চিঠি-সংখ্যা

চিঠি-সংখ্যা

ডা.ফেরদৌস রহমান পলাশ

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ৩:০০ অপরাহ্ণ

চিঠি, যুগে যুগে

চিঠির কথা মনে আছে? হলুদ খাম, দুই টাকা। এই তো বিশ -একুশ বছর আগেও খবর নেবার মাধ্যম ছিল এই চিঠি। রংপুর থেকে ঢাকা চিঠি যেতে সময় লাগত প্রায় ৩/৪ দিন, এর মধ্যে সরকারি ছুটির দিন পড়লে আরও একদিন যোগ হতো। টেলিফোন ছিল হাতে গোনা কয়েকজনের বাসায়। এখন প্রতিমুহূর্ত যোগাযোগ মোবাইল বা ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। সবাই কত কাছের। অথচ আগে কত প্রতীক্ষার ছিল এ চিঠি। খামে কেউ ভরে দিত বকুল ফুল, কেউ বা গোলাপের পাপড়ি। প্রেমিক-প্রেমিকাকে, ভাই-বোনকে, ছেলে-বাবাকে আর সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টাকা চাহিয়া-চিঠি লিখত। দুপুরবেলা হোস্টেলে ছেলে- মেয়েরা অপেক্ষায় থাকত ডাকপিওনের। সে সময় ছিল পত্রমিতালি। একটা হিট সিনেমাও ছিল, হঠাৎ বৃষ্টি। চিঠি নিয়ে রচিত হয়েছে কত গান কবিতা। তেমনি একটা কবিতা, হেলাল হাফিজের-

“এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিও

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিও।

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিও।

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিও, পত্র দিও।”

চিঠি লিখতে ক্লান্তি ছিল না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের । সব মিলিয়ে কয়েক হাজার চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এত বেশি চিঠি আর কোনো লেখক- কবি লিখেছিলেন কি না জানি না। তবে একদিনে সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছিলেন শার্ল বোদলেয়ার৷ তার এসব চিঠি কোনো প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে না, মায়ের কাছে নালিশ করে লেখা হয় এগুলো। চিঠি লিখতে গিয়ে শেষের কয়েকটা চিঠি পোস্ট করার জন্য টাকা না থাকায় বেয়ারিং পোস্ট করেন। সাত নম্বর চিঠি লেখার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সাতদিন শুয়ে থাকেন। 

চিঠি লিখতে চাইলেই যেমন লেখা যায় না, আবার সবাইকে ভালো চিঠি লেখাও হয় না। এ বিষয়ে ইন্দিরা দেবীকে রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারলাম না, “যদি কোনো লেখকের সব চেয়ে ভালো লেখা তার চিঠিতেই দেখা দেয় তা হলে এই বুঝতে হবে যে, যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে তারও একটি চিঠি লেখাবার ক্ষমতা আছে।”

সৈয়দ শামসুল হকের সাথে যখন আনোয়ারা সৈয়দের বিয়ে হয় তখন সৈয়দ হক মোটামুটি পরিচিত সাহিত্য অঙ্গনে। ছোটগল্পের বই ‘তাস’ পেয়েছে বাংলা একাডেমির পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে। অনেকেই মনে করে সৈয়দ হকের সংস্পর্শেই আনোয়ারা ম্যাডামের লেখা শুরু, আসলে তা নয়। আনোয়ারা ম্যাডাম লিখতেন ছেলেবেলা থেকেই, পেয়েছিলেন পুরস্কারও। পরে মেডিকেলে পড়ার ঠ্যালায় লেখালেখি কিছুদিন বন্ধ ছিল। সে সময় তিনি পড়তেন বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস। তাদের পরিচয়, প্রেম কিন্তু বেশ রোমান্টিক। আনোয়ারা ১৯৬০ সালের আগষ্ট মাসের সংখ্যা ‘সচিত্র সন্ধানী’তে পড়েন ছোটগল্প ‘তিন পয়সার জ্যোছনা’, লেখক সৈয়দ শামসুল হক। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে ফেলেন। সিদ্ধান্ত নেন তার বই আরো পড়তে হবে, কিন্তু তার তেমন বই বাজারে পেলেন না। সৈয়দ হক তখন নিয়মিত লিখতেন চিত্রালী পত্রিকায়। সেখান থেকে ঠিকানা জোগাড় করে চিঠি লিখে ফেললেন আগষ্ট মাসের এক তপ্ত দুপুরে। সম্বোধন কী করেছিলেন জানি না তবে বিষয়বস্তু মোটামুটি এরকম-

…..

“আমি মেডিকেলে পড়ি। আপনার লেখা আমার ভালো লেগেছে। সাহিত্যের বই পড়া আমার অভ্যাস,নেশাও বলতে পারেন। নিৎসে, বোদলেয়ার,বুদ্ধদেব বসুর লেখা আমি পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা অতটা পড়া হয় নি তবে পশ্চিমবঙ্গের অনেক লেখকের লেখা পড়েছি এবং এখনো পড়ছি । 

ইতি

আনোয়ারা।

এই চিঠি লেখার দুমাস পর চিঠি এল-

সুচরিতাসু,

আপনার চিঠির উত্তরে একটা চিঠি দিয়েছিলাম। মনে হয় সেটা আপনার হাতে পৌঁছায়নি।সেই জন্য এই দ্বিতীয় চিঠি দিলাম। আপনার চিঠি পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীরা সাহিত্য নিয়ে এত আগ্রহী জানা ছিল না। আপনি সেই ভুল ভাঙালেন।

চিঠির নিচে ক্যালিগ্রাফির মতো একটা স্বাক্ষর, কিন্তু পড়া যায়: সৈয়দ শামসুল হক। পরবর্তীতে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। 

বুদ্ধদেব গুহের চিঠি নিয়ে বিখ্যাত বই ‘অবরোহী’। দীর্ঘকাল পর অযর্মার (জি, এমনই বিদঘুটে নাম) সাথে  ঝুমরি-তিলাইয়া স্টেশনে দেখা হয়ে যায় তার প্রাক্তন ছাত্রী যোজনগন্ধার। তারপর দুজন দুজনকে লিখে চলে পত্র। ঠিক প্রেমপত্র না, অন্যস্বাদের সেতুবন্ধন।  পত্রে প্রকৃতি, ঈশ্বর বিশ্বাস, আর মানুষ। কত বিচিত্র ধরনের যে মানুষ আছে! একটা মানুষ মরে যায় সাথে নিয়ে যায় একটা গোটা জীবন উপন্যাস। পুরা বইটি চিঠির আদান প্রদান। যদিও বুদ্ধদেব গুহ একে ঠিক উপন্যাস বলতে রাজি না তারপরও বহুল নন্দিত এ উপন্যাস পড়লে আপনি অনুভব করবেন প্রেমের গভীরতা আর পাওনা হিসেবে অনেক অনেক বইয়ের রেফারেন্স, কোটেশন, যা বুদ্ধদেবের বইয়ে সচরাচর থাকেই। বইটি উৎসর্গ করেছেন আমাদের দেশের কবি ও সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনকে। এটাও একটা ঘটনা বটে। 

‘একাত্তরের চিঠি’ একটু দুর্লভ চিঠির সংকলন। মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব চিঠি পড়লে চোখে পানি চলে আসে এখনও। 

তবে ব্যতিক্রম বিনয় মজুমদার। চিঠি নিয়ে হতাশ হয়েই কি না তিনি লিখেছিলেন-

“আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে,

তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে,

চিঠি লিখব না।

আমরা একত্রে আছি বইয়ের পাতায়।“

প্রেমের গভীরতা বোঝাতে একসময় নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লেখার কথাও শোনা যেত তবে সে রক্ত মুরগির বলে প্রেমিকার বাতিল করে দেবারও নজির আছে। 

এখন হয়তো পোস্ট অফিসে চিঠি পোস্ট করা হয় না। সরকারি ডাকঘরগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রমে ঝুঁকছে। দাপ্তরিক কিছু কাজে তারা আছে। তবুও চিঠির আদান-প্রদান হয়তো এখনো বন্ধ হয়নি। সুকান্তের সেই বিখ্যাত কবিতা রানার ছুটেছে রানার- হয়তো এযুগে সম্ভব না তবুও চিঠির আদান-প্রদান চলছে, চলবেই। অন্তত এর আবেদনটি অনন্ত। 

