ভ্রমন-গল্প

ভ্রমন-গল্প

মুগ্ধতা.কম

১ মে, ২০২৩ , ৯:০৬ অপরাহ্ণ

অ্যা জার্নি বাই ট্রেইন

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ট্রেনে করে লং জার্নি করা। অবশেষে এবার ঈদের পর তা হলো। বদরগঞ্জ টু সান্তাহার। সান্তাহার থেকে বগুড়া তারপর রংপুর। যাওয়ার সময় কমবেশি ১৯৭ কি.মি। আর ফিরতি পথ প্রায় ৩০০+ কি.মি।

চলতি মাসের ২৫ তারিখ সকাল সাড়ে আটটায় বের হই বাড়ি থেকে। বদরগঞ্জ স্টেশনে উপস্থিত হয়ে টিকেটের খোঁজ করলে জানা গেল ট্রেন অনেক দেরী আছে। প্রায় দশটা অথবা সাড়ে দশটার দিকে ট্রেন। তাই এতক্ষণ দেরী না করে  সফরসঙ্গীর সাথে মাঝখানে গন্তব্য পরিবর্তন করার জন্য কিছুক্ষণ কথা চালাচালি হলো। পরে সিদ্ধান্ত হলো যেখানে যাওয়ার প্ল্যান ছিল এবং যেখানে যাবার জন্য বের হয়ে এসেছি সেখানেই যাবো; কী হবে হবে! কী আর করার! ততক্ষণে ভ্রমণের জন্য একটু সদাই করা হলো। বড় একটা পানির বোতল আর চিপসের প্যাকেট ছয়টা।

ইতোমধ্যে অনেক বার স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছিল ট্রেন আসবে কখন আরো, ওখান থেকে ফিরতি ট্রেন আছে কি না, থাকলেও কখন! এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে গেল। টিকেট সংগ্রহ করা হলো। ট্রেন এলো। উঠে পড়লাম। অন্যরকম এক উত্তেজনা কাজ করছিল। এই প্রথম এতদূর যাচ্ছি ট্রেনে। ভাবতেই অন্যরকম শিহরণ কাজ করছিল। আসনবিহীন যেতে হবে ১৯৭ কি.মি। ট্রেন চলছে…

ট্রেনে উঠেই কিছুক্ষণ পর পরিচিত দুয়েকজনের দেখা হয়ে গেল। ঢাকা যাবেন ওনারা। চলতে চলতে টিটি এসে গেলেন। লং জার্নিতে টিকেট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লে কী অবস্থা হয় সেদিন দেখেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। টিকেট সংগ্রহ করবেন নিরাপদে রেলভ্রমণ করবেন।

একের পর এক স্টেশন ছেড়ে ছুটছি গন্তব্যের দিকে…ট্রেন চলছে তার গতিতে। ছোটবেলায় বইয়ে পড়া ছড়াটির কথা মনে আছে?

ঝকঝকাঝক ট্রেন চলেছে 

রাত দুপুরে ঐ

ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে 

ট্রেনের বাড়ি কই

সত্যিই তো তার বাড়ি কই? সে শুধু চলছে আর চলছে। একে একে সবাই তাদের গন্তব্যে এসে গেলেই নেমে পড়ছে। কিন্তু ট্রেনের কী কোনো গন্তব্য আছে? সে তো ছুটেই চলছে।

পথেঘাটে চললে মাঝেসাঝে যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তারচে দ্বিগুণ বিড়ম্বনা স্টেশনে এলে, ট্রেনে চড়লে। হাত তালি দিয়ে এসে টাকা নিয়ে যায়। আরে কী রে ভাই! সারা জীবন মাথা ঠুকিয়ে পড়ে থাকলেও কেউ টাকা দেয়না আর এরা এসেই হাত তালি দিয়ে টাকা নিয়ে যাবে। কী একটা অবস্থা। আমার সফরসঙ্গী ওদের টাকা দিয়ে বিদায় করলো। যাবার পথেই দু’দুবার। হাত তালি দিয়ে টাকা ইনকাম কম কথা নয়! হাহাহা!

