মুগ্ধতা.কম

১ ডিসেম্বর, ২০২১ , ৫:০৯ অপরাহ্ণ

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১০:৩৮ অপরাহ্ণ

উপদেষ্টা সম্পাদকের শুভেচ্ছা:

আমাদের শুরুটা ছিলো সমকালীন অনলাইন ম্যাগাজিনগুলোকে অন্ধভাবে নকল না করে নিজেদের মতো করে কিছু করা। ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশে রংপুরের মতো এক মফস্বল শহরে তা করা যে কঠিন, সে আমরা টের পেয়েছি পদে-পদে। ম্যাগাজিন চালাতেও লাগে প্রণোদনা, রংপুরে থেকে যেটা পাওয়া কষ্টের। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টায় মুগ্ধতা ডটকম চালিয়ে নিতে।

মুগ্ধতা ডটকম সবসময় চেয়েছে সমকালীন বিষয়গুলো নিয়ে লিখে মানুষকে সচেতন করতে। মানসম্মত লেখা পাওয়াটাও একটা কঠিন বিষয়। লেখা জোগাড় করা, সেগুলো গুছিয়ে প্রকাশ করাও কষ্টসাধ্য কাজ বটে। মুগ্ধতা টিমের সম্পাদকমণ্ডলী তা করে আসছে হাসিমুখে। বর্তমানে ফেসবুক তাদের রিচ কমিয়ে দেওয়ায় আমাদের অনেক লেখাই মানুষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তারপরও আমাদের ভিউ এখন পর্যন্ত গর্ব করার মতো। মাত্র তিন বছর পেরিয়ে আসা মুগ্ধতা ডট কম এখনও শিশু। আর আমরা সবাই জানি শিশুর জন্য প্রয়োজন পরিচর্যা। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি একদিন ঠিক মুগ্ধতা ডট কম পৌঁছে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত জায়গায়, যেখানে সে পৌঁছাতে চায় সকলের ভালোবাসা নিয়ে।

বর্ষপূর্তিতে সকল পাঠক,লেখক ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণকে জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা। ভালো থাকুন, মুগ্ধতাকে পাশে রাখুন।

উপদেষ্টা সম্পাদকের শুভেচ্ছা

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২৮ অপরাহ্ণ

সেরা লেখক ও রক্তদাতা সম্মাননা:

আমাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুগ্ধতার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আমরা ঘোষণা করছি তিনজন সেরা লেখক ও একজন সেরা রক্তদাতার তথ্য প্রদানকারীর নাম। লেখদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে এক বছরে গুগল থেকে প্রাপ্ত প্রকৃত ভিউয়ের ভিত্তিতে।

সেরা তিন লেখক ও লেখা:

১. প্রিয় বন্ধু রকিব আর ফিরবে না আড্ডায় – আসহাদুজ্জামান মিলন

২. পরকীয়া  – রবীন জাকারিয়া

৩. প্রযত্নে নীলা – ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

এছাড়া ‘মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক’-এ সর্বোচ্চ সংখ্যক রক্তদাতার তথ্য প্রদান করায় বিশেষ সম্মাননা পাবেন মুস্তাফিজ রহমান।

সম্মানিত লেখকগণকে সময়মতো তাঁদের সম্মাননা উপহার ও সনদ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সেরা লেখক ও রক্তদাতা সম্মাননা

প্রমথ রায়

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

পতন খুঁজছি 

পদ্মপুকুরে মধ্য দুপুর। পদ্ম আমার প্রিয় ফুল। হিরারও। সাত বছর আগে হিরাকে ছেড়ে এসেছি। হিরার হাতে একমুঠো ঘাসফুল ছিলো। তার শুকনো ডগাগুলো এখনো ডায়েরির ভাঁজে যত্ন করে রেখেছি। সপ্তম প্রহরে আমার বহর থেমেছে আকাশলীনায়। ‘আকাশলীনা’ আমার মেসের নাম। আমার মেসে রয়েছে একটি ছোট্ট উঠোন। সেই উঠোনে রয়েছে একটি বকুল গাছ। এই বকুল তলায় আমি নষ্ট দুপুরে অনেক কবিতা লিখেছি। আবার ছিঁড়েও ফেলেছি। সাদা কাগজের টুকরোগুলো সকালের শিশিরে সিক্ত বকুলফুলের মতো লাগত। তারই কিছু টুকরো দখিনের চৌবাচ্চায় কাগজের নৌকার মতো ভাসিয়ে দিতাম। চৌবাচ্চাকে তখন পদ্মপুকুরের মতো মনে হতো। হিরার কথা মনে পড়ত। কেঁদে ফেলতাম। বছর দুয়েক হলো হিরা নাকি আত্মহত্যা করে মারা গেছে। কোনো এক অজানা সন্ধ্যাবেলায় সে নাকি ধর্ষিত হয়েছিল। নিজের আত্মসম্মান রোধ করতে না পেরে আত্মহননের পথে হেঁটেছে। আমি এখনও হিরার আত্মার সাথে কথা বলি। সে আমার পাশে এসে বসে। আমাকে বলে, সেও এ শহরে থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই। সে বলে, ‘কাল ডিসির মোড়ে আসিও, অপেক্ষায় থাকব।’

এ জীবন বড় দুর্বিষহ। জীবনে কখনো রং মাখলাম না। কত দুপুর কাটিয়েছি দুটো শিঙারা খেয়ে। আজও সেসব দুপুরের পুনরাবৃত্তি। চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। পৃথিবী ধূসর বর্ণের মনে হয়। কবে যেন বনলতা আমার চোখে এসেছিল। আমি মুখে একটি ডার্বি লাগিয়ে ডিসির মোড়ের দিকে হাঁটতে লাগলাম। চোখের সামনে অনেক বিরহের গল্প, তবু মুখে সুখটান। আলোর নিশানার মতো একটি সাদা গাড়ি চলে গেল।  গাড়ির ভেতরের একটি সাদা মেয়ে কয়েকটি পদ্মফুল রেখে গেল। না, সে হিরা নয়। শুধু চোখগুলো হিরার মতো। আমি সীমানা ছেড়ে অসীমতার দিকে চেয়ে রইলাম। এভাবে চারদিন কেটে গেল। চারদিনে চারটি মেয়ে কয়েকটি পদ্মফুল রেখে গেল।

পঞ্চম দিনে ঘটে গেল এক ভয়ানক ঘটনা। আমি চোখের সামনে তারা দেখলাম। সাদা তারা। স্যাঁতস্যাঁতে জীবন। তারও। সমস্ত শরীর রক্তে ভেজা। রক্ত শুকিয়ে গেছে। শুকনো রক্ত ইতিহাস হয়। আমার আপন ইতিহাস। যেদিন আমি মারা যাব। তার মতো। দুটো ঝুলন্ত লাশ। প্রেমিক-প্রেমিকার। প্রেমিকা ধর্ষিত হয়েছে; প্রেমিক নির্যাতিত। অবশেষে দুজনের লাশ।

