শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য

মুগ্ধতা.কম

২১ মার্চ, ২০২০ , ১:৩৯ অপরাহ্ণ

একটি অসাম্প্রদায়িক সড়ক দুর্ঘটনা এবং সঙ্গনিরোধ

গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ কিশোরগঞ্জ-তারাগঞ্জ সড়কে চলন্ত অবস্থায় স্লিপ খেয়ে নিজের বাইক উল্টে আমার ডান পায়ের উপরে পড়লো, মাথাটা পড়লো পাকা রাস্তায়।

হেলমেট থাকায় মাথা বেঁচে গেলেও ডান পায়ের হাঁটু এবং পাতা থেতলে গেল।

তো পা যখন গাড়ির নিচে তখন আমি মোটামুটি সঙ্গনিরোধে পড়ে গেলাম।

রাস্তায় শুয়ে আছি কোন গাড়ি থামে না, কেউ কেউ যেতে মন্তব্য ছুঁড়ে চলে যাচ্ছে ।

একজনের মন্তব্য শোনা গেল-হুজুরের এই অবস্থা! (মুখে দাড়ি থাকলে একটা তাচ্ছিল্যের টোনে হুজুর ডাকার প্রবণতা আছে)। দূরের ক্ষেতে কাজ করতে থাকা এক মহিলা তখন চিৎকার করে বলছে- মানুষটাকে কেউ বাঁচান, কেউ বাঁচান! এই সময়ে খেয়াল করে দেখি, এক তরুণ তার বাইক থামিয়ে পেছনের দিকে এসে আমাকে সাহায্য করতে লেগে গেল।

প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল পায়ে। মানুষের রক্তক্ষরণ আমার সহ্য হয় না।

ফলে রক্ত দেখে আমার বিমবিষা হয়ে গেল আর মাথা ঘুরতে থাকলো। সেই তরুণ তখন আমার অনুরোধমতে টিস্যু চাপা দিয়ে রুমাল দিয়ে পা বেঁধে দিলো। বাইকটা তুলে দিল।

পরে আবার ঘাসের মধ্যে শুয়ে পড়লাম। মাথার কাছ দিয়ে সাঁই সাঁই করে বাইক, অটো চলছে।

কাজেই আহত হয়ে পড়ে থাকাটা মনে হলো নিহত হবার পূর্ব প্রস্তুতি। তরুণকে বললাম আপনি এখন চলে যান ধন্যবাদ। সে যায় না। একা ফেলে যাবে না।

তার নাম জানলাম, পরিতোষ। চিৎকার করা সেই গ্রামীণ মহিলাও হিন্দু।

আর আমি হলাম দাড়িসমেত মুসলমান! এভাবে আমি একটি অসাম্প্রদায়িক সড়ক দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হলাম।

বুঝলাম, মানুষের ভেতরটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখনো মানুষ।

পরে স্থানীয় বন্ধু গোলাম রব্বানীর সহায়তায় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে ক্ষতস্থানে সেলাই-শুশ্রূষাদি সেরে বহু কষ্টে বাসায় পৌঁছেছি। এখন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সত্যিকারের সঙ্গনিরোধে আছি

[যেহেতু ইচ্ছা বা দরকার থাকলেও প্রচণ্ড ব্যথার চোটে নড়তে পারছি না]!

একটি অসাম্প্রদায়িক সড়ক দুর্ঘটনা এবং সঙ্গনিরোধ - মজনুর রহমান

মুগ্ধতা.কম

১৭ মার্চ, ২০২০ , ৬:৩২ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি

টাইটানিক সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৭ সালে।

বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন অসাধারণ পরিচালনা করেন পুরো সিনেমাটাই।

একাডেমিক অ্যাওয়ার্ডের ১৪ টি ক্যাটাগরির মধ্যে ১১ টাই লাভ করে এ মুভি। টাইটানিক সিনেমার শেষের খুব কাছের দৃশ্যে দেখা যায় জাহাজ ডুবছে। চারিদিকে আতংকের পরিবেশ। যে যেভাবে পারছে জীবন বাঁচানোর চেষ্টায়। শুধু দেখা গেল একদল মিউজিশিয়ান নিমগ্নভাবে করুণ সুর তুলে যাচ্ছে ইথারে। জাহাজের ক্যাপ্টেনও তার ডেকে দাঁড়িয়ে বিমর্ষমুখে।