দাঁড়িয়েই যাচ্ছিলাম তখনো। ভেবেছিলাম হয়তো যেতে যেতে অনেকে বিভিন্ন স্টেশনে নেমে গেলে বসে পড়বো কোনোভাবে। সেটা আর হয়নি। তাই দাঁড়িয়েই রইলাম। চিপস আর পানি চলছে টুকটাক। যাত্রী ছিল অনেক। ঈদ করে প্রায় সকলেই তাদের চাকুরীস্থলে ফিরছিল।

বদরগঞ্জ>পার্বতীপুর>ফুলবাড়ী>বিরামপুর>পাঁচবিবি>জয়পুরহাট>আক্কেলপুর অতিক্রম করে অবশেষে প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম। সান্তাহার। সান্তাহার জংশন। অনেক সুন্দর। বিশেষ করে প্লাটফর্ম থেকে নেমে শহরে প্রবেশ পথটা অসম্ভব সুন্দর। দুই দিকে পানি দ্বারা আবৃত আর মাঝখান দিয়ে চলার পথ। সোজা সামনে শিমুল গাছ। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। সেই পথ ধরেই হাঁটা দিলাম। একটু পেট পুজো করা দরকার এবার। দীর্ষ প্রায় দুশো কিলোমিটার দাঁড়িয়ে এসে অবস্থা খুবই খারাপ। সেই সাথে সুয্যি মামার রাগান্বিত চেহারার কারণে অনেক ক্লান্ত লাগছিল। একটু হেঁটে বাজারের কাছে যেতেই আখের রস বিক্রি করছেন একজনকে পেলাম। দুই গ্লাস, দুজনের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ। ভেতরটা ঠান্ডা হলো। সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম। যোহরের নামাজের সময় হয়ে আসছিল। তাই আর দেরী না করে উঠে পড়লাম। এদিকে আমার সফরসঙ্গী মোবাইলের মাধ্যমে কাছাকাছি ভালো খাবার কোথায় পাওয়া যায় তার সন্ধান চালাচ্ছিলেন। দেরী না করে প্রবেশ করলাম হাজী বিরিয়ানির দোকানে৷ মোরগ পোলাও। ওনাদের মেন্যু তে ডিমসহ ছিল তবে আমরা ডিম ছাড়া নিলাম। খেতে খেতেই আজান দিয়ে দিলো।  খাওয়া শেষ করে আবারো রওয়ানা করলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ও হ্যাঁ, আর আসার সময় ট্রেন থেকে নেমেই আগে খোঁজ করেছিলাম যে রংপুরের ফিরতি ট্রেন কখন। তারা জানালো তিনটা পনেরো তে। তাই আর বেশিক্ষণ শহরের বুকে আমাদের পদধূলি বিতরণ করতে পারলাম না। স্টেশনে ফিরে এসে নামাজের প্রস্তুতি নিলাম। আমরা মুসাফির অবস্থায় ছিলাম। নামাজ কসর করতে হবে। অযু-এস্তেঞ্জা সেরে যোহরের কসর সালাত আদায় করলাম। তারপর সালাত আদায় করে এদিকওদিক একটু হাঁটাহাঁটি করে টিকেটের সন্ধানে গেলাম। টিকেট সংগ্রহ করলো আমার সফরসঙ্গী। ফিরে এলাম স্টেশনে। ট্রেন তিনটা পনেরো তে।

