কবিতা

কবিতা

মজনুর রহমান

২২ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১০:১৯ অপরাহ্ণ

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

নিঃসঙ্গতা 

মায়ের চোখ থেকে নিঃসঙ্গতা নিয়ে এসে

শহরে বাড়ি বানাচ্ছে মানুষ,

এখন দুপুরের ভাতঘুমে সে দেখতে পায়

বাড়ির ছাদে বৃষ্টি পড়ছে-

টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ টিপটিপ অনবরত 

বৃষ্টির ছাঁটে জানালা ভিজে যাচ্ছে,

অদূরে কসাইখানায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে লাল ষাঁড় 

আজ তার শেষ দিন পৃথিবীর বুকে।

নিচতলায় মজুরি নিয়ে চলে যাচ্ছে কারিগর 

সারাদিন সেও অবাক হয়ে ভাবে,

এমন নিঃসঙ্গতা দিয়ে মানুষ কী করে বাড়ি বানায়

যেখানে সঠিক পরিমাণে কান্না মেশানো নাই?

বৃষ্টি সাক্ষী

শেষবার আপনি বলেছিলেন, এই তুমুল বৃষ্টি সাক্ষী,

আমাদের আবার দেখা হবে।

বহুকাল আমি সাক্ষীকে হাজির করে বসে আছি,

যেখানে ঝড়ের কোতোয়াল চিৎকার করে ডাকে

অথচ আসামী পলাতক!

জানি বৃষ্টি আপনার জমিনেও হয়;

আপনিও তবে সাক্ষীকে সাথে নিয়ে ভিজতে থাকেন?

যেখানে বিচার আপনার কথামতো ঝরে?

মজনুর রহমানের দুটি কবিতা 

রবীন জাকারিয়া

১৮ নভেম্বর, ২০২২ , ৯:৩১ অপরাহ্ণ

হুমায়ুন ছিল বলেই

হুমায়ুন ছিল বলেই
সবুজে হলুদ রোগাক্রান্ত সমাজের চিত্র পাল্টানোর জন্য
পকেটহীন হলুদ পানজাবি পরিহিত হিমুরা
নিশিতে পথে বেরুনোর আহ্বান করতো!
হুমায়ুন ছিল বলেই
পৌঢ় মিসির আলি হলুদে ব্যাধির
রহস্য উদঘাটনের জন্য
যুক্তির পর যুক্তি সাজাতো৷
শুভ্ররা কালো টাকা, দূর্ণীতি, ঘুষে ভরা
বিত্ত-বৈভবের মাঝেও শুভ্র-সাদা জীবনের স্বপ্ন দেখতো৷
হুমায়ুন ছিল তাই
প্রকাশনাগুলো বাণিজ্য করতো৷
দর্শনার্থী, পাঠক, লেখক, প্রকাশকে মুখর ছিল
হৃদয়ের বই মেলা৷
হুমায়ুন ছিল বলেই
পাঠক ছিল৷ যুব সমাজ বই পড়তো৷
আজ হুমায়ুন নেই
তাই কিশোর-যুবা বই পড়ে না৷
বাবার অসৎ পয়সায় কেনা
পালসার, হাংক কিংবা এপাচীর পিঠে সওয়ার হয় অধিক ক্ষিপ্রতার আশায়৷
ইয়াবা, সিসা অথবা মারিজুয়ানার নীল ধোঁয়ায়
নীল পর্ণোর বিষাক্ত নীল নট হয়ে যায়৷
হুমায়ুন নেই তাই
বইহীন, পাঠকহীন সমাজ!
ফেসবুকিং, চ্যাটিংএ চিটিং হয় যুবা নারী৷
হুমায়ুন নেই বলেই
জ্যোৎস্নার সরোবরে অবগাহন করেনা কেউ৷
সারাদেহে এত ভাইরাস আর কালিমা
এখনইতো সময় জ্যোৎস্নার সরোবরে অবগাহন করে
হলুদে ব্যাধি ধুয়ে শুভ্র হওয়ার৷

(শুভ জন্মদিন হুমায়ুন আহমেদ)
লেখা: রবীন জাকারিয়া

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

রবীন জাকারিয়া

১৩ নভেম্বর, ২০২২ , ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

মৃত্যুপুরী রবীন জাকারিয়া

আজ আমি চলে যাচ্ছি—
বড্ড গুমোট আর খাঁচায় আবদ্ধ
জীব মনে হয় নিজেকে!
এখানে ভরা জ্যোৎস্নার আলো পাল্লা দিতে পারেনা তীব্র বাহারী আলোর সাথে,
রঙধনু এখানে পুরোপুরি বিকশিত হতে পারেনা
ছোট্ট আকাশে,
বৃষ্টির সুর ঝংকার শোনার মানুষ নেই এখানে৷
বিত্ত বৈভবে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল
ছোট ছোট শহর, একই শহরে৷
ডিজে পার্টির কর্কশ সুর আর সুরা পানে মত্ত
নর-নারীর যুগল নৃত্য আর কোলাহলে মুখর৷
পাশের ফ্ল্যাটে প্রবাসী সন্তানের নিঃসঙ্গ
বৃদ্ধ মায়ের মৃতদেহ পরে থাকে
আঞ্জুমানে মফিদুলের দায়ভারে৷
এখানে মানুষে মানুষে সম্পর্ক হয় ক্ষমতায়,
টাকা কিংবা পদবীতে৷
স্থাপত্য শৈলীর নামে প্রত্যেকে বাড়ি নয়
নির্মান করেছে
একেকটি কয়েদখানা,
যা গুয়েন্তেনামা কারাগারের চেয়েও ভয়ংকর৷
আমিতো অপরাধী নই!
আমি কারাগারে থাকতে চাইনা কখনো৷
অপরুপ এই বিশাল পৃথিবী দেখে যেতে চাই
আমৃত্যু, মুক্ত পাখির মত৷
তাই বিবর্ণ, মেকি এই মৃত্যুপুরী থেকে
পালাতে চাই আজ, এখনই৷

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

মৃত্যুপুরী রবীন জাকারিয়া

রবীন জাকারিয়া

১৯ অক্টোবর, ২০২২ , ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

ইমাম

মসজিদটা দৃষ্টি নন্দন,
ছাদে ঝুলে আছে অসংখ্য দামি ঝাড়বাতি
আর সিলিং ফ্যানের বাহুল্য উপস্থিতি৷
ইটালিয়ান টাইলসের ঝকঝকে মেঝেতে
পা ফেলার আগে নিজের পদযুগল দেখে নেই পুনর্বার৷
সেন্ট্রাল এসির এ ঘরটাকে নিজের বলে
মনে হয়না এতটুকু৷
সবুজ কার্পেটে বিছানো নামাজের স্থান,
একেবারে সামনের কাতারে তবুও স্থান পায়
গুটি কয়েক মখমলের পুরু জায়নামাজ,
আর ভার্জিন ওয়াটার বোটল৷
আমাদের বোঝানো হয়
মসজিদও এখন আর সাম্যতার স্থান নয়৷
এখানে সময় কিংবা ওয়াক্ত নির্ধারণ হয়
সভাপতির আগমনের উপর৷
এক দিন মজুর নামাজি আমি৷
ভীত মনে বসে পরি শেষের কোন কাতারে৷
সবুজ কাপের্টের উপর মখমলের জায়নামাজেও
সম্মানিতদের চলেনা বলেই,
তাঁরা প্রত্যেকে বগলদাবা করে আনেন
আরো বাহারী জায়নামাজ৷
ছুটন্ত গতিতে একজন খাদেম এসে অফুরাণ যত্নে
বিছিয়ে দেন তৃতীয় জায়নামাজ৷
সারা মসজিদে আমি খুঁজে পাইনি ইমামকে৷
শুধু নামাজের সময় চমকে উঠি!
ইমামের স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সেই খাদেম৷
তবে কি এখন আর মসজিদে ইমাম থাকে না?
হয়তো তাই!
থাকে শুধু নামাজ পড়ানোর বেতনভূক কর্মচারী!