এই ঘটনার প্যাচাল পাড়ার উদ্দেশ্য হলো আমাদের নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই ৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো। আমাদের এখন সময়, আমাদের নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন করা। জ্বর হলে ঘরে থাকি। রোগ গোপন না করি।

সংবাদপত্রের সূত্রমতে ৯৪ হাজার লোক দেশে চলে এসেছে বিদেশ থেকে। তাদের মাঝে কেউ জ্বরাক্রান্ত হলে ঘরে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।

জনবহুল এ দেশে যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ঢাকা কেন্দ্রিক, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন হাবুডুবু খাচ্ছে করোনায় সেখানে আমাদের কিছু নেতা বলছেন বটে আমরা প্রস্তুত।

আমরা অনুরোধ জানাই, এখন কথার কথা না বলে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

সবাই ঘরে থাকলেও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের বাইরে থাকতেই হবে।

স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ১৮ মার্চ থেকে। স্কুল বন্ধ হলেই শিশুরা ঘরে থাকবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। তারা শিশুসুলভ আচরণ করবেই। দৃষ্টি রাখতে হবে তাদের উপর। তাছাড়া শুধু স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার দাবি যারা জানিয়েছিলেন তাদের কাউকেই কলকারখানা বন্ধ করার কথা বলতে শুনলাম না।

ঢাকা চট্টগ্রামের অসংখ্য কলখারখানার শ্রমিকেরা কী করে রক্ষা পাবে তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।

হুজুগে বাঙালি যখন যেটা নিয়ে থাকে তো থাকে।

আমাদের অর্থনীতি অনেকটাই পরনির্ভরশীল সেটা আরও পরিস্কার হয়েছে পিঁয়াজ ইস্যুতে। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা জিনিসপত্রের দাম যেন না বাড়াতে পারে সেজন্য শক্ত মনিটরিং করতে হবে। এরই মধ্যে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দুস্প্রাপ্য হয়ে গেছে। সামনের দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য একটা এসিড টেষ্ট।

অনেককেই দেখলাম ফেসবুকে বলছে ঘরে থাকুন, কিন্তু এটা কি সম্ভব? আমাদের দেশের আশিভাগ লোক খেটে খাওয়া। যারা দিন আনে দিন খায়। অসুস্থ হলে তাদের কীভাবে চলবে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না।

যেহেতু করোনা ভাইরাসজনিত রোগ এবং মৃত্যুহার অনেক কম তাই আতংকিত হবার প্রয়োজন নেই। আবার ঢিলেঢালা ভাবে সবকিছু ছেড়ে দেবারও প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে বনের বাঘ না মনের বাঘই খায়। সাহস রাখুন মনে। সতর্ক থাকুন। ঘনঘন হাত ধুবেন। অসুস্থ ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোপরি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতেই হবে।

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ তিনি হয়তো একথাই বলতেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি

মুগ্ধতা.কম

১৬ মার্চ, ২০২০ , ৪:২৩ অপরাহ্ণ

অনুবাদ

ভূমিকা : মাশুদ রাথার জম্মু ও কাশ্মীরের একজন তরুণ কবি। তিনি প্রতিদিনের ঘটনাপ্রবাহকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সেগুলোর বর্ণ-বিবর্ণতার হাসি-কান্না, আলো-আঁধার, আনন্দ-আর্তনাদ কবিতায় প্রসেস করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, বিশৃঙ্খলা ও সম্পদের ধ্বংসাবশেষের গভীরে ডুবেও শান্তির সন্ধান করা যায় এবং বিশ্বাস করেন কবিতার নীরবতাকেও। দ্যা ফ্যালেন চিনার : আই রিফিউজ টু সিঙ্ক তার প্রকাশিত কবিতার বই। ২০১৮ সালে রিপার পাবলিকেশন থেকে ইংরেজি ভাষায় বইটা প্রকাশিত হয়।

 

আমি কেনো লিখবো?

 

সবার আগে-আমি কেনো লিখবো?

কারণ কাগজ এবং আমার সম্পর্ক হলো

তোমার সাথে আমার যেমন সম্পর্ক ছিলো

যেখানে-আমি কাগজ ছিলাম এবং তুমি ছিলে-কলম।

English : Why do I write?

