মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১০:৩৮ অপরাহ্ণ

উপদেষ্টা সম্পাদকের শুভেচ্ছা:

আমাদের শুরুটা ছিলো সমকালীন অনলাইন ম্যাগাজিনগুলোকে অন্ধভাবে নকল না করে নিজেদের মতো করে কিছু করা। ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশে রংপুরের মতো এক মফস্বল শহরে তা করা যে কঠিন, সে আমরা টের পেয়েছি পদে-পদে। ম্যাগাজিন চালাতেও লাগে প্রণোদনা, রংপুরে থেকে যেটা পাওয়া কষ্টের। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টায় মুগ্ধতা ডটকম চালিয়ে নিতে।

মুগ্ধতা ডটকম সবসময় চেয়েছে সমকালীন বিষয়গুলো নিয়ে লিখে মানুষকে সচেতন করতে। মানসম্মত লেখা পাওয়াটাও একটা কঠিন বিষয়। লেখা জোগাড় করা, সেগুলো গুছিয়ে প্রকাশ করাও কষ্টসাধ্য কাজ বটে। মুগ্ধতা টিমের সম্পাদকমণ্ডলী তা করে আসছে হাসিমুখে। বর্তমানে ফেসবুক তাদের রিচ কমিয়ে দেওয়ায় আমাদের অনেক লেখাই মানুষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তারপরও আমাদের ভিউ এখন পর্যন্ত গর্ব করার মতো। মাত্র তিন বছর পেরিয়ে আসা মুগ্ধতা ডট কম এখনও শিশু। আর আমরা সবাই জানি শিশুর জন্য প্রয়োজন পরিচর্যা। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি একদিন ঠিক মুগ্ধতা ডট কম পৌঁছে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত জায়গায়, যেখানে সে পৌঁছাতে চায় সকলের ভালোবাসা নিয়ে।

বর্ষপূর্তিতে সকল পাঠক,লেখক ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণকে জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা। ভালো থাকুন, মুগ্ধতাকে পাশে রাখুন।

উপদেষ্টা সম্পাদকের শুভেচ্ছা

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২৮ অপরাহ্ণ

সেরা লেখক ও রক্তদাতা সম্মাননা:

আমাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুগ্ধতার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আমরা ঘোষণা করছি তিনজন সেরা লেখক ও একজন সেরা রক্তদাতার তথ্য প্রদানকারীর নাম। লেখদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে এক বছরে গুগল থেকে প্রাপ্ত প্রকৃত ভিউয়ের ভিত্তিতে।

সেরা তিন লেখক ও লেখা:

১. প্রিয় বন্ধু রকিব আর ফিরবে না আড্ডায় – আসহাদুজ্জামান মিলন

২. পরকীয়া  – রবীন জাকারিয়া

৩. প্রযত্নে নীলা – ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

এছাড়া ‘মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংক’-এ সর্বোচ্চ সংখ্যক রক্তদাতার তথ্য প্রদান করায় বিশেষ সম্মাননা পাবেন মুস্তাফিজ রহমান।

সম্মানিত লেখকগণকে সময়মতো তাঁদের সম্মাননা উপহার ও সনদ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সেরা লেখক ও রক্তদাতা সম্মাননা

প্রমথ রায়

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

পতন খুঁজছি 

পদ্মপুকুরে মধ্য দুপুর। পদ্ম আমার প্রিয় ফুল। হিরারও। সাত বছর আগে হিরাকে ছেড়ে এসেছি। হিরার হাতে একমুঠো ঘাসফুল ছিলো। তার শুকনো ডগাগুলো এখনো ডায়েরির ভাঁজে যত্ন করে রেখেছি। সপ্তম প্রহরে আমার বহর থেমেছে আকাশলীনায়। ‘আকাশলীনা’ আমার মেসের নাম। আমার মেসে রয়েছে একটি ছোট্ট উঠোন। সেই উঠোনে রয়েছে একটি বকুল গাছ। এই বকুল তলায় আমি নষ্ট দুপুরে অনেক কবিতা লিখেছি। আবার ছিঁড়েও ফেলেছি। সাদা কাগজের টুকরোগুলো সকালের শিশিরে সিক্ত বকুলফুলের মতো লাগত। তারই কিছু টুকরো দখিনের চৌবাচ্চায় কাগজের নৌকার মতো ভাসিয়ে দিতাম। চৌবাচ্চাকে তখন পদ্মপুকুরের মতো মনে হতো। হিরার কথা মনে পড়ত। কেঁদে ফেলতাম। বছর দুয়েক হলো হিরা নাকি আত্মহত্যা করে মারা গেছে। কোনো এক অজানা সন্ধ্যাবেলায় সে নাকি ধর্ষিত হয়েছিল। নিজের আত্মসম্মান রোধ করতে না পেরে আত্মহননের পথে হেঁটেছে। আমি এখনও হিরার আত্মার সাথে কথা বলি। সে আমার পাশে এসে বসে। আমাকে বলে, সেও এ শহরে থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই। সে বলে, ‘কাল ডিসির মোড়ে আসিও, অপেক্ষায় থাকব।’

