শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য

মুগ্ধতা.কম

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:৫০ অপরাহ্ণ

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

ব্যবচ্ছেদ

আপনাকে একটু  দুঃখ দেখালে আপনি নির্দ্বিধায়  ঢুকে যাবেন আমার অন্দরমহলে

যেন আমার অন্দরমহলের সদর দরজায় নেই কোনো প্রহরী

দরজা খোলা

প্রবেশাধিকার রয়েছে সকলের

তারপর

তারপর আপনি ব্যবচ্ছেদ করবেন আমার সংসার

আমার যাপিত জীবন

আমার দাম্পত্য 

খুঁটে খুঁটে ব্যবচ্ছেদ করবেন সংসারের খুঁটিনাটি 

আমার চাল ডাল নুন আর তরকারির নিত্য বাজারদর

আপনি বড় বড় অক্ষরে লিখে ঘোষণা করবেন

এই মেয়েটি অসুখী

দাম্পত্য কলহে মেয়েটির জীবন অতিষ্ঠ 

তারপর 

তারপর আপনি একটা বাঁকা হাসিসমেত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবেন-

‘সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে’

হায়, আমি তখন গুণহীন মানহীন রমন অযোগ্য এক রমনী

আমার চোখের ভাষা থেকে আপনি নোনাজলের গল্প বুনবেন

আমার বিষন্ন মুখ দেখে লিখবেন ঘোর অমাবস্যার গল্প

আমার দীর্ঘশ্বাস শুনে গাঢ় শীতের

কোনো কঙ্কালসার আমলকি বন থেকে তুলে আনবেন পাতা ঝরার গল্প

অথচ

আমি যদি আমার এক টুকরো আনন্দ দেখাই

আপনি নিশ্চিত কলম থামিয়ে দেবেন

আপনার বোধ হয়ে পড়বে দ্বিধান্বিত 

আপনি কূল খুঁজে পাবেন না তার

কী করে পাবেন

আমি তো আনন্দ কুড়োই সামান্য একটা ফুলের শরীর থেকে

পাখিদের ভাষা থেকে

নদীর কলতান থেকে তুলে আনি আনন্দ 

একটা প্রজাপতির নাচন থেকে তুলে আনি আনন্দ 

শনশন করে বয়ে যাওয়া বাতাস থেকে আমি জোগাড় করি তুমুল আনন্দ 

এত ছোট ছোট মুহূর্ত থেকে আমি আনন্দ কুড়াই 

আপনি তল খুঁজে পাবেন না তার

দুঃখকে ব্যবচ্ছেদ করে জানা যায় অনেককিছু 

আনন্দকে ব্যবচ্ছেদ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়…

_____________________________

আশাভঙ্গ

ঘাস হয়ে জন্মাবো জেনে 

কি আনন্দ পেয়েছিল সে

পায়ে পায়ে দলে যাবে বলে

আহা!

আর এদিকে অপরুপ ঘাসফুল হয়ে ফুটে আছি

তার চোখে পড়ার আগে

_______________________________

ভিনদেশী দুই পাখি

ধরো, আমাদের কোনো পরিচয় নেই

আমরা দু’জন অনেক দূরের কেউ

কোনদিন কেউ শ্বাস ছুঁইনি কারোর

চোখের ভেতর কেউ পুষিনি কারোর অভিমান

আঙুল ভাঁজে কেউ লিখিনি অন্যকারোর নাম

কেউ চিনি না কারোর পায়ের আওয়াজ

পাঁজর খুলে কেউ দেখিনি দুঃখ সেথায় কেমন

কেউ জানি না হস্তরেখায় কার কী লেখা আছে!

ঠিক দু’জনের ভাগ্যরেখা কোন দিকে যে গেছে

তবু চলো একটা সকাল আমরা দু’জন একই সাথে হাঁটি

হাঁটতে হাঁটতে সকাল গড়াক, দুপুর গড়াক

গড়িয়ে বিকেল সন্ধ্যা নামুক

সন্ধ্যাটুকু মিলিয়ে গেলে রাতের কাছে থামি

আমরা দু’জন আকাশঢাকা তারার সাথে জাগি

তারার কাছে গড়িয়ে আসা সকাল নিয়ে বলি

দুপুর নিয়ে বলি,

মিলিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নিয়ে বলি

তারার কাছে গোপন ব্যথার সবক’টা দোর খুলি

জানুক তারা আমরা নাহয় খুব অচেনা, ভিনদেশী দুই পাখি

আমরা তবু আজ এখানে একইসাথে আছি

এই এতটা এসেছি হেঁটে সঙ্গে করে বিশ্বাসী দুই আঁখি…

____________________________

একটুখানি বদলে যেতে ইচ্ছে করে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে গুছিয়ে নিতে খুব নিজেকে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় 