চিঠি, যুগে যুগে - ফেরদৌস রহমান পলাশ 

মুগ্ধতা.কম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:৫৪ অপরাহ্ণ

পুত্রকে লেখা ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি

[ভূমিকা: চিঠিটি ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার বাসভবন থেকে

সংগ্রহ করেন অধ্যাপক ও গবেষক শাহজাহান মিয়া। ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বিক্রমপুরের

সন্তান ছিলেন। ভারত ভাগের আগেই চলে যান কলকাতায়। তাঁর বিভিন্ন লেখা কলকাতার জাতীয়

পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন কয়েকটি লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। কচুরিপানা

নিয়ে  তাঁর একটি গবেষণাপত্রও পড়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন তার পরিচয় পাওয়া যায় পুত্রকে লেখা চিঠি থেকে। পুত্র চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও একজন গবেষক এবং সরকারি

কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে

২০০৮ সালে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদকে ভূষিত করে।]

চিত্ত,

বাংলামতে কাল ছিল আমার ৮২-তম জন্মদিন। ৩রা অগ্রহায়ণ, ইংরেজি মতে জন্ম ছিল পরশু

১৮.১১.৬৭। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো চক্ষে আর দেখিতে পারিব না। কয়েক দিনের মধ্যে আমার

চোখের আলো নিভে যাবে। তাই আজ উইল লিখিয়া যাইতেছি।

মৃত্যু কবে আসিবে জানি না। মৃত্যুকে ভয় করি না। ভয় করি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি পর্বকে। এই

পর্বে কত কি যে ঘটতে পারে ভাবতে গিয়ে অশান্তি বোধ করি। কাল থেকে পায়ের পাতা বেশী

রকম ফুলছে। ইহা কি জীবনের শেষ পর্বের সূচনা?

জীবনে কোন খেদ নাই। কোনদিন কাহারো অনিষ্ট করি নাই। জনগণের সেবা করিতে চেষ্টা

করিয়াছি। এখন কিছুই করিতে পারি না। আমার মরাই ভাল। দীর্ঘকাল যদি ভূগি কোন ঘুমের

অসুধ দিয়া আমাকে মারিয়া ফেলিয়ো।

জীবনে অনাড়ম্বর দরিদ্র ছিলাম। মৃত্যুর পর আমার শবে ফুল সাজাইয়া শব খাটে স্থাপন করিয়া

আমার জীবনের আদর্শ নষ্ট করিও না। একখানা সবচেয়ে কম দামের খাটালিতে আমার শব শ্মশানে

নিয়ে যাবে। সম্ভব হইলে বিদ্যুতের চুল্লীতে আমার দেহ ভষ্ম করিবে। মরার উপরে খাড়ার ঘার মত

শ্মশানে চিতার উপর আমার মাথার খুলি বাঁশের আঘাতে ভাঙ্গিয়া বর্বরতার পরিচয় দিও না।

মনের বাইরে স্বর্গ নাই। আমাকে স্বর্গে পাঠইবার জন্য কোন মন্ত্র পড়িও না। আমার শ্রাদ্ধ করিও

না। তোমার মন খুশীর জন্য সত্য দরিদ্রকে সাহায্য করিতে পার। ব্রহ্মময় জগতে আমি বুদবুদ মাত্র।

মৃত্যুর পর আমি ব্রহ্মে মিশিয়া যাইব। মৃত হিন্দুকে স্বর্গে পাঠাইবার জন্য ব্রাহ্মণ ভোজন করান

হয়। আমি স্বর্গ মানি না। সুতরাং ব্রাহ্মণ ভোজন অনাবশ্যক। আমার মৃত্যুতে যদি আনন্দ

প্রকাশের জন্য ভোজ দিতে চাও আমি কেন তাতে বাধা দিব?

আমার তিনটি বীমা আছে। মৃত্যুর পর তাহা হইতে আনুকে দিবে পাঁচশত টাকা। তাহার

বিবাহে অন্য মেয়েদের মত গয়না ও যৌতুক দিতে পারি নাই।

আজ আমার নাতিনী এগার জন আর নাতি সাত জন। বাকি টাকা হইতে প্রত্যেক মেয়েকে দিবে

পঞ্চাশ টাকা করিয়া। নাতনীদের প্রত্যেককে দিবে পঁচিশ টাকা করিয়া। আর যে নাতিরা চাকরি

করে না তাদেরও পঁচিশ টাকা করিয়া দিবে। হেন ও রাধারমণকে কিছু দিও।

ইতি

ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়

২০/১১/৬৭

পুত্রকে লেখা ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি

মুগ্ধতা.কম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:৫৪ অপরাহ্ণ

আমার যত চিঠি

কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ অসুস্থ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কিছু দিন শয্যাশায়ী ছিলেন, সেই সময় আমার ডায়েরিতে তাঁর ছন্দে লেখা একটি চিঠি।

নাট্যকার এমদাদুল হক ফারুককে সভাপতি আর আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মেডিকেলের কিছু সংখ্যক নাট্যানুরাগীকে নিয়ে গঠন করা হয় ‘সৌখিন শিল্পী গোষ্ঠী’। নাট্যকার এমদাদুল হক ফারুকের রচনা ও নির্দেশনায় রংপুর টাউন হলে মঞ্চস্থ হয় এই দলের নাটক “আর নয় বিগ্রহ”। সেই নাট্যানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আশির্বাণী পাঠ করেন বর্ষীয়ান ছান্দসিক কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ।

রংপুরের একজন স্বনামধন্য কবি, ‘কবিসভা’র প্রতিষ্ঠাতা, ত্রৈমাসিক ‘নতুন সাহিত্য’- এর সম্পাদক মহফিল হকের উপদেশবাণী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের একজন কর্মকর্তা, উদার মনের নিরহংকার গুণী ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সাদা মনের মানুষ।

কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ-এঁর আরেকটি আশীর্বাদ বাণী।

সৈয়দপুর থেকে কবি আমিরুজ্জামানের পাঠানো চিঠি।

ভাওয়াইয়া শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগঠক ও সংগীত পরিচালক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের চিঠি।

কবি গীতিকার, প্রকৌশলী আলহাজ খন্দকার মো.সাইদুর রহমান (প্রয়াত) -এঁর চিঠি ।

আমার স্নেহাস্পদ ভাতিজা সাংবাদিক মোতাহারুল ইসলাম দুলু ঢাকার জাতীয় দৈনিক প্রথমে দৈনিক আজাদ, দৈনিক খবর, মাসিক ছায়াছন্দ, মাসিক চিত্র বাংলায় আগ্রহ সহকারে আমার অপক্ক হাতের লেখা ভুল ভ্রান্তি সংশোধন করে ছেপে দিত। সে লৌকিক পৃথিবীতে নেই, পরোলোকের গুলিস্তায়। আল্লাহ যেন ওপারে তাকে ভালো রাখেন। আমিন।

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে কবি মোফাজ্জল হোসেন রনী দৈনিক দাবানলে তাঁর লেখা ছাপানোর জন্য সাহিত্য সম্পাদকের কাছে একটি অতীব পরিচ্ছন্ন চিঠি।

চিঠিটি নওগাঁর আত্রাই থেকে লেখা। চিঠির প্রেরক আমার ভাগ্নে, বাংলাদেশ বেতার রংপুরের একজন ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী। আমার অনেক ভাওয়াইয়া গেয়েছে, পরবর্তীতে নজরুল সংগীতের শিল্পী হয়। বর্তমানে রাজশাহী বেতারে। ব্যক্তিগত জীবনে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

চিঠি খানি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জানকী বল্লভ মহন্তের। দৈনিক দাবানলে এক সময় নিয়মিত ফিচার লিখতেন। তার পাশাপাশি মাসিক সমাজ দর্পনে লেখা অব্যাহত ছিল। তাঁর বিদেহী আমার শান্তি কামনা করছি ।

প্রতি শুত্রুবার তারাগঞ্জ থেকে অভিযাত্রিকে আসতেন কবি রেজাউল করিম। তিনি চাকরি করতেন পুলিশ বাহিনীতে। একজন সরল নম্র ভদ্র সাদা মনের মানুষ। এখন তিনি কোথায় আছেন জানি না।

একজন গুণী গীতিকার, শিল্পী, সংগঠক ও অভিনেতা এমাদউদ্দিন আহমেদ। তাঁর দীর্ঘায়ু আর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ বেতারের একজন স্টাফ আর্টিস্ট (বাঁশী) ও সুরকার। আমার অনেক আধুনিক ও ছড়া গানের সুর করেছেন। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

আমার যত চিঠি

মাসুম মোরশেদ

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:০৭ অপরাহ্ণ

আকাশের ঠিকানায় দুটি চিঠি

১.

