শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য

মুগ্ধতা.কম

১৫ আগস্ট, ২০২৩ , ১:০৭ অপরাহ্ণ

ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু বইসো শূন্য পিঁড়ায়

ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু

পাইতা থুইছি পিড়া,

জলপান যে করতে দেব

ইরি ধানের চিড়া।

শালি ধানের চিড়া ছিল

বিন্নি ধানের খই,

কোথায় পাবো শবরীকলা

গামছা বাঁধা দই!

জান মেরেছে খান পশুরা

বর্গী সেজে ফের

আগুন জ্বেলে খাক করেছে

দেশটা আমাদের।

প্রাণের বন্ধু ঘরে আইলা

বসতে দিমু কিসে;

বুকের মধ্যে তোমার বাণী

রক্তে আছে মিশে।

বঙ্গবন্ধু তোমার আসন

বাংলাদেশের মাটি,

মনের মধ্যে পাতা আছে

প্রীতির শীতলপাটি।

[বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশে প্রথম ছড়া লেখেন রফিকুল হক দাদুভাই (জন্ম: ৮ জানুয়ারি, ১৯৩৭, মৃত্যু: ১০ অক্টোবর, ২০২১)  । লন্ডনে চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। সেদিনের পূর্বদেশে বিশেষ সংখ্যা বের হয়। এই বিশেষ সংখ্যার নামকরণ করা হয় দাদুভাইয়ের ছড়া। ছড়াটি দেশবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছিল।]

শ্রদ্ধাঞ্জলি - ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু বইসো শূন্য পিঁড়ায়

আফসানা আক্তার

২২ জুলাই, ২০২৩ , ৯:৩৬ অপরাহ্ণ

মিথ্যে আস্ফালন – আফসানা আক্তার

নীড়ে ফেরা পাখিদের মতোই সে ফিরবে
ব্যস্ততাদের ছুটি দিয়ে দিনের শেষ রেখার গতি রুখবে,
নিশাচর পাখিদের মতো অন্ধকারের যাত্রী হবে
রাতজাগা পাখি ভোরের আলোর শিশির হবে।

সর্বত্র তার অবাধ বিচরণ দিবে পূর্ণতা
তার অভাব মহা গহ্বরের বিশাল শূন্যতা,
তাকে খুঁজবো আমি মহাশূন্যের অতল গর্ভে
আহ আমার সুইফট! বিচরণ করে কতো দর্পে।

হলুদ চাঁদ বড়ো কুৎসিত, ছড়ায় নোংরা আলো
রুপোলি চাঁদে খুঁজবো তোমায় নয়তো তোমার প্রদীপ জ্বেলো,
একা হাতে পারি না সামলাতে
তুমি নিপুণ হাতে অবিনশ্বর মোমবাতি ধরবে।

আর আমি আবিষ্কার করবো তোমায়
তোমার স্বমহিমায়।
ব্যস্ততারা অবসরে যাবে নতুন গানের ছন্দ শোনায়।

নীরব সময় থমকে গেছে, আটকে গেছে উড়ন চলন
জটিল জীবন নিঃশেষে যেন সবই মিথ্যে আস্ফালন,
হাজার প্রতিকূলতায় যাকে খোঁজে চোখের তারা
চোখ খুঁজে পেয়ে যায় সবই শুধু তাকে ছাড়া।

মিথ্যে আস্ফালন - আফসানা আক্তার

আফসানা আক্তার

১৬ জুলাই, ২০২৩ , ১২:২৫ অপরাহ্ণ

ষড়যন্ত্র

ছোট ছোট খুশি, প্রাণভরা হাসি
দূরন্ত শৈশব, সেই সময় ভালবাসি।
পথে-প্রান্তরে, বৌচি খেলার মাঠে
নিঝুম দুপুরে নৌকা বাঁধ ঘাটে,
কুচো সাথিদের নিয়ে বেড়িয়েছি ঘেটে
গবেষক আমি, আছে কত থিসিস,
আছে কত প্রহেলিকা স্মৃতির পটে পটে

ছিল না কোনো নিয়ম-নীতি
মানতে হয়নি সময় ভীতি,
ঘুম ফাঁকি দিয়ে চলতো বৃষ্টিবিলাস
খাঁ খাঁ রোদ্দুরের ধূলিমাখা তপ্ত বাতাস
সবই মিশে আছে আজো অনুভূতির আকাশে।
আজ আমি একা লুকিয়ে পড়ছি সেই গল্পকথা
সেই দিন আর নেই
এসেছি সে সময় পেরিয়ে।

আজ আমি তুচ্ছ! আমি তুচ্ছ ! আমি তুচ্ছ !
আমি জমে থাকা আগাছার গুচ্ছ।
আমি কণ্ঠক, আমি জাল, আমি পাথুরে
চঞ্চলতা নেই আর
আমি স্তব্ধ, আমি আলসে, আমি হাতুড়ে।
কচি মন আর নেই আছে শুধু দম্ভ
তবু সবার মাঝে আছি সভ্যতার সভ্য।
আমি এক পতিত উল্কা আর রং-চণ্ডী
স্বার্থান্বেষী নভোচারী আমি, আমি নিঃসঙ্গী।

ফাঁকিবাজি দিয়ে চলে কত ষড়যন্ত্র
গ্রহান্তর ছেড়ে কোনো স্বপ্নময় জগতে পদার্পণের।
সাজাই কত মন্ত্র!
সেই স্বপ্নপীঠে আর থাকছে না কেউ
সাজিয়েছি এক নিষ্কলুষ পুষ্পোদ্যান।

হঠাৎ জেনে যায় কেউ সেই নিষ্ঠুর নীলনকশা
ফিরে আসি তারাদের দেশের পথ বেয়ে
আর স্বাদ নেই বাস্তবতার, অদ্ভূত এই পৃথিবীতে।

ষড়যন্ত্র - আফসানা আক্তার

সজল সমুদ্র

৮ জুলাই, ২০২৩ , ১০:১১ অপরাহ্ণ

সজল সমুদ্র’র কবিতাগুচ্ছ

ঘাট

জাহাজ পাবে না খুঁজে, এতদূর সরে গেছি, এতটা দূরাস্তে

হ্রেষা ঘিরে বসে থাকি; কেননা এমন কথা-ফুরানোর কাল
আর কোনো জন্মে পাবো না। কোনো অর্থ নেই, তবু সারাদিন
অশ্বডিম্ব নিয়ে ভেবে যাই। রোদে পুড়ে এ যেন কুড়িয়ে নিচ্ছি
দগ্ধভাগ্যরেখা

এতদিনের পাহাড়বাসী, এখনও তোমার ঐ নয়নপথ হাঁটি…

একা বাড়ি

একা বাড়ি আজ আবার এসে আমাকে ঘুরে গেছে।
আমার ঝা-চকচকে পোস্টমডার্ন বিষদাঁত—
বহুকাল আগেই ধূসর টুথব্রাশ ছাপিয়ে চলে গেছে;
শ্বাসকষ্ট থেকে যদি কোনদিন পাখির জন্ম হতো—
তবে চার-পাঁচশো মহাকাশ ভরে যেত কিচিরমিচিরে…
অথবা শূন্যতা যদি হতো লতাপাতা—
সে কবেই ভেঙে দিতো তোমাদের লকলকে লতার ধারণা!

এসবের কিছুই লুকিয়ে রাখি নি তাই। অস্তগামী সূর্যের আড়ালে
একা বাড়ি আজ আবার এসে আমাকে ঘুরে গেছে।

ভি-গলার দুঃখ ডিঙিয়ে আমি বসে ছিলাম—
একযুগ আগের উল্টানো সমুদ্রের উপর…

দৃশ্যান্তরে

কতদিন পাশে থাকবে, নীলাভ আকাশও ক্রমে নীলান্তরগামী!