সফরসঙ্গীসহ রইলাম ট্রেনের অপেক্ষায়। এদিক সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছি। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আবার টিকেট যেটা সংগ্রহ করা হয়েছে সেটাও আসনবিহীন। এটা দেখে আরো ক্লান্ত লাগছে৷ প্রায় দুইশো কিলোমিটার দাঁড়িয়ে এসে আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে এটা ভেবেই দম ছুটছিল। সময় হয়ে এলে ট্রেন এসে পড়লো। গেলাম কাছে। কিন্তু দেখি এটা আমাদের ট্রেন না। আমরা রংপুর এক্সপ্রেসের টিকেট সংগ্রহ করেছি। পরে সেখানে থাকা কর্তব্যরত ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এই ট্রেন ডিলে চলতেছে। দেরীতে আসবে। এবার আর না হেঁটে সোজা চলে গেলাম স্টেশন মসজিদে। ব্যাগ রেখে শুয়ে পড়লাম। অনেকক্ষণ বিশ্রামের পর স্পিকার থেকে অস্পষ্ট শব্দে কোনো ঘোষণা ভেসে আসছিল। মনোযোগ দিয়ে কষ্ট করে বুঝতে পারলাম আমাদের ট্রেন এসেছে। দ্রুত উঠে ওই প্লাটফর্মে গেলাম। 

উঠে পড়লাম ট্রেনে। ট্রেন চলছে। ততক্ষণে আছরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। নামাজের কামরা খুঁজছিলাম। দুই/এক কামরা এগিয়েই পেয়ে গেলাম। দ্রুত অযু করে নামাজের কামরায় প্রবেশ করলাম। ছোট্ট অনেক। মোটের ওপর ৫/৬ জনের জায়গা হবে। দেখি তিনজন ভাই জামাত করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। আমার সফরসঙ্গী আমার আগে অযু করে এসে সালাত শুরু করেছে। আমি একা একাই আদায় করলাম। এই প্রথম যানবাহনে সালাত আদায়ের অভিজ্ঞতা হলো। কসর সালাত আদায়ের অভিজ্ঞতাও এবারেই প্রথম। ট্রেনের দুলুনির কারণে নামাজে রুকুতে বেসামাল অবস্থা। আলহামদুলিল্লাহ এটা ভেবে প্রশান্তি লাগছিল যে যাই হোক অন্তত এতদূর পথ আর দাঁড়িয়ে যেতে লাগবে না। নামাজের কামরাতেই বসে পড়লাম। ট্রেন চলছে। আমার সফরসঙ্গী মোবাইলে একটু ট্রেনের লোকেশন দেখে নিচ্ছিল। ম্যাপে লোকেশন দেখেই তো টাস্কি! আরেহ ট্রেন কই যায়! রংপুর রুটে না গিয়ে ট্রেন চলছে অন্যদিকে। বগুড়ার দিকে। ভাবলাম এই বুঝি হলো এবার! পরে সেখানে উপস্থিত ভাইদের কথাবার্তা থেকে বুঝতে পারলাম ট্রেন বগুড়া হয়ে ঘুরে যাবে রংপুর। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সরাসরি রংপুর যাবে। জানা না থাকলে যা হয় আরকি!

দেখতে দেখতে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে এলো। নামাজ আদায়ের জন্য অলরেডি দ্বীনি ভাইয়েরা জমতে শুরু করেছেন। এবার গবেষণা শুরু হলো ক্বিবলা নির্ধারণ নিয়ে। আমার সফরসঙ্গী, সাথে আরো দুই ভাই তাদের মোবাইলে কম্পাস বের করে নিশ্চিত হচ্ছিলেন। ক্বিবলা চিহ্নিত করে জামাতে মাগরিব আদায় করা হলো। মাগরিবের কসর নাই। আমাদের পর আরো বেশ কয়েকটা জামাত করতে হয়েছে। যেহেতু কামরাটা ছোটো তাই একেবারে সম্ভব নয়। ৫/৬ জন করে জামাত করা হচ্ছিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কামরাটা ফাঁকা হয় গেল। আমি, আমার সফরসঙ্গী ভাই, আর দুইজন আমরা তখন শুরু থেকেই নামাজের কামরাতে বসেই যাচ্ছিলাম। রব্বের কাছে কৃতজ্ঞতা যে এবার আর এতদূর পথ দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছেনা। একের পর এক স্টেশন অতিক্রম করে ছুটছিল আমাদের ট্রেন।