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

ইমাম - রবীন জাকারিয়া

রবীন জাকারিয়া

১৯ অক্টোবর, ২০২২ , ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

বড্ড ভাঙ্গচুড়ে আমি

ভীষণ ভাংচুরে আমি—
ছেলে বেলায় প্রিয় খেলনাগুলো ভেঙ্গে ফেলতাম,
পুতুল, পিস্তল কিংবা গাড়ি ভেঙ্গে গভীরের সন্ধান করেছি প্রতিনিয়ত৷
ভেঙ্গে ভেঙ্গে অবশিষ্ট থেকে যেতো একটা স্ক্রু অথবা বল্টু৷
এরপর আর বিভাজিত না করার যাতনা অস্থির করতো আমায়৷
তখন বুঝিনি এর চেয়ে বিভাজ্য হয়না কিছুই
যেমন পদার্থকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে অণু, পরমাণু কিংবা ইলেক্ট্রন, নিউট্রন, প্রোটন-এ থেমে যায় পদার্থবিদ;
বায়োলজিস্টরা থেমে যায় প্রাণের উৎস প্রোটোপ্লাজমে এসে৷
তবুও আরো ভাঙ্গতে চাই ভাঙ্গচুড়ে আমি—
প্রথা ভাঙ্গি, সমাজ, বিধান, ধর্মীয় মূল্যবোধ বাদ দেইনা কিছুই৷
নারীর হিজাব থেকে ব্লাউজ, তারপর শাড়ি
অথবা বানাতে চাই টপলেস;
প্রথা ভাঙ্গবোই বলে—
ভাঙ্গচুড়ে আমি ভেঙ্গে ফেলি
কবিতার পংক্তিমালা, শব্দ চয়ন,
আবৃত অঙ্গের বাহুল্য ব্যবহার৷
আমি মানি না শ্লীল-অশ্লীলতার কাঠামো!
অতপর আফ্রিকার গহীন অরণ্যে বসবাসরত গোষ্ঠীভিত্তিক টপলেস সমাজের ছবি দেখে
আঁতকে ওঠা আমি বলে উঠি অসভ্য.,.
মনের অজান্তেই নিজেকে দৈতস্বত্ত্বার অধিকারী মনে হয়৷
যে মানদন্ডে কাউকে অসভ্য বলছি অথচ আমি সভ্যকে অসভ্যতার আবরণে আবৃত করছি নিত্য৷
জেগে ওঠে স্বাশত সত্য, মানবিক চেতনা৷
ভাঙ্গার শেষ বিন্দুতে গিয়ে আর
ভাঙ্গা যায়না কিছুই৷
ইচ্ছে করলেও নয়৷
নিজেকে ভাঙ্গচুড়ে বানালেও
সমাজ ভাঙ্গচুড়ে নয় কখনো৷

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

বড্ড ভাঙ্গচুড়ে আমি - রবীন জাকারিয়া

রবীন জাকারিয়া

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

অমানিশা

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
এক টুকরো চাঁদের ভূতুরে আলোয়
চেয়ে থাকি অপলক!
চরকা কাটা কোন বুড়ি দৃশ্যমান হয়না,
বরং এক পরিশ্রান্ত নারীকে দেখি
মমতা ভরা চোখে৷

দুহাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে
আবারো চেষ্টা করি গভীর দৃষ্টিতে
সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ফ্যাকাসে চাঁদ আর
সেই রহস্যময়ী নারীকে!
নিজেকে আবিষ্কার করি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন,
জীর্ণ এক রান্না ঘরে৷
যেখানে নিভু নিভু প্রদীপের আলোয়
আমার স্বপ্নের বাতিঘর, মমতাময়ী মা
একমুঠো ভাত রাঁধছেন৷
বাটনায় পটলের ফেলে দেয়া ছাল দিয়ে
কী ভীষণ যত্নে ভর্তা করছেন!
প্রচন্ড ক্ষুধায় গরম ভাত আর
ভর্তার ঝালের গন্ধ যেন নেশা ধরায়৷
থালাটাতে ভাত আর ভর্তা দিয়ে মা বললো,
আজ বাজার করা হয়নি বাবা৷
কষ্ট করে খেয়ে নে৷
কাল টাকা নিয়ে ভালো করে বাজার করিসতো!
দেখতো বাবা বাড়িতে টাকা থাকার পরেও
কেন যে এমন হলো বলতো?
বুঝেছিস ব্যাটা! বয়স! সব ভুলে দেয়৷
আমি জানি
কাল কেন আগামী চারদিনেও বাজার হবে না!
মায়ের কাছে টাকা নেই৷
ছোট হলেও বুঝি
মা সান্তনা দেয়, স্বপ্ন দেখায়৷
মায়ের এই মিথ্যা আশায়
আশাহত হইনা মোটেও৷
কেননা রাষ্ট্র প্রতিদিন এমন মিথ্যা বলে৷
পার্থক্য শুধু মা স্বপ্নের বাতি জ্বালায়
আর রাষ্ট্র অমানিশায়৷

অমানিশা

রবীন জাকারিয়া

২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

লুটেরা হবো

আর কতটা কাপড় নামালে

উলঙ্গ বলে?

কতবার শরীর বেচে দিলে

পতিতা বলে?

কতদিন না খেয়ে থাকলে

অনাহারী বলে?

কতটা প্রতিবাদহীন থাকলে

দেশপ্রেমী বলে?

কতগুলো মিথ্যা বললে

রাজনীতিক হওয়া যায়?

কতটুকু চোখের জলে

ভাত পাওয়া যায়?

কীভাবে একটি কোটা নিয়ে

চাকরি পাওয়া যায়?

কোথায় আবেদন করলে

লেখক তকমা পায়?

আমি জানি না!

কিছুই জানি না!

এখন শুধু মরিয়া হয়ে উঠেছি

One man army হবো বলে৷

আমার স্ত্রীকে ‘বাসন্তি’ আর

সন্তানদের ‘আসমানী’ হতে দেবো না কখনো৷

আমি নুরলদিন, সূর্যসেন, ভাসানী

নজরুল কিংবা বঙ্গবন্ধু হবো৷

হবো বিপ্লবী, যদি তোমরা লুটেরা বলো!

