রবীন জাকারিয়া

১২ নভেম্বর, ২০২২ , ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

মেনোপেজকালীন প্রেম

মেয়েটি প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার শেষে দাদা বাড়িতে বেড়াতে আসতো৷ সে আমার ছোট বোনের প্রিয় বান্ধবি৷ দু’বছরের ছোট৷ নাম জবা৷ ওর বাবা একটা স্কুলের শিক্ষক৷ নদী পরিবেষ্টিত পাশের জেলা শহরে থাকলেও যোগাযোগ জটীলতায় সর্বদা যাতায়াত করা যেত না৷ ওরা বেড়াতে আসলে একটানা এক-দেড়মাস থাকতো৷ ছোট বোনের বান্ধবি আবার বাড়ি লাগোয়া৷ যার কারণে ও দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময় আমাদের বাড়িতেই কাটায়৷ আমরা ছোট মানুষ৷ তাই সকলে একসঙ্গে খেলি৷ ছেলে-মেয়ের বিভেদ নেই৷ অবশ্য সে সময় এটাই প্রচলিত ছিল৷ ওর সাথে আমার সখ্যতা ছিল বেশ৷ সবসময় কেয়ার করতো৷ খেলতে গিয়ে আমি একটু ব্যাথা পেলে ও কান্নাকাটি করতো৷ সবাই ক্ষ্যাপাতো! কিন্ত আমরা ওসব পরোয়া করতাম না৷ আবার সারাদিন ঝগড়া, মান-অভিমানও চলতো সমান তালে৷ ঝগড়া লাগলে আড়ি দিতাম৷ আবার কিছুক্ষণ পর আড়ি খুলে ফেলতাম৷ আড়ি দেয়া এবং খোলার পদ্ধতিটাও ছিলো বেশ! দুজনের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বাঁকা করে লাগালে আড়ি বলবৎ আর বৃদ্ধাঙ্গুল লাগালে আড়ি রদ৷ দিনে পাঁচ-সাতবার তো হতোই৷

এভাবেই সময় চলে যায় তার নিজস্ব গতিতে৷ পরবর্তিতে সে এসএসসি পাশ করে শহরেই কলেজে ভর্তি হলো৷ হোস্টেলে না থেকে দাদা বাড়ি থেকেই কলেজ করতো৷ হোস্টেলে থাকবেই বা কেন নিজের বাড়ি থাকতে?
ও যখন ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলো৷ আমি তখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে৷ একই কলেজ৷ ইচ্ছে করলে একই সাথে যাতায়াত করা যায়৷ কিন্ত সামাজিক কারণে সেটা সম্ভব হয়নি৷ ও রিক্সায় যেতো৷ বাবা আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছে৷ ফনিক্স সাইকেল৷ ডুপ্লিকেট ফনিক্স নয়৷ চায়না ফনিক্স৷ তখন এই সাইকেল ছিল একটা এসেট৷ একটা স্ট্যাটাস৷ আমি রাজকীয়ভাবে সেটাতে করে যাতায়াত করি৷ কলেজে দেখা করি৷ কথা বলি৷ কিন্ত ফরম্যাল৷ অন্যরা বিশেষ করে কলেজে পড়ুয়া পাড়ার অন্য প্রতিবেশিরা কী চোখে দেখে! তাছাড়া এখনতো আর সেই ছোট্টটি নেই৷ কিন্ত বাড়িতে ফিরলে আর ফরম্যালিটির কোন বালাই নাই৷ টোকা-টুকি, কিল-ঘুসি, মান-অভিমান সবই চলে৷ জবা প্রচন্ড অভিমানী আর সাহসি টাইপের মেয়ে৷ যার কারণে এতো বড় হয়েছি তবুও দুষ্টুমি করতো খুব৷ একদিন আমি গোসলখানায় গোসল করতে গেছি৷ আগে গোসলখানাতো এতো বাহারি আর নিরাপদ ছিল না৷ চারিদিকে তিন ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেয়া প্লাস্টার বিহীন ওয়াল৷ উপরে কোন ছাদ নেই৷ দরজাও নেই৷ গোসলখানার ঠিক পাশেই নলকুপ৷ পুরো জায়গাটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা৷ ব্যাস! গোসলের কাপড় রাখতে হয় ওয়ালের উপর৷ সেদিনও আমি গোসল শেষে ওয়ালের দিকে হাত দিয়ে দেখি কোন কাপড় নেই! ফাপড়ের মধ্যে পড়লাম৷ বিব্রতকর অবস্থা! এখন বেড়াই কী করে? কাপড়গুলোই বা কোথায় গেল? এমন সময় কলের পাড় থেকে জবা হেসে বলতে থাকলো এখন তুমি নেংটু হয়ে বের হও৷ আমার সাথে মাতব্বরির শাস্তি! অনেক অনুরোধ করলাম৷ শুনলো না৷ বরং বলে উঠলো তুমি সবকিছু ঠিকঠাক ঢেকে রাখো আমি ভেতরে যাচ্ছি৷ কোন মানাই সে শুনলো না৷ গেটহীন গোসলখানায় ঢুকে পড়লো৷ নিজের দুহাত দিয়ে যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঢেকে রাখা যায় শুধু সেটাই চেপে ধরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক সুন্দরী তরুনীর সামনে দন্ডায়মান গুহা যুগের এক আদিম পুরুষ (Caveman). নিমিষের ভেতরে আদিম প্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো৷ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে জবার হাতটাকে ধরে এক ঝটকায় কাছে টেনে আনলাম৷ শক্ত করে চেপে ধরলাম বুকের ভেতর৷ ওর ঠোঁটে এঁকে দিলাম ভালোবাসার উষ্ণ চুম্বন৷ লজ্জায় ও পালিয়ে গেল তখনই৷ প্রথম উপলদ্ধি হলো আমরা একে অপরকে ভালোবাসি৷ এই ঘটনার পর ও দিন দুয়েক আমার সাথে দেখা করেনি৷ না কলেজে আর নাতো বাড়িতে৷

সময় থেকে থাকে না৷ সময়ের সাথে সাথে আমাদের ভালোবাসার শেকড় প্রোথিত হয় আরো গভীরে৷ দুই পরিবারও ইচ্ছুক যেন আমাদের বিয়েটা দিয়ে সম্পর্কটাকে আরো দৃঢ় করে৷ দিনে দিনে আমরা হয়ে গেলাম আরো সাহসি৷ এখন প্রায় প্রতিদিনই পাড়ার মোড়ে দুজনে নাস্তা খেতে যাই৷ মাঝে মাঝে আমার ছোট বোন থাকে৷ কখনো দুজনেই যাই৷ পাড়ার মোড়ের দোকানে আর কী পাওয়া যায়? পিয়াজু, বেগুনি কিংবা আলু চপ৷ জবার ওগুলোই পছন্দ৷ তাছাড়া তখনো এতো থাই-চাইনিজ রেস্তোরার প্রচলন খুব বেশি হয়নি৷