অপেক্ষায় রয়েছি পঞ্চম মেয়েটির। ঠোঁটে আমার জ্বলন্ত সিগারেট। আজ জীবন কেন জানি বিলাসবহুল মনে হচ্ছে। সতেরো দিন পর এক টুকরো মাংস খেতে পেরেছি। সাঁই করে একটি লাল গাড়ি চলে গেল। ভেতর থেকে একটি লাশ ফেলে দিয়ে গেল। হিরার নয়। মিরান্ডার। মিরান্ডাকে আমি এ শহরে ভালোবেসেছি। কফি হাউজে সে একদিন আমাকে কফি পান করিয়েছে। আমি তার জন্য কবিতা লিখেছিলাম। কবিতা তার প্রিয় নয়। তার প্রিয় চন্দ্রিমা রাতে বেহালার সুর। তার পাশের বাসায় আমি থাকতাম। আমার বন্ধু তেরানের বাসায়। মন খারাপের দিনে আমি ছাদে বসে বেহালা বাজাতাম। মিরান্ডাও তাদের ছাদে আসত। বেহালার সুর শুনত। গোপনে চোখের জল মুছত। তার চোখে আমি পদ্মফুল দেখি। তাকে ভালোবেসে ফেলি। সেও।  সে নাকি তেরানের পুরনো প্রেমিকা। তেরান এক অদ্ভুত চরিত্র। গোপনে গোপন লীলা।

সে আমাকে ষষ্ঠ দিনে মৌবনে বিরানি খাওয়াল। হাতে দিলো এক বিষপত্র। যাতে লেখা, আমি আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হেফাজতে যাচ্ছি। আমার বুকে লিখিত হয়েছে, আমি মিরান্ডার দাগী খুনি।

পতন খুঁজছি

কামরুন নাহার রেনু

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

লাশ

বাজান গো মাইয়াডারে এমনিতেই অনেক কষ্ট দিয়া মারছে ডিমান্ডের টাহা দিতে পারি নাই বইলা। আর কষ্ট দিয়েন না, পঁইচা যাইতাছে। মাইয়াডার মাও ছোড বেলায় ছাইড়া গেছে। কুকুর বিড়ালের লাহান সবার লাথ্থী উসঠা খাইয়া বড় অইছে। শেষ মেষ বিয়া দিয়া জমের দুয়ারে পাঠাইয়া দিলাম।

কথাগুলো ওসি সাহেবের কাছে হাত জোড় করে মেঝেতে বসে আকুতির সুরে বলতে থাকে নিজামউদ্দিন। তার কথায় কর্ণপাত না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ওসি সাহেব। এক কনস্টেবল নিজামউদ্দিনের কানে কানে বলে, মাইয়ার লাশ নিবা টাকা ছাড়া?   বাতাসের ঝাপটায় পঁচা লাশের গন্ধ এসে লাগে নাকে, কী যেন বলতে যেয়ে থেমে যায় নিজামউদ্দিন, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মেয়ের লাশের দিকে

লাশ

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

ভিন্ন ঠিকানা

কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন

গাছতলা কিংবা টিনসেড বাসা

কোনটাই খুঁজে পাওয়া গেল না।

গেল না বললে ভুল হবে। এলোমেলো হাঁটছিলাম সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ প্যারোট’স বিক আবাসিকের বৈদ্যুতিক খুঁটির গায়ে একটি টিনশেড বাসার নম্বর চোখে পড়ল।

নম্বরটি মুঠোফোনে তুলতে গিয়ে দেখি ফোন চার্জশূন্য। খাতা-কলম কিচ্ছুটি নেই সঙ্গে। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নম্বরটি মুখস্থ  করে নিলাম।

নিজের মুখস্থ-ক্ষমতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস আমার শূন্যের কোঠায়। উচ্চমাধ্যমিকে আমার রোল ছিল ৬৩৬, পরীক্ষার খাতায় বরাবরই লিখতাম ৩৬৩। এ নিয়ে বহুবার কঠিন কথা শুনেছি স্যারদের থেকে। কোনো কোনো স্যার কাছে ডেকে বলতেন, নিজের রোল কেউ ভুল করে? কী এত ভাবো বলতো? আর ভুল করবে না, ঠিক আছে?

দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে পেস্টের পরিবর্তে ফেইসওয়াশ কিংবা নখ পরিস্কার করবার ব্রাশ মুখে নেওয়ার ঘটনাতো এ জীবনে কম নয়। সেখানে ১১ ডিজিটের একটি ফোন নম্বর মুখস্থ করা আমার জন্য বেশ কঠিন। মনে মনে নম্বরটি আওড়াতে আওড়াতে বাসায় ঢুকলাম। ফোনটাকে চার্জে দিয়ে অন মাত্রই আপনার ফোন, আমি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানালাম, আমি টিনশেড বাসা খুঁজে পেয়েছি। আপনি নম্রস্বরে বললেন, ভালো। কথা বলেছেন?

বললাম, না, নম্বর মুখস্থ আছে একটু পরই কথা বলব। আপনি অবাক হয়ে বললেন, আপনি নম্বর মুখস্থ করেছেন? আমার ফোন নম্বরটা কি মনে আছে আপনার? মনে ছিল কখনো? 

অপরাধী কণ্ঠে জবাব দিলাম, আমার নিজের ফোন নম্বরইতো মনে নেই,  আসলে…

থাক আর আসলে আসলে করতে হবে না, ওই নম্বরে কল করে খোঁজ নিন, আর আগামীকাল সময় করে বাসাটি দেখে আসবেন। আমি রাখছি এখন।

বিপত্তি ঘটল মুখস্থ নম্বর ফোনে টাইপ করতে গিয়ে। নয়টা ডিজিট মনে থাকলেও বাকি দুটো ভুলে গেছি একেবারেই। কোনোভাবেই আর সে রাতে মনে করতে পারলাম না। পরদিন সন্ধ্যায় একই জায়গায় গিয়ে নম্বর তুললাম, কল করলাম। কথায় কথায় বাসাওয়ালা জানালেন, তিনি আমাকে চেনেন। আমার যাবতীয় কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন, আপা কী যে সব বলছেন, আপনার জন্য কী এই টিনের বাড়ি? আপনি বরং একদিন বেড়াতে আসুন। আর টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ যেহেতু আপনার এত পছন্দ, সেক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে সময় পেলেই আপনি  চলে আসবেন। যত্নের অভাব হবে না এ গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।

বাকি থাকল বৃষ্টিগাছ, সে ও খুঁজেছি শহরের অলিতে গলিতে। এত বড় শহর একটি বৃষ্টিগাছের অভাবে যেন অপূর্ণ। আমি হাল ছাড়ার মানুষতো নই। 

খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেলাম ভৈরব নদীর পাড়ে। সেখানে ডালপালা ছড়িয়ে বাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে একটি বৃষ্টিগাছ। গাছের গোড়া ইট সিমেন্টে বৃত্তের মতো বাঁধানো। সেখানে কত মানুষের আনাগোনা। কেউ বসে বিশ্রাম করছে, কেউ বিড়ি ফুঁকছে, কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ-কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছে। কিছু ছিন্নমূল শিশু পাতা কুড়োচ্ছে। অনেক মানুষের ভীড়ে আমি যেন ভীষণ একা। ফোন হাতে নিয়ে কতবার আপনাকে কল করতে চেয়েছি, পারিনি, আপনি ব্যস্ত মানুষ, চাকরি, পরিবার। আমি স্থান ত্যাগ করলাম। যে গাছ সবার জন্য সে গাছ অন্তত আমার জন্য নয়।