 

বিবর্ণতার বসন্তে

 

যখন

বিবর্ণতার বসন্তে

বিচ্ছেদের গানে

শরতের বৃষ্টি নামে,

 

আর বৃষ্টির প্রতিটি শ্লোক

তোমাকে বঞ্চিত করে;

 

তখন

অশ্রুকে ধারণ করো

তোমার ব্যক্তনামা লিখতে,

 

আর সমস্ত অশ্রুতে সিক্ত হও

তুমিনামা উচ্চারণ করতে…

English: In the milieu of colorlessness

 

তিনি এমন একজন উন্মাদ হয়ে উঠেছিলেন

 

তিনি এমন একজন উন্মাদ হয়ে উঠেছিলেন, যিনি মুহূর্তের আগে মনের ভেতর ব্যাক্ত বিবৃতিকে পুনর্বার ব্যাক্ত করতেন। এবং ভয়ানকভাবে একটি অদ্ভুত সংকেত অথবা আলোকদর্শনের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করতেন। আর তোমার অন্তর্গত অভিনয় করতেন সেভাবে-যেভাবে অগ্নিশিখার আড়ালে ক্যাসো তোমাকে অভিঘাত করছে’…

English : She had become kind of a person

 

আমরা ডুবে যাচ্ছি

 

আশা-নিরাশার

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের

আফসোস-উচ্ছাসের

আর ভালোবাসার

প্রবল ঘূর্ণিপাকে

আমরা ডুবে যাচ্ছি।

 

প্রেম কি হৃদয়ে প্রবেশের আগে

দরজায় নক করে?

একদম না,

উপলব্দি ছাড়া আমাদের মধ্যে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

English : We got drowned

 

অনুবাদক : তরুণ সাহিত্যিক। প্রকাশিত বই দুইটা। এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ ও এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে (২০১৭)-শিশুতোষ।

মাসুদ রাথারের কবিতা

মুগ্ধতা.কম

৯ মার্চ, ২০২০ , ৭:৪০ অপরাহ্ণ

কলাবাগানে গেল বানর আর হাতি

বানরটা মাথা নিচু করে বনের ভিতর হাঁটছে। যে কেউ দেখলে বুুঝবে বানরের খুব মন খারাপ। যে বানর সারাদিন এ ডাল ও ডাল করে। হৈ চৈ করে মাতিয়ে তোলে পুরো বন। সেই বানর মাথা নিচু করে যাচ্ছে বনের ভিতরে। পথে যেতে যেতে দেখা হলো শেয়ালের সাথে। শেয়াল বানরকে দেখে চমকে উঠলো। শেয়াল এলো বানরের কাছাকাছি। বলল, কি হয়েছে বানর ভায়া ? তোমার কী মন খারাপ ?

বানর ওর হাঁটা থামাল শেয়ালের দিকে তাকাল একবার। পরক্ষণে আবার মাথা নিচু করল। আর চুপ করে থাকল। কিছুই বলল না।

শেয়াল আবার জিজ্ঞেস করল,কেন তোমার মন খারাপ?

জবাব দিলো না বানর। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল আর কাঁদল।

– কি হলো? বলবে না?

বানর মুখটা এবার উচু করল। বলল,আমার চাষ করা গাছটা শেষ।

– তোমার চাষ করা গাছ?

– হু। কলাগাছ।

– কে শেষ করল?

– হাতি। হাতি কচ কচ করে খেল। কদিন হলেই কলা ধরতো।

– হাতি খেয়ে ফেলেছে?  বলল শেয়াল।

– হু।

– হাতি জানতো না ওটা তোমার গাছ?

বানর বলল,জানলে বা কী হতো?

শেয়াল বলল,না কোন কিছু হয়তো হতো না। তবে এই হাতিটা অতটা খারাপ না।

– খারাপ না হলে আমার কলা গাছ খায়।

– এর আগে যে হাতিটাকে আমার বাবা বুদ্ধি করে পানিতে ডুবিয়ে বন ছাড়া করেছিল। সেটার চেয়ে ভালো। ঐ হাতিটা হিংস্র ছিল। ছিল বদমেজাজী। হুংকার দিলেই পুরো বন থর থর করে কেঁপে উঠতো। বনের বাঘও ভয় পেত। হাতিটা নিজেকে রাজা মনে করতো। তাই তার আচরণে বনের অন্য প্রাণীরা মিলে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। আর পানিতে ফেলে বন ছাড়া করেছিল। এরপর অনেকদিন বনে হাতি নেই। হঠাৎ এই হাতিটা কোথাত থেকে যেন আবার বনে ঢুকলো।