সখী,

পুরনো বই ঘাটতে তোমাকে লেখা অনেক পুরনো একটা চিঠি পেলাম। যেটা আর তোমাকে দেয়া হয়নি সেসময়। বইয়ের ভিতর রেখেছিলাম। হয়ত কোন কারণে বইটি আর পড়া হয়নি। তাই সেখানে থেকে গেছে। বুকসেল্ফ ঝাড়তে ফসকে একটা বই পড়ে গিয়েছিল। চিঠিটি সেখানে ছিল। মেলতেই কত কী মনে পড়ল। সেটি রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম। কেঁদে কেঁদে লিখেছিলাম বেশ বুঝতে পারছি। সে সময় চিঠিটা তোমার হাতে পড়েনি। সেটাই ভাল হয়েছে। পড়ছি আর আনমনে কত কী ভাবছি। কত কী মনে পড়ছে! পোড়া স্মৃতি সব। জানি না কেমন আছো? নিশ্চয় ভাল আছো।

এই দেখো, আকাশটা ডাকছে। আবারও চোখ দু’টো ভিজছে। আজও সেদিনের মতো অঝোরে আকাশটা ভেঙ্গে ঝড়ুক। আমার চোখ বৃষ্টির আড়ালেই থাকুক।

তোমারও কি বৃষ্টি চাই? না বোধহয়।

ভালো থাকো।

ইতি

সুজন।

২.

সুহৃদ,

তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে মনোকষ্ট আমিও পেয়েছি। বুকে আমারও চিনচিনে ব্যথা। এ ব্যথা অশরীরি। জানি, তোমাকে ফিরিয়ে দেয়া এ আমার অযথা বাড়াবাড়ি। কিন্তু এতটুকু বাড়াবাড়ি আমার সাজে। এ আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে।

তুমি উজার করে কী কী দিতে, আমি জানি।তুমি দিয়ে সুখ খোঁজ, আমি না নিয়ে খুঁজি।বরং সে-ই ভাল না দিয়ে-না নিয়ে যতটা ভাল থাকা যায়। সামান্য দেয়া-নেয়ার হিসেব কষে এত আলো, এত রঙ কেন ফিকে করবে?

দেখো, তোমার চারপাশ বসন্তের আবহ! সবকিছু রঙিন। সর্বত্র কলি, মুকুল, ফুল। ক’দিন পর সব আরও রাঙা হবে। ম ম করবে! কী সব মুখর কলতান! আ হা, কী সব স্বপ্ন রচবে তুমি নতুন সাথী নিয়ে!

তোমার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক-এই শুভ কামনা নিরন্তর।

ভাল থাকো।

ইতি

মনপোড়া৷

আকাশের ঠিকানায় দুটি চিঠি

শিস খন্দকার

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:০৬ অপরাহ্ণ

চারু সমীপেষু 

চারু,

শরীরটা আজ কিছুটা দুর্বল লাগছে। উদ্বিগ্নচিত্তে ভাবছো—’কেন? কী হলো আবার!’ উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। জানো নারীদের এই উদ্বিগ্ন হওয়া স্বভাবটা আমার ভীষণ অসহ্য। কিন্তু তোমার চেহারার উদ্বিগ্ন দৃশ্য সাধারণ নারীদের চেহারার উদ্বিগ্ন দৃশ্য হতে ভিন্ন, যা আমার প্রিয়! ভাবছো—’এ কেমন ভালোবাসা? প্রিয় মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারা যার প্রিয়, সে কী করে ভালোবাসতে পারে!’ তোমার এমন ভাবনা স্বাভাবিক, কিন্তু ভুল। আমি খুব ভালো করেই অবগত, তুমি আমার সমুখে সবচেয়ে কম উপস্থাপন করো আমার ভালোলাগার বিষয়াদি। যেমন—তোমার মধ্যরাতের নিদ্রারত দেহ, যা আজও দেখা হয়নি। অথচ এ দৃশ্যও আমার ভীষণ প্রিয়। 

স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানি ভর্তি একট গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দু’চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পান করো। অতঃপর দুচোখ খুলে উপরে চেয়ে ঐ নিঃশ্বাসেই বল—’তোমাকেই ভালোবাসি’। দেখবে ভালোবাসার একটি অন্য অর্থ খুঁজে পাবে তোমার হৃৎপিণ্ড। যে অর্থটি পৃথিবীর কোনো অভিধানে নেই! তোমার বুক শেলফে কি কোনো অভিধান আছে? নাকি বুক শেলফই নেই? 

গত বর্ষায় যে মেহগনি বৃক্ষটি লাগিয়েছিলাম, সেটি বেড়ে উঠছে। দেখবে বেড়ে উঠতে উঠতে একদিন বৃক্ষটি কাঠ হয়ে গেছে। লালচে কিংবা কালচে সার কাঠ। কোনও এক বসন্তে কাঠগুলো উপহার স্বরূপ তোমাকে পাঠাবো; সেদিন তোমার জন্মদিন হবে! জানো, বসন্তে যাদের জন্ম, তারা আমার প্রিয় মানুষ হয়। যেমন—তুমি, তুমি এবং তুমি। মনে রাখবে, ‘তুমি’ ব্যতীত বসন্তে কেউ জন্মেনি! শুনেছি, প্রিয় মানুষকে কাঠ উপহার দিলে তা বুক শেলফ হয়ে যায়। দাম্পত্য কোলাহলে যদি কখনও দু-একটি সন্তান দিতে পারি, ঐ বুক শেলফে রেখে দিও তাদের। দেখবে, কোনও একদিন অভিধান হয়ে তারা তোমায় ভালোবাসার অর্থ শেখাবে! 

‘রক্ত’ শব্দটি শুনলে শরীর কেমন শিউরে ওঠে আমার। জানি, তোমারও। কিন্তু যখন তুমি দেখবে, ‘রক্ত’—নায়িকা পরীমণি অভিনীত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। যেখানে রক্তের চেয়ে নায়িকার স্তনের দৃশ্য অধিকতর গুরুত্ববহ। তখন তুমি শিউরে উঠবে না। আমিও উঠি না। 

গত বিকেলে একজন রূপবতী তরুণীর মায়ের একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলের স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। প্রসবকালে তার দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়েছিল। সেই রূপবতী তরুণী দিয়েছিলেন এক ব্যাগ। একটি বিয়োগাত্মক তথ্য, তরুণী তার মামাতো ভাইয়ের প্রাক্তন প্রেমিকা ছিলো। বলা চলে, তরুণী তার শত্রুকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু আরও এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। কে দিবেন? উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, অবশিষ্ট এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলাম আমি এবং ঐ রূপবতী তরুণীর জন্ম বসন্তে নয়। 

বৃষ্টি নামলো। শেষ বিকেলের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে খোলা ছাদে ফেলে আসা ডায়েরির অমীমাংসিত ভেজা কবিতাটির যতটুকু মুগ্ধতা ছিলো, দিলেম তোমাকে এবেলা। কেমন আছো? সমূহ দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ভালো থেকো। তুমি ভালো থাকলেই ভালো থাকি আমি। জানো—বৃষ্টি, কবিতা এবং তুমি—আমার তিনটি ভালোলাগা পাখির নাম। যারা প্রতিবারেই আমার কাছে আসে নবরূপে বিস্ময়ের বাতাবরণ নিয়ে! ‘বাতাবরণ’ শব্দের অর্থ জানো? ফিরতি পত্রে উত্তর দিও। শরীরটা দুর্বল লাগছে। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাবো।