 সান্তাহার>তালোড়া>বগুড়া>সোনাতলা>মহিমাগঞ্জ>বোনারপাড়া>বাদিয়াখালি>গাইবান্ধা>বামনডাঙ্গা>পীরগাছা>কাউনিয়া। কাউনিয়ায় এসে প্রায় বিশ-পঁচিশ মিনিট দেরী করে তারপর রংপুরের দিকে ছুটে ট্রেন।

রংপুরের দিকে আসার পথেই ইশার ওয়াক্ত হয়ে গেলে তখন শুধু আমরা দুজন নামাজের কামরায়। আমি আর আমার সফরসঙ্গী। নামাজ আদায় করলাম। তার পরপরই ট্রেন স্টেশনে পৌঁছায়৷ দীর্ঘ জার্নির ফলে ততক্ষণে আমরা দুজনই তখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বো। রাত ন’টা তখন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাস নিয়ে রওয়ানা করি বাড়ির পথে….

আমার জন্য এখন পর্যন্ত এটাই স্মরণীয় ভ্রমণ হিশেবে থাকবে। নতুন অভিজ্ঞতা ট্রেনে নামাজ আদায় করা এবং কসর নামাজের। ইনশাআল্লাহ সামনে আবারো নতুন কোনো জায়গায় ভ্রমণে বের হবো। 

হাবিবুল্লাহ মিসবাহ তুবা

শিক্ষার্থী

রংপুর আইডিয়াল নার্সিং ইনস্টিটিউট

রংপুর

০১৮৭০৯১২২০১

অ্যা জার্নি বাই ট্রেইন - হাবিবুল্লাহ মিসবাহ তুবা

মুগ্ধতা.কম

৩০ আগস্ট, ২০২০ , ৭:৪৯ অপরাহ্ণ

ডুয়ার্সের গল্প ৪

ব্রেকফাস্ট করে তিনজন যথারীতি রওনা করেছি লালঝামেলার দিকে। মাঝামাঝি পথে খবর পেলাম গৌতমদা’রা নিউ মাল এ নেমে পড়েছেন। মনটা আনচান করে উঠলো। ফিরে যাবো? তপু বলল, সারা রাত জার্নি করে সবাই ট্রেন থেকে নেমে ক্লান্ত থাকবে, আগে ফ্রেশ হয়ে নিক. ততক্ষণে আমরাও ঘুরে আসি।

(কীসের ফ্রেশ! ফেরার সময় খেয়াল করলাম জঙ্গলের আশে পাশে নদী ঘিরে একদল মানুষ দারুণ ঔৎসুক্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাঞ্চের টাইমে বুঝেছি, এরাই আসলে তারা…)

লালঝামেলা বস্তিতে একটা ব্রিজ আছে ভুটানের। পাহাড়ে হেঁটে উঠতে উঠতে দারুণ একটা গোল পাথর পেয়ে গেলাম। পাথরের একপাশে ভারত আর অন্য পাশে ভুটান লেখা। সীমান্ত!

ডুয়ার্সের গল্প

লালঝামেলায়, পাহাড়ে ওঠার পথে

আমার কাছে সীমান্ত মানেই সন্দেহ। ছোট্ট একটা পিঁপড়া নির্দ্বিধায় বর্ডার ক্রস করে ভুটানে ঢুকে গেল, দেখলাম। কিন্তু আমি দ্বিধাকে ক্রস করতে পারলাম না। যেখানে আমার যাওয়া নিষেধ, সেখানে অগোচরে চলে যাওয়াটা অপমানজনক মনে হল। আমরা জানি একদিন পাথরটা এই নিষেধাজ্ঞা প্রচারের আরোপিত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তখন পাথর শুধুই পাথর। আমাকে অসম্মান করার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা থাকবে না তার। কিন্তু তখন, হয়তো, আমি থাকবো না!

