মুগ্ধতা

মুগ্ধতা

মজনুর রহমান

৩ অক্টোবর, ২০২৩ , ৪:০৪ অপরাহ্ণ

শুভ জন্মদিন, আমাদের কবি

আহমেদ অরণ্যের কবিতা যেন রাতের ঘুম জড়ানো চোখের ঘোর। এই ঘোর এমনই এক ঢুলুঢুলু স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায় যেখানে কবিতা হয়ে ওঠে ব্যথার উপশম, আর ব্যথা হয়ে ওঠে ব্যথারই প্রতিশব্দ।

তার এইসব কবিতা পড়লে ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে থাকা যায় পার্থিব ও অপার্থিবতার মিশ্রণে গঠিত অন্য এক জগত সংসারে।

সব লেখকের আলাদা লেখার ঢং আছে। কবি আহমেদ অরণ্যর ক্ষেত্রে সেই নিজস্বতা আরও গাঢ়। তার কবিতা পড়লেই বলে দেওয়া যায় যে এটি আহমদ অরণ্যের কবিতা- যেখানে ঘুম আর ব্যথা মাখানো চোখ নিয়ে আধো স্বপ্নের জগতে ঘুরে বেড়ানো যায়। এখানেই কবির সার্থকতা।

সময়ের বিচারে যদি তার কবিতা নিয়ে বলতেই হয়, তাহলে সামান্য নেতিবাচকতার কথা না বললেই নয়। আর তা হলো কবির কবিতা পড়লে ভালো লাগা যেমন আবেশ তৈরি করে, তেমনি মাঝে মাঝে দুর্বোধ্যতা এসে সামান্য ছুঁয়ে দিয়ে যেতে চায়। আজ কবি আহমেদ অরণ্যর জন্মদিন। জন্মদিনে তার জন্য এবং তার কবিতার জন্য অজস্র ভালোবাসা।

আসুন আজকের আনন্দ-দিবসে ঘুরে আসি কবির জগৎ থেকে।
**

আহমেদ অরণ্য
আমার কবিতা-ভাবনা

.
কবিতার সাথে আমার প্রেমের গল্প।. ..


কবিতাতো ঘোর। মায়ায় জড়ানো, নারী।

(কবিতার আসা যাওয়া একান্ত গোপন। নতুন প্রেমিক—প্রেমিকার মতো চুপি—চুপি সহস্র চোখের আন্তরালে) আমি বকা—ঝকা করি খুব, এই অসময়ে আসলি কেন? মধ্যরাত এখন। তাছাড়াও ক্লান্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে একটু আরাম দিতে চাই। না, সে হট্টগোল করতে থাকে-মস্তিস্কে। চিৎকার করে বলে—ভালোবাসি। পিতার সর্বোচ্চ সম্মানে আখ্যায়িত করতে চায়—এই ধরায়। তার অপ্রকাশিত কথার চিত্রপট সাজিয়ে দিতে বলে, চশমার ভূমিকায়! . ..

আমি বোকা—সোকা মানুষ। কারও কথায় না বলতে পারি না। একাধিক নারীর প্রেমের প্রস্তাবেও না! আর তুমিতো ‘কবিতা’, বিশ্বসুন্দরীর খেতাবপ্রাপ্ত হুর। তোমাকে কী করে না বলি, বলো?


আহমেদ অরণ্য এর কবিতা

তেসরা অক্টোবর

খুব রহস্যের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাই। আর পথের কথা ভাবি। কত শত সহস্র চিৎকার, এবং মাটির মুখ, গড়াগড়ি দেয়—এই পথে।. ..

আমি আমার মায়ের কথা ভাবি। তিনি দ্যাখেন; শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, মাখামাখি শেষে—একটি হরিণ ছানার, পালিয়ে যাওয়া দৃশ্য! কোনো—এক—কার্বনসন্ধ্যায়!


কৌতুক

আমি কাঁদতে—কাঁদতে মঞ্চে উঠলাম

সবাই অবাক। কৌতুক করবে, লোক হাসাবে—আর সে কি না কাঁদছে?

আমি হেসে উঠলাম। বললাম; আমার দুঃখে আপনারাও দুঃখি। এটাও কৌতুক!


অরণ্যশোক

ধরুন, আমি একজন কৌতুক অভিনেতা। মানুষ হাসাই—

ধরুন!
আজ আমার মৃত্যুর তৃতীয় দিন। শোকসভা চলাকালিন, পূর্বের অনুষ্ঠিত আমার ফানি—ভিডিও—ফুটেজ চলছে।. ..

আর আপনি। আপনার বান্ধবীর কোলে—হাসতে—হাসতে ঢলে পরছেন। আপনি হালকা হয়ে যাচ্ছেন। আপনার নিজস্ব মাঠ থেকে অরণ্যশোক হারিয়ে যাচ্ছে।. ..

ধরুন!
আপনি হালকা হতে—হতে. .. বান্ধবীর প্রেমে মেখে যাচ্ছেন। আপনার সুখ এখন অরণ্যশোক মাড়িয়ে কি দারুণ দৌড়ায়। শোকসভায়!


একপ্লেট ক্ষুধার মতো—যদি ভালোবাসি

একপ্লেট ক্ষুধার মতো—যদি ভালোবাসি; হয়তো কুকুরের মতো কষ্ট গিলে খেতে হতো না অনিচ্ছায়। বৃষ্টির মতো করে হয়তো—রক্তবৃষ্টি হতো না, আর শাদা পৃষ্ঠায় কষ্ট বিষয়ক শিরোনাম হয়তো মিউজিয়াম হতো।. ..

আমি সাগরের সাঁতারু না হয়ে যদি তার সুন্দর হতাম, হয়তো সেও আমার। রাতের তারা নয়, যদি মানুষ হতাম! হয়তো দিনের সুন্দর আমার নামে লিখে দেয়া হতো। আমি ঘাসের শিশির নয়—যদি কবি হতাম, হয়তো আমাকেও পৃথিবীর সুন্দর বলা হতো।. ..

যদি একপ্লেট ক্ষুধার মতো—সুন্দর চেয়ে থাকি, আমি সুন্দর। তারপরও তুমি অপার্থিব স্বপ্ন চেয়ো না।


এবং ছায়া কথা

ছায়ার গলপে আমি সুখী উচ্চারণ। তথা, তুমি লুকায়িত কথা। সাধক এবং ছায়া কথা!


পুরোনো ব্যথার মতো

মাঝে—মাঝে পুরোনো ব্যথা, চিন—চিন করে ওঠা— ভালো। তোমার মুখ মনে পড়ে। আর ছিটকে পড়ে বর্তমান এবং ফর্মালিন যুক্ত আপেল!

তোমার হয়তো—বালাশির কথা মনে আছে, মনে আছে কী?

—কথা ছিলো, শুধু পাশাপাশি বসে থাকবো। হাত, কিংবা ঠোঁটের খুব কাছে দিয়েও হাঁটবো না—আমরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমরা নৌকায় ছিলাম। জলের উপর। নির্জন রঙের জল আর আফিম মেশানো—বিকেলে—যেনো—প্রেমের সিম্ফনি। . .. আহা প্রেম!

কিন্তু। আমার যে—মাছের জীবন প্রিয়?

সারাদিন—জলে সাঁৎরায়, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ডেটিং-এ- যায়, আর জীবনের পাঠ শিখিয়ে—সঙ্গম শেষে, ভুলে যায় অতিত!

আর, তুমিতো পুরোনো ব্যাথার মতো চিন-চিন করে ওঠো—আইরিন!


একটি ফুলের গল্প

মাটি থেকে বীজের জরায়ু ছিঁড়ে—একটি গোলাপের চারা বের হলো। তার দেহের শাখা—প্রশাখায় গুটি—গুটি কাঁটা। এমন কি, তার কিছু মিনিট—কিছু ঘণ্টা অথবা কিছু দিন পর, শাখার কুনুই চিরে—একটি কলি, একটি রক্তাক্ত গোলাপের জন্ম।

তারপর। তাকে ছিঁড়ে, ফাঁসির মঞ্চে রেখেই কোনো কণ্ঠে—উচ্চারিত হলো, “গোলাপ আমার প্রিয়”!


সময়

আফিম মেশানো ঘোর। দেখো, তুমি—আমি’র গল্পে, কচ্ছপ কি দ্রুত দৌড়ায়!


মৃত্যু এবং একটি বিশ্রি কবিতা

স্বপ্ন জলসায়, মৃত্যুকে—বোকা দেখায় ভেবে,—শুকনো পাতার গহীনে আর উপকরণ খুঁজি না।

নতুন পাঠ্য বই—আর সংবিধানের গল্পে—

তোমরা আপেলকে সুন্দরী বলো—শুনে, মুক্তমনা হয়ে উঠি। এবং মুচকি হেসে, তোমাদের ভুলে যাই!

২.

বিনিময় বিশেষণে শুধু কয়লা পাওয়া যায়। সাথে, সাঁতারহীন মাছ, রাবার বিশেষ মন, আর উলঙ্গ আয়নায়, বিশ্রি একটি কবিতা।

তারপর—পথে, কুকুরটির ব্যাস্ত সময় কাটে ইতিহাস রচনায়!


মৃত্যুর কোরাস

মৃত্যুর কোন রঙ নেই, তাই—মানুষ ভুলে যায়, প্রিয়জন!

*

মৃত্যু শান্তির সঙ্গিত, সঙ্গম বোঝে না!

*

মৃত্যুতেই জীবনের মানে আটকে যায়!

*

মৃত্যু আমার চূড়ান্ত প্রেম!

*

আপনি না আগামীকাল মরে যাবেন! তবু—এত খিদে পায় আপনার? (ক্ষমতা ফ্যাক্ট)


চলো, অবুঝ মনের দ্যাশে যাই

পথে ব্যাকরণগত ভুল করে ফেলি। ভয় পেয়ে যাই। যেন আমার ছায়ার মতো ছড়িয়ে না ওঠে চোরাবালি ক্ষেত।

খণ্ড সময়। অমরত্ব যদি পেয়ে যাই। বিষাক্ত সাপের মন্ত্র, যদি পথভ্রষ্টের সূত্র শিখে যাই। আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর পাখির জীবনীতেও দুঃখ থাকে। কুকুরের প্রসব বেদনায় মাতৃত্বের সুখ থাকে। বৃষ্টি, শূন্য বেয়ে মৃত্তিকায় আছড়ে পড়ায় শিল্প থাকে।

আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর নারীর শরীর চিমটি কাটায় কষ্ট থাকে। ভালোবাসায় অসীম সাগর ছন্দ থাকে। চারাবৃক্ষেও—বেড়ে ওঠায় স্বপ্ন থাকে।

আমাকে ভাবিয়ে উঠবো না আর মৃত্যুর মাঝেও বেঁচে থাকায়—জীবন থাকে। শুকনো পাতার গহিন বনেও গল্প থাকে।

আমাকে ক্ষমা করো, হে ভুল। আমাকে ক্ষমা করো, হে পথভ্রষ্ট পথ। আমাকে ক্ষমা করো, হে তুমি। —চলো, অবুঝ মনের দ্যাশে যাই!


তুমি

তোমার ঠোঁটে
প্রেমিক কবি আমি
বোকার বন!

(২)

রহস্য খামে
তোমাকে ভরে রাখি
তুমি জীবন!


ইচ্ছে

আমাকে উচ্চারণ করতে দেয়া হোক, ভালোবাসি!

শুভ জন্মদিন, আমাদের কবি

মুগ্ধতা.কম

১ অক্টোবর, ২০২৩ , ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

মুগ্ধতা.কম

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৭:৩৯ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , ৪:০৯ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

মুগ্ধতা.কম

২৬ আগস্ট, ২০২৩ , ১:২৪ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

মুগ্ধতা.কম

১৯ আগস্ট, ২০২৩ , ১:৫১ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

মুগ্ধতা.কম

১২ আগস্ট, ২০২৩ , ৯:০৩ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

মুগ্ধতা.কম

৫ আগস্ট, ২০২৩ , ১:১৬ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

২৯ জুলাই, ২০২৩ , ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

২২ জুলাই, ২০২৩ , ৯:১৭ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা ডট কমের পক্ষ থেকে সবাইকে বর্ষার শুভেচ্ছা। শনিবারের চিঠি’র আগামী সংখ্যার জন্য আপনি পাঠাতে পারেন বর্ষা বিষয়ক যে কোনো লেখা। এছাড়া আগামী সংখ্যা থেকে প্রকাশিত হবে সাহিত্য সংবাদ।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

১৫ জুলাই, ২০২৩ , ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

১৭ জুন, ২০২৩ , ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

ঘোষণা:

‘শনিবারের চিঠি’র আগামী সংখ্যা প্রকাশিত হবে না। এর পরিবর্তে ২৬ জুন, সোমবার প্রকাশিত হবে মুগ্ধতা’র বিশেষ ইদ আয়োজন। এই সংখ্যার জন্য আপনার বাছাইকৃত সেরা লেখাটি পাঠাতে পারেন নিচের মেইলে।

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

১০ জুন, ২০২৩ , ৭:৩৭ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি - 10-06

মুগ্ধতা.কম

৩ জুন, ২০২৩ , ৯:৩৮ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ক্রমশ নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। দিনে দিনে এর লেখক ও পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বেশি বেশি লেখা আসছে। এসবের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমাদের কাছে যারা লেখা পাঠাবেন তারা এখন থেকে প্রতি বুধবারের মধ্যে পাঠাবেন। সবাই ভালো থাকুন, এই প্রচণ্ড তাপদহনে নিজেকে যত্নে রাখুন। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন।

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

২৭ মে, ২০২৩ , ১২:০৪ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

পাঠক ও লেখকদের ব্যাপক সাড়ায় আমরা ‘শনিবারের চিঠি’ টিম দারুণভাবে উজ্জীবিত। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও লেখকেরা নিয়মিত লিখবেন আর পাঠকেরা নিয়মিত শনিবারের চিঠি পড়বেন।

এছাড়া মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সপ্তাহের অন্য কোনো দিনেও গুরুত্বপূর্ণ বা বিষয়ানুগ কোনো বিষয়ে লেখা পাঠানো যাবে। 

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

২০ মে, ২০২৩ , ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

পাঠক ও লেখকদের ব্যাপক সাড়ায় আমরা ‘শনিবারের চিঠি’ টিম দারুণভাবে উজ্জীবিত। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও লেখকেরা নিয়মিত লিখবেন আর পাঠকেরা নিয়মিত শনিবারের চিঠি পড়বেন।

এছাড়া মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সপ্তাহের অন্য কোনো দিনেও গুরুত্বপূর্ণ বা বিষয়ানুগ কোনো বিষয়ে লেখা পাঠানো যাবে। 

এছাড়া মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকেও আপনাদের নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি 

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

১৩ মে, ২০২৩ , ৪:২২ অপরাহ্ণ

শনিবারের চিঠি

‘শনিবারের চিঠি’ ফিরে এল নতুন রূপে। এখন থেকে সংখ্যাটি বিষয়ভিত্তিক নয় বরং বিষয়-বৈচিত্রে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করা হবে। প্রতি সংখ্যায় নির্ধারিত থাকবে পাঁচটি কবিতা, তিনটি ছড়া, দুটি গল্প, একটি নন ফিকশন, ফেসবুক থেকে আমাদের নির্বাচিত একটি স্ট্যাটাস, পাঠকের পাঠানো একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত ছবি এবং চিরায়ত পাঠ অংশে থাকবে একজন বিখ্যাত লেখকের একটি রচনা। এছাড়া আগের সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া থাকবে সব শেষে। 

কাজেই নিচের মেইল ঠিকানায় আপনার লেখা পাঠান প্রতি বৃহস্পতিবারের মধ্যে। পাঠান পাঠ প্রতিক্রিয়া।

যেহেতু লেখার সংখ্যা নির্ধারিত, তাই যে লেখাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে না, সেটি প্রকাশ হবে পরের সপ্তাহে বা সপ্তাহের অন্য কোনো দিনে। 

সবাই সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

লেখা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাতে:

mojnurangpur@gmail.com (সম্পাদক)

ahmedaranno16@gmail.com (সহযোগী সম্পাদক)

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ 

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান 

সাপ্তাহিক সংখ্যা সম্পাদনা: আহমেদ অরণ্য 

সহযোগিতা: মুস্তাফিজ রহমান 

অলংকরণ ও কারিগরি তত্ত্বাবধান: রেদওয়ান শুভ

শনিবারের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

১২ মে, ২০২৩ , ৫:৩০ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস: ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নার্স

সমগ্র বিশ্বে প্রতিবছর ১২ মে International Nurses Day হিশেবে পালিত হয়। ১৮২০ সালের এই তারিখে আধুনিক নার্সিংয়ের পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম হয়েছিল। তার জন্মদিনে এ দিবসটি পালন করে তাকে সম্মান জানানো হয়। ICN বা International Counsel of Nurses ১৯৬৫ সাল থেকে এ দিনটি উদযাপন করে আসছে।

আধুনিক নার্সিংয়ের পথিকৃৎ ইটালীয় নারী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হলেও নার্সিং জগতে অজানা রয়ে গেছে একজন মুসলিম নারী কথা। তিনি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে বসবাস করতেন। তিনি হলেন রুফাইদা আল-আসলামিয়া রাদিআল্লাহু আনহা।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পেশাদার নার্স হলেন রুফাইদা বিনতে সাদ, যিনি রুফাইদা আল-আসলামিয়া নামেও পরিচিত। যার জন্ম আনুমানিক ৬২০ সালে। রুফাইদা আল-আসলামিয়া যুদ্ধাহত সাহাবীদেরকে সেবা-শুশ্রুষা করতেন। তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতিক্রমে কিছু মহিলাকে সাথে নিয়ে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য একটা চেম্বার (তাঁবু) স্থাপন করে। তার সাথে থাকা অন্যান্য মহিলাদের এ বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণও দেন। যুদ্ধে আহত সৈনিকদের তিনি শুধুমাত্র সেবাই দিতেন না, অনেক সময় ছোটোখাটো সার্জারিও করতেন। রুফাইদা যুদ্ধের ভয়াবহতা কিংবা মরুভূমির তপ্ততাকে কখনো ভয় পেতেন না। তার স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে যুদ্ধাহতদের সেবাযত্ন করতেন। রুফাইদার এই সেবাকার্য শুধুমাত্র যুদ্ধের ময়দান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো না, তিনিই সর্বপ্রথম ‘মোবাইল কেয়ার ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করেন যা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে মানুষদের সেবা প্রদান করত।

রুফাইদা আল-আসলামিয়া রাদিআল্লাহু আনহা মানবদেহ নিয়ে অনেক কৌতুহলী ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন চিকিৎস৷ তিনি তাকে ছোটোবেলাতেই অসুস্থ মানুষের সেবা করা এবং বিভিন্ন ক্ষত সারিয়ে তোলা শিখিয়েছিলেন। জ্ঞাণার্জনের প্রতি রুফাইদার প্রবল আগ্রহ ছিল।

ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক নেকীর কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীর সেবাযত্ন করে তাহলে আল্লাহ তার কাছে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এসব ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সে ব্যক্তি দিনের যে কোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে। অনুরূপ যে ব্যক্তি রাতের যেকোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সকাল পর্যন্ত তারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান ও সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব: ৩/১৯৭)

রুফাইদা রাদিআল্লাহু আনহা চিকিৎসাক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের জন্য অনন্য এক দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের পেশোয়ারের একটি কলেজের নাম তার নামানুসারে রাখা হয় ‘রুফাইদা (রাদিআল্লাহু আনহা) নার্সিং কলেজ’। বাহরাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর ‘RCS (Royal College of Surgeon)’  এর উদ্যোগে সেরা নার্সকে ‘রুফাইদা আল-আসলামিয়া এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। 

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য

হাবিবুল্লাহ মিসবাহ তুবা

শিক্ষার্থী

রংপুর আইডিয়াল নার্সিং ইনস্টিটিউট

আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস: ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নার্স
Comments Off
86 Views

প্রমথ রায়

৬ এপ্রিল, ২০২৩ , ১২:৩০ অপরাহ্ণ

একটি দুঃস্বপ্নের রাত

হাসান হেঁটে চলেছে। তাঁর কাছে শহরের কোলাহল কিছু মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে সমুদ্রের তীরে একাই হেঁটে চলেছে। রিক্সা, গাড়ি, মানুষ সবই বালু মনে হচ্ছে। সমুদ্রের অপর প্রান্তে সূর্যটা হেলে পড়েছে। তাঁর লক্ষ্য এ সূর্য ছোঁয়া। কিন্তু হঠাৎ তাঁর পা থেমে যায়। সে আর হাঁটতে পারছে না। শত চেষ্টা করেও না। মনে হচ্ছে লোহার শিকল দিয়ে কেউ যেন তার পা বেঁধে রেখেছে। সে জোরে চিৎকার করে উঠলো। সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেলো। একটি অচেনা নারী কন্ঠস্বর বলে উঠলো, কোথায় যাস? বড় অদ্ভুত ব্যাপার অচেনা কন্ঠস্বরটি আস্তে আস্তে চেনা হয়ে উঠছে। মিজান ভাইয়ের কন্ঠ। মিজান ভাইয়ের কন্ঠ আবার নারী কন্ঠ হয়ে উঠছে। শায়লার কন্ঠ। শায়লা বলছে, কোথায় যাচ্ছো? পালিয়ে যাচ্ছো?

-সূর্য ধরতে যাচ্ছি।

-সূর্য কি গাছের ফুল নাকি?

-ফুল! হ্যাঁ ফুলই তো। দেখো না কত সুন্দর ফুটে আছে! সূর্যমূখী ফুল। আমি চললাম।

কিন্তু হাসান পা নড়াতে পারছে না। শিকলটি আরও শক্ত করে তাঁর পা বাঁধছে। সে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি কী চাও বলতো?”

-তোমাকে।

-আমাকে? আমি তো তোমার নই। আমি নীলুফার। আমি তাঁর স্বামী। সে আমার স্ত্রী। আমরা স্বামী-স্ত্রী। আমি নিজের স্ত্রী রেখে তোমার হবো কী করে?

– হাঁ হাঁ হাঁ!!! শায়লা হেসে উঠলো।

-শায়লা ওভাবে হাসছো কেন? পুরুষ মানুষের মতো। তুমি কে বলতো?

– মিজান ভাই।

-না তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি করিম চাচার মেয়ে শায়লা।

-চিনতে পেরেছো তাহলে!

-তুমি সমুদ্র পাড়ে কেন?

-খেলবে না?

-খেলা? আমিতো কোনো খেলা পারি না। সেই কবে ছোটোবেলায় ফুটবল খেলতাম। একবার পা ভেঙে গেলো।তারপর থেকে…….।

ভাঙা পাটিতে শিকল আরও শক্ত করে বাঁধলো।

হাসানের জিজ্ঞাসা, আমাকে বেঁধে রেখেছো কেন?

-তুমি যে পালিয়ে যাচ্ছো।

-পালিয়ে! আমিতো সূর্য ছুঁতে যাচ্ছি।

-তাহলে খেলবে না?

হাসানের মনে একটু আনন্দের ছোঁয়া লাগলো। সে শায়লাকে কাছে পেতে চাইলো। শায়লাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। পরীর মতো। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরী নেমে আসছে। হঠাৎ করে শায়লা কালো কংকাল হয়ে গেলো। হাসান ভয় পেলো। ভয়ে শায়লাকে ডাকলো, শায়লা?

-হুম

-তুমি কোথায়?

-এইতো এখানে আমি। কাছে এসো।

-আমার ভয় করছে।

-কেন?

-আচ্ছা, তুমি বলতো, তুমি শায়লা না, অন্য কেউ?

– মিজান ভাই।

-আহ! আমি সিরিয়াসলি বলছি।

-হ্যাঁ, আমি মিজান ভাইতো। তোমার বন্ধু সেজানের বড় ভাই। আমরা গভীর রাতে করিম চাচার মেয়ে শায়লার ঘরে প্রবেশ করবো।

-হাঁ হাঁ হাঁ!!!

– হাসছো যে?

-বড় অদ্ভুত পরিকল্পনা!

-কিন্তু মিজান ভাই, শায়লা তো আজ আমাদের বাড়িতে।

-তাহলে তো ভালোই হলো।

-আমার স্ত্রী?

-তাঁকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দাও।

-হাঁ হাঁ হাঁ!!!

হাসান আবার শায়লাকে দেখতে পেলো।

-শায়লা?

-বলো।

-তুমি কোথায়?

-এইতো আমি এখানে। চলো, সমুদ্রের জলে ভিজি।

-কিন্তু আমি যে সূর্য ছোঁবো।

-সূর্যে আগুন আছে।

হাসান শায়লার হাত ধরে সমুদ্রের জলে এগিয়ে চলছে। ততক্ষণে পায়ের শিকল খুলে গেছে। কিন্তু এটাতো শায়লা নয়। কালো পেত্নী। সে চিৎকার করে উঠলো। তাঁর চিৎকার কেউ শুনছে না। সমুদ্রের ঢেউ এগিয়ে আসছে। সে সমুদ্রের জলে ডুবে যাচ্ছে। সে আরও জোরে চিৎকার করে উঠলো!

হাসানের ঘুম ভেঙে যায়। তাঁর রুমের দরজা ভাঙা। পাশে মিজান ভাই, শায়লা ও তার স্ত্রী নিলুফা। শায়লা ও নিলুফা পাশের ঘরে ঘুমিয়েছিলো। পরে ভয় পেয়ে মিজান ভাইকে ডাকছে। সবারই একই প্রশ্ন, কী হয়েছে? সে শায়লার দিকে তাকালো। বড় মায়াবী চেহারা। সে বললো, হাসান ভাই কী হয়েছে? হাসান কিছুই বললো না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জানাই সেইসব বীর শহিদদের-যারা মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, জেল খেটেছেন কিংবা আহত হয়েছেন। আজকের দিনে আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আসুন আমরা পারতপক্ষে জীবিত ভাষা-সৈনিকদের সাথে কথা বলি, তাঁদের সাক্ষাৎকার নিই, সবার সামনে তাঁদের কথা তুলে ধরি। কারণ, আর কিছুকাল পরেই অধিকাংশ ভাষা-সৈনিক আর বেঁচে থাকবেন না, তখন আমরা চাইলেও আর একজন ভাষা-বীরকে খুঁজে পাব না।

সবাই মাতৃভাষার প্রতি দরদী হোন, বানান ও উচ্চারণের যত্ন নিন-এই আহবান জানাই।

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ

সম্পাদক ও প্রকাশক: মজনুর রহমান

নির্বাহী সম্পাদক: রেদওয়ানুল ইসলাম

সহযোগী সম্পাদক: আহমেদ অরণ্য

বিশেষ সংখ্যা সম্পাদক: মুস্তাফিজ রহমান

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে

মুগ্ধতা প্রতিবেদক

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১১:০০ অপরাহ্ণ

শুক্রবার কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী

রংপুরের কাব্যসাহিত্যে চির অমর কবি, ছান্দসিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ প্রাপ্ত রংপুর তথা বাংলাদেশের বর্ষীয়ান কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার।

নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ কবি, গীতিকার, সাংবাদিক ও সফল সংগঠক ছিলেন। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর রংপুরের বাবুখাঁ গ্রামের প্রাচীন সওদাগর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার আগমনে আলোকিত করেছিল উত্তরজনপদের সাহিত্য।

২০ জানুয়ারি২০১৩ সালে রংপুরের নিউ শালবস্থ নিজ বাসা কবিকুঞ্জে মৃতবরণ করেন কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ।

এ উপলক্ষে কবি’র প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ছান্দসিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী রংপুর আয়োজিত আগামীকাল শুক্রবার বাদ আছর নিউ শালবনস্থ জালালিয়া জামে মসজিদে দোয়া’র আয়োজন করা হয়েছে।

দোয়া অনুষ্ঠানে রংপুরের কবি সাহিত্যিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক ও ইতিহাস গবেষক রেজাউল করিম মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক কবি সোহানুর রহমান শাহীন আহ্বান জানিয়েছে।

কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী

তাসরিনা খানম

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১০:০৪ অপরাহ্ণ

মজনুর রহমান

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১০:১৯ অপরাহ্ণ

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

নিঃসঙ্গতা 

মায়ের চোখ থেকে নিঃসঙ্গতা নিয়ে এসে

শহরে বাড়ি বানাচ্ছে মানুষ,

এখন দুপুরের ভাতঘুমে সে দেখতে পায়

বাড়ির ছাদে বৃষ্টি পড়ছে-

টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ অনবরত 

বৃষ্টির ছাঁটে জানালা ভিজে যাচ্ছে,

অদূরে কসাইখানায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে লাল ষাঁড় 

আজ তার শেষ দিন পৃথিবীর বুকে।

নিচতলায় মজুরি নিয়ে চলে যাচ্ছে কারিগর 

সারাদিন সেও অবাক হয়ে ভাবে,

এমন নিঃসঙ্গতা দিয়ে মানুষ কী করে বাড়ি বানায়

যেখানে সঠিক পরিমাণে কান্না মেশানো নাই?

বৃষ্টি সাক্ষী

শেষবার আপনি বলেছিলেন, এই তুমুল বৃষ্টি সাক্ষী,

আমাদের আবার দেখা হবে।

বহুকাল আমি সাক্ষীকে হাজির করে বসে আছি,

যেখানে ঝড়ের কোতোয়াল চিৎকার করে ডাকে

অথচ আসামী পলাতক!

জানি বৃষ্টি আপনার জমিনেও হয়;

আপনিও তবে সাক্ষীকে সাথে নিয়ে ভিজতে থাকেন?

যেখানে বিচার আপনার কথামতো ঝরে?

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

অনিরুদ্ধ সরকার প্রথম

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ , ৭:৪২ অপরাহ্ণ

তে কুয়েরেমোস মুচা আর্হেন্টিনা

ওয়ার্ল্ড কাপে উইনারদের চারশো কোটি আর রানার্স আপদের তিনশো কোটি টাকা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

যারা ম্যাচটা জিতে যায় ওরা সোনার হরিনের মত ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখে,চুমু খায়।

আর পুরো পৃথিবী সেদিন নিজের বুক কেটে দুইভাগ করে নেয়।একভাগ আতশবাজি পোড়ায়,আবির ওড়ায়।আরেকভাগ কাঁদে অথবা পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়।

এই দুইভাগেরই একটা কমন ব্যাপার আছে। দুইভাগই নিজেদের ঘুম,কাজ,টাকা বিসর্জন দিতেও দুইবার ভাবে না।কি এক অদ্ভুত পাগলামি হাজার মাইল দুরের সাত সমুদ্রের ওই পারের দেশের জন্য।কি এক ক্ষ্যাপাটেপনা একটা পতাকা কিংবা একটা রঙিন জার্সির জন্য।

প্রিয় লাতিনের বাতিঘর,বিপ্লবী চে’র আর্জেন্টিনা,

আমরা চারশোকোটি কিংবা তিনশোকোটির এক টাকাও চাই না। আমরা সোনার কাপড়ে মোড়ানো ট্রফিটায় চোখ বন্ধ করে চুমু খেয়ে আদর করতেও চাই না।আমরা বরং একটা নির্ঘুম রাত,প্রার্থনা,উৎকন্ঠা,সাহস সব মিশিয়ে কিছু একটা তোমাকে দেই।যেটার প্রলেপে লাগানো থাকবে আমাদের ভালবাসা।যেটা আমরা শুধু তোমার জন্য জমাই।

আমরা অপেক্ষা করবো শুধু তোমার জন্য,আমরা চির উন্নত মম শীর স্টাইলে তোমাকে সামনে রেখে জিতে ফিরবো।

আমরা তোমাকে ভালবাসি আর্জেন্টিনা।

তে কুয়েরেমোস মুচা আর্হেন্টিনা।🤍💙

তে কুয়েরেমোস মুচা আর্হেন্টিনা - খেলা - Argentina - আর্জেন্টিনা

মুগ্ধতা.কম

১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ , ৭:১৭ অপরাহ্ণ

পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধ: বিজয় এলো যেভাবে

২৯ শে নভেম্বর ঐতিহাসিক পঞ্চগড় মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার বীর মুক্তিসেনারা ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহায়তায় পঞ্চগড়কে পাকসেনাদের কবল থেকে দখলমুক্ত করতে সমর্থ হয়। পঞ্চগড়ের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা জ্বালিয়ে দিয়ে উড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা। বর্তমানে এই দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধারা পঞ্চগড় মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে এই ঐতিহাসিক দিনটির কথা তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখনো জানে না।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা সৈয়দপুর, দশমাইল এসব এলাকায় পাকবাহিনীর তীব্র আক্রমনে টিকতে না পেরে পিছু হটতে থাকে। একাত্তরের ১৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা পঞ্চগড় জেলার সিএন্ডবি মোড়ে অবস্থান নেয়। ১৭ এপ্রিল পাকসেনারা ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পঞ্চগড় আক্রমণ করে। এ আক্রমণে টিকতে না পেরে মুক্তিসেনারা পিছু হটে তেঁতুলিয়া উপজেলার মাগুরমারি এলাকায় অবস্থান নেয়। ওই দিন রাতেই চাওয়াই নদীর উপর ব্রীজে ডিনামাইট চার্জ করে ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়। ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ায় পাকসেনারা নদীর এপারে অমরখানা নামক স্থানে অবস্থান নেয়। নদীর এপারে পাকবাহিনী ওপারে মুক্তিবাহিনী। জুলাই মাসে প্রতিদিনই হয় খন্ড যুদ্ধ ও গুলি বিনিময়। চাওয়াই নদীতে ব্রীজ না থাকায় পাকসেনারা তেঁতুলিয়ার দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তেঁতুলিয়ার পুরো অঞ্চলই ছিলো মুক্তাঞ্চল।

মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড় ছিল ৬ নং (ক) সেক্টরের আওতাধিন। এ অঞ্চলে মোট ৭ টি কোম্পানির অধিনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ৬ নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এম কে বাশার, স্কোয়াড্রন লিডার সদরুদ্দিন, ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার, লেফটেন্যান্ট মাসুদুর রহমান, লেফটেন্যান্ট আব্দুল মতিন চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট হাসান আলী (আই ও), মেজর কাজিম উদ্দিন, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুব আলম এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শ দেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মুজিবনগর সরকারের সিভিল এ্যাডভাইজার সিরাজুল ইসলাম।

২০ নভেম্বর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর আর্টিলারি সহায়তায় ইপিআর, আনছার-মুজাহিদ ও মুুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে পাক সেনাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাটি অমরখানা ক্যাম্পে আক্রমন করে। যৌথ বাহিনীর আক্রমনে টিকতে না পেরে পাকসেনারা জগদল বাজার এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে জগদলে টিকতে না পেরে পঞ্চগড়ে অবস্থান নেয়। ২৮ নভেম্বর শিংপাড়া, মলানি, মিঠাপুকুর এলকায় ডিফেন্স গড়ে মুক্তিযোদ্ধারা। এভাবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত মাস মিত্র বাহিনীর সহযোগীতায় পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অমরখানা, জগদল, শিংপাড়া, তালমাসহ নতুন এলাকা হানাদার মুক্ত হতে থাকে। ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সিও অফিস এবং একই দিনে আটোয়ারী ও মির্জাপুর মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা।

পাক বাহিনী মূলত ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই কার্যত মুক্তিবাহিনীর চতুর্মূখী আক্রমণের তীব্রতার মুখে পঞ্চগড় শহর থেকে অমরখানা ও তালমার মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পঞ্চগড় এলাকায় তারা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ ব্যাটালিয়ন। নভেম্বর মাসের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পঞ্চগড়ে পাক সেনাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাটি অমর খানা ও পরে জগদল ছেড়ে পঞ্চগড়ের দিকে পালিয়ে যায় খানসেনারা। ২৬শে নভেম্বরের মধ্যে পঞ্চগড় শহরের চারদিকে ৭ম মারাধা, ২১ রাজপুত এবং ১৮ রাজপুত রাইফেল রেজিমেন্টের প্রায় ৩ ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সৈন্য অবস্থান নেয়। ২৯শে নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে শহরে প্রবেশের অনুমতি আসে। প্রতিটি কোম্পানী সেকশন ও প্লাটুন অনুযায়ী আসতে থাকে শহরের দিকে। প্যান্ট লুঙ্গি ও সাধারণ পোশাক পরিহিত, মাথা ও কোমরে গামছা জড়ানো মুক্তিযোদ্ধার দল কাধে স্টেনগান, রাইফেল, এস.এল.আর, এল.এম জি.ও ২ ইঞ্চি মর্টার ঝুলিয়ে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ও পুড়ে খাক হয় যাওয়া শহরে একের পর এক প্রবেশ করতে থাকে। কোন দিক থেকে কোন বাঁধা পায় না মুক্তিযোদ্ধারা। তবে কিছু কিছু ঘর বাড়িতে তখনও আগুন জ্বলছিল। বোঝা যায় কিছুক্ষণ আগেও পাকসেনারা শহরেই ছিল। দখলে আসে পঞ্চগড়। তবে তখনও সুগারমিল এলাকায় বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। পঞ্চগড় শহর তখন যেন শ্মশান ঘাট। ঘর-বাড়ি দোকান সব ভস্মিভূত। তখনও কোন রকমে টিকে ছিল লাল রঙ্গের টিনের থানা ভবন ও পার্শ্ববর্তী ডাক বাংলো। অসংখ্য পরিত্যক্ত ব্যাংকার পড়ে ছিল। হাজার হাজার নিক্ষিপ্ত গোলা উড়ে এসে আঘাত হেনেছে পঞ্চগড় শহরের মাটিতে। তারপর শুরু হয় পঞ্চগড় চিনিকল এলাকায় যুদ্ধ। ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সাথে সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী প্রবল আক্রমণ গড়ে তোলে পঞ্চগড় চিনিকল এলাকায়। অবশেষে মুক্তিবাহিনীদের সাথে না টিকতে পেরে খান সেনারা ময়দানদিঘি, বোদা ও পরে ঠাকুরগাঁর দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। এই যুদ্ধে চিনিকল এলাকায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর রশিদ। ২৯শে নভেম্বর মুক্ত হয় পঞ্চগড়। ধ্বনিত হতে থাকে ‘‘জয় বাংলা’’ ধ্বনি। পঞ্চগড় মুক্ত করার যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীর প্রায় ২৫০ জন হতাহত হয়। পাক সেনাদের মধ্যে ২০০ জন হতাহত হয় এবং ২৭ জনকে জীবিত আটক করা হয়। এ দিনটি পঞ্চগড়ের মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলবার নয়। তাইতো এ দিন এলেই তাদের কানে বাজে ‘‘জয় বাংলা’’ ধ্বনি। কিন্তু দেশের সূর্যসন্তানদের গৌরবের এই কীর্তি আজও অজানা রয়ে গেছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। পঞ্চগড় মুক্ত দিবসে তরুণ প্রজন্মের কাছে এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের।

তথ্য সূত্র: বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলমের ‘গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে’ ও ড. নাজমুল হকের পঞ্চগড়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধ- বিজয় এলো যেভাবে

মুগ্ধতা.কম

১৯ অক্টোবর, ২০২২ , ১২:০৪ অপরাহ্ণ

শুভ জন্মদিন, সোমের কৌমুদি

তরুণ কবি সোমের কৌমুদির জন্মদিন আজ। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ গ্রামে মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটোবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত তিনি। মূলত কবিতাচর্চাতেই মগ্ন থাকেন তিনি। বর্তমানে তরুণ এই কবি ঢাকায় বসবাস করছেন। তাকে জন্মদিনে তাকে মুগ্ধতা ডট কমের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

সোমের কৌমুদির কবিতা: ভাষ্য ও নির্মাণকৌশল

মজনুর রহমান

[শিল্প স্বভাবতই এক কঠিন-রুক্ষ পথ। অনেক সাধনার পথ। পথ কঠিন বলেই এর ফল সুন্দর। এই পথে হাঁটার এক অনন্য মাধ্যম হলো কবিতা। নিখিল মানবের মানবিক অনুভূতি একজন কবির কণ্ঠস্বরে ফুটে ওঠে, এ কি কোনো সহজ ব্যাপার হতে পারে?

হাজার বছর ধরে বাংলা কবিতাই ছিল সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের কথাকে তুলে আনার একমাত্র মাধ্যম। এরপর বাংলা সাহিত্য বিচিত্র ধারা-উপধারায় বিস্তৃত হয়েছে। কবিতাও বদলে ফেলেছে তার শরীর। চারশো বছর আগে কিংবা একশো বছর আগে এমনকি পঞ্চাশ বছর আগেও যে কবিতার শারীরিক রূপ আমরা দেখি এখন আর তেমনটি নেই। কোনো কিছুই তো আসলে একরকম থাকে না। কবিতাও নেই। এখন কবিতার শব্দ, অনুষঙ্গ, রূপ, রস, গন্ধ সবই যেমন বদলে গেছে তেমনি বদলে গেছে এর স্বাদ নেবার প্রক্রিয়াটিও।]

অনেক দিন ধরে কবিতা নিয়ে নীরিক্ষা চালাচ্ছেন তরুণ কবি সোমের কৌমুদি। প্রকৃত নাম মশিউর রহমান বিরু। দেশে ও বিদেশে নানা মাধ্যমে তার কবিতা প্রকাশিত হয়ে চলেছে। এরই মধ্যে আমরা দেখতে পাই তার কবিতায় নানা ধরনের বাঁক বদল। বিচিত্র এই বদলের বাতাস বইছে এই সময়ের কবিতার বাতাসের অনুকুলেই।

আমরা দেখতে পাই, তরুণ কবিদের প্রথম জীবনের অধিকাংশ কবিতারই মূল অনুষঙ্গ হয় প্রেম ও দুঃখ। সোমের কৌমুদিও এর ব্যতিক্রম নন। সেটা দোষেরও নয় নিশ্চয়ই।

কিন্তু একরকমের কবিতাধারায় কবি নিজেও সন্তুষ্ট থাকেননি কখনও। পাশাপাশি তিনি নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন বাঁকবদলের। কবিতার অনুষঙ্গ, শব্দের গাঁথুনী, অলঙ্কারের ব্যবহার আর গতিময়তা নিয়ে বারবার কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

যেমন, গতানুগতিক বিরহগাথা বাদ দিয়ে তিনি আচমকা লিখতে থাকেন একধরনের শান্ত স্নিগ্ধ গদ্য ঢঙের কবিতা। যেখানে ছোটো ছোটো পংক্তিগুলো শান্ত ভঙ্গিতে একেকটা ছবি তৈরি করে দিচ্ছে। পড়া যাক তার ‘সভ্যতা-২’ শিরোনামের কবিতাটির অংশবিশেষ:

“স্নিগ্ধ সকাল। সময়ের ঢেউ আছড়ে পড়ে জীবন নদীর তীরে।

প্রহর নীড়ে। জীবনের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে মহাকাল।

কাঁচা রোদ। খসখসে হাতের স্পর্শে ধারালো হয়।  

রঙিন ধূসরতায়। সবুজ মাঠে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ায় বোধ।”

এই নির্মাণ-ঢঙ কবির চিন্তা ও চেষ্টার প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয় আমাদের সামনে। এই পর্যায়ে সোমের কৌমুদি একজন পরিণত কবিমানস ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়ে ওঠেন পাঠক মননে। ‘ছায়া’ শিরোনামের এ ধরনের আরেকটি কবিতায় দেখা যায়:

‘‘র্পণমোচী বৃক্ষরে বন। সঙ্গোপনে যুবতী বসন্ত লালন করে দশ মাস। 

চরিহরিৎ বৃক্ষের আবাস। শীতশরৎবসন্ত সবুজ, কোকিল উচাটন।।

ঝলসানো রোদের ঝাঁজ। প্রহরের তৃষ্ণা মেটায় আলোআঁধারের দিবাকর।

ফুলে বসা মধুকর। আহত পাখির খসে পড়া পালকে সময়ের কারুকাজ।।’’

এখানে ঢঙটি একই হলেও এবং কবিতার উপাদান থাকলেও কঠিন শব্দ ব্যবহারের চেষ্টাটি লক্ষণীয়। আমাদের মনে হয়, এটি তেমন দরকারি কোনো প্রবণতা নয়।

কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে আমরা আচমকা দেখতে পাই সোমের কৌমুদির কবিতায় আরেক ধরনের বাঁক-বদল।

‘‘খরস্রোতা নদীর বুকে

ঝরঝর বৃষ্টি

যুবতী ঢেউ

পাড়ে বাঁধা ডিঙি

নিরুদ্দেশ মাঝি।

নদীর ওপারে যেতে

সহায় ডিঙি

ডিঙি নেচে উঠে

জলের উল্লাসে

বৃষ্টির বিশুদ্ধতায়

সিক্ত নদী।’’

এখানে দেখা যায়, খানিকটা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের গাঁথুনি মিশিয়ে পাঠ-সহায়ক ছোটো ছোটো পংক্তি সৃষ্টির প্রয়াস। এসব চেষ্টা কবিকে শক্তি যোগায় নিঃসন্দেহে। নিজেই নিজেকে ভেঙে ফেলবার সাহস এবং প্রজ্ঞা সবার থাকে না।

সোমের কৌমুদির কবিতা একটা পর্যায়ে আমাদের মুগ্ধতা ও প্রত্যাশাকে স্পর্শ করে যখন দেখি অদ্ভুত এক ভাষা-ভঙ্গিতে তিনি নির্মাণ করতে শুরু করেন ‘দেশীয় কবিতা’গুলি। আসুন পড়ি তার ‘বিষুদবারের রাত’ কবিতাটি:

‘‘পাটশাক কুটে বধূ, পুঁইশাক কুটে। বধূ কচু পাতা কুটে আর সজনে পাতা কুটে। শহর থেকে আজ বিষুদবার রাতে, সপ্তাহ বাদে সোয়ামি আসবে বাটে। বধূ রান্ধে শোলকা আর সিদল ভর্তা।  আজ বিষুদবার রাতে আসবে বাড়ির কর্তা।

বধূ চোখে কাজল মাখে, বধূ পায়ে আলতা মাখে। মনের যত প্রেম শাড়ির আঁচলে মেখে, দাওয়ায় দাঁড়িয়ে পথ পানে চেয়ে থাকে। আজ বিষুদবার রাতে আসছে বাড়ির কর্তা। বধূ রান্ধি রাখছে শোলকা আর সিদল ভর্তা।

অমাবস্যাতেও বিষুদবারের রাতে, বধূর ঘরে জোনাক জ্বলে ওঠে।’’

কবিতার অদ্ভুত সুন্দর এই ভঙ্গিটি আমরা প্রথম লক্ষ্য করি কবি মুজিব ইরমের কবিতায়। কবিতাগুলোতে দেশের জন্য, পরিবারের জন্য কিংবা ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য কবির যেমন মন উতলা হয় তেমনি দেশীয় সংস্কৃতিবোধের প্রতি প্রবল ভালোবাসা ফুটে ওঠে। সোমের কৌমুদির কবিতার পাণ্ডুলিপি পাঠে এরকম আরও কিছু কবিতা পাওয়া যায়, যেমন: বাবুই পাখির বাসা মাচা, বেনারসি ইত্যাদি।

এভাবে সময়ে সময়ে নানান ধরনের কবিতাভাষ্য বিনির্মাণে অব্যাহত চেষ্টা জারি রেখেছেন তরুণ কবি সোমের কৌমুদি। মা, মাটি ও দেশের গন্ধ পাওয়া যায় তার কবিতাগুলোতে। শব্দের যথোপযুক্ত ব্যবহার, শব্দের সাহায্যে ছবি আঁকা, ভাব ও বক্তব্য প্রকাশের প্রয়াস-এই সমস্ত চেষ্টা তরুণ এই কবিকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়-এই শুভকামনা রইল।

সোমের কৌমুদির সাক্ষাৎকার

২০২০ সালে তরুণ কবি সোমের কৌমুদির এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন পাতাপ্রকাশ ডট কমের সম্পাদক জাকির আহমদ।

প্রশ্নকেমন আছেন? বসন্ত কেমন কাটছে?

সোমের কৌমুদীএই তো। ভালো আছি। বসন্ত আসলে হৃদয় কাননে ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক প্রকৃতিতে ফুল ফুটবেই আর সে ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে মন বাগানেও। বসন্তে যেমন প্রেমিক কোকিল গান গায় তেমনি বিরহী কোকিলও গান গায়। বসন্ত সবার মনকেই ছুঁয়ে যায়, এটাই বসন্তের বৈশিষ্ট্য। আমিও বসন্তের গান গাইছি।

প্রশ্নআপনার লেখালেখির শুরুর গল্পটা শুনতে চাই…  

সোমের কৌমুদীআমরা সব ভাই-বোন নানাবাড়িতে বড় হয়েছি। আমার বড় দুই ভাই। আমার নানা ছিলেন প্রাইমারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নিয়িমিত খবরের কাগজ ও অন্যান্য বই পড়তেন। বাড়িতে বড় ভাই নিয়মিত গানের রেওয়াজ করতেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই আমাকে সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন এবং পড়েছি কি না তা যাচাই করতেন।  ছোট মামাও টুকটাক লিখতেন। এমন পরিবেশ পেয়েই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মে। আমি আমার বড় ভাইয়ের কাছে শিখেছি কীভাবে লেখায় শিল্পরস নিয়ে আসতে হয় আর ছোটভাইয়ের কাছে শিখেছি লেখাটাকে কীভাবে জীবনঘনিষ্ঠ করে তুলতে হয়। যারা অন্যের ভালো চান তাদের অধিকাংশই অন্যের ভালো করতে গিয়ে সেই ব্যক্তির ভালো হবার পর সেখানে নিজের স্বার্থ খুঁজে না পেলে চরিত্র বদলে ফেলে। কিন্তু আমি আমার নানাজি ও ছোট ভাইজানের কাছে শিখেছি কীভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে হয়।সাহিত্যকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার শিক্ষাটাও আমি আমার ছোট ভাইজানের কাছ থেকে পেয়েছি।

প্রশ্নছোটোবেলায় জীবনের লক্ষ্য কী ছিলো? তা কি হতে পেরেছেন?

সোমের কৌমুদীছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য ছিলো ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু যখন কলেজে পড়ি তখন থেকে লেখকই হতে চেয়েছি। আমি সে পথেই হাঁটছি।

প্রশ্ন: আপনি নিজেকে কি কবি ভাবেন? নাকি অন্যকিছু?

সোমের কৌমুদীকবিতা লিখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা কখনোই লক্ষ্য নয় আমার। কবিতার পর শিশুসাহিত্য নিয়ে ভাবতে বেশি ভালো লাগে।

প্রশ্ননিজের বই নিয়ে উপলব্ধি কী?

সোমের কৌমুদীদেখুন, আর দশটা মানুষের ন্যায় লেখকেরাও পরিণত হয় বয়স আর অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে। লেখার বয়স বাড়ার সাথে সাথে লেখকও পরিপক্বতার দিকে ধাবিত হয়। আমার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যার শেষেরটি ‘জোছনা রাঙা বৃষ্টি’। এ পর্যায়ে এসে সত্যি বলতে, আমি আমার বই নিয়ে পুরোপুরি তৃপ্ত না। আমি মনে করি আমার আরো ভালো কিছু দেয়া উচিৎ ছিল। এবং উপরওয়ালা আমাকে সে সামর্থ্য দিয়েছেন বলে মনে করি। পরবর্তী বইগুলোতে আরো ভালো কিছু দেবার চেষ্টা করবো। এজন্যই তিন বছর নতুন বই প্রকাশ করা থেকে বিরত আছি।    

প্রশ্নআপনার কাছে কবিতা কী?

সোমের কৌমুদীআমার সবসময়ই মনে হয় ,কবিতা হলো কবির আত্ম প্রতিকৃতি। তবে এজন্য কবিকে অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে জাতিসত্তায় পরিণত করতে হবে। যে কবিতায় মাটি ও মানুষের ঘ্রাণ নাই, তা পরিপূর্ণ কবিতা মনে হয় না আমার কাছে। কবিতা একটা মাধ্যম যা মানুষের ভাবাবেগকে জাগ্রত করে।

প্রশ্নআপনার মাথায় লেখার ইমেজ কীভাবে আসে?

সোমের কৌমুদীজীবনে পাওয়া কষ্ট, অভাববোধ, জানা সত্ত্বেও উত্তর দিতে না পারা প্রশ্নগুলোই আমার সবচেয়ে বড় সম্বল। দৈনন্দিন জীবনে ঘুরেফিরে এরা আমার জীবনে আসে, আমি আসতে দেই। এগুলোই আমাকে লিখতে তাড়িত করে।

প্রশ্নআপনি কার লেখা বেশি পড়েন? বিশেষ কারও লেখা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

সোমের কৌমুদীছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম-এর বই পড়া হয়। অনেকের লেখাই পড়া হয়। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, নির্মলেন্দু গুণ আর হেলাল হাফিজ-এর কবিতা এবং হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়-এর বই আমাকে বেশি টানে।

বি…শে….ষ কারো লেখা………….. না, বিশেষ কারো লেখা আমাকে প্রভাবিত করে বলে মনে করি না। তবে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন আমাকে অনেক প্রভাবিত করে।

প্রশ্নআপনার সমকালীন লেখকদের কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? কার লেখা বেশি ভালো লাগে?

সোমের কৌমুদীসমকালীন অনেক কবি-ই ভালো কবিতা লিখছেন। তাঁদের কবিতার কাব্যরস পাঠককে ভাবনার ক্ষেত্র এনে দিচ্ছে। চিত্রকল্প,কল্পনাবোধ,পরিমিত কাব্যালঙ্কার,সময়ের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁদের সৃষ্ট কাব্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে। বর্তমান সময়ের ওবায়েদ আকাশ, ফারুক আফিনদী’র কবিতা আমার বেশি ভালো লাগে।  

প্রশ্নসবশেষে, লেখক হিসেবে চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

সোমের কৌমুদী : পাঠকের ভালোবাসা অর্জন করা, দেশ ও কালের গণ্ডি পেরিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠকের মনে বেঁচে থাকা।এমন একটা পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যাতে মা-বাবা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন।

সোমের কৌমুদীর কবিতা:

সভ্যতা  

স্নিগ্ধ সকাল। সময়ের ঢেউ আছড়ে পড়ে জীবন নদীর তীরে।

প্রহর নীড়ে। জীবনের রঙে রাঙা হয়ে উঠে মহাকাল।

কাঁচা রোদ। খসখসে হাতের স্পর্শে ধারালো হয়।  

রঙিন ধূসরতায়। সবুজ মাঠে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ায় বোধ।

পূর্ণিমা শেষ। তীরে পলির আস্তরণ ভেদে উঁকি দেয় সভ্যতা।

ক্লাইম্যাক্স, নাটকীয়তা। জীবনের গায়ে লেপ্টে  জীবন অবশেষ।    

খাঁচা

রাখালের বাঁশি। মাঠ পেরিয়ে নদীর কূল ভরা ছোপ ছোপ আচ্ছন্নতা।

দুঃখের দীনতা। মরা দেহে জেগে উঠে প্রাণ, মলিন মুখে ফোটে হাসি। 

সোনালী চিল। উড়ে চলে, ডানার ছায়ায় ফ্যাঁকাসে কাশের শুভ্রতা।

মমতার মুখরতা। প্রকৃতির সজীবতায় ম্লান প্রান্তহীন আকাশের নীল। 

ধুলো মেঠোপথ। মিশে যায়, নিজেকে হারায় ইট-কংক্রিটের খাঁচায়।

সুখ নিজস্বতায়। অজান্তেই ধুলোমাখা পথের পানে ফিরে চলে মনোরথ।

শহুরে ডাস্টবিন। খাবারের উচ্ছিষ্ট পেয়ে বায়স ভুলে ক্ষুধার শোক।

ক্ষুধার্ত দু’চোখ। ছলছল চেয়ে থাকে পঁচা খাবারের দিকে প্রতিদিন। 

ছায়া

র্পণমোচী বৃক্ষরে বন। সঙ্গোপনে যুবতী বসন্ত লালন করে দশ মাস। 

চিরহরিৎ বৃক্ষের আবাস। শীত-শরৎ-বসন্ত সবুজ, কোকিল উচাটন।।

ঝলসানো রোদের ঝাঁজ। প্রহরের তৃষ্ণা মেটায় আলো-আঁধারের দিবাকর।

ফুলে বসা মধুকর। আহত পাখির খসে পড়া পালকে সময়রে কারুকাজ।।

আলো-ছায়ার খেলা। গাছের থেকে ক্রমশ দৈর্ঘ্য বাড়ে গাছরে ছায়ার।

র্পূণতা প্রাপ্ত অহংকার। তুলতুলে কাশফুল ভুলে রিমঝিম র্বষার কলো।। 

হারানোর তৃপ্তিতে সুখ। সিন্ধুর ইটে গড়ে ওঠে হৃদয়াঞ্চলে সবুজ তাজমহল।

মহল ভরা আহল। বসন্তের সকালে তবু শীতের শিশির, পরিপূর্ণতার ভুখ।।   

কথা শেষের কথাগুলো

কথা শেষ হলে কথা বলতে যাওয়া কষ্টের

কথা তখন নীরবতা হয়

শব্দিত হয়েও শব্দহীন হয়,

কথাগুলো তখন শব্দ হয়েও দুঃখ  হয় শব্দের।

কথা শেষ হলে কথা বলতে যাওয়া কষ্টের

কথা তখন চোখের জল হয়

চোখের জল তখন অশ্রু হয়,

অশ্রু তখন উপহাস হয় বা চিরকালীন দুঃখ হয় জীবনের।

কথা শেষ হলে কথা বলতে যাওয়া কষ্টের

কথা তখন হাসি হয়

হাসি তখন সুখ হয়,

সুখ তখন জীবন হয় বা পাথেয় হয় জীবন চলার পথের।

কথা শেষ হলে কথা বলতে যাওয়া কষ্টের 

কথা তখন শোষিত হয়

কথা তখন শোষক হয়,

শোষক কথাগুলো মুক্ত হয়, হয়ে যায় আমজনতার।

ফিরে আসতেই হবে

ছুটে চলেছো । চলো। চেনা পথ! নাকি অচেনা?

ফিরে আসার পথ খোলা? নাকি না ফিরলেও ক্ষতি নেই?

ফিরে আসতেই হবে? নাকি অবিরাম সুখ এ পথ চলাতেই?

এ পথ বৃষ্টির জলে সিক্ত হয় তো?

চাঁদের আলোয় আলোকিত?

পাখির গানে থাকে কি মুখরিত?

কি! আটপৌরে জীবন চলে যেতে এ সবের দরকার কী?

হয়তো একটা জীবন পার করতে 

                             বৃষ্টি অতি প্রয়োজনীয় নয়

পাখির গান না শুনলেও অনায়াসেই জীবন কেটে যায়

চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্না স্নানও মৌলিক চাহিদা নয়।

তবুও কিছু থেকে যায়,

শুধু “কিন্তু”-র মাঝেই তা সীমাবদ্ধ নয়।

ভেবে দেখো, এগুলোও মৌলিক চাহিদার সাথে

                             একই কাতারে দাঁড়ায়।

ভাবো, ভেবে দেখো-

বৃষ্টি কখনই অপবিত্র হতে পারে না

জোছনা কখনই রুক্ষতা আনতে পারে না

পাখির গান কখনই অশালীন হতে পারে না।

দ্বিপ্রহর জীবন

নিঃসঙ্গ প্রহর একাকীকতায় মুখরিত হয়

অব্যক্ত কথার কোলাহলে পূর্ণ নীরবতার উঠোন

একাকী চাঁদের ছড়ানো জোছনা নৃত্যে মাতে

বর্গাকার মাঠের চারদিকে উল্লাস করে অদৃশ্য দর্শক।

ভোরের আলোয় আঁধারে হারানো চাঁদকে নিয়ে লেখা গান

পূর্ণতা পায়; সুরভিহীন কালির আঁচড়ে ধূসর সময়।

আদিগন্ত  সবুজ প্রান্তর হয়ে যায় হৃদয় 

রাখালের বাঁশির সুরে চাপা পড়ে

ক্ষেতের কান্না, কৃষকের দ্বিপ্রহর জীবনের কষ্ট।

সূর্যের তেজ নিস্তেজ হয় কৃষানির লাল শাড়ির ছোঁয়ায় 

এক ঝাঁক পাখি ডানা মেলে ফের, ছুটে চলে নীলাকাশে

দ্বিপ্রহর জীবন লাল শাড়ির আঁচলে নিজেকে জড়ায়।

হরিণ

ভ্রমণ পিয়াসী মন

দরিদ্র দেহের ভার

কাঁধে নিয়ে 

ছুটে বেড়ায়

সুন্দর বন।

সুরক্ষা বলয়

পদাঘাতে গত

বনের গহীন

আঁধার ঘন

বাঘের থাবায়

মুমূর্ষু জীবন,

ওপারের ছবি

ভাসায় নয়ন 

নয়ন

খোঁজে ফেরে

মায়াবী হরিণ।

“হরিণ তৃষ্ণা”

গ্রীষ্মে লুকায়

বর্ষায় সিক্ত

চাতক মন।

ঋতু

সম্পর্ককে ঋতু বলা যায়!

সম্পর্কের  রূপ ঋতুর মত করে

পর্যায়ক্রমে আসে, পুনরায়;

গ্রীষ্ম

বর্ষা

শীত

বসন্ত।

শরৎ ও হেমন্তও জীবনে উঁকি মারে।

মহাকাল ঋতুর মধ্য দিয়ে বয়ে যায়।

একটা সম্পর্কই ষড়ঋতু হয়ে যায়।

ভিন্ন ভিন্ন রূপে জীবনকে আগলে রাখে

ভালোবেসে ও ঘৃণায়।

রাগে

অনুরাগে

নিঃস্পৃহতায়

মায়ায়।

অনুমান ও ভুল বুঝাবুঝিও জায়গা পেতে লড়ে।

জীবনটা ঋতুর নানা রঙে হারায়।

আঁচড়

সবুজ বনের ফাঁকে হেলে পড়ে

সূর্যরশ্মি

বনসংগীতের সুর ছড়িয়ে পড়ে

এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

সান্ধ্যগীতি

বেজে উঠে মর্মর,  

প্রকৃতির পটে আঁকা ছবি

প্রাণের স্পন্দন

জীবন্ত হয়ে উঠে

সবুজের আঁচড়।

নদীর বুকে হেলে পড়া চাঁদ

একটা ছবি

সুর তোলা বাঁশি

রাঙিয়ে দেয়

জীবন

সময়

প্রকৃতি

শিল্পের ক্যানভাসে রঙিন আঁচড়।

 বিষুদবারের রাত

পাটশাক কুটে বধূ, পুঁইশাক কুটে। বধূ কচু পাতা কুটে আর সজনে পাতা কুটে। শহর থেকে আজ বিষুদবার রাতে, সপ্তাহ বাদে সোয়ামি আসবে বাটে। বধূ রান্ধে শোলকা আর সিদল ভর্তা। আজ বিষুদবার রাতে আসবে বাড়ির কর্তা।

বধূ চোখে কাজল মাখে, বধূ পায়ে আলতা মাখে। মনের যত প্রেম শাড়ির আঁচলে মেখে, দাওয়ায় দাঁড়িয়ে পথ পানে চেয়ে থাকে। আজ বিষুদবার রাতে আসছে বাড়ির কর্তা। বধূ রান্ধি রাখছে শোলকা আর সিদল ভর্তা।

অমাবস্যাতেও বিষুদবারের রাতে, বধূর ঘরে জোনাক জ্বলে উঠে।

বাবুই পাখির বাসা

কন্যা চুলায় মুড়ি ভাজে, কন্যা চুলায় খই ভাজে। কন্যা ঢেঁকিতে চিড়া বানে, কন্যা জানে সুখের মানে। কন্যা চিড়ায় মাখে খেজুর গুড়, মুখের গানের মনমাতানো সুর। সে সুর ছড়ায় সদ্য তোলা আমন ধানের মাঠে, আমন ধানের মাঠের সুখ আটকে আছে খেয়াঘাটে।

তিস্তা নদী পিছে ফেলে আমন ধানের মাঠ পেরিয়ে কন্যার বাপের বাড়ি, সেই বাড়ির চারিদিকে আম-জাম আর কাঁঠাল গাছের সারি। পূব উঠানের কোণের দিকে একটা বটের গাছ, সেই গাছের ছায়ায় মন জুড়াতে কন্যার জাগে আশ। চিড়া, মুড়ি, খইয়ের ঘ্রাণে কন্যার মুখে হাসি, বটের তলায় কে যে বাজায় সম্মোহনী বাঁশি!

অগ্রহায়ণের সাঁঝের বেলায় বাপের বাড়ির উঠান, কোণ জুড়ে গল্প-হাসি আর মায়ার টান। চিড়া-মুড়ি-খইয়ের ঘ্রাণে মুখর সবার মুখ, এ সুখের রেশে ভরবে ফের আমন ধানের মাঠের বুক।

বাপের বাড়ির কাইনচায় তালগাছে বাবুই পাখির বাসা, সেই বাসাতে ঘর বেঁধেছে কন্যার মনের স্বপ্ন-আশা।

মাচা

বধূ বাসে মাটি ভালো, বধূর হাতের ছোঁয়ায় আলো। কাইনচা বাড়ির মাচা ভরা ঝিঙে-শশার ফুল, বধূর ছোঁয়ার মায়ার প্রেমে বাঁধা ধুন্দুল। সকাল-বিকাল মৌসুমি হাওয়ায় ফুলেরা দোল খায়, মাচার সে রূপ মন কেড়ে নেয় ডাকে ইশারায়।

বধূর হাতে বেলি রূপার চুড়ি, বধূর সাথে ঝিঙে তোলে খুড়ি। দুপুর বেলার রোদে ঝিমিয়ে পড়ে পাতা, লতাটাকে শক্ত করে আগলে রাখে বাতা। পাতার ঘুম ভাঙায় চুড়ির রিনিঝিনি সুর, চুড়ির সুরে দুলে উঠে যৈবতী বাহুর কেয়ূর।

রাতের বেলা চাঁদের আলো মাচায় ঢলে পড়ে, এক পৃথিবী ভালোবাসা মাচায় বসত করে।

 ধুতরা

মাঝ নিশীথের গহিন বেলায় জোছনা পড়ে ঢলে, জোছনা আসে, জোছনা নামে তিস্তা নদীর জলে। তিস্তা নদীর পশ্চিম তীরে বন্ধু বাঁধছে ঘর, সুখের চাষ করে বন্ধু সাথে বন্ধুর বর। বীজ বোনা শেষ হয়েছে এখন অপেক্ষা করে, ফসল তুলবে বন্ধু ঘরে মৌসুমি হাওয়ার পরে।

নিশীথের গহিন বেলায় জোছনা ছড়ায় আলো, ভালোগুলো হয় আরও ভালো – কালোও হয় ভালো। জোছনা আর মনের টানে মন থাকে না ঘরে, শূন্যতা সুখের প্রেমে মিশে অশ্রু হয়ে ঝরে। কষ্ট আরো গাঢ় হয়ে তৃপ্তি ডেকে আনে, বাঁচার সাধ দ্বিগুণ বাড়ে এমন মায়ার টানে।

চাঁদের আলোয় বন্ধুর বাড়ির পথ চিনতে হয় না ভুল, পথের দু’ধারে সারি সারি গাছে ফুটেছে ধুতরা ফুল।

বেনারসি

গীত গায় ভাবি, গীত গায় দাদি। মেন্দি মাখে মামি আর মেন্দি মাখে নানি। শ্যাম বরণ কন্যা লাজে মরে যায়, মেন্দি মাখে মায়ে কন্যার গায়।

কন্যার চোখ ভরা মায়া, সেই মায়ার নাই কায়া। চোখের তারায় ভেসে উঠে ফুল বাগানের ছবি, বিয়ান বেলার রোদের ছায়ায় তারই প্রতিচ্ছবি। কন্যার গায়ে জড়িয়ে আজ ছোঁয়ার ভালোবাসা, বিয়ান বেলার রোদ ছড়ায় থোরা থোরা আশা।

কন্যার স্বপ্ন-আশা ও বুকের মায়া চোখের তারায় নাচে, মুখের হাসি চোখের ভাষায় চোখের তারায় হাসে। মেন্দি সব কন্যার গায় খুঁজে পায় সুখ, সুখের জলে শীতল হয় কন্যার দুরুদুরু  বুক।

এক পৃথিবী ভালোবাসা দুচোখে নাচে পাশাপাশি, শ্যাম বরণ কন্যা কাল গায়ে জড়াবে লাল বেনারসি।

হাঁটা

আমি প্রতিনিয়ত হাঁটছি-

হাঁটতে শেখার পর থেকে হাঁটছি।

আমার হাঁটার  প্রতিটি পদতল পড়ে

পিতার রেখে যাওয়া পদতল চিহ্নে।

পিতা আর আমি একই পথের যাত্রী।

হাঁটার পথে, পিতার পদতলের শেষ চিহ্নে

নিজের পদতল রেখে–

উল্লাসে গাই জীবনের জয়গান।

অতঃপর দুরন্ত গতিতে হাঁটতে গিয়ে

পৌঁছাতে দিগন্তের  সুন্দর গ্রাম, দৃশ্যমান;

মাঝপথে যাই মূর্ছা —

আর মুদিত নয়নে দেখি,

আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুত্র আমার

সেই গ্রামে পৌঁছে ব্যস্ত, পেতে নতুন দিগন্তের দিশা।

খুঁজে পাই

প্রাতে সূর্যের আলোর ডাকাডাকি

তার মাঝে শুনতে পাই তোমার বাণী,

কর্দমাক্ত পথের উপর  যান্ত্রিক সভ্যতার নিপীড়ন

ব্যথার দগ্ধে দগ্ধ মৃত্তিকার ক্রন্দন;

সেখানে পেয়েছি তোমার দেখা

আর ক্রন্দনে মিশে আছে তোমার কথা।

রেল লাইনের পাশের ঝুপড়ি ঘরে

কোন অষ্টাদশী তরুণীর কৃত্রিম প্রেমের অকৃত্রিম আদরে

খুঁজে পেয়েছি তোমার দেখা,

তরুণীর কষ্টে ভরা হৃদয়ে বেঁধেছ বাসা।

আমার না দেখা প্রেমিকার প্রতীক্ষিত নয়নে

তুমি দিয়েছ দেখা গোপনে,

আর ডাস্টবিনে খাবারের জন্যে—

কুকুরের সাথে যুদ্ধরত শিশুদের মাঝে

তোমার পুনর্জন্ম দেখেছি প্রকাশ্যে।

কিন্তু, তোমাকে পাই নি খুঁজে—

এসি রুমের ভিতরের সাহিত্য আসরে।

কিংবা সু-সজ্জিত ঘরের নরম বিছানায়

দেহ এলিয়ে দেয়া আমার বিলাসী সত্ত্বায়;

নজরুল, আমি কখনোই খুঁজে পাইনি তোমায়।

শুভ জন্মদিন, সোমের কৌমুদি

মুগ্ধতা.কম

১৫ আগস্ট, ২০২১ , ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড: প্রথম প্রতিবাদী কবিতা ও সংকলন

‘তেরোশ’ বিরাশি সন, মেঘার্ত শ্রাবণ, শেষ রাত।

অকস্মাৎ ! বৃষ্টি নয়, ঘটে গেলো রাষ্ট্র স্বপ্ন থেকে রক্তপাত।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের মতো ব্যাপ্ত ছিল যার বুকÑ

জাতির পিতার বুকে বিদ্ধ হল উত্তপ্ত বুলেটে।

দেহ শধু দেহ নয়, ইতিহাস, মূল্যবোধ, আশ্রয়

ভেসে গেলো বাংলাদেশ রক্তের প্লাবনে- অন্তিম শ্রাবণে।’

(আমি স্বাক্ষী : সৈয়দ শামসুল হক)

১৩৮২ বঙ্গাব্দ, অন্তিম শ্রাবণের (১৫ই আগস্ট,১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) মেঘার্ত কালরাতে জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই রাতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ঘৃণ্য চক্রান্তে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাÐ। ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে স্বপরিবারের শাহাদতবরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই বর্বরোচিত হত্যাকাÐে থমকে গিয়েছিল সমগ্র জাতি। পিতাকে হারাবার শোকে-বেদনায় মূহ্যমান জাতি গুমরে গুমরে কেঁদে মরলেও ইতিহাসের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিকভাবে সেই শোক প্রকাশের বা এই হত্যাকাণ্ডের  প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানানোর সাহস কেউ পায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর শাসকগোষ্ঠী সচেতনভাবে ইতিহাসের পাতা থেকে, এমনকি শিল্প-সাহিত্য থেকেও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে চেয়েছিল। ফলে এ সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখাও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু তবু নিঃশ্চুপ থাকতে পারেননি এদেশের কবি-সাহিত্যিকরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের  পর নিদারুণ বৈরী পরিবেশে প্রথম প্রতিবাদ ও শোকগাথা উচ্চারিত হয়েছিল বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের কবিতার শব্দ-ছন্দেই ।

এ প্রসঙ্গে প্রথম যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন, বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু আরবি শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল হালিম। নৃসংশভাবে হত্যা করার পর কড়া সামরিক প্রহরায় বঙ্গবন্ধুর লাশ অত্যন্ত দীনহীনভাবে টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে সমাধিস্থ করার মর্মবেদনা ও ক্ষোভ থেকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আরবি ভাষায় একটি কবিতা রচনা করেন। পরে তিনি নিজেই এটি বাংলায় অনুবাদ করেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণের পর এটিই প্রথম কবিতা বলে মনে করা হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৭জুন ২০১১ সংখ্যায় “শহীদ বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত প্রথম আরবি কবিতা” শিরোণামে প্রকাশিত প্রবন্ধের লেখক মাওলানা এম. এ রহমান ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার দলিল’-এর বরাত দিয়ে কবিতাটির সেই বাংলা অনুবাদ উদ্ধৃত করেন –

“হে মহান, যার অস্থি-মজ্জা, চর্বি ও মাংস এই কবরে প্রোথিত

যাঁর আলোতে সারা হিন্দুস্থান, বিশেষ করে বাংলাদেশ আলোকিত হয়েছিল

আমি আমার নিজেকে তোমার কবরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করিতেছি, যে তুমি কবরে শায়িত

আমি তোমার মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ দেখেছি, ক্ষমা, দয়া ও দানশীলতা-

নিশ্চয়ই তুমি জগতে বিশ্বের উৎপীড়িত এবং নিপীড়িতদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলে

সেহেতু অত্যাচারীরা তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে-

আমি, আমরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের বিচারের প্রার্থনা জানাই,

যারা তোমাকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে।”

দৈনিক যুগান্তর, ০৩ আগস্ট ২০২১ সংখ্যায় “শব্দে ছন্দে পিতার মুখ” শিরোণামে লেখক ইকবাল খোরশেদ রচিত প্রবন্ধে এই কবিতাটির বাংলা অনুবাদে কিছুটা পাঠান্তর লক্ষ্য করা যায়। সেখানে কবিতাটির ‘সেহেতু অত্যাচারীরা তোমাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে-’ চরণটির পর নীচের এই চরণ দুটি যুক্ত করা হয়েছে-

“আমরা মহান আল্লাহর নিকট তোমার আখিরাতের মঙ্গল কামনা করি।

বিদায়! বিদায়! বিদায়! হে মহান জাতির জনক।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতাও রচিত হয়েছিল উর্দুতে। দুটি কবিতাই রচনা করেন বাংলাদেশের উর্দুভাষার শীর্ষস্থানীয় কবি নওশাদ নূরী। ‘উত্থান-উৎস’ শীর্ষক তার প্রথম কবিতায় তিনি লেখেন-

‘সে আছে, সে আছে-

সর্বদা হাজির সে যে, অফুরান শক্তি হয়ে সে আছে,

সে আছে সে অমর, মৃত্যুঞ্জয়ী, মৃত্যুনেই তার।’

(অনুবাদ: কবি আসাদ চৌধুরী)

১৯৭৫-এর ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দাফনের পর তিনি ‘নজম টুঙ্গিপাড়া’ (জন্ম টুঙ্গিপাড়া) শীর্ষক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার দ্বিতীয় কবিতাটি লেখেন। এ কবিতায় তিনি বলেন-

‘তোমরা কি জানো? তোমরা কী জানো?

পথের শুরুটা হয়েছিল এইখানে,

পথ খোয়া গেল, হায়, সেও এইখানে।’

(অনুবাদ: কবি আসাদ চৌধুরী)

জাতিরপিতাকে হারাবার মর্মবেদনায় রচিত চতুর্থ কবিতা তথা বাংলায় প্রথম কবিতাটি লেখেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-কবি সন্তোষ গুপ্ত। ‘রক্তাক্ত প্রচ্ছদের কাহিনী’ শিরোণামে এই কবিতাটি ১৯৭৫ সালেই রচিত হয়। এই কবিতায় তিনি লেখেন-

‘একটি নামের মধ্যে উঠে আসে বাংলাদেশ

স্বপ্নের পাখির সুর, নিসর্গের কোমল গান্ধার

মৃদৃকন্ঠে ভালোবাসা সাজানো বাগান;

আবার ককনো সেই নাম থেকে পেয়ে গেছি

মাটির ঠিকানা, দেখেছি পদ্মার বেগ

ভাঙনের উত্তাল মিয়রে থরোথরো

গ্রামগ-বন্দরের সুখ-দুঃখ ব্রথার ণিঃমম্বাস

শস্যের হরিৎ ক্ষেত বুকে নিয়ে কৃসকের ¤্রম

জেগে থাকে আরও সাথে নক্ষত্রের বিশাল আকাশ।

এক রাতে সবই নিহত হলো সপরিবারে

নিসর্গ পাখি ফুল ভারোবাসা নদীর নারীর গান।’

কিন্তু এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের  পরেও নিঃশ্চুপ নির্বিকার জাতিকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন-

‘এই বৃহন্নলা বেশ খুলে ফেরো বীর্যবান

পতার সন্তান। অজ্ঞাতবাসের কাল শেষ হোক

মৃত্যুর সারথি যারা পদে পদেসুকৌশলে ফাঁদ পাতে

কেবলি তাদের কাছে হাত পাতো, এ কেমন পিতৃবক্তি তব

বিদ্রোহী নকবির কাছে দীক্সা আছে, তবু অগ্নিবীণা রেখে

খহ্জনী বাজিয়ে কেন দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তি;

রক্তে নাহি বাজে ধিক্ ধিক্

শহীদ হয়েছে যারা সেই সব উজ্জ্বল প্রেমিক

রক্তের সম্পর্ক যদি রেখে থাকে তোমার শরীরে।’

তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ১৯৭৭ সালে সেনাশাসিত বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করে কবিতা লেখেন কবি নির্মলেন্দু গুণ- ‘আজ আমি কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ । এই কবিতায় তিনি বলেন-

‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,

রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ

গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।

আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

শহীদ মিনার থেকে খসেপড়া একটি রক্তাক্ত ইট

গতকাল আমাকে বলেছে,

আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।

আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

 

এই বসন্তের বটমূলে সমবেত ব্যথিত মানুষগুলো স্বাক্ষী থাককু,

না-ফোটা কৃষ্ণচ‚ড়ার শুস্ক-ভগ্ন অপ্রস্তুত প্রাণের ঐ গোপন মঞ্জুরিগুলো

কান পেতে শুনুক, আসন্ন সন্ধ্যার এই কালো কোকিলটি জেনে যাক;

আমার পায়ের তলার পুণ্য মাটি ছুঁয়ে

আমি আজ সেই গোলাপের কথা রাখলাম

আমি আজ সেই পলাশের কথা রাখলাম

আমি আজ সেই স্বপ্নের কথা রাখলাম।

আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি,

আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম প্রকাশ্যে পঠিত কবিতাও এটি। এই কবিতাটি তিনি ১৯৭৭ সালে একুশের সকালে বাংলা একাডেমির কবিতা পাঠের আসরে পাঠ করেন অসীম সাহস নিয়ে।

নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই ভালবাসার কথা, দায়বদ্ধতার কথা তাঁর আরও অনেক কবিতায় তুলে ধরেছেন। বস্তুত: নির্মলেন্দু গুণের কবিতাতেই সবচেয়ে বেশিবার বঙ্গবন্ধু এসেছেন ঘুরেফিরে নানা মাত্রিকতায়। কবির ২০১২ সালে প্রকাশিত কবির ‘মুজিবমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ত্রিশটির মতো কবিতা।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের  পর প্রথম প্রতিবাদী কবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে ‘এ লাশ আমরা রাখব কোথায়’ শিরোণামে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অজ্ঞাত সংগঠন ‘সূর্য তরুণ গোষ্ঠী’র নামে এই কবিতা-সংকলনটি প্রকাশিত হয় কয়েকজন প্রতিবাদী তরুণের উদ্যোগে । এ দুঃসাহসিক সংকলনের পরিকল্পনা করেছিলেন ছড়াকার আলতাফ আলী হাসু। সংকলনে মোট ত্রিশটি কবিতা ছাপা হয়েছিল এবং সম্পাদক হিসাবে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলনটি যখন প্রকাশিত হয়, তখন ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করার মতো মানুষ ছিল হাতেগোনা। এই সংকলনে তরুণ কবি কামাল চৌধুরী ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ শিরোনামে অনন্যসাধারণ এক কবিতা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য তিনি ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতার একটি বই প্রকাশ করেন। ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ কবিতায় তিনি বলেন-

‘কবরের নির্জন প্রবাসে

তোমার আত্মার মাগফেরাতের জন্য

যেসব বৃদ্ধেরা কাঁদে

আমাদের যে-সব বোনেরা

পিতা, ভাই, সন্তানের মতো

তোমার পবিত্র নাম

ভালোবেসে হৃদয়ে রেখেছে

যে-সব সাহসী লোক

বঙ্গোপসাগরের সব দুরন্ত মাঝির মতো

শোষিতের বৈঠা ধরে আছে

হে আমার স্বাধীনতার মহান স্থপতি

মহান প্রভুর নামে আমার শপথ

সেইসব বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথ

সেইসব ভাই-বোন লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আমার শপথ

আমি প্রতিশোধ নেব

আমার রক্ত ও শ্রম দিয়ে

এই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখা

সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেব।’

‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলনটির সা¤প্রতিক সংস্করণের ভূমিকায় আমিনুল ইসলাম বেদু জানান, ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি মতো একটি তরুণ এসে আমাকে বাসস অফিসে বলল আপনি আমাকে চিনেন না, আমি আইনশাস্ত্রে লেখাপড়া করি। আমরা কয়জন ঠিক করেছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর উপর একটি ছোট্ট কবিতার সংকলন বের করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করবো।’ তাঁরই উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্লাস কক্ষে বেশ কয়েকজন কবি বসেন। সেদিন বৈঠকে আমিনুল ইসলাম বেদু ও আলতাফ আলী হাসুসহ উপস্থিত ছিলেন, দিলওয়ার, হায়াৎ মামুদ, রাহাত খান, মাশুক চৌধুরী, ফরিদুর রহমান বাবুল, সুকুমার বড়ুয়া, মোহাম্মদ মোস্তফা, মাহমুদুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, তুষার কর, মোহাম্মদ রফিক, আবদুল আজিজ, শান্তিময় বিশ্বাস, আখতার হুসেন, ভীষ্মদেব চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন আহমদ, জাহিদুল হক, ইউসুফ আলী এটম, সিরাজুল ফরিদ, ফজলুল হক সরকার, মহাদেব সাহা, জাফর ওয়াজেদ, লুৎফর রহমান রিটন, নূর উদদীন শেখ, ওয়াহিদ রেজা, কামাল চৌধুরী ও খালেক বিন জয়েনউদ্দিন। এঁরা সকলে একটি করে কবিতা তিন দিনের ভেতর আলতাফ আলী হাসুর কাছে জমা দেন। এঁদের কবিতা নিয়ে সংকলনটি প্রকাশিত হয়। লক্ষ্য করার বিষয়, সংকলনে স্থান পাওয়া লেখকদের অনেকে আজ খ্যাতনামা কবি, কেউ কেউ কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক, অনেকে আর কবিতা লেখেননি। যেমন আমিনুল ইসলাম বেদুর এটিই প্রথম এবং শেষ কবিতা। কিন্তু সেসময় আমাদের সাহিত্যে অনেক অগ্রগণ্য কবি ছিলেন, যারা তখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখার সাহস দেখাতে পারেননি। যাঁরা লিখেছেন তাঁদের পাশেও কোনো কোনো কবি দাঁড়াননি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের  পর তাঁকে নিয়ে কবিতা লেখার কারণে রমনা থানা হাজতে নির্মলেন্দু গুণ সাতদিন ছিলেন। তখন অন্য লেখকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গুণ বলছেন, ‘মহাদেব (সাহা) গেছিল আমার ছোটভাইকে নিয়ে দৈনিক বাংলায়, তখন শামসুর রাহমান, আহসান হাবীব, হাসান হাফিজুর রহমান তখন দৈনিক বাংলার সাথে যারা যুক্ত, তারা মহাদেবকে ডিসকারেজ করলো যে নির্মলকে নিয়ে তুমিও প্রবলেমে পড়বা। বিবৃতি দেয়াতো দূরের কথা, তারা মহাদেবকে নিবৃত করেছিল আমার ইস্যুটা নিয়ে মুভ না করার জন্য। আমার মুক্তির জন্য কেউ দাবী জানায় নাই।’ (রাজু আলাউদ্দিন গৃহীত নির্মলেন্দু গুণের সাক্ষাৎকার, বিডিআর্টস, ১৫ আগস্ট, ২০১৫)। কিন্তু আমরা জানি, তাঁদের অনেকে পরে রাজনৈতিক অবস্থা অনুকূলে এলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব কবিই অসংখ্য কবিতা লিখেছেন কবিতা লিখেছেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের কলম থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কালোত্তীর্ণ কবিতার জন্ম হয়েছে । পাঠকনন্দিতও হয়েছে সেসব কবিতা। । কিন্তু কবিতার মান বিবেচনায় নয়, রচনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়’ সংকলন এবং এর কবিরা অবশ্যই ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার দাবিদার।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাঁরা কবিতা লিখেছেন এই তালিকায় কবি শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল, রোকনুজ্জামান খান, শওকত ওসমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সিকান্দার আবু জাফর, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কায়সুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, আসাদ চৌধুরী, সিকদার আমিনুল হক, রফিক আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবদুল গাফফার চৌধুরী, আবুবকর সিদ্দিক, বেলাল চৌধুরী, শহীদ কাদরী, অসীম সাহা, রবিউল হুসাইন, হেলাল হাফিজ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মোহাম্মদ সাদিক, আসলাম সানী, আনিসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হক, তিতাশ চৌধুরী, নাসির আহমেদ, রবীন্দ্র গোপ, হুমায়ুন আজাদসহ বাংলা ভাষার প্রবীন-নবীন আরও অনেক কবির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের রচিত কবিতার তালিকাও হাজার ছাড়িয়ে যাবে। মূলত: বঙ্গবন্ধু সবার জন্য এক অনন্ত প্রেরণার অফুরন্ত উৎস। তাঁকে নিয়ে কবিরা প্রতিনিয়ত কবিতা লিখছেন এবং আগামী দিনেও লিখবেন। তাঁদের কবিতা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করার আশা রইলো। #

 তথ্যসূত্র :

১. প্রবন্ধ- শহীদ বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত প্রথম আরবি কবিতা, মাওলানা এম এ রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৭জুন ২০১১ ।

২. প্রবন্ধ- শব্দে ও ছন্দে পিতার মুখ : ইকবাল খোরশেদ , দৈনিক যুগান্তর, ০৩ আগস্ট ২০২১।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড প্রথম প্রতিবাদী কবিতা ও সংকলন

ডাঃ নিলুফার ইয়াসমীন (নীলা)

১৫ জুলাই, ২০২১ , ৩:১৮ অপরাহ্ণ

ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের সমস্যা ও প্রতিকার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯.২ শতাংশ। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তি মাত্রায় থাকার ফলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অজান্তেই দাঁত ও মাড়িসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ খুব সহজেই আক্রান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর মুখ ও দাঁতের সমস্যা সমূহঃ

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং দাঁত ও মাড়ির রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মুখে লালা নিঃসরণ কমে গিয়ে জীবাণুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলস্বরূপ দাঁতের মাড়িতে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় মুখের ভিতরে জিহ্বা এবং মাড়িতে ছোট ছোট গোটা বা ঘা, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। এ ছাড়াও মাড়ির মাঝখানে পকেটের মতো জায়গা তৈরি হয়। এগুলোকে অবহেলা করলে অনেক সময় দাঁত মাড়ি থেকে আলগা হয়ে যায়।

প্রতিকারঃ

১. দাঁতের ফাঁকে কোনভাবেই যেন খাবার জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য খাবার পরে অবশ্যই কুলকুচি করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।

২. সঠিক নিয়মে দিনে ২ বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালের নাস্তা করার পরে। ব্যবহৃত ব্রাশের ব্রিসল অবশ্যই নরম হতে হবে।

৩. ব্রাশ করার পাশাপাশি ডেন্টাল ফ্লসিং করা দরকারি।

৪. মিষ্টি ও আঠলো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৫. সংবেদনশীল দাঁতের জন্য ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেষ্ট ব্যবহার করতে হবে।

৬. বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টাল সার্জনের ( অবশ্যই বিডিএস ডিগ্রীধারী )  পরামর্শ নিতে হবে। ছোটখাটো যেকোন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করার আগেই চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

৭. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ভাঙা বা ধারালো দাঁতের মাধ্যমে অনেক সময় গালে বা জিহ্বায় ক্ষত তৈরি হয়। এধরণের কিছু পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশী চর্চিত ও ভয়াবহ মহামারী কোভিড – ১৯ বিশ্বজুড়ে চলমান। সম্প্রতি “ওরাল মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টাল রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, মাউথওয়াশে এমনকিছু পদার্থ থাকে যেগুলো কোভিডের সংক্রমণ কমাতে পারে। মুখ থেকে ফুসফুসে পৌঁছানোর আগেই ভাইরাসকে নিস্তেজ করে দেয়া সম্ভব যদি আপনি নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখেন। অথ্যাৎ দাঁত মাজা, মাউথওয়াশ ব্যবহার ও নিয়মিত ফ্লস  করার মতন সাধারণ অভ্যাসগুলো আপনার শরীরে কোভিডের প্রভাব কমিয়ে রাখতে পারে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দাঁত ও মাড়ির যত্নে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখাই মুখ্য।  মনে রাখবেন আপনার সামান্য সচেতনতাই আপনার দাঁত ও মাড়ি সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য যথেষ্ট।

ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁতের সমস্যা ও প্রতিকার - mugdhota

রবীন জাকারিয়া

১৫ জুলাই, ২০২১ , ৩:১৪ অপরাহ্ণ

তিনি রাজা মিয়া

(মুখবন্ধ: চরিত্রের রাজা মিয়া আসলে কেউ নয়৷ আমরা, আমাদের বাবা-চাচা, কিংবা মামা-খালু যারা শুধুমাত্র আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা করে অবৈধ ও দূর্নীতির মায়াজালে নিজের, সমাজের তথা দেশের ক্ষতি সাধন করছেন৷ অথচ সৎভাবে একটা সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ আমরাই নির্মাণ করতে পারি অনায়াসে৷ গল্পের ভেতর তুলে ধরার চেষ্টা করেছি একজন ডায়াবেটিস রোগীর অহায়ত্ব আর খাদ্যাভ্যাস কীভাবে প্রতিকার করতে পারে৷)

রাজা মিয়া৷ এক দিন মজুর পরিবারের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষা গ্রহণকারী মানুষ৷ লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ আর মেধাবী হওয়ার কারণে তার বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াশুনা করান৷ এজন্য অন্যান্য ভাই-বোনের অবদানও কম নয়৷ নিজের ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজা মিয়ার স্বপ্ন পুরণে তারা বাবার দায়িত্বের পাশাপাশি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক ও মানষিক সহায়তা করেছে৷

সময়ের পরিবর্তনে একদিন রাজা মিয়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগে চাকরি পেলেন৷ সকলে ভীষণ খুশি৷ কষ্টের দিন আর রইবে না৷ ভাই-বোনেরা প্রতিবেশিদের মিষ্টি বিতরণ করলো৷ চাট্টিখানি কথা নয়৷ ভাইটি এখন ইঞ্জিনিয়ার৷ যদিও তারা রয়ে গেল নিরক্ষর হয়ে৷

প্রথমের দিকে পরিবারটা বেশ আনন্দেই কাটালো৷ ইতিমধ্যে মর্যাদার কথা ভেবে বাবাকে দিন মজুরের কাজ থেকে ছাড়িয়ে নিল৷ বাবা খুশি৷ এ বয়সে আর ভারী কাজ করতে শরীর কুলায় না৷ বাড়ির কাঠামো পরিবর্তন হলো৷ একটু বিত্তবান বিত্তবান ভাব আসলো৷ যতদিন গেল ছেলের আয় রোজগারে যেন বরকত নামতে থাকলো৷ পুরো পরিবার রাজা মিয়ার প্রজায় পরিণত হলো৷
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আবার কামাই ভাল৷ স্বাভাবিক ভাবেই ভাল ভাল বিয়ে প্রস্তাব আসতে থাকলো৷ উপায়ান্তর না দেখে ধুমধাম করে রাজা মিয়ার বিয়ে দেয়া হলো৷ বিশাল আয়োজন৷ গ্রামের সকল মানুষ দাওয়াত পেয়ে খুশি৷ প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ এখনকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার৷

আশির দশক৷ এরশাদ সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রচুর কাজ চলছে৷ উপজেলা ও নতুন জেলা সদরে নতুন নতুন বিল্ডিং, কোর্ট, রাস্তাঘাট তৈরি প্রভৃতি কর্মযজ্ঞ চলমান৷ ঠিকাদার আর অবকাঠামো তৈরি বিষয়ক বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের যেন দম ফেলবার ফুসরত নেই৷ কাজ, টাকা আর পিসি সব একাকার৷ হঠাৎ করে কিছু মানুষ টাকার কুমির বনে গেল৷ রাজা মিয়া তাদেরই একজন৷

বিত্তবান রাজা মিয়া পরিবারের সাথে পূর্বের বাড়িতে আর থাকলো না৷ শহরের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি তৈরি করে ফেললো৷ একটিতে নিজের স্ত্রীসহ থাকে৷ অন্যগুলো ভাড়া৷ বেশ কিছু শপিং মলে নিজের ও স্ত্রীর নামে দোকান কিনে ভাড়া দিল৷

প্রতিদিন খালি পকেটে অফিসে যাওয়া লোকটাই অফিস শেষে যখন বাড়ি ঢোকে৷ তিনি জানেন না তার হিপ পকেটে ক’হাজার টাকা আছে৷ চারিদিকে শুধু টাকা আর টাকা৷ অবৈধ টাকার একটা বিশেষত্ব হচ্ছে বিলাশ জীবনের আহ্বান করে৷ রাজা মিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়৷ তার জীবনের দর্শনই হয়ে উঠলো খাও-দাও, স্ফুর্তি করো৷ অফিস শেষে যখন বাড়ি ফেরে৷ প্রতিদিন দুই-আড়াই হাজার টাকার স্ন্যাকস আইটেম কিনে আনে৷ অথচ বাড়িতে তারা দু’জন৷ ফ্রিজে মাছ-মাংস ভর্তি তবুও প্রতিদিন তিনি বাজার যান৷ নদীর বড় বোয়াল, পাঙ্গাশ কিংবা রুই-কাতলা যদি পাওয়া যায়৷

জীবণের জন্য খাদ্য তার কাছে হয়ে উঠলো খাদ্যের জন্য জীবন৷ সব সময় হৈ হুল্লোর, উৎসব আর বিত্তবান বন্ধু আর কলিগদের দাওয়াত ও পার্টি হয়ে নিত্যদিনের কাজ৷

এলাকার মস্তান, চাঁদাবাজ তার পকেটে৷ তারা আসলেই দু’হাতে টাকা দেন৷ অথচ পৈত্রিক বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা কিংবা দিনমজুর ভাই ও ভগ্নিপতিদের সাহায্য করবার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই তার৷

ইদানিং হাঁটাহাঁটি কিংবা মটল বাইক তার একদম সহ্য হয় না৷ শরীরটাও বেঢপ হয়ে গেছে৷ একটুতেই ক্লান্ত লাগে৷ তাই নতুন গাড়ি কিনলেন৷ চার চাকা৷ আহ্ শান্তি! মনে হয় এসি ছেড়ে দিয়ে গাড়িতেই সারাদিন ঘুরে বেড়ান৷ লাউড স্পিকারে গাড়িতে গান শুনতে এত মজা লাগে যে অপছন্দের গানও যেন নতুন মাত্রা পায়৷ তাছাড়া সকলে দেখুক রাজা মিয়া কত দামি গাড়ির মালিক৷ তাছাড়া ভাল করেই জানেন তিনি সুদর্শন৷ যেমন লম্বা-চওড়া তেমনি তার চেহারায় একটা আভিজাত্যের ভাব আছে৷ তাই প্রথম দর্শনেই সবখানে গুরুত্ব পান৷ এমনো হয়েছে বসের সাথে কোন শপিং মলে গিয়েছে৷ দোকানদার বসকে গুরুত্ব না দিয়ে তার দিকেই মনযোগী বেশি৷ সৌন্দর্য্যের বাড়তি মূল্য তিনি আদায় করতে পারেন৷ বৈষয়িক বিষয়টাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো৷ যার ফলে একমাত্র সন্তানকে না পারলেন উচ্চ শিক্ষিত করতে৷ না পারলেন মানুষ করতে৷ বাবার আদর্শই তাকে সংক্রামিত করলো৷ সেটা হলো বৈষয়িক৷ ছেলের চিন্তা বাবার যা সম্পদ আছে৷ তা সে আজীবন বসে খেলেও শেষ করতে পারবে না৷ তো এত কষ্ট করে লেখাপড়া আর চাকরি করার দরকার কী? যখন যে এমাউন্ট টাকা দরকার৷ বাবার কাছে যে করেই হোক সে তা আদায় করে ছাড়ে৷ কোন কৈফিয়ত ছাড়াই৷ বুঝতে পারে ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ মাদকাসক্ত হচ্ছে৷ রাজা মিয়া মাঝে ক্ষিপ্ত হয়৷ শাসন করতে চায়৷ কিন্ত পৃথিবীর নির্মম সত্য হলো৷ অসৎ আর দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি কখনো অন্যকে শাসন করবার যোগ্যতা রাখে না৷

বেহিসাবি খাদ্যাভ্যাস আর সন্তানের চিন্তায়৷ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন৷ দেশের বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা করলেন৷ রোগ ধরা পড়লো হার্টের৷ সাথে ডায়াবেটিস৷ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন তাকে শারীরিক পরিশ্রম বিশেষ করে হাঁটতে হবে৷ আর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে৷ না হলে খারাপ পরিণতি হতে পারে৷

দিনের পর দিন শারীরিক পরিশ্রম আর পরিমিত খাবারের কারণে এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকার ফলে লম্বা-চওড়া ও সুদর্শন রাজা মিয়া অতি বৃদ্ধ মানুষের মতো হয়ে গেল৷ লম্বা-চওড়া লোকটা কেন জানি খাটো আর শীর্ণকায় হলো৷ আগের রাজা মিয়াকে খুঁজেই পাওয়া যায় না৷ সেই আভিজাত্য আর অভিব্যক্তি হারিয়ে গেছে৷ একমাত্র সন্তানকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ যদি ভাল হয়৷ এই আশায়৷

এখনো তিনি প্রতিদিন বাজারে যান৷ নদীর বড় মাছটা কিংবা টাটকা ফল কিনতে৷ কিন্ত ডাইনিং টেবিলে যখন খেতে বসেন৷ তখন দেখেন তার কেনা বড় মাছটা কিংবা ফলগুলো খাচ্ছে তার গৃহপরিচারিকা ও ড্রাইভার৷ তার প্লেটে দেয়া হয়েছে আটার দু”টো শুকনো রুটি৷

এখনো তিনি প্রতিদিন তার প্রিয় গাড়িটা নিয়ে বের হন শুধু পার্থক্য হলো তিনি হাঁটতে থাকেন আর ড্রাইভার লাউড স্পিকারে গান শুনতে শুনতে তাকে অনুসরণ করে৷

নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে ভাবেন৷ কোন কুল কিনারা পান না৷ ইদানিং নামাজ পড়ছেন৷ দাড়ি রেখেছেন৷ নিজের পাপ মোচনের জন্য আল্লাহ্’র কাছে প্রার্থণা করেন৷ অনুশোচনায় ভোগেন৷

একজন আলেমের কাছে তিনি সবকিছু বলেছেন৷ আল্লাহ্’র ক্ষমা পাওয়ার পথ কি নেই? আলেম বলেছেন আল্লাহ্’র কাছে সব সময় ক্ষমার পথ খোলা৷ নিরাশ হওয়াটাও বড় গুনাহ্৷ তবে আপনি যদি সত্যিই ক্ষমা পেতে চান৷ তাহলে অবৈধভাবে অর্জিত সকল সম্পদ কোন ছওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়াই গরীব মিসকীনকে দিয়ে দিতে হবে৷ এরপর প্রার্থণা করুন৷ ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলুন৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী এবং উত্তম সাহায্যকারী৷

রাজা মিয়া এখন দোটানার মধ্যে৷ একবার চিন্তা করেন সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহ্’র নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবো৷ আবার চিন্তা করেন৷ সবকিছু দিলেতো ফকির হয়ে যাবো৷ কেননা কোন সম্পদইতো বৈধ উপার্জনে নয়৷ নতুন আর একটা টেনশন তৈরি হয়ে যাচ্ছে৷

আচ্ছা বুকটা কি একটু ব্যাথা করছে? বাম দিকের নিপলের নীচে? রাজা মিয়া দ্রুত ঘরের দিকে গেল৷ অষুধ খেতে হবে৷

বেশ কিছুদিন পর একজন অভিজাত ভদ্রলোক তার বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে গাড়ি নামলেন৷ রাজা মিয়া গাড়ি গ্যারেজের সামনে দাঁড়িয়ে৷ লুঙ্গি পড়ে আছেন৷ তিনি মনযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন৷ ড্রাইভার তার প্রিয় দামি গাড়িটা ঠিকমতো পরিস্কার করছে কি-না! কাজের লোকদের বিশ্বাস নেই৷ সব ফাঁকিবাজ৷ সাথে না থাকলে দুই বালতি পানি দিয়ে গাড়িটা কোনরকমে ভিজিয়ে বলবে স্যার খুব সুন্দর করে পরিস্কার করেছি৷ সব অপদার্থ৷ দায়িত্বজ্ঞানহীন৷ দেশটা একেবারে শেষ হয়ে গেল৷ বিড়বিড় করে তিনি একাই কথা বলতে লাগলেন৷

এমন সদ্য গাড়ি থেকে নামা ভদ্রলোক লুঙ্গি পরিহিত রাজা মিয়াকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন৷ বললেন তুমি কি এখানকার গার্ড? রাজা মিয়া থ৷ রাগে লাল হয়ে উত্তর দেয়ার আগেই আগন্তক বললো তুমি কি রাজা মিয়ার ফ্ল্যাটটা দেখিয়ে দেবে? তিনি রাগ সংবরণ করে বললেন আপনি ওনার কী হন? আগন্তক বললেন সেটা তোমার না জানলেও চলবে৷ শুধু তুমি ওকে গিয়ে বলো চট্টগ্রাম থেকে ওর বন্ধু জসীম এসেছে৷ বলেই পাঁচশত টাকার একটা নোট বখশিস হিসেবে তার হাতে গুঁজিয়ে দিল৷ রাগে-অপমানে ভুলে অবশেষে ভাল লাগা একটা অনুভূতি নিয়ে বললো “আমিই রাজা মিয়া”৷ আগন্তক বললো ঠিক আছে তুমিও রাজা মিয়া৷ কিন্ত আমার দরকার আমার বন্ধু, কলিগ ইঞ্জিনিয়ার রাজা মিয়া তোমাকে নয়৷ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে ড্রাইভার গাড়ি পরিস্কার বন্ধ করে চিৎকার করে আগন্তককে বললেন স্যার তিনি রাজা মিয়া৷

তিনি রাজা মিয়া