চলে গেলাম আপনার পছন্দ করে রাখা সেই তিনতলা বাসাটিতে। মালিকের সাথে কথা বলে অ্যাডভান্স করলাম। কল করে তা জানালাম আপনাকে। আপনি আকাশ থেকে পড়লেন, মানে? আপনার সেই টিনশেড বাসার খবর কী? আর বৃষ্টিগাছ? গাধারা জল খায় ঠিকই কিন্তু ঘোলা করে খায় এটা আবারও প্রমাণিত।

আমি বললাম দেখুন, আপনার পছন্দকে প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে যদি আজ আমাকে গাধা হতে হয় তবে আমি গাধাই। আপনি হাসলেন, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন বোঝা গেল। আমাকে নিয়ে এত চিন্তা অথচ কখনোই তা বুঝতে দিতে চান না, কেন বলুনতো? 

মাস শেষ হওয়ার আরও তিনদিন বাকি, বাসাওয়ালা ঘুম থেকে ডেকে তুলে সেদিনের মধ্যে ঘর ছাড়তে বললেন। যে কোনো বিপদ মানেই আমার শেষ ভরসা আপনি? আমি কি এতটাই পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি যে বিকেলবেলা কোথায় ঘুরতে যাব, রাতে কী খাব, সকালে কোন পোষাক পরব সবটা আপনার কাছে শুনতে হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই আপনি কল করলেন। বললাম আজকেই বাসা চেঞ্জ করতে হবে, আমি কীভাবে এতটা গুছাব? আপনার কি একটু সময় হবে? আপনি লাইন কেটে টেক্সট করলেন, এই কথাটা কি বলতেই হতো?

কিছুক্ষণ পর আপনি এসে হাজির। প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এলেন তিনটি। আমার যত জামাকাপড় আর রান্নাবান্নার টুকিটাকি জিনিসপত্র তা কোনোভাবেই তিন বস্তার মধ্যে প্রবেশ করানো গেল না। আপনি বাসায় যাবার কথা বলে রিকশায় উঠলেন। একটু পর কল করে মোড়ে আসতে বললেন, আমরা একই সময়ে মোড়ে পৌঁছলাম। আপনি মুচকি হেসে আমার হাতে আরো দুটো বস্তা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন।

বাসায় ফিরে বাকি প্যাকেজিং সম্পন্ন করলাম।

সন্ধ্যায় তিনটি ভ্যান নিয়ে বাসার সামনে হাজির হলেন রাকেশ ভাই । বাসা পরিবর্তনের কাজে তিনি সিদ্ধহস্ত। এক ঘন্টার মধ্যেই তিন ভ্যানে তিনি সকল জিনিসপত্র সেট করে ফেললেন। হঠাৎই সন্ধ্যার আবছা আলোতে আপনাকে আবিষ্কার করলাম।

আরে আপনি? কী দরকার ছিলো আসার। আমি পারতাম তো।

কী পারতেন আমি জানি, সব নামানো হয়েছে? 

দেখে নিন আর একবার। 

বছর দুয়েক ধরে যে রুমে ছিলাম সে রুমটার জন্য খারাপ লাগছে। কেমন যেন মায়া কাজ করছে। আমি এমন কেন? এত সহজ কেন? কেন এত সহজে মানুষকে ভালোবেসে ফেলি? শুধুই কি পৃথিবী সমান কষ্ট পাবার জন্য? ইট-সিমেন্টে গাঁথা এই রুমটার প্রতিও এত ভালোবাসা আমার, আগে কি বুঝেছি কোনোদিন? আমার কান্না পাচ্ছিল। আপনি বুঝতে পেরে আমার হাত চেপে ধরলেন। ভ্যানওয়ালাকে সামনে যাওয়ার তাগিদ দিলেন।

আমরা হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম নতুন বাসায়। আপনি দাঁড়িয়ে থেকে সবটা তদারকি করলেন। 

সব জিনিসপত্র রুমে সেটিং করা শেষ হলে আপনি বিদায় নিলেন।

না গাছতলা, না টিনশেড বাসা, না আপনার স্টোর রুম কোথাও জায়গা হলো না আমার। একটু জায়গার যেন বড়ই অভাব এই পৃথিবীতে। আমি হয়তো ভুল করে এসেছিলাম এই গ্রহে। যখন যা চেয়েছি তাই শূন্য হয়ে গিয়েছে। যাকে আঁকড়ে বাঁচতে চাই সেই চলে যায় দূরে বহুদূরে । 

আর তাই হয়তো একই আকাশের নিচে থেকেও আমাদের ঠিকানা আজ ভিন্ন।

ভিন্ন ঠিকানা

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২০ অপরাহ্ণ

কল্পপত্র

অনীশ, 

“তুমি যদি হও রোদ্দুর আমি তবে ডানামেলা গাংচিল। আছড়ে পড়ব তোমার বুকে। সবটুকু নোনাজল মুছে দেবো।  তুমি হবে নীল আর আমি সেই ডানামেলা গাংচিল। নদীর সাথে মিতালী পাতব কোনো বৈশাখে।  তোমার লেখার গভীরতায় ডুবে গেলাম।”  তুমি এমনটাই লিখেছিলে আমার লেখা কবিতা পড়ে।

 আমার লেখা তোমার ভালো লেগেছিল। আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম মুগ্ধতায়। আমার কল্পনার জগতে তুমি এমনভাবে আঁচড় কেটেছিলে যে, আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। ডুবে গিয়েছিলাম অপূর্ব এক স্বপ্ন সাগরে। সেখান থেকে আর উঠতে ইচ্ছেই করেনি। 

আমাদের দুজনকে যখন পথ এক রাস্তায় চালান করে দিয়েছিল তখনকার সেই দিনগুলো মনে করেই আমার যুগ কেটে যেতে পারত। এখন আমার দিন কাটে না। রাত কাটে না। ফাগুনের এই রাতে মন পোড়ে। এখন আমার বসন্তেও শুষ্কতা।

অনীশ, আমার প্রিয় সব কবির মাঝে একজনের কবিতা অনেক বেশি পছন্দের।  তাদেরই একজন লোরকা। জীবনানন্দ দাশও আমার প্রিয় কবিদের একজন। লোরকা’র লেখা একটা কবিতা –

“আমার ব্যালকনির জানালা বন্ধ রেখেছি,

কারণ, কান্নার শব্দ আমার পছন্দ নয়;

তবু ধুসর দেয়ালের আড়াল থেকে

কান্না ছাড়া কোনো কিছুরই শব্দ শোনা যায় না।” …. (লোরকা)….