যে রাত তোমাকে ভাবার—তোমার ঘাম, গন্ধ ও নিশ্বাসের
হাসি ও তামাশার ছলে সে রাত ভোর হয় বিদ্যুৎচমকে।
যা কিছু ভঙ্গুর নয়, ভেবে গেছি অনর্গল অটুট বিশ্বাসে
তাদের অজস্র টুকরো ভাসে আজ একা, নির্জনতায়…

যে জীবন যেতে পারতো ঢেউয়ে ভেসে অথবা ডানায়—
ধূসর ডাকবাক্স তা আজ, চিঠি আসে চিঠি চলে যায়…

ডুব

অল্প এ কল্পনা, ডালে ডালে ঝুলছে সব নদী;

আঁকাবাঁকা, শাখা ও প্রশাখার ভেদরেখা মুছে
পথে পথে ঘুরছে ভূতুড়ে তাদের ঢেউয়েরা।
অচেনা প্রতিবিম্বে চতুর্দিক ভরে উঠছে তাই!
মেঘ হয়ে উঠছে ক্রমশ ময়ূরপ্রবণ; আর তার বৃষ্টিরা
দিকে দিকে মৌনতর পেখমপিয়াসী…
যেন সিঁড়ি বেয়ে নামবে চাঁদ, ঝরাপাতা পেয়ে যাবে ডানা—

ভেসে যে উঠছে পথ, ডুবে গেছে তারও আসা-যাওয়া…

সজল সমুদ্র'র কবিতাগুচ্ছ

রবীন জাকারিয়া

৮ জুলাই, ২০২৩ , ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

এখন আমি আনন্দ পাই বেশ রবীন জাকারিয়া

তপ্ত পিচঢালা পথে হাঁটি
কষ্ট ভুলে তোমায় ভাবি৷
ভীষণ শব্দতোলা নৌকায় ব্রহ্মপুত্র
পাড়ি দেয়ার যাতনায় তোমাকে ভাবি৷
সেমিস্টারের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় যখন
মাঝামাঝি জায়গায় বিশ্রিভাবে আঁটকে পরি
তখন তোমাকে ভাবি৷
তোমাকে নিয়ে এতসব ভাবনা
মঙ্গল আনেনি এতটুকু!
বরং পিছিয়ে দিয়েছে বহুগুনে—
লেখাপড়া, পারস্পরিক ভালবাসা সর্বত্র৷
তুমি এখন অন্যের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু৷
কী বাহারি আর আহ্লাদি উপস্থাপন তোমার৷
তোমাকে দেখলে এখন ঘেন্না হয়৷
আমি বিসিএস ক্যাডার এক সরকারি চাকুরে৷
প্রতিটি ক্ষণ উপভোগ করি তোমাকে ছাড়াই,
এখন কেন যেন আনন্দ পাই বেশ৷
তোমার পরিত্যাগে নাকি নিজের ক্ষমতায়
হিসেব করিনি এখনো৷

এখন আমি আনন্দ পাই বেশ রবীন জাকারিয়া

আফসানা আক্তার

৭ জুলাই, ২০২৩ , ৮:৪০ অপরাহ্ণ

দর্শন

সেদিন টলমলে জল তাল দিয়েছিল হাওয়ায়
বাতাস ঢেউ তোলে, ঢেউয়ের খেলা নৌকা ভাসায়,
শুকনো পাতা ঢেউযের খেলায় শেষ লক্ষ্য লুটে
বায়ুর দিকের অনিল হাওয়া ঈশান কোণে ছোটে।

রূপালি আলোয় চলছে দেখা পুকুরজলের লীলা
হঠাৎ হলো দৃষ্টিভ্রম, মাথায় ধরে জ্বালা।

বরফসাদা রৌপ্যকণা আমার পানে চেয়ে অবিচল।
দেখতে গিয়ে তুলতে যাবো ঘোমটা দেয়া আঁচল,
তখন দ্রুতগামী যাত্রীমেঘ এক পলকে পর্দা দিল ঢাকা
নিরালোকের বিদ্রূপে আর হয়নি সেথায় থাকা

মেঘের উপর দোষ চাপিয়ে আর পাইনি চাঁদের দেখা
সেগুন পাতার রসের ভেতর উপায়ন্তর আছে লেখা,
বাঁশ বাগানের আড়াল থেকে ঠিকরে যখন পড়বে আলো
নানান রকম উপায় খুঁজে দর্শন হবে না করে আর মুখটি কালো।

ছাতিম ফুলের সুবাস যখন ডাক পাড়বে ঘর ছাড়ার
চকচকে রুপ ধরছে সবাই আছে যারা এ ধরার,
ছাতিম পাতার মসৃনতায় দেখবে তাহার প্রতিরূপ
সহজ উপায় দিঘির জলে পারে তাহার স্বরূপ।

চালতা পাতার খাঁজের ভেতর খুঁজলে পারে রহস্য
থাকলে থাকুক ধাঁধার হিসেব পাইলে পরে আলস্য।

দর্শন - আফসানা আক্তার

আফসানা আক্তার

১৮ জুন, ২০২৩ , ৮:২৬ অপরাহ্ণ

আমি আগন্তুক এসেছি

আমি আগন্তুক এসেছি

আমি অদৃশ্য মোহঘোরে ফেঁসেছি

ভেবেছিলাম দু’চোখ দেখেছে-

জগতের সব সুন্দরতা,

তখনো হয় নি দেখা –

মোহনীয় সেই শিল্প গাঁথা৷

সদ্য অঙ্কুরিত চারা গাছ যেমন-

ভোরের শিশির কাটিয়ে

হাওয়ায় নড়ে নড়ে দু’পাঁপড়িতে,

সকালের মোলায়েম রোদে

এই ধরার স্নিগ্ধ রূপ দেখে৷

একই রূপে আমিও দেখেছি সেই নিখুঁত শিল্প,

যেন স্বার্থক হয়েছে দু’চোখের দৃষ্টি,

অতৃপ্ত আত্মা পেয়েছে স্বর্গীয় তুষ্টি।

তুমি জানো না, হয়তো জানবে না

তোমার এই অমরত্বের গল্প,

হয়তো খোঁজনি, হয়তো খুঁজবে না

তোমায় নিয়ে যা হয়েছে রচিত

তার সবই যে অল্প

তোমায় আচ্ছাদিত করেছে তোমার

মহিমান্বিত গাম্ভীর্যতা,

এই ক্ষমতাই ছাপিয়ে দিয়েছে

তোমার দুঃখ-সুখ আর বিষন্নতা।

যেদিন কোন ছোট্ট শিশু

তোমার হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলবে

সেদিন কাটবে তোমার বিনম্র গাম্ভীর্যতা,

খুঁজে পাবে নিজেকে নব্যরূপে

আর নিজেকে হারিয়ে ফেলবে

আরো বেশি মুগ্ধতায়

এই চোখ দু’টো স্বর্গে যাবে

কেননা দেখেছে স্বৰ্গীয় প্ৰাণ,

বৈরী বৃষ্টিতে জীবন ছন্দ হবে

না কখনো ম্লান।

তোমার কখনো হবে না ক্ষয়

যদি ওই মূর্তি হয় ক্ষত-বিক্ষত,

প্রমত্ত স্বর রাখবে অক্ষয়

শ্রবণীয় বাণীই যে দেবসুধার মতো।

তুমি জানে না, হয়তো জানবে না

আমিই শুধুই আগন্তুক এসেছি, আর কেহ নয় বহুদুর থেকে করেছি সাধনা

তাতেই মদিরার গন্ধে অস্থির

গোটা প্রণয়জগত ময় ৷

কবিতা - আমি আগন্তুক এসেছি - আফসানা আক্তার

মুগ্ধতা.কম

২৫ মে, ২০২৩ , ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

আমার মা

মা আমার মা,

যার সমতুল্য পৃথিবীতে কোনো কিছুই না।

তিনি ডাকছেন তো-

কণ্ঠস্বরের জাদুতে মুগ্ধ আমি,

সাড়া দিতে ব্যতিব্যস্ত।।

আদর করছেন তো-

মনে হয় যেন ভালোবাসা বৃষ্টি হয়ে ঝরছে।

তার অভিমানে যেন-

মনের আকাশে মেঘ জমে,

পৃথিবীর সব আলো ম্লান হয়ে আসে।

শাসন করছেন তো-

অগ্নিঝরা কণ্ঠ তার

বিপদ অথবা বিপথ থেকে উদ্ধারে তৎপর।।

তিনি তাকালে যেন-

শান্তিধারা বর্ষিত হয়,

চোখের সে দৃষ্টিতে।। 

মা নেই – মন মানে না

মনে হয় আছেন তিনি

ভালোবাসার অক্সিজেন হয়ে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে।।

হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার নির্যাস যত,

সবই তার জন্য ;

তাও মন ভরে না,

প্রাণের চেয়ে প্রিয়

মা আমার মা-

সাধ মেটে না, মেটে না পিপাসা

কতটা তৃষ্ণার্ত আমি, 

জানেন সৃষ্টিকর্তা।। 

আমার মা - ডা. শাহীন আরা বেগম

মুগ্ধতা.কম

২০ মে, ২০২৩ , ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

শুভ জন্মদিন, ফেরদৌস রহমান পলাশ

রংপুরের জনপ্রিয় লেখক ও চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশের জন্মদিন আজ। কবিতা, গল্পসহ সাহিত্যের অনেক শাখায় তিনি লিখছেন। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘তুমি অন্য কারো ছাতিম ফুল’ এবং প্রথম উপন্যাস ‘নির্জন স্বাক্ষর’। এছাড়া চিকিৎসা বিষয়ক দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে: ‘নবজাতক ও শিশুর যত্ন’ এবং “Ward Management of Common Pediatrics Problem.”

