শিশু-কিশোর

শিশু-কিশোর

মুগ্ধতা.কম

১১ এপ্রিল, ২০২০ , ৩:৫৭ অপরাহ্ণ

বন্ধু হলো বটগাছের ঝুরি

ফারিহান ও নাবহান প্রতিদিন সকালে স্কুল যায়। বাড়ির পাশেই স্কুল। ওরা প্রতিদিন সকালে একসাথে স্কুলে যায়। দু’জন একসাথে থাকে বলে ভয়ও করে না। ওদের আম্মু খাওয়া দাওয়া করিয়ে স্কুলের ড্রেস পড়িয়ে তৈরি করে দেয়। ওরা মামাতো ফুপাতো ভাই। ওদের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বও বিদ্যমান।
ফারিহান একটু দুষ্ট হলেও নাবহান অতি শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলে।

ওরা প্রতিদিন সকালে সোজা স্কুলে যায় আবার ছুটি হলে সোজা বাসায় চলে আসে। ফারিহান মাঝে মাঝে অন্য রাস্তায় একটু ঘুরে আসতে চায়। কিন্তু নাবহান তা করতে দেয় না।

একদিন সকালে ওরা স্কুলে পৌঁছে দেখে স্কুলের গেটে তালা মারা। এমনটি হবার কথা না। ওরা স্কুলে পৌঁছার পূর্বেই দারোয়ান মামা গেট খুলে রাখে। কিন্তু আজ নেই। ওরা আশেপাশে দারোয়ান মামাকে কোথাও খুঁজেও পেলো না।

স্কুলে ওরা প্রতিদিন সবার আগে পৌঁছে। এটার অবশ্য একটা বিশেষ কারণও আছে। ওরা দু’জনে প্রথম বেঞ্চে একসাথে একই স্থানে বসে। নির্দিষ্ট সিট হাতছাড়া হবার ভয়ে ওরা স্কুলে সবার আগেই আসে। স্কুলের দারোয়ান মামাও জানে সে কথা। আচ্ছা ওরা কি সময়ের বেশি আগে স্কুলে পৌঁছে গেছে?

ওদের হাতে ঘড়ি নেই বোঝার উপায় নেই।

ফারিহান প্রস্তাব দেয়। ‘চলো বন্ধু আমরা এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে স্কুলের পিছন থেকে ঘুরে আসি।’

নাবহান চুপচাপ থাকে কিন্তু কিছু বলে না। ফারিহান আবার বলে ‘আরে চলো!’ কি হবে? আমরা দু’মিনিটেই চলে আসবো।’

”আচ্ছা চলো।’

ওরা দু’জন স্কুলের পিছনে যায়। সেখানে বেশি নির্জন। বেশ কয়েকটি গাছও আছে। গাছগুলো অনেক পুরানো। এখন বসন্তকাল। চারিদিকে শুকনো পাতা পড়ে আছে। ওরা ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। শুধু শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শুনতে পায়।

হঠাৎ করে নাবহান দুষ্ট হয়ে উঠে।

শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি ও যেন একটু অন্যভাবে শুনতে চায়। সামান্য দৌড়ানোর পর নাবহান উধাও হয়ে যায়। থেকে যায় শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি। ফারিহানও থেমে যায়। ভয় লাগে তার। আশেপাশে চারিদিকে তাকায় সে নাবহানকে কোথায় দেখতে পায় না। ভয়ে শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। স্পষ্টই দেখতে পায় ফারিহান।

সামান্য পরেই চারিদিকে শুনশান নিরবতায় একটি আওয়াজ শুনতে পায় ফারিহান। যেন দূর থেকে নাবহান ডাকছে-ফারিহান, ফারিহান, আমাকে বাঁচাও!
চারিদিকে তাকায়। কিন্তু নাবহানকে কোথাও পায় না। নাবহান ডাকছে এটি সে নিশ্চিত। এদিকে আওয়াজ আরো স্পষ্ট কান্না হয়ে ভেসে আসছে ফারিহানের কানে। সামান্য এগিয়ে যায় সে।

নাবহানের চিৎকার আরো স্পষ্ট হয়। অনেক ভয় পায় সে। কিন্তু বন্ধুকে ছেড়ে এখন থেকে পালানোর চিন্তাও করে না। এক পা দু পা করে কিছু সামনে এগুতেই একটি বিশাল গর্ত দেখতে পায় ফারিহান। তখন স্পষ্টই শুনতে পায় নাবহানের চিৎকার।

গর্তে উঁকি দিতেই নাবহানকে দেখতে পায় সে। নাবহান কান্না জড়িত কন্ঠে তখনো চিৎকার করছে- ফারিহান আমাকে বাঁচাও, আমাকে উপরে তোলো!