বানর বলল,এই হাতি খালি খায় আর খায়। ভয়ে তো কোন কিছু বলাও যায় না। বটগাছের মতো লম্বা শুঁড় দিয়ে যদি আছাড় মারে আমি তো একবারে শেষ।

– অত ভয় পেলে কি আর চলে। চলো তো দেখি হাতির কাছে যাই।

– না, না । তার দরকার নাই। আমার কলা গাছ খেয়েছে খাক। মোটু হাতির সামনে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছে নাই।

– আরে চলোই না বানর ভায়া। এই হাতিটা কিন্তু হিং¯্র না। গলা ফাটিয়ে চিৎকারও করে না।

– সাহস দেখিয়ে পাছে – – -। কথা শেষই করলো না বানর।

শেয়াল বলল,চলো। কিছুই হবে না।

বানর আর শেয়াল হাঁটতে শুরু করল। হাতির কাছে যাওয়ার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে একসময় হাতির সামনে হাজীর হয়ে গেল ওরা। তখনো হাতিটা মুখ নাড়াচ্ছে। কলাগাছ কচ কচ করে চিবুচ্ছেও।

বানর যেন আবার ফুপিয়ে কাঁদবে এমন ভাব করলো। শুধু ভাব করলো না। কান্নাও শুরু  করল।

হাতিটা মুখ তুলে দেখল বানরকে। বলল, কী হয়েছে?

বানর কথাই বলল না। কাঁদতেই থাকল।

– আহ্!  কী হয়েছে? কী হয়েছে বানর ভাই আমাকে বলো।

হাতির মুখে বানর ভাই শুনে শেয়াল সাহস পেল। বলল,তুমি কলাগাছ খাও তাই।

– ওমা! খাব না?  কলাগাছ আমার প্রিয়।

– আর কলা বানরের প্রিয়। যেটা কলাগাছেই ধরে। আর যেটা খাচ্ছ সেটা ওরই।

হাতি বলে, মানে?

– ঐ কলাগাছ বানর চাষ করেছিল।

হাতি শুনে সাথে সাথে বলল,সরি। সরি বানর ভাই। আরও বলল,মন খারাপ করো না। তোমায় থোকায় থোকায় কলা নিয়ে এসে দেব।

– কোথাত থেকে?

– কলাবাগান থেকে। দুজন মিলে চলে যাব কলাবাগানে।

– কলাবাগান তো অনেক দূর। বলল শেয়াল।

– সমস্যা কী তাতে? আমি বানরকে আমার পিঠে তুলে নিয়ে যাব।

– তাই। মূহুর্তেই মন ভালো করলো বানর।

– হু। তুমি চাইলে আমরা বন্ধুও হতে পারি।

– বন্ধু! অবশ্যই হবো। চলো তাহলে আমরা এক্ষুণি কলবাগানে যাই।

– আচ্ছা। বলল হাতি।

বানর পিঠে উঠলো হাতির। পিঠে নিয়ে হাঁটতে থাকল হাতিটা। শেয়ালকে না ডাকলেও পিছু নিল ওদের।  হাঁটতে হাঁটতে গেল একটা বড় কলাবাগানে। কলাবাগানে ঢুকে নাঁচ জুড়ে দিলো বানর আর হাতি। নাঁচের তালে হাতির কান নড়ে। নড়ে পা আর চোখও। বানর ছাগল ছানার মতো তিড়িং বিড়িং করতে থাকলো। আর মনের আনন্দে দু’বন্ধু খেতে থাকল। ওদের প্রিয় খাবার। একজন কলাগাছ। অন্যজন কলা।

 

[২০২০ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শিশু সাহিত্যিক মোকাদ্দেস-এ-রাব্বীর গল্পগ্রন্থ ‘পাঁচটি হাতির গল্প’।গল্পটি এই বই থেকে নেয়া। বইয়ের নাম : পাঁচটা হাতির গল্প লেখকের নাম : মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সাইফ আলী মূল্য : ১৮০ টাকা প্রাপ্তিস্থান একুশে বইমেলা শিশুচত্বর ৭৭৭-৭৭৮ চট্টগ্রাম বইমেলা ২০৬]