সবই ঠিক ছিল৷ কিন্ত জবার এক চাচা যিনি খাদ্য অধিদপ্তরে কেরানি পোস্টে চাকুরী করার কারণে অবৈধ টাকার মালিক বনে গেলেন৷ টাকার গরমে আস্তে আস্তে তিনি এবং পরিবারকে প্রতিবেশি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন৷ বাড়ির কাঠামো, লাইফ স্টাইল সবই পরিবর্তিত হলো৷ বন্ধ হয়ে গেল জবার সাথে আমার অবাধ যোগাযোগ৷ কিছুদিন আমরা কলেজেই মেলামেশা করতাম৷ তা-ও বন্ধ হয়ে গেল এক সময়৷ কথায় বলে যে অর্থ আর ক্ষমতা মানুষকে নেগেটিভ আর উচ্চাভিলাশী করে৷ জবার ক্ষেত্রেও তাই হলো৷

বেশ কিছুদিন কথা বলতে না পারাতে একদিন এক সন্ধ্যায় জবাকে বাড়ির সামনের রাস্তায় জাম গাছটার নীচে আসতে বললাম৷ কথা রাখলো৷ ও যখন আসলো তখন রাস্তাটা ফাঁকা৷ কেউ নেই৷ নেই কোন শব্দ৷ শুধু গাছ থেকে দু’একটা জাম পরার টুপ টুপ আর আমার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ ছাড়া নীরব চারিদিক৷ ও আসা মাত্রই ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম তুমি কি আমাকে চাওনা? নাকি আর ভালোবাসো না! কেন আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছ? সে খুব স্বাভাবিক আর শান্ত স্বরে জানালো আমাদের সম্পর্ক আর রাখা সম্ভব নয়৷ কেননা বড় চাচা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন৷ ছেলে সরকারি চাকুরে৷ আমাকে ক্ষমা কোরো৷ বলে চলে গেল৷ আমি কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ একাকী৷ কষ্ট পেয়েছি কিন্ত কাঁদিনি৷ বরং কেন যেন প্রচন্ড শব্দে হেসেছি৷

এরপর সময় বয়ে যায় তার নিজস্ব গতিতে৷ হঠাৎ বাবার মৃত্যু! সংসারের দায়িত্ব, ভাই বোন ও নিজের লেখাপড়া৷ বোনের পাত্রস্থ৷ নিজের একটা চাকুরী৷ সব মিলে একটা ঘোরের মধ্যে সময় চলে গেল৷ সব কিছু গুছিয়ে উঠে যখন বিয়ে করবো দেখি বয়স অনেক হয়ে গেছে৷ কেউ পাশে নেই৷ একা৷ ভীষণ একা৷ শুধু কাঁধে যার প্রেরণার হাত পেয়েছিলাম৷ সে হলো রত্না৷ আমার কাজিন৷ অনেক ছোট৷ কিন্ত ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে৷ রত্না আমার দ্বিতীয় প্রেম৷ জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে ওর হাত দুটি ছিলো আমার শক্তি৷ অন্ধের ষষ্ঠি৷ অনেক স্বপ্নের জাদুকর৷ জীবন সঙ্গীনী৷ দুটি সন্তান নিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার৷

আমি একটা মার্কিটিং ডিপার্টমেন্টে জব করি৷ পেশাগত কারণে আমাকে বিভিন্ন জেলাতে থাকতে হয়৷ বাড়িতে থাকা হয় কম৷

জবা মাঝে মাঝে এখনো স্বামী সন্তানসহ এখানে আসে৷ শরীর ভর্তি গহনা৷ রঙ বেরঙের পোষাক৷ কিছু নারীর মধ্যে এই পাগলামো দেখা যায়৷ গহনা আর পোষাক প্রদর্শন করে প্রমাণ করতে চায় যে তারা কত সুখী৷ ওর দুটি মেয়ে৷ বিয়ে দিয়ে দিয়েছে৷ এখন জবার আনাগোনা আরো বাড়তে লাগলো৷

প্রায় মাস খানেক পর বাড়ি ফিরলাম৷ সপ্তাহ খানেক ছুটি নিয়েছি৷ রত্না আর সন্তানদের মতো আমিও ভীষণ খুশি৷ কটা দিন আনন্দে কাটানো যাবে৷ সেদিন শুক্রবার বিকেলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বের হয়েছি৷ একটু ঘুরবো বলে৷ বাড়ির গেটে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো জবার সাথে৷ বুকটা ধক্ করে উঠলো৷ বিশ্রী একটা পরিস্থিতি৷ ঘামতে থাকলাম৷ কেমন আছো? বলে জবা পরিবেশটা স্বাভাবিক করলো৷ বললাম ভালো আছি, ধন্যবাদ৷ তুমি? ও মাথা উপর নীচ করে জানালো ভালো আছে৷ আচ্ছা দেখা হবে বলে আমরা বেরিয়ে পরলাম৷ রিক্সায় রত্না বারবার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে৷ কারণ আমার আর জবার বিষয়টা ও জানে৷

পরেরদিন সন্ধ্যায় জবা আমাকে সেই জাম গাছটার নীচে দেখা করতে বললো৷ আমি জানালাম এর কোন প্রয়োজন নেই৷ কিন্ত ওর অনুরোধে দেখা করতে গেলাম৷

দুজনে মুখোমুখি৷ দামি পোষাক আর গহনায় মোড়া সামনে দন্ডায়মান জবাকে মনে হচ্ছে যেন শপিং মলে দাঁড়ানো “ডেমো পুতুল”৷ হঠাৎ জবা আমার হাত দুটো ধরে বলে উঠলো তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাস? চলো আমরা নতুন করে জীবন শুরু করি৷ আমি বিশ্মিত! কিছু বলবার আগেই কাঁদো কাঁদো স্বরে ও বলতে শুরু করলো৷ জানো জীবনে আমি কিছুই পেলাম না৷ টাকাওয়ালা ঐ অসৎ বুড়োকে বিয়ে করে জীবনটাই শেষ করে দিলাম৷ তুমি কি আমাকে আগের মতো গ্রহণ করবে? বিশ্ময়ের ধাক্কা সামলে নিয়ে আমি একবার জবা আর একবার ওর হাত দুটোর দিকে তাকাতে লাগলাম৷ আধো আলো আর আধো অন্ধকারে ওকে কেন যেন রাক্ষুসে মনে হচ্ছে৷ চামড়া কুচকানো আর বলিরেখা ভরা হাত দুটো যেন আমার গলা টিপে ধরবে৷ ভয় নয় বরং ঘৃণায় পিছু হটতে লাগলাম৷ যে নারী একদিন নিজের ইচ্ছায় পছন্দের বিত্তবান মানুষটাকে বিয়ে করলো৷ হোক বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে যার উপার্জিত অর্থে নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করলো৷ সংসার করলো৷ আজ তাকেই অপবাদ দিচ্ছে৷ আর বিশ্বাস ঘাতকতা করে অন্যের ঘরনী হতে চায়৷ ৫০ পেরুনো মেনোপেজে পৌঁছানো এক বিকারগ্রস্থ নারীর পরকীয়ার প্রস্তাব আমাকে রত্না’র প্রতি ভালোবাসাকে তীব্র করে তুললো৷ এত কিছুর পরও রাক্ষুসেটাকে কৃতজ্ঞতা জানালাম মনে মনে৷ কেননা ওর প্রত্যাখানের জন্যই রত্না’র মতো রত্ন আমি পেয়েছি জীবনে৷

এখানে এক মূহুর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না৷ রত্না’র স্যাক্রিফাইজ আর ভালোবাসা ভীষণভাবে উপলদ্ধি করলাম৷ ফিরে যেতে চাই সেই মানুষটার কাছে৷ যে শত বিপদের মাঝে আমাকে দিয়েছে সাহস৷ দিয়েছে নতুন ভাবে বাঁচবার প্রেরণা৷ সেই রত্নার কাছে৷ যেমনটি আগেও ছিলাম৷