-তুমি চিন্তা করো না! আমি ব্যবস্থা করছি।

ফারিহান চারিদিকে কোন বাঁশ কিংবা লাঠি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু চারিদিকে কিছুই পেলো না। একবার ভাবলো স্কুলের দারোয়ান মামাকে বলি, তাহলেই তো ব্যবস্থা হয়। তবে এতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সকলেই জেনে যাবে।

এইসময় আরো জোড়ে চিৎকার দেয় নাবহান। সাপ সাপ! আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও!

এবার আর উপায় নেই, দারোয়ান মামাকে খবর দিতেই হয়। যেই চিন্তা সেই কাজ।  দৌড় দিতে শুরু করলো ফারিহান। কিন্তু এগুতে পারলো না। পিছন থেকে কে যেন তাকে টেনে ধরলো।

আরো ভয় পেলো ফারিহান।

পিছন ফিরে দেখলো বট গাছের একটি ঝুরি তাকে টেনে ধরেছে।

সে ছাড়াতে চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। ফারিহান তখন ভয়ে চিৎকার দিতেও ভুলে গেছে।

তবে সে বট গাছের ঝুরির কর্ম দেখে আরো আশ্চর্য হয়। বিশাল বট গাছের আরেকটি ঝুরি নাবহানের দিকে যায়। সাপটি সরিয়ে দেয়। নাবহানকে পেঁচিয়ে উপরে তুলে নিয়ে আসে। এরপর দুজনকেই মুক্ত করে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতার ওরা চুপ হয়ে যায়।

একটি বট গাছ ওদের বাঁচালো! মুক্ত হয়ে ওরা স্কুলের দিকে ছুটে এলো। পিছন ফিরে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে বট গাছের দিকে তাকালো। বট গাছটি যেন আনন্দ ও কান্নার মিশ্রিত ভাব নিয়ে তাদের বিদায় জানালো।

বন্ধু হলো বটগাছের ঝুরি

মুগ্ধতা.কম

৯ মার্চ, ২০২০ , ৭:৪০ অপরাহ্ণ

কলাবাগানে গেল বানর আর হাতি

বানরটা মাথা নিচু করে বনের ভিতর হাঁটছে। যে কেউ দেখলে বুুঝবে বানরের খুব মন খারাপ। যে বানর সারাদিন এ ডাল ও ডাল করে। হৈ চৈ করে মাতিয়ে তোলে পুরো বন। সেই বানর মাথা নিচু করে যাচ্ছে বনের ভিতরে। পথে যেতে যেতে দেখা হলো শেয়ালের সাথে। শেয়াল বানরকে দেখে চমকে উঠলো। শেয়াল এলো বানরের কাছাকাছি। বলল, কি হয়েছে বানর ভায়া ? তোমার কী মন খারাপ ?

বানর ওর হাঁটা থামাল শেয়ালের দিকে তাকাল একবার। পরক্ষণে আবার মাথা নিচু করল। আর চুপ করে থাকল। কিছুই বলল না।

শেয়াল আবার জিজ্ঞেস করল,কেন তোমার মন খারাপ?

জবাব দিলো না বানর। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল আর কাঁদল।

– কি হলো? বলবে না?

বানর মুখটা এবার উচু করল। বলল,আমার চাষ করা গাছটা শেষ।

– তোমার চাষ করা গাছ?

– হু। কলাগাছ।

– কে শেষ করল?

– হাতি। হাতি কচ কচ করে খেল। কদিন হলেই কলা ধরতো।

– হাতি খেয়ে ফেলেছে?  বলল শেয়াল।

– হু।

– হাতি জানতো না ওটা তোমার গাছ?

বানর বলল,জানলে বা কী হতো?