এখন একাধিক উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিয়েছেন প্রতিভাধর এই লেখক। ঘুরতে ভালোবাসেন। সহজ ভঙ্গিতে লেখার জন্য তিনি পরিচিত। জীবনকেও তিনি সহজভাবেই নিতে চান।  প্রিয় মানুষগুলোর দেওয়া সামান্য আঘাত কষ্ট দেয় সংবেদনশীল এই মানুষটিকে। নিজেকে জাহির করতে একদমই পছন্দ করেন না। পড়তে খুব ভালোবাসেন। বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনে জড়িত আছেন। অনলাইন ম্যাগাজিন মুগ্ধতা ডট কমের তিনি উপদেষ্টা সম্পাদক।

সবার প্রিয় এই মানুষটির জন্ম ২০ মে, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর শহরে নানা বাড়িতে। পেশায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। 

জন্মদিনে ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশের প্রতি অজস্র শুভকামনা রইল। 

ফেরদৌস রহমান পলাশের কবিতা

জলঢাকা

মাটির রং ঠিক ঘিয়েও না আবার সাদাও না। এমনও হয় নাকি? অথচ এমন মাটির পথ দিয়েই তো হেঁটে যাচ্ছি। শালবন, মেঠো পথের দুধারে কত নাম না জানা ঝোপঝাড়। বুনোফুল, একটা দুটো প্রজাপতি উড়ছে ইতিউতি। বাতাসে জলের ঘ্রাণ। সামনে তোমার শরীরের মতো নদী। নদীর নাম জলঢাকা।

সংযম 

একদিন আমার খুব অভিমান হবে। সেদিন ফোন বের করেও ফোন দেবো না। তোমার কন্ঠস্বর শোনার আকুলতাকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। আমাকে সন্ধ্যা বেলা তুলসীতলায় ডাকলেও যাব না। তোমার উলুধ্বনি এড়িয়ে যাব হেডফোনে অনুপম শুনে। কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে যাব।  লিখবো না হাবিজাবি। জগৎশেঠ হবার চেষ্টা করবো। দেখো একদিন আমি ঠিক নিজেই নিজেকে জিতিয়ে দেবো।

বাবা

বাবা কবুতর ভালোবাসেন আর আমি মানুষ,

কবুতরপ্রেমি বাবা কবুতরের ছানাকে খাওয়াতেন নিজ হাতে। তারপর উড়িয়ে দিতেন।

আমি ভয়ে ভয়ে বলতাম, আর যদি না আসে?

বাবা হেসে বলতেন, যতœ করেছি,আসবে ফিরে।

আমাদের বাসায় এখন আঠারোটি কবুতর।

শুধু এখন জানি মানুষ ফেরে না,যতœ করলেও

পথে তাদের দেখা হয়ে যায় অন্য কারো সাথে। মানুষ বড়ই সামাজিক জীব।

মা

আপনি ঘুমিয়ে,

নিঃসঙ্গ ছায়াপথে আপনি

কোনকিছুতেই কিছু যায় আসে না

ঘুমের ঘোরে আপনি

পাশ ফিরলেন মায়ের দিকে,

আপনার শরীরে মায়ের হাত

মমতায় ছোঁয়া যেন হাজরে আসওয়াদ,

আপনি স্বপ্ন দেখছেন আপনার মেয়েবেলা

স্কুল থেকে ফিরলেন বেণী দুলিয়ে

বাবা আপনার ফ্রক ধুয়ে দিচ্ছেন কলপারে।

মা উনুনে চড়িয়েছে ভাত।

আপনি মায়ের পিঠে মুখ গুঁজে

এমন কবরের ঘুম,

পাশের ঘরের শিশুটা কেঁদে উঠলো

আপনি চমকে মায়ের বুকে মুখ রাখলেন।

আপনার নাকে মায়ের দুধের গন্ধ

আপনি ঘুমের ঘোরে ঠোঁট নাড়ালেন

আপনার তেষ্টা পেয়েছে

আপনি এখন জেগে উঠবেন

মা চলে যাবে

আপনি দুয়ারে দাঁড়িয়ে মাকে বিদায় জানাবেন

আপনি মা হয়ে এ সংসার সামলাবেন।

তোমার প্রেমিক

সব দোষেতে দোষী আমি

স্বীকার করি-

তবে, তুমিও কেন আঁকলে বলো

কপাল জুড়ে অমন ছবি।

পরলে কেন যতœ করে

অমন সাধের নাকছাবিটি।

আমার কি আর সাধ্য আছে

কাব্য করি, তোমায় নিয়ে?

কাব্য করুক, তোমার প্রেমিক।

হাজার খানেক পদ্য লিখুক

তোমায় নিয়ে

আর যদি সে না পারে তা

তবে সে তোমার

কেমন প্রেমিক?

আত্মপক্ষ সমর্থন

এখানে সূর্যের আলো আসে না। শুয়োরের মতো গাদাগাদি করে থাকি। যে পাহারাদার মোতালেব টিপ্পনী কাটে বিপ্লবী বলে চোখ টিপে দিয়ে,

আজ সে নরম স্বরে বললো আপনাকে দেখতে এসেছে। আমার কৃষক বাবা, যিনি কিনা শহরে তেমন আসেনই না আজ এসেছেন আমাকে দেখতে,

পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি চোখে হতাশা।

আমার শিক্ষক বোন, যে আজীবন সততার বীজ বপন করে চলছে।

আর প্রিয়তমা তুমি, রায় হলে আমার ফাঁসি হবে নিশ্চিত। সবাই বললো তুমি অপরাধ স্বীকার করো, যারা অপরাধ স্বীকার করে তাদের ফাঁসী হয় না। আমি তাকালাম তোমার চোখের দিকে। আমার চোখে চোখ রেখে তুমি দীপ্ত কন্ঠে বললে, বিপ্লবীরা কখনও অপরাধ করে না।

জন্মদিন

জন্মদিনে বৃষ্টি পড়ে

টুপ।

জন্মদিন মহিপুরে

ডুব।

জন্মদিনে জন্ম জারুল

ফুল।

জন্মদিনে রিকসা করে

ঘুর।

জন্মদিনে কেনা হলো

নাকফুল।

[কবিতাগুলো নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি চন্দ্রবিন্দু থেকে প্রকাশিত কবিতার বই ‘তুমি অন্য কারো ছাতিম ফুল’ থেকে]

শুভ জন্মদিন, ফেরদৌস রহমান পলাশ

ব্রজ গোপাল রায়

১১ মে, ২০২৩ , ১০:৪০ অপরাহ্ণ

ব্রজ গোপাল রায় এর কবিতাগুলো

মন নৈঝতে এক খণ্ড মেঘ

তুমি আমার মন নৈঝতে

এক খণ্ড মেঘ

ঘুর্ণি তোলা ঝড়

তুমি আমার বুকের ভিতর

উড়নি হাওয়া

ঝড় ভাঙা ঘর। 

তবুও আমি এই সকালে

সমুজ্জ্বলে

ভাবছি বসে তোমায়

তুমি শুধু তোমার সুখে

তোমার বুকে

মগ্ন আপন খেলায়। 

ভগ্ন হৃদয় এই যে আমি

আমার যতো

ভালোবাসার গান

এক খণ্ড মেঘ সেই তুমি 

তোমার মতো

কাড়ো সুখের ঘ্রাণ। 

কি সুখ পাও এই অসুখে

স্বপ্ন টিয়ে

ভেঙে মনের ঘর

মন নৈঝতে এক খণ্ড মেঘ

নিছক আবেগ

ভীষণ স্বার্থপর।

চন্দ্রকাব্য

চাঁদকে নিয়ে 

চন্দ্রকাব্য লিখবো না আর

ও বড় নষ্ট ভীষণ। 

অবাল-বৃদ্ধ-যুবা-শিশু

মাথাপিছু সবার মন নিয়ে লুকোচুরি খেলে

হৃদয় কাড়ে

দৃষ্টিচমক পলকে

প্রলোভনের টোপ ফেলে 

লোভ দেখায়-পরকিয়ায়।

এ ছাড়া আর কি আছে ওর

আপন সৌরভ? 