কলাবাগানে গেল বানর আর হাতি

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

৬ মার্চ, ২০২০ , ৬:১৭ অপরাহ্ণ

ফিরে দেখা

রতন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। ঠিক এখানেই তো নদী ছিল।এখন যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা একটা সরু লেইসফিতার মতো খাল। এখানেই তো নদীটা ছিল। নৌকা চলতো।মাঝিরা নৌকা নিয়ে এখানে মাছ মারতো। সেই মাছের বেশীর ভাগই বিক্রি হয়ে যেত নৌকাতেই।

আশেপাশের মানুষের সাথে রতনও কতদিন এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে গেছে।

ট্যাংরা মাছ সূর্যের আলোয় কেমন চকমক করতো। একটা হলুদ আভা,যেন হলুদ সোনা। সাত মিশাল মাছের সাথে একটা- দুটা খলসে মাছও আসতো। চট করে মাছগুলো আলাদা করে হরলিক্সের কাঁচের বোতলে রেখে দিত রতন। কি সুন্দর রঙীন মাছগুলো। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। খাবার দেয়া হতো,মুড়ি,খইল কিন্তু কিছুই মুখে নিত না। তিনদিনের বেশী একটাও বাঁচে নি।

সেই নদী আজ খাল হয়ে গেছে।

আজ সাতাশ বছর পর রতন তাকিয়ে থাকে ছোটবেলার নদীর দিকে। নদীর উপর একটা সরু ব্রীজ হয়েছে। একটা রিকসার বেশী পার হতে পারে না। রতন ব্রীজ পার হয়ে মুন্সির চালকলের দিকে যায়।ছেলেবেলায় এ চালকল চালু ছিল। সকাল ৭ টায় সাইরেন বাজতো।শ্রমিকরা পড়িমরি করে ছুটতো কাজে।

এখন সেটা পরিত্যক্ত।

পাশে বড়বড় দালান উঠেছে। উপজেলায় এখন সাততলা বিল্ডিং। রতন অবাক হয়ে পরিবর্তন দেখে।

সাতাশ বছর আসলে কমতো না।

বৈকুন্ঠপুর যখন ছাড়ে তখন রতনের বয়স তের,চোদ্দ। বৈকুন্ঠপুর বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। বাবা বেঁচে ছিলেন।

বড় ভাই করিম চাচার মুদি দোকানে কর্মচারী।

বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে বিরামপুর।

পড়াশুনায় মন ছিল। মা বলতো রতন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। রতনের নানী বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল।

নানীর হাঁপানি ছিল। শ্বাসকষ্ট উঠলো,ডাক্তারের কাছে যাবার মতো টাকা না থাকায় কষ্ট পেয়ে মরে গেল। ডাঙায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে করতে।

ডাক্তার হওয়া হয়নি রতনের।

বাবা কাজ করতো আমজাদ কাফ্রিয়ার কাপড়ের দোকানে।

একদিন রাতে দোকান থেকে এসে ভাত খেয়ে সবে এক খিলি পান মুখে দিয়েছে ওমনি দুম করে চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন। সেই যে পড়লেন আর উঠে দাঁড়ালেন না।

বাবার মৃত্যুর পর অকূল সাগরে পড়ে রতনের মা। বড় ছেলে একা আর কতটুকু করবে।

রতন কাজ করতে চলে গেল গাজীপুর।

বহুজাতিক এক জুতা ফ্যাক্টরির এমডির বাসায় কাজ। এমডির বাসায় সাংসারিক কাজে সহায়তা করা।

এমডির দুই ছেলে তন্ময় আর সঞ্জয়।

তন্ময়ের সমবয়সি হবে রতন।

তন্ময় এর স্কুলে যাওয়া আর পড়া দেখে রতনের মনেও ইচ্ছে জাগে।

এমডির স্ত্রী শিল্পি তা দেখে পাশের এক স্কুলে রতনকে ভর্তি করায় দেয়।

দিনে স্কুলের সময়টুকুবাদে রতন সংসারের কাজ করে জান লাগিয়ে।

সময়ের নৌকায় দুলতে-দুলতে এসএসসি পাশ করে রতন। এরপর আর পড়া হয়নি।

এমডি চলে গেলেন বদলি হয়ে চট্টগ্রাম।

এতদিনে রতন এমডির বাসার বাবুর্চির কাছে দেশী-বিদেশী সব রান্না শিখে নেয়।

চাকরি নেয় গুলশানের এক চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে। প্রথমে বাবুর্চির সহকারী পরে হেড বাবুর্চি।