এ জীবন বড় দুর্বিষহ। জীবনে কখনো রং মাখলাম না। কত দুপুর কাটিয়েছি দুটো শিঙারা খেয়ে। আজও সেসব দুপুরের পুনরাবৃত্তি। চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। পৃথিবী ধূসর বর্ণের মনে হয়। কবে যেন বনলতা আমার চোখে এসেছিল। আমি মুখে একটি ডার্বি লাগিয়ে ডিসির মোড়ের দিকে হাঁটতে লাগলাম। চোখের সামনে অনেক বিরহের গল্প, তবু মুখে সুখটান। আলোর নিশানার মতো একটি সাদা গাড়ি চলে গেল।  গাড়ির ভেতরের একটি সাদা মেয়ে কয়েকটি পদ্মফুল রেখে গেল। না, সে হিরা নয়। শুধু চোখগুলো হিরার মতো। আমি সীমানা ছেড়ে অসীমতার দিকে চেয়ে রইলাম। এভাবে চারদিন কেটে গেল। চারদিনে চারটি মেয়ে কয়েকটি পদ্মফুল রেখে গেল।

পঞ্চম দিনে ঘটে গেল এক ভয়ানক ঘটনা। আমি চোখের সামনে তারা দেখলাম। সাদা তারা। স্যাঁতস্যাঁতে জীবন। তারও। সমস্ত শরীর রক্তে ভেজা। রক্ত শুকিয়ে গেছে। শুকনো রক্ত ইতিহাস হয়। আমার আপন ইতিহাস। যেদিন আমি মারা যাব। তার মতো। দুটো ঝুলন্ত লাশ। প্রেমিক-প্রেমিকার। প্রেমিকা ধর্ষিত হয়েছে; প্রেমিক নির্যাতিত। অবশেষে দুজনের লাশ।

অপেক্ষায় রয়েছি পঞ্চম মেয়েটির। ঠোঁটে আমার জ্বলন্ত সিগারেট। আজ জীবন কেন জানি বিলাসবহুল মনে হচ্ছে। সতেরো দিন পর এক টুকরো মাংস খেতে পেরেছি। সাঁই করে একটি লাল গাড়ি চলে গেল। ভেতর থেকে একটি লাশ ফেলে দিয়ে গেল। হিরার নয়। মিরান্ডার। মিরান্ডাকে আমি এ শহরে ভালোবেসেছি। কফি হাউজে সে একদিন আমাকে কফি পান করিয়েছে। আমি তার জন্য কবিতা লিখেছিলাম। কবিতা তার প্রিয় নয়। তার প্রিয় চন্দ্রিমা রাতে বেহালার সুর। তার পাশের বাসায় আমি থাকতাম। আমার বন্ধু তেরানের বাসায়। মন খারাপের দিনে আমি ছাদে বসে বেহালা বাজাতাম। মিরান্ডাও তাদের ছাদে আসত। বেহালার সুর শুনত। গোপনে চোখের জল মুছত। তার চোখে আমি পদ্মফুল দেখি। তাকে ভালোবেসে ফেলি। সেও।  সে নাকি তেরানের পুরনো প্রেমিকা। তেরান এক অদ্ভুত চরিত্র। গোপনে গোপন লীলা।

সে আমাকে ষষ্ঠ দিনে মৌবনে বিরানি খাওয়াল। হাতে দিলো এক বিষপত্র। যাতে লেখা, আমি আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হেফাজতে যাচ্ছি। আমার বুকে লিখিত হয়েছে, আমি মিরান্ডার দাগী খুনি।

পতন খুঁজছি

কামরুন নাহার রেনু

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

লাশ

বাজান গো মাইয়াডারে এমনিতেই অনেক কষ্ট দিয়া মারছে ডিমান্ডের টাহা দিতে পারি নাই বইলা। আর কষ্ট দিয়েন না, পঁইচা যাইতাছে। মাইয়াডার মাও ছোড বেলায় ছাইড়া গেছে। কুকুর বিড়ালের লাহান সবার লাথ্থী উসঠা খাইয়া বড় অইছে। শেষ মেষ বিয়া দিয়া জমের দুয়ারে পাঠাইয়া দিলাম।

কথাগুলো ওসি সাহেবের কাছে হাত জোড় করে মেঝেতে বসে আকুতির সুরে বলতে থাকে নিজামউদ্দিন। তার কথায় কর্ণপাত না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ওসি সাহেব। এক কনস্টেবল নিজামউদ্দিনের কানে কানে বলে, মাইয়ার লাশ নিবা টাকা ছাড়া?   বাতাসের ঝাপটায় পঁচা লাশের গন্ধ এসে লাগে নাকে, কী যেন বলতে যেয়ে থেমে যায় নিজামউদ্দিন, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মেয়ের লাশের দিকে