আমি দৌড়াতে থাকলাম বাড়ির দিকে৷ অল্প দূরত্ব৷ আমি ঘেমে যাচ্ছি৷ দম কমে যাচ্ছে৷ কিন্ত কোন ভাবেই জবা’র থেকে দূরত্ব বাড়াতে পারছি না৷ সেই মেনোপেজকালীন ডাইনী থেকে যে এই বয়সে এসেও পরকীয়া প্রেমের প্রস্তাব দেয়৷

(লেখক কর্তৃক আপলোডকৃত। অসম্পাদিত)

গল্প-মেনোপেজকালীন প্রেম রবীন জাকারিয়া
200 Views

রবীন জাকারিয়া

১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ , ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

সুন্দরী তরুনী

(লেখক কর্তৃক আপলোড করা লেখা। অসম্পাদিত।)

তরুনীটির বাবা স্থানীয় একটা মাদরাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম ছিলেন৷ সৎ আর ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী লোকটা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন তাঁর মাদরাসাতেই৷ স্ত্রী সন্তানদের ধর্মীয় বিধি বিধান, পোষাক-পরিচ্ছদ, নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন৷ পরিবারের সকলেই তা হাসিমুখেই পালন করতো৷ বড় মেয়েটি বিজ্ঞান বিভাগে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে৷ মাস্টার্সের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে এমন সময় গত বছর তরুনীটির বাবাকে জঙ্গী সন্দেহে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ পরদিন থানায় বাবার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলো পুলিশ গতকাল কাউকেও তুলে আনেনি৷ হয়তো কেউ ভূয়া পরিচয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে৷ তাদেরকে বলা হলো একটা মিসিং কেস করে রাখতে৷ পুলিশ তদন্ত করে এর সমাধান দিতে পারবে৷

বাবা হারানো দরিদ্র পরিবারের তরুনীটি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো৷ মা, ছোট দুই ভাই-বোন, আর তার লেখাপড়া খরচ এবং সংসার চালাবে কী করে?
বাবা বেঁচে থাকতেই মাদরাসায় যাওয়া ছাড়া বাহিরে তেমন একটা বের হতোনা৷ বের হলেও হিজাব পড়তো সব সময়৷ ফর্সা, লম্বা আর আকর্ষনীয় তরুনী বের হলেই পাড়ার বখাটেরা টোন করতো৷ শিষ দিতো৷ বলতো ইরানী গোলাপ কিংবা কাশ্মিরি সুন্দরী আরো কত কী৷ সে এড়িয়ে যেত৷

কিন্ত এখন এতসব ভাববার সময় তার নেই৷ সংসারের হাল ধরতে হবে৷ সংসার, ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ, বাড়ি ভাড়া৷ তাই সে প্রথমের দিকে কিছু বাড়িতে কুরআন শিক্ষার প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলো৷ কিন্ত বেতন খুবই কম৷ মাসে পাঁচশত টাকার বেশি কেউ দিতে চায়না৷ তাতে সংসার চলেনা৷ তাই সে গণিত, ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ের উপর কয়েকটা টিউশনি করাতে লাগলো৷ বাঁধ সাধলো স্টুডেন্টরা৷ হিজাব পড়া থাকলে নাকি তারা ভয় করে৷ তরুনীটি নেকাবটা খুলে পড়াতে লাগলো৷ স্টুডেন্টদের বাবাদের বাজে দৃষ্টি তার এড়ায় না৷ এড়ায়না শিক্ষার্থির মায়েদের চোখ৷ কিছুদিন যেতে টিউশনিগুলি হারিয়ে ফেলে৷ কেননা সে সুন্দরী তরুনী৷

দারিদ্য মানুষকে জেদী করে তোলে৷ ফলশ্রুতিতে তরুনীটি একটি প্রতিষ্ঠানে সেলস গার্ল হিসেবে চাকুরি পায়৷ প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড অনুসারে তাকে শুধু নেকাব নয় হিজাবটাও খুলতে হয়৷ এখানে সুন্দর করে শাড়ি ও প্রসাধন ব্যবহার করে কাস্টমারদের আকর্ষন করতে হয়৷ বেতন ভালই ছিলো৷ তবে অফিসটাইমটা বেশি৷ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত৷ তবুও তাকে করতেই হবে৷ তা নাহলে সবাইকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে৷
প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর সততার সাথেই সে চাকরিটা করছিলো৷ কিন্ত ম্যানেজার প্রতিদিন তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বাজে ইঙ্গিত করে৷ সে এড়িয়ে যেতো৷ কিন্ত একদিন অফিস ছুটির পর ম্যানেজার তাকে শারিরীক লাঞ্চিত করতে উদ্যত হওয়ায় কোনভাবে পালিয়ে বাঁচে সুন্দরী তরুনীটি৷

ভাগ্যক্রমে একদিন এক বড় কর্পোরেট অফিসে বসের পিএস হিসেবে চাকরি পেয়ে যায় সে৷ বেতন এতবেশি হবে তা কখনো কল্পনাই করেনি তরুনীটি৷ নতুন অফিস৷ নতুন আইন৷ নতুন ড্রেস কোড৷ এখানে পিএসের ড্রেস কোড হলো স্কাট ও টপস কিংবা প্যান্ট ও শার্ট/টিশার্ট৷
তরুনীটি নতুন আদলে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে থাকে৷ কেননা তার হাতে কোন অপশন নেই৷ আধুনিক আর বাহারি সজ্জায় সজ্জিত অফিস৷ অভিজাত আর কেতাদূরস্ত পোষাকে আবৃত পরচুলায় ঢাকা এক মধ্য বয়সি পৌঢ় যেন জোর করে নিজেকে যুবক প্রমাণে সদা তৎপর৷ কাজে অকাজে নিজের চেম্বারে ডেকে গুলতানি আলাপটাই যেন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ কথার ফাঁকে বস কিছু যেন ইঙ্গিত দেয়৷ না বোঝার ভান করে তরুনীটি৷ ক্ষিপ্ত বস চোখের ইশারায় যেন বোঝাতে চান এর বদলা নেবো৷

কিছুদিন পর অফিসে বিদেশি একটা ডেলিগেট টিম আসলো৷ তারা এই প্রতিষ্ঠানের ফিসিবিলিটি, ভিজিবিলিটি ও সক্ষমতা যাচাই করবেন৷ ইতিবাচক হলে জয়েন ভেঞ্চার ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করবে৷ অফিসে সাজ সাজ রব৷ সকলে ব্যতিব্যস্ত৷ কনফারেন্স রুমে ডেলিগেট টিমের সাথে বস মিটিং করছেন৷ ইন্টারকমে টেলিফোন পেয়ে তরুনীটি সকলের জন্য স্ন্যাক্স ও ব্ল্যাক কফি পরিবেশন করে চলে আসবে কিন্ত বস বসতে বললেন৷ তরুনীটি বসলো৷ পরিচিতি পর্বের ভাষাটা বুঝতে পারলেও পরের সংলাপগুলো বুঝতে পারেনা তরুনী৷

বস বিদেশিদের আস্বস্থ করে যে তাঁদের সমস্ত এন্টারটেইনের ব্যবস্থা করা আছে৷ আর এই দায়িত্বটা পালন করবেন আমাদের পিএস৷ সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরতে পারেনা তরুনীটি৷