 যদি এই আমিটা বিপুলরকম  বদলে যাই

যদি হাসতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই

কথা মাপি ফিতের দাগে

পাঁজর ভাঙার শব্দ লুকোই অট্টহাসে

যদি কারুর দুঃখ ছুঁতে আঙুল বাধে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় এসব নিয়ে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

খুব সামান্যই বদলে যেতে ইচ্ছে করে

এই যে ধরুন

ইচ্ছে করে অগোছালো চুলগুলোকে গুছিয়ে রাখি চুলের ফিতেয়

ভয় হয় 

চুলের ফাঁকে বুলিয়ে দেয়া আঙুলগুলো

এবার যদি হারিয়ে ফেলি 

খুব ভয় হয়

ইচ্ছে করে একটুখানি বদলে নিতে খুব নিজেকে

ইচ্ছে করে  ঘর সংসার গুছিয়ে রাখি

কিন্তু যদি লকারভরে গুছিয়ে ফেলি 

মান অভিমান, খুনসুটি আর অট্টহাসি…

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

শ্যামলী বিনতে আমজাদ

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

শ্যামলী বিনতে আমজাদের একগুচ্ছ ছড়া

অন্তঃসারশূন্য

বিবেক ভেজেছি বেগুনের মত

বুদ্ধিকে ডুবো তেলে,

গরম ঘি-ভাতে ওসবের সাথে

হজম দারুণ মেলে।

সব খেয়ে আজ শক্তি ভীষণ

দাপট আমার হাই,

নিঁখুত সমাজে আমার মতন

কয়জন আছো ভাই?

_______________________

ছুটি

তুমি চলেছো মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে

আমি চলেছি রথে,

জানা আছে ফের

দেখা হবে ঠিক-

ভিন্ন দুটি পথে।

দিক হারিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে

মাছ খোঁজা ওই বক,

দিনশেষে সে ও

বেঁচে যায় ঠিকই-

নয়তো আহাম্মক।

যে যাই করি ফিরতে হবে

পড়বে যখন ডাক,

সব পিছুটান হটিয়ে দিয়ে

হয়ে যাব নির্বাক।

___________________________

চাকরির ভাষা

ভাইভা ঘরে ইংরেজিটা

এখন কমন খুব,

বাংলা ভাষার জায়গা সেথায়

নেই, দিয়েছে ডুব।

মায়ের ভাষা আর ভাসে না

ভাইভা নদে আজ,

চাকরিটা তাই হচ্ছে না ভাই

কপাল জুড়ে ভাঁজ !

________________________

ফাঁকি

এটা জানি, ওটা জানি

সেটা অজানা !

জানা অজানার মান

হয় না জানা ।

একে জানি,ওকে জানি

জানা কত বাকি !

নিজেকে জানা নিয়ে

দেই শত ফাঁকি ।

_______________________

কালের অহংকার

ছুটছে সময় আলোর বেগে

কীসের তাড়া তার?

কোথায় যে তার ঘর বাড়ি আর

কীসের অহংকার?

থামতে বলি, নেয় না কানে

কালা কি তার কান?

কার ডাকে সে যাচ্ছে ছুটে

কীসের এত টান?

_____________________

পোকা বার্তা

চালে পোকা ডালে পোকা

পোকা আম পাড়াময়,

কাঠে পোকা নাটে পোকা

পোকা আজ তাড়া নয়-

খেয়ে নেবে তোকে যে..

ফুলে পোকা কুলে পোকা

পোকা খুব জ্বালাময়,

পেঁপে পোকা মেপে পোকা

শিগগিরই সাড়া নয়

হাতে পোকা দাতে পোকা

পোকা আজ মাথাময়,

ডানে পোকা বামে পোকা

পোকা খুব যা তা নয়

বিবেকের শোকেজে !