—অরুণ

চারু সমীপেষু

প্রমথ রায়

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:০৬ অপরাহ্ণ

আমার চিঠিবেলা

চিঠি যোগাযোগের সুপ্রাচীন মাধ্যম। চিঠি সম্পর্কে মূলতঃ আমি জানতে পারি হাইস্কুলে পড়ার সময়। বাংলা ২য় পত্রের সিলেবাসে চিঠি পড়তে হতো। আমি হলুদ খামের ভিতরে প্রথম চিঠি পাঠাই হাইস্কুলে থাকার সময়ে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় কুইজের উত্তর। সেই পত্রিকায় সঠিক উত্তরদাতাদের নাম ঠিকানা ছাপা হতো। তাদের মধ্যে সুন্দর নামের মেয়েদের সাথে পত্রমিতালি করার জন্য চিঠি লিখতাম। কিন্তু কারো উত্তর আসেনি। আবার এই পত্রিকা থেকে আমার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের একটি গারো মেয়ে পত্রমিতালি করার জন্য আমাকে চিঠি লিখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি আমার বয়সে বড় হওয়ায় আমি দিদি সম্বোধন করে চিঠি লিখি। তাঁর সাথে ভাইবোন হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর চিঠিতে যোগাযোগ ছিলো। ঢাকায় একবার দেখাও হয়েছিলো। পরে মোবাইল আসার পরে কিছুদিন মোবাইলে যোগাযোগ ছিলো। এখন ফেসবুক বন্ধুতালিকায় থাকলেও যোগাযোগ হয় না। তার প্রথম ও দ্বিতীয় চিঠির ছবি নিম্ন দেয়া হলো।

২.

আমার সবচেয়ে বেশি চিঠির যোগাযোগ হতো আমার ছোটো খালা অরিতা মাসির সাথে। আমার মাসি আর আমি প্রায় কাছাকাছি বয়সের। আমার নানা নানী তাঁর জন্মানোর দুবছরের মধ্যে মারা যান। পরে আমাদের সংসারে আসে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারনে তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। পরে খ্রীস্টান মিশনারীরা তাকে নিয়ে গিয়ে সৈয়দপুর মিশনে রাখেন। এ খবর আমরা প্রায় দশ বছর পর পাই এবং তার সাথে দেখা করতে যাই। পরে সে নাটোরের একটি মিশন বোর্ডিং এ যায়। সেখানে আর দেখা করতে যাওয়া সম্ভব হয় না। পরে চিঠিতে যোগাযোগ হতো। সেখান থেকে তার আমার মাকে লেখা একটি চিঠি দেয়া হলো।

৩.

সে ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করে ২০০২ সালে যশোরে একটি খ্রিস্টান মিশনারী হাসপাতালে নার্সিং পড়তে যায়। আমি ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকায় নটরডেম কলেজে পড়তে যাই। নটরডেম কলেজের ছাত্রাবাস মার্টিন হলে আমি থাকতাম। এখানে আমার সবচেয়ে বেশি চিঠি আসতো। সবচেয়ে চিঠি পেতাম আমার বাবা-মা আর ছোট খালার কাছ থেকে। আমার বাবা-মা অবশ্য চিঠি লিখতে পারতো না। অন্যের কাছ থেকে লিখে নিতো। বেশিরভাগ চিঠি সমেশ দাদু (প্রতিবেশি) লিখে দিতো। আমার ঐ কলমি দিদিও লিখতো। আমার হাইস্কুল বন্ধুদের মধ্যে আশিদুল আর লালবাবু নিয়মিত লিখতো। লালবাবুর চিঠির খামে একবার প্রদীপ লিখেছিল আর দীপক কলেজে ভর্তির তথ্য চেয়ে লিখেছিলো।

৪.

২০০৪ সালে বন্যাকালীন বাবা মায়ের পাঠানো চিঠি।

৫.

মার্টিন হলে পাঠানো ছোট খালার চিঠি। চিঠির খামে প্রায় টাকা পাঠাতো সেটাও এ চিঠিতে লেখা আছে।

৬.

মার্টিন হলে দিদির পাঠানো চিঠি। একই খামে তার এলাকার এক বড় ভাই থাকে তাঁর চিঠিও ছিলো। পরে বড় ভাই আমাকে বেশ স্নেহ করতো।

৭.

মার্টিন হলে পাঠানো হাইস্কুল বন্ধু লালবাবু চিঠি

৮.

মার্টিন হলে পাঠানো হাইস্কুল বন্ধু আশিদুলের চিঠি

৯.

মার্টিন হলে থাকতে আমি এদের সকলের সাথে চিঠিতে যোগাযোগ করতাম। এদের কারো চিঠি সংরক্ষণ করতে পারিনি। মা বাবাকে যেসব চিঠি লিখতাম সেগুলো তাঁরা সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। এখানে থাকতেও আরও অনেক মেয়েকে পত্রমিতালী করার জন্য লিখতাম কিন্তু কারও উত্তর পাইনি। একবার ছুটিতে এসে এক মেয়েকে খুব পছন্দ হলো। ভাবও হয়েছিলো। কিন্তু মনের কথা বলতে পারিনি। আমার হলের এক বন্ধুর প্রেমিকা দিনাজপুরের এক ছাত্রী হোস্টেলে থাকতো। সেও সেখানে থাকতো। তাকে শুধু একটি বাক্য লিখলাম। ‘তোমার মধুর মুখের হাসি আমাকে মুগ্ধ করেছে।’ ইতি- পি। সে পি দিয়ে আমাকেই ধারণা করেছিলো এবং আমার একজন ক্লাসমেটকে বলেছিলো আমাকে জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু আমি সত্য স্বীকার করতে সাহস পাইনি।

১০.

মার্টিন হল থেকে আমার বাবা মাকে লেখা চিঠি। এসময় বন্যার কারণে আমাদের কলেজে কোমর পানি জমেছিলো।

১১.

ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর দুজন কলেজ বন্ধু যোগাযোগ করতো। একজন বিনয় টুডু। আমি হলে একবার মারাত্মক অসুস্থ হয়েছিলাম। বিনয় আমাকে অনেক সেবা শুশ্রূষা করেছিলো। অন্যজন সুবাস মারান্ডী। আমাদের পর পর রোল ছিলো। প্রতিযোগিতা করে পড়তাম। সে আমাকে বেয়াই বলে ডাকতো। দুজনের বাড়ী রাজশাহী। পরবর্তীতে দুজনের সাথে দেখা হয়। বিনয়ের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।

১২.

কলেজ বন্ধু বিনয়ের পাঠানো চিঠি।

১৩.

কলেজ বন্ধু সুবাসের পাঠানো চিঠি।

১৪.

তারপর ২০০৬ সালে আর একটি মেয়ে পত্রমিতালি করার জন্য চিঠি লিখে। সে ঠিকানা পেয়েছে তাঁর এক বান্ধবীর কাছ থেকে। তার বান্ধবী পেয়েছে আমার এক মার্টিন হল বন্ধুর ডাইরি থেকে। শুনেছি পরে তার বান্ধবী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ মেয়েটির চিঠির উত্তর দেই এবং প্রায় এক বছর তার চিঠির অপেক্ষা করি। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। পরে আমি মোবাইল নাম্বারসহ সর্বশেষ চিঠি লিখি ২০০৭ সালে। পরে একদিন সে কল দেয়। পরে আরও বেশ কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদান হয়। তবে ডাকবাক্সে নয়, বরং কুরিয়ার সার্ভিসে।

.

তার পাঠানো প্রথম চিঠি। সেসময় জিৎ এর ‘সাথী’ চলচ্চিত্রটি বেশ জনপ্রিয় ছিলো। সে চলচ্চিত্রের গান, ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও’ চিঠিতে লেখা আছে।

১৫.

একবার ঢাকায় প্রোগ্রাম করতে গিয়ে রূপা নামে একটি মেয়েকে আমার ভালো লেগেছিলো। পরে মেয়েটিকে চিঠি দেই কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।

অনেকদিন পর একটি মেয়ের উত্তর পেয়েছিলাম। এসব চিঠি তার জন্য কতটা ক্ষতিকর বা তার পরিবার এসব পছন্দ করে না, সেসব লিখে উত্তর দেয়। তারপর থেকে আমি আর কোনো মেয়েকে চিঠি লিখিনি। সেই মেয়েটির চিঠি নিম্নে দেয়া হলো।

১৬.