পরেরদিন খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় ছোট্ট একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ মৈত্রি সেতুর রেলিংয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় বস্তাবন্দী এক সুন্দরী তরুনীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷

সুন্দরী তরুনী
361 Views

মাসুম মোরশেদ

৪ জুন, ২০২২ , ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

সাবালক

ডিগ্রীতে পড়ি। বয়স কুড়িমতো হইবে। দুরবিন দিয়া খুঁজিয়া সারা মুখে কতক বাদামী পশম দেখিতে পাই। আমার নাকের নিচে, ডানে বামের অনুর্বর অঞ্চলে কিছুই জন্মায় না। নিজেকে বড় নাবালক লাগে। ডিগ্রীতে পড়া ছেলেদের কারো কারো ঝাঁকড়া চুল তাহাতে আবার খোঁচা খোঁচা দাড়িতে কেতাদুরস্ত ভাব লইয়া প্যান্টের ব্যাকপকেটে ভাঁজ করা রেখা খাতা লইয়া যখন কলেজে আসে, মাঠে ঘোরে, কলেজের পুকুরপাড়ে তাসের আড্ডায় চুল ঝাঁপিয়ে ট্রাম্পকার্ড ছুঁড়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করে কিংবা মেয়েদের দলে বসে বাদাম খুলটে ফুঁ দেয়- আমি ছেলে মানুষটা সেইসব ছেলেদের প্রেমে পড়িয়া যাই। ভাবি, আমার ইহজীবনে কিছুই হইবে না। ক্লিনশেভড মুখ আর সাথে তেমন ঝুলপি চুল যদি রাখিতে পারিতাম তবে আমার মতো সুখী মানুষ বুঝি কমই হইত। কিন্তু তেমন করিয়া রাখিতে পারিব না, কারণ বাবা তাহা পছন্দ করিবেন না। তিনি কঠিন ধাতের মানুষ। অতিবাস্তববাদী লোক। তিনি নিজে সর্বদা ক্লিন শেভ করিয়া থাকেন। তাই সেটাতে অসুবিধা হইবার কথা নহে। তাই সাবালকত্ব লাভের জন্য সেটার চিন্তা করিতেছি।

দোয়ানী বাজারের আজিজুল আমার বাল্যবন্ধু। ও যখন ক্লাশ নাইনে পড়ে তখন ওর সারামুখে ঘনকালো দৃশ্যমান দাড়ি, মোচ। আমি তখন ইন্টারমিডেয়েট সেকেন্ড ইয়ার। খুব বড়রা বাদ দিয়ে পাড়ায় কোন সিনিয়র জুনিয়র নাই। সবাই ভাইভাই, বন্ধু বা বন্ধুর মতো। কীভাবে যেন তাহার সাথে খুব ঘনিষ্ট হইলাম, জানি না। সেই স্বল্পবয়সেই তাহার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিতাম। ঠিক সেসময়ই আফসোস করিতাম, আহা, আমার যদি এই মুখখানা হইত! শুধু হাপিত্যেস করিতাম আর ভাবিতাম, কখনো কী আমার তেমন হইবে? ডানহস্তে, বাঁহস্তে নিজের বদনখানি নাড়িচাড়ি আর ভাবি, আমি কি তবে বড় হইবো না?

সেইসবদিনে হকবাজারের বিখ্যাত ভোলা নাপিত যখন বন্ধুর চুল, দাড়ি কাটে আমি অপলক চাহিয়া থাকিতাম। অন্য চেয়ারে বসিয়া মাঝেমধ্যে প্রমানসাইজ আয়নায় আমার নিরসবদনখানি দেখিতাম আর মনে মনে প্রার্থনা করিতাম যেন দ্রুত আমারো তাহার মতো হয়।

কিন্তু যাহা তাহাই! যাহার হয় তাহারই হয়। আমার তাহা নহে।

বন্ধু আমার দুঃখ বোঝে। আমি তখন বি, এ ফার্স্ট ইয়ার। আর সে পড়ালেখা বাদ দিয়া বাড়ির সামনে মুদিখানা দিলো। বিকাল, সন্ধ্যায় তাহার দোকানে আড্ডা মারি আর তাহার সোনাবদনখানি দেখে দেখে কতশত গল্প করি। কথাচ্ছলে সে-ই একদিন বলিল, “শেভ কর্। দুই-চারিবার ক্ষুর পড়িলে প্রচুর গজাইবে।” কথাখানা একান্তই আমার মনের কথা। তাই মনে ধরিল। এই না হইলে বন্ধু কিসের! বন্ধুই তো বন্ধুর গোপন কথা, মনের ব্যথা বুঝিবে, স্বাভাবিক।

ভাবিলাম, তথাস্তু!

বন্ধু যেহেতু মুদিখানা সামলাইতে ব্যস্ত। তাহার আর আমাকে সঙ্গ দেবার সময় নাই বা অযথা ঘোরাঘুরি তাহার শোভা পায় না। তাহার সাথে প্লান প্রোগ্রাম ঠিক করিলাম বটে, কিন্তু একাই যাইতে হইবে এবং তা-ই সাব্যস্ত করিলাম।

বাড়ি হইতে তিন কিলোমিটার দূরে খানসামা হাট। সেইদিকে যাইব। শুক্কোরবার আর সোমবার হাটবার। হাট শুরু হয় দুপুরের নামায বাদ। সেই হাট জমাইয়া তুলিবার জন্য কাজকারবার শুরু হয় সকালবেলা থাকিয়া। ধোয়ামোছাসহ ইত্যকার কাজ। বাঁশের ফোল্লা (ব্যাঙ্ক) কাটিয়া লুঙ্গির খোঁটে ত্রিশ টাকা রাখিলাম। আমাদের বাজারের নাপিত চুলদাড়ি শেভ করা পাঁচ, ছয় টাকা নেয়। শুধু দাড়ি শেভ করিতে তিন টাকা লাগিত। কেউ কেউ দুই টাকাও দিয়া থাকেন। নাপিতরাও সেই টাকা কপালে ঠেকাইয়া ক্যাশবাক্সে রাখিতেন। খানসামায় যদি অনেক বেশি চায় বা নেয়, তাই অপদস্ত হইবার ভয়ে ত্রিশ টাকাই লুঙ্গির কোঁচে রাখিলাম। এখানে বলিয়া রাখি, আমাদের ছাত্রাবস্থায় গ্রামাঞ্চলে তখনো ফুলপ্যান্ট পরে ঘোরার চল শুরু হয়নি। শহরে চলে সেটা বেশ। তবে দুইএকজন, যাহারা শহরে পড়িত, হোস্টেলে বা মেসে থাকিত, সেই সময় তাহাদের কেউ কেউ গ্রামে আসিলে প্যান্ট পরিয়া বেড়াইত। অবশ্য আরামকে ভুলিয়া সেটা মেয়েদের দেখানো বা উন্নতজাতের ছাত্র হিসেবে নিজেকে তুলিয়া ধরিতে তাহা করিত। কিন্তু আমরা যাহারা নিয়মিত গ্রামে থাকি তাহারা কখনো নয়। এমনকি শহরে সিনেমা দেখিতে যাইতাম লুঙ্গি পরিয়া। অন্য আরেকটা সত্য হইল আমাদের কেহ কেহ লুঙ্গি পরেই কলেজে ক্লাশ করিত পিছনে বসিয়া।