ক্ষতি কী?

আমার একটি জীবনের বিনিময়ে যদি

আরো কিছু জীবন বেঁচে যায়!

আমি তাই করবো৷

অসীম সাহসী বাঙালীরা চিরদিন

প্রতিবাদী ছিলো৷

আর আমিও তো একজন বাঙালিই৷

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

কবিতার গল্প

রবীন জাকারিয়া

২০ মার্চ, ২০২২ , ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

কবিতার সিন্ডিকেট

একটি কবিতা ছাপাব বলে

পরিচিত লেখকদের মিনতি করেছি কত!

বহু বছর পেরুনো বিবর্ণ ডায়েরির

পাতায় ভরা কবিতা৷

হাতে লিখে কিংবা টাইপ রাইটারে প্রিন্ট করে

হেঁটে হেঁটে পত্রিকা অফিসে ছুটে গিয়েছি৷

অসহায় ভিক্ষুকের ন্যায় নত চাহনি দিয়ে

বলেছি প্রত্যাশার কথা!

ব্যবহৃত টিস্যুর মত কবিতার পান্ডুলিপি মুচড়িয়ে প্রকাশক এ সপ্তাহ-ও সপ্তাহের কথা বলেও

প্রকাশ করেনি কখনো৷

ছাপানো একটি কবিতা দেখব বলে

লাইব্রেরি কিংবা পরিচিতের বাসায় পেপার পড়ি৷

সকলেই প্রশংসায় ভাসাত পাঠাভ্যাসের জন্য,

আসল সত্যটা জানতাম শুধু আমি৷

আজ আমাকে প্রকাশকের কাছে নয় বরং

প্রকাশকরা আমার কাছে 

নির্লজ্জ ভিক্ষুকের মত বসে থাকে৷

পরবর্তী লেখাটা পাবার আশায়৷

আমি জানি ওরা কেউ সাহিত্যের অনুরাগী নয়

শুধুই ব্যবসায়ী৷

তাই ওদের দিয়ে সিগারেট কিংবা গৃহকর্মী সাপ্লাইয়ের দালাল বানাই৷

পঁচে যাওয়া এসব ব্যক্তির কাছে তবুও

তুলে দিতে হয় নিজের ভালোবাসার রচনা৷

এছাড়া কোনো পথ যে খোলা নেই আর৷

সাহিত্যকে শুধুই বাণিজ্যিকীকরণ করেই

ওরা টিকে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট হয়ে৷

হয়তো আগামীতেও থাকবে!

যেমন অতীতে ছিল৷

(হুমায়ুন আহমেদের সাহিত্য জীবনের ছায়া থেকে)

কবিতা - কবিতার সিন্ডিকেট - রবীন জাকারিয়া

বাদল রহমান

২০ মার্চ, ২০২২ , ১০:২৪ অপরাহ্ণ

অনাঘ্রাতার বিবর্ণ প্রচ্ছদ

১. চেনা পায়ের দাগ

নীল মাধব,

অনাঘ্রাতা এই পথেই হেঁটে গেছে

এটাই তো রোদ্রস্নান পথ

মাধবীর স্নানের চিহ্ন পড়ে আছে

বুনোপুষ্পের ওপর।

ওই দেখো মাধব—চেনা পায়ের দাগ

ধূলির ওপর পড়ে আছে অমলিন।

ওই তো অদূরে মনপুরা কৈলাশ

ওটাই তো মাধবীর নিবাস।

নীল মাধব,

আমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে রব চিরকাল ?

পথ চিনে দাও—আমিও যাবো মাধবী গেছে যে পথ ধরে …

নীল মাধব,

এখন বিজয়ের মাস…

বিজয় দিবসে একাই কি ফুল দেবো শহিদ মিনারে …

নীল মাধব

আমার মাধবীকে ফিরে আসতে বলো…

২. নামযজ্ঞ প্রিয়ার 

নীল মাধব,

ফুল ফুটেছিল কদম বৃক্ষশাখে

বর্ষা প্রণয়ের মহামিলনের আশে

বৃষ্টিঝরা রাতে

বাঁশির কণ্ঠ নাম ধরে ডেকেছিল

                              নামযজ্ঞ প্রিয়ার

মানবের বাঁশির ডাক শুনে ঘরে থাকেনি মানবী আর।

বৃষ্টিঘন অগ্নিরাতের শুভ প্রহরে

মানবীর পায়ের ছাপে ছাপে

পথের কাদায় ফুটেছিল কমল

বর্ষার অবিরাম বৃষ্টিতে—

অঙ্গ ভিজে ভিজে মানবী গিয়েছিল কদম বৃক্ষতলে

ভেজা শবনম বসেছিল ভেজা অঙ্গের ভাঁজে ভাঁজে।

দেবালয়ে উঠেছিল কানাকানি

জানাজানি হয়েছিল স্বর্গকুঞ্জ মাঝে

রাধিকার অন্তর অতলে ফুটেছিল উচ্ছাসে

                           নাম কৃষ্ণকমল।

বৃষ্টি থামেনি সারারাত

নাম কানু বাঁশিও বেজেছে অবিরাম

অন্তরে ফুটেছিল তার নাম রাধিকা বকুল

বাঁশির কণ্ঠ নাম ধরে ডেকেছে নামযজ্ঞ প্রিয়ার

এক সময় প্রেমের মাধুরীচূর্ণে

মানবের গলা জড়িয়ে ধরেছে মানবীর দু’হাত।

নীল মাধব,

এই যে রাতভর বাঁশির কণ্ঠ ফাটানো

এই যে মানব- মানবীর স্বর্গীয় মিলন

এই যে ভালোবাসায় কমল ফুটানো

কোথায় লুকিয়ে গেছে বলো এমন ?

এখনো তো অগ্নিসন্ধ্যায় কিংবা অগ্নিরাতে

প্রিয়ার নাম ধরে বাজে বাঁশি

কেনো ছুটে আসে না মানবের ডাকে সেই মানবী

এখনো তো কদম বৃক্ষতলে বর্ষায় বৃষ্টি নামে 

অঙ্গ ভেজায় মানব

কেনো মানবের ডাকে ছুটে আসে না মানবী

কেনোই বা প্রেমের পথে ফুটে না কমল

এই পরিণতির জন্য কে দায়ী?