লাশ

মুগ্ধতা.কম

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২২ অপরাহ্ণ

ভিন্ন ঠিকানা

কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন

গাছতলা কিংবা টিনসেড বাসা

কোনটাই খুঁজে পাওয়া গেল না।

গেল না বললে ভুল হবে। এলোমেলো হাঁটছিলাম সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ প্যারোট’স বিক আবাসিকের বৈদ্যুতিক খুঁটির গায়ে একটি টিনশেড বাসার নম্বর চোখে পড়ল।

নম্বরটি মুঠোফোনে তুলতে গিয়ে দেখি ফোন চার্জশূন্য। খাতা-কলম কিচ্ছুটি নেই সঙ্গে। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নম্বরটি মুখস্থ  করে নিলাম।

নিজের মুখস্থ-ক্ষমতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস আমার শূন্যের কোঠায়। উচ্চমাধ্যমিকে আমার রোল ছিল ৬৩৬, পরীক্ষার খাতায় বরাবরই লিখতাম ৩৬৩। এ নিয়ে বহুবার কঠিন কথা শুনেছি স্যারদের থেকে। কোনো কোনো স্যার কাছে ডেকে বলতেন, নিজের রোল কেউ ভুল করে? কী এত ভাবো বলতো? আর ভুল করবে না, ঠিক আছে?

দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে পেস্টের পরিবর্তে ফেইসওয়াশ কিংবা নখ পরিস্কার করবার ব্রাশ মুখে নেওয়ার ঘটনাতো এ জীবনে কম নয়। সেখানে ১১ ডিজিটের একটি ফোন নম্বর মুখস্থ করা আমার জন্য বেশ কঠিন। মনে মনে নম্বরটি আওড়াতে আওড়াতে বাসায় ঢুকলাম। ফোনটাকে চার্জে দিয়ে অন মাত্রই আপনার ফোন, আমি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানালাম, আমি টিনশেড বাসা খুঁজে পেয়েছি। আপনি নম্রস্বরে বললেন, ভালো। কথা বলেছেন?

বললাম, না, নম্বর মুখস্থ আছে একটু পরই কথা বলব। আপনি অবাক হয়ে বললেন, আপনি নম্বর মুখস্থ করেছেন? আমার ফোন নম্বরটা কি মনে আছে আপনার? মনে ছিল কখনো? 

অপরাধী কণ্ঠে জবাব দিলাম, আমার নিজের ফোন নম্বরইতো মনে নেই,  আসলে…

থাক আর আসলে আসলে করতে হবে না, ওই নম্বরে কল করে খোঁজ নিন, আর আগামীকাল সময় করে বাসাটি দেখে আসবেন। আমি রাখছি এখন।

বিপত্তি ঘটল মুখস্থ নম্বর ফোনে টাইপ করতে গিয়ে। নয়টা ডিজিট মনে থাকলেও বাকি দুটো ভুলে গেছি একেবারেই। কোনোভাবেই আর সে রাতে মনে করতে পারলাম না। পরদিন সন্ধ্যায় একই জায়গায় গিয়ে নম্বর তুললাম, কল করলাম। কথায় কথায় বাসাওয়ালা জানালেন, তিনি আমাকে চেনেন। আমার যাবতীয় কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন, আপা কী যে সব বলছেন, আপনার জন্য কী এই টিনের বাড়ি? আপনি বরং একদিন বেড়াতে আসুন। আর টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ যেহেতু আপনার এত পছন্দ, সেক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে সময় পেলেই আপনি  চলে আসবেন। যত্নের অভাব হবে না এ গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।

বাকি থাকল বৃষ্টিগাছ, সে ও খুঁজেছি শহরের অলিতে গলিতে। এত বড় শহর একটি বৃষ্টিগাছের অভাবে যেন অপূর্ণ। আমি হাল ছাড়ার মানুষতো নই। 

খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেলাম ভৈরব নদীর পাড়ে। সেখানে ডালপালা ছড়িয়ে বাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে একটি বৃষ্টিগাছ। গাছের গোড়া ইট সিমেন্টে বৃত্তের মতো বাঁধানো। সেখানে কত মানুষের আনাগোনা। কেউ বসে বিশ্রাম করছে, কেউ বিড়ি ফুঁকছে, কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ-কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছে। কিছু ছিন্নমূল শিশু পাতা কুড়োচ্ছে। অনেক মানুষের ভীড়ে আমি যেন ভীষণ একা। ফোন হাতে নিয়ে কতবার আপনাকে কল করতে চেয়েছি, পারিনি, আপনি ব্যস্ত মানুষ, চাকরি, পরিবার। আমি স্থান ত্যাগ করলাম। যে গাছ সবার জন্য সে গাছ অন্তত আমার জন্য নয়।