সত্যি বলতে , আসলে ব্যালকনির আড়াল থেকে আমার নিজের কান্নাইতো প্রতিধ্বনিত হয়। নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়া সবচেয়ে জটিল কাজ। কে হেরেছে, কেইবা জিতেছে তার হিসেবটাও ততোধিক জটিলতাপূর্ণ। ভালোবাসার ঘাটতি থাকে না।  ভালোবাসা সবাই উপলব্ধিও করতে জানে না। 

আমি কি ফুরিয়ে গিয়েও নিজের মাঝে কোথাও তোমাকে পেতে চাই? কেনইবা তা হতে যাবে? কেন তা চাইব? আমার এতদিনের শিক্ষা, ব্যক্তিত্ববোধ মিশে যাবে। আমি তা হতে দেবো না। দিনের পর দিন আমি যে যন্ত্রনায় দগ্ধ তা কোনোদিনই মিটে যাবার নয়। তবুও আমি কেন তোমাকেই এসব লিখি, বলি তার কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।

আমি ইদানীং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকায় নিয়মিত পত্রিকা পড়া হচ্ছে না। মাঝে মাঝে টেলিভিশনে সংবাদগুলো শুনি। সেদিন আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলাম। এরই ফাঁকে দৈনিক পত্রিকাঅলার হাঁক। কিনে ফেলে পত্রিকার পাতায় চোখ পড়তেই দেখলাম-

“মায়ের হাতে শিশু সন্তান খুন! “

বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাত করে উঠল। মনে হলো কেমন অন্ধকার দেখছি। পুরো খবরটা পড়লাম এক নিশ্বাসে।  মনে মনে প্রার্থনা করলাম, ক্ষমা চাইলাম শিশুটির কাছে। মন থেকে কে যেন বলে উঠল “ও মানিক,  মাফ করে দে সোনা। ওরে জাদু পা ধরি বাবা। মাফ করে দে সোনা। বাপ আমার,  জাদু আমার। আমি প্রার্থনা করি, এ দেশের সকল নারী বন্ধ্যা হোক। বন্ধ্যা হোক। ততদিন পর্যন্ত বন্ধ্যা থাকুক যতদিন না তোদের নিরাপত্তা দিতে পারি আমরা।”  

আমি পত্রিকা খুলেই এমন হিংস্র সব খবর পড়তে চাই না। নীচতা দেখতে চাই না। সন্দেহপ্রবণ স্বামীর অত্যাচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অন্ধত্বের ঘটনা জানতে চাই না। আমরা সমাজের এসব কীটদের থেকে দূরে থাকতে চেয়েও পারি না। যেমন আমি পারিনি।  দিনের পর দিন সন্তানদের জন্য সয়ে গিয়েছি। 

তুমিতো বেশ আছ। রাস্তায় কান পেতে কারো পদধ্বনি শুনতে পাও। মুঠোফোনে শুনতে পাও কোনো পরিচিতের প্রিয় কণ্ঠস্বর। তোমার এনজিও সহকর্মী ঘনিষ্ঠ নারীর কণ্ঠ এবং শয্যাপাতার সময় নির্ধারণ করতে পারো অনায়াসে। ধর্মে,  সমাজে তোমার বিশ্বাস নেই। তাইতো “তুমি যার তার, যে কেউ তোমার”।

আমার মননে মগজে একটা ঘৃণার পাহাড় জন্মেছে। সেই পাহাড় সরাতে না পারলে আমি নিঃশেষ হয়ে যাব। আমিতো বাঁচতে চাই। আমার নিঃসঙ্গতাকে সাথী করে। বিশ্বস্ততার সমুদ্র সাথে করে। 

অনীশ, কতটা ভালোবাসতে পারলে এমন হয় জানি না। কতটা কষ্টে এমন কবিতা আসে জানি না। 

“নির্বাসিত প্রেম জাগিয়ে দেয় মধ্যরাতে,

একাকীত্বের প্রহর ফুরোতে চায় না

কিছুতেই। 

হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে বাড়ে অব্যক্ত 

যন্ত্রণা,

দুচোখের নোনাজল শুকিয়ে বাষ্প হয়।

মননে চেতনায় ওড়ে অতীতের জলছবি,

আমার নিজস্বতায় অনন্তকাল ধরে নির্বাসিত স্বপ্ন।

নীলকষ্টের চাদরে জড়ানো প্রেম কফিনবন্দি,

দলিলটুকু আমার কাছেই থাক-

তোমাকে দেবো না।…. 

-অধরা 

কল্পপত্র

আবু হানিফ জাকারিয়া

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২০ অপরাহ্ণ

মহেশ চন্দ্র রায়: বিস্মৃতির দিকে ধাবিত এক প্রতিভা

প্রতিভা কখনোই চাপা থাকে না। যত প্রতিকূলতাই থাকুক তা একদিন প্রকাশিত হবেই। অতি প্রাচীন কালেও তাই ছিল, যখন প্রতিভা মেলে ধরার যথেষ্ট সুযোগও ছিল না। প্রতিভাবানদের প্রতিভার জৌলুশ ঠিকই দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আজও সেই বিখ্যাত প্রতিভাবান ব্যক্তিগণ স্মরণীয় হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়, পাঠ্যবইয়ের পাতায়। হাল আমলের কত অ-প্রতিভাবান ব্যক্তিও জনপ্রিয় হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত। তথাকথিত সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্য ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা আসক্ত। অল্পকিছু দিন পরই তারা হারিয়ে যান। কিন্তু সত্যিকারের প্রতিভাবান ব্যক্তি সহজে হারিয়ে যান না। তার সৃষ্টিকর্ম যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

মহেশ চন্দ্র রায় কিশোরগঞ্জের মাটিতে জন্ম নেয়া একজন বিরল প্রতিভার মানুষ। তিনি কিশোরগঞ্জের অহংকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিষয়ের পাঠ্যসূচিতে তার গান ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মহেশ চন্দ্র রায়ের প্রতিভা শুধুমাত্র কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল না। গান রচনা, সুরারোপ, পরিবেশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক পরিশীলিত অবস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গাওয়া বহু গান অনেকের কণ্ঠে কণ্ঠে ফেরে। প্রয়াত এই শিল্পীর লেখা ও সুর করা গানগুলো গেয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া গানের প্রধান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শরিফা রানী, নাদিরা বেগম, প্রয়াত হরলাল রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়সহ আরো অনেকে। এছাড়া দীর্ঘ সংগীত জীবনে তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী খয়রাত হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী), এমাজ উদ্দিন আহমদ (সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মশিউর রহমান যাদু মিয়া (প্রাক্তন সিনিয়র মন্ত্রী) কবি বন্দে আলী মিঞা, আসাদুজ্জামান নূর (সাবেক সংস্কৃতি-মন্ত্রী), বিশিষ্ট সাংবাদিক মরহুম কামাল লোহানীসহ অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি।