বৃষ্টির কণ্ঠে মেঘবাহন বলেছিল—মানবী।

৩. গান শুনুক আর নাই শুনুক 

নীল মাধব,

মুদ্রণ হবে না নতুন কোনো শিরোনাম

সম্পাদনা হবে না মাধবী

সে হাঁটতে থাকুক না হয় আগুনের ওপর 

কিংবা পুষ্পে অথবা রক্তে

হাঁটুক সে নিজস্ব গতিপথে।

এই জনবহুল নগরীর দালানে কিংবা রাস্তায়—

মাধবীর অনুসন্ধান অরোরার পূর্বভাগে।

পথের সন্ধানও আজ হবে না অনুসন্ধানে। 

কালের কণ্ঠ থেকে এনেছি কালের সুর। 

সম্পাদনায় পুনঃ মুদ্রণ নতুন গায়েনের কণ্ঠ—

মাধবী শুনুক আর নাই শুনুক এ গান। 

নীল মাধব তুলসীচন্দন নয়—তোমাকে উৎসর্গ আজ গান।

৪. একটি গানের জন্য

একটি গানের জন্যে

সুরের গীটার জাগিয়ে রাখে অযস্র  রজনী

ধবল নদীর তীরে গানের জন্যে বটমূলে বসে থাকা গায়েন যেনো স্বর্গদূত।

রজনী জেগে জেগে বক্ষ করেছে ক্ষয়

গীটারে বেহাগে প্রলয় হয়নি ধূসর পথ

সুরের মূর্ছনায় খান্ খান্ হয়নি রজনী প্রহর।

গানের জন্যে সুরেন্দ্র সুরেন্দ্র বলে আর্তনাদ করেছে গায়েন

আর্তনাদে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছ গগন।

গানের পথ ধরে হেঁটে গেছেন নবী দাউদ

কতো তানসেন, লালন, হাছন, আব্বাস, কানাইশীল, হরলাল, করিম, মাধাই

কতো গান পাগল পথে পথে ঝরিয়েছে কণ্ঠের রক্ত।

একদিন পৃথিবী গানহীন ছিলো

উর্বর জমিন ছিলো শস্য ফলাতে বন্ধ্যা

এই ভাবে কাটে সহস্র বছর,  অতঃপর একদা—

গানের কলি ফুটলো স্রষ্টার জমিনে

পর্বতের বক্ষ ফেটে জলসুর স্রোত বহে সমুদ্রের দিকে।  

গানের সুরের মূর্ছনায় সমুজ্জ্বল হলো

মক্কার আঁধারী পথ।

গানের লয়ে আঁধার ধ্বংস হলো

বেথেলহামে, মথুরা, বৃন্ধাবনে,

সিন্ধুর পথ ধরে বাংলায় পৃথিবীর পথে ঘাটে।

গানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো মসজিদের আজানে

গানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো গীর্জার ঘণ্টায়

গানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো মন্দিরের শঙ্খে।

তারপর, সেই গান গায়েনের কণ্ঠে এলো

দরাজ কণ্ঠে হোসেন গায়েন গাইল মানুষের গান।

গান গাইতে গাইতে তার কণ্ঠের রক্ত ঝরে পড়ে পথে।

নীল মাধব,

আমার কণ্ঠেও মানুষের ভালোবাসার গান। 

নীল মাধব,

রক্ত ঝরার পথে এই কালিনেরও হবে যে অভিষেক। 

৫. মাধবী বিলাস 

মাধবী, তোমার ঘনকালো চুলের

আগা ছড়াচ্ছে হৈয়ঙ্গবীণ ঘ্রাণ। 

আমার নিষ্প্রাণ কোলে ঝরে পড়ছে

ঘ্রাণের মাধুরীচূর্ণ।

দুপুরের স্নান শেষ করে

আমার সম্মুখে দাঁড়ানো বনজ্যোৎস্নার ছায়াদেবী তুমি।

ক্ষীরময় শরীরের কারুকাজ ভাঁজে

ঋতুবতী নদীর মোহনায় মরীচিকা ঢেউ। 

চন্দ্রখোঁচা নাভীর সরোবরে ফুটেছে 

এক শ’ অাট অমল নীলকমল।  

আজকের এই বিজয় দিনে

তোমাকে বেশ মানিয়েছে—যেনো অপরূপ অব্রাত্য ভূমি তুমি। 

ঘরের সব ক’টা বাতায়ন খুলে 

দাঁড়াও দখিনের খোলা বাতায়নে

এবার গাও বিজয়ের গান। 

পরনে সবুজ শাড়ি—

লাল পাড়, লাল আঁচল, 

লাল বেসিয়ার ব্লাউজ।

কপালে গাঢ় লাল টিপ্

মাথায় নীল রঙের স্কার্প

রাঙা পায়ে হলুদ চপল

দু’ হাতে লাল বেলোয়ারি চুড়ি

অনন্য বিলাস সমগ্রের তুমিই মাধবী।

বিলাসগুলো ধরে রাখো মাধবী ধরে রাখো

ওগুলো নয় সোকেজে সাজিয়ে রাখা খেলনা, টি পট, কাপ পিরিচ, চীনা মাটির প্লেট।

ওগুলো নয় দরজা—জানালার রঙিন পর্দা

ওগুলো তোমার গাঢ় শ্যামল বরণ

শরীরে বসন্ত ধরে রাখার বৈভব।

মাধবী ,

তোমার চুলের হৈয়ঙ্গবীণ ঘ্রাণে খুঁজে পাবে— স্বাধীনতার স্বাদ।

সবুজ রঙে খুঁজে পাবে—আমন মৌসুমের ধানের ক্ষেত, সবুজ বনভূমি।

লাল রঙে খুঁজে পাবে—ফাগুনের আগুন, প্রতিদিনের সূর্যোদয়।

হলুদ রঙে খুঁজে পাবে—চিরহরিৎ জীবনের বেলাভূমি।

নীল রঙে খুঁজে পাবে—সমুদ্রের গভীরতা, উদার নীলিমা।

মাধবী ,

হাতের চুড়ির ঝঙ্কারে খুঁজে পাবে—জীবনের জয়গান।

পায়ের চপলে খুঁজে পাবে—পথ চলার গতি।

শাড়ির লাল পাড়, লাল আঁচল—ভালোবাসার উঠোন।

মাধবী বিলাস সমগ্রে তোমাকে বেশ মানিয়েছে, ধরে রাখো বিলাস সমগ্র।

মাধবী, 

অঘ্রাত সুন্দর আর সৌন্দর্যের কটিদেশ ধরে— অনায়াশে পথ চলতে পারো।

৬. লাল শাড়ি লাল টিপ্

মাধবী ,

লাল শাড়িতে তোমাকে বেশ মানিয়েছে।

কপালে লাল টিপ্

ওটুকু বিলাস ধরে রেখো

লাল শাড়িতে খুঁজে পাবে

                      ফাগুনের আগুন। 

লাল টিপে খুঁজে পাবে

                      জীবনের সূর্যোদয়।

মাধবী ওটুকু বিলাস রঙ

ধরে রেখো যতনে

লাল রঙে জীবনের আল্পনা

টিকে রবে গোধূলি লগনে।

লাল শাড়ি লাল টিপ্

তোমাকে বেশ মানিয়েছে

সকালের স্নান শেষের মনরঙা ক্ষণে

বিলাসটুকু ধরে রেখো

মাধবী ধরে রেখো যতনে।

মাধবী ,