ঢাকায় চাইনিজ হোটেলের অভাব নাই তাই চাকরিও অনেক।

বিয়ে করেছিল এক গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে টিকে নাই।

এরপর নিয়মিত এক বাড়িতে যাতায়াত। নিত্যনতুন মেয়েদের সংস্পর্শ।

মা যে কদিন বেঁচে ছিলেন নিয়মিত টাকা পাঠিয়ে গেছে রতন।

কতদিন বলেছে, ঢাকায় আসো মা- ব্যাটা একসাথে থাকি।

মায়ের সেই এককথা, নারে বাবা নিজ ভিটে ছেড়ে কোথাও যাবনা।

মা মারা যান সাত বছর আগে তখন এসে দুদিন ছিল। এরপর আর আসা হয়নি।

মা ছিল ঘুড়ির নাটাই।সুতা কেটে গেলে ঘুড়িকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না।

সাতাশবছরে কত পরিবর্তন।

মুন্সির চালকলের পিছনে এক জঙল ছিল। দিনেরবেলাতেও কেমন অন্ধকার হয়ে থাকতো। ওপাশটা কেউ সহজে যেত না।

একবার এক লোক গাছ কাটতে গিয়েছিল,গাছের গায়ে একটা কোপ দেবার সঙ্গে -সঙ্গে নাকমুখদিয়ে রক্ত আসা শুরু হয়। তারপর নাকি আর বাঁচে নি।

সেইথেকে জঙল বেড়ে উঠেছে অবাধ্য সন্তানের মতো।

একদিন এই জঙলে মনির সাথে এসেছিল রতন।

মনি হ্যাংলাপাতলা দুরন্ত মেয়ে। পাশের বাড়ির,দুবছরের ছোট।

বাড়িতে কি এক কারনে বকা দেবার জন্য দুঃখে রতন মুন্সির জঙ্গলের দিকে রওনা দেয়।

পিঁছুনেয় মনি।

ভয় দেখিয়ে, ধমক দিয়েও বিদায় না করতে পারায় সঙ্গে নেয়।

সারাদিন সে জঙ্গলে তারা ঘুরে বেড়িয়েছে। খিদে পেলে আতা গাছের ফল খেয়েছে। তারপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে পিটুনি খেয়েছে।

আজ সব স্মৃতি চোখে ভেসে ওঠে রতনের। বাসায় আসতে – আসতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয় রতনের।

ভাবী বললো মনি এসেছে। চমকে উঠে রতন।

বসার ঘরে সোফার এককোনে মাথা নিচু করে বসে আছে মনি।

মনির বিয়ে হয়েছে একই এলাকার সাজেদের সাথে।

এসব জানা ছিল রতনের।

সাজেদদের পারিবারিক ব্যবসা আছে। ওদের পছন্দের বিয়ে।

দূরে থেকেও এসব খবর কানে এসেছিল রতনের। কথা শুরু হয় দূরত্বের পর্দা সরিয়ে।

জানা যায় পরনারী আর নেশায় আসক্ত সাজেদ। সংসার জীবনে সুখি না মনি। মনির যাবার সময় হয়ে যায়। চোখে-চোখ রেখে মনি বলে,সেদিন মুন্সির জঙ্গলে আমাকে আদর করেছিলেন মনে আছে রতন ভাই? এরকম আনন্দদায়ক অনুভূতি আর কখনও আমার হয়নি। রতনের চকিতে মনে পড়ে যায় সেই দিনের কথা। যে দিনের কথা ইচ্ছে করেই ভুলে গিয়েছিল রতন।

মজনুর রহমান

১ মার্চ, ২০২০ , ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সব কুছ ইয়াদ রাখ্খা যায়েগা [সব কিছু মনে রাখা হবে]

মূলঃ আমির আজিজ অনুবাদঃ আহমাদ সাব্বির

সব মনে রাখা হবে, সব কিছু
গেঁথে রাখা হবে মনের গহনে
তোমার লাঠি আর গুলিতে যারা নিহত হয়েছে
আমার বন্ধুসব
তাঁদের স্মরণে হৃদয়কে অস্থির রাখা হবে,
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু মনে রেখে দেয়া হবে,

আর তুমি ‘কলমবাজ’দের দ্বারা মিথ্যা লিখবে আমাদের জানা,
আমাদের রক্ত দিয়ে হলেও
সত্য অবশ্যই লিখে রাখা হবে।