মেকি জোছনার বিভাহীন বৈভবে

যা কিছু চমৎকার 

নাবালক বালক যুবকের দল

বুঝে গেছে সব

ওরা এখন জোছনায় খেলে না

ভালোবাসা

নিয়নিক আলোয় 

ভালোবাসা কেনে নিলাম বাজারে।

একদা যতো গল্প-কবিতা-ছড়ার কারিগর  

চাঁদ উপমায় চন্দ্রকাব্য লিখেছেন বিস্তর

সে সব এখন ধুসর স্মৃতির ভাগারে শুধুই আবর্জনা।

শান্তির সৈনিক

তুমি যে বলো

আমিও শান্তির সৈনিক 

তবে বলো তো

শান্তির পথে হাঁটতে গিয়ে 

এ পথে ক’ কদম ফেলেছো তুমি 

কুটিল কৌশল ছাড়া।

জন্ম থেকে আজোবধি 

অনেক খেলেছো বিষাক্ত ছোবলের খেল

অনেক পুড়েছো তুমি 

খেটে খাওয়া মানুষের ঘামতেল

অবশেষে কাজের কাজ যা হলো 

অষ্টরম্ভায় তুমি এখন

খুঁজছো রথের হাউ।

ও হবে নাকো

জল গড়িয়েছে অনেক 

বেলা বেড়েছে বহু

তোমার কুহু ডাকের মায়াবী কান্নায়

কেউ আর ভুলবে না কভু।

কে তুমি কাঞ্চি কিশোরী  

না ফোটা ফুলের কলিতে তুমি তো 

ভ্রমর বিভোর সুবাস

বেতাল হাওয়া

মাত করে রেখেছো চারপাশ।

পথ ও পথচারী থমকে দাঁড়ায় 

হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে 

তোমার মুখোর মৌসুম 

অকাল বসন্তের উদগ্র নিঃশ্বাস।

কে তুমি কাঞ্চি কিশোরী 

বাশরী কানাই

সুরে ও সুবাসে মুগ্ধ মাতাল?

আমি পলকবিহীন চোখে অপলক 

তোমাতেই চেয়ে থাকি

বাক হারা নির্বাক বুকে আমি

প্রণয় পাগল বালক

হৃদয় ব্যাকুল বিবাগী 

ছুটি তোমাতেই।

এ বৈশাখে

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক সৃষ্টি সুখে 

সবার বুকে বুকে

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক মাঠে ঘাটে

বৃক্ষ সবুজ শাখে।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক চৈত্র পোড়া 

পথের ধুলায়

সবুজ তৃণ লতায়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক জলে-স্থলে

বাড়ির উঠোন দাওয়ায়।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক মুশল ধারে

সবার চাওয়া-পাওয়ায়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

বৃষ্টি নামুক বিশ্বজুড়ে 

শান্তি নামের হাওয়ায়।

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

থামুক অকাল ঝড়

এ বৈশাখে বৃষ্টি নামুক 

নামুক, শান্তি পরস্পর।

বৈশাখ আমার চিরচেনা 

চির আপন জন

এ বৈশাখেই বাঙালিরা

সবাই সবার আপন।

বৈশাখ আমার নতুন দিনের

নতুন ভোর

একটি নতুন সকাল

বৈশাখ আমার আশার বুকে

ভালোবাসার

সুখ উথাল-পাতাল। 

আবহমান এই বাংলার

বাঙালিদের 

এ বৈশাখ চেনা

এ বৈশাখেই বাঙালিরা

মিলায় তাদের

সকল লেনা-দেনা।

ব্রজ গোপাল রায় এর কবিতাগুলো-1

মুগ্ধতা.কম

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:৫০ অপরাহ্ণ

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

ব্যবচ্ছেদ

আপনাকে একটু  দুঃখ দেখালে আপনি নির্দ্বিধায়  ঢুকে যাবেন আমার অন্দরমহলে

যেন আমার অন্দরমহলের সদর দরজায় নেই কোনো প্রহরী

দরজা খোলা

প্রবেশাধিকার রয়েছে সকলের

তারপর

তারপর আপনি ব্যবচ্ছেদ করবেন আমার সংসার

আমার যাপিত জীবন

আমার দাম্পত্য 

খুঁটে খুঁটে ব্যবচ্ছেদ করবেন সংসারের খুঁটিনাটি 

আমার চাল ডাল নুন আর তরকারির নিত্য বাজারদর

আপনি বড় বড় অক্ষরে লিখে ঘোষণা করবেন

এই মেয়েটি অসুখী

দাম্পত্য কলহে মেয়েটির জীবন অতিষ্ঠ 

তারপর 

তারপর আপনি একটা বাঁকা হাসিসমেত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবেন-

‘সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে’

হায়, আমি তখন গুণহীন মানহীন রমন অযোগ্য এক রমনী

আমার চোখের ভাষা থেকে আপনি নোনাজলের গল্প বুনবেন

আমার বিষন্ন মুখ দেখে লিখবেন ঘোর অমাবস্যার গল্প

আমার দীর্ঘশ্বাস শুনে গাঢ় শীতের

কোনো কঙ্কালসার আমলকি বন থেকে তুলে আনবেন পাতা ঝরার গল্প

অথচ

আমি যদি আমার এক টুকরো আনন্দ দেখাই

আপনি নিশ্চিত কলম থামিয়ে দেবেন

আপনার বোধ হয়ে পড়বে দ্বিধান্বিত 

আপনি কূল খুঁজে পাবেন না তার

কী করে পাবেন

আমি তো আনন্দ কুড়োই সামান্য একটা ফুলের শরীর থেকে

পাখিদের ভাষা থেকে

নদীর কলতান থেকে তুলে আনি আনন্দ 

একটা প্রজাপতির নাচন থেকে তুলে আনি আনন্দ 

শনশন করে বয়ে যাওয়া বাতাস থেকে আমি জোগাড় করি তুমুল আনন্দ 

এত ছোট ছোট মুহূর্ত থেকে আমি আনন্দ কুড়াই 

আপনি তল খুঁজে পাবেন না তার

দুঃখকে ব্যবচ্ছেদ করে জানা যায় অনেককিছু 

আনন্দকে ব্যবচ্ছেদ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়…

_____________________________

আশাভঙ্গ

ঘাস হয়ে জন্মাবো জেনে 

কি আনন্দ পেয়েছিল সে

পায়ে পায়ে দলে যাবে বলে

আহা!

আর এদিকে অপরুপ ঘাসফুল হয়ে ফুটে আছি

তার চোখে পড়ার আগে

_______________________________

ভিনদেশী দুই পাখি

ধরো, আমাদের কোনো পরিচয় নেই

আমরা দু’জন অনেক দূরের কেউ

কোনদিন কেউ শ্বাস ছুঁইনি কারোর

চোখের ভেতর কেউ পুষিনি কারোর অভিমান

আঙুল ভাঁজে কেউ লিখিনি অন্যকারোর নাম

কেউ চিনি না কারোর পায়ের আওয়াজ

পাঁজর খুলে কেউ দেখিনি দুঃখ সেথায় কেমন

কেউ জানি না হস্তরেখায় কার কী লেখা আছে!