অন্যের চিঠি নিয়ে আমার মজার ৩টি অভিজ্ঞতা রয়েছে।

১। মার্টিন হলে থাকতে আমার এক বন্ধু তার প্রেমিকাকে ৭০০ পৃষ্টার একটি চিঠি লিখে।

২। মার্টিন হলে থাকতে আমি একটি নাইট স্কুলে পড়াতাম। সেখা

আমার চিঠিবেলা

ফজলে রাব্বী

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৯ অপরাহ্ণ

দূরপ্রাচ্যের প্রেমিকাকে

প্রিয় দূর প্রাচ্যের প্রেমিকা,

জানি প্রতিত্তরে কোনো চিঠি আসবে না, তাই জিজ্ঞেস করছি না কেমন আছেন। আর জানতে না চেয়ে কোন মুখেই বা বলি আমি কেমন আছি।

কখনো যাব না ভেবেও গত সপ্তাহে আপনাদের গলিতে গিয়েছিলাম দীর্ঘদিন পর। হাজারী-নাগের বইয়ের পৃষ্ঠায় আর কখনো শিউলি এক্সপোর্ট করব না যে ব্যালকনিতে, সে ব্যালকনি ধ্বংস হয়ে যাক। তাতে আমার কী! এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল অথচ পুরোনো ব্যালকনিটা দেখতে না পেরে ক্যান যে  মন খারাপ লাগল বুঝলাম না। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে এভাবে ভেঙে ফেলা অবশ্যই পাপ। আমি এর  তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। চাইলে আপনিও আমার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করতে পারেন। কোনো বৈশাখের ঝড়ে স্কাই ভিউয়ের লিচু গাছটা উপড়ে গেলে হয়তো এই অস্বাভাবিক দুঃখবোধটা আবার কাজ করতে পারে। সে করুক!

এ তো গেল আপনার এলাকার খবর।

শিউলি আর বকুলের তালিকায় আমি আরও একটা ফুল যোগ করেছি।

না, কাঠগোলাপ না।

হাসনাহেনা ! ঠিক কী কারণে জানি না। উঠোনে চার পাঁচটা হাসনাহেনার ডাল পুঁতেছিলাম দুবছর হলো। এবারই প্রথম ঘামাচির মতো থুকথুক করে এত ফুল ফুটেছে। হাসনাহেনার কী যে দারুণ ঘ্রাণ! আর হবেই না বা কেন! হাসনাহেনা শব্দটি এসেছে জাপানি ভাষার শব্দ থেকে।

জাপান?

হ্যাঁ দূর প্রাচ্যের দেশ।

দূঊঊঊর প্রাচ্য!

সিক্সটি ওয়ান মিউচু্য়্যালে থেকেও এতটা দূরত্ব আপনার ‘জাপানি’ নামকে সার্থক করেছে।

ফিফটি সিক্সয়ের পর অনেকদিন দেখতে পারিনি কতদূর এগোল! এখন পাচ্ছি। এ অবশ্য আপনারই করুণা। সে কারণে একটা ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।

এত্তবড় থ্যাঙ্কিউউ…

সে যাই হোক, একটা চিঠি লেখার সুযোগ পেয়ে বেশি বেশিই বলে ফেলছি হয়তো। এবারে শেষ করা উচিত।

ভালো থাকতে বললেই যদি ভালো থাকা যেত তাহলে অবশ্যই বলতাম ভালো থাকতে।

ইতি

আপনার প্রাক্তন প্রেমিক

দূরপ্রাচ্যের প্রেমিকাকে

মুগ্ধতা.কম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৮ অপরাহ্ণ

কাজল ভাইয়ের চিঠি

সানু দুলাভাইয়ের প্রিয় বন্ধু কাজল ভাই আজ পৃথিবীতে নেই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স পাশ করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসেবে নরসিংদীতে জয়েন করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে স্বপ্না আপার বিয়ের দু’দিন আগেই তিনি ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিয়ে বাড়ি সাজাতে এসেছিলেন। সৃজনশীল এই মানুষটি অনেক সুন্দর কবিতা লিখতেন। তার সাথে আমার অনেক চিঠি আদান-প্রদান হতো কবিতার মাধ্যমে। আমি তখন রংপুর, কারমাইকেল কলেজে গণিত নিয়ে অনার্সে পড়ি। আর্মি অফিসার হওয়ার জন্য ৪৭ তম বি এম এ পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তিনি এটি জানতে পারেন। সেই প্রেক্ষিতে এই চিঠিখানা লিখেছিলেন।

কাজল ভাইয়ের চিঠি

কামরুন নাহার রেনু

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৮ অপরাহ্ণ

ভালো থেকো মৃন্ময় 

মৃন্ময়,

বৈরি প্রকৃতির মাঝে তোমায় ঘিরে লিখতে যেয়ে থেমে যাচ্ছে প্রিয় শব্দের উল্লাস। জানি, ভালো নেই তুমি। আমাদের চেনা বিকেলের স্বপ্ন কাতর দিনগুলো ডায়রির পাতায় পায়চারী করছে, অথচ তুমি আমি এখন ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা, ভাবতে পারো, বুকের ভেতর জিইয়ে রাখা স্বপ্নগুলো কেমন উপহাস করছে আমাদের! অথচ, এই আমরা পঞ্জিকায় দিনগুনে কত কাব্য লিখে গেছি ভৈরবী সকালের গাঁয়। কত বিকেল ছুঁয়ে গেছে আমাদের স্বপ্নীল চোখের আল বেয়ে, যেখানে আমাদের আগামী দিনের সমস্ত হিসেব লেখা, কিছু বেহিসেবি অনুরাগে কতবার ফিরে গেছি আত্ম নির্বাসনে! আবার ফিরে এসেছি তোমার আহ্লাদী চোখের নির্মোহ আহবানে, আচ্ছা মৃন্ময় যদি এমন হয়, —হারিয়ে গেলাম আমি, বুকের বাম অলিন্দে জমিয়ে রাখা কথাগুলো ভেসে গেলো বাতাসে, ডায়েরির পাতায় জন্মাল না কোনো নতুন স্বপ্নের বীজ। ভোরের শীতল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে চলে গেলাম আমি তোমায় ছেড়ে, আমার রেখে যাওয়া দোলনচাঁপায় তোমার দীর্ঘশ্বাস মেখে রেখে দিও বিকেলের বেলকনিতে।. ..

আর যদি এ যাত্রায় বেঁচে যাই আমরা, সত্যি বলছি— ভালোবাসার গভীরতা তোমায় ঠিক বুঝিয়ে দেবো।

আমি ভালো নেই মৃন্ময়। তুমি ভালো থেকো—

ইতি
তোমার. ..

ভালো থেকো মৃন্ময়

মুগ্ধতা.কম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৮ অপরাহ্ণ

শাশুড়িকে লেখা চিঠি 

আম্মা,

আমি আপনাদের ভালোবেসেছি। জানি,এ কথাটা আপনার এবং আপনার সন্তানদের পক্ষে বিশ্বাস করা অসম্ভব। কারণ আপনার শৈশব।

শৈশব সৎ মা আর সৎ ভাইবোনের সংসারের পরিবেশ আপনাকে ভালোবাসা, বিশ্বাস, শেয়ারিং এসব শেখায় নি।

বরং ঈর্ষা, ভাগ বাটোয়ারা, হাম হাম, তুম তুম, ম্যা ম্যা তু তু,শিখিয়েছে।

বাবাকে দেখেছেন আপনার ভাগের ভালোবাসা অন্যকে দিতে। দুই মাকে দেখেছেন কি করে স্বামীকে নিজের কাছে ছলে বলে কৌশলে রাখতে হয় তাই করতে।

এইসব পলিটিক্স থেকে আপনি বের হতে পারেননি আজো।

মা,আপনিতো শিক্ষিত মানুষ। আপনি শিক্ষক। কী করে এই শিক্ষা নিজ সন্তানকে দিলেন?

কেন শিক্ষার আলো দিয়ে নিজের ভেতরের শৈশবের সেই ভাগিয়ারী স্বার্থপরতার অন্ধকার দূর করতে পারলেন না?

কেন মা,

আপনি শুধু আপনার সন্তানের মা হলেন?