ধীরে বোলাও গাড়িরে গাড়িয়াল, কোন বিদেশি বাবরীয়ালা, ফাক্কাউ করি জিউকোনা মোর, যম শালা হইছে কানারে, আগিনা সান্টোং মুই আগোলে দিগলে কিংবা তিস্তা নদীরে এই কিরে তোর খেলা- এমনি হাজারো ভাওয়াইয়া গানের কিংবদন্তী রচয়িতা মহেশ চন্দ্র রায়ের ৩০ তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২৯ জানুয়ারি। আবার আজ ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। মূলত এ দেশের লোকসংগীতকে দেশ-বিদেশ তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে যে কজন জ্ঞানী-গুণী শিল্পী অবদান রেখে গেছেন তাদের মধ্যে মহেশ চন্দ্র রায় অন্যতম। লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা যেমন- পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী ইত্যাদির ক্ষেত্রে মহেশ চন্দ্র রায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রথা প্রচলন করে গেছেন। সেই প্রচলিত প্রথার রেশ ধরেই এখনও লোকসংগীতের গীত হয়।

কীর্তিমান মহেশচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৩২৫ সালের ১৯ মাঘ (১৯১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি) রাজবংশী ক্ষত্রিয় বংশে। তার জন্ম আমাদের  নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী গ্রামে। বাবা বাবুরাম রায় ও মাতা বিমলা রানী। জন্মের পাঁচ বছর পরেই মহেশ রায়ের মা মারা যান। পিতার আদরে লালিত-পালিত শিশু মহেশকে বাবা গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি করান। তিন বছরের মাথায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে কিশোরীগঞ্জ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১১-১২ বছর বয়সেই তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।

শিক্ষাজীবন শেষ করে যোগ দেন গ্রাম্য যাত্রা সংকীর্তন প্রভৃতির দলে। জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন অল্প দিনেই। এ সময় তার বাবা ছেলের ভবিষ্যত উন্নতির জন্য নীলফামারীর প্রবীণ উকিল সুরথ কুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন শহরে। এই শহরে ঘটনাক্রমে পরিচয় ঘটে ভারতবর্ষ অবতার পত্রিকার লেখক অধ্যাপক তারা প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও লেখক বলাই দেব শর্ম্মার সঙ্গে। তাদের নির্দেশেই পরবর্তীকালে তিনি সংগ্রহ করতে শুরু করেন প্রাচীন পুঁথি। কণ্ঠে ধারণ করতে থাকেন এই গানের অনেকগুলোই।

নীলফামারী শহরে তার পালনকর্তা সুরথ কুমার ঘোষের মৃত্যুর পর মহেশচন্দ্র ছেড়ে দেন শহরবাস। এর মধ্যেই গান গাওয়ার সুবাদে তিনি শিক্ষকতার সুযোগ পান শহর থেকে দূরে জয়চণ্ডী পুটীহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৩৪৪ থেকে ১৩৪৬ সন পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তিনি এ বিদ্যালয়ে। আর সে সময়ই সংগলসী ইউনিয়নের দীঘলডাঙ্গী গ্রামের গগনচন্দ্র রায়ের কন্যা বীণাপাণি রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যান শ্বশুরালয়েই। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি তার স্থায়ী দাম্পত্য জীবন। স্ত্রী বীণাপাণি মৃত্যুবরণ করেন ১৩৪৯ সনে দুটি সন্তান রেখে। ১৩৫০ সনে তিনি বিয়ে করেন কামিনী বালা রায়কে। কয়েক বছর পর চারটি সন্তান রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীরও বিয়োগ ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে মাতৃহীন সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার পর শেষ বয়সে সরলা বালা নামক একজন বিধবাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন।

পাকিস্তান আমলে তিনি রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিমাসে অনিয়মিত শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করতেন। সেখানে কয়েক বছর অতিবাহিত করার পর রংপুর কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন করতেন। আমৃত্যু তিনি রংপুর বেতারের শিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

মহেশচন্দ্র রায় তার দীর্ঘ জীবনে যে গানগুলো সৃষ্টি করেছেন, ধারণ করেছেন, সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের চেষ্টাও চালিয়েছেন নিরন্তর।  বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশ করেছে গানের সংকলন ও জীবনী। এছাড়া ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস বাংলাদেশ বেতার আর্কাইভসে সংরক্ষিত হচ্ছে তার গানের সুর। কথিত আছে যে, মহেশচন্দ্র রায়ের লিখিত গানের সংখ্যা এক হাজারের মতো। কিন্তু গবেষকের তথ্য অনুযায়ী সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ২০০ গান।

১৯৯৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মহেশ চন্দ্র রায় রচিত ‘ধীরে বোলাও গাড়ী’ (প্রথম খণ্ড) নামে একটি গানের বই নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়। ২০০৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে ‘মহেশ চন্দ্র রায়ের গান’ নামে একটি বই বের করা হয়। ২০১০ সালে শিল্পকলা একাডেমি ‘ভাওয়াইয়া শিল্পী মহেশ চন্দ্র রায়ের জীবনী ও গান’ নামে একটি বই প্রকাশ করে।

মহান এই শিল্পী ১৯৯৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ৭৫ বছর বয়সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। শেষ হয়ে যায় একটি অধ্যায়ের। বহুমুখী প্রতিভার এই মানুষটির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য কিছুই করা হয়নি আজও।  না তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে না তার শেষ জীবনের আবাসস্থল নীলফামারী সদরে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার নামটিও জানে না।  আগামী দিনে তাঁর সৃষ্টিকর্ম রক্ষা ও গান চর্চার জন্য নীলফামারীর প্রাণকেন্দ্রে ‘মহেশ চন্দ্র রায় ভাওয়াইয়া একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে উত্তরবঙ্গ তথা ভাওয়াইয়াপ্রেমীদের স্বপ্ন সার্থক হবে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জের উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি তার নামে ‘মহেশ চন্দ্র রায় শিল্পকলা একাডেমি’ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জাতীয় প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমিকেই পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাই। আমার এ দাবির প্রতি তথা মহেশ চন্দ্র রায়ের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবির প্রতি সোচ্চার হবে এ অঞ্চলের আপামর মানুষ এই বিশ্বাস রাখছি।

মহেশ চন্দ্র রায় বিস্মৃতির দিকে ধাবিত এক প্রতিভা

শারমিন আখতার মনি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২০ অপরাহ্ণ

দিনগুলো  ফেলে এসেছি

আমি তখন খুব ছোট। ক্লাস টু তে কিংবা থ্রি তে পড়ি। আর আমার দুই বছরের বড় ভাই শাহীন, সে ছিল পড়া ফাঁকিবাজির  ওস্তাদ। সে প্রায়ই পড়ায় ফাঁকি দেওয়ার জন্য নানা ধরনের অজুহাত দেখাত। আজ জ্বর , কাল মাথাব্যথা এ ধরনের নানান অজুহাতে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে যেত। যা হোক, সে যখন জ্বরের বাহানা দেখাত তখন তার পথ্য হিসেবে মা তাকে প্রায়ই পাউরুটি ও দুধ খেতে দিত। আর আমি ওর পাউরুটি আর দুধ খাওয়া দেখে মনে মনে খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতাম। কিন্তু কী করে খেতে পারব? আমার তো আর জ্বর হয়নি। তাই মা আমাকে ভুল করেও ওর খাবারগুলি খেতে দিতেন না। তাই মনে মনে একদিন ফন্দি করলাম, কী বলে পাউরুটি দুধ খাওয়া যায়। শাহিনের বানানো জ্বর ভালো হওয়ার চার-পাঁচ দিন পর নিজেকে জ্বরের রোগী সাজিয়ে মার কাছে গিয়ে বললাম, ‘মা, আমার না খুব জ্বর হয়েছে’। মা শুনে আঁতকে উঠলেন বললেন, ‘তাই নাকি? তাহলে তো আর রাতে ভাত খাবার দরকার নেই। আমি এখনোই তোমার জন্য কলা পাউরুটি ও দুধ গরম করে নিয়ে আসছি। তুমি রাতে ভাত খাবে না।’