ঠিক দু’জনের ভাগ্যরেখা কোন দিকে যে গেছে

তবু চলো একটা সকাল আমরা দু’জন একই সাথে হাঁটি

হাঁটতে হাঁটতে সকাল গড়াক, দুপুর গড়াক

গড়িয়ে বিকেল সন্ধ্যা নামুক

সন্ধ্যাটুকু মিলিয়ে গেলে রাতের কাছে থামি

আমরা দু’জন আকাশঢাকা তারার সাথে জাগি

তারার কাছে গড়িয়ে আসা সকাল নিয়ে বলি

দুপুর নিয়ে বলি,

মিলিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নিয়ে বলি

তারার কাছে গোপন ব্যথার সবক’টা দোর খুলি

জানুক তারা আমরা নাহয় খুব অচেনা, ভিনদেশী দুই পাখি

আমরা তবু আজ এখানে একইসাথে আছি

এই এতটা এসেছি হেঁটে সঙ্গে করে বিশ্বাসী দুই আঁখি…

____________________________

একটুখানি বদলে যেতে ইচ্ছে করে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে গুছিয়ে নিতে খুব নিজেকে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় 

 যদি এই আমিটা বিপুলরকম  বদলে যাই

যদি হাসতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই

কথা মাপি ফিতের দাগে

পাঁজর ভাঙার শব্দ লুকোই অট্টহাসে

যদি কারুর দুঃখ ছুঁতে আঙুল বাধে

ভয় হয়

খুব ভয় হয় এসব নিয়ে 

আমার একটু বদলে যেতে ইচ্ছে করে

খুব সামান্যই বদলে যেতে ইচ্ছে করে

এই যে ধরুন

ইচ্ছে করে অগোছালো চুলগুলোকে গুছিয়ে রাখি চুলের ফিতেয়

ভয় হয় 

চুলের ফাঁকে বুলিয়ে দেয়া আঙুলগুলো

এবার যদি হারিয়ে ফেলি 

খুব ভয় হয়

ইচ্ছে করে একটুখানি বদলে নিতে খুব নিজেকে

ইচ্ছে করে  ঘর সংসার গুছিয়ে রাখি

কিন্তু যদি লকারভরে গুছিয়ে ফেলি 

মান অভিমান, খুনসুটি আর অট্টহাসি…

মাহাবুবা লাভীন এর একগুচ্ছ কবিতা

মুগ্ধতা.কম

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

সেই ফাল্গুনের কথা 

ভাষা আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী ভাইদের স্মরণে 

সেদিন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর একঝাঁক মেধাবী তরুণ 

হঠাৎ করেই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করে। 

কিছুটা পথ অগ্রসর হয়ে তারা স্থাপন করে 

কাগজ আর বাঁশের অস্থায়ী শহিদ মিনার।

হাতে থাকা ফুল দিয়ে তারা শ্রদ্ধা জানাতে থাকে সেথায়। 

যাদের সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ এই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।

পুলিশের বাধায় বেশিক্ষণ টেকেনি সেই শহিদ মিনার। 

ঐতিহাসিক আমতলার সেই মধুময় ভাষণ 

হৃদয়ে প্রভাব ফেলে, জায়গা করে নেয়

 ছাত্র-জনতার মনে। 

সেদিন এই ছাত্র জনতা একশত চুয়াল্লিশ  ধারা ভেঙে তছনছ করে দেয়। 

অনেকে সেদিন শাহাদাত বরণ করেছিল

হাজারো ছাত্র-জনতাকে তারা 

এক এক করে জেলখানায় ঢুকাচ্ছিল। 

নাম ডাকতে ডাকতে ডেপুটি জেলার সাহেব বিরক্তির সুরে বলে উঠলো উহ্ এত ছেলের জায়গা দেবো কোথায়?

জেলখানা তো এমনিতেই পরিপূর্ণ। 

ওর কথা শুনে কবি রসুল সেদিন চিৎকার করে বলেছিল- 

জেলখানা আরো বাড়ান সাহেব।

 এত ছোট জেলখানায় কী করে 

এত জনের জায়গা হবে? 

আরেকজন বলে উঠলো, 

সামনে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হব।

সেই ফাল্গুনের কথা

মুগ্ধতা.কম

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

বাংলা ভাষার জন্যে আমার মন আনচান করে

পড়তে গেলাম চায়নাতে

বাবা- মায়ের বায়নাতে

“চুং চাং চিং চু চা চি চি”

এই আগমন মিছেমিছি

পড়াশুনার পাট চুকিয়ে ফিরে এলাম দেশে

ভাষাই কারন বিষণ্ন মন জানায় অবশেষে।

সৌদি গেলাম পেটের দায়

ভাষার তোড়ে পরাণ যায়

“কাইফা হালু ইয়া আখি”

অবাক চোখে চেয়ে থাকি

মানে কী এর বুঝিনা ছাই ভাষারই মারপ্যাঁচে

ফিরে এলাম না হয় আমার ভিটেমাটি গেছে।

ভড়কে গেলাম জাপানে

ব্যস্ত ছিলাম চা পানে

(ফর্সা মেয়ে আমারে কয়)

“ওয়াতাশি ওয়া আনাতা”

মানে কি এর নেই জানা তা

দেইনি জবাব বুঝিনি তাই তাকিয়ে সে রয়

ভাষা ছাড়া কেমনে বলুন ভাবের প্রকাশ হয়!

ভাসিয়েছি কেঁদেই চোখ

ভাব প্রকাশের পাইনি লোক

দিন গিয়েছে বছর সমান

আমার এ মন দেয় সে প্রমান

হিন্দি বলুন! উর্দু বলুন! ভিনদেশিয় ভাষা

কারো মনে জাগাতে কী পারে কোন আশা!

কষ্টগুলো রেখেছিলাম বুকের মাঝে ধরে

বাংলা ভাষার জন্যে আমার মন আনচান করে।

বাংলা ভাষার জন্যে আমার মন আনচান করে
Comments Off
59 Views

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

প্রভাতফেরির গান

আজ সারাদিন সাম্যের উত্তেজনায় কেটেছে। আগামিকাল একুশে ফেব্রুয়ারি, সে জীবনে প্রথম ফুল দিতে যাবে শহিদ মিনারে। সাম্যর বয়স দশ। সে পড়ে বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। যদিও সে বদরগঞ্জে থাকে তবে এখন সে আছে রংপুর, তার নানাবাড়িতে। তখনও শহর ঠিক শহর হয়ে ওঠেনি। সময়টা ১৯৮৩। সাম্যর নানাবাড়িটা একতলা হাফ বিল্ডিং। উপরে খাড়া টিনের ছাদ। মামা খালারা সবাই সৌখিন আর সাহিত্য সমজদার। সেজো মামার বইয়ের ঘর ছিল হাতের ডানে। কালো কাঠের বুকসেলফে শুধু বই আর বই। দরজা দিয়ে ঢুকতেই দরজার ওপরে সাজানো ছিলো কাটা হরিণের মাথা। তখনও বাড়িতে সাজিয়ে রাখা হতো হরিণের মাথা যতদিন না নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ছুটিতে নানাবাড়িতে এলে সারাদিন কাটে সাম্যর সেজো মামার বইঘরে। কত বই যে আছে! দস্যু বনহুর, কুয়াশা, তিন গোয়েন্দা, পড়ে শেষ করার জো নাই। ছুটি হলেই সাম্য বায়না ধরে নানাবাড়ি যাবার জন্য। এবার বইপড়ার চেয়েও মজার ঘটনা ঘটতে চলছে। মামাবাড়ি থেকে সবাই শহিদ মিনারে ফুল দিতে যাবে। সাম্যর মামা মুক্তিযোদ্ধা রাকিব মামা এবার নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে ফুল দিতে যাবেন শহিদ মিনারে। কয়েকদিন ধরেই চলছে তার প্রস্তুতি। ছোট খালা, বন্যা পিসি, বাবু মামা সারাদিন হারমনিয়ামে গান প্রাকটিস করছে। প্রভাতফেরি কী? মামাকে জিজ্ঞেস করায় মামা বললো সূর্য ওঠার আগেই ফুল দিতে যাওয়াকে বলে প্রভাতফেরি। মামা বললেন, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিয়েছিল সালাম, রফিক, বরকত ছাড়াও নাম না জানা আরও অনেকে। পৃথিবীতে আর কোনও জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। সেই ভাষা শহিদদের স্মরনে রচনা করা হয়েছে এবং হচ্ছে কত গান, কবিতা। সেসবকে ছাপিয়ে সবচেয়ে পরিচিত গান, যে গানের সুর সবাই জানে। 

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি?