সব মনে রাখা হবে, সব কিছু মনে রেখে দেয়া হবে

মোবাইল টেলিফোন ইন্টারনেট দিন দুপুরে বন্ধ করে
নিঝুম অন্ধকার রাতে গোটা শহর নজরবন্দ রেখে
হাতিয়ার নিয়ে অকস্মাৎ আমার ঘরে ঢুকে পড়া,
আমার শরীর-মাথা, আমার সাদামাটা জীবনকে চূর্ণ করে যাওয়া,
আমার ‘চওড়া’ পাঁজড়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে তোমার আঘাত করা
নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে তোমার ফেটে পড়া
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু মনে রাখা হবে

দিনের আলোয় মিষ্টি মধুর কথা বলা সামনে থেকে, আর
কথায় কথায় ‘সব কিছু ঠিক আছে’ আওড়ে যাওয়া
এদিকে রাত হতেই ‘হক’প্রার্থী মানুষের ওপর লাঠি চালানো, গুলি বর্ষানো
আমাদের ওপর হামলা করে আমাদেরই হামলাকারী বানানো
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু
এবং এটাও মনে রাখা হবে যে,
কী কী উপায়ে তোমরা দেশকে টুকরো টুকরো করার চক্রান্তে মেতেছো
আর এটাও মনে রাখা হবে যে,
দেশকে একাট্টা রাখতে আমরা কী কী পন্থায় সচেষ্ট থেকেছি আমরা
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু

আর যখনই পৃথিবীর কোথাও স্মরণ করা হবে
এই সময়ের কাপুরষতা
তোমার কাজকে মনে করা হবে,

আর যখনই মনে করা হবে জীবনের জয়োগান গেয়ে গেছে কারা পৃথিবীর কোথাও
আমাদের নাম মনে করা হবে,
‘কিছু মানুষ ছিলো পৃথিবীর বুকে
যাদের হিম্মত কমেনি কখনও লৌহদণ্ডের মুখে
কিছু মানুষ ছিলো যাদের যমিন বিক্রিত হয়নি
ইজারাদারদের সামন্য কড়িতে
কিছু মানুষ ছিল যারা অবিচল ছিলো
পাহাড়সম তুফান তাদের সমুখে আসার পরও
আর কিছু মানুষ ছিলো
যারা জিন্দা ছিলো নিজেদের পায়ের ওপর
তাদের মৃত্যুর পরোয়ানা আসার পরও’।

হতে পারে, চোখ ভুলে গেছে পলক ফেলতে মুহূর্তের জন্য
হতে পারে, পৃথিবী কিছু সময়ের জন্য ভুলে বসেছে তার ঘূর্ণন
কিন্তু, আমাদের ছিন্নপত্রের ফরমানকে
আমাদের চৌচির কণ্ঠের আওয়াজকে
মনে রাখা হবে

তুমি রাত লিখো, আমরা চাঁদ লিখবো
তুমি জেলে দাও, আমরা ফাঁসি চাইবো
তুমি এফ আই আর লিখো, আমরা ‘তৈয়ার’ লিখবো

তুমি আমাদের মেরে ফেলো
আমরা ভূত হয়ে জন্মাবো
আর তোমাদের হত্যাকাণ্ডের তাবৎ প্রমাণ লিখবো,
তুমি আদালত থেকে ‘দালালী’ লিখো
আমরা দেয়ালে দেয়ালে ইনসাফ লিখবো,
বধিরও শুনতে পাবে এত সুউচ্চে বলব
অন্ধও পড়তে পারে এত স্পষ্ট লিখবো,
তুমি কালো ‘পদ্ম’ লেখো আমরা লাল গোলাপ লিখবো,
তুমি জমিনে জুলুম লেখো, আসমানে ‘ইনকিলাব’ লিখে দেয়া হবে,

সব মনে রাখা হবে, সব স্মৃতি মনের গহিনে রেখে দেয়া হবে,

আর যেন তোমার নামের ওপর লা’নত পাঠানো যায়
যেন তোমার অবয়বে কালিমা লেপন করা যায়
তোমার নাম, তোমার অবয়ব ‘আবাদ’ রেখে দেয়া হবে,
সব মনে রাখা হবে, সব কিছু মনে রেখে দেয়া হবে।