শ্যামলী বিনতে আমজাদের একগুচ্ছ ছড়া

আবু হানিফ জাকারিয়া

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১০:১১ অপরাহ্ণ

বিভ্রান্ত পথিক

ক্লান্তিহীন চলছি পথ থেকে পথে,

ছুটছি প্রান্তর থেকে প্রান্তর।

খুঁজে পাইনি আজো গন্তব্য।

নগর থেকে নগর, স্টেশন থেকে স্টেশন,

পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল, নদী ও সমুদ্র,

কোন বন্দর ঘুরে আবার এক বন্দর,

তবুও কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি আজো।

অলি-গলি, সড়ক-মহাসড়ক,লেন বাইলেন

কত নাম কত আকৃতি কত বিচিত্র রকমফের,

কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা; আমি চলছি ক্লান্তিহীন।

আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি, লেলিহান শিখা

জ্বলছে অবিরাম, কিন্তু সারাক্ষণ জ্বলে না,

নিভে একসময়; নেভে না আমার মনের আগুন।

রংবেরঙ এর মানুষ দেখি, দেখি নানা রকমের

খেলা খেলে চলছে যারা এই সময়ের খেলারাম।

বিভ্রান্তি ভর করে আমার মগজ বিকল করে দেয়, আমি ভুলে যাই আমার গন্তব্য, আমার শেষ ঠিকানা। আমি লোভী হয়ে যাই, থেমে যাই;

খেলা দেখে আনন্দ পাই, অপার আনন্দ আমার।

গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনা আমি বিভ্রান্ত পথিক।

বিভ্রান্ত পথিক

মুগ্ধতা.কম

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

পল লরেন্স ডানবারের দুটি কবিতা

অনুবাদ : আকিব শিকদার

আমেরিকার কবি পল লরেন্স ডানবার এর জন্ম ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে। পলের পিতামাতা ছিলেন ক্রীতদাস। কঠিন দারিদ্রতা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার শৈশব কেটেছে। দাসত্বের পীড়া নিয়ে বহু লেখা লিখেছেন তিনি। রূপকতা তার লেখার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ্য। লিখেছেন অল্প, তবে প্রতিটি সৃষ্টিই যেন তাঁর সেরা সৃষ্টি। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বল্পায়ু এই কবি আমেরিকার প্রথম সার্থক নিগ্রো কবি হিসেবে স্বীকৃত।

পল লরেন্স ডানবার এর বেশ কিছু কবিতা ইংরেজিতে রূপান্তর করেছিলেন আলবেরিক উডনি।

উদীয়মান সূর্য

সোনার থালার মতো একটি চাকতি

রোজ উঁকি দেয় পূর্ব নীলিমায়

জ্বলন্ত পয়সার মতো সেই চাকতিটি

পশ্চিমা গাছের আড়ালে রোজ ডুবে যায়।

প্রভাতে উঠে সে মৃদু তাপে

দুপুরে খড়তাপ পুড়িয়ে দেয় প্রান্তর

গোধূলিতে পুনরায় মৃদু তাপ।

মানব জীবন সেই সূর্যেরই মতো

যৌবনে তেজোদীপ্ত, কৈশোরে বার্ধক্যে নিস্তাপ।

সহানুভূতি

আমি জানি বন্দি পাখিটি কী ভাবছে একাকী!

যখন রোদ আলো ছড়ায় উপত্যকা ঢালে;

যখন বায়ু নাচে সুলম্ব ঘাসের ডগায়,

এবং নদীটি প্রবাহিত হয় চলমান কাঁচের মতো,

যখন প্রথম পাখিটি ডাকে এবং প্রথম কুঁড়িটি জাগে,

এবং যখন পবিত্র পাত্র থেকে সুগন্ধ লুট হয়ে যায়—

আমি জানি বন্দি পাখিটি কী ভাবছে একাকী!

আমি জানি বন্দি পাখিটি কেন পাখা ঝাপটায়

নিষ্ঠুর শিকগুলো তার রক্তে লাল হওয়া পর্যন্ত;

কারন তাকে ফিরে যেতে হবে তার ঠিকানায়,

সে ঝুলন্ত পাতার মতো আনন্দে সেঁটে যাবে শাখায়;

এখন দুঃখগুলো চিহ্নিত এক সফেদ পুরাতন ক্ষতে,

তা আরো স্পন্দিত হয় তীক্ষ্মতর হুলের আঘাতে—

আমি জানি বন্দি পাখিটি কেন পাখা ঝাপটায়!