চলে গেলাম আপনার পছন্দ করে রাখা সেই তিনতলা বাসাটিতে। মালিকের সাথে কথা বলে অ্যাডভান্স করলাম। কল করে তা জানালাম আপনাকে। আপনি আকাশ থেকে পড়লেন, মানে? আপনার সেই টিনশেড বাসার খবর কী? আর বৃষ্টিগাছ? গাধারা জল খায় ঠিকই কিন্তু ঘোলা করে খায় এটা আবারও প্রমাণিত।

আমি বললাম দেখুন, আপনার পছন্দকে প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে যদি আজ আমাকে গাধা হতে হয় তবে আমি গাধাই। আপনি হাসলেন, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন বোঝা গেল। আমাকে নিয়ে এত চিন্তা অথচ কখনোই তা বুঝতে দিতে চান না, কেন বলুনতো? 

মাস শেষ হওয়ার আরও তিনদিন বাকি, বাসাওয়ালা ঘুম থেকে ডেকে তুলে সেদিনের মধ্যে ঘর ছাড়তে বললেন। যে কোনো বিপদ মানেই আমার শেষ ভরসা আপনি? আমি কি এতটাই পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি যে বিকেলবেলা কোথায় ঘুরতে যাব, রাতে কী খাব, সকালে কোন পোষাক পরব সবটা আপনার কাছে শুনতে হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই আপনি কল করলেন। বললাম আজকেই বাসা চেঞ্জ করতে হবে, আমি কীভাবে এতটা গুছাব? আপনার কি একটু সময় হবে? আপনি লাইন কেটে টেক্সট করলেন, এই কথাটা কি বলতেই হতো?

কিছুক্ষণ পর আপনি এসে হাজির। প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এলেন তিনটি। আমার যত জামাকাপড় আর রান্নাবান্নার টুকিটাকি জিনিসপত্র তা কোনোভাবেই তিন বস্তার মধ্যে প্রবেশ করানো গেল না। আপনি বাসায় যাবার কথা বলে রিকশায় উঠলেন। একটু পর কল করে মোড়ে আসতে বললেন, আমরা একই সময়ে মোড়ে পৌঁছলাম। আপনি মুচকি হেসে আমার হাতে আরো দুটো বস্তা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন।

বাসায় ফিরে বাকি প্যাকেজিং সম্পন্ন করলাম।

সন্ধ্যায় তিনটি ভ্যান নিয়ে বাসার সামনে হাজির হলেন রাকেশ ভাই । বাসা পরিবর্তনের কাজে তিনি সিদ্ধহস্ত। এক ঘন্টার মধ্যেই তিন ভ্যানে তিনি সকল জিনিসপত্র সেট করে ফেললেন। হঠাৎই সন্ধ্যার আবছা আলোতে আপনাকে আবিষ্কার করলাম।

আরে আপনি? কী দরকার ছিলো আসার। আমি পারতাম তো।

কী পারতেন আমি জানি, সব নামানো হয়েছে? 

দেখে নিন আর একবার। 

বছর দুয়েক ধরে যে রুমে ছিলাম সে রুমটার জন্য খারাপ লাগছে। কেমন যেন মায়া কাজ করছে। আমি এমন কেন? এত সহজ কেন? কেন এত সহজে মানুষকে ভালোবেসে ফেলি? শুধুই কি পৃথিবী সমান কষ্ট পাবার জন্য? ইট-সিমেন্টে গাঁথা এই রুমটার প্রতিও এত ভালোবাসা আমার, আগে কি বুঝেছি কোনোদিন? আমার কান্না পাচ্ছিল। আপনি বুঝতে পেরে আমার হাত চেপে ধরলেন। ভ্যানওয়ালাকে সামনে যাওয়ার তাগিদ দিলেন।

আমরা হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম নতুন বাসায়। আপনি দাঁড়িয়ে থেকে সবটা তদারকি করলেন। 

সব জিনিসপত্র রুমে সেটিং করা শেষ হলে আপনি বিদায় নিলেন।

না গাছতলা, না টিনশেড বাসা, না আপনার স্টোর রুম কোথাও জায়গা হলো না আমার। একটু জায়গার যেন বড়ই অভাব এই পৃথিবীতে। আমি হয়তো ভুল করে এসেছিলাম এই গ্রহে। যখন যা চেয়েছি তাই শূন্য হয়ে গিয়েছে। যাকে আঁকড়ে বাঁচতে চাই সেই চলে যায় দূরে বহুদূরে । 

আর তাই হয়তো একই আকাশের নিচে থেকেও আমাদের ঠিকানা আজ ভিন্ন।

ভিন্ন ঠিকানা