লাল শাড়ি, লাল টিপ্

খুলে ফেলো না আর

ওটুকু বিলাসে—

বিজয়কে খুঁজে পাবে বারবার। 

৭. সুবর্ণচ্ছটার অক্ষর

বর্ণমালার মাস, 

সুবর্ণচ্ছটার অক্ষর হয়ে 

মাধবীকে ফিরে আসতে বলো … 

নীল মাধব সন্ধান দে, নীল মাধব সন্ধান দে… 

পৃথিবীর জমিনে মানুষের অনেক চাওয়ার থাকে

আমার চাওয়া মাধবী ফসল ভালোবাসা।

আমার সুপ্রভাত— শুভ যাচ্ছে না, তবুও—

সুপ্রভাতের শুভ শুভেচ্ছা পাঠাবো

মাধবীর শুভ জন্মদিনে।  

নীল মাধব,

নষ্ট ভোরের কষ্টগুলো

বুকের ভেতর কষ্ট ভীষণ।

বুকের ভেতর বাড়ছে দহন

দহনগুলো যায় না সহন।  

শহিদ বেদীর কাছাকাছি

এই যে আমি দাঁড়িয়ে অাছি। 

তাহার কথা বলছে না যে—

বাংলাভাষার বর্ণগুলো

মাধব,

মাধবীকে আমার কাছে অাসতে বলো। 

বর্ণমালার শহিদমাসে—

মাধবীকে সুবর্ণচ্ছটার অক্ষর হয়ে ফিরে আসতে বলো। 

৮. মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে 

আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে

সবাই ফুল দিতে যাবে শহিদ মিনার

মিনারের শীর্ষচূড়ার ওপরে

অখণ্ড আকাশে নক্ষত্র জ্বলবে

শহিদ নক্ষত্রগুলো তাকিয়ে রবে 

                   বেদীমূলের দিকে

কারা অর্ঘ দিচ্ছে তাদের

                 গণনায় সবাই থাকবে

            গণনায় আমি থাকবো না।

আজকের মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে  

নবীন প্রবীণ পদ্যকারেরা—

বিজয়ের রক্তগাঁথায় লেখবে নতুন পদ্য

শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলের পাপড়ি শরীরে—লেখা হবে একেকটি নতুন কাব্য

             গণনায় পদ্যকারেরা থাকবে

                গণনায় আমি থাকবো না।

আমার শূন্য চরণ বিজয় ছুঁবে না

আমার শূন্য চরণ ছুঁবে না—রাজপথের স্লোগান সিক্ত ধূলি

আমার শূন্য চরণ অমলিন চিহ্ন  

এঁকে দেবে না শহিদ মিনারের মূল বেদীতে।

স্যমন্তিকাও ফুল দিতে যাবে শহিদ মিনার

তার শূন্য চরণ পূর্ণ হবে—কপালে পড়বে মহান বিজয়

তার বাজু অার কটিদেশ ছুঁবে জয়টীকা

তার লাল শাড়ির সবুজ পাড়ে লেখা হবে—

          বিজয় দিবস

                      স্যমন্তিকা বিজয়ী। 

আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে 

আমার মলিন শার্টের কলারব্যাপী

লেখা হবে—পরাজিত কবি।

শহিদ নক্ষত্রগুলো তাকিয়ে রবে

শহিদ মিনারের দিকে—

কারা পুষ্পমাল্য দিচ্ছে তাদের

                গণনায় স্যমন্তিকা থাকবে

                গণনায় আমি থাকবো না।

আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে

শহিদ মিনার সবাই যাবে

                        স্যমন্তিকা যাবে

                        আমি যাবো না ।

৯. পুনর্বার মিলিত হবো সম্পর্কে

পদ্মার বুক চিড়ে খুঁজে পাইনি শ্যামের গকুল। 

পদ্মার

ঢেউ-জলে মিশে আছে

শূন্য হৃদয়ের না—পাওয়ার বিলাপ—বিষণ্নতা 

                   মিশে আছে

                   মানুষের বসত না—ভাঙার

                   আকুতি।

যমুনার বুক চিড়ে পাইনি  শ্যাম—পিরিতের বাঁশি। 

যমুনার

ঢেউ—জলে মিশে আছে

গলায় অাঁচল বেঁধে প্রণয় বিসর্জনের কাহিনি  

                   মিশে আছে  

                    মানুষের মন না—ভাঙার

                    মিনতি।

অরণ্যের বৈকুণ্ঠ পথে যে নিত্য হেঁটেছে নিঃসঙ্গ বলরাম—সে তো বিদগ্ধ ঋষি।

হে অগ্নিশিখা মনে করো,

তুমি আরেক ভদ্রা

আমি আরেক  নিঃসঙ্গ  বলরাম—নেই শস্যক্ষেত্রের ব্রজধাম

বৃন্দাবনসন্ধ্যায় মনে জেগেছে সমুদ্রের ঢেউ।

করতোয়ার  বলরামঘাটে বলরাম বলরাম বলরাম বলে ডাকেনি কেউ। 

ভদ্রা! 

বৈষ্ণবভোরে শঙ্খ বাজিয়ে সংক্রান্তিতে আসিও  তুমি

 বারুণীর অষ্টমীস্নান দেখতে যাবো খারু—যমুনেশ্বরীর স্রোতমোহনার শেখেরহাটে। 

মানুষের কণ্ঠে মিলন-বিচ্ছেদের ধূলির সঙ্গীত শুনে— হাত ধরাধরি করে,

মানুষের কাছে পৌঁছে দেবো মানুষের ভালোবাসার গান

তারপর, অন্তর্গত শষ্পভূমির ঘ্রাণ শরীরে মেখে

আমরা পুনর্বার মিলিত হবো বঁধু সম্পর্কে বাঙালির মাটিখচা বৈশাখ উৎসবে। 

১০. তবুও উৎসর্গ

নীল মাধব,

মুদ্রণ হবে না নতুন কোনো শিরোনাম

খোঁজ নেবো না মাধবীর

সে হাঁটতে থাকুক আগুনের ওপর

সে হাঁটতে থাকুক পুষ্পের ওপর

কিংবা আমার বুকের ওপর।

পান করুক না হয় অামার রক্ত—

পথের সন্ধানে অনুসন্ধানী হবো না।

নীল মাধব, 

রঙগন রঙগানো রঙিন রঙগিনী অঙ্গে

মন রঙাচ্ছে কঙ্কাবতী বনে—কলঙ্ক বসন্তে।

আমি বিবর্ণঃ 

মাধবী এখন বহুগামীতার পথে…

কালেরকণ্ঠ থেকে কেড়ে এনেছি চারণ কণ্ঠ

পুনঃমুদ্রিত  আমার কণ্ঠ

মাধবী শুনুক আর নাই শুনুক গান

তবুও উৎসর্গ হবে …

.