যাইহোক, বিভিন্ন ঘোরা পথ ব্যবহার

মাসুম মোরশেদের রম্যগল্প -মাসুম মোরশেদ

রবীন জাকারিয়া

৪ জুন, ২০২২ , ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

কোডাক ক্যামেরা

শাহেদ ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছে৷ সারাটা বাড়ি তন্ন তন্ন করেও সে তার অত্যন্ত একটা জরুরি ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না৷ ভয়াবহ ব্যাপার! ওটার ভেতরে নিজের সমস্ত একাডেমিক সার্টিফিকেট, বাড়ির মূল দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রাখা আছে৷ ফাইলটার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই সে ফাইলের কভারে মার্কার পেন দিয়ে বড় বড় হরফে লিখে রেখেছে “কাগজপত্রের মূলকপি”৷ অথচ এখন উধাও৷ সে কখনো এতো দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়৷ জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি৷ সে এত পরিপাটি যে কোন জিনিস কোথায় আছে তা অন্ধকার বা বিদ্যূত চলে গেলেও বের করতে পারবে৷ কয়েল, মোমবাতি, দিয়াশলাই কিংবা টর্চলাইটটা কোথায় রাখা আছে তা ওর নখদর্পনে৷ কিন্ত এখন সে কোনোটাই জায়গামত পায় না৷ এটা শুরু হয়েছে বিয়ের পর থেকে৷ এখনকার বউরা কোনো কাজই সঠিকভাবে করতে চায় না৷ শুধু দায়সারা কাজ৷ দরজার চাবিটা ঠাশ করে কোথায় রাখল সেটাই খুঁজতে নষ্ট করে ফেলে আধা ঘন্টা৷ শাহেদ এত বলে সঠিক স্থানে রাখ দেখবে তোমারই সুবিধা হবে৷ কিন্ত কে শোনে কার কথা৷ গত তিরিশ বছর ধরে একই চিত্র৷ বদলায় না কিছুই৷ না অভ্যাস আর না ভোগান্তি৷ অথচ আমাদের মায়েরা কত কষ্ট করে সংসার চালাত৷ সীমিত আয় আর অনেক সন্তানসহ যৌথ পরিবারের সীমাহীন কাজ শেষেও সবকিছু ছিল তাদের নখদর্পণে৷ তাঁরা সংসারটাকে Own করতেন৷ কিন্ত এখনকার মেয়েরা তা করে না বোধ হয়৷

শাহেদ কিছুটা সময় খোঁজাখুঁজিতে ক্ষান্ত দিলো৷ মেজাজটাকে ঠান্ডা করে চিন্তা করল৷ নতুন করে খুঁজতে হবে৷ যেভাবেই হোক ফাইলটা তাকে পেতেই হবে ৷ কারণ ঐ ফাইলে রাখা কিছু কাগজপত্র তার খুবই জরুরি৷ আর কিছুদিনের মধ্যে তাকে LPRএ যেতে হবে৷ সরকারি প্রসিডিউর মেইনটেইন আর কাগজপত্র সাবমিট করতে করতে এমনিতেই তার ত্রাহি অবস্থা৷ এর মধ্যে ফাইল খোঁজাটা যেন গোঁদের উপর বিষফোঁড়া৷

বেশ কিছু পর শাহেদ আবারো ফাইলটা খোঁজা শুরু করল৷ বইয়ের আলমারি, ফাইল কেবিনেট এবং অবশেষে স্টিল আলমারি৷ পাওয়া গেল সিন্দুকের ভেতর৷ নিশ্চয়ই এটা তার স্ত্রী শেলী এখানে এনে রেখেছে৷ এটা নিশ্চিত আর যাই হোক সিন্দুকে সে ফাইলটা রাখেনি৷ রেখেছিল স্টিল আলমারিতে৷ যাক পাওয়াতো গেল৷ টেনশন কমলো৷ সে ফাইলটা বের করতে যাবে এমন সময় তার চোখে পড়ল ক্যামেরাটা৷ অনেক পুরোনো দিনের কোডাক ক্যামেরা৷ যেগুলো দিয়ে ছবি তুলতে ‘ফিল্ম রোল’ এর প্রয়োজন হতো৷ সেসময় ফুজি ফিল্ম জনপ্রিয়তার তুঙ্গে৷ এখনতো সব ডিজিটাল৷ আর সকলের হাতেই ক্যামেরা৷ মোবাইলে ক্যামেরা৷ ডিজিটাল ক্যামেরা কত কী! কিন্ত সে সময় একটা ক্যামেরা মানে একটা এসেট৷ আভিজাত্য৷ লোকে গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে দর্শনীয় স্থানে ভ্রমন করত অনেকটা গর্বের সাথে৷ পিকনিক কিংবা কোন অনুষ্ঠানে বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের কাছ থেকে ক্যামেরা ধার করে সকলে চাঁদা তুলে ফিল্ম কেনা হতো৷ এরপর সকলে সমানুপাতিক হারে ছবি তুলত৷ গ্রুপ ছবি৷ সিঙ্গেল ছবি৷ সবচেয়ে মজার ব্যাপার হতো ক্যামেরা সামনে ধরার আগে পর্যন্ত সকলে নরমাল থাকত৷ কিন্ত ছবি তোলার সময় কেন যেন সকলেই নার্ভাস হয়ে যেত৷ দাঁড়ানো, হাত দুটো সঠিকভাবে রাখা কিংবা মুখের হাসি সবকিছুই অস্বাভাবিক হতো৷ সে সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টাইলটা ছিল দুই বন্ধু হ্যান্ডশেকরত অবস্থায় ছবি তোলা৷ যার কারণে বেশিরভাগ ছবি ভাল হতো না৷ অবশ্য সে মূল্যায়ন করবার সক্ষমতাও ছিল না৷

একটা রিল ফিল্ম দিয়ে ৩০-৩৫টি ছবি তোলা যেত৷ তারপর ফিল্ম ডেভেলপ৷ পরিশেষে ল্যাবে ছবি ওয়াশ৷ আহ্ কী সময় ছিল৷ শাহেদ ক্যামেরাটা দেখতে পেয়ে নস্ট্রালজিক হয়ে পড়লো৷ মনে পড়লো কীভাবে সে ক্যামেরাটা কিনেছিল৷ স্বপ্ন থাকলেও বেকার শাহেদের পক্ষে ক্যামেরা কেনা অসম্ভব ছিল৷ একদিন এক বন্ধু ওকে সেটা কিনতে বলায় সে হাসি দিয়ে বলেছিল “আমাকে বিক্রি করলেও ওটা কিনতে পারব না৷ অসম্ভব! তখন বন্ধুটি জোর করে ওর হাতে ক্যামেরাটা দিয়ে বলেছিল তুই যা পারিস তাই দে৷ দরকার হলে পরে টাকা দিস৷ তবুও এই অলক্ষুণে জিনিসটা তুই নিয়ে নে৷ শাহেদ বলল, অলুক্ষণে মানে কী? বন্ধুটি বললো এটা অভিশপ্ত ক্যামেরা৷ এটা দিয়ে প্রথম যে ছবিটা তুলেছি সেটা হলো আমার মায়ের৷ ছবি তোলার দু’দিন পর মা হঠাৎ মারা গেলেন৷ শাহেদ হেসে বলল এতে কি প্রমাণ হয় এটা অভিশপ্ত? বন্ধুটি বলল আরেকটি কারণ আছে৷ সেটা হলো এর লুকিংটা কেমন ভূতুরে আর মাঝে মাঝে নিজে থেকেই “ক্লিক” শব্দ করে উঠে৷ আমার ভয় করে৷ এখন তুই নিলে নে৷ নাহলে এটা ভেঙে ফেলব৷ শাহেদ এসব আজগুবি আর ভূতুরে গল্পে বিশ্বাসী নয়৷ তাই সে ক্যামেরা নিল৷

