথচ বাবার ফেরার নাম নেই।

কয়েকদিন থেকে বাবাকে বিমর্ষ লাগছিলো। খাওয়া দাওয়াতেও বেশ অনিয়ম। সকালে অফিসে যাবার সময় মাকে বলছিলো, ‘নিশির মা,চাকুরিটা এবার থাকছে না বোধহয়…।’ কথা শেষ না হতেই মায়ের বিড়বিড় করে কান্না। ছোট বোনটাও মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। তিন বছরের বোনের কান্না সহ্য হলো না বাবার। গ্লাসের অর্ধেক পানি খেয়েই অফিসে চলে গেলেন।

মাগরিবের আজান দেবার সময় হয়েছে। মায়ের কথামতো ছাতা নিয়ে বাইরে বের হলাম। বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে। ছাতাটা বন্ধ করতেই চোখে পড়লো রাস্তার পাশে একটা পাখি মরে পড়ে আছে।চোখদুটো তখনো খোলা ছিলো।

কী অদ্ভুত!  অনেকটা বাবার মতো করে তাকিয়ে আছে পাখিটা।

মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ্ র গল্প - বাবা

মাসুদ বশীর

১৩ জুলাই, ২০২০ , ১০:১৩ অপরাহ্ণ

এক ভরা বরষার অন্ধকার রাতে…

বৃষ্টি। বাংলা এই শব্দটির ভেতরে একটা অমায়িক সুন্দর দ্যোতনা ও ঝংকার বহমান। শব্দটি কানে এলেই তা যেন মস্তিষ্কের গভীরে একটা রিমঝিম দোলায় আপনাআপনিই খেলা করতে থাকে। আবার টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ সে-তো আরও বেশি রোমাঞ্চকর। বৃষ্টি, বর্ষাকাল নিয়ে- গান, কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যসহ বাংলা সাহিত্যেও একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। পৃথিবীতে এমন কোন লেখক খুঁজে পাওয়া যাবেনা যিনি এই বৃষ্টি নিয়ে জীবনে অন্তত দু’চার লাইন লেখা লিখেন নি।

বৃষ্টি নিয়ে স্মৃতির ক্যানভাসে অনেক সুন্দর ছবিই আমার মনোজগতে বিচরণ করে। কোন স্মৃতিই অমলিন নয়, সব স্মৃতিই যেন বারবার মনকে আন্দোলিত করে এবং আমাকে নিয়ে যায় সেইসব সোনালি মধুর দিনগুলোতে।
প্রায় বছর বারো আগেকার সেরকমই একটি মজার সোনালি স্মৃতিকথা, মুগ্ধতার সম্মানিত পাঠকদের সাথে আজ আমি শেয়ার করছি।