গানটি লিখেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। মামা বলে জানিস, গাফফার চৌধুরী যখন গানটি লিখেন তখন তিনি নিজেও ছাত্র। সুর করেছেন আলতাফ মাহমুদ। গানের সুরটা শুনলেই কেমন কান্না পেত সাম্যর। আজ আরও বেশি করে কান্না পেল যখন সে শুনল, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী সেই সুরকার আলতাফ মাহমুদকে হত্যা করেছে। সন্ধ্যা হতেই নানির কাছে বায়না আমাকে ভাত দাও, আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। সকালে প্রভাতফেরিতে যাব। সবাই সাম্যর কান্ড দেখে হাসে। মামার ঘরে ভাত খেয়ে শুয়ে থাকে সাম্য। ঘুম কি আর আসতে চায়। ছোট মামা বলেছে, ফুল চুরি হতে পারে। মামা বাগান করেছে বাড়ির সামনে। কত ধরনের ফুল সেখানে। গাঁদা, কসমস, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী। বিকালে নানা বড় একটা ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দেয় গাছগুলোর গোড়ায়। ফুলে-ফুলে উড়ে বেড়ায় মৌমাছি। কসমসগুলো বড় দূর্বল, একটুতেই হেলে পরে বাতাসে। সেজো মামা খুঁটি দিয়ে গাছগুলোকে খাড়া করে দিয়েছে। বিকেলে বাগানে ঢুকলেই মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে লাগে। হাত দিয়ে কসমসের রঙিন পাপড়িগুলো নাড়তে কী যে ভালো লাগে! সেই ফুলগুলো যদি আজ চুরি হয়ে যায়। আজ দুষ্টু ছেলেরা ফুল চুরি করতে বের হবে। সেই ফুল নিয়ে যাবে শহিদ মিনারে। ঘুম আসতে চায় না, ফুলদের কথা ভেবে। এপাশ-ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সাম্য! ঘুম ভাঙে নানীর ডাকে,এই সাম্য,এই সাম্য। কীরে যাবি না? ওঠ বাবা।সবাই তৈরী হয়ে বসে আছে। হুড়োহুড়ি করে তৈরী হয়ে বের হবার সময় মামা বললো, কীরে স্যান্ডেল পরে যাবি নাকি?

হ্যাঁ,স্যান্ডেল পরেই তো যাব। স্যান্ডেল ছাড়া আমাকে হাঁটতে দেখেছেন কখনও?

হা,হা, মা শোনও তোমার নাতি প্রভাতফেরিতে নাকি স্যান্ডেল পরে যাবে বলে মামা অট্টহাসিতে ফেটে পরে।

প্রভাতফেরিতে খালি পায়ে যেতে হয় রে বোকা।শহিদদের সম্মানে পায়ে জুতা পরা হয় না। চল,দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে মামা বের হয়ে আসে।

ফুল বাগান পার হয়ে গেট। আড় চোখে বাগান দেখলো সাম্য। নাহ্,কোনও ফুল চুরি হয়নি। গেটের বাইরে জটলা করা পাড়ার সবাই। শ্যামল কাকার গলায় হারমোনিয়াম, ছোট খালা রেডি গান গাওয়া শুরু করার জন্য। সুমিত স্টোর পার হয়ে, রঞ্জন এক্সরেকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে প্রভাতফেরি। পথে আরও অনেক মিছিল। ছোট খালা,শ্যামল কাকার হারমনিয়ামের সাথে গান শুরু করে।ছোট্ট সাম্য আর সবার সাথে গলা মেলায়-

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী

আমি কি ভুলিতে পারি।।

ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু

গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।।

আমার সোনার দেশের

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।’

প্রভাতফেরির গান

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

নিজের ভাষা মায়ের ভাষা

আচ্ছা ধরো, পাখির ছানা 

কিচিরমিচির ভুলে,

হুক্ কা হুয়া ডাক ধরলো 

সক্কলে প্রাণ খুলে।

নোটন নোটন পায়রাগুলি

মিঞাও সুরে-সুরে

খুনসুটি আর খুদ খুঁটছে 

উঠান ঘুরে-ঘুরে।

ব্যাঙ ডাকছে, হালুম হালুম 

ডোবায় খালে বিলে,

কাক করছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর 

প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক চিলে।

শিস বাজিয়ে দুষ্টু বিড়াল 

ছুটলো ভীষণ জোরে, 

মোরগগুলো ঘুম ভাঙালো

হা-ম-বা ডেকে ভোরে।

ঝিঁঝিপোকার একটানা ঝিঁ…

ডাকলে জোনাক পোকা,

আচ্ছা দাদু লাগবে কেমন?

—প্রশ্ন করে খোকা।

যার ডাক তার কণ্ঠে মধুর

এটাই তো তার ভাষা,

সে তার ভাষায় স্বপ্ন দেখে

মেটায় সকল আশা।

ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে

বিশ্বে কোথাও পাবি?

নিজের ভাষায় বলবো কথা

এমন ছিল দাবি।

জানিস খোকা রফিক শফিক

অকুতোভয় সেনা,

এই আমাদের বাংলাভাষা 

তাদের খুনে কেনা।

ভাষা মানেই মায়ের ভাষা 

যে যার ভাষায় বাঁচে, 

নিজের ভাষার চেয়ে মধুর 

আর কি কিছু আছে?

নিজের ভাষা মায়ের ভাষা

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেশ গান

একুশ হয়ে একাত্তুরে

স্বাধীন হলো দেশ

মুক্তি মাতাল বাঙালিরা

পেলো বাংলাদেশ।। 

মুক্ত হলো রুদ্ধ আকাশ

যুদ্ধ দিনের গান

খোলা বুকে খোলা হাওয়া

খোলা হৃদয় প্রাণ

এইটুকু সুখ পাওয়ার জন্য

মূল্যটা যে বেশ ।। 

হারিয়ে গেল হাজার প্রাণ

ছেলে হারা মা

ভাই হারা বোনেদের বুকে

কান্না থামে না

রক্তমূল্যে কেনা এ সুখ

তুলনা যে অশেষ।।

(২)

আধুনিক গান

একুশ আমার সেই চেতনা

বেঁচে থাকার প্রেরণা

একুশ আমার  মুক্ত আকাশ

ভালোবাসার ঠিকানা ।।

একুশ তুমি  মেঠো পথে

রাখালিয়া সুর

একুশ তুমি মায়ের  ভাষা

মধুর চেয়ে মধুর।

তাইতো তুমি এ হৃদয়ে

অনেক দিনের চেনা।।

একুশ তুমি মন লাটাইয়ে

বাঁধন হারা ঘুড়ি

তোমার জন্যই ওই আকাশে

মুক্ত ডানায় উড়ি

তুমি আমার সবটুকু সুখ

নেই তোমার তুলনা ।।

দেশ গান

সোহানুর রহমান শাহীন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

বায়ান্ন’র একুশ

একুশ এলে বাংলা ভাষার

গান গেয়ে যাই প্রাণ খুলে

বন্দী বিবেক অতল আঁধার

ভাঙলো সিঁড়ি দীপ জ্বেলে।

একুশ এলে আলোকরেখা

তীব্র আলোয় সুখ ছড়ায়

মাটির সাথে মায়ের দেখা

রাতের তারায় চোখ বুলায়।

একুশ এলে পুষ্প মাল্যে

শহিদ মিনার শীর উঁচায়

প্রাণের ভাষা রক্ত মূল্যে

দিয়ে গেছেন নির্দিধায়।

একুশ এলে ছেলের খোঁজে

বীর শহিদের বৃদ্ধা মায়

অশ্রুসিক্ত নয়ন বুজে

কেঁদে কেঁদে মূর্ছা যায়।

বর্ণনায় বর্ণমালা

শীতল পরান জুড়িয়ে শেষে

ফাগুন মাসে একুশ আসে

বাংলা মায়ের দেশে।

রফিক বরকত লড়াই করে

গর্জে উঠে কন্ঠ ছাড়ে

বাংলা ভাষার তরে।

সালাম জব্বার স্বপ্ন ভরে

বর্ণমালার মিছিল করে

চলে গেছেন দূরে।

কলুষ মুক্ত নীল আকাশে

আজো তাদের ছবি ভাসে

ভাষার ইতিহাসে।

বায়ান্ন'র একুশ

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

অমর একুশ

শহিদ রফিক সালাম নাও আজ

যে আশাতে তুললে আওয়াজ

গগনবিদারী

ফের এসেছে দিবস তা-রি ,

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি।

ক্ষয় হয়েছে ভাষার শোকের ?

যার দাবিতে ‘ধবল’ লোকের

ধার না ধারী ?

সেই কি দিবস ভুলতে পারি ?

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি ।।

শুকিয়ে যাওয়া পলাশ-মালা

যার ছোঁয়াতে ভাংলো ‘কালা-

কানুন’ জারী,

সেই কি দিবস ভুলতে পারি ?

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি ।।

যার ছোঁয়াতে ক্ষোভ দানাদার

শেষে যে বধ পাক-হানাদার

অত্যাচারী,

সেই কি দিবস ভুলতে পারি ?