মায়ের কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হলাম। যাক আজকে তাহলে পাউরুটি দুধ খাওয়া হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে আমার পথ্য টা যে হিতে বিপরীত হবে তা ভাবিনি। সেদিন কিন্তু মা রান্না করছিল অন্যরকম কিছু। আমি তো আমার জ্বরের কথা বলেছি বিকেলবেলা। কিন্তু মা সেদিন রাতের রান্না করছে‌ মজাদার আর রসালো সব তরকারি। যা দেখে জিভে পানি এসে যায়। আর আমি মার কাছে জ্বরের রোগী সেজে বসে বসে দেখছি, আর মনে মনে ভাবছি কী জন্য আমি বললাম যে আমার জ্বর হয়েছে। কারণ আমার পথ্য হিসেবে মা তো পাউরুটি দুধ বরাদ্দ করেছে। এর বাইরে তো মা আমাকে এই মজাদার খাবারগুলি খাওয়াবে না। এখন কী আর করি, আর কীভাবে বলি, আমার জ্বর হয়নি।

অনেক ভেবেচিন্তে মার কাছে বলেই ফেললাম, ‘মা আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে’ দেখো আমার একটুও জ্বর নেই।’ এ কথা বলার সাথে সাথে মা বলে উঠলেন, না মা তোমার জ্বর ভালো হলেও আজ রাতে ভাত খাবে না, কারণ ভাত খেলেই আবার ডুকড়ে জ্বর আসবে। অগত্যা কী আর করা, জ্বর না আসলেও জ্বরের রোগী সেজে সেদিনের মতো দুধ পাউরুটি খেতে বাধ্য হলাম। যদিও বা লোভের বশবর্তী হয়ে রোগী সেজেছিলাম। ভাইয়ের সাথে খুনসুটি করার জন্য এমন জ্বরের অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু মজাদার খাবারগুলি না খাওয়ার দুঃখটাকে সারা রাত ধরে ঘুম না আসা পর্যন্ত ভুলতে পারিনি। তবে সেদিনই পণ করেছি, আর কখনো মার কাছে মিথ্যে কথা বলব না। কারণ যদি আমি সেদিন মিথ্যের আশ্রয় না নিতাম তাহলে হয়তো মজাদার খাবারগুলো থেকে মা আমাকে বঞ্চিত করতেন না। পরিবারের অন্য সদস্য সহ ভাইবোনদের সাথে মিলেমিশে একসাথে খেতে পারতাম।

মিথ্যে মানুষকে শুধু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় আর সত্য চিরন্তই সত্য, সুন্দর হয়ে থাকে। সত্য কথা বলার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ লুকিয়ে থাকে, যা মিথ্যের মাঝে পাওয়া যায় না।

আজ আমি বড় হয়েছি, শিখেছি অনেক কিছুই। হয়তোবা ভুলে গেছি অনেককিছু, কিন্তু ছেলেবেলার পাউরুটি দুধ খাওয়ার স্মৃতিটাকে আজও ভুলতে পারিনি। যা আজও মনে পড়লে আপন মনে হেসে ফেলি। আর বলি মার মনটা কত নরম, আমার মিথ্যে বলার দুষ্টুমিটা ধরতে পারেনি । আসলে মায়েরা বুঝি এমনই হয়।

স্মৃতিকথা - দিনগুলো  ফেলে এসেছি

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০৮ অপরাহ্ণ

বাদল রহমান এর কয়েকটি কবিতা

 ১. ডোগা 

কোনো এক কালে

কোনো এক ভাবুক কুমার

তার কল্পিত নারীর বুকের 

অমৃত সুধার কথা ভাবতে ভাবতে  

নির্মাণ করেন আমায়।

পদ্যকারেরা পদ্য-পয়ারে ভজেন –

আমি সুঠাম নারী কামনাহারের লীলা দুধসাগরের ঢেউ

হাতের তালুতে তুলে নেয়া – দুই পাহাড়ের চূড়া। 

আবার তারা অন্ত্যমিলে ছন্দ কেটে বলেন –

আমি

উষ্ণতা ছড়ানো জাদুর ভাণ্ড

কোমলতা ধরানো ক্ষীরের বাটি

শিহরণ জাগানো ঘনো ননীর আধার।

আমি চাষা-ভূষাদের নজরকাড়া সুখ।

গাঁও-গ্রামের প্রান্তিক বধূরা আমায় ভালোবেসে সযত্ন করে 

শিকেয় তুলে রাখেন। 

আমি কল্পনার আল্পনাময় স্তনরূপী 

লালচে চিটে মাটির ডোগা।

২. বাসনা 

আমি 

কুমারপাড়ার তরুণ নগেনেশ্বরপালের 

হাতে গড়া বরেন্দ্রমাটির বাঙালি বাসনা

বিশুদ্ধ জল 

পেটে ধরে রাখি

রোদঝরা দিনের ছাতিফাঁটা  দুপুরে 

আমার পেটে ধরা জল 

পান করিও 

পান করে 

শীতল করিও পরান

আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে 

খাঁটি বাঙাল হইও

খাঁটি ঘটি হইও 

৩. কলসি 

আমি

খাঁটি লাল চিটকে মাটির খাঁটি কলসি।

বাংলার বাংলাগানে আছে — 

কে যাও গো –

কলসি কাঁকে,

সখী সনে জল আনিতে ; পুকুরঘাটে..

অঙ্গনার কাঁকই আমার সংসার, 

কাঁঁকই আমার প্রেম ; 

কাঁকই আমার সম্বন্ধ আধার। 

আবার, ললনাবতীর ছলনা গানে

পূর্ণাঙ্গ নবযৌবনা ভালোবাসার পূুর্ণ যৌবনে বলে — 

পরানের কলসি রে, তুই যে মোর কৃষ্ণলীলা, তোরে লয়ে যাবো যমুনা ; তোরে লয়ে খেলবো খেলা স্রোতমত্ত জলে।  

আমি কলসি – কাঁকবরেণ্য  মাটির শিল্প। 

৪. ঘটি 

আমি

খাঁটি মাটির

এ দেশি খাঁটি ঘটি

ঘটিরা এক হও, এক হও। 

মানুষ –

মাটিকে ভালোবাসো, মাটিকে কাছে টেনে নাও ; মাটির ভালোবাসা সর্বত্র বিলাও। 

৫. ঘড়া

মাটির ঘড়া-

তুমি যদি হও বাসনার মেঘ

ঝরে পড়ো দেখি আমার বুকে।

মাটির ঘড়া-

বৃষ্টি পড়ে, পাতা নড়ে ; বন-বাদাড়ে।

দেহে দেহে ঘর্ষণে, 

দেহদ্বয়ের বত্রিশ নাড়ীর রক্তমেঘে 

হঠাৎ চমকায় বিদ্যুৎ । 

বুকে বুকের সংগম, শীতল জলবীজের তরঙ্গ, উষ্ণতার তাপ কী অদ্ভুত ; শিহরণে ! 