পাহাড় থেকে নামার সময় কেন যে কী মনে করে, শামসুল বলতে লাগলো, ভাই রসগোল্লা খেতে হবে। রসগোল্লার সন্ধান দিল ড্রাইভার, সেই ধুপঝোরা বাজারে।

যখন ফিরে আসছি, গুগলে সার্চ দিলাম ‘লালঝামেলা’। জানতে চেয়েছিলাম এটার পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যাদি। একটা তথ্যই শুধু ঘুরে ফিরে আসছে- ‘বাইসনের আক্রমণে লালঝামেলায় তিন যুবক নিহত।’ পুরনো খবর। লালঝামেলা তো দেখি আসলেই ঝামেলার! বাইসন আমাদের দেখতে পেয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফেললে কী হতো, এই ভেবে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এসে পৌঁছলাম উত্তর ধূপঝোরা বাজারে, রসগোল্লার খোঁজে।

মূর্তি ব্রিজ পেরিয়ে যখন বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম, দেখলাম একদল মানুষ হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে নদীর আশেপাশে। কামানের মতো ক্যামেরা তাক করে যিনি ফটো শুট করছেন, পরে জেনেছি তিনিই রাজর্ষিদা’। তার পাশে মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়ে শামীম, দেখা মাত্রই চিনে ফেললাম ফেসবুকের সুবাদে। এখানে বেড়াতে আসার ব্যাপারে পরবর্তীতে গৌতমদা’র চেয়ে শামীমের সাথেই যোগাযোগ হয়েছিল আমার বেশি। ওই দলে আর কারা ছিল পরে ঠিকমতো মনে করতে পারি নি।

 

[ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ গন্তব্য তে যুক্ত হোন]

 

 

ডুয়ার্সের গল্প ৪  - শাহীন মোমতাজ

মুগ্ধতা.কম

২৭ আগস্ট, ২০২০ , ১১:১৪ অপরাহ্ণ

ডুয়ার্সের গল্প ৩

ইমিগ্রেশন পার হয়ে কবিরের গাড়িতে যখন আমরা উঠে বসলাম, আর গাড়িটাও স্টার্ট নিলো বাতাবাড়ি হয়ে উত্তর ধূপঝোরা বাজার পার হয়ে মূর্তি নদীর তীরে আমাদের নামিয়ে দিতে, তখন সুখের একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো – যাচ্ছি তাহলে!

কোচবিহার আর রংপুরের ভূপ্রকৃতিতে কোন অমিলই চোখে পড়ে না। এমনকি ড্রাইভার কবির যখন মোবাইল ফোনে কাউকে “মুই এলায় আইতোছো” বলে আশ্বস্ত করে, আমরা রংপুরের রাস্তায় চলে ফিরে বেড়াচ্ছি কি না এই নিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। তপু চকিতে একবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। কেবল ময়নাগুড়ি আর মৌলানি হয়ে যখন গাড়িটা লাটাগুড়ির দিকে যেতে শুরু করে, তখনই বুঝতে পারি সভ্য সমাজের নোংরা জামাকাপড়গুলি সাময়িকভাবে খুলে ফেলবার সময় এসে গেছে।

চেনাজানা প্রকৃতি ছেড়ে ঢুকে পড়ছি ডুয়ার্সের জঙ্গলে।

শামসুল এর কাছে ডুয়ার্স নতুন জায়গা। চোখের পলক না ফেলে সামান্য সৌন্দর্যটুকুও গিলে নিতে চাইছে, বুঝতে পারছি। কেউ কাউকে বিরক্ত করি না। এমনকি কবিরও আপন মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের সৌন্দর্যানুভূতিকে কোনভাবে আহত না করে।

গৌতমদা’ এর মধ্যে ডুয়ার্স রেসিডেন্সি রিসোর্টের রাজাদা’র নম্বরটা আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। আগে থেকে কেন যেন ফোন করা হল না।

উত্তর ধূপঝোরা বাজারে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সিমগুলি রিচার্জ করে নিতে নিতে, রিচার্জ করে নিচ্ছিলাম আমাদের মন, যার সৌন্দর্য-পিপাসা সপ্তম রিপু হিসেবে গণ্য হবার সমূহ যোগ্যতা রাখে।

পথ খুঁজে নিয়ে গাড়িটা যখন রিসোর্টের দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে, দেখি দূরে ঋজু একটা মানুষের হাস্যোজ্জ্বল দেহাবয়ব আমাদের স্বাগত জানানোর ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। উনিই রাজাদা’। ভারতীয় সময় তখন বিকাল সোয়া পাঁচ।