শেয়াল বলল,না কোন কিছু হয়তো হতো না। তবে এই হাতিটা অতটা খারাপ না।

– খারাপ না হলে আমার কলা গাছ খায়।

– এর আগে যে হাতিটাকে আমার বাবা বুদ্ধি করে পানিতে ডুবিয়ে বন ছাড়া করেছিল। সেটার চেয়ে ভালো। ঐ হাতিটা হিংস্র ছিল। ছিল বদমেজাজী। হুংকার দিলেই পুরো বন থর থর করে কেঁপে উঠতো। বনের বাঘও ভয় পেত। হাতিটা নিজেকে রাজা মনে করতো। তাই তার আচরণে বনের অন্য প্রাণীরা মিলে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। আর পানিতে ফেলে বন ছাড়া করেছিল। এরপর অনেকদিন বনে হাতি নেই। হঠাৎ এই হাতিটা কোথাত থেকে যেন আবার বনে ঢুকলো।

বানর বলল,এই হাতি খালি খায় আর খায়। ভয়ে তো কোন কিছু বলাও যায় না। বটগাছের মতো লম্বা শুঁড় দিয়ে যদি আছাড় মারে আমি তো একবারে শেষ।

– অত ভয় পেলে কি আর চলে। চলো তো দেখি হাতির কাছে যাই।

– না, না । তার দরকার নাই। আমার কলা গাছ খেয়েছে খাক। মোটু হাতির সামনে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছে নাই।

– আরে চলোই না বানর ভায়া। এই হাতিটা কিন্তু হিং¯্র না। গলা ফাটিয়ে চিৎকারও করে না।

– সাহস দেখিয়ে পাছে – – -। কথা শেষই করলো না বানর।

শেয়াল বলল,চলো। কিছুই হবে না।

বানর আর শেয়াল হাঁটতে শুরু করল। হাতির কাছে যাওয়ার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে একসময় হাতির সামনে হাজীর হয়ে গেল ওরা। তখনো হাতিটা মুখ নাড়াচ্ছে। কলাগাছ কচ কচ করে চিবুচ্ছেও।

বানর যেন আবার ফুপিয়ে কাঁদবে এমন ভাব করলো। শুধু ভাব করলো না। কান্নাও শুরু  করল।

হাতিটা মুখ তুলে দেখল বানরকে। বলল, কী হয়েছে?

বানর কথাই বলল না। কাঁদতেই থাকল।

– আহ্!  কী হয়েছে? কী হয়েছে বানর ভাই আমাকে বলো।

হাতির মুখে বানর ভাই শুনে শেয়াল সাহস পেল। বলল,তুমি কলাগাছ খাও তাই।

– ওমা! খাব না?  কলাগাছ আমার প্রিয়।

– আর কলা বানরের প্রিয়। যেটা কলাগাছেই ধরে। আর যেটা খাচ্ছ সেটা ওরই।

হাতি বলে, মানে?

– ঐ কলাগাছ বানর চাষ করেছিল।

হাতি শুনে সাথে সাথে বলল,সরি। সরি বানর ভাই। আরও বলল,মন খারাপ করো না। তোমায় থোকায় থোকায় কলা নিয়ে এসে দেব।

– কোথাত থেকে?

– কলাবাগান থেকে। দুজন মিলে চলে যাব কলাবাগানে।

– কলাবাগান তো অনেক দূর। বলল শেয়াল।

– সমস্যা কী তাতে? আমি বানরকে আমার পিঠে তুলে নিয়ে যাব।

– তাই। মূহুর্তেই মন ভালো করলো বানর।

– হু। তুমি চাইলে আমরা বন্ধুও হতে পারি।

– বন্ধু! অবশ্যই হবো। চলো তাহলে আমরা এক্ষুণি কলবাগানে যাই।

– আচ্ছা। বলল হাতি।

বানর পিঠে উঠলো হাতির। পিঠে নিয়ে হাঁটতে থাকল হাতিটা। শেয়ালকে না ডাকলেও পিছু নিল ওদের।  হাঁটতে হাঁটতে গেল একটা বড় কলাবাগানে। কলাবাগানে ঢুকে নাঁচ জুড়ে দিলো বানর আর হাতি। নাঁচের তালে হাতির কান নড়ে। নড়ে পা আর চোখও। বানর ছাগল ছানার মতো তিড়িং বিড়িং করতে থাকলো। আর মনের আনন্দে দু’বন্ধু খেতে থাকল। ওদের প্রিয় খাবার। একজন কলাগাছ। অন্যজন কলা।

 

[২০২০ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শিশু সাহিত্যিক মোকাদ্দেস-এ-রাব্বীর গল্পগ্রন্থ ‘পাঁচটি হাতির গল্প’।গল্পটি এই বই থেকে নেয়া। বইয়ের নাম : পাঁচটা হাতির গল্প লেখকের নাম : মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সাইফ আলী মূল্য : ১৮০ টাকা প্রাপ্তিস্থান একুশে বইমেলা শিশুচত্বর ৭৭৭-৭৭৮ চট্টগ্রাম বইমেলা ২০৬]

কলাবাগানে গেল বানর আর হাতি