জাদুর ঘড়া ছত্রিশ গড়ে , 

ঘড়ার দেহ প্রথম নজর কাড়া ধন , 

অমৃত ঘাম অঝোরে ঝরে ;

ঘামের স্রোতে উদাস কুমারের জগৎ প্লাবন। 

হায়! সময়ের ব্যবধানে, পালবংশীয়রা আর-

মাটির প্রেম, মাটির ভালোবাসা; 

ভালোবাসতে বাসতে পুড়ে না আগুনে।

বাদল রহমান এর কয়েকটি কবিতা

আহমেদ অরণ্য

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০৮ অপরাহ্ণ

আহমেদ অরণ্য এর কয়েকটি কবিতা

এবং ছায়া-কথা

ছায়ার গল্পে আমি সুখী উচ্চারণ। তথা, তুমি লুকায়িত কথা। সাধক এবং ছায়া কথা!

২.

পুরোনো ব্যথার মতো 

মাঝে-মাঝে পুরোনো ব্যথা, চিনচিন করে ওঠা-ভালো। তোমার মুখ মনে পড়ে। আর ছিটকে পড়ে বর্তমান এবং ফর্মালিনযুক্ত আপেল!

. ..

তোমার হয়তো বালাশির কথা মনে আছে, মনে আছে কি?

—কথা ছিল, শুধু পাশাপাশি বসে থাকব। হাত, কিংবা ঠোঁটের খুব কাছে দিয়েও হাঁটব না—আমরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমরা নৌকায় ছিলাম। জলের উপর। নির্জন রঙের জল আর আফিম মেশানো—বিকেলে—যেন—প্রেমের সিম্ফনি। .  ..  আহা প্রেম!

. ..

কিন্তু আমার যে—মাছের জীবন প্রিয়? 

সারাদিন—জলে সাঁতরায়, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ডেটিংয়ে যায়, আর জীবনের পাঠ শিখিয়ে—সঙ্গম শেষে, ভুলে যায় অতীত!

আর, তুমিতো পুরোনো ব্যথার মতো চিন চিন করে ওঠো—আইরিন!

৩.

মৃত্যু এবং একটি বিশ্রী কবিতা

স্বপ্ন জলসায়, মৃত্যুকে—বোকা দেখায় ভেবে—শুকনো পাতার গহীনে আর উপকরণ খুঁজি না। 

নতুন পাঠ্য বই—আর সংবিধানের গল্পে—

তোমরা আপেলকে সুন্দরী বলো—শুনে, মুক্তমনা হয়ে উঠি। এবং মুচকি হেসে তোমাদের ভুলে যাই!

২.

বিনিময় বিশেষণে শুধু কয়লা পাওয়া যায়। সাথে,

সাঁতারহীন মাছ, রাবার বিশেষ মন, আর উলঙ্গ আয়নায়, বিশ্রি একটি কবিতা।

তারপর—পথে, কুকুরটির ব্যাস্ত সময় কাটে ইতিহাস রচনায়!

আহমেদ অরণ্য এর কয়েকটি কবিতা

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০৮ অপরাহ্ণ

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে; এ জীবন পুণ্য করো

তাপের সমতা চাই প্রতাপী সূর্যের কাছে আজ;

রক্তের সমতা চাই বুদ্ধিদাতা মস্তিষ্কের কাছে।

আগুন পরশমণি কে বুলাবে ক্রিসমাস দিনে?

তারই সাথে দেখা হোক অজস্র মানবস্রোতে মিলে,

আজকের এই পুণ্য ক্ষণে।

মানুষকে কোনো একটা খেলা খেলতেই হয়!

কতটা আম খেতে পারে একজন, 

কতটা কাঁঠাল-কোয়া, তারও আছে কম্পিটিশন।

খেলা আছে হাই-ডিগ্রি ভোল্টেজ আলোয়;

খেলা আছে নীল নীল মৃদু ঝিলমিল;

খেলা আছে মিতালির ও শত্রুতার; তিক্ততার ও মিত্রতার; 

টেবিলের ওপর তাসের; নিচের ত্রাসের;

রক্তচোখের কিংবা আর্দ্র চোখের; 

উঁচু নাক ও চ্যাপ্টা নাকের।

এমন খেলা কি আছে–একপক্ষ জার্সিওয়ালা, বুটওয়ালা, —  প্রতিপক্ষ নগ্নদেহে নগ্ন পায়ে?

এমনও কি খেলা আছে, কাপ আছে, ট্রফি আছে–

গোল্ডেন গ্লাভস্ আছে, ব্যালন ডিঅর আছে 

ফিফার অধীন–

যেখানে একটা পক্ষ প্রশিক্ষণে পক্ক কঠিন;

অথচ অপর পক্ষ অর্থাভাবে পায় নাই কোচ?

জার্সি নেই বুট নেই; শরীরে প্রোটিন নেই?

বিচিত্র এ বিশ্বমাঝে সব-ই আছে।

আম আছে জাম আছে নাম আছে।

গ্রাম আছে নদী আছে জল আছে।

শুধুই নদীর জল পান করে বেঁচে-থাকা 

তুমুল সাঁতারু আছে, খেলোয়াড় আছে;

মনোবল সম্বল করে জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ মেডাল।

মেডাল দু’হাতে তুলে আকাশকে উপহাস করে!

ড্রিবলিং প্রাকটিস করে এই দল বুকের ভেতর,

বল আর ব্লাডার যেইখানে সারাদিন চালায় হাপর।

ওদিকে টিকেট নেই ফ্লাইটের;

পকেট গড়ের মাঠ!

অন্তঃসারশূন্য এই কংকর নগর;

হৃদপিণ্ডশূন্য এই আশ্চর্য শহর–

যেখানে হৃদয় সস্তা, শ্রম সস্তা, মেধাও কখনও 

সস্তা দরে বিক্রি হলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই!

হ্যারিকেন তলে, দূরে, বহুদূরে আজও হাসি 

হেসে চলে কৃষিমাতা — প্রসন্ন ভরাট!

লক্ষ্মীর আঁচলে আজও চাল ছাড়া আর কিছু নেই।

তাপের সমতা চাই প্রতাপী সূর্যের কাছে আজ;

রক্তের সমতা চাই বুদ্ধিদাতা মস্তিষ্কের কাছে।

আগুন-পরশমণি কে বুলাবে ক্রিসমাস দিনে?