মনে পড়ে সেই বিশেষ দিনের কথা৷ যেদিন শাহেদ ফিল্ম লোড করে ক্যামেরাটা নিয়ে বাড়িতে এলো৷ তা দেখে আব্বা-মা, ভাই-বোন সকলে খুশি৷ আমার একটা ছবি তোল, আমার একটা ছবি তোল বলে সবাই হুড়োহুড়ি৷ কিন্ত শাহেদের এক কথা এটা দিয়ে প্রথম ছবি তুলবো আব্বা-মা’র যুগল ছবি৷ তারপর অন্যদের৷ আব্বা কেবল অফিস থেকে ফিরেছেন৷ তাঁদেরকে বলা হলো ভাল ড্রেস আর একটু মেকআপ করার জন্য৷ বাবা স্যুট-টাই পরলেন৷ আর মাকে শাহেদের বোন সুন্দর একটা লাল শাড়ি পরিয়ে আর সাজিয়ে নিয়ে এলো৷ সব রেডি৷ ছবি তোলার স্পট পছন্দ হচ্ছিল না৷ অবশেষে বাড়ির ভেতর ছোট্ট গোলাপ বাগানের মাঝে তাঁদের বসানো হলো৷ ছবি তোলার ঠিক আগ মূহুর্তে তার বাবা বলে উঠলেন, তোল৷ ভাল করে ছবিটা তুলে রাখ৷ এটাই জীবনের শেষ ছবি৷ এ কথা শোনামাত্রই শাহেদের মা ভীষণ রাগান্বিত হলেন৷ বললেন, এসব কী অলুক্ষণে কথা বলো? মন খারাপ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি উঠে চলে গেলেন৷ বললেন তিনি আর ছবিই তুলবেন না৷ শত চেষ্টা করেও তাঁর ছবি তোলা হলো না৷ আচমকা এমন ঘটনার ফলে সেদিন ঐ একটি ছবি ছাড়া আর কারোরই ছবি তোলা হলো না৷ আনন্দটা নষ্ট হয়ে গেল৷

দু’দিন পর শাহেদের বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেলেন৷ বাবার মৃত্যুর পর সংসার, জীবন-জীবিকার তাগিদে সকলে ক্যামেরার কথা ভুলেই গেল৷ এমনকি শাহেদও৷ আজ প্রায় তিরিশ বছর পর ক্যামেরাটা দেখে সবকিছু যেন ছবির মত ভেসে উঠল৷ একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ কৌতুহল বশে শাহেদ ক্যামেরাটাকে হাতে নিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল৷ আজ বন্ধুর কথাটা সত্য মনে হলো৷ আসলেই এটা দেখতে কেমন ভূতুরে৷ সে এগুলো পাত্তা দেয় না৷ পৃথিবীতে ভূত বলে কিছু নেই৷ এমন সময় ক্যামেরার সাটারটা একাই ক্লিক করে উঠলো৷ যেন কেউ একজন একটা চোখ টিপে দিলো৷ শাহেদ মজা পেল৷ ফিল্ম না থাকার পরও সে তাই মোবাইলে সেলফি তোলার মতো করে একবার ছবি তোলার বাটন চাপলো৷ এরপর খুঁজে পাওয়া ফাইলটা বের করল৷ আর আলো বাতাসে রাখবে বলে ক্যামেরাটা ড্রইং রুমের খোলা বুক শেলফে রেখে দিলো৷

দু’দিন পর শাহেদের বাড়িতে প্রচুর লোকের সমাগম৷ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কলিগ, পাড়া-প্রতিবেশিতে ভরপুর৷ হঠাৎ স্ট্রোক করে শাহেদ আজ মারা গেছে৷ অস্বাভাবিক ব্যাপার৷ কেউ মানতে পারছে না৷ সকালেও সুস্থ্ একটা মানুষ ফজরের নামাজের পর জগিং শেষে ফ্রেকফাস্ট সারল৷ হালকা রসিকতা আর কথাবার্তায় পরিবারের সকলকে আনন্দে ভরে দিলো৷ অথচ হঠাৎ নেই হয়ে গেল৷

চারিদিকে কান্না আর হাহাজারিতে সারাটা বাড়ি বেদনায় ভরপুর৷ লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ এসময়ে কান্নার বাঁধ যেন আরো ভেঙে পড়ল৷ কত লোক যে শেষকৃত্যের জন্য এসেছে তার হিসাব নেই৷ সকলেই পরিচিত নয়৷ বেশিরভাগই অচেনা৷ লাশ কাঁধে তোলার সময় চিৎকার শুনে এক তরুণ ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে এলো৷ হাতে একটা শপিং ব্যাগ৷ লাশের পিছু পিছু এলোমেলোভাবে পা ফেলে হাঁটছে তরুণ৷ ওকে দেখে সকলে দুঃখ পাচ্ছে এই ভেবে যে সে হয়তো মরহুম শাহেদের নিকটাত্মীয়৷ তাই সে কষ্টটা নিতে পারছে না৷ ধীরে ধীরে সেই তরুন একটা সময় লাশ দাফনের লাইন থেকে বেরিয়ে অন্য পথ ধরে৷ হাতে থাকা শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে “ক্লিক” শব্দটি কানে পৌছায় না মাদকাসক্ত সেই তরুণের৷ যার ফলে সে বুঝতে পারলো না শপিং ব্যাগে করে চুরি করা জিনিসটা শুধু কোডাক ক্যামেরা নয় বরং অদ্ভূতুরে ও অভিশপ্ত এক সিরিয়াল কিলার৷ আর যার পরবর্তী নিশানা হয়তো সে-ই৷

 

রবীন জাকারিয়ার গল্প - কোডাক ক্যামেরা

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

২৯ মে, ২০২২ , ১০:১৭ অপরাহ্ণ

প্রযত্নে নীলা

লোকটার বয়স কত হবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চুল, দাড়ি এমনকি ভ্রু পর্যন্ত সাদা। মারুফের ধারণা বয়স ৭৫ বছর তো হবেই। কথা বলার সময় দাঁত দেখা যাচ্ছে না, তাই দাঁত আছে না নাই, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে উচ্চারিত কথা ভেসে আসার সময় শব্দই বলে দিচ্ছে সামনের দাঁত কয়েকটা তার নাই। এই খেলাটা খেলতে মারুফের ভালো লাগে।  সামনের যে কোনও একজন লোক সম্বন্ধে ধারণা করতে। সবসময় মেলে না তবে মারুফ দেখেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলে যায়। লোকটা রসিক, লোক না বলে বৃদ্ধ বলাই মনে হয় ভালো। বৈকুন্ঠপুরের এই জৈষ্ঠের দুপুরে কাঁঠাল গাছের নিচে টং এ বসে লোকটার কথা শুনছে মারুফ। এদিকে কখনো আসা হয়নি আগে, যদিও রংপুর শহর থেকে বারো -তেরো কিলোমিটার দূর, তারপরও। সে এসেছে একটা বইয়ের পার্সেল ডেলিভারি দেবার জন্য।