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি ।।

শিশির কণা শেখালো যার

কোনোক্রমে আমরা তো হার 

মানতে না’রি ,

সেই কি দিবস ভুলতে পারি ?

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি ।।

খেলো যে দিন প্রথম হোঁচট

যার দাবিতে যুগল যে ঠোঁট

এই আমারি,

ফের এসেছে দিবস তা-রি

অমর একুশ ফেব্রুয়ারি ।।

অমর একুশ

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

বসন্ত এবং একুশ

আজ ঘরে ফিরতে মন চায় না, শুধু প্রতিধ্বনি হয় সেই মাথামুহুরীর কুলকুল। নূপুরের রুনুঝুনুতে ভেসে আসা সেই শুকনো পাতার দল। কাঠচোরদের মন খারাপ—স্রোতে ভাসে না আর সেই বাশ ঘাস কাঠের ভেলা। অথচ ভাপা পিঠার হাড়িতে আজও ধোয়া। সেই পিঠাওয়ালা, সেই ভাপার বাটি, সেই ন্যাকড়া,  বসে থাকা বেঞ্চ সব কিছু ঠিকঠাক— শুধু তুমি নেই। ভেতর ভেতর কি যেন ছুটে চলা। তুমি কই?  তুমি কই? ছটপট ছুটে আসা এই সেই কোকিলকূজিত বন। তোমার হাতে লাগানো সেই বাড়ির সেই টব কত ফুলরাশি—যদি থাকতে গুজিয়া দিতাম সেই বাসন্তীর খোঁপায়। তোমরা সকলে ভালো থেকো— বসন্তের সেই শিমুল ফুল কলাগাছের সতরে গাঁথা  সেই টায়ারের ছুটে চলা—সেই নোলক নোলক খেলা।  মনটা ভীষণ খারাপ—সেই দিন নাসিমাদের বাগানে ফুল ছিলো না বলে— কাগজের ফুলে ফুলেল শুভেচ্ছা। সবকিছু ধুয়ে মুছে তুমি ফিরে এসো আমার সেই বাসন্তী। তোমার বুকের তরতাজা সেই ফুল শীতশীত ঘাসে জুতো ছাড়া হেটে যাওয়া একুশের বুকে ফুল দেয়া— আমার সেই বাংলা ভাষা—আমি তোমাকে ভালবাসি। ‘মা মাটি ও দেশ’। ভালো থেকো। সেই আমার বসন্ত—মনের ভেতর এক কুহূ কুহূ ডাকা।

বসন্ত এবং একুশ

শিস খন্দকার

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমা করো হে একুশ

. .. ‘তুমি রোজ যে ভাষায় প্রেম নিবেদন করো আমায়

    এই কর্পোরেট জীবনে প্রযুক্তির ছড়াছড়িতেও

    প্রতি বৃহস্পতিবার পুষ্প পাপড়ি সমেত পত্র লিখ

    লাল কাগজে যে ভাষায়

    সেই ভাষার জন্য একটি কবিতা লিখবে সেই ভাষায়।’

গত বিকেলে এই আবদার করে বসে

এক একুশ বছর বয়সী বাঙালি নারী।

ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে কণ্ঠে ঝড় তুলে,

—‘যদি না পাই তবে আজীবন আড়ি!’

মন পৃষ্ঠায় নিভৃতে একা কবিতা সাজাই—

আমি ভাবি, স্মৃতিরা ভেবে যায়—

চোখ বুজে আওড়াই পাঠ্যজ্ঞানজাত ইতিহাস—

বায়ান্ন এর বায়ান্নতম দিবসের সেই প্রহর

সালাম-রফিক-বরকত-জব্বার

কবিতার কম্পিত কলামে হাতে-হাতে প্ল্যাকার্ড ধরাই

প্রতি লাইনজুড়ে লাল কালিতে লিখে যাই,

—‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’

রাস্তার পাশে জীর্ণ দেয়ালে হিন্দি সিনেমার পোস্টার।

মুহূর্তের ভাবনা চকিতে থমকে যায়!

কৃতজ্ঞতা—

               একুশ-বায়ান্ন

               সালাম-রফিক-বরকত-জব্বার

               বাঙালি-বাংলা

               স্বর্ণোজ্জ্বল অমর ইতিহাস।

অতঃপর আমি সব—সব ভুলে যাই।

ক্ষমা করো হে একুশ বছর বয়সী নারী

একুশের প্রতি প্রতারণা আমি কীরূপে পারি!

আমার সব কবিতা উচ্ছন্নে যাক

যতদিন না থামবে পরদেশি ভাষার উৎপাত।

ক্ষমা করো হে একুশ

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

মুগ্ধতা.কম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

একাত্তর

দেখিনি আমি ৭১ এর 

শত্রুদের পাশবিক অত্যাচার 

শুনিনি আমি বুকফাটা কান্না

শত শত মানুষের আর্তনাদ আহাজার।

কত না নির্মম পাকহানাদার বাহিনী

কেপে ওঠে মন আমার 

শুনে একাত্তরের কাহিনী।

মায়ের বুক থেকে, বাছারে নিয়ে কেড়ে

মারছে তারে পায়ে পিষ্ট করে।

শোনেনি তারা মায়ের আর্তনাদ

পাছে তারও করেছে সর্বনাশ।

সম্ভ্রম খানি নিয়েছে তারা কেড়ে

বাঁচতে পারেনি সেও, লাঞ্চিত হয়ে বাড়ি ফিরে।

মা হারিয়েছে বুকের মানিক

বোন হারিয়েছে ভাই

আত্মিয় স্বজন হারিয়ে

দুঃখের সীমা নাই।

ভেঙ্গে দিয়েছে, গুড়িয়ে দিয়েছে

জ্বালিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি

প্রাণে মেরেছে, লুট করেছে

জান-মাল, ইজ্জত টাকা-কড়ি।

দেশ মাতার সোনার ছেলেরা 

শক্ত করে তাঁদের মন, করেছে পণ

স্বাধীনতা আনতে ছিনিয়ে

করবে জীবন দান

তবুও রাখবে তাঁরা, মাত্রিভাষার মান।

বাংলা মায়ের সোনার ছেলেরা যুদ্ধে গেল

মুক্তি সেনার বেশে

স্বাধীনতা আনলে ছিনিয়ে

নয় মাস যুদ্ধের শেষে।

এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে 

মা- আছে পথ চেয়ে

পাবে এবার প্রিয় মুখের দেখা

গগণ ভেদে উড়ছে দেখে,

স্বাধীন বাংলার পতাকা।

স্বাধীনতা অর্জীতে কত ক্ষতি সয়েছে, 

কত জীবন করেছে দান

বুঝেছিল তারা মাত্রীভাষার দাম।

এবার-

স্বাধীনতা রক্ষায় যেন হয় মনজোড় সংগ্রাম।

একাত্তর

হাই হাফিজ

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

হৃদয়ে বাংলা ভাষা

নদীর বয়ে চলা ভাঙ্গাগড়া পথে
চেয়ে থেকে থেকে বেলা পড়ে আসে,
জানা হয় না কোথায় গন্তব্য তার,
কিংবা সারাবেলা গোপন মিতালী কার সাথে।
কানে কানে বলে দেয় নদী —
আমার মনের যত ভাব, যত কথা
আজস্ম যাই বলে যাই
বাংলায় নিরবধি।

পাখির কাকলি আর সুমধুর সুরে,
ভুলে যাই সব ব্যথা গ্লানি অবসাদ,
কী যে মোহ! কতো সুধা! জানা হয়নি আজো।
প্রশ্নবিদ্ধ হই বার বার, শুধু ভাবি!
গানে গানে বলে বলে দেয় পাখি —
আমার কন্ঠের এ গান সে তো সুর নয়,
যেন বাংলা ভাষায় ডাকাডাকি।

বৃষ্টির ঝরঝর ধারা ঝরে অবিরাম,
ছন্দের তালে তালে একটানা সুর বাজে,
ফোঁটা ফোঁটা শব্দের গভীরতা সীমাহীন,
কী কথা লুকিয়ে আছে তাতে?
যায় না বোঝা কোনমতে।
বৃষ্টি জানায় গর্বভরে–
আমি তো বাংলা ভাষা-ই শুধু জানি,
এ ভাষাতে পথ চলি, যাই গান করে।