কেন শাশুড়িও হতে পারলেন না?

কেন সব সময় সতীন টাইপ মনোভাব নিয়ে বেঁচে আছেন? আম্মা,আজ হয়ত একের পর এক সংসার ভেঙ্গে ছেলেকে নিজের কাছে রেখে আনন্দ পাচ্ছেন!নিজেকে সুখী ভাবছেন,জয়ী মনে করছেন। আসলে কি আপনি জয়ী মা?

আপনার ছেলেটা আজ কিছু করেনা।আপনি করতে দেন না।

আরেক ছেলে আপনার চালাকিটা স্বভাবে পেয়েছে।কিংবা আপনার স্বার্থপরতা রপ্ত করে নিজের ভালো থাকাটা নিশ্চিত করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আপনার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। তাই তার সংসার অক্ষত আজো। আপনি ভাঙতে পারেননি।

আমি ওর বুদ্ধির তারিফ করি।

মা, কিন্তু আপনার এই বোকা ছেলেটা যে অন্যের উপার্জনের টাকার দয়ায় জীবন নির্বাহ করছে,ননিজের যোগ্যতা থাকার পর কর্মহীন হচ্ছে বারবার। শুধু আপনার কারণে! আপনার কি একটি বারও খারাপ লাগে না?

জানেন মা, ওর বন্ধুমহলে ও যখন বলে -দোস্ত, আমার জন্য একটা কাজ দেখ না!

কিংবা আত্মীয়দের কাছে, চাচা মামাদের কাছে বা চাচাতো মামাতো ভাইদের কাছে বলে চাকরির সুপারিশের কথা আমার লজ্জা লাগে, আমি ছোটো হয়ে যাই।

আপনি কেন হন না মা?

নিজ স্বার্থে কেন ছেলেটার জীবন নষ্ট করছেন?

কেন আপনি আমার কাছ থেকে আমার স্বামীকে আলাদা করেছেন? কেন তার সন্তানকে পিতার কাছ থেকে আলাদা করেছেন?

কেন দ্বিতীয় বউটিকেও আপনি সংসার করতে দিলেন না? এভাবে আর কতজনের ঘর ভাঙবেন। আপনার বাবার করা অপরাধের সাজা আপনি কাকে দিচ্ছেন? 

কেউ আপনার মায়ের স্বামী কেড়েছে বলে কি আপনি ছেলের বউয়ের স্বামী কেড়ে নেবেন?

কেউ আপনার বাবার ভাগ কেড়েছে বলে কি আপনি আপনার নাতি নাতনির বাবাকে আলাদা করবেন? 

আম্মা,নিজের বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন যে,আপনার ছেলের বউদের অপরাধ কী? আমার অপরাধ কী? কোনো দিন আমি আপনাকে কিছু বলেছি?

আম্মা, নিজের শৈশবের প্রতিশোধ প্রতিহিংসায় আপনি শুধু পরের মেয়েদেরকে নয়, নিজের সন্তানকেও পুড়ছেন। তার জীবনটাও নষ্ট করছেন!

আজ এত বছর পর এই বয়সে এসে খুব বেশি কি করবে আপনার সন্তান? অন্য সহোদরের  কেয়ারটেকার হয়ে জীবন কাটাবে? মা হয়ে এতটা বৈষম্য কি করে করলেন?আপনার এই মা ভক্ত ছেলে সেটা না বুঝলেও মৃত্যুর পর একদিন এর জবাব কিন্তু উপরওয়ালা চাইবেন?

সন্তানের কাছ থেকে, স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীকে আলাদা করার দায় থেকে বিধাতাও মুক্তি দেবেন না।

আম্মা, হাদিস কোরানের কথা বলে আমি ব্যর্থ হয়েছি।

বড় মসজিদের হুজুরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম, আপনি, আপনার ছেলে আল্লাহ, হুজুর হাদিস কিছুইতো মানেন না।

লোক দেখানো মাঝেমধ্যে নামাজ পড়েন।

আমি খুব কষ্ট পাই যখন জোর করে ঠেলেও আপনার ছেলেকে জুমার নামাজে মসজিদে পাঠাতে পারিনা।

আম্মা, মা না হোক, স্বাভাবিক শাশুড়ি হউন। ছেলের বউয়ের সাথে ঝগড়া করুন, গালি দিন। কিন্তু সংসার ভাঙার এই খেলা থেকে বেড়িয়ে আসুন।

মা,আপনার ছেলেটাকে অন্য ছেলেটার কাছে, আত্মীয় স্বজনের কাছে,বন্ধু বান্ধবের কাছে আর ছোটো করবেন না।তার মাতৃভক্তির সুযোগ নেবেন না।

ওর কি সংসার করতে মন চায় না? না হলে কি বারবার ভালোবাসতো? ভালোবেসে বিয়ে করতো? ব্যভিচারের মতো গোনাহর দিকে মা হয়ে ছেলেকে ঠেলে দেওয়ার গোনাহ করতে পারেন না।

জেদ, হিংসা,অহংকার মায়েদের জন্য না। মা তো ত্যাগ করার জন্য। আপনি কি কিছু ত্যাগ করেছেন এই ছেলেটার জন্য? বরং সে ত্যাগ করেছে আপনার জন্য!এখনো করেই চলেছে!

মনে আছে আম্মা,আমি সাজলে আপনার ছেলে খুশি হয়, কিন্তু আপনি অখুশি হন। তাই আমার সাজ আপনার ছেলে আর পছন্দ করেনা।

সেদিন ওর জন্মদিনে, আপনি কি বাগড়াটাই না দিলেন। স্ত্রী চেয়ে আপনার ছেলের জীবনে কি অন্য আত্মীয়া মহিলার হক বেশি?

আবার অসুস্থ আমাকে নিতে আসতে না দিয়ে আপনি তাকে আপনার ভাগনা বউয়ের ডেলিভারিতে পাঠালেন। অথচ আপনার ভাগনাসহ সবাই ছিল সেখানে।

তারপর প্রতি ঈদে আপনি আমার কাছ থেকে ওকে আলাদা করতেন। আমাদের একান্ত সময়গুলিতে আপনি ঢুকে পরতেন মাঝখানে। 

এসব কি একজন মায়ের কাজ?

আম্মা, আপনার ছেলেকে বলেছিলাম, আপনার কাউন্সিলিং করাতে। আপনার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু, সে তো আমার কথা শোনার মানুষ না। উল্টো আমাকেই উত্তম মধ্যম দিয়ে দিলো। এতে অবশ্য আপনি বেশ খুশি।

মা,

আপনি একদিন তো চলে যাবেন পৃথিবী ছেড়ে, এটা মানেন তো? তাই যদি হয়, তবে আপনার চলে যাবার পর আপনার অলস ছেলেটাকে কে দেখে রাখবে?কে ভালোবাসবে?

সবাই ভালোবেসে আসে না। কেউ কেউ প্রয়োজনে বা বিপদে পড়ে আসে। তারা ভালোবাসে না।

আপনি শিক্ষিত মানুষ, এবারে অন্তত বুঝুন। আপনি যে বুঝবেন না, আমি তাও জানি।

ভালো থাকবেন মা। আমার স্বামীকে ভালো রাখবেন।আমি অনেক ভালোবাসি তাকে।

ছোটো মুখে আজ একটা বড় কথা বলি মা। আপনার ছেলেকে আমি বেশি ভালোবাসি। কখনো প্রাকটিকাল পরীক্ষা হলে আপনি হেরে যাবেন।

সন্তান মরলে শোক চিহ্ন থাকে না। আলাদা কোনো নাম হয় না। স্বামী মরলে তার নাম হয় বিধবা। আপনি জানেন। আর শোক চিহ্ন সাদা কাপড়। যদিও আপনি সাদা কাপড় পরেন না।

আমি হলে পরতাম। সাদা কাপড়।

স্বামীর দাম নিশ্চই সন্তানের চেয়ে বেশি।

এখনো জেদ,অহংকার বা ইগো আছে আপনার,এসব নিয়েই যদি বাঁচেন,ছেলের প্রতি ভালোবাসা যদি আপনার স্বার্থপরতা না হয়, যদি সাহস থাকে তবে ভালোবাসার পরিক্ষা দিন আমার সাথে।

আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করুক, বুঝবার তৌফিক দান করুক।আমিন।

ইতি 

আপনার ছেলের তৃতীয় বউ।

শাশুড়িকে লেখা চিঠি

মুগ্ধতা.কম

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৭ অপরাহ্ণ

চিঠি

প্রিয় কবিসাব,

প্রথমেই সালাম ও শরতের শিউলির শুভেচ্ছা নিবেদন করলাম। 

অর্ধ- ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে আমি আবারও আপনার কদমে হাজির! এতে হয়তো আপনি বিস্মিত! বিশ্বাস করুন- আপনার মুখে সেদিন “ভুলে যাও” কথাটি শ্রবণমাত্রই যেন বিনা মেঘের বজ্রপাতে আমার মস্তক খন্ড-বিখন্ড হয়ে গিয়েছিল। কী ভুল হয়েছে আমার? নিজেকে প্রশ্ন করেছি বারবার। কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে শুধু পেয়েছি স্মৃতি দগ্ধ জালা, অগ্নিস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছি কত স্মৃতির ঢালা। নিরীহ নেত্রের প্রতিটি অশ্রুকণা প্রতিনিয়ত শুধায়- ” আর কত পোড়াবে আমায়.? আমিও তো একটা মানুষ নাকি!” 

বিশ্বাস করুন, ঐ বসন্তে যখন আপনার পিতার দেওয়া নীল শাড়িটি উপহার পেয়েছিলাম তখনই প্রথম ভাবির মুখে শুনেছিলাম আপনার নামটি। অতঃপর সাধনা- আপনাকে একবার দেখব। প্রায় দেড় বছর সাধনার পর শ্রাবণের এক নিরাক পড়া প্রকৃতির উত্তপ্ত রৌদ্রশিখায় আপনার জলন্ত লাবণ্য দর্শনে আমি আপনাকে মনের মানুষ ভেবেছিলাম। পড়েও ছিলাম আপনার লেখা কয়েকখানা কবিতা। এরপর থেকে এমন কোনো রাত নেই, যে রাতে আপনার বইয়ের কবিতা আমি পড়িনি! প্রথম সাক্ষাতে আপনি আমাকে ‘বিজয়িনী’ নাম দিয়ে বলেছিলেন- “শোনো, বিজয়িনী, তুমিই হয়তো আমার কবিতার শব্দমালা। কারণ, তোমার অনুপস্থিতিতে আমার কবিতারা শব্দহীনতায় আক্রান্ত হয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যায়! আর নিষ্প্রাণ মানেই তো অস্তিত্বহীন আর আমার কবিতার অস্তিত্বহীনতা মানেই তো আমি এক প্রকারের জিন্দা লাশ! “

এভাবে ভালোবাসা এত গভীরতার পরেও বেলাশেষে ফ্যামিলির চাপে আমার হাতটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন!

তবুও আমি বিশ্বাস করি, আপনি কবি! আপনি চাইলে সাধনা আর তপস্যা দ্বারা পাথরকে ফুলরূপে ফোটাতে সক্ষম! শুনুন,আজকে আমি আগের মতো ভালোবাসা চাইতে আসিনি, কারণ আমি জানি আমার ক্ষেত্রে আপনার ভালোবাসা পাওয়ার স্বপ্ন দেখা আর বামন হয়ে চন্দ্র পাওয়ার স্বপ্ন দেখা সমান কথা! আপনি আমাকে চেনেন হয়তো বেশিদিন হয়নি, তবে আমি আপনাকে দু’বছর ধরে চিনি। এ যেন দুই শতাব্দীর সাধনা! 

আজ হয়তো আপনার প্রশ্ন যে, আমাকে আপনি চান না! এমতাবস্থায় আপনাকে আমি ভুলে যাই না কেন? প্রত্যুত্তরে বলব- আপনি তো এক অনন্য ব্যাক্তিত্ব, কবি মানুষ। তাই আজ থেকে দুবছর পূর্বে রোপণকৃত একটা শেফার্ডস বৃক্ষকে আপনি অনুভূতির নেত্র দ্বারা দর্শন করিয়েন, ঐ বৃক্ষটির গজানো শাখা-প্রশাখা ও শিকড়ের গভীরতা নিয়ে একটু ভাবিয়েন। কোনো বিপদশঙ্কুল সরঞ্জাম ছাড়া ঐ বৃক্ষটিকে এক টান মেরে উপরে ফেলতে পারেন কিনা চেষ্টা করে দেখবেন।

যদি সফল হন তাহলে ধরে নিয়েন আমিও আপনাকে ভুলতে যেভাবেই হোক সফল হব বলে কথা দিয়ে গেলাম। আর যদি ব্যর্থ হন তাহলে ধরে নিয়েন আপনাকে ভুলতে আমিও ব্যর্থ…! এতে ক্ষমার অযোগ্য হলেও কিছু করার নেই! 

ইতি- 

আপনার কবিতার বিজয়িনী।

চিঠি

রবীন জাকারিয়া

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৬ অপরাহ্ণ

মৌলভির চিঠি

আমার দাদু মৌলভি আলীম সরদার নামজাদা বামপন্থী পলিটিশিয়ান এবং সংস্কৃতি কর্মী৷ এলাকায় তাঁর প্রভার আর ক্ষমতা অকল্পনীয়৷ তাঁর কথাই শেষ কথা৷ বিচার, শালিস সবই তাঁর মর্জিতে৷ বরখেলাফ করলে কী ভয়াবহ ঘটনা কপালে জুটবে সেটা সকলের জানা৷ তাই কেউ টুশব্দটিও করে না৷ দাদু সমাজতান্ত্রিক দল করতেন৷ বলা যায় প্রভাবশালী নেতা৷ অন্যদিকে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাঁর বিচরণ তাঁকে নিয়ে গেছে এলাকার শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে৷ স্থানীয় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ইয়াতিমখানা, মসজিদসহ সকল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি৷ অবহেলিত ও নির্যাতিত নারীদের জন্য নারী পুনর্বাসন সেন্টার নামে একটি আশ্রম আছে৷ অবশ্য সেই আশ্রমে কেন যেন প্রায়শঃই নির্যাতিত নারীরা আত্মহত্যা করে! দাদুকে এসব সামলাতে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তাছাড়া জনসেবা৷ এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া৷ তাই বাড়িতে সব সময় দর্শনার্থীদের ভীড়৷ 

আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল যে দাদুর নামের সামনে মৌলভি টাইটেলটা কেন? তিনিতো কোনোদিনও টুপি পাঞ্জাবি পরতেন না৷ এমনকি দাড়িও ছিল না৷ তিনি নিয়মিত নামাজও পড়তেন না৷ বরং ধর্মবিরোধী অবস্থান ছিল তাঁর৷ কিন্ত মৌলভি হলেন কেন? অনেক পরে জেনেছি যে ঐ সময় মুসলিম ব্যক্তিদের নামের সামনে মৌলভী লেখা হতো৷ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেও মৌলভী টাইটেল ছিল৷

দাদু কঠোর চীনপন্থী সমাজন্ত্রী ছিলেন৷ তাই তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও নিজ দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে নিরলস কাজ করেছেন৷

৭০ এর নির্বাচনে সারা বাংলাদেশে ১৬২ আসনের মাঝে দুইটি আসনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হয়। একটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরেকটি ময়মনসিংহ সেন্ট্রাল।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জয়লাভ করেন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ও ময়মনসিংহে পিডিপির নুরুল আমিন।

এই দুজনের বিজয়ে দাদুর অবদান ছিল৷ তিনি তাদের নির্বাচনী প্রচারে নিরলসভাবে কাজ করেছেন৷ 

এরপর দেশ স্বাধীন হলে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন৷ 

দাদু নিজে উচ্চ শিক্ষিত হলেও তাঁর কোনো সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করতে পারেননি৷ বরং প্রত্যেকে হয়েছে একেকটা সুবিধাবাদী আর ক্ষমতালিপ্সু মানুষ৷ 

দাদু পলিটিকস বোধ হয় বেশ ভালই জানতেন৷ যার কারণে তিনি যেমন জীবদ্দশায় সর্বদা PGP (Present Government Party) করতেন৷ ঠিক তেমনি তাঁর সন্তানেরা৷