প্রযত্নে,
নীলা, বৈকুন্ঠপুর, রংপুর।

এটুকুই ঠিকানা, সাথে মোবাইল নম্বর। প্রেরকের ঠিকানাটাও অদ্ভুত, শুধু লেখা-

প্রেরক,
নীল আর মোবাইল নম্বর।

নাম দুটো দেখে হাসি পায় মারুফের। নিশ্চিত নকল নাম। আসলে সম্পর্ক দানা বাঁধে না বলেই গোপন নাম প্রকাশ্যে চলে আসে। গোপন নামে সেও তো ডাকত সুলতানাকে, নয়না নামে। নয়না কেমন আছে? কতদিন পর তার নাম মনে পড়ল। পেটভাতে একটা চাকরি করে আর যাই হোক মনে প্রেম আসে না।

আহ,আজ এত গরম। বৃদ্ধ এখন সাপের গল্প বলছে। বুঝলা মিয়া, বলাটা কানে মনে হলো, ভুজলা মিয়ারা। মুই সাপের মনি দেখছুনু একবার বাঁশের ঝাঁড়োত। চইত মাস, মুই তখন চেংড়া মানুষ। রাইত বারোটার সম কতাকলি সিনেমা হলোত রুপবান ছিনেমা দেখি আসছুনু। মোর বাড়ির গোড়ত একখান বড় বাঁশের ঝাড় আছিল। ওটা পার হয়ে মোর বাড়ি। এলাও নাম আচে ওটার, আন্ধার বাঁশের তল। দিনের বেলাতো ওটে সূর্যের আলো ঢুকছিল না। ডাকাতের ভয়ত লোকজন এটে রাইতোত আইসে না। মুই তখন তাগড়া জোয়ান, এক বসাত একখান কাডোল খায়া খেলবার পারছুনু। মোর অতো ভয় আছিল না। বাঁশের আড়াতের মাজের রাস্তা দিয়া যাওছুনু। এটুকু বলেই মারুফের মুখের দিকে তাকায় বৃদ্ধ। একটু ঘোলা চোখ।চোখে কি ছানি আছে? মনে হয় আছে। চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করে,তোরা ক্যায় বাহে? তোমাক তো চিননো না?

আমি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করি। একটা পার্সেল ডেলিভারি দিতে আসছি, বলে মারুফ। আপনার গল্প শুনছি, খুব মজা করে গল্প বলতে পারেন আপনি।

এই ছ্যামড়া কয় কি? এগুলা গল্পো নোয়ায় সত্যি ঘটনা।

পাশে বসা লোকজন অধৈর্য হয়ে ওঠে, আরে তোরা থোন তো আন্দাসুন প্যাচাল। গল্পোটা শ্যাষ করেন।

বৃদ্ধ মাথা ঝুঁকিয়ে রাখে। নিশ্বাস নেয় শব্দ করে, মাথা কাঁধ ওঠানামা করে দ্রুত।

কী হইল তোমার বাহে? ঘুমাইনেন নাকি?কতা কন না কেন তা?

বৃদ্ধ মাথা নিচু করে আরও, চিবুক মিশে যায় বুকের সাথে। কোনও দিকে খেয়াল নাই।

টং এর সামনের চায়ের দোকানদার বলে, বুড়া ঘুমি গেইছে। এলা উয়াক চা, বিস্কুট, পান না খওয়াইলে কতা কবার নয়।

ধান কাটামারা শেষ। লোকজনের হাতে টাকা আছে। বিকালে নতুন চামড়ার সেন্ডেল আর প্রিন্টের শার্ট পরে শ্যামপুর বন্দরে যায়। চায়ের দোকানে বসে আলোচনা করে দেশ, ধর্ম আর নারীদের নিয়ে। শ্যাখের বেটি কী করলো, কী করা  দরকার ছিল এসব নিয়ে জোর আলোচনা হয়। চৈত্রের এই দুপুরে বাসায় থাকা কঠিন, আড্ডা বসেছে তাই এই টং এ।

রহিমুদ্দিন গজগজ করে লুঙ্গির কোচায় হাত দিয়ে টাকা বের করে। চা দিতে বলে দোকানদারকে।

বেশ জোরেই চায়ের অর্ডার দেবার কারণেই কি না, বৃদ্ধ জেগে ওঠে। সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, মাঝ ঘাটাত আসি দ্যাকো আলো আর আলো, বাঁশের তলা উজাল হয়া গেইছে। একনা আগে গিয়া দেখো, দুইটা সেইরম বড়ো সাপ মারামারি করোচে আর একখান পাথর থাকি সেই আলো বেরাওচে। মুই বুঝবার পারনু এটা সাপের মাথার মনি। মুই আগবার গেনু, সেই শব্দ করোচে, ফোঁস ফোঁস শব্দোত, কান তালা নাগি যাবার অবস্থা। দৌড়ি বাড়ি চলি গেনু। হুড়োহুড়ি করি একখান ডালি নিয়া ফির আসি দ্যাকো কোনো কিছুই নাই। খালি ঐ জায়গাটা পুড়ি কালা হয়া গেছে। মুই ছুটাছুটি করনু, এপাক, ওপাক, কিছুই নাই। গলা জড়িয়ে আসে বৃদ্ধের, আবারও মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে পরে। কয়েক মুহুর্তেই আবার গা ঝাড়া দিয়ে, চায়ে চুমুক দিয়ে শব্দ করে, আহ্। মাথা দোলায়, চোখ বন্ধ করে।

তারপর কী হলো? মারুফ অধৈর্য হয়ে বলে বসে। বলেই লজ্জা পায় কিন্তু কেউ বিষয়টা খেয়াল করে না, যেন এ প্রশ্নটা সবার।

মোবাইল বেজে ওঠে, লক্ষ্য করে দেখে নীলা ফোন দিয়েছে।

হ্যালো, ম্যাম আর কতক্ষণ বসে থাকব?

আপনি কোথায়?  এই তো বৈকুন্ঠপুর, পুটিমারিতে একটা চায়ের দোকানে।

আরে ওখানে গেছেন কেন? আপনাকে না বললাম, জোদ্দার পাড়ায় আসেন।

ওহ্, আমি তাহলে শুনতে ভুল করেছি।

আসেন, তাড়াতাড়ি। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

মারুফ তবুও বসে থাকে, অধীর আগ্রহে তাকিয়ে সবার মতো বৃদ্ধের দিকে। তার তাড়া আছে আরও একটা প্যাকেট ডেলিভারি দিতে হবে। নীলা অপেক্ষা করছে নীলের পাঠানো প্যাকেটের জন্য। জনা দশেক লোক আর চায়ের দোকানদার সবাই চুপ করে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে, গল্প শুরুর। বৃদ্ধ মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।

প্রযত্নে নীলা - ফেরদৌস রহমান পলাশ

মুগ্ধতা.কম

২৯ মে, ২০২২ , ১০:০৬ অপরাহ্ণ

পরমাণু গল্প

করোনা পজিটিভ

বাবা, আমার করোনা পজিটিভ হলে কি আমাকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসবে?
ছেলের এমন প্রশ্ন শুনে বাবা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, ‘না বাবা, কোনদিনও না, কখনোই না। বাবারা কখনোই ছেলে-মেয়েদের বোঝা মনে করে জঙ্গলে ফেলে আসে না। বাবা তুমি বাড়ি থেকে বের হবে না, তাহলে তোমাকে করোনা ধরতেই পারবে না।’