কবি

রংপুর

কবিতা - অনাঘ্রাতার বিবর্ণ প্রচ্ছদ - বাদল রহমান

আনোয়ার হোসেন

১৫ মার্চ, ২০২২ , ১২:২৪ অপরাহ্ণ

আনোয়ার হোসেন আকাশ এর কবিতাগুলো

নিঃস্বতা

অক্লান্ত নিঃস্বতায় রাত্রি বাড়ে

তবু,

মুমূর্ষু প্রভাত রেখায়

তেজস্বী কাব্যের পঙক্তি খুঁজি।

শ্রান্ত শিশিরের শব্দ থেমে গেলে

পড়শির পায়ে পায়ে

বসন্তের আবাহনে হেঁটে বেড়াই।

দীপ্যমান অজস্র মঞ্জরীতে

হৃদয়ের অচ্ছেদ্য অংশে বেণী বাঁধি,

যেখানে খুব্ধচিত্তে

অবিশ্রান্ত অতল স্পর্শ

সৃষ্টি করো তুমি।

যেদিন গৃষ্মের খরতাপে পুড়ছিলে খানিক,

শিমুলের শুভ্র দেহ দখিন হাওয়ায়

আকাশে স্বতস্ফূর্ত ভাসছিলো দল বেঁধে।

উড়ন্ত শালিকঠোঁট

যেনো চুম্বিত রামধনু!

এবারে বর্ষায় একটা কিছু হবে।

তাই কাশবনের পাশ ঘেঁষে

সারদীয়সুখ-দেখে নিজমুখ

নদীজলে হেলান দিয়ে।

গেঁয়োবধূর লজ্জা ভাঙ্গা নবান্নে

ধানের শরীরে লেপটে থাকা পিরিলির প্রলেপ

তোমার স্মৃতির মতো আমাকে

রসকাব্যে আটকে রাখে।

নিঃসঙ্গ নই বলেই

তোমার অশেষ নিষ্ঠুরতা,

যা থেকে উঠে আসে

স্বপ্ন আবিষ্ঠ শব্দ বিভাস।

____________________________

সুখসন্ধি

আর না ভেবে

বিকেলের উঞ্চতা নাও।

লেপের ভাঁজে 

জমে থাকা হীম স্মৃতি,

এবার মঞ্চায়ন করুক

শীত-রোদের সরল সংলাপ॥

___________________________

ফোল্ডার

শুনছো?

দুধে জ্বাল দাও চুলো ভরে

টেস্ট হবে,

চায়ে চুমুক হাতে ফেসবুক

বেস্ট হবে।

এরপর, ধোঁয়ার কুন্ডলিতে উড়াবো

আমাদের যত বিষণ্নতা।

জারুল ফুলের গোলাপী ঢং, রং মেখে

সাজাবে তোমায় প্রজাপতিপাখা।

তুমি উড়ে উড়ে অদুরের তারা হয়ে

জ্বালবে মেঘমুক্ত আলো,

উষ্ণতায় ভরে দিবে মোবাইলের স্ক্রীন।

অতঃপর, আমাদের প্রেম,

স্রোতহীন নদীর জমাট শৈবালের মতো

জমে থাক ফেসবুক ফোল্ডারে।

_________________________________

ভ্রম

কতোদিন তোমাকে দেখিনি, 

কেমন আছো তুমি?

আজ কিছু ভালো লাগছে না,

না লিখতে না পড়তে, 

নিঃসঙ্গ বলেই কি প্রকৃতি এতোটা নিষ্ঠুর!

প্লীজ, লাইনটা কেটো না।

যেটুকু সময় ভোরের শিশির ঝুলে থাকে 

দূর্বা ঘাসের ডগায়, 

মাছদের রূপলি ঠোঁট চুষে খায়

নদীর লবণাক্ত জল,

এর থেকে বেশি সময় নেবো না।

জানো, মাঝে মাঝে খিপ্র গতির

বাতাস হতে ইচ্ছে করে,

ইচ্ছে করে, আঁৎকে উঠা দুঃস্বপ্ন ভেঙে

আধপাকা গমের শিষ থেকে

সূর্যের চুম নিয়ে

দু’হাত ভরে ছড়িয়ে দিই

অব্যক্ত যন্ত্রণার দায়ভার।

মধ্যাহৃের সূর্যে তাকিয়ে থাকার 

তোমার কি চোখ আছে?

তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?

কি করে শুনবে,

তোমার মোবাইল নম্বরতো আমার জানা নেই।

____________________________________

নির্বোধ

টাক মাথা নিয়ে

বেলতলায় বসে থাকা ছাড়া

আমার কোনো কাজ নেই।

_____________________________

বধূ বিরাগ

একটি হলুদ ব্যানার দেখে

তোমার কথা মনে পড়লো।

এইতো সেদিন,

হাসিদের উঠোন থেকে

ফিরে গেলে বৃষ্টি ভেজা বালিকা।

তোমার ভ্রুঁ চুয়ে ঝর ঝর ঝরছিলো

জলরক্ত।

তুমি চলে গেলে।

অথচ, তোমাকে পড়াবো বলে

একটি কামিজ এনেছিলাম।

গাঢ়-নীল বুকে কাঁচাহলুদের কাজ।

ভাঁজ খুলে যদি বলতে চন্দ্রমূখী-

সোনাদেহের মাপ জানে যুবরাজ।

শুনছি, তুমি না কি কামিজ ছেড়ে

শরীরে জড়াও শাড়ী? কার সাথে আঁড়ি?

আমি বদলাই নি,

আছি, যে লাউ সেই কদু।

আর তুমি এখন

সিরাজগঞ্জের বধূ।

______________

কবি

রংপুর

আনোয়ার হোসেন আকাশ এর কবিতাগুলো

মুগ্ধতা.কম

২ মার্চ, ২০২২ , ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

কবিতা - ভিক্ষা করে বড়লোকের ভাব ধরেছি - জাকির সোহান

মুগ্ধতা.কম

২৪ জানুয়ারি, ২০২২ , ১১:১৭ অপরাহ্ণ

মাসুম মোরশেদের দুটি ছড়া

বাজার আগুন (১)

বাজার যেন পাগলা ঘোড়া
ছুটছে সেতো ছুটছে ,
লাগামটা কেউ ধরছে না তাই
কায়দা করে লুটছে ।

কায়দা করে ফায়দা খোঁজে
করছে বাজার বৃদ্ধি ,
নিত্য তারা বিত্ত বাড়ায়
করছে স্বার্থসিদ্ধি ।

লাফায় লাফায় বাড়ছে দাম
এটা আর কমবে কি ?
বাড়ার বেলা ঠিকই বাড়ে
কমার লোক কই দেখি ?

দেখার যারা অন্ধ তারা
বধির বোবায় ধরছে ,
বহুদোষে দোষী তারা
ফাঁকে গরিব মরছে ।

বাজার আগুন (২)

দাম বেড়েছে কোন জিনিসের ,
যেই না কয়েছি ,
এমন প্রশ্ন করে আমি
গাধা হয়েছি ।

রাগে ফুঁসছে সবাই দেখি
কাঁপছে থরথর্ ,
লাঠি খোঁজে , ছোড়া খোঁজে
আমি মরমর্ ।

কোন দেশেতে থাকি আমি,
বলে , কোথায় ঘর ?
আর কিছু পুঁছিনি ভয়ে
মারে বুঝি চড় ।

বাজার গিয়ে দাম শুনে সব
বন্ধ হতোই দম ,
দাম বেড়েছে সব জিনিসের,
মানুষেরই কম !