পাহাড় সাগর করে ভাব বিনিময়,
মেঘ ডাকে, বায়ু বয়ে যায় বাধাহীন,
রাতেরা কথার পসরা সাজায় থরে থরে,
নিশি জাগে চাঁদ, রাত শেষে ভোর হাসে,
ফুলে ফুলে সোনালী সূর্য ডানা মেলে!
নিসর্গ মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।
বাংলা ভাষার স্নিগ্ধতা
নীলাকাশে,
রাজপথে,
ঘাসে ঘাসে।

হৃদয়ে বাংলা ভাষা

আবু হানিফ জাকারিয়া

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

ভাষার আর্তনাদ 

ভাষা শহিদেরা ওপার থেকে করছে আর্তনাদ।

হাহুতাশ করে জীবিত ভাষা সৈনিক যারা

জীবন দিয়ে আর লড়াই করে আনল যে ভাষা।

সে ভাষার আজ কি যে করুণ দশা।

লৌকিক ভাষাপ্রেমী সুশীলদের নেই অপবাদ।

গুমরে কাঁদে আজ বেদনার্ত আত্মা 

বেহাল মাতৃভাষা করে আর্তনাদ 

লোকদেখানো ভাষাপ্রেম দেখে।

বর্ণমালা খঁচিত  শাড়ি -পাঞ্জাবি,

একুশের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারে ফুল দেয়া,

নাঙা পায়ে প্রভাতফেরি, দিনব্যাপী ভাষার গান,

দেশের গান, সবকিছুই কি মনের টানে?

নাকি সব লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা?

মাতৃভাষার নেই সম্মান, শুধুই অবমাননা।

ইংরেজি ভাষায় দারুণ দখল, 

হিন্দি গানেও  দক্ষতা সমান,

পোশাক আশাকে সাহেবি ঢং

তারো আবার হাজারো রঙ।

সাদাকালোতে বাঙালি সাজার কি আপ্রাণ চেষ্টা।

একদিনের বাঙালি সেজে একি নয় প্রতারণা?

ভাষার আর্তনাদ

মুগ্ধতা.কম

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

মধুময় মাতৃভাষা

মুগ্ধতা.কম

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

একুশ তুমি

একুশ তুমি প্রতিটি বাঙালির অহংকার

তোমার তরে তাজা তাজা প্রাণ অকাতরে

ঝরে ফেললেও,  আদায় করে নিয়েছ,

বাংলা মায়ের আদরমাখা মাতৃভাষার।

বাংলার একুশ আজ নয় শুধু আমার, আপনার

শত বঞ্চনা, গঞ্জনার আহাজারির নিপাত ঘটিয়ে

দেশে-বিদেশে শত কোটি বাঙালির আত্মায়,

শিকড় গজিয়েছ ভালবাসায় বাংলা ভাষার।

মাগো, পাকিস্তানি পিশাচেরা কেড়ে নিতে চেয়েছিল

তোমার আচঁলমাখা মুখের ভাষা, প্রানের ভাষা

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে দামাল ছেলেদের

অগ্নিঝরা রক্তিম সূর্যের ত্যাজ, তাদের উচিৎ শিক্ষা দিলো।

রক্তের অগ্নিশিখায় অন্তর পুড়ে পুড়ে

বাংলা মায়ের নব উত্থানে জাগ্রত সন্তানেরা

মাতৃভাষাকে  বুকের মধ্যে আগলে রেখে,

রক্তে রাঙা হাত নিয়ে উজ্জীবিত করেছে

একুশের বাংলাকে, মাথা উঁচু দাঁড় করিয়েছে

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশ্ব মায়ের দরবারে।

একুশ তুমি

মুগ্ধতা.কম

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

বাংলা বর্ণমালা ও বায়ান্নের একুশ

বায়ান্নের একুশ বাংলা ভাষার বর্ণের রূপকার,

ভাষা শহিদের রক্তে জন্য,পেলাম বর্ণমালা উপহার।

একুশ মোদের মায়ের ভাষা জ্ঞানের দীপ্ত বাতি

বাংলা  ভাষায় কথা বলে আজ বাঙালি জাতি।

একুশ মোদের ফাগুন মাসের নানান রঙের ফুল-

সালাম রফিক বরকত জব্বারের রক্ত মাখা চুল।

একুশ শুধু নয় বাঙালির, বিশ্ব মাতৃভাষার চেতনা-

মাতৃভাষার স্বীকৃত দিবস, বিশ্ববাসীর প্রণোদনা।

স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের পঞ্চাশ বর্ণের বাংলা বর্ণমালা-

ভিনদেশি মায়ের ভাষা, যায় না মন খুলে সব বলা।

বর্ণবর্ণে যোগসূত্রে বাংলা মায়ের ভাষা-

ছিলাম যেন মূর্খ বাঙালি দিনমজুর আর চাষা।

অ-আ-ক-খ, যত বাংলা স্বর-ব্যঞ্জনবর্ণ-

শহিদ মিনার স্মৃতিস্তম্ভ ভাষা শহিদের জন্য।

মূর্খ-মজুর যত পণ্ডিত  ভাষার জন্য যাদের অবদান-

তাই এই বাংলার সবখানে এখন বাংলা মায়ের জয় গান।

সাত সকালে প্রভাতফেরি, যায় মিলে সব দলে দলে-

শহিদ মিনার ভরপুর হয় যায়, ফাল্গুনের ফুলে ফুলে।

একুশ মোদের ভাষার বিজয় স্বাধীনতার সূত্রপাত-

বায়ান্ন, একাত্তরে ঐ পাকিরা হয়েছে  কুপকাত।

বাংলার বর্ণমালা মাতৃবর্ণ স্বীকৃত রাষ্টভাষা-

বায়ান্নের একুশ বিশ্বমাতৃভাষা দিবস-

মোরা এখন শিক্ষিত চাষা!

বাংলা বর্ণমালা ও বায়ান্নের একুশ

শ্যামলী বিনতে আমজাদ

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

শ্যামলী বিনতে আমজাদের একগুচ্ছ ছড়া

অন্তঃসারশূন্য

বিবেক ভেজেছি বেগুনের মত

বুদ্ধিকে ডুবো তেলে,

গরম ঘি-ভাতে ওসবের সাথে

হজম দারুণ মেলে।

সব খেয়ে আজ শক্তি ভীষণ

দাপট আমার হাই,

নিঁখুত সমাজে আমার মতন

কয়জন আছো ভাই?

_______________________

ছুটি

তুমি চলেছো মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে

আমি চলেছি রথে,

জানা আছে ফের

দেখা হবে ঠিক-

ভিন্ন দুটি পথে।

দিক হারিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে

মাছ খোঁজা ওই বক,

দিনশেষে সে ও

বেঁচে যায় ঠিকই-

নয়তো আহাম্মক।

যে যাই করি ফিরতে হবে

পড়বে যখন ডাক,

সব পিছুটান হটিয়ে দিয়ে

হয়ে যাব নির্বাক।

___________________________

চাকরির ভাষা

ভাইভা ঘরে ইংরেজিটা

এখন কমন খুব,

বাংলা ভাষার জায়গা সেথায়

নেই, দিয়েছে ডুব।

মায়ের ভাষা আর ভাসে না

ভাইভা নদে আজ,

চাকরিটা তাই হচ্ছে না ভাই

কপাল জুড়ে ভাঁজ !

________________________

ফাঁকি

এটা জানি, ওটা জানি

সেটা অজানা !

জানা অজানার মান

হয় না জানা ।

একে জানি,ওকে জানি

জানা কত বাকি !

নিজেকে জানা নিয়ে

দেই শত ফাঁকি ।

_______________________

কালের অহংকার

ছুটছে সময় আলোর বেগে

কীসের তাড়া তার?

কোথায় যে তার ঘর বাড়ি আর

কীসের অহংকার?

থামতে বলি, নেয় না কানে

কালা কি তার কান?

কার ডাকে সে যাচ্ছে ছুটে

কীসের এত টান?

_____________________

পোকা বার্তা

চালে পোকা ডালে পোকা

পোকা আম পাড়াময়,

কাঠে পোকা নাটে পোকা

পোকা আজ তাড়া নয়-

খেয়ে নেবে তোকে যে..

ফুলে পোকা কুলে পোকা

পোকা খুব জ্বালাময়,

পেঁপে পোকা মেপে পোকা

শিগগিরই সাড়া নয়

হাতে পোকা দাতে পোকা

পোকা আজ মাথাময়,

ডানে পোকা বামে পোকা

পোকা খুব যা তা নয়

বিবেকের শোকেজে !

শ্যামলী বিনতে আমজাদের একগুচ্ছ ছড়া