আমি জানি বন্দি পাখিটি কেন শিস দিয়ে ওঠে,

ওহ্! যখন ডানায় তার রক্তছাপ, অন্তরে বেদনা,—

যখন আঘাত করে শিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়;

সে তো গায় না কোনো আনন্দ-সংগীত,

এ যে হৃদয় নিংড়ানো কোনো প্রার্থনার বাণী,

এ যে অভিশাপ ছুঁড়ে দেওয়া বিধাতার কাছে—

আমি জানি বন্দি পাখিটি কেন শিস দিয়ে ওঠে!

পল লরেন্স ডানবারের দুটি কবিতা

শারমিন সুলতানা কেয়া

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ , ৭:৫২ অপরাহ্ণ

বন্ধু এবং কয়েক টুকরো মেঘ

সহজ কথার সহজ অর্থ 

কখনো বোঝনি তুমি।

শেষ রাতের শিশির ঝরে পড়ার মতোই,

দূরত্ব ছিল তোমার আর আমার।

অথচ—

হৃদপিণ্ডের খুব কাছে ছিলে তুমি।

২.

আমি বললাম—

“আমার একটা ছোট্ট  ঘাসফড়িং চাই”।

আর তুমি—

রঙিন প্রজাপতি খোঁজার ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছ।

৩.

প্রাপ্তির হিসেব মেলাতে গিয়ে কতদুরে সরে গেছ নিজের অজান্তেই।

অথচ, প্রত্যাশার খাতাটা পূর্ণই ছিল তোমার।

৪.

তুমি শেষ বৃষ্টির, শেষ বিন্দু হয়ে ঝরে পড়ো যেকোনো দিন, যেকোনো সময়।

আমি উদার জমিন হয়ে,

পথচেয়ে আছি 

এবং থাকব।

৫.

অতঃপর 

নির্ভরতার নীড়ে

নিশিদিন যাপনে

পারস্পারিক সমঝোতা, বিশ্বাস

আর মায়ার আলিঙ্গনে

বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।

৬.

বন্ধু,

ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলে—

ঝিনুক আর মুক্তো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু।

বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে বলেছিলে—

মেঘের জলে আজ পাহাড় সিক্ত হবে।

বন্ধু,

তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে,

কখনো কি চোখ মেলে দেখেছ?

কখনো কি জানতে চেয়েছ?

কতখানি ভালোবাসি তোমাকে?

বন্ধু,

শুধু একবার ফিরে এসো—

শুধু একবার ছুঁয়ে দেখো,

কী নিদারুন যন্ত্রণা আমার বুকে।

বন্ধু,

শুধু একবার চোখ মেলে দেখো,

তোমার বন্ধুত্বের লড়াইয়ে 

আমিই হবো শ্রেষ্ঠ সৈনিক।

বন্ধু এবং কয়েক টুকরো মেঘ

মজনুর রহমান

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১০:১৯ অপরাহ্ণ

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

নিঃসঙ্গতা 

মায়ের চোখ থেকে নিঃসঙ্গতা নিয়ে এসে

শহরে বাড়ি বানাচ্ছে মানুষ,

এখন দুপুরের ভাতঘুমে সে দেখতে পায়

বাড়ির ছাদে বৃষ্টি পড়ছে-

টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ অনবরত 

বৃষ্টির ছাঁটে জানালা ভিজে যাচ্ছে,

অদূরে কসাইখানায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে লাল ষাঁড় 

আজ তার শেষ দিন পৃথিবীর বুকে।

নিচতলায় মজুরি নিয়ে চলে যাচ্ছে কারিগর 

সারাদিন সেও অবাক হয়ে ভাবে,

এমন নিঃসঙ্গতা দিয়ে মানুষ কী করে বাড়ি বানায়

যেখানে সঠিক পরিমাণে কান্না মেশানো নাই?

বৃষ্টি সাক্ষী

শেষবার আপনি বলেছিলেন, এই তুমুল বৃষ্টি সাক্ষী,

আমাদের আবার দেখা হবে।

বহুকাল আমি সাক্ষীকে হাজির করে বসে আছি,

যেখানে ঝড়ের কোতোয়াল চিৎকার করে ডাকে

অথচ আসামী পলাতক!

জানি বৃষ্টি আপনার জমিনেও হয়;

আপনিও তবে সাক্ষীকে সাথে নিয়ে ভিজতে থাকেন?

যেখানে বিচার আপনার কথামতো ঝরে?