(মাসুম মোরশেদ/ হারাগাছ, রংপুর/ ০১৩০১১১০৮২৭)

মাসুম মোরশেদের দুটি ছড়া

সোহানুর রহমান শাহীন

১০ জানুয়ারি, ২০২২ , ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

সোহানুর রহমান শাহীন এর একগুচ্ছ কবিতা

‘র’ এর গল্প

তার সাথে আর কথা হয় কার, যার
কথা ভেবে বারবার কাঁধে উঠে ভার
ভাবনায় যতবার সে ছিল আমার
তার চেয়ে বেশি তার সাজের বাহার
সাঁঝের বেলায় অবেলার সাথী তার
কাছে সঙ্গী হয়ে আসে পেলে অবসর,
আমি তার ভুলের ভেজানো দরজার
ওপারে পড়ে থাকি কিছুটা অগোচর।

ফিরবার যার নেই আর তাড়াতাড়ি
তার সাথে কেন খায়ালের বাড়াবাড়ি
সে এখন যার থাক ভেসে তার, হার
জিতের জীবন হোক তুচ্ছ আহামরি।

আমি আর তার প্রেম না হবার জ্বর
নিয়ে অবসর খুঁজবার আশা ছাড়ি
প্ররোচনার কবল থেকে পেছনের
সময়ের কথা ভুলে ফিরে যাই বাড়ি।

ঘুম

জলরাত্রির ঘুম ফুরিয়ে এলে আবার অবাঞ্চিত হব
সবরাত্রি পড়ে থাক নদীরবাঁক ফিরে আসা ঢেউয়ে
সাঁতার কাটতে থাকা রমণীর ভেজা আঁচল ঘিরে,
ধীরে ধীরে কামুক বীরে, নামুক নীড়ে খেলাচ্ছলে।

কতো জলের উগ্রতা নিম্ন-তা জানে বিরস মৌনতা
শূন্যতা ভরে কী আজো, সাজো বেহাতের সজনী
দিবস রজনী ভাবো কাম খেয়ালে, নিষিদ্ধ দেয়ালে
ফিরে ফিরে চাও, যা ছিল সঞ্চয় খোয়ালে সকালে।

বিকলে পড়ে থাক! থাক, পড়ে থাক নপুংসক শিশ্ন
জলরাত্রির ঘুম ফুরিয়ে এলে আবার অবাঞ্চিত হব।

শিরোনামহীন পঙক্তি

দূষিত জলের কাছে শুদ্ধতা চেয়ে
একবার জলে নামতে চেয়েছিলাম

বন্দি জলের উঁচুপাড়ে দাঁড়িয়ে যখন
ভাবছিলাম তার গভীরতা নিয়ে,
তখন জল বলেছিল—
ঝড়ের তান্ডব আর ভয়াবহ কম্পনের
ক্ষতে যে গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে
তার পরিমাপ হয় না।

নিঃসীম জলের বুকে নেই কুলের প্রকাশ।

নৈশব্দে ঘিরে থাকা সে জল—
পরিশুদ্ধ করে শ্মশানপ্রিয় শবদেহ।

শিরোনামহীন বসন্তের সুবোধ

চুমুর দাগে যেখানে গর্ভবতী হয়
ক্ষুধার্ত কুটুম, সেখান থেকে ভেসে আসে
পরনিন্দার বর্ণনায় শামুকের গান!
মানপতনের সনাক্তপত্র হাতে রেখে
বন্দনাবাক্য সাজায়—
বৃত্তাকার আশ্রমের পোড়াঘরে।

আহা, মরা মাছিদের মহাসম্রাট,
বহুকালের অভ্যাসের দাসত্বে দাম্ভিক!

চেনা মানুষের শহর,
মনুষ্যত্ব বিকানো খোলস ভেঙে
নক্ষত্রের জ্বলজ্বলে আলোয়
পরিশুদ্ধ হও, ফিরতি পথে।

নামকাটা করাত

বড় নামের বড়ো মানুষগুলো আজকাল
নাম ছেঁটেছুটে ছোট হয়।
হাঁকডাকহীন বড়ো নাম অচল প্রায়!
কে ফেরাবে তাদের রুক্ষ প্রলেপ থেকে,
নামসর্বস্ব মানুষের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
ঘাটতে ঘাটতে সীমানা অতিক্রম করা হয় না।
মাঝপথে নিজের বড়ো নামের অক্ষরগুলো
আষ্টেপৃষ্টে জড়ায় নিজেকে।
বাধা দেয়—
বাঁধহীন বড়ো নাম কেটেফেলার করাত।
ছোট ছোট নামে মানুষের ভীত থেকে
ফিরে এসে ভুলে যেতে চায়, পোশাকী পরিচয়।

পলাতক ঋতুর যোজন

চিহ্নহীন অস্থিরতার পরবাস থেকে উঠে এসে
ঝিমধরা শেষ ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরবো ভাবছি;
নিকানো উঠোন বিকানো বিবেক ঝুলে রেখে
আপদামস্তক ফিরে আসি কাপালিক আশ্রমে।

সোহানুর রহমান শাহীন এর একগুচ্ছ কবিতা

মুগ্ধতা.কম

১১ নভেম্বর, ২০২১ , ১:৫৯ অপরাহ্ণ

রংপুর অঞ্চলের কবিদের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন – রংপুরের কবিতা

শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা গেল ‘রংপুরের কবিতা’। আমরা ঘোষণাটি দিয়েছিলাম বিশেষ একটি সময়ে। আমরা চাচ্ছিলাম, রংপুর অঞ্চলের কবিতাগুলো সকল বাংলাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। নানা কারণে আমাদের এই অঞ্চলের ভালো কবিতাগুলো পাঠকের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে না বলে আমরা মনে করি। এরই প্রেক্ষিতে এই বিশেষ সিদ্ধান্ত।

এখানে রংপুরসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার কবিদের কবিতা বাছাই করে প্রকাশ করা হয়েছে। বাছাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তিনজন বিচারক। কাজেই এবারের মতো বেশকিছু কবিতা বাদ পড়েছে যৌথ সিদ্ধান্তে। তবে আমরা কথা দিচ্ছি বিশেষ সংখ্যায় যাদের কবিতা বাদ পড়েছে সেই কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে অন্য সময়ে প্রকাশ করবে মুগ্ধতা। অনেক চেষ্টার পড়েও ভালো কিছু কবির নাম এই তালিকায় পাওয়া যাবে না। এর কারণ ধরে নিতে হবে, আমরা তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি। ভালো কোনো কবির কবিতা যদি সত্যিই যোগাযোগ ছাড়াই বাদ পড়ে থাকে, তাহলে সেগুলো পেলে আমরা নিশ্চয়ই এই সংখ্যায় যুক্ত করে দেবো। আরেকটি বিশেষ ঘোষণা হলো, প্রকাশিত এই কবিতাগুলো প্রিন্ট ভার্সনে পড়া যাবে ‘বিভাগীয় লেখক পরিষদ, রংপুর’-এর একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিতব্য স্মারকগ্রন্থে। স্মারকগ্রন্থটি আগামী ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে।

সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রংপুরের সেইসব ঋদ্ধ কবির প্রতি, যারা সংখ্যাটিতে নিজেদের কবিতা দিয়ে এটিকে সমৃদ্ধ করেছেন।

উপদেষ্টা সম্পাদক: ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
সম্পাদক: মজনুর রহমান
সহযোগী সম্পাদক: আহমেদ অরণ্য
অলংকরণ: রেদওয়ান শুভ

রংপুর অঞ্চলের কবিদের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন রংপুরের কবিতা

মুগ্ধতা.কম

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ , ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বায়জীদ বোস্তামী বাপ্পীর যুগল কবিতা

জোড়া শালিক

দুটো ভেঙে যাওয়া মানুষ জোড়া লাগে-

কাছে রাখা অতীত ভুলে, এঁটে বসে শরীরে;

গন্ধ ভুলে যায়, বসন্ত ছিঁড়ে খায় মগজ-

বৈরী মন, খোলা চাবুকের ছেঁকা হয় ।

 

সমুদ্র স্নান, চোখে ভাসা রোদ্দুর শহর,

শয্যাশায়ী প্রাক্তন, বিছানায় রোজকার ক্লান্তি-

অসুখের বারান্দায় ঝুপড়ি খেলাঘর সব

মুখ বুজে সয়ে যাওয়া খেয়ালি বায়না।

 

কুড়ি বছরের জমে যাওয়া ভুতুড়ে শরীর-

মেঝে-করিডোরে খেলা করে সুখ উল্লাসে।

ছায়ানীড়ে ভরা যৌবন স্মৃতি, সাড়া দেয়;

ভিজে যায় দুটো ভেঙে যাওয়া মানুষ।

পুরনো সংসার, সাজানো বাগান বিলাস-

নিমিষেই, ঘুনে ধরা নিছক স্বপ্ন লাগে।

লিখে রাখা ডায়রির পাতা খসে পড়ে জানালায়-

ক্লান্ত পথিক খুঁজে নিয়েছে ঠিকানা।

 

অসুস্থ আহ্লাদী, নালা-নর্দমায় ভেসে যায়-

পানির কলে নতুন রিংটোন বাজে, মাঝ রাতে;

পাড়ার গলি-গতরে লাল-নীল বাতি জ্বলে

ভ্রমর জুটেছে-গো জোড়া শালিকের দলে।

কবিও খোরাক হয় কবিতার

কবির খেয়ালি খোরাক হয় ‘কবিতা’

না না সে কবিতার কথা বলিনি;

কেউ কবি হয়, কেউ ‘কবিতা’!

 

কখনও শরীর হইনি কারোর-

শরীরী উম্মাদনা লোভ দেখায় কবিতার,

অশরীরী কবিতার!

 

বেঁচে থাকা হয় ডিম-কুসুমের খোলসে

বেঁচে থাকাটাই কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কবি শরীরে খোয়া যেতে পারে না,

আলগা সুখ দুয়ারে কাঁটা হয়।

 

যা ছিল তা শরীরী ‘কবিতায়’ অস্ত যায়-

কবিও খোরাক হয় ‘কবিতার’।

আহসান লাবিব

১৯ আগস্ট, ২০২১ , ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

একগুচ্ছ শুভ্র কবিতা: আহসান লাবিব

১.
উত্তর পত্র

আমার একটা অন্যায় খামের ভিতর
ডাকপিওনের ব্যাগে ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছে;
১০/১১ হাবিবুল্লাহ স্ট্রিট,  রাজধানী __

নিজেকে অপেক্ষার শেকলে বাঁধলাম,
লাম বলে মীম’এ যাওয়ার সাথে সাথেই শেকলে জং ধরে গেলো।

তবুও কোনো কবুতরের ডানা-
আমার বাড়ির দিকে ঝাপটায়নি আজ পর্যন্ত।

২.
বিচ্ছেদের কোনো দু’আ থাকলে

আমাদের কোনো কথা ছিল না
কাগজে কলম শুয়ে থাকতো__

আমি শব্দহীন ঠোঁট নড়াতাম,
সক্কাল সন্ধ্যা তুমি রেলিংয়ে মুখ ঝুলিয়ে রাখো
হাওয়া তোমাকে চিনে ফেললেই বইতে শুরু করে
তুমি মক্কার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে।

মুয়াজ্জিন তোমার কানে আযান পৌঁছে দিলে
তুমি সিজদায় খোদার সাথে কথা বলতে,
আমি দূর থেকে আমিন বলতাম।

তারপর থেকে__
আমাদের এখন আর কোনো কথাই হয় না।

৩.
মনগড়া কবিতা

টেবিলে আঙুল ঠকঠকিয়ে অপেক্ষা গুণন করার পর
কেনো যেনো তুমি ভাগ হয়ে যাও__
ছাদ পেটা ঘরে ঝুলে থাকা সিলিংফ্যানে টলছে
তোমার জন্য লেখা মনগড়া কবিতার কোলাজ।
আজ তুমি নেই,
মনে হয়
দূর কোনো গলির পথে অচেনা ফেরিওয়ালার ঠোঁট।

আমার ঘরের
খুলে রাখা জানালা’র পাঁজর দিয়ে নক্ষত্রের নীড় দেখে
খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকা জোড়া কোয়েল
চেঁচিয়ে যাচ্ছে রাতের কানের কাছে;
প্রেম হোক সবার মুক্তির পথ, হে জেলার মুক্তি দাও।

৪.
হাবিবুন নাজিরা

আম্মার মুখটা নরম মাটির আঁচড়ে আঁকা
আমার শেষ ঠিকানা;
তার চোখ জুড়ে বাছুর ছানার দুরন্ত শৈশব
চুল মেঘলা আকাশে ঢেকে যাওয়া বর্ষাকাল
ঠোঁটে ঘাসের গায়ে জন্ম নেওয়া শিশিরের ফুল
হাতের তালুতে পুকুরের চঞ্চল ঢেউয়ের রেখা
কপালে যেন কৃষকের সোনালি ধানের ক্ষেত
গায়ে যেন জড়িয়ে নিয়েছেন পূর্ণিমার চাদর
পায়ের কদমে কেঁপে ওঠা আমার হৃদ স্পন্দন
আঁচলের গিটে ঝনঝন করা বুধবারের নয়ার হাট
হাঁটু গেড়ে বসা মুনাজাতের অক্ষর, পশ্চিম মুখ

এসব কিছু জড়োসড়ো করে আম্মা
শীতল পাটির মতো
কোল বিছিয়ে বসে থাকা সরল ছায়াবৃক্ষ।