_______________________________

এন্ড্রয়েড মোবাইল 

শিলা ও সাগরের ডিভোর্স হয়ে গেলো আজ। সাগরের উপহার গুলো ফেরত দিলো শিলা। ফেরত উপহারের মাঝে  স্বামীর দেওয়া শেষ উপহার এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটিও ছিলো। যা ডিভোর্সের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

___________________________

ঘুষখোরের লাশ

সারাজীবন ঘুষ খেয়ে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন জামাল উদ্দিন সাহেব। কিন্তু ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে পারেননি।
জামাল উদ্দিনের লাশ বিশাল অট্টলিকা বাড়ির আঙ্গিনায়। ৩ ছেলে ও ২ মেয়েরা জামাইসহ  এসেছেন। লাশ দাফন করার আগেই ছেলে মেয়েদের মাঝে মারামারি লেগে গেলো বাসার ভিতর। তুমুল মারামারি। আত্বিয়স্বজন সেই মারামারি থামাতে ঘরে ছুটলেন।
লাশ পড়ে রইলো একা।

সেই সুযোগে একদল কুকুর লাশকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেললো নিমিষেই। এলাকাবাসীর কেউ-ই আগে কখনো কুকুরগুলোকে দেখেছেন বলে মনে পড়লো না কারোই।
______________________________

সতীনের ছেলে

সতীনের একমাত্র ছেলেকে ঘাড়ে বসিয়ে খাওয়ায় শবনম।

দ্বিতীয় স্বামীর ঘর ভাঙার ভয়ে সতীনের ছেলেকে খাওয়ানো শুরু করলেও তার মুখ দেখতে চায় না সে।
________________________

পরীক্ষায় পাশ

ছাত্র: স্যার, দেখি আমায় আপনি কিভাবে ফেল করান!

স্যার: গুড, তাহলে এবার তুমি ভালোই পরীক্ষা দিয়েছো?

ছাত্র: আমি এবার পরীক্ষাই দেইনি।
__________________

নতুন সকাল

সারারাত অপেক্ষায় থাকলো রাশেদ। গতকাল সকলে বলেছে, আগামীকাল একটি নতুন সকাল আসবে, সব দুঃখ কষ্ট চলে যাবে। সম্ভবনাময় আলোকিত হবে সব।

কিন্তু কোথায়? তার যেভাবে সকাল শুরু হয় সেভাবেই শুরু হলো। জীর্ণশীর্ণ  ছেঁড়া কাঁথায় বেড়িয়ে যাওয়া পা আজও বেড়িয়েছে। বিকট যান্ত্রিক আওয়াজে ঘুম না আসা সকাল সেই-ই। তবে নতুন সকাল কই?
___________________________

একটু হাসি

আকবর সাহেবের বিয়ে হয়েছে দশ বছর। মাত্র দুই দিন হলো তিনি প্রথম বাবা হলেন। কিন্তু বাবা হয়েও তিনি তার সন্তানকে কোলে তুলে নিতে পারছেন না। জন্মের পর হতেই তার সন্তান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের. … তে।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রতিদিন দুপুরে আসে আর একটি কথাই বলে- আকবর সাহেবকে ‘বাবু হেসেছিলো একবার’। ডাক্তার ১০ দিন যাবত এই একই প্রশ্ন করছেন আকবর সাহেবকে। যতবারই তিনি প্রশ্নটি শোনেন ততবারই তার কান্না পায়।
__________________

ত্রাণের চাল

চালের বস্তা দুর্বল হলে যা হয়। এক পাশে ফুটো হয়ে ধড়-ধড় করে পড়তে শুরু করলো। মাথা থেকে নামাতে নামাতে বেশ কিছু চাল রাস্তায় ইট পাথরে মিশে গেলো।

রহিমা শাড়ির আঁচল দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিলো। তাতে ঠিকমতো ঢাকা হলো না বুকটা।

ইজ্জত! হায়রে গরীবের ইজ্জত!

সাতদিন পর আজ পেলে ত্রানের চাল। তিনদিন অভুক্ত ছেলে মেয়েরা পথ চেয়ে আছে তার।

রোদে তপ্ত পিচ ঢালা রাস্তায় জোড়ে জোড়ে পা চালায় রহিমা।
_______________________

সুদের টাকার বাড়ি

মহিবর চাচা সুদের ব্যবসা করেন। উনি মনে করেন তিনি অভাবী মানুষকে প্রয়োজনের সময় টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন। বিনিময়ে কিছু টাকা নিচ্ছেন। তিনি এই সুদের টাকা দিয়ে একটি তিনতলা বাড়ি বানালেন। এলাকার লোকজন সেই বাড়ির নাম দিলো ‘সুদের টাকার বাড়ি’।
________________________

পরিষ্কার হাত

আবুল সাহেব এক পুরোনো দোকানে একটি মজার আয়না পেলেন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর আয়নার সামনে ধরলে সহজেই বোঝা যাবে হাত পরিষ্কার হয়েছে কিনা?

অফিস থেকে বাসায় ফিরে বার বার হাত ধোয়ার পরেও আবুল সাহেবের হাত পরিষ্কার হচ্ছে না!

উনি স্পষ্টই বুঝলেন ঘুষখোরের হাত কখনই পরিষ্কার হয়না।
__________________________

মায়ের মৃত্যু

মায়ের মৃত্যু সইতে পারলো না টগবগে যুবক শাহজাদা। মাত্র সতেরো ঘন্টার মধ্যে নিজেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো সে।
___________________________

ইচ্ছের মৃত্যু

টুটুল আর সিমু পাশাপাশি নির্জনে বসে থাকার সময় টুটুলের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো সিমুর গালে চুমু খেতে। কিন্তু ইচ্ছের মৃত্যু হলো অঙ্কুরেই। ইচ্ছের বাস্তবায়ন করতে যদি পাঁচ বছরের ভাল বন্ধুত্বই নষ্ট হয়ে যায়!

____________________

বন্যা শিশু

বানের জল এক্কা দোক্কা খেলে

অভুক্ত থেকে যায় সদ্য জন্মনেয়া শিশুটি

যেখানে জন্মদেয়ার পর জ্ঞান না ফেরা মা আর কষ্ট পায় না।

প্রসব বেদনা ভুলিয়ে দিয়েছিলো ক্ষুদার জ্বালা, আর কোন কষ্ট নেই মায়ের

সব কষ্ট দিয়ে গেছে সদ্য জন্মনেয়া শিশুটিকে।

কোথায় আজ সমাজ?

তাকে কী ঠাঁই দেবে বানের জলে ভেসে যাওয়া ভিটে?

১৯৮৮ সালের বন্যায় জন্মনেয়া মা

২০১৭ সালে জন্মদিল মেয়ের।

বানের জলের মতো ভাসতে-ভাসতে শেষ ঠাই হয়েছিল কছিম উদ্দিনের কুঁড়ে ঘরে,

বানের জলের সাথে চলে যাওয়া মায়ের প্রাণটা তছনছ করে দিলো আরেকটি শিশু কন্যার জীবন।

বানের জল এক্কাদোক্কা খেলে

খেলে যায়-দূর দিগন্ত কাছে দেখা যায় না,

শুধু দেখা যায় অবাধ্য জলময় দেশ।

পরমাণু গল্প - আসহাদুজ্জামান মিলন