আমাদের বাড়িতে আলেয়া নামক এক বয়স্ক গৃহকর্মী থাকেন৷ মানসিক প্রতিবন্ধী৷ দাদুর যৌবনকাল থেকেই তিনি আছেন৷ আমি তাকে আলেয়া দাদি বলে ডাকি৷ দিদি বললে আমার নিজের দিদি রাগ করেন৷ তাই দাদি বলি৷ মাঝে মাঝে যখন ওনার মাথা ঠান্ডা বা ঠিক থাকে তখন গল্প বলেন৷ আদর করেন৷ বেশ উপভোগ করি৷ কিন্ত মাথা বিগড়ে গেলে তখন হাতে একটা কাগজ নিয়ে সকলকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে থাকবে “এই দ্যাখ মৌলভি আমাকে চিঠি লিখেছে”৷ মৌলভীর চিঠি মানে তার স্বামীর প্রেমপত্র৷ এলাকার এমন কোনো মানুষ নেই যে তার এই প্রেমপত্রের কথা জানে না৷ শুধু তাই নয় রাস্তা-ঘাট কিংবা মোড়ের রিক্সাচালক পর্যন্ত জানে৷ আমাদের সমাজে যা হয় পাগল দেখলে সহানুভূতির চেয়ে ক্ষেপাতে পারলে আনন্দ পাই৷ তার সাথে প্রতিদিন তাই ঘটত৷ দিনশেষে এক টুকরো ছেঁড়া কাগজ নিয়ে আলেয়া দাদি ঘরে বসে কাঁদতেন৷ আমার খারাপ লাগতো ভীষণ৷ কিন্ত কিছু করতে পারতাম না৷ আমিতো ছোট তাই৷

আমি একটা জিনিষ দেখে অবাক হতাম৷ দাদুকে নিয়ে যে যাই বলুক৷ কিন্ত মানুষটা আসলে মহান৷ না হলে একজন গৃহকর্মীর জন্য এত ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থাকে? যখন যা চাচ্ছে তাই এনে দেয়৷ কেউ বাধা দিলে বলে “পাগল মানুষ একটা আবদার করেছে দিয়ে দাও, আমরা বিনির্মাণ করবো এক সাম্যবাদি সমাজ৷ যেখানে থাকবে না কোন শ্রেণি বৈষম্য”৷ দাদুর কথা কেউ ফেলতে পারে না৷ 

দিদিকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম উনি কীভাবে পাগল হলেন? এমনকি ওনার একটা ছেলে সেও পাগল৷ বিষয়টা কী? দিদি বললেন যদিও তুই ছোট মানুষ সব বুঝবি না৷ তবুও বলি শোন্ আলেয়ার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক মৌলভির সাথে৷ পাশের মসজিদের খাদেম ছিল৷ এরপর ওর ছেলেটা পেটে আসে৷ এমন সময় ওর স্বামী ওকে রেখে পালিয়ে যায়৷ এই দুঃখে ও আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে৷ ও কোনো কিছু না বলে হঠাৎ হঠাৎ করে নিখোঁজ হতো৷ পেটে সন্তান অন্যদিকে এভাবে শরীরের উপর টর্চারের কারণে প্রসব জটিলতা সৃষ্টি হয়৷ উপায়ান্তর না থাকায় ডাক্তার সাত মাসেই তার বাচ্চাকে প্রসব করাতে বাধ্য হয়৷ অপ্রাপ্ত শিশু৷ বাঁচা মরা অবস্থা৷ মা পাগলি৷ ঠিকভাবে দুধ পায় না৷ মায়ের সঠিক যত্নের অভাব৷ সব মিলিয়ে দেখা গেল ছেলেটাও প্রতিবন্ধী৷ পাগল৷ একদিকে স্বামীর শোক৷ অন্যদিকে ছেলের এমন অবস্থা দেখে আলেয়া একেবারেই পাগলি হয়ে গেল৷

একদিন হঠাৎ করেই দীর্ঘ আয়ুর দাদু মারা গেলেন৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর৷ বাড়িতে শোকের ছায়া৷ পরিবারের মাথার ছাতাটা ভেঙে গেল৷ সময় সব ক্ষত মুছে দেয়৷ জীবন নতুন করে সাজে৷ পরিবর্তন হয় নেতৃত্বে৷ এখন আমার বড় বাবা হলেন পরিবারের নেতা৷ তাঁর আনুগত্যে কারো অসন্তোষ নেই৷ আবারো সব কিছু ঠিক ঠাক৷ 

ক’দিন আগে বড়বাবা কিছু লেবার লাগিয়েছে দাদুর ঘরটাকে পরিস্কার করবে বলে৷ অপ্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, ফার্নিচার পুড়িয়ে ফেলে ঘরটাকে বসবাস উপযোগী করা হবে৷ লেবার-মিস্ত্রি বাড়িতে কাজ করলে আমার ভালো লাগে৷ আমি দাঁড়িয়ে থেকে দেখি৷ অনেক সময় পুরোনা কোনো খেলনা, মার্বেল কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়া পিচ দিয়ে বানানো নিজের হাতুরি দেখলে খুশি হই৷ ওগুলো আবার সংরক্ষণ করি৷ এমন সময় দেখলাম লাল কাপড়ে মোড়ানো একটা মোটা খাতা৷ আমি ওটাকে নিজের কাছে রাখলাম৷ ওটা আসলে ডায়েরি৷ দাদুর ডায়েরি৷ নিজের ঘরে লুকিয়ে রাখলাম৷ রাতে পড়তে লাগলাম৷ মজা লাগছিল৷ দাদু কত স্মৃতিকথা লিখে রেখেছেন৷ যেন গল্পের বই৷ একটা নেশা চেপে বসল৷ প্রতিদিন রাতে একটু একটু করে পড়ি৷ কত অজানা আর ভয়ংকর কাহিনি জেনে গেলাম৷ তা বাড়ির কাউকে শেয়ার করলাম না৷

এর বেশ কিছুদিন পর একদিন ঝড়ের রাতে আলেয়া দাদি মারা গেলেন৷ চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা দাদিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন৷ বুকের উপরে রাখা একটি হাতে শক্ত করে ধরে আছেন এক টুকরো কাগজ৷ যেটাকে তিনি সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন স্বামীর প্রেমপত্র বা মৌলভির চিঠি হিসেবে৷ আর এই মৌলভির চিঠিটা আর কারো নয় বরং বিশ্বাসঘাতক আমার দাদুর৷

মৌলভির চিঠি

আবু হানিফ জাকারিয়া

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ১:৪৬ অপরাহ্ণ

মধ্যবয়সীর চিঠি

কতদিন ধরে প্রতীক্ষায় আছি

একটি নীল খামের জন্য, নয়তো একটি সাদা খাম

নিদেনপক্ষে ডাকবিভাগের একটি হলুদ খাম।

আসবে আসবে করে কত সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা

দিন, মাস, বছর এমনকি যুগও কেটে গেল।

আমার প্রতীক্ষার অবসান হলো না

হলো না আমার সুখানুভূতির স্বাদ নেওয়া,

খাম খুলে সেই চিঠির গন্ধ নেওয়া-

লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া, ভিতরে ভিতরে তাড়িত হওয়া

সুখের আবেশে আর কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া।

এখন আর প্রতীক্ষা করি না-

তবুও ক্লান্ত দুপুরে ডোরবেলটা বাজলে

চকিত হয়ে যাই, অজান্তেই প্রত্যাশার পারদ বেড়ে যায়।

গেট খুলে দেখি ভিক্ষুক নয়ত নতুন সাহায্যপ্রার্থী।

ডাকপিয়ন আর আসে না নীল, সাদা বা হলুদ খাম নিয়ে।

চিঠি আর আসবে না জানি-

সেই প্রত্যাশাও আর করি না এখন।

হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠল আবারও, 

ভাবলাম কোনো সাহায্যপ্রার্থী নয়ত ভিক্ষুক

না এবার সত্যি সত্যি সাদা খাম হাতে কেউ,

কুরিয়ারম্যান দিলো ব্যাংকের পাঠানো এক চিঠি

এ যে মধ্যবিত্তের লোনের কিস্তির ফিরিস্তি।

মধ্যবয়সীর চিঠি