আমার শ্বশুরালয় রংপুর শহর থেকে প্রায় ২২কি.মি. দূরে পাগলাপীর বাজার ছেড়ে পরের স্টপেজ সালেয়াশাহ বাজার। আমার পরদাদা শ্বশুরের নামে এই বাজারের নামকরণ করা হয়েছে- “সালেয়াশাহ বাজার”। সে যাক, তখন আমি কেয়ার বাংলাদেশের একটি প্রকল্পে ‘এমএন্ডই অফিসার’- পদে কর্মরত। আমার পোস্টিং বা কর্ম এলাকা ছিলো নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর। প্রতিদিন আমার নিজস্ব বাইকে করে আমি অফিস করতাম। যেহেতু অফিস যাওয়া-আসার পথে পরতো আমার শ্বশুরালয়, তাই মাঝে-মধ্যেই ফেরার পথে সেখানে আমি ঢুঁ মারতাম। কিন্তু সেদিন আবহাওয়া বিপরীত দেখে শ্বশুরালয়ের সকলের চাওয়ায় সেখানেই আমি রাত্রি যাপন করলাম। তখন ছিলো একদম ভরা বর্ষাকাল এবং আমের সিজন, বলতে গেলে মধুমাস। প্রতিটি আমগাছে তখন আমের বিপুল সমাহার। সেইরাতে আকাশ ভেঙ্গে তুমুল ঝড় উঠলো, দমকা হাওয়াসহ ঝমঝমিয়ে শুরু হয়ে গেলো প্রবল বৃষ্টি। মাঝে-মাঝেই প্রকট আওয়াজে বাঁজ পড়ছে, বিজলি চমকাচ্ছে এবং অনবরত চলছে গুরুগম্ভীর মেঘের গর্জন। তার মাঝেই থেকে থেকে কানে ভেসে আসছে আমগাছ থেকে আম পড়ার শব্দ। হঠাৎ, কি জানি কি মনে হলো, মনের খেয়ালে তখনই একটু আনন্দ উপভোগের অভিপ্রায়ে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়ার মানসে সেই গভীর রাতেই (যখন মহল্লার সকলেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির আনন্দ দোলায় গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত) আমি, আমার সহধর্মিণী ও ছোট দুই শালিকাদ্বয়কে সাথে নিয়ে নেমে পড়লাম ঘুটঘুটে অন্ধকারে আম কুড়ানোর প্রমত্ত উন্মত্ত নেশায়। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎও চলে গেলো। প্রথমে আমরা ছাতা মাথায়, হাতে মোবাইল ও টর্চের আলোতে কুড়াতে থাকলাম আম, কিন্তু পরবর্তীতে এমনই আম পেতে লাগলাম যে, যার কারণে আম কুড়ানোর আরও গভীর নেশায় যেন পেয়ে বসলো আমাদের সকলকে। তখন আম রাখার মতো আর কোন পাত্রই হাতের কাছে না পেয়ে, সকলেই যে যার ছাতার ভেতরেই গলাতে শুরু করলাম আম। এমনিতেই আমি মেঘের গর্জন, বিজলি চমকানোকে ভীষণ ভয় পাই, বুকটা ধরাস করে স্থবির হয়ে যায়! কিন্তু সেরাতে ওই অন্ধকারেও আমার যেন তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই, কোন ভয়ই যেন আর আমার মধ্যে কাজ করলো না। আসলে মানুষ যখন কোন বিষয়ের একদম গভীরে অবগাহন করে তখন অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি তাতে তেমন কোনই প্রভাব ফেলতে পারেনা। আম কুড়ানো শেষে, অবশেষে আমরা ঘরে ফিরলাম। তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক, তবুও মোবাইল ও টর্চের আলোতে আমরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম অগণিত আম! কতো ধরনের যে আম কুড়িয়েছি আমরা, যা বলে শেষ করা যাবেনা- পাঁকা-কাঁচা, ছোট-বড়, বিভিন্ন রকমের আম। এদিকে সকলের শরীর তো একদম বৃষ্টির জলে ভিজে-ভিজেই সারা, ঠিক যেন একটা একাকার অবস্হা সবার! সে রাতের অমন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা আজও মনে পড়লে, তা আমাকে মনের গভীরে ভীষনভাবে আনন্দের দোলা দেয় এবং বাংলার অপূর্ব সুন্দর সবুজে-শ্যামল চিরায়ত শাশ্বত রূপটি চোখের সামনে অকপটে নিদারুন ছবি আঁকতেই থাকে সারাক্ষণ। সত্যিই, আমার প্রিয় মাতৃভূমির মতো এতো সুন্দর অপরূপ সাবলীল অপূর্ব সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়না, যাবেনা এবং একদম নেইও।

তাইতো পল্লী কবি জসীমউদ্দিন তার ‘মামার বাড়ি’ কবিতায়- বাংলার চিরায়ত অপরূপ রূপটি নিপূণ সুন্দরভাবে এঁকেছেন এভাবেইঃ

মামার বাড়ি

জসীমউদদীন 

আয় ছেলেরা , আয় মেয়েরা

ফুল তুলিতে যাই,

ফুলের মালা গলায় দিয়ে

মামার বাড়ি যাই।

ঝড়ের দিনে মামার দেশে

আম কুড়াতে সুখ,

পাকা জামের মধুর রসে

রঙিন করি মুখ।

এক ভরা বরষার অন্ধকার রাতে