গৌতমদা’ দের আসতে আসতে পরদিন সকাল। ফাঁকা রিসোর্টে কেবল আমরাই অতিথি। পাড়ে বসে নদীর প্রবহমানতা অনুভব করা ছাড়া বিকালে আর কোন কাজ নাই বলে তিনজন মৃদুস্বরে হৈ হৈ করতে করতে নদীপাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বর্ষায় মূর্তি এরকম ভয়ঙ্কর রূপ ধরে আছে, ভাবাই যায় না। আমরা উপভোগ করি। একদৃষ্টিতে স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। গতিময় স্রোত নদীর পরিপার্শ্বকে ধীর করে দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে আরও অনেক নদীর সাথে মিলেমিশে বাংলাদেশের দিকে।

রাতে রাজাদা’কে পেয়ে গেলাম বন্ধু হিসেবে। আসর জমে উঠল আমাদের চারজনের। পরবর্তী তিন দিন কী ঘটতে চলেছে তার আঁচ যেন খানিকটা অনুভব করা গেল। গল্পে গল্পে জানলাম মূর্তি থেকে ৪০/৫০ কিলো দূরে ভুটানের সীমান্তে একটা পাহাড়ি গ্রাম আছে- ‘লালঝামেলা বস্তি’। ডায়না নদীর তীরে লালঝামেলার সৌন্দর্যও নাকি কম নয়। রাজাদা’ই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন সকালে।

(আগস্ট ২৮ – সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮)

[ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ গন্তব্য তে যুক্ত হোন]

ডুয়ার্সের গল্প ৩ -  শাহীন মোমতাজ

মুগ্ধতা.কম

২৪ আগস্ট, ২০২০ , ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ডুয়ার্সের গল্প ২

তিনজন তিনটা আলাদা রুট ব্যবহার করে বুড়িমারি সীমান্তে পৌঁছবো এইরকমই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নিজস্ব পদ্ধতিতে এডভেঞ্চার তৈরি করার একটা চেষ্টা আর কি। সেই মতো ব্যাকপ্যাক পিঠে ফেলে ২৮ তারিখ সকাল সাড়ে ছয়টায় আমি একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনের দিকে হাঁটা দিলাম। ট্রেনে মাত্র ষাট টাকায় রংপুর থেকে যে বুড়িমারি পৌঁছানো যায়, আমার জানা ছিল না।

ভ্রমণগল্প

ঝালং ভিউপয়েন্ট থেকে তোলা জলঢাকা নদী। ওপারে ভুটান। ছবি: লেখক

শামসুল মোটর বাইকে প্রায় অর্ধেক রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে হাতিবান্ধা স্টেশন থেকে ট্রেনে আমার সঙ্গী হল। তপু বাস ফেল করে শেষে প্রাইভেট গাড়িতে এসে পৌঁছল প্রায় দেড় ঘণ্টা পর । দুপুরবেলা প্রখর রৌদ্রে বুড়ির হোটেলের সামনে পরিচ্ছন্ন চায়ের দোকানে বসে কাপে চুমুক দিতে দিতে তখনো আমরা ভাবতেই পারি নি, সীমান্ত থেকে মাত্র ষাট কিলোমিটার দূরে কতখানি বিস্ময়, কতটা আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে মূর্তি নদীর তীর, তীর সংলগ্ন জঙ্গলের হাতছানি, চাপ চাপ সবুজ অন্ধকার, আর একটা ভৌতিক ব্রিজ- প্রত্যেক সন্ধ্যায় যার অস্তিত্ব নিয়ে আমার মনে বিস্তর সন্দেহের উদ্রেক হতো।

প্রায়ই, শেষরাতে, ঘুমের আরও ভিতরে ঢুকে যেত চাপরামারির বন্য আহ্বান, সকালে বিহ্বলতা নিয়ে ঘুম ভাঙত সকলের।

