মুক্ত-গদ্য

মুক্ত-গদ্য

মাইকেল স্ট্রগফ

১৮ জুন, ২০২৩ , ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

কুঞ্জল রথ

হাতে ছিলো সন্ধ্যে রঙের পথ। যুগলানয়নে ছিলো কথাকরের সুর।  ভেসে থাকা অম্লজান বারবার স্রোত তুলেছিলো কেশরন্যের বনভূবনে। মিছে হৃদকম্পভার করার যে অভিনয় করেছিলাম তা ধরা পড়ে গেলো হাতে।  দেবদারুর বন থেকে মন নেমে ঈশ্বর হয়ে এলে, সে সেজেছিলো কুর্নকঞ্জনা। যে তাকে করে গিয়েছে অপারপর তা’র গীত চরণে-চরণে সাজিয়ে ঘুরছিলো । দন্তশিখর হতে নেমেছিলো যে সোমধারা তা দেখেই বিহ্বল ছিলাম।  পৃথিবীর পথ হতে আরও কিছু দূরের গ্রহণুতীর্থে যাবো বলে বাড়িয়ে ছিলাম যে হাত তাতে নেমে এসেছিলো গণকুণ্ডধার।

সে বলেছিলো, নখের শহরে আয়নার কোন ব্যবহার নেই। প্রত্যেকেই রাজা হবার মতো মিছে বাসনায় জলাঞ্জলী দেয় ধর্ম।  শিমুলের হৃদে ডুবে থাকে কর্মফল। কালচক্রে বৃদ্ধাঙ্গণ দেখে শৈশবাসূচন করে সকলেই। এখানে সম্পর্ক নেই স্বার্থের নামে।  জমিরাজের মতো সুগভীর সুনিপুন সুসস্মিত সুপ্রসন্ন জীবন এখানে পলপল করে খলকলবলিয়ে চলে।

প্রেম এখানে চুম্বকের মতো রচনা করে উমাগিরীষ পুরান। তা’রে দেখে সেখানেই মৃত্যুনন্দগীত গাইতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু সুদন্তী সুশিলা সুপ্রভা প্রভাষহীন প্রভাকরীণি আমায় বললে, পরের জন্মে হবে

কুঞ্জল রথ

অনিরুদ্ধ সরকার প্রথম

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

জীবনের সুখ, সুখের জীবন 

আমরা যদি ভেবে নিই জীবনটা ক্লাস টুয়ের পাতলা মলাটের অংক বই। আর সেই অংক বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে যদি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যোগ করে যোগফল বের করতে বলা হয়, তাহলে সত্যিই যোগফল কী হবে?

এমন দ্বিধায় পড়ে জীবনের অংকে শূন্য পাওয়ার থেকে

বরং অসীম আকাশের খাতায় যোগ করে যোগফল বের করা বুদ্ধিমানের মতো কাজ। আমরা জানি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রাথমিক মৌলিক চাহিদা খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা। এবার বেঁচে থাকার জন্য মানুষের এই পাঁচটা চাওয়া একসাথে মিশিয়ে দিলে শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়াবে তার নাম সুখ। আমরা যাকে মৌলিক চাহিদার যোগফল বলতে পারি। আমি মনে করি মানুষের প্রধানত মৌলিক চাহিদা একটাই, যার নাম সুখ।

ধরুন এক উস্কো খুস্কো জট লাগানো চুলের পাগল রেললাইনের লোহার পাত দিয়ে দু হাত পাখির ডানার মতো প্রসারিত করে একা হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে সে বিড়বিড় করছে-“আমি নিজেরে ছাড়া আর কোন শালারে দাম দেই?”বলতে বলতেই পোকা খাওয়া কালো দাঁত বের করে ফিক করে হাসছে। আচ্ছা যদি এই পাগলের সামাজিক মৌলিক চাহিদার দিকে একবার আলোকপাত করা হয় তাহলে দেখা যাবে-সে সকালে আধা বনরুটি খেয়ে আপনমনে হাঁটে,গান গায় অথবা নাচে। তার গায়ে থাকে ছেঁড়া গেঞ্জি আর কোমরে ছেড়া লুঙ্গি। এরপর মোটামুটি নরম ঘাস আর পার্কের বেঞ্চ তার ঘর বাড়ি। উপরের এই পাগলের ঘটনা থেকে আমরা জানলাম বইয়ের পাতায় যে মৌলিক চাহিদার কথা এতদিন মুখস্থ করে গেছি তার একটাও পূরণ হয়নি।

তারপরও এই পাগল রাতে পঞ্চাশ পয়সার বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে গান ধরে। এই পাগল হাসতে জানে। সে সুখকে বশে রাখতে পারে। অতএব তার প্রধান মৌলিক চাহিদা কানায় কানায় পূর্ণ আছে।

একবার কাজী নজরুল ইসলাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলে মারা গেছে।আমার মন তীব্র পুত্রশোকে যখন ভেঙে পড়েছে ঠিক সেই দিনই আমার বাড়িতে হাস্নাহেনা ফুটেছে। আমি প্রাণভরে সেই হাস্নাহেনার গন্ধ উপভোগ করছিলাম।”

আবার রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-

“আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।

তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে॥”

এই দুই মহান কবির বক্তব্য এবং লেখা একে অপরের পরিপূরক। দেখুন একজনের ছেলে মারা গিয়েছে তাঁর মন ব্যথায় জর্জরিত। তবুও সে ব্যাথাকে গ্রাহ্য না করে তাঁর বাগানের হাস্নাহেনার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়েছে।ওই হাস্নাহেনাই কবির চোখে তাঁর কবরে শোয়ানো পুত্রের শেষ হাসি।

কেউ যদি শেষ বৈশাখের সকালে অফিসের বাস মিস করে, যদি ঝাঝালো কাঁচা রোদ লোকটার মাথার ওপরে হাসে।তবুও যদি টিফিন বক্স ঘোরাতে ঘোরাতে লোকটা অফিসের দিকে হাঁটতে হাঁটতে গান ধরে-

“একলা চলো,একলা চলো,একলা চলো রে!….”

আমরা তখন বলতেই পারি লোকটা মৌলিক চাহিদার অংকে পটু। আসলে সামাজিক মৌলিক চাহিদার যোগফল সুখকে চুরি করে, পোষ মানিয়ে মনের খাঁচায় ভরে বলতে হয় সব ঠিক চলছে! প্রচুর খুশি নিয়ে বাঁচতে হবে। রাজকুমার হিরানী যেমনটা তার থ্রি ইডিয়টস সিনেমায় দেখিয়ে গেছেন।

খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসার সেবা না হয় পাওয়া যায়, সুখের সেবা কে দেবে?

সুখের সেবায় সেবাদাতা এবং সেবাগ্রহীতা স্বয়ং আপনি। আপনাকেই জীবন অংকে যোগ,বিয়োগ,গুণ,ভাগ  মেলাতে যেয়ে বারবার সূত্রের মতো আওড়ে যেতে হবে-

“আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”

জীবনের সুখ, সুখের জীবন