তারই সাথে দেখা হোক অজস্র মানবস্রোতে মিলে,

আজকের এই পুণ্য ক্ষণে।

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে; এ জীবন পুণ্য করো

সোহানুর রহমান শাহীন

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০৮ অপরাহ্ণ

ইচ্ছের ক্রীতদাস

হাই হাফিজ

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০৭ অপরাহ্ণ

আবার হেসে উঠবে পৃথিবী

দেখো, একদিন পৃথিবী ঠিক শান্ত হয়ে যাবে,

আকাশের নীলে মিশে হাসবে, খেলবে,

আনন্দ উল্লাস করবে আবার এ পৃথিবী।

মন খারাপ করে থাকবে না বেশি দিন।

পৃথিবীর মানুষগুলো

ঠিক মানুষ হয়ে উঠবে আবার,

স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হবে মনুষ্যত্ববোধ।

জয় হবে মানবতার, মানব সভ্যতার।

থাকবে না কোনো অমানবিকতা,

অনাচার, অনিয়ম, অসভ্যতা।

থাকবে না কোনো

সৌহার্দ-সম্প্রীতির দেয়াল।

সাগর-মহাসাগরে

নাচবে খেলবে উত্তাল নির্মল ঢেউ।

সবুজে সবুজে আবার হেসে উঠবে প্রকৃতি।

চঞ্চল ঝর্ণাধারার ছন্দোময় নৃত্যের তালে

নাচবে সুউচ্চ পাহাড়, গাইবে পাখ-পাখালি।

সুন্দর এ পৃথিবী দেখে আনন্দে খুশিতে

আড়ালে মুচকি হাসবে বিধাতা।

শক্তি পরাশক্তি থাকবে না কোনো দম্ভ।

দেশ মহাদেশ থাকবে না কোনো বিভাজন।

থাকবে শুধু মানুষ, থাকবে মনুষ্যত্ববোধ,

শুধুই একপৃথিবী মানবতা।

আবার হেসে উঠবে পৃথিবী

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০১ অপরাহ্ণ

আমি কার পথ অনুসরণ করছি!

যতটুকু জানলাম-

সবকিছু দেখতে নেই, জানতেও নেই আগ বাড়িয়ে 

যেমন চলছি বা যেমন চলছে চলুক

আমি উল্লুক, তাই অমনই থেকে যাই আরো কিছুদিন

কিছুদিন, মানে কেয়ামতের আগে আরও একটা কেয়ামত না হওয়া অবধি।

দজ্জাল বের হয়েছে বেশ আগে, এখন শুধু…

সিংগায় ফু দেয়া মাত্র এক শ্রেণির মানুষ 

মৃত্যু ভয়ে ভীত না হয়ে উল্লাস করবে আমার বিরুদ্ধে

তরবারি হাতে ছুটে আসবে কতল করার প্রত‍্যয়ে

আমার তখন আর কোন কিছু জেনে লাভ হবে না

তখন নাকি সবাই ইয়া নফসি ইয়া নফসি করে

মাতম তুলবে।

অতপর শিকল পরিহিত আমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে-

আমি কার পথ অনুসরণ করেছি?

আমি কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবো

আমাকে ক্ষমা করো হে প্রিয় স্বদেশ!

আমি কার পথ অনুসরণ করছি!

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০১ অপরাহ্ণ

সোমের কৌমুদী

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০০ অপরাহ্ণ

নৌকার পাটাতনে ঘুমায় প্রহর – সোমের কৌমুদী

ভরা যুবতী নদীর বুকে ছলাৎ ছলাৎ জল

শুদ্ধ করে তোলে দু’তীরের সবুজকে

সবুজকে করে তোলে আরো সবুজ, করে তোলে প্রাণবন্ত।

দিগন্তহীন নীল আকাশ নিজেকে হারায় নদীর জলে।

নদীর বুকের ছলাৎ ছলাৎ জলে

সদ্য নির্মিত রঙিন পালতোলা নৌকা এগিয়ে চলে

পাটাতনে ঘুমন্ত কাশফুল সকাল

রঙিন পালের ছেঁড়া খোপ স্নিগ্ধ সকালকে বিমর্ষ করে তোলে। 

নৌকা ছুটে চলে প্রহরের পর প্রহর পেরিয়ে

গ্রামের পর গ্রাম পাটাতনে খুঁজে নেয় আশ্রয়

মহাকালের মত দীর্ঘ দুপুর শেষে একটা সোনালি বিকাল

হেলে পড়ে পাটাতনে, বিমর্ষ সকালের মাঝে নিজেকে লুটায়।

প্রহরের শেষে প্রহর আসে, শেষ হয় অষ্টপ্রহর

নৌকা ছুটে চলে, এগিয়ে যায় সামন থেকে আরো সামনে

সোনালী বিকাল ফের মিলে স্বচ্ছ শুভ্র প্রাতে

তবু রাত আসে না, আঁধার ভেড়ে না নৌকার পাটাতনে।

নৌকার পাটাতনে ঘুমায় প্রহর - সোমের কৌমুদী

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০০ অপরাহ্ণ

ভগিনী 

আঠারোশো আশি সালের

নয়-ই ডিসেম্বর

পিতা তাহার জহির উদ্দীন

আবু আলী হায়দার।

মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী 

অন্ধকারে আলো দিতে 

জন্মালো জানি।

সভ্যতার শৃঙ্খল ভাঙতে 

হয়তো এলেন তিনি

সবার মুখ করতে উজ্জ্বল 

আসলেন যিনি 

চার দেয়ালে বন্দি সমাজের

দিয়ে ছিলেন মুক্তি 

তিনিই নারী জাগরণের অগ্রদূত

খণ্ডাতেন  শত যুক্তি।

নারীদের শিক্ষা পথের অগ্রসর

নারী সমাজে কাণ্ডারি 

তিনি অন্ধকারে পিদিম

তিনিই আলোর দিশারী। 

ভয় করে জয়

জাগো গো ভগিনী 

আহা কি বিশ্বয় প্রতিবাদ 

জাগো জাগো নারী সমাজ

ডাক দিয়েছিলো বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। 

এই দিনে মৃত্যু তার 

এই দিনে জন্ম

তিনিই মহীয়সী 

জানুক প্রজন্ম।

ভগিনী - সরকার বাবলু

রবীন জাকারিয়া

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:০০ অপরাহ্ণ

মুগ্ধতা.কম

২৬ মার্চ, ২০২২ , ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মহান স্বাধীনতা দিবস: বিশেষ ছড়া সংখ্যা

মুগ্ধতা ডট কমের পক্ষ থেকে একটি ছড়া সংখ্যা প্রকাশের কথা ছিল আরও আগে। বিভিন্ন কারণে হয়ে ওঠেনি। স্বাধীনতা দিবসের এই আনন্দক্ষণে আমরা চেষ্টা করলাম ছোট্ট একটি ছড়া সংখ্যা প্রকাশ করতে। এছাড়াও আগামীতে অঞ্চলভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা করবার ইচ্ছা রইল। এবারের সংখ্যাটিতে রংপুরের প্রয়াত তিন খ্যাতিমান ছড়াকারের ছড়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। 

উপদেষ্টা সম্পাদক: ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক: মজনুর রহমান 

নির্বাহী সম্পাদক: রেদওয়ান শুভ 

বিশেষ সংখ্যা সম্পাদক: আহমেদ অরণ্য 

মহান স্বাধীনতা দিবস বিশেষ ছড়া সংখ্যা