মাথার ভিতরে আরেক রকম একটা ব্রিজের অস্তিত্ব টের পেতে শুরু করেছি ততক্ষণে সবাই। সেটাও পরের গল্প।

(আগস্ট ২৮ – সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮)

 

শাহীন মোমতাজ: কবি

 

[ভ্রমণ বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ গন্তব্য তে যুক্ত হোন ]

 

ডুয়ার্সের গল্প ২ - শাহীন মোমতাজ 

মুগ্ধতা.কম

২১ আগস্ট, ২০২০ , ৭:১৬ অপরাহ্ণ

ডুয়ার্সের গল্প ১ 

২০১৭ সালে ডুয়ার্সের গরুমারা জঙ্গলে একটা ট্যুর পরিকল্পনা করেছিলেন গৌতমদা, মানে গৌতম চক্রবর্তী, ভারতের। যদিও সেটা শেষ পর্যন্ত ডুয়ার্সের বদলে ভারতের সুন্দরবনে হয়েছিল। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারি নি সেবার। ডুয়ার্সের ভূপ্রকৃতি আমার খুবই প্রিয়। বারেবারে যেতে চেয়েছি সেখানে। ২০১৮ তে নানা কারণে বিক্ষিপ্ত হয়েছিল মন। তাকে শান্ত করবার জন্য জঙ্গল আর পাহাড়ের বিকল্প কী হতে পারে? ভেবে, কোনোদিন দেখা না হওয়া ফেসবুক বন্ধু গৌতমদাকে একটা মেসেজ দিলাম ২০১৮ এর শুরুতে, যে, যেতে চাই। নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করলেন তিনি। আগস্ট মাসের শেষে ট্যুর প্রোগ্রাম।

ভ্রমণগল্প

ঝালং ভিউপয়েন্ট থেকে তোলা জলঢাকা নদী। ওপারে ভুটান। ছবি: লেখক

জঙ্গলে যাবার জন্য কাতর হয়ে বসে আছি। মাঝে ঠাকুরগাঁও এর সিংড়া ফরেস্টে, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের নামমাত্র জঙ্গলে ঢুঁ মেরে এসেছি ঘণ্টা ক’য়েকের জন্য। আর অপেক্ষা করে আছি।

কথা ছিল ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দেখা হবে ডুয়ার্সের মোহনীয় রূপ। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তরের বৃষ্টিহীনতার রিপোর্ট মন ভেঙ্গে দিল। সে বছর বাংলাদেশে, রংপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, সেটা যে ডুয়ার্সকেও আক্রান্ত করে বসে আছে, জানা ছিল না। (অবশ্য শেষমেশ মুহুর্মুহু বৃষ্টি এসে আনন্দে ভরিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আমাদের ট্যুর। সেটা পরের গল্প)

website

আমার ব্যক্তিগত প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল গৌতম দার প্রথম ঘোষণার পরপরই। তারপর যুক্ত হল তপু আর শামসুল। আগস্টের শুরু থেকেই মিটিং করি, তিনজন মিলে রংপুরের রাস্তায় ঘুরি- আর প্ল্যান বানাই। পরিকল্পনা জমে উঠতে না উঠতেই নিজেরা সেটা ভেস্তেও দিই। কোথাও বেড়াতে যাবার আগে এটা হল আমাদের সাধারণ অসুস্থতা। ওদিকে ট্যুরের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর একটা লিস্ট গৌতম দা হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন, টর্চ, চার্জারের সাথে সাথে আরও দুইটা জিনিষ, শৈশব আর শালীনতা। তার মধ্যে শৈশবকে তো সঙ্গে নিয়ে ঘুরি, আমার দুশ্চিন্তা, শালীনতা পাবো কোথায়? বাজারে যদি পেয়েও যাই, আমার শরীরের মাপে মিলে যাবে তো?

(আগস্ট ২৮ – সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮)

 

শাহীন মোমতাজ : কবি 

 

[ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ গন্তব্য তে যুক্ত হোন]

ডুয়ার্সের গল্প ১ - শাহীন মোমতাজ