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

রবীন জাকারিয়া

১৮ নভেম্বর, ২০২২ , ৯:৩১ অপরাহ্ণ

হুমায়ুন ছিল বলেই

হুমায়ুন ছিল বলেই
সবুজে হলুদ রোগাক্রান্ত সমাজের চিত্র পাল্টানোর জন্য
পকেটহীন হলুদ পানজাবি পরিহিত হিমুরা
নিশিতে পথে বেরুনোর আহ্বান করতো!
হুমায়ুন ছিল বলেই
পৌঢ় মিসির আলি হলুদে ব্যাধির
রহস্য উদঘাটনের জন্য
যুক্তির পর যুক্তি সাজাতো৷
শুভ্ররা কালো টাকা, দূর্ণীতি, ঘুষে ভরা
বিত্ত-বৈভবের মাঝেও শুভ্র-সাদা জীবনের স্বপ্ন দেখতো৷
হুমায়ুন ছিল তাই
প্রকাশনাগুলো বাণিজ্য করতো৷
দর্শনার্থী, পাঠক, লেখক, প্রকাশকে মুখর ছিল
হৃদয়ের বই মেলা৷
হুমায়ুন ছিল বলেই
পাঠক ছিল৷ যুব সমাজ বই পড়তো৷
আজ হুমায়ুন নেই
তাই কিশোর-যুবা বই পড়ে না৷
বাবার অসৎ পয়সায় কেনা
পালসার, হাংক কিংবা এপাচীর পিঠে সওয়ার হয় অধিক ক্ষিপ্রতার আশায়৷
ইয়াবা, সিসা অথবা মারিজুয়ানার নীল ধোঁয়ায়
নীল পর্ণোর বিষাক্ত নীল নট হয়ে যায়৷
হুমায়ুন নেই তাই
বইহীন, পাঠকহীন সমাজ!
ফেসবুকিং, চ্যাটিংএ চিটিং হয় যুবা নারী৷
হুমায়ুন নেই বলেই
জ্যোৎস্নার সরোবরে অবগাহন করেনা কেউ৷
সারাদেহে এত ভাইরাস আর কালিমা
এখনইতো সময় জ্যোৎস্নার সরোবরে অবগাহন করে
হলুদে ব্যাধি ধুয়ে শুভ্র হওয়ার৷

(শুভ জন্মদিন হুমায়ুন আহমেদ)
লেখা: রবীন জাকারিয়া

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

রবীন জাকারিয়া

১৩ নভেম্বর, ২০২২ , ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

মৃত্যুপুরী রবীন জাকারিয়া

আজ আমি চলে যাচ্ছি—
বড্ড গুমোট আর খাঁচায় আবদ্ধ
জীব মনে হয় নিজেকে!
এখানে ভরা জ্যোৎস্নার আলো পাল্লা দিতে পারেনা তীব্র বাহারী আলোর সাথে,
রঙধনু এখানে পুরোপুরি বিকশিত হতে পারেনা
ছোট্ট আকাশে,
বৃষ্টির সুর ঝংকার শোনার মানুষ নেই এখানে৷
বিত্ত বৈভবে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল
ছোট ছোট শহর, একই শহরে৷
ডিজে পার্টির কর্কশ সুর আর সুরা পানে মত্ত
নর-নারীর যুগল নৃত্য আর কোলাহলে মুখর৷
পাশের ফ্ল্যাটে প্রবাসী সন্তানের নিঃসঙ্গ
বৃদ্ধ মায়ের মৃতদেহ পরে থাকে
আঞ্জুমানে মফিদুলের দায়ভারে৷
এখানে মানুষে মানুষে সম্পর্ক হয় ক্ষমতায়,
টাকা কিংবা পদবীতে৷
স্থাপত্য শৈলীর নামে প্রত্যেকে বাড়ি নয়
নির্মান করেছে
একেকটি কয়েদখানা,
যা গুয়েন্তেনামা কারাগারের চেয়েও ভয়ংকর৷
আমিতো অপরাধী নই!
আমি কারাগারে থাকতে চাইনা কখনো৷
অপরুপ এই বিশাল পৃথিবী দেখে যেতে চাই
আমৃত্যু, মুক্ত পাখির মত৷
তাই বিবর্ণ, মেকি এই মৃত্যুপুরী থেকে
পালাতে চাই আজ, এখনই৷

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

মৃত্যুপুরী